#গল্প১৩৮
#সূর্যের_পারিজাত (১৫)
১.
সূর্য মন দিয়ে কম্পিউটারে একটা লেখা টাইপ করছে, ‘যত্ন সহকারে ইংরেজি পড়াতে চাই, ৮ম শ্রেণি থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পর্যন্ত’। তারপর নিচে নিজের নাম আর মোবাইল নাম্বারটা লিখে।
গত কয়েক দিন ধরে ও বইমেলায় যায়নি, ভালো লাগে না। পারিজাতও এই ক’টা দিন কলেজের কি একটা কাজে খুব ব্যস্ত, আসতে পারছে না। এতে অবশ্য ওর সুবিধেই হয়েছে, তা না হলে পারিজাত ঠিক বুঝে ফেলত ও বইমেলাতে যাচ্ছে না। এই ফাঁকে ও কয়েকটা অফিসে চাকরির জন্য যোগাযোগও করেছে। পুরনো বন্ধুদের খুঁজে খুঁজে তাদের অফিসে দেখা করে এসেছে, সিভি দিয়ে এসেছে। প্রথমটায় ওকে দেখে সবাই একটু ধাক্কাই খেয়েছে। তারপরও যত্ন করেই সিভি রেখেছে, কিন্তু কেউ তেমন আশ্বাস দিতে পারেনি। সূর্য ভাবে সবাই কত এগিয়ে গেছে, সেখানে ও কি করে যে শুরু করবে তাই বুঝে উঠতে পারছে না।
সেদিন পারিজাতের ইংরেজি পড়ানোর কথাটা মনে হতেই ওর মনে হলো, বাহ, এই কাজটা তো ও করতে পারে। এটা ওর জন্য খুব সহজ। অন্তত এর জন্য অন্য কারো সাহায্য নিতে হবে না।
এইসব হাবিজাবি যখন ভাবছে ঠিক তখন পারিজাতকে দেখা যায়, মুখে একটা সুন্দর হাসি, দেখলেই মনটা ভালো হয়ে যায়।
কাছে এসে একটু অবাক গলায় বলে, ‘তুমি এখন এখানে? বইমেলায় যাওনি?’
সূর্য ধরা পড়ে যাবার ভঙ্গিতে বলে, ‘আজ যাইনি পারিজাত। তোমার সাথে একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে।’
পারিজাত কাছে আসে, বলে, ‘আমারও গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে। দাঁড়াও রাজুকে আগে একটু নাস্তা আনতে পাঠাই।’
নাস্তা আনার ছুতোয় রাজুকে বাইরে পাঠিয়ে পারিজাত এবার সূর্যের কাছ ঘেঁষে বসে। কোমল গলায় বলে, ‘আগে তোমার কথাটা শুনি। কী গুরুত্বপূর্ণ কথা। কিন্তু তুমি বইমেলায় যাওনি কেন বলো তো?’
সূর্য ওর একটা হাত মুঠোতে নিয়ে বলে, ‘পারিজাত, তুমি আমাকে জীবনে এগিয়ে দেবার অনেক চেষ্টাই করছ। এই এত টাকা খরচ করে বুকশপটা নিয়েছ অথচ এখান থেকে তেমন একটা টাকা আসছে না। আমি চেষ্টা করছি, কিন্তু আসলে ব্যাপারটা এত সহজ না। আর ওই বই লিখে কিছু হবে না। আমি জানি তুমি চেষ্টা করছ, তোমার কলেজের ছেলেদের বই কেনার জন্য পাঠিয়েছ। কিন্তু এভাবে হয় না। তুমি তোমার কলেজের ছেলেদের বইমেলায় না পাঠিয়ে বরং আমার কোচিং এ পাঠিও। আমি চিন্তা করছি ইংরেজি পড়াব, এতে খুব সহজেই কিছু টাকার ব্যবস্থা অন্তত হবে। আমার এখনো মায়ের কাছে হাত পাততে হয়।’
