তুমি_শুধু_আমারই_হও লেখনীতে- অরনিশা সাথী |১৪|

#তুমি_শুধু_আমারই_হও
লেখনীতে- অরনিশা সাথী

|১৪|

বিছানায় শুয়ে এপাশ ওপাশ করছে অর্নি। কিছুতেই ঘুম ধরা দিচ্ছে না চোখে। বড্ড অস্থির অস্থির লাগছে। মাথাটা প্রচন্ড ধরেছে৷ তাই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো এক মগ কফির জন্য। বেশ কিছুক্ষণ পর কফির মগ হাতে ব্যালকোনিতে গিয়ে দাঁড়ালো অর্নি। দৃষ্টি দূর আকাশে। কিছুক্ষণ বাদে বাদে কফির মগে চুমুক দিচ্ছে। হঠাৎই উৎসবের কথা মনে হলো ওর। উৎসবের এমন হঠাৎ বদলে যাওয়াটা ও মানতে পারছে না। উৎসবের নিরবতা ওকে ভীষণ ভাবে কষ্ট দিচ্ছে। রুম থেকে ফোন এনে নূরের নাম্বারে ডায়াল করলো। নাম্বার বিজি পেয়ে বিরক্তিতে মুখ দিয়ে ‘চ’ শব্দ করলো। বেশ কিছু সময় বাদে নূর কলব্যাক করলো৷ দ্রুত ফোন রিসিভ করলো অর্নি। নূর জিজ্ঞেস করলো,
–“স্যরি দোস্ত, আসলে শান্ত’র সাথে কথা বলছিলাম তো তাই তোর ফোনটা ধরতে পারিনি।”

অর্নি উদাস কন্ঠে বললো,
–“ইট’স ওকে৷ আমারই বোঝা উচিত ছিলো তোর আর শান্ত ভাইয়ের নতুন একটা সম্পর্ক হয়েছে। এসময় তোর নাম্বার বিজি থাকবেই। স্যরি।”

নূর কপাট রাগ দেখিয়ে বললো,
–“এই ফর্মালিটি কাকে দেখাচ্ছিস তুই? শান্ত’র সাথে আমার নতুন একটা সম্পর্ক হয়েছে তাতে কি? তোর যখন ইচ্ছে হবে ফোন দিবি৷ তুই আর রুশান আগে যেমন ছিলি ইন ফিউচার তেমনই থাকবি।”

অর্নি ছোট্ট করে ‘হুম’ বললো। নূর বললো,
–“এতরাতে ফোন দিলি যে? কিছু হইছে?”

নূরের প্রশ্নে অর্নি আমতা আমতা শুরু করে দিলো৷ ও কিভাবে উৎসবের কথা জিজ্ঞেস করবে ভেবে পাচ্ছে না। অর্নিকে এমন আমতা আমতা করতে দেখে নূর চট করেই বুঝে ফেললো ও কি বলতে চায়। নূর মুচকি হেসে বললো,
–“ভাইয়ার কথা জানার জন্য ফোন করেছিস?”

–“না মানে___”

–“বুঝেছি বুঝেছি৷ আমার থেকে লুকাতে হবে না৷ কি জানতে চাস বল?”

অর্নি আমতা আমতা করে বললো,
–“তোর ওই কাজিন ইশা, ও কি উৎসব ভাইকে সত্যি সত্যিই প্রপোজ করেছে?”

অর্নির কথায় নূর নিঃশব্দে হাসলো। তারপর বললো,
–“জানি না রে, ভাইয়ার সাথে কথা হয়নি আমার। তবে সন্ধ্যায় দুজনে যেভাবে হাসতে হাসতে বাসায় ফিরলো মনে তো হচ্ছে___”

অর্নি খট করে লাইন কেটে দিলো। বাকী কথাটুকু ওর মোটেও শুনতে ইচ্ছে করছে না। নূর বার কয়েক ফোন করলো অর্নিকে। কিন্তু অর্নি আর রিসিভ করেনি। শেষে ফোন বন্ধ করে রেখেছে৷

ক্লাসের ফাঁকে অর্নি খুব সাবধানে নূরের ব্যাগে ওর গুরুত্বপূর্ণ একটা নোটস রেখে দিলো। ঠিক করেছে এই নোটসের বাহানায় বিকেলে নূরদের বাসায় যাবে অর্নি। অর্নিকে লুকিয়ে নোটস রাখতে দেখে নূর ঠোঁট চেপে হাসলো। তারপর আবার ক্লাসে মনোযোগ দিলো৷

