You are my property,Part_37,38

You are my property,Part_37,38
M Sonali
Part-37

১৫ দিন পর,,,,,,,,

সারা বাড়ি ভর্তি মানুষ দিয়ে। সবাই হলুদের আয়োজন করতে আর বাড়ি সাজাতে ব্যস্ত। আজকে আমার সাথে রাজের গায়ে হলুদ। আর কালকে বিয়ে। বিয়ে টা বেশ জাঁকজমক ভাবেই প্ল্যান করেছে রাজ। এর আগে তো তেমন কিছুই হয়েছিল না বিয়েতে! তাই এবার সবকিছু খুবই ধুমধাম করে পালন হচ্ছে। তবে আমার মনটা খুব খারাপ। সেই কখন থেকে জানালার ধারে বসে বসে মন খারাপ করে আছি আমি। মন খারাপ হওয়ারও অবশ্য একটা কারন আছে। কালকে থেকে রাজের সাথে একটিবারও কথা হয়নি আমার। কেন জানি না ও আমার ফোন তুলছে না। বিয়ের আগেই আমাকে পর করে দিচ্ছে না তো? গত 15 দিন তো প্রত্যেক ঘন্টায় ঘন্টায় ফোন করে কথা বলতো আমার সাথে। আর কাল থেকে কি হয়েছে বুঝতে পারছি না। একটি বারের জন্যেও কি আমার কথা মনে পড়ছে না তার? ধুর বাবা কিচ্ছু ভালো লাগছেনা আমার। কখন থেকে মন খারাপ করে একা একা বসে থাকতে থাকতে বেশ বোর হয়ে যাচ্ছি আমি। হঠাৎ রাইয়ের ডাকে ধ্যান ভাঙল আমার। রাই আমার পাশে এগিয়ে এসে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বলল,

— কি হয়েছে আমার দুষ্টু ননদিনীটার? এভাবে মুখটা গোমরা করে বসে আছে কেন সে?

রাই এর কথা শুনে ওর দিকে গোমরা মুখ করে তাকালাম আমি। তারপর আবারো সামনের দিকে তাকিয়ে অসহায় কন্ঠে বলে উঠলাম,

— কি করবো বলো না! তোমার ভাইয়াটা কে দেখেছ, কত স্বার্থপর হয়েছে সে। কালকে রাত থেকে একটি বারের জন্যও ফোন করল না আমাকে। এদিকে আমি তাকে ফোন করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছি। কেন যে নতুন করে আবার বিয়ে করতে বললাম আমাকে? এখন তো মনে হচ্ছে উনি আমাকে পর করে দিচ্ছেন। কিছু ভালো লাগছে না।

আমার কথায় হাসতে হাসতে আমার সামনে এসে বসে পরলো রাই। তারপর আমার থুতনিতে হাত রেখে বলল,

— ওরে আমার দুষ্টু মিষ্টি ভাবি জান রে! তুমি তো দেখছি এখনই আমার ভাইয়াকে চোখে হারাচ্ছ? নতুন করে আবার বিয়ে হয়নি এখনই এতদূর? আরে একটু ওয়েট করো, আমার ভাইয়া যখনই এমন কিছু করে তখনই কোন না কোন চমক দিয়ে থাকে। হয়তো তোমার জন্যেও সে কোনো চমকের ব্যাবস্থা করছে। এখন কথা না বাড়িয়ে জলদি চলো তোমার গায়ে হলুদ হবে।

কথাগুলো বলেই আমাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে যেতে লাগল রাই। আমিও চুপচাপ বিরক্তিকর ভঙ্গিতে ওর সাথে যেতে লাগলাম। বাইরে এসে দাঁড়াতেই সবাই মিলে হাজির হলো আমাকে হলুদ লাগানোর জন্য। রাই আমাকে দাঁড় করিয়ে রেখে চলে গেল হলুদের বাটি আনতে। বেশ কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

— আপনারা একটু অপেক্ষা করুন। আমি একটু পরেই ওকে নিয়ে আসছি। আসলে একটি জরুরি কাজ পরে গেছে।

কথাগুলো বলেই কারো উত্তরের আশা না করে আমার হাত ধরে নিয়ে বাসার মধ্যে চলে এল রাই। আমি ওর হাত ছাড়িয়ে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,

— কি ব্যাপার রাই, হঠাৎ আমাকে ওখান থেকে এভাবে নিয়ে আসলে কেন? কি হয়েছে?