পারিজাতের বুকের ভেতর কেউ যেন ছুরি চালিয়ে দিল, ভীষণ কষ্ট নিয়ে অবাক চোখে বলে, ‘তুমি কোচিং করাবা? বুকশপটায় বসবে না? আমি তোমার জন্য রাত দিন পরিশ্রম করে প্রাইভেট পড়িয়ে টাকা জমিয়েছি যাতে তুমি এই বুকশপটায় বসতে পারো। মাত্র এই ক’টা দিনেই বুঝে গেলে যে ব্যবসাটা চলবে না? নাকি আমার টাকা বলে তোমার ইগোতে লাগছে?? কোচিং করানো কী কোনো ক্যারিয়ার হতে পারে? তুমি সারাজীবন এমন প্রাইভেট পড়িয়ে যাবে? হায়, আমি চেয়েছিলাম তুমি বুকশপটা আরো বড় করবে, পাশাপাশি বই লিখবে। তোমার লেখার হাত তো অনেক ভালো। হ্যাঁ, আমি আমার কলেজের ছেলেদের যেতে বলেছি, তাতে অন্যায় হয়ে গেল? প্রথম প্রথম এভাবেই করতে হয়। আগে তো পরিচিত মানুষেরা জানবে তারপর তাদের মুখ থেকে অন্যরা। আমি বিশ্বাস করি একদিন তুমি বড় লেখক হবে। আর তুমি! এত দ্রুত হতাশ হয়ে গেলে?
বাবা মাকে বিয়ের কথা বলেছিলাম, আমি কত গর্ব করে বলেছিলাম যে তুমি বুকশপ দিয়েছ, বই লিখেছ। তুমি ঠিক ভালো করবে। কিন্তু বাবা মা বলেছিলেন, তুমি কোনো কাজ মন দিয়ে করতে পারবে না, অল্পতেই হাল ছেড়ে দেবে। বাবা মা দেখি ঠিক কথাই বলেছেন।
আমি ভেবেছিলাম তুমি হাল না ছেড়ে শক্তভাবে লেগে থাকবে আমার স্বপ্নটা পূরণ করতে। আর তুমি কিনা এসব অবহেলায় দূরে ঠেলে দিয়ে কোচিং করানোর মতো কাজ খুঁজছ!’
সূর্যের ভীষণ মন খারাপ হয়, পারিজাত এমন করে বলতে পারল! ও কোচিংটা করতে চেয়েছে যাতে হাতখরচটা আপাতত ম্যানেজ হয়। বুকশপটাতে ও বসবেই, পারিজাতের এত কষ্টের টাকা কী ও জলে যেতে দিতে পারে! কিন্তু পারিজাত সব না শুনেই এমন করে বলল।
সূর্য অভিমানী গলায় বলে, ‘তুমি আমাকে তোমার বাবা মার চোখে যোগ্য দেখাতে অনেক কিছুই করছ। আমি যা না তুমি তাই জোর করে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছ। তার চেয়ে তোমার আশেপাশে অনেক যোগ্য লোক আছে, তাদের মাঝে কাউকে বিয়ে করো।’
পারিজাত বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে আছে, সূর্য এমন একটা কথা বলতে পারল! যে মানুষটার জন্য এতটা দিন অপেক্ষা করে বসে আছে, সেই মানুষটা এত সহজেই এমন একটা কথা বলল! ভীষণ অভিমানে চোখে জল চলে আসে। গলাটা বুজে আসছে, কান্নাটা সামলে নিয়ে কোনোমতে বলে, ‘আমি একটু আসছি, বাসায় তাড়া আছে।’
সূর্য কিছু বলতে যেয়েও বলে না। পারিজাত কেন ওর মনের কথাটা বোঝে না? এই বয়সে কারো কাছে হাত পেতে টাকা চাইতে যে কী খারাপ লাগে তা ও ছাড়া আর কেউ বুঝবে কি করে! কোচিংটা খারাপ কিসে? ও ভেবেছিল, বাসাটা শাহবাগে নিয়ে নিলে তখন সহজেই সকালে দু’টো ব্যাচ পড়াতে পারবে। বুকশপটা তো সকাল দশটার আগে খুলবে না। আসলে পারিজাত ওকে সমাজের সবার কাছে প্রতিষ্ঠিত দেখাতে চায়, কিন্তু এমন জোরজার করে কিছু হয়?