বিকেলের দিকে অর্নির কাজ সহজ করে দিয়ে নূরই ফোন করলো অর্নিকে। অর্নি ফোন রিসিভ করতেই নূর বললো,
–“দোস্ত তোর নোটস ভুলে আমার কাছে চলে এসেছে। তুই নিতে আসবি নাকি আমি___”

নূর পুরো কথা শেষ করার আগেই অর্নি চট করে বললো,
–“আমি নিতে আসছি।”

–“আচ্ছা, তাহলে তাড়াতাড়ি আসিস।”

অর্নি ছোট্ট করে ‘হুম’ বলে লাইন রেখে দিলো। তারপর ঝটপট রেডি হয়ে মিসেস অদিতিকে বলে নূরদের বাসার উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়লো।

নূরদের বাসার কলিংবেল বাজাতেই ইশা এসে দরজা খুলে দিলো৷ ইশাকে একদমই আশা করেনি অর্নি। ইশাকে দেখেই অর্নির গাঁ টা জ্বলে উঠলো। দুদিন আগে যেভাবে উৎসবের হাত ধরে ছিলো কথাটা মনে হতেই মেজাজ বিগড়ে গেলো। তবুও সামলে নিলো নিজেকে। ইশা অর্নির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–“কে তুমি?”

–“নূরের ফ্রেন্ড।”

অর্নির কথায় ইশা দরজা ছেড়ে সোফায় বসা উৎসবের পাশে গিয়ে বসে পড়লো৷ যা দেখে অর্নির বিরক্ত লাগছে খুব। রাগান্বিত চোখে দেখছে ইশাকে ও। উৎসবের সেদিকে কোনো হেলদোল নেই। ও নিজের মতো ব্যস্ত। আর ইশা ব্যস্ত উৎসবকে দেখতে। নূর এসে অর্নির কাঁধে হাত রাখতেই ও চমকে নূরের দিকে তাকায়৷ নূর বললো,
–“এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? রুমে চল।”

বলেই নূর হাঁটা লাগালো। অর্নিও কিছুক্ষণ ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে থেকে নূরের সাথে গেলো। নূর সিড়ি বেয়ে উঠতে উঠতে বললো,
–“দেখছিস ইশা আপু সবসময় ভাইয়ার আশেপাশে থাকে। সুন্দর লাগছে না দুজনকে?”

–“মোটেও না, একটুও সুন্দর লাগছে না। ওই মেয়েকে উৎসব ভাইয়ের থেকে দূরে দূরে থাকতে বলবি।”

বেশ উত্তেজিত হয়েই কথাগুলো বললো অর্নি। নূর থেমে গিয়ে অর্নির দিকে তাকালো এবং বললো,
–“কেন?”

এবারে অর্নি আমতা আমতা শুরু করলো। কি বলবে নূরের প্রশ্নের জবাবে? অর্নিকে আমতা আমতা করতে দেখে নূর মুচকি হেসে বললো,
–“বুঝেছি।”

অর্নি চোখ তুলে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
–“কি?”

নূর অর্নিকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“এটাই যে, তুইও ভাইয়াকে ভালোবাসিস। তাই তো ইশা আপুকে সহ্য হয় না তোর।”

–“না মানে__”

নূর অর্নিকে থামিয়ে দিয়ে বললো,
–“আর লুকাতে হবে না। তোর মুখ দেখলেই মনের কথা বুঝে যাই আমি।”

অর্নি মাথা নামিয়ে নিলো। নূর অর্নির কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বললো,
–“আমি ভাইয়াকে ডেকে দিচ্ছি, সবকিছু ঠিকঠাক করে নিবি আজই। নয়তো সত্যিই কিন্তু পরে ভাইয়াকে হারাবি তুই। ইশা আপু কিন্তু সত্যিই ভাইয়াকে পছন্দ করে।”

অর্নি চকিত তাকালো নূরের দিকে। নূর অর্নিকে নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো। দুজনে বেশ কিছুক্ষণ গল্পগুজব করলো। অতঃপর নূর দাঁড়িয়ে বললো,
–“তুই বোস, আমি ভাইয়াকে ডেকে পাঠাচ্ছি রুমে।”

অর্নিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই নূর বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে। কিছুক্ষণ বাদেই উৎসব উপস্থিত হলো সেখানে। পুরো ঘরে চোখ বুলিয়ে নূরকে কোথাও দেখতে না পেয়ে অর্নিকে জিজ্ঞেস করলো,
–“নূর কোথায়?”