আমার কথার উত্তরে রাই আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,

— একটু প্রয়োজন আছে তোমার সাথে।

কথাটি বলেই আমাকে আমার রুমের মাঝে নিয়ে এসে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলল,

— তুমি এখানে একটু অপেক্ষা করো, আমি এক্ষুনি আসছি।

কথাটা বলেই আমাকে রেখে রুম থেকে বেরিয়ে গেল রাই। আমি কিছুই বুঝতে পারছিনা ও কি করতে চাইছে। এমনিতেই সকাল থেকে আমার মন খারাপ। তারপর রাই এর এমন আচরণে আরো বেশি খিটখিটে হয়ে যাচ্ছে মেজাজটা। কোন কিছুই ভালো লাগছে না। তাই বিছানা ছেড়ে উঠে আবারো জানালার পাশে চলে গেলাম আমি। রাগে যেন সারা শরীর জ্বলছে আমার রাজের ওপর। কেমন লোক উনি একটিবারও আমার কাছে ফোন করার প্রয়োজন মনে করলেন না? এই বুঝি তার ভালোবাসা?

হঠাৎ দরজা লাগানোর শব্দে ধ্যান ভাঙলো আমার। আমি জানালার দিক থেকে চোখ সরিয়ে দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম রাজ দাঁড়িয়ে আছে দরজার সামনে। সাদা রঙের পাঞ্জাবী পরা সাথে দুগাল ভর্তি হলুদ মাখানো। অসম্ভব সুন্দর লাগছে তাকে দেখতে। আমি বেহায়ার মত তার দিকে এক নজরে হা করে তাকিয়ে রইলাম। চোখের পলক যেন তার দিক থেকে ফেরাতে পারছিনা। ইশশ আমার বরটা এত সুন্দর কেন? যে শুধু দেখতেই মন চায়। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি গুটি গুটি পায়ে আমার পাশে এগিয়ে এলেন। তারপর আমার সামনে চুটকি বাজিয়ে বললেন,

— কি হলো এভাবে তাকিয়ে আছ কেন জান?

ওনার এতোটুকু কথাতেই যেনো শিউরে উঠলাম আমি। এক রাশ লজ্জা এসে ভর করলো আমার ওপর। আমি ওনার দিক থেকে চোখ নিচের দিকে নামিয়ে নিয়ে লজ্জামাখা গলায় বললাম,

— আ আপনি এখানে?

আমার কথার উত্তরে হালকা হাসলেন উনি। তারপর নিজের হাত দুটি পিছনে গুঁজে আমার মুখের সামনে নিজের মুখ টি নিয়ে এসে মিষ্টি হেসে বললেন,

— আমার বউটাকে হলুদ মাখা তে এসেছি।

উনার কথায় চোখ বড় বড় করে উনার দিকে তাকালাম আমি। সাথে সাথে উনি বুকের বা পাশে হাত দিয়ে বললেন,

— ইশশ এভাবে তাকিও না জান, এইখানটায় তীরের মত আঘাত লাগে তোমার এই চাহনিতে।

উনার কথায় আবারও লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম আমি। উনি এবার আমার আরো একটু কাছে এগিয়ে এসে বললেন,

— এভাবে লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে আমার সামনে থেকোনা জান। নয় পাগল হয়ে যাবো, অথবা হার্ট এ্যাটাক করে ফেলব। এমনিতেই তোমায় হলুদ শাড়ি পরা অবস্থায় দেখে হাফ হার্ট এটাক হয়ে গেছে আমার।

উনার কথায় আমি ওনার পাশ থেকে সরে এসে বিছানার উপর বসে অভিমানি গলায় বললাম,

— ইশশ, হয়েছে আমার সাথে আর এত ভালবাসা দেখাতে হবেনা। কাল রাত থেকে যে একটিবারের জন্য আমাকে ফোন করে নি। আমার ফোন রিসিভ করেনি। সেটা কি ভুলে গেছে সে?

উনি আমার পাশে এসে বসে আমার থুতনিতে হাত রেখে মুখটা নিজের দিকে তুলে নিজের কান ধরে বললো,

— স্যরি জান আসলে তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম। তাই ইচ্ছা করে ফোন ধরিনি। তবে জানো তোমার ফোন না ধরায় তোমার চাইতে হাজারগুণ বেশি কষ্ট হয়েছে আমার? তবে তোমাকে এই মুহুর্ত টুকু দেবো বলেই তো সেই কষ্টটা করেছি বলো? আমি এসেছি বলে কি তুমি খুশি হওনি?

ওনার কথায় অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে রাগি গলায় বললাম আমি,

— না হইনি। আপনি আমার ফোন ধরলেন না কেন আমি রাগ করেছি।

আমার কথায় উনি একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দরজার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বললেন,

— আচ্ছা ঠিক আছে আমি আসায় যখন তুমি খুশি হও নি। তাহলে আমি চলে যাচ্ছি। থাকো তুমি।

কথাটি বলেই দরজার দিকে পা বাড়ালেন উনি। আমি দ্রুত গিয়ে ওনার হাত ধরে ফেলে নিচের দিকে মুখ করে নরম গলায় বললাম,

— চলে যেতে বলেছি বলে চলে যাবেন? আমায় হলুদ মাখাবেন না?