আজ বাসার পথটা ভীষণ দূরের মনে হয় পারিজাতের। সূর্য যখন এগিয়ে দিত তখন হুশ করেই পথটুকু শেষ হয়ে যেত। আজ যেন পথটা শেষ হয় না। পারিজাতের চোখের জল বাধ মানছে না। সূর্যের বলা শেষ কথাগুলো বার বার মনে পড়ে যাচ্ছে। সূর্যকে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা ও করবে না তো কে করবে? ওর জন্যই তো মানুষটা নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করে জেলে ছিল। এখন যখন সময় এসেছে তখন ও চেষ্টা করবে না? আর সূর্য কিছু করুক বা নাই করুক, ওকে ছেড়ে যাবার কথা কখনো মনের কোণে ঠাঁই পাইনি। আর সেই কথাটা সূর্য এমন করে বলে দিল? একটাবার ভাবল না শুধু সূর্যের জন্য পারিজাত এই এতটা দিন অপেক্ষা করে বসে ছিল। তাহলে কী সূর্য ভাবল যে পারিজাত শুধু কৃতজ্ঞতা বশেই এসব করেছে? সূর্য ওকে বাঁচিয়েছিল তাই ও এসব করেছে? পারিজাত মনের ভেতর আঁতিপাঁতি করে খুঁজে দেখে, নাহ সেখানে তো এমন কিছু নেই। বরং একটা মায়া আছে মানুষটার জন্য, নরম একটা মায়া। সূর্য, এমন করে বললে তুমি!
২.
ঢাকা থেকে টাঙ্গাইল আসতে সময় লাগে তিন ঘন্টা। বিশেষ করে চন্দ্রার মোড় পার হবার পর তো একদমই সময় লাগে না। চার লেনের রাস্তায় কোথাও কোনো জ্যাম নেই। সূর্য আজ ভোরেই রওনা দিয়েছে, তাতে সময়টা আরো কম লেগেছে। যেতে হবে বাসাইল থানার একটা গ্রামে যেখানে জাহাঙ্গীর থাকত। জেল থেকে আসার সময় ওর গ্রামের বাড়ির ঠিকানাটা নিয়ে এসেছিল।
গত দুটো দিন ধরে এত খারাপ লাগছিল, কোনো কিছুই ভালো লাগছিল না। তখন হঠাৎ করেই মনে হলো জাহাঙ্গীর ভাইয়ের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি, ওনার বোনের কবরটা জিয়ারত করে আসি। মাকে বলতেই খুব খুশি হয়েছেন। পারিজাতকে ফোন করেছিল, ও ধরেনি। সূর্য একটা মেসেজ লিখে এসেছে যে ও এখানে আসছে। ইচ্ছে ছিল পারিজাতকে নিয়ে আসার, কিন্তু কেমন করে যে কথাগুলো ও বলে ফেলল। পারিজাত নিশ্চয়ই অনেক কষ্ট পেয়েছে।
ভাবতে ভাবতে সূর্য গ্রামটায় পৌঁছে। গ্রামের ভেতর এখন পিচ ঢালা রাস্তা হয়ে গেছে। দু’পাশে দিগন্ত বিস্তৃত ধান ক্ষেত, কচি কচি সবুজ ধানের চারা বাতাসে দোল খাচ্ছে। সূর্য মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে, বুক ভরে নিশ্বাস নেয়।
একটু এগোতেই একটা ছোট্ট চায়ের দোকান পড়তেই ওর চায়ের তেষ্টা বাড়ে। এই সকালেই অনেকেই চা খেতে এসেছে। কেউ আবার হাতে নোনতা বিস্কুট চায়ে ডুবিয়ে আয়েশ করে খাচ্ছে। সূর্যকে দেখে লোকজন কৌতুহলী চোখে তাকায়, গ্রামে নতুন মুখ, ওরা সহজেই বুঝতে পারে। একজন মাঝ বয়েসী লোক ওকে বিনয়ের সাথে জিজ্ঞেস করে, ‘ভাই, এইখানে কার বাড়ি আসছেন?’
