হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৪) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(৪)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৭)
দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠে কুশল সরাসরি তরুনিমার রুমের দরজার সামনে এসে বাম হাত কমোরের পিছনে রেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে ডান হাত দিয়ে দরজায় কড়া নেড়ে বললো…

—“তরুনিমা দরজা খুলো।”

বিছানার সাথে হেলান দিয়ে ঝিমাচ্ছিলো তরু। সেইসময় কুশলের কন্ঠে নিজের নাম ধরে ডাকতে শুনে তরুর ঝিমানো ভাব এক মুহূর্তে কেটে যায়। দুই পা ভাঁজ করে বাবুসাহেবের মতো বসে তরু নিজ মনে বিরবিরিয়ে বললো….

—“ব্যডা কি আমাকে তার গার্ড আর সেক্রেটারির মতো নিজের হুকুমের দাস মনে করেছে নাকি যে দরজা খুলতে বলবে আর আমিও সুর সুর করে গিয়ে দরজা খুলে দিবো! আমি তরুনিমা সিকদার কারোর হুকুম কখনও মানি না। কেও কিছু করতে বললে সেই কাজে আমার নিজের ইচ্ছেশক্তি কাজ না করলে আমি সেই কাজের দিকে ঘুরেও তাকাই না করা তো দূরের বিষয়। এখন আমার দরজা খুলতে ইচ্ছে করছে না। তাই আমি খুলবো না। খারুশ ব্যডা দরজার ওপাশে দাড়িয়ে দাড়িয়ে আমায় ডাকতে ডাকতে শহীদ হয়ে গেলেও আমি দরজা খুলবো না।”

এই বলে তরুনিমা এবার ভালো ভাবে বিছানায় শুয়ে পরে। বেশ কয়েকবার ডাকার পরেও তরুর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে কুশলের চোখে-মুখে বিরক্তি ভাব ফুটে উঠে। পরক্ষণেই কুশল ওর কমোরের পিছনে রাখা বাম হাতের উপর ডান হাতটি রেখে দৃষ্টি সামনের দিকে স্থির করে শান্ত স্বরে বললো…

—“আমি ১ থেকে ১০ পর্যন্ত কাউন্ট করবো এর ভিতর যদি তুমি দরজা না খুলো তাহলে এরপর যা হবে তার জন্য তুমি নিজে দায়ী থাকবে কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে নাও ভালো করে।”

কুশলের এমন হুমকির স্বরে বলা কথাগুলো শুনে তরু এক লাফে শোয়া অবস্থা থেকে উঠে বসে। ডান হাতের কনিষ্ঠা আঙুলের নখের আগাল দাঁত দিয়ে কাটতে কাটতে বললো….

—“এই খারুশ ব্যডার কোনো ভরসা নেই। মুখে যা বলে কাজেও তাই করে দেখায়। তরু যদি বাঁচতে চাস তাহলে জোরপূর্বক হলেও দরজা খুলে দেওয়ার জন্য নিজের ইচ্ছেশক্তি জাগা নয়তো দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে থাকা এই কুশল চৌধুরী নামক আ’জ’রা’ই’লটি আজ তোর জান ক’ব’জ করেই হয়তো স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবে।”

অতঃপর তরুনিমা দ্রুততার সাথে বিছানা থেকে নেমে দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বুকের বাম পার্শে একটা হাত রেখে জোড়ে জড়ে বারকয়েক নিঃশ্বাস ফেলে বললো…..