–“কিছুক্ষণ আগেই বেরিয়ে গেছে রুম থেকে।”

উৎসব কপাল কুঁচকায়। তারপর বলে,
–“তাহলে ও যে আমাকে এক্ষুনি ঘরে আসতে বললো?”

অর্নি কিছু না বলে চুপ করে রইলো। উৎসব ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে চাইলেই অর্নি কাঁপা কাঁপা স্বরে বললো,
–“শুনুন।”

দাঁড়িয়ে পড়লো উৎসব। কয়েক কদম এগিয়ে অর্নির সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। অর্নি মাথা নিচু করেই বললো,
–“আ্ আপনি এখন কথা বলেন না কেন আমার সাথে?”

–“তুমিই তো চাও না।”

জবাবে অর্নি আর কিছু বলতে পারলো না। উৎসব বললো,
–“আর কিছু বলবে?”

অর্নি তখনো চুপ। উৎসব আরো কিছুক্ষণ দাঁড়ালো সেখানে। অর্নি কিছু না বলাতে উৎসব চলে গেলো রুম থেকে।

সন্ধ্যা নাগাদ নূর আর অর্নি ছাদে উঠেছিলো। সেখানে গিয়ে দেখতে পায় ইশা উৎসবের একটা হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলছে,
–“আমি তোমাকে ভালোবাসি উৎসব।”

উৎসব কিছু না বলে হাত ছাড়িয়ে নিলো। ইশার থেকে কিছুটা দূরে সরে দাঁড়ালো। দরজার সামনে অর্নিকে দেখতে পেয়ে উৎসব বাঁকা হেসে ইশাকে বললো,
–“আমি ভেবে রাতের মধ্যেই জানাচ্ছি তোকে।”

এইটুকুন শুনেই ইশা খুশিতে আটখানা হয়ে যায়৷ অর্নি আর ছাদে পা বাড়ায়নি। নূরকে নিয়ে নিচে নেমে গেছে। বিছানায় বসে কাঁদোকাঁদো চেহারায় অর্নি বললো,
–“দেখলি তোর ভাই আর আমাকে ভালোবাসে না।”

–“কে বলছে তোকে?”

–“দেখলি না ইশা প্রপোজ করাতে ভাবার জন্য সময় নিলো? আমাকে যদি ভালোবাসতো তাহলে তো সরাসরি ইশাকে না করেই দিতো।”

নূর ভ্রু কুঁচকে বললো,
–“তুই যে ভাইয়াকে ভালোবাসিস একবারো বলেছিস? বলিস নি তো৷ তাহলে ভাইয়া অন্যকাউকে ভালোবাসুক বা বিয়ে করে বাসর করুক তাতে তোর কি?”

অর্নি রাগান্বিত চোখে তাকায় নূরের দিকে তারপর বললো,
–“একদম উল্টাপাল্টা বলবি না। এমনিতেই মেজাজ বিগড়ে আছে।”

নূর এবার নরম হয়ে এলো। অর্নিকে একপাশ থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,
–“তুই ভাইয়ার কাছে গিয়ে একবার মুখ ফুঁটে বল না তোর মনের কথাটা৷ ভাইয়া তোকে সত্যিই ভালোবাসে।”

–“বলছিস?”

–“হ্যাঁ আমি বলছি, তুই জাস্ট একবার সাহস করে বলে দে।”

নূর আবারো উৎসবকে ডেকে পাঠিয়েছে নিজের ঘরে৷ এবার আর অর্নি নূরকে কোথাও যেতে দেয়নি। শক্ত করে নূরের হাত ধরে আছে। উৎসব এসে নূরকে বললো,
–“ডেকেছিস কেন?”

–“আমি না তো, অর্নি ডেকেছে তোমায়৷ ও তোমাকে কি যেন বলবে। তোমরা কথা বলো, আমি আসছি।”

নূরের কথায় অর্নি নূরের হাত খামচে ধরলো। নূর তাকালো অর্নির দিকে। অর্নি চোখ দিয়ে ইশারা করলো নূরকে না যেতে। নূর হেসে অর্নির হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে অর্নির দিকে ঝুঁকে ফিসফিস করে বললো,
–“অল দ্যা বেস্ট জানু। আর শোন, এবার যদি না বলতে পারিস তাহলে তোর সাথে আর কথাই বলবো না আমি।”

নূর বেড়িয়ে গেলো রুম থেকে। অর্নি এবারেও চুপচাপ আছে। তা দেখে উৎসব বললো,
–“যা বলার দ্রুত বলো, ইশা অপেক্ষা করছে আমার জন্য।”

এই মূহুর্তে উৎসবের মুখে ইশার নাম শুনে অর্নির মাথায় ধপ করেই আগুন জ্বলে গেলো। তেড়ে উৎসবের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললো,
–“ইশার সাথে আপনার এত কিসের ঢলাঢলি হ্যাঁ? আপনি না আমাকে ভালোবাসেন?”