প্রশ্নটা করাতে সূর্যের সুবিধেই হয়। ও ভাবছিল নিজেই জিজ্ঞেস করবে। চায়ে চুমুক দিয়ে বলে, ‘জাহাঙ্গীর ভাইয়ের বাড়ি যাব, ওনার বাড়িটা চেনেন?’
লোকটার চোখে একটা ভয় দেখা যায়, আশেপাশের মানুষজন এবার সতর্ক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকায়। লোকটা গলা খাকড়ি দিয়ে বলে, ‘আপনি কি পুলিশের লোক?’
সূর্য বোঝে জাহাঙ্গীর মানেই পুলিশের সাথে কিছু না কিছু। ও মাথা নেড়ে বলে, ‘উনি আমার পরিচিত একজন। ওনার বড় ভাইয়ের নাম তো আসাদ, আমাকে ওনার বাড়িটা একটু কেউ দেখিয়ে দেবেন?’
যে লোকটা প্রশ্ন করেছিল, সে মাথা নাড়ে, তারপর একটা কম বয়েসী ছেলেকে ডেকে বলে, ‘ওই মুকুল, ওনারে জাহাঙ্গীরের বাড়িতে দিয়া আয়।’
সূর্য চা টা শেষ করে হাতের ব্যাগটা নিয়ে বের হয়। লোকগুলো কেমন একটা চোখে ওর যাবার পথে তাকিয়ে থাকে।
খুব বেশিদূর হাঁটতে হয় না, ওরা পৌঁছে যায়। সূর্য মুকুল নামের ছেলেটাকে ব্যাগ থেকে একটা চকলেট বের করে দেয়, ছেলেটা খুশি হয়।
সূর্য বাড়িটার ভেতর ঢুকতেই একজন মাঝ বয়েসী মানুষের মুখোমুখি হতেই ও সালাম দিয়ে বলে, ‘আমি সূর্য, জাহাঙ্গীর ভাইয়ের সাথে এক কারাগারেই ছিলাম। আপনি নিশ্চয়ই আসাদ ভাই?’
লোকটার চোখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে, ‘তুমি আইছ? কাইল তোমার ফোন পাইয়া আমি খুব অবাক হইছি। আমার ভাইটা, অন্যায় মাইনা নিত পারত না। আমাগো ফুলের মতো বোনটারে ওরা অসম্মান করছিল, ও ঠিক শাস্তি দিছে। আমি ভীতু মানুষ, আমি পারি নাই। কিন্তু জাহাঙ্গীর খুব সাহসী, আমার ভাই।’
শেষ কথাটা বলতে গিয়ে ওনার গলাটা ধরে আসে, চোখটা মুছে বলেন, ‘একটু জিরাই নেন। কাইল যখন বললেন আমার বোনটার কবর জিয়ারত করবেন, বুকে একটা মোচড় দিয়ে ওঠল।’
সূর্য একটা মোড়া নিয়ে উঠানে বসতেই বাড়ির সবাই ওকে দেখতে আসে। আসাদ ভাইয়ের বউ, দুই ছেলে, সবাই কৌতুহল নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে থাকে।
সূর্য একটা ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলে, ‘আসাদ ভাই, আগে কবরটা জিয়ারত করে আসি। আমাকে আজকেই ঢাকায় ফিরতে হবে, মা একা বাসায়।’
আসাদ মাথা নাড়ে, তারপর ওকে নিয়ে কবরস্থানের দিকে এগোয়। গ্রামের এককোণে একটা খালি জায়গা, বাঁশের বেড়া দিয়ে জায়গাটা ঘেরা। সীমানা দিয়ে গাছের সারি। জায়গাটা খুব নিরিবিলি। আসাদ একটা সুপারি গাছের নিচে এসে দাঁড়ায়, বলে, ‘এখানেই আমার বোনটা শুইয়া আছে।’
সূর্যের বুকটা ভারী হয়ে ওঠে, জাহাঙ্গীরের মুখটা মনে পড়ে। ওর সাথে এই লোকটার অনেক মিল, ওরা দু’জনেই প্রিয় মানুষের জন্য খুন করেছে। প্রিয় মানুষ, পারিজাত! একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে ওর বুক চিরে। সূর্য কয়েকটা সুরা পড়ে, আস্তাগফিরুল্লাহ পড়ে। তারপর মোনাজাত করে, মনের গভীর থেকে দোয়া করে মেয়েটার জন্য।
