কাশফুলের_ভালোবাসা #পর্বঃ১৬ #লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” কিরে অথু বাড়ি পৌঁছে গিয়েছিস?”

” হ্যাঁ কিছুক্ষণ আগেই এলাম।”

” আন্টির হাতের ঘর মোছার কাপড় দিয়ে মার খেয়েছিস?” হাসতে হাসতে বলে রিফা।

” ধুর বেডি আর আম্মুর কথা বলিস না,কি বকাটাই ন দিলো।”

” আচ্ছা ছাড় ওসব।শান্ত ভাইয়া কিছু বলেছে?”

” না কি বলবে?”

” কিছুই বলেনি?” অবাক হয়ে প্রশ্ন করে রিফা।

” নাতো শুধু শেষবার বলেছে সাবধানে যেও।”

” তুই কি বলেছি তারপর?”

” আমিও বলেছি সাবধানে যাবেন।”

” ও আই সি….(বাহ্ কি প্রেম।একজনে প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে আর অন্যজনে তার কিছুই জানেনা।)”

” কিরে কোথায় হারিয়ে গেলি?”

” কোথাও না।আচ্ছা আমি রাখি।সাবধানের থাকিস তুই।কাল ভার্সিটিতে দেখা হবে।”

” হুম তুইও সাবধানে থাকিস।”
__________________________________________

টিউশন থেকে ফিরে মেহেক ধপ করে সোফায় বসে পড়ে।তার প্রচুর ক্লান্ত লাগছে।

” মেহু এসেছিস তুই।”

” হুম আপুনি।”

” কি হয়েছে তোর?শরীর খারাপ লাগছে নাকি?”

” আরে না তেমন কিছু না।এতোদিন পর টিউশন করাতে গিয়েছি তো তাই একটু ক্লান্ত লাগছে।”

” তোকে বলেছিলাম এতো কষ্ট করিসনা।নিজের পড়ায় মন দে,তোর খরচের চিন্তা করতে হবেনা।কিন্তু তুই তো আমার কোন কথাই শুনিস না।”

” আহ…..আপুনি বাদ দেতো ওসব।আমি রুমে যাচ্ছি,ফ্রেশ হয়ে এসে তোর কাজে সাহায্য করে দেবো।”

” তার দরকার নেই,তোর কোন সাহায্য করতে হবেনা।চুপচাপ রুমে যাবি।ফ্রেশ হয়ে কিছুক্ষণ রেস্ট নিয়ে পড়তে বসবি।রাতের খাবার সময় নিচে নামবি এর আগে নামবিনা।”

মেহেকও বোনের কথাতে সায় দিয়ে উপরে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে মেহেক কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেই তারপর পড়তে বসে।কিন্তু অনেক্ষণ ধরে মেহেক একটা টপিক বোঝার চেষ্টা করছে কিন্তু কিছুতেই তা তার মাথায় ঢুকছেনা।

” ধুর পড়াশোনা এতো কঠিন কেন?হায়….কখন যে এই পড়াশোনা আমার শেষ হবে।এখন আমি কি করি?এটা তো কিছুই বুঝতে পারছিনা।”

অনেকভেবে মেহেক বইটা নিয়ে রিফার কাছে চলে আসে।মেহেক এসে দেখে রিফা তখন টিভি দেখছে।

” আহ…..কে দেখো এই মেয়ে কি শান্তিতে টিভি দেখেছে।এদিকে আমার অবস্থা তো নাজেহাল।” মনে মনে কথাটা ভাবে মেহেক।

মেহেক এসে ধপ করে রিফার পচশে বসে পড়ে।

” আরে মেহু তুই।হঠাৎ আমার রুমে এলি কেন?”

” আগে টিভি অফ কর।”

রিফা টিভি অফ করে মেহেকের দিকে মুখ করে বসে।

” বল এবার কি বলবি।”

” শোন না আমি না এটা বুঝতে পারছিনা।একটু বুঝিয়ে দেতো।”

” দে দেখি কি বুঝতে পারছিস না।”

রিফা বইটা নিয়ে বিজ্ঞদের মতো বইয়ের দিয়ে তাকিয়ে তাকে।মাথা নেড়ে নিজে নিজে কিছু বলে।এটা দেখে মেহেক নিজেই নিজেকে তিরস্কার করতে থাকে।

” দেখ মেহু দেখ।রিফা তোর থেকে পড়াশোনায় কত ভালো।ও নিশ্চিত চ্যাপ্টারটা শেষ করে ফেলেছে কিন্তু তুই তো এখনো পড়াই শুরু করলিনা।ছিঃ মেহু ছিঃ এই তোর পড়ার অবস্থা।”

কিন্তু মেহেক রিফা বুঝতে পেরেছে মনে করলেও তার ভাবনায় পানি দিয়ে রিফা বলে উঠে—-

” ধুর ওইসব কি?কোন সাবজেক্টর বই এটা?”

রিফার কথা শুনে মেহেক তো অবাক।

” কি তুই এটাই জানিস না