#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৫)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)
(৮)
ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছেন চৌধুরী ও সিকদার পরিবারের সকল সদস্যরা। সেইসময় কুশলকে একলা সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসতে দেখে সাবরিনা চৌধুরীর পাশে বসারত ওনার ছোট জা কামিনী চৌধুরী সাবরিনা চৌধুরীর দিকে কিছুটা হেলে ফিসফিসিয়ে বললেন….
—“মেজো ভাবী…আপনার ছেলে তো একাই সিঁড়ি বেয়ে নিচে আসতেছে। চেহারা দেখে তো মনে হচ্ছে সিকদার ভাইজানের মেয়েকে সে মানাতে সক্ষম হয় নি।”
কামিনী চৌধুরীর কথা শুনে সাবরিনা চৌধুরী সিঁড়ির দিকে লক্ষ্য করলেন আর কুশলের গম্ভীর মুখশ্রী দেখে বললেন….
—“কখনও কোনো খুশির বিষয় ঘটলেও তো কুশলকে খুব একটা হাসি-খুশি মুখশ্রী নিয়ে থাকতে দেখলাম না এতোগুলো বছরেও। তাই ওর চেহারার এই গম্ভীর ভাব দেখে সিকদার ভাইজানের মেয়ের সম্মতি হলো নাকি হলো না তা বোঝা সম্ভব না। আর তাছাড়া ঐ মেয়ে যেই পরিমাণ ঘাড়’ত্য’ড়া স্বভাবের এতো সহজে রাজি হবে না বলেই আমার মনে হয়। দেখা যাক কুশল কি বলে।”
সাবরিনা চৌধুরীর কথা শেষ হওয়ার পর পরই কুশল ড্রয়িংরুমে নিজের জন্য বরাদ্দ করা সোফায় গিয়ে বসে পরে। কুশলের মুখ থেকে তরুনিমা কি বলেছে সেই উত্তর জানার জন্য ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সকলেই উৎসুক দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে৷ সেইসময় সাগরিকা চৌধুরী শান্ত স্বরে কুশলকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করলেন….
—“কুশল দাদুভাই….তরু দিদিভাই বিয়ের জন্য শেষ কি মতামত জানালো তোমায়?”
কুশল স্বাভাবিক কন্ঠেই বললো…
—“সেটা তরুনিমার মুখেই শুনে নিতে পারবে দাদীমা। কিছুসময় অপেক্ষা করো।”
কুশলের এমন কথা শুনে সকলের মুখেই কিছুটা চিন্তার ছাপ ফুটে উঠে। তমালিকা সিকদার বললেন….
—“আমি বরং তরুর কাছে গিয়ে ওকে রাজি করানোর চেষ্টা করে দেখছি একবার।”
এই বলে তমালিকা সিকদার সোফা ছেড়ে উঠতে নিলে কুশল বললো….
—“আর কারোর ওর কাছে গিয়ে এই বিয়ের বিষয় নিয়ে কিছু বলার প্রয়োজন নেই আন্টি। আপনি বসুন, আপনার মেয়েকে একাই তার জীবনের এতোবড় বিষয় নিয়ে যেকোনো সিদ্ধান্ত নিতে দিন। তবে একটা কথা বলে রাখছি, আজ যদি তরুনিমা ওর শেষ সিদ্ধান্ত হিসেবে আমাকে বিয়ে করবে না বলেই চূড়ান্ত করে তাহ……”
কুশলকে ওর পুরো কথা শেষ করতে পারে না। তার পূর্বেই তরুনিমা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে উচ্চস্বরে বললো…..
—“থামুন মি.কুশল চৌধুরী। আপনাকে এখন আর পুরো কথা শেষ করতে হবে না। কারণ আমি আমার যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা নিয়ে ফেলেছি।”
তরুনিমার কন্ঠ কর্ণপাত হতেই সকলে তরুর আসার দিকে দৃষ্টি স্থির করে। পরক্ষণেই তরু ড্রয়িংরুমে এসে দাঁড়িয়ে উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বললো….