আমার কথায় আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে আমার মুখোমুখি মুখ এনে টেডি হেসে বলে উঠলেন উনি,

— আমি জানতাম তুমি আমায় যেতে দেবে না। তাইতো চলে যাওয়ার নাটক করলাম জান।

— ইশশ আপনি বড্ড পঁচা, খুব বাজে একটা লোক।

— হুমম সে তুমি বলতেই পারো, তোমারই তো বর আমি।

উনার কথায় লজ্জা পেয়ে অন্যদিকে ঘুরে দাঁড়ালাম আমি। উনি আবার টেডি হেসে আমার সামনে এগিয়ে এসে বললেন,

— আমি বেশিক্ষণ এখানে দেরি করতে পারব না জান। এখনি হয়তো রাই এসে ডাক দেবে। তোমাকে হলুদ মাখিয়ে এখনই চলে যেতে হবে আমায়।

উনার কথায় অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম আমি ওনার দিকে। তারপর ছোট করে বলে উঠলাম,

— এখনই চলে যাবেন?

আমার কথার উত্তরে উনি কোন কথা না বলে আমার পাশে এগিয়ে এলেন। তারপর দুই হাত দিয়ে আমার গাল জড়িয়ে ধরে নিজের গাল আমার গালের সাথে ঘষে দিলেন। যার ফলে ওনার গালে লেগে থাকা হলুদ আমার দু গালে লেগে গেল। হলুদ মাখিয়ে দিয়ে আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড় করালেন উনি। তারপর অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

— আয়নার দিকে তাকিয়ে দেখো জান। তোমাকে কতটা সুন্দর লাগছে এই হলুদ রাঙা বউ এর সাজে।

আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে দেখে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। সত্যিই হলুদ মেখে হলুদ শাড়ি পড়ে অনেক সুন্দর লাগছে আমায়। পাশাপাশি ওনাকে সাদা পাঞ্জাবিতে আমার পাশে দাঁড়ানো দেখে আরো বেশি লজ্জা পেয়ে যাচ্ছি আমি। ওনার সাথে চোখাচোখি হতেই চোখ নামিয়ে নিয়ে বিছানায় এসে বসে পড়লাম আমি। অসম্ভব লজ্জা লাগছে আমার। আমার পাশে এসে আমার সামনে বসে আমার কপালে আলতো করে চুমু এঁকে দিয়ে বললেন উনি,

— হয়েছে জান বাকি লজ্জাটুকু না হয় কালকে পেও? এখন আমি চলে যাবো অনেক দেরি হয়ে যাচ্ছে। ফোনে কথা হবে, আল্লাহ হাফেজ।

কথাটি বলেই উনি দরজা খুলে বেরিয়ে চলে গেলেন। যাওয়ার আগে আর আমার দিকে ফিরে তাকাননি উনি। হয়তো কষ্ট হবে তাই। উনি চলে যাওয়াতে মন খারাপ হলেও কিছুক্ষণ আগের মুহূর্ত গুলো মনে পড়তেই মনটা খুশিতে ভরে গেলো আমার। বার বার সেই মুহুর্তগুলো মনে করে গালে লেগে থাকা হলুদ স্পর্শ করতে লাগলাম আমি। আর হাড়িয়ে যেতে লাগলাম ভাললাগার এক সীমাহীন জগতে।

রাইয়ের ডাকে ধ্যান ভাঙলো আমার। রাই এসে আমার গালের সাথে লেগে থাকা হলুদে হাত দিয়ে বলে উঠলো,

— আমার ভাবি টা দেখি লজ্জায় লাল হয়ে গেছে। বলি তোমার গালে এই হলুদটা কে মাখালো গো? নিশ্চয়ই আমার ভাইয়া তাই না?

ওর কথায় লজ্জা পেয়ে চোখ নামিয়ে নিলাম আমি। এবার ও একটু হেসে নিয়ে আমাকে লজ্জা দেওয়ার জন্য বলে উঠলো,

— বাব বাহ এখনি এত লজ্জা? বলি কালকে বাসর ঘরে কি করবে ভাবি?

রাইয়ের এমন কথায় আমি বুঝতে পারলাম ও আমাকে এখন পঁচানোর জন্য উঠে পড়ে লেগেছে। তাই আমিও বুদ্ধি করে বলে উঠলাম,

— কালকে ঠিক সে ভাবেই লজ্জা পাবো ভাবিজান, যে ভাবে আপনি আমার ভাইয়ের সাথে বাসর ঘরে লজ্জা পেয়েছিলেন।

আমার কথায় রাই বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকাল। তারপর দুজনেই একসাথে হেসে দিলাম। তারপর বেশ কিছুক্ষণ হাসাহাসি দুষ্টুমি করে রাই এর সাথে চলে গেলাম হলুদের স্টেজে। ওখানে যেতেই অনেকেই জিজ্ঞেস করল আমার গালে আগে থেকে হলুদ কি করে এলো তার কথা। রাই তাদের নানা রকম কথা দিয়ে বুঝিয়ে সব সামলে নিল। তারপর বেশ ভালোভাবে গায়ে হলুদ সম্পন্ন হলো আমার।