দুপুরে সবার সাথে ও একসাথে বসে খায়। ঝাল ঝাল মুরগির মাংস, ডাল। কী যে মজা এই গ্রামের রান্না! তৃপ্তি করে খায় সূর্য। আসাদ ভাই বারবার অনুরোধ করে থেকে যাওয়ার জন্য, কিন্তু সূর্য মায়ের কথা বলতেই উনি আর জোর করেন না।
সেদিন ফেরার পথে প্রকাশক সাহাদত হোসেনের ফোনটা পায়। ভ্রু কুঁচকে ফোনটা ধরতেই ওনার উচ্ছ্বসিত গলা পাওয়া যায়, ‘ভাই, আপনি কই? লোকজন স্টলে এসে আপনাকে খোঁজে, দেখতে চায়। আপনার বইয়ের তো প্রথম মুদ্রণ শেষ প্রায়। দ্বিতীয় মুদ্রণ করতে হবে।’
সূর্য অবিশ্বাস নিয়ে কথাগুলো শোনে, তারপর অবাক গলায় বলে, ‘কী বলছেন, এটা কী করে সম্ভব হলো?’
সাহাদত বলেন, ‘আরে ওই যে পত্রিকায় আপনার এই গল্পের পেছনের গল্পটা ছাপা হবার পর লোকজন তো হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। আপনার জেলের জীবন, পারিজাতের আপনার জন্য অপেক্ষা, আপনার মায়ের কষ্ট, মানুষ তো পুরো আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছে। এদিকে অনলাইনেও ভালো বিক্রি হচ্ছে।
ভাই, প্লিজ কালকেই স্টলে চলে আসেন, দ্বিতীয় মুদ্রণ দু’ একদিনের মাঝেই চলে আসবে। তখন এর মোড়ক উন্মোচন করব জাঁকজমক করে।’
সূর্য ভ্রু কুঁচকে ভাবে, পত্রিকায় ওর গল্প নিয়ে কে লিখল? এ নিশ্চয়ই পারিজাতের কাজ। একটা ভালো লাগা টের পায় সূর্য, খুব ইচ্ছে করছে পারিজাতকে ফোন দেয়। ওর বইয়ের প্রথম মুদ্রণ শেষ এটা জানলে যে মানুষটা সবচেয়ে বেশি খুশি হবে সে তো পারিজাত। ইশ, কেমন করে ও পারিজাতকে সেদিন অমন কঠিন কথা বলেছিল! যে মানুষটা ওর জন্য এতটা বছর অপেক্ষা করেছিল, নিজের উপার্জিত সব টাকা শুধু ওর একটু ভালোর জন্য ব্যয় করে রেখেছে, ওর বই যাতে চলে তার জন্যও কত কি করেছে ও। পারিজাত তো ওর সামান্যতমও কষ্ট না হয় তার চেষ্টাই করে গেছে। তাহলে ও এমন রাগ কেন করল? মনকে প্রশ্ন করে, এটা কি নিজে কিছু না করতে পারার হতাশা থেকে? আসলে ওর নিজেরও ইচ্ছে হয় পারিজাতের জন্য কিছু করে দেখাতে যেন ওকে নিয়ে ও মানুষের কাছে গর্ব করতে পারে।
সূর্য ভাবে যে মানুষটার জন্য ও সব তুচ্ছ করতে পারে তার স্বপ্নটুকু পূরণ করতে ও না হয় একটু ছোট হলো। বইমেলায় যাবে, স্টলের সামনে তো এখন শুকনো মুখে ঘুরতে হবে না। আর পারিজাতের কলেজের ছেলেরা আসলে এখন ও হাসিমুখেই অটোগ্রাফ দেবে। এখন থেকে নিয়ম করে বুকশপটায় বসবে। তবে সবার আগে ওর কলেজে যেতে হবে, হাত ধরে সরি বলবে। ইশ, পারিজাতকে এমন পচা কথা ও বলল কী করে!
(চলবে)
মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর
০৯/০৩/২০২২