—“আমি তরুনিমা সিকদার নিজের সজ্ঞানে থেকে ঠান্ডা মস্তিষ্কে চিন্তা-ভাবনা করার পর এই সিদ্ধান্তে মনঃস্থির করেছি যে, আমি মি.রওনাক আজমাইন চৌধুরী কুশলের সাথে বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ হতে রাজি আছি।
হ্যা, আমি সন্ধ্যার সময় সকলের সামনে ওনাকে বিয়ে করতো পারবো না বলেছিলাম ঠিকই কিন্তু গত ২-৩ঘন্টা যাবৎ চিন্তা করার পর বুঝতে পারলাম আমাদের ২বংশের মাঝে যেই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান করতে একটি সঠিক পদক্ষেপ গ্রহন করা উচিত। যেহেতু আমার শরীরে সিকদার বংশের র’ক্ত বইছে সেহেতু এই বংশের সম্মান আর এই বংশের সাথে জড়িয়ে থাকা অন্য বংশের সম্মান ও সম্পর্ক রক্ষা করা আমার দায়িত্বের মাঝে পড়ে। তাই আমি দাদীমার নেওয়া সিদ্ধান্তকে স্বইচ্ছায় মেনে নিয়েছি। আপনারা সবাই বিয়ের আয়োজন করতে পারেন।”
তরুনিমাকে বিয়ের জন্য সম্মতি প্রদান করতে দেখে উপস্থিত সকলের মুখেই হাসির রেখা ফুটে উঠে। তরু কুশলের দিকে তাকাতেই দেখে কুশল নিজের দৃষ্টি মেঝেতে স্থির করে রেখেছে ওর মুখে কোনো চিন্তা বা আনন্দের বা আফসোসের ছাপ ফুটে উঠে নি। পরক্ষণেই তরু নিজের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়। সাগরিকা চৌধুরী হাসিমুখে বললেন…..
—“তারেক, সায়মন তোমরা দ্রুত কাজী আনার ব্যবস্থা করো। বউমারা তোমরা এখনও বসে আছো কেনো? আমার হবু নাতবউ কি এমন বেরঙিণ সাজে বিয়ের আসরে বসবে? যাও গিয়ে সবথেকে সুন্দর ও আকর্ষণীয় গহনা পড়িয়ে সাজিয়ে আনো আমার হবু নাতবউকে। সন্ধ্যা দিদিভাই তুমি অনন্যা দিদিভাইকে নিয়ে যাও। ওকেও খুব সুন্দর করে সাজিয়ে আনো। আর কনক দাদুভাই তুমি আর কুশল দাদুভাই রুমে গিয়ে সুন্দর শেরওয়ানি পড়ে তৈরি হয়ে এসো। আজ চৌধুরী বাড়িতে আমার দুই নাতীর একসাথে বিয়ে হবে।”
সাগরিকা চৌধুরীর বলানুযায়ী সকলে সকলের কাজের উদ্দেশ্যে একে একে ড্রয়িংরুম ত্যগ করলো।
(৯)
১ঘন্টা পর……
চৌধুরী মেনশনের ডান সাইডে কনক আর তরুনিমার জন্য সাজানো বিয়ের আসরটিতেই পুনরায় কনক-অনন্যা আর কুশল-তরুনিমার বিবাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্ঞ্চের মাঝ বরাবর ফুলের পর্দা দেয়া যার দুইপাশে ২টি বড় সোফা রাখা আছে। একপার্শে বর, বরের বাড়ির ১-২জন সদস্য ও কাজী সাহেব বসতে পারবেন আরেকপার্শে কণে ও কণের বাড়ির ১-২জন সদস্যরা বসতে পারবেন। আর মন্ঞ্চের সামনে বাকি সদস্যদের বসার ব্যবস্থাও করা রয়েছে।
কনক চৌধুরী পরিবারের ১ম নাতী হওয়ায় কনক আর অনন্যার বিবাহকার্যই ১ম এ সম্পন্ন করা হবে বলেই মনঃস্থির করেছেন মধ্যবয়সের সকল সদস্যরা। লাল ও সবুজের সংমিশ্রণে তৈরি ডিজাইনার লেহেঙ্গা ও চৌধুরী বংশের ঐতিহ্যবাহী স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে ভিষণ সুন্দর ভাবে অনন্যাকে সাজিয়ে দিয়েছেন সাবরিনা চৌধুরী এবং কামিনী চৌধুরী দু’জনে মিলেই। অন্যদিকে অনন্যার সাথে ম্যচ করে লাল ও সবুজের সংমিশ্রণে তৈরি ডিজাইনার শেরওয়ানি পড়ে তৈরি হয়েছে কনক। অনন্যার পরিবারের কোনো সদস্যই বিয়ের আসরে উপস্থিত না থাকায় সাবরিনা চৌধুরী নিজেই অনন্যাকে নিয়ে মন্ঞ্চে উঠে কণের স্বস্থানে বসিয়ে দিয়েছেন। আর কনকের বাবা সায়মন চৌধুরী কনককে নিয়ে বরের স্থানে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশেই বসে পড়েন। সাগরিকা চৌধুরী লাঠিতে ভর দিয়ে ধীরে ধীরে হেঁটে মন্ঞ্চে উঠে অনন্যার পাশে বসে পড়েন। কনক ও অনন্যা দু’জনের মুখশ্রীতেই ফুটে আছে তৃপ্তির হাসি। ভালোবাসার পূর্ণতা হলে যে কতোটা আনন্দ হয় তা কেবল ২জন ভালোবাসার মানুষই অনুভব করতে পারেন। কনকের হাতের বাম পার্শে কাজী সাহেব বসে পড়েন। অতঃপর কনক ও অনন্যার বিবাহকার্য শুরু হয়। ২৫লক্ষ টাকা দেনমোহরনা ধরে ইসলামিক শরিয়ত মেনে কবুল বলে কনক-অনন্যা বৈবাহিক বন্ধনে আবব্ধ হয়। পরক্ষণেই আইনত ভাবে বৈবাহিক বন্ধনে আবব্ধ হতে রেজিস্ট্রি কাগজে সিগনেচার করে কনক ও অনন্যা দু’জনেই। ইসলামিক শরিয়ত ও আইনত নিয়ম মেনে অবশেষে কনক-অনন্যার বৈবাহিক কার্য সুসম্পন্ন হয়। বৈবাহিক কার্য সম্পন্ন হতেই কনক আর অনন্যা একসাথে মন্ঞ্চ থেকে হাত ধরে নেমে মন্ঞ্চের সামনে ব্যবস্থা করা বসার স্থানে বসে পড়ে।
সাগরিকা চৌধুরী সাবরিনা চৌধুরী ও তমা সিকদারকে উদ্দেশ্য করে বললেন….