চলবে,,,,

You are my property
Part_38
M Sonali

সকাল ৯.১৫ মিনিট
হাতে মেহেদি পরে চুপ করে বসে আছি আমি। আর আমাকে ঘিরে ধরে বসে আছে আমার বান্ধবীরা, কাজিনরা আর রাই। সবাই অনেক হাসাহাসি আর দুষ্টুমি করছে আমার সাথে। আমিও ওদের সাথে কথা বলে বেশ মজা করছি। আর বাড়ি ভর্তি মানুষ জন আয়োজন করছে বিয়ের। আজকে আমার বিয়ে আমার রাজের সাথে। তাইতো এত ধুমধাম আর এত অনুষ্ঠান। আব্বু আম্মু আর ভাইয়া তো সেই তিনদিন আগে থেকে বিজি হয়ে আছে সব দিকে সামাল দিতে। সবাই মিলে কথা বলতে বলতে হঠাৎ রাই সামনে তাকিয়ে বলে উঠলো,

— আরে আরিশা আপু, তুমি এসেছ? এত দেরী করলে কেন আসতে? আর কালকে হলুদের অনুষ্ঠানে এলেনা কেনো?

কথাটি বলে আরিশার কাছে এগিয়ে গেল রাই। তারপর আরিশার হাত ধরে নিয়ে এলো আমার পাশে। আরিশা আমার পাশে এসে বসে আমার গালে হাত দিয়ে বলল,

— বাহ বেশ সুন্দর লাগছে তোমায় রাহি। দুঃখিত কালকে তোমার হলুদের অনুষ্ঠানে আসতে পারিনি। আর আজকে তোমার বিয়েতে ও থাকতে পারবো না।

ওর কথা শুনে আমি গোমড়া মুখ করে বলে উঠলাম,

— এটা কেমন কথা বলছ আরিশা? তুমি আমার বিয়েতে থাকবেনা কেন? আর কালকে হলুদ এই বা কেন এলেনা তুমি?

আমার কথায় আরিশা জোর করে হাসার চেষ্টা করে বলে উঠলো,

— আসলে কালকে আম্মুর হসপিটালে একটু কাজ পরে গিয়েছিলো। তাই আম্মুর সাথে সেখানেই থাকতে হয়েছিল আমায়। তুমি তো জানোই আমি ডাক্তার হতে চাই। তাই অনেক চাওয়া সত্ত্বেও তোমার হলুদে থাকতে পারিনি কাল। আর আজকে আমাকে একটি জরুরী কাজে বিদেশ যেতে হবে। দুই এক মাসের মাঝে ফিরে আসবো। তাই তোমার বিয়েতেও থাকতে পারছিনা। প্লিজ তুমি রাগ করো না রাহি। তবে কথা দিচ্ছি খুব দ্রুতই তোমাদের জীবনে ফিরে আসব আমি। আর তখন তোমাদের সাথে অনেক মজা করবো কেমন।

আরিশা আমার কাছে নিজের ব্যস্ততা দেখালেও, আমি বেশ ভালো করেই জানি ও কেন আমার বিয়েতে থাকতে চাইছে না। আরিশা তো রাজকে সত্যিই মন থেকে ভালোবাসে। তাহলে ও কিভাবে মেনে নেবে নিজের ভালোবাসার মানুষকে অন্যের সাথে বিয়ে হতে দেখে? তাই হয়তো আমার বিয়েতে থাকতে চাইছে না ও। বাহানা দেখিয়ে চলে যেতে চাইছে। আমি চাইলেও ওকে আটকাতে পারবো না। কেননা আমিও তো নিজের রাজের ভালোবাসা কারো সাথে ভাগ করতে পারবো না। বা কাউকে দিতে পারবো না। এতটা দয়াবানও নই আমি। তাই ওকে আটকালাম না। বরং ওকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলে উঠলাম,

— ঠিক আছে তোমার যখন মন চায় তুমি ফিরে এসো আরিশা। আমরা অপেক্ষা করবো তোমার জন্য।

আমার কথার উত্তরে ও শুধু আমার মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে ওর ব্যাগ থেকে একটি জুয়েলারি বক্স বের করল। তারপর সেটা আমার সামনে এগিয়ে দিয়ে বলল,

— তোমার বিয়েতে তো থাকতে পারবো না! কিন্তু তোমার বিয়ের গিফ্টা কিন্তু আনতে ভুল করিনি। এই নাও এটা আমার পক্ষ থেকে তোমাদের জন্য উপহার। সবসময় এটা নিজের কাছে রেখ। মনে রাখবে এটা শুধু তোমার বান্ধবী নয় তোমার বড় বোনের দেওয়া একটি উপহার তোমার জন্য।