—“তরু এই খা’রু’শ ব্যডার সামনে একদম নিজের ভ’য় প্রকাশ করবি না। সাহসের সাথে প্রতিটা কথা বলবি তাহলেই ব্যডা জ’ব্দ হবে। কি পেয়েছে টা কি! গ্রামের সবার উপর রাজ করে জন্য আমার উপরও রাজ করার চেষ্টা করবে! তা তো আমি হতে দিবো না।”

এই বলে তরু দরজা খুলে দিতেই দেখে দরজার বাহিরে দাড়িয়ে কুশল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। তরু নিজের ভিতরের ভ’য়কে দমিয়ে রাখার চেষ্টা করে কিছুটা কঠিন স্বরে বললো…

—“কি সমস্যা টা কি আপনার হ্যা! এভাবে দরজা ধাক্কিয়ে ডাকাডাকি করার মানে কি? দেখছেন যখন এতোবার ডাকাডাকি করার পরেও ভিতরের ব্যক্তিটি দরজা খুলছে না তারমানে সে দরজা খুলতে চায় না এই সামান্য বিষয়টুকু আপনার মাথায় ঢুকলো না! আর আপনার এই বুদ্ধিমত্তা নিয়ে চৌধুরী ও সিকদার বংশের ১৪ দু’গুণে ২৮ গুষ্টির মানুষ প্রশংসায় পন্ঞ্চমুখ হয়ে থাকে সবসময়! এই এই আপনি যান তো এখান থেকে। আপনাকে আমার দুই চোক্ষে সহ্য হয় না।”

এই বলে তরুনিমা আবারও কুশলের মুখের উপর দরজা আটকে দিতে নিলে কুশল ওর ডানহাত বাড়িয়ে দরজা ধরে ফেলে তরুর দিকে রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো….

—“রওনাক আজমাইন চৌধুরী কুশলের মুখের উপর দরজা আটকানোর সাহস আজ পর্যন্ত কেও করে নি। আর সেই সাহস তুমি দেখাচ্ছো কি ভাবে!”

তরুনিমা দাঁতে দাঁত চেপে বললো…
—“আমি আর সবার মতো আপনাকে ভয় পাই না তাই আপনার মুখের উপর দরজা লাগানোর সাহস ও আমি রাখি। দরজা থেকে হাত সরান আর আমাকে বিরক্ত করিয়েন না।”

তরুর এমন কথায় রাগে বিরক্তিতে কুশল এবার নিজের শরীরের জোর প্রয়োগ করে এক ধাক্কায় দরজা খুলে ফেলে। তরু দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকায় সেই ধাক্কায় তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে নিলে কুশল তরুর হাত ধরে ফেলে। পরে যাওয়ার ভয়ে তরু চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে রেখেছে। পরক্ষণেই চোখ মেলে তাকাতেই কুশলকে নিজের হাত ধরে থাকতে দেখে তরু নিজের অবস্থা না বুঝেই অন্য হাত দিয়ে কুশলের হাতের উপর মা’র’তে মা’র’তে বললো…..

—“এই আপনি আমার হাত ধরেছেন কোন সাহসে! হাত ছাড়ুন বলছি।”

কুশল তরুর এমন কথা শুনে কপালে বিরক্তির কয়েকটা ভাজ ফেলে মুখে কিছু না বলেই হাত ছেড়ে দেয়। যার ফলে তরু ধপ করে মেঝেতে পড়ে গিয়ে ব্য’থা’য় মুখ দিয়ে ‘আহহ মাগো কমোরটা ভে’ঙে গেলো মনে হয়’ বাক্যটি উচ্চারণ করে। কুশল ওর কমোরের পিছনে দু’হাত রেখে তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো…..

—“নিজের অবস্থা না বুঝে অন্যের দো’ষ খুঁজতে গেলে নিজেকেই ক্ষতির সম্মুখীন হতে হয় মিস.তরুনিমা সিকদার।”

তরু কুশলের কথার ভাজ বুঝতে পেরে বিরবিরিয়ে বললো….
—“তোরে কি আর সাধে আমি খা’রু’শ ব্যডা বলি! সুযোগ পেলেই জ্ঞাণের ঝুড়ি খুলে সকলের মাঝে তা বিরতন করতে বসে খা’রু’শ জ্ঞাণ দাতা কোথাকার।”

পরক্ষণেই তরু নিজের কমোরে একহাত রেখে অন্য হাতে ভর দিয়ে আলগোছে উঠে দাঁড়িয়ে বিছানায় গিয়ে বসতে বসতে বললো…..