—“সাবরিনা বউমা….তমা বউমা ভিতরে গিয়ে এখন তরু দিদিভাইকে নিয়ে এসো। আর সায়মন, তারেক তোমরা গিয়ে কুশল দাদুভাইকে নিয়ে এসো। ওদের বিবাহটি সুসম্পন্ন হলেই আমি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারবো।”
সাগরিকা চৌধুরীর কথানুযায়ী ওনারা সকলেই চৌধুরী মেনশনের ভিতরে চলে যায় কুশল-তরুকে আনার উদ্দেশ্যে।
বেশ কিছুসময় পেরিয়ে গেলে ওনারা ৪জন কুশল আর তরুকে না নিয়েই বিয়ের আসরে উপস্থিত হলে উপস্থিত বাকিরা প্রশ্নসিক্ত দৃষ্টি নিয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে রয়। সাগরিকা চৌধুরী সোফা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে ওনাদের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করলেন….
—“কি ব্যপার…তোমরা একলা একলাই চলে আসলে যে? কুশল দাদুভাই আর তরু দিদিভাইকে সাথে নিয়ে আসার জন্যই তো তোমাদের ভিতরে পাঠালাম।”
সাবরিনা চৌধুরী বললেন….
—“কি করে সাথে আনবো ওদের মা! আমরা গিয়ে দেখি কুশল আর তরুনিমা ওরা কেউই নিজেদের রুমে নেই। পরে পুরো চৌধুরী মেনশনের ভিতরে খুঁজে দেখলাম ওদের কোথায় পেলাম না।”
পাশ থেকে সায়মন চৌধুরী বললেন…..
—“আমি কুশলের ফোনে কল দেওয়ার চেষ্টাও করেছিলাম বেশ কয়েকবার কিন্তু প্রতিবারই ওর ফোন বন্ধ দেখাচ্ছিলো।”
তমালিকা সিকদার নিজের হাতে থাকা ফোনটি সামনে ধরো বললেন….
—“তরু তো ওর নিজের ফোনটা রুমেই ফেলে রেখে গিয়েছে।”
ওদের কথা শুনে উপস্থিত সকলেই অনেক অবাক হয়ে যায়। সাগরিকা চৌধুরী নিজের চেহারায় চিন্তার ছাপ ফুটিয়ে বললেন….
—“বিয়ের ব্যবস্থা করতে বলে এভাবে কাওকে কিছু না জানিয়েই দু’জনে একসাথে কোথায় চলে গেলো আশ্চর্য বিষয় তো…..!”
চলবে ইনশাআল্লাহ……..
{অনেকেই বলছেন আমার লেখা গল্পটি পাকিস্তানের ফেমাস সিরিয়াল Tere bin এর মতো লাগছে। আমি মি’থ্যা বলবো না। আমি নিজেও Tere bin সিরিয়াল এর সবগুলো এপিসোড দেখেছি। সিরিয়ালের নায়ক মুরতাসিম এর ক্যরেক্টার আমার কাছে অনেক ভালো লেগেছে। মুরতাসিম এর কথা বলার ধরণ, চাল-চলন ও কাজ আমার ভালো লেগেছে বিধায় আমি কুশলের চরিত্রেও তেমনই রূপ ফুটিয়ে তুলতে চেয়েছি মাত্র। এটা যদি আমার ভু”ল হয়ে থাকে তাহলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। আসসালামু আলাইকুম }