কথাগুলো বলেই জুয়েলারি বক্স টা খুলে একটি অনেক সুন্দর লকেট সহ চেইন বের করলো আরিশা। লকেটার সাথে একটি সুন্দর হিরা লাগানো। এটা বেশ ভালভাবেই বুঝতে পারছি আমি। আমার হাতে মেহেদি থাকায় আমি সেটা স্পর্শ করতে পারলাম না। তাই আরিশা নিজেই পরিয়ে দিল আমার গলায়। তারপর কিছুক্ষণ আমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আর কোন কিছু না বলে অশ্রু ভেজা চোখ নিয়ে দ্রুত বেরিয়ে গেল আমার সামনে থেকে। আমি চাইলেও আর ওকে আটকাতে পারি না। কারন ও এখন কান্না করছে হয়তো নিজের মনের কষ্টগুলো চোখের জল দিয়ে মুছে ফেলতে। কিন্তু আমি যে নিরুপায়, চাইলেও ওর সেই অশ্রু মুছে দিতে পারবো না আমি।কারন ওর এই অশ্রু মুছে দিতে হলে আমার রাজকে ওকে দিতে হবে। সেটা কখনোই সম্ভব নয় আমার পক্ষে।

—————————

লাল টকটকে বিয়ের বেনারসি শাড়ি আর একগাদা গয়না পড়ে বধু সেজে বসে আছি আমি। বরযাত্রীও অনেক আগেই চলে এসেছে। কিন্তু এখন অব্দি রাজের সাথে একটিবারও দেখা হয়নি আমার। মনটা বেশ আকুপাকু করছে ওকে এক নজর দেখার জন্য। বর সেজে কেমন লাগছে সেটা যেন চোখে হারাচ্ছি আমি। কিন্তু উপায় নেই, আমাকে ঘিরে ধরে বসে আছে অনেক আত্মীয়স্বজন বান্ধবী ও কাজিনরা। সকলের চোখ ফাঁকি দিয়ে তো আর আমি গিয়ে নিজের বরকে দেখতে পারিনা বেহায়ার মত! তাই বিরক্তি নিয়ে বসে আছি আমি। আমার মত হয়তো রাজের ও এখন একই অবস্থা। কিন্তু কি আর করার ওর ও তো এখন সম্ভব নয় আমাকে এভাবে দেখতে আসার। তাই চুপচাপ বসে থাকাই ভালো মনে হচ্ছে। হঠাৎ কানের কাছে কারো ফিসফিস কথা শুনে ধ্যান ভাঙলো আমার। সেদিকে ঘুরে তাকিয়ে দেখি রাই আমার কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলছে,

— কি ব্যাপার ভাবিজান আপনার কি আমাদের ছেড়ে চলে যাবেন বলে মন খারাপ? নাকি আমার ভাইয়াকে এখন পর্যন্ত বর সেজে দেখতে পারলেন না সেজন্য মন খারাপ? কোন টা বলুন তো আমায়?

ওর কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। মেয়েটা এত দুষ্টু হয়েছে না কি বলবো। ভাইয়ার সাথে বিয়ে হয়ে আসার পর থেকে যেন দুষ্টুমিটা হাজার গুণ বেড়ে গেছে ওর। সব সময় আমার পিছু লেগে থাকে কি করে আমায় লজ্জায় ফেলা যায় এটা ভেবে। কি ডেঞ্জারাস একটা ননদিনী পেয়েছি রে বাবা। তবে ওর এই দুষ্টুমিগুলো ভীষণ ভালো লাগে আমার। কারন আমিও তো আর কম দুষ্টুমি করি না ওর সাথে, ভাইয়াকে জড়িয়ে। কিন্তু এখন কি করব সেটা ভেবে না পেয়ে ওর দিকে গরম দৃষ্টিতে তাকালাম আমি। আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ও খলখলিয়ে হেসে দিলো। তারপরে আবার আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,

— ভাবিজান যদি তুমি চাও তাহলে কিন্তু আমি ভাইয়ার সাথে এই মুহূর্তে তোমার দেখা করার ব্যবস্থা করে দিতে পারি। কিন্তু তার বদলে আমি কি পাবো?

ওর কথা শুনে খুশি তে যেনো মনটা নেচে উঠল আমার। ইচ্ছা করছে ওকে বুকে জড়িয়ে ধরে গালে একটা কিস করতে। কিন্তু এতো মানুষের সামনে এখন এটা করা সম্ভব নয়। তাই নিজেকে সংযত রেখে বলে উঠলাম,

— যা চাও তাই পাবে।

আমার কথায় পাজিটা আরো যেন হাসিতে ফেটে পড়তে লাগলো। ওকে এভাবে হাসতে দেখে আমার আশে পাশে বসে থাকা সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকাল ওর দিকে। সবাইকে এভাবে তাকাবে দেখে হাসি থামিয়ে নিজেকে শান্ত করলো রাই। তারপর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

— আপনারা সবাই এখানে একটু বসুন আমি একটু ভাবিকে নিয়ে ঘুরে আসছি। আসলে একটা প্রয়োজন আছে ওর সাথে, প্লিজ কেউ কিছু মনে করবেন না।

কথাটি বলে কারো কোনো উত্তরের জন্য অপেক্ষা না করে আমাকে সাথে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে চলে আসলো রাই। তারপর আমাকে সকলের চোখের আড়াল দিয়ে লুকিয়ে নিয়ে ছাদের দিকে যেতে লাগলো। ওকে ছাদে যেতে দেখে আমি থেমে গিয়ে বললাম,

— কি ব্যাপার রাই, এখন ছাদে যাচ্ছ কেন? তুমি না বললে রাজের সাথে দেখা করিয়ে দেবে?