—“আপনি যখন দেখলেন ই আমি আমার অবস্থা না বুঝেই আপনাকে আমার হাত ছাড়তে বলেছিলাম তারপরেও আপনি কেনো আমার হাত ছাড়লেন! আপনার মতো এমন আচারণের মানুষকে শত শত মানুষ যে কেনো নিজেদের বিপদ-আপদের রক্ষক বলে মনে করেন আমি বুঝে উঠতে পারি না।”

কুশল তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিয়ে তরুর দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বললো…
—“তোমার মনে আমাকে নিয়ে যে বিরূপ প্রভাব বিস্তার করেছে তা তুমি নিজ থেকে কাটিয়ে উঠতে না পারলে আমার ভালো দিক গুলো কখনও তোমার চোখে পড়বে না।”

কুশলের কথায় তরু কোনো প্রতিত্তুর না করে শুধু একবার মুখ বা’কা’লো। কুশল এই রুমে থাকা ওয়ারড্রব এর উপর থেকে ফাস্টএইড এর বক্সটি হাতে নিয়ে বিছানার কাছে এসে দাঁড়িয়ে তরুর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো…..

—“কমোরের উপর মুভ স্প্রে লাগিয়ে নাও ব্যথা সেঁড়ে যাবে।”

তরু তেজ দেখিয়ে বললো……
—“আমার কোনো ঔষধ বা স্প্রের প্রয়োজন নেই। আপনার এই দয়াশীলতা এই ঘরের বাহিরে গিয়ে বাকি লোকদের ই দেখান আমাকে দেখাতে আসবেন না।”

তরুর কথা শুনে কুশল ফাস্টএইড এর বক্সটি বিছানার উপর রেখে দিয়ে বললো….

—“এখানে রাখা থাকলো ইচ্ছে হলে লাগিয়ে নিও আর ইচ্ছে না হলে লাগিও না। মানবিকতার খাতির সকলের পক্ষে বোঝা সম্ভব না।”

কুশলের এমন কথায় তরু কিছুটা অপমানিত বোধ করলো। তাই দৃষ্টি অন্যদিকে রেখে রাগে ফোঁস ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলতে শুরু করে। পরক্ষণেই কুশল আবারও বললো…..

—“নিচে সকলে তোমার আর আমার যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছে।”

তরু কুশলের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো….
—“কেনো?”

—“আজ যেই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধান করতে দাদীমা তোমার আর আমার বিয়ের কথা বলেছেন তা তুমি জানো নিশ্চয়ই!”

—“হুম , জানি। কিন্তু আমি এই কথা উঠার সাথে সাথেই সকলের সামনে বলে দিয়েছি আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না।”

—“কিন্তু আমি বিয়ের জন্য সম্মতি জানিয়ে দিয়েছি সকলের সামনেই।”

তরু কিছুটা রাগ নিয়ে বললো….
—“আপনি সম্মতি জানালেই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না। আমি আগেও বলেছি আবারও বলছি আমি আপনাকে বিয়ে করতে পারবো না মানে পারবো না।”

কুশল ওর কমোরের পিছনে দু’হাত রেখে তরুর দিকে শান্ত দৃষ্টি স্থির করে বললো…..
—“আমাকে বিয়ে করতে না পারার একটা যুক্তিযুক্ত কারণ যদি তুমি বলতে পারো তাহলে আমি নিজ দায়িত্বে এই বিয়ের সম্বন্ধ ভে’ঙে দিবো। কোনো সম্পর্ক বা বংশ মর্যাদা রক্ষার কথা চিন্তা করবো না।”

কুশলের এমন কথায় তরু বিয়ে ভাঙার জন্য কি কারণ বলবে তা খুঁজে না পেয়ে বিরবিরিয়ে বললো….