–“কোথায় যেন শুনেছি___যাকে তুমি ভালোবাসো তাকে নই, যে তোমাকে ভালোবাসে তাকে ভালোবাসো। আর এখানে তো ইশা আমাকে ভালোবাসে তাই আমার উচিত___”

অর্নি উৎসবের একটা হাত খামচে ধরলো৷ যার কারনে উৎসব কথাটা সম্পূর্ণ করতে পারলো না৷ অর্নির আড়ালে উৎসব হাসলো। অর্নি তখনো শক্ত করে উৎসবের হাত খামচে ধরে আছে৷ উৎসবের হাতে অর্নির নখ ক্ষানিকটা ডেবে গেছে। উৎসব তবুও কোনো রকম শব্দ করলো না। উৎসব বললো,
–“কি হয়েছে?”

–“আপনি ইশাকে ভালোবাসবেন না।”

উৎসব ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
–“কেন?”

–“আমি বলেছি তাই।”

–“তোমার কথা আমি শুনবো কেন?”

–“জানি না, শুধু এইটুকু জানি আপনি ইশাকে ভালোবাসবেন না।”

–“বা রে! নিজেও আমাকে ভালোবাসবে না আবার আমাকে ইশাকেও ভালোবাসতে দিবে না।”

–“হ্যাঁ দিবো না।”

–“কেন?”

–“জানি না।”

–“জানো না? আচ্ছা ইশা অনেকটা সময় যাবত অপেক্ষা করছে আমার জন্য, আমি আসছি।”

উৎসব চলে যেতে চাইলে অর্নি ওর হাত ধরে বললো,
–“যাবেন না আপনি।”

উৎসব অর্নির দিকে ঘুরে দাঁড়ালো। অর্নি আবারো বললো,
–“আ্ আপনি শুধু আ্ আমার হয়েই থাকবেন, শুধু আ্ আমাকেই ভালো্ ভালোবাসবেন অন্যকাউকে না।”

উৎসব মুচকি হাসলো। অর্নিকে একটানে নিজের কাছে নিয়ে এলো। অর্নির দু গালে হাত রেখে কপালে কপাল ঠেকালো। তারপর বললো,
–“তবুও ভালোবাসি বলবে না?”

অর্নি কেঁপে উঠলো উৎসবের স্পর্শে। ওর বুকটা ধরফর ধরফর করছে৷ মাথা তুলে একবার তাকালো উৎসবের দিকে। উৎসব আবারো বললো,
–“#তুমি_শুধু_আমারই_হও, আমার আর কিচ্ছু চাই না। অন্য আর কোনো মেয়েকে লাগবে না।”

অর্নি কিছু না বলে আচমকাই জড়িয়ে ধরলো উৎসবকে। উৎসবের বুকে মাথা রেখে বললো,
–“আপনার নিরবতা আমাকে বড্ড পোড়ায় উৎসব ভাই। আপনি আমাকে আর ইগনোর করবেন না প্লিজ। আর হ্যাঁ আপনি ইশার কাছে যাবেন না। ওকে আপনার আশেপাশে দেখলে আমার সহ্য হয় না। ইশা যখন আপনাকে স্পর্শ করে তখন গাঁ জ্বলে যায় আমার। ইচ্ছে করে খুন করে ফেলি ওকে।”

উৎসব মুচকি হেসে বললো,
–“এই যে আপনি বলেছেন, এখন আপনার কথা কি ফেলতে পারি আমি? একদমই না। ইশা আর স্পর্শ করতে পারবে না আমাকে। আপনি শুধু আমার হয়ে থাকেন কেমন?”

উৎসবের কথার প্রত্যুত্তরে অর্নি আর কিছু বললো না। উৎসবের বুকে মাথা রেখে চুপটি করে ওকে জড়িয়ে ধরে রইলো।

চলবে~

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here