রাই আমার দিকে তাকিয়ে আস্তে আস্তে বলল,

— আরে বাবা এখন কি আমাদের বাসার কোন রুম খালি আছে নাকি যে তোমাদের সেখানে দেখা করিয়ে দিব? এখন দেখা করতে হলে একমাত্র ছাদটাই খালি আছে। তাই সেখানেই চলো। তবে হ্যাঁ, জাস্ট পাঁচ মিনিট সময়। এর চাইতে বেশিক্ষণ কিন্তু আমি সকলকে সামলাতে পারবো না বলে দিলাম। আমি এখানে অপেক্ষা করছি তুমি জাস্ট যাবে আর আসবে।

রাই এর কথা শুনে আমি উপরে যেতে নিয়ে আবার থেমে গিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে বললাম,

–কিন্তু রাই তোমার ভাইয়া? ও কোথায়?

আমার কথার উত্তরে কপালে হাত দিয়ে বলল রাই,

— আরে বাবা তুমি তাড়াতাড়ি যাও ভাইয়া অনেকক্ষণ হলো তোমার জন্য ছাদে অপেক্ষা করছে।

ওর কথা শুনে আমি এক প্রকার দৌড়ে ছাদে উঠতে লাগলাম। তখনই পিছন থেকে রাই এর ফোনটা বেজে উঠল। ওর ফোন বেজে উঠতেই আমি সামনে না এগিয়ে সেখানেই থেমে গেলাম। রাই ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে আমাকে ইশারা করে উপরে যেতে মানা করে দিল। ওর ইশারা পেয়ে আমি উপর দিকে না গিয়ে আবার ধীরে ধীরে নিচে নেমে ওর পাশে এসে দাঁড়ালাম। ও ফোনে কিছুক্ষন হু হা করে কথা বলে ফোনটা কেটে দিয়ে আমার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,

— সরি ভাবী অনেক দেরি করে ফেলেছি তোমাকে নিয়ে আসতে। আসলে ভাইয়া চলে গেছে। কাজী সাহেব নাকি বারবার তাড়া দিচ্ছিল বিয়ে পড়ানোর জন্য। তাই ভাইয়া আর অপেক্ষা করতে পারেনি। তবে তুমি চিন্তা করো না একেবারে শুভদৃষ্টি টা না হয় বাসর ঘরে করে নিও। এখন প্লিজ আর মন খারাপ না করে আমার সাথে চলো। ওদিকে তোমাকেও হয়তো বিয়ে পড়াতে যাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

ওর কথায় একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে হাসিমুখে ওর সাথে আবারো সেই রুমে ফিরে এসে বসে পড়লাম আমি। তবে মন খারাপ হলো না আমার। কথায় আছে অপেক্ষার ফল মিষ্টি হয়। আমিও না হয় অপেক্ষা’ই করলাম ওনাকে বর বেসে দেখার জন্য।

একটু পর কাজী সাহেব এসে বিয়ে পড়িয়ে চলে গেলেন। খুব ভালোভাবেই বিয়েটা সম্পন্ন হলো আমাদের। এত সময়ের মাঝে একটি বারের জন্য ও রাজের সাথে দেখা হলো না আমার। এমনকি বিয়ের শেষে দুজনকে একসাথে বসিয়ে ছবি তোলার কথা। কিন্তু জানিনা কার আইডিয়া মতে সেটাও ক্যানসেল করা হলো। সবাই বলে দিল আমাদের দেখা একদম বাসর ঘরেই হবে। তাই রাজকে নিয়ে এসে আমার পাশে বসানো হলো না। এই কারণে আমার বেশ মন খারাপ হলেও নিজেকে সামলে নিলাম। তারপর সকলের থেকে বিদায় নিয়ে রাত দশটার দিকে রাজের সাথে গাড়িতে উঠে শ্বশুর-বাড়ির দিকে রওনা দিলাম আমরা। এতটুকু সময়ের মাঝে রাজের সাথে একটি কথাও হয়নি আমার।তবে রাজ আমার বাসার বাকি সকলের সাথেই কথা বলেছে আমার সামনেই। রাগে অভিমানে আমি ওর দিকে ফিরেও তাকাইনি একবার।