—“এই খা’রু’শ ব্যডা এতোটাই গুছিয়ে চলাফেরা করে সবসময় যে এর বিরুদ্ধে একটা খারাপ রিপোর্ট বের করা সম্ভব না। তাহলে এখন এই বিয়ে ভাঙার জন্য আমি কি যুক্তিযুক্ত কারণ বের করবো!”

তরুর কোনো প্রতিত্তুর না পেয়ে কুশল আবারও বললো……..

—“এতোসময় ধরে ভেবেও আমাকে বিয়ে না করার জন্য কোনো যুক্তিযুক্ত কারণ তুমি বের করতে পারলে না। তাহলে কেনো বার বার বলছো তুমি আমাকে বিয়ে করতে পারবে না? যেই বাবা-মা তোমাকে জন্ম দিয়ে এই পৃথিবীর আলো দেখিয়েছেন, সু-শিক্ষা দিয়েছেন, আদর-যত্ন-ভালোবাসার কোনো কমতি না রেখে তোমাকে এতো বড় করেছেন, যেই বংশের রক্ত তোমার শরীরে বইছে সেই বংশের সম্মান রক্ষা করা কি তোমার নিজ দায়িত্বের উপর পড়ে না! আমি আমার পরিবারের সকলকে ও এই চৌধুরী বংশকে অনেক ভালোবাসি তাই এই চৌধুরী বংশের সম্মানের উপর যেনো কখনও কেও একটা আঙুলও উঠাতে না পারে তার জন্য আমি জীবনে সবরকম পদক্ষেপ গ্রহন করতে রাজি আছি। একটু আগে যখন আমি বাসায় প্রবেশ করলাম তখন সকলের মুখে কোনো হাসি ছিলো না, বাবা-মায়ের ছোট্ট ভুলের জন্য আজ এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে আমি তা মানছি কিন্তু যখন দাদীমার মুখে সম্পূর্ণ ঘটনাটি জানতে পারলাম তখন মনে হলো দাদীমার নির্ধারণ করা সিদ্ধান্তটি মেনে নিলেই হয়তো সকলের মুখে হাসি ফুটে উঠবে, বংশের সম্মান রক্ষা হবে, চৌধুরী বংশের সাথে সিকদার বংশের যুগ যুগ ধরে চলে আসা এতো ভালোবাসাময় সম্পর্কের বাঁধনটি আরো মজবুত হবে। তাই আমি নিজের জীবনের ভবিষ্যত নিয়ে এতো গভীর ভাবে চিন্তা না করে সকলের সামনে তোমাকে বিয়ে করার জন্য সম্মতি জানিয়ে দিয়েছি। আমার সম্মতি আছে জানতে পেরে সাথে সাথেই উপস্থিত সকলের মুখে হাসির রেখা ফুটে উঠেছিলো। আমার বলা কথাগুলো একটু ঠান্ডা মস্তিষ্কে ভেবে দেখিও তারপরও যদি তোমার মন বলে আমাকে বিয়ে করা যাবে না তাহলে তুমি নির্দিধায় সকলের সামনেই না সূচক জবাব জানিয়ে দিয়ে নিজের পরিবারকে নিয়ে চৌধুরী মেনশন থেকে চলে যেতে পারো কেও তোমাকে ২য় কোনো প্রশ্ন করে বিভ্রান্ত করবে না। আমি নিচে যাচ্ছি, তোমার মতামত জানার জন্য সকলের সাথে সেখানেই বসে অপেক্ষা করবো।”

এই বলে কুশল তরুনিমার রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। তরু স্তব্ধ দৃষ্টি নিয়ে কুশলের যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো।

চলবে ইনশাআল্লাহ…………..

{নাইচ, নেক্সট না বলে গঠন মূলক মন্তব্য করার অনুরোধ রইলো আপনাদের কাছে। আপনাদের প্রতিটি গঠনমূলক মন্তব্য আমাকে লেখালেখির প্রতি আরো আগ্রহশীল করে তুলে। ভু’ল-ত্রু’টি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আসসালামু আলাইকুম }

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here