রাজের বাসার সামনে এসে গাড়ি থামলো। পুরো রাস্তা জুড়ে আমার সাথে একটি কথাও বলেননি রাজ। আমিও ওনার সাথে কথা না বলে গাড়ির একপাশে মুখ করে বাইরের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। খুব অভিমান হয়েছিল আমার। উনি কেমন লোক একটা, সারাটা রাস্তা একটি কথাও বলল না আমার সাথে? বিয়ে করে নিয়ে এসে কি পর করে দিচ্ছে আমায়? এসব কথা ভাবছি আর প্রচুর কান্না পাচ্ছে আমার। বাবা-মাকে ছেড়ে আসতেও এতটা কষ্ট হয়নি। কিন্তু এখন ঊনার অবহেলা সহ্য করতে পারছিনা আমি। খুব কষ্ট হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে বিয়ে করে নিয়ে এসে উনি আমাকে পর করে দিচ্ছেন। বা আমার কোন ভুলের শাস্তি দিচ্ছেন উনি। আমাকে গাড়িতে বসিয়ে রেখেই উনি গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে নেমে সোজা বাসায় ঢুকে গেল। ওনার এমন আচরণে ভীষন অবাক হলাম আমি। আমি গাড়ি থেকে না নেমে গাড়িতেই চুপ করে বসে রইলাম। এবার সত্যিই দু চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পরার উপক্রম হল আমার। তখনই খেয়াল করলাম উনি আবারো বাসা থেকে বেরিয়ে আসছেন। তবে ওনার মুখে মুচকি হাঁসি। উনি এসেই গাড়ির দরজা খুলে আমাকে গাড়ি থেকে কোলে তুলে নিলেন। তারপর কোলে করে নিয়ে বাসার দিকে এগিয়ে যেতে লাগলেন। আমি ওনার গলা জড়িয়ে ধরে অবাক চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আসলে কি করতে চাইছেন উনি? তবে উনি একটিবারের জন্যেও আমার মুখের দিকে তাকালেন না। ওবার দৃষ্টি সোজা বাসার দরজার দিকে।

আমাকে কোলে করে নিয়ে সোজা বাসার মধ্যে ঢুকে গেলেন উনি। দরজা দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই অবাক হয়ে গেলাম আমি। কেননা পুরো বাসাটাই অন্ধকারাচ্ছন্ন। শুধু টিপটিপ করে কয়েকটি মোমের আলো জ্বলছে। তাতে যা একটু অস্পষ্ট দেখা যাচ্ছে সব। আমি অবাক হয়ে উনাকে কিছু বলতে যাব, তার আগেই উনি আমায় থামিয়ে দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়েই বলে উঠলেন,

— চুপ কোন কথা নয়!

উনার কথা শুনে আমি চুপ করে গেলাম। কোন কথা বলছি না। উনি আমাকে কোলে করে নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উঠে উপর তলায় চলে গেলেন। তারপর উনার রুমের দরজার সামনে গিয়ে নামিয়ে দিলেন আমায়। আমাকে নামিয়ে দিয়ে উনি কোথায় যেন চলে গেলেন। পুরো বাসায় মোমবাতি জালানো বলে কোন কিছুই স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে না। তাই উনি হঠাৎ কোথায় চলে গেলেন আমি ওনাকে আর কোথাও দেখতে পেলাম না। এবার বেশ বিরক্ত লাগছে আমার। রাগও হচ্ছে প্রচুর। কেন জানিনা কিছু ভালো লাগছেনা। এখন ইচ্ছে করছে বাসায় ফিরে যাই ওনার সাথে আর কথাই বলব না। কিন্তু কি আর করার বিয়ে যখন করেছি এখানে তো থাকতে হবে। তাই দরজা ঠেলে সোজা রুমের মধ্যে ঢুকে পড়লাম আমি। সাথে সাথে উপর থেকে হাজার গোলাপের পাপড়ি ছড়িয়ে পড়ল আমার উপর। আর-রূম জুরে তাজা ফুলের সৌরভে সুরভিত হয়ে গেল আমার নাক। আমি অপলক দৃষ্টিতে চারিপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম। পুরো রুমটা একদম তাজা ফুল দিয়ে সাজানো। অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে রুমটা। যেন কোন ফুলের বাগানের চাইতে কম নয়। যে ফুলের বাগানে পাতাবিহীন শুধু ফুলই ফুটে আছে। আমি অবাক দৃষ্টীতে রুমটা দেখতে দেখতে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলাম। পুরো মেঝেতেও যেন ফুল দিয়ে বিছানা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু ফুল আর ফুল সব জায়গায়। খুশিতে চোখে জল এসে গেল আমার। ইচ্ছে করছে পুরোটা রুমে পাগলের মত লাফালাফি করে ফুলগুলো দিয়ে খেলি আমি। ছোটবেলা থেকেই ফুল অনেক ভালবাসতাম আমি। এমন একটি ফুলে রাঙানো বাসর ঘরের কথা চিন্তাও করতে পারিনি আমি। এতটা সুন্দর করেও কেউ বাসর ঘর সাজাতে পারে? আমি যখন এসব ভাবনায় ব্যস্ত, তখনই পিছনে কোন কিছুর শব্দ পেয়ে পিছন দিকে ঘুরে তাকালাম আমি। আর তাকাতেই দেখতে পেলাম হাতে এক গুচ্ছ গোলাপ নিয়ে আমার পিছনে আমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজ। ওর দিকে তাকাতেই ভীষণ লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। কারন ওর চোখে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি আমার প্রতি ওর একটি নেশা কাজ করছে। ও নেশা ভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। রাজ একপা একপা করে আমার পাশে এসে দাড়ালো। ওকে কাছে আসতে দেখে লজ্জায় চোখ নামিয়ে নিলাম আমি। ও আমার থুতনি ধরে আমার মুখটা ওর মুখোমুখি নিয়ে বলে উঠল,

— এই মেয়ে, তুমি কি আমার’ই বউ? শুধু আমার?

উনার কথায় বেশ অবাক হলাম আমি। এটা আবার কেমন প্রশ্ন? বিয়ে করে নিয়ে এসে বলছে আমি ওনার বৌ কিনা? তাই কোমরে হাত দিয়ে বেশ রাগী লুকে উনার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,

— তো আপনার কি মনে হয় আমি অন্য কারো বউ? ঠিক আছে তাহলে আপনি আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেন? আমি চলে যাচ্ছি আমার বরের কাছে!

আমাকে চলে যেতে দেখে উনি আমার হাত ধরে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললেন,

— চলে যেতে দেবো বলে তো এখানে নিয়ে আসিনি তোমায় জান। তুমি গেলে যে আমার জান বেরিয়ে যাবে। আসলে কি বলতো সকাল থেকে তোমাকে বধু সাজে একটি বার দেখবো বলে পাগল হয়েছিলাম আমি। অনেক বার সুযোগ পেয়েও হারিয়েছি। তাইতো গাড়িতে ওঠার পর আর তোমার সাথে কথা বলিনি বা তোমার দিকে ফিরেও তাকাই নি। কারণ আমি চেয়েছিলাম সারা দিন যখন ধৈর্য ধরতে পেরেছি তাহলে তোমাকে না হয় একদম বাসর ঘরে এসেই মন ভরে দেখব। তাইতো এত আয়োজন।

উনার কথায় বেশ লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। লজ্জা পাওয়া ভঙ্গিতে নিচের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,

— তাহলে আপনি পুরো বাসার লাইট অফ করে রেখেছেন কেন? আর এত মোমবাতি’ই বা জ্বালিয়েছেন কেন?

— যে ঘরে এমন সুন্দর একটি চাঁদ আছে, যার রূপের আলোতে পুরো ঘর আলোকিত হয়। সেই ঘরে লাইট এর কি দরকার বল? আজ রাতে না হয় আমি এই চাঁদের আলোতেই কাটিয়ে দিব। লাইটের আলো নাই বা জ্বালালাম আজ।

কথাটি বলেই আরও গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলেন উনি আমাকে। উনার কথায় এবার অনেকটা বেশি লজ্জা পেয়ে গেলাম আমি। তাই উনার দিকে ঘুরে উনার বুকে মুখ লুকালাম আমি। উনি আমাকে পরম ভালবাসায় বুকে জড়িয়ে নিলেন। সাথে উনার মুখে ফুটিয়ে তুললেন বিজয়ের হাসি। আজ যে পূর্ণতা পাবে আমাদের অপূর্ণ ভালবাসা। আর সম্পন্ন হবে আমাদের অসম্পূর্ণ ভালোবাসার গল্প। যে ভালোবাসায় থাকবে না আর কোনো বাধা-বিপত্তি। যে ভালোবাসা হবে সারাটি জীবনের বেঁচে থাকার দিক নিদর্শন। যতদিন বেঁচে থাকবো এই ভালবাসায় যেন সারা জীবন জড়িয়ে থাকতে পারি দুজন।

(এখন সবাই বিদায় হন। এর পরের টুকু আর না জানলেও চলবে। সেটা না হয় শুধু ওদের মাঝেই থাকলো। তবে কাহিনি কিন্তু এখানেই শেষ নয়। বরং এবার হবে আসল কাহিনির শুরু। পাঠকেরা হয়তো খেয়ালই করেনি যে গল্পে এখনো অনেক রহস্য বাকি আছে। যেগুলোর উত্তর এখনো আমি বলিনি। যেমন রাজকে প্রথম পর্বে কে বা কারা আহত করে রাস্তায় ফেলে রেখেছিলো? এমন আরো কিছু রহস্য খুলবো শুধু একটু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। ধন্যবাদ সবাইকে)

চলবে,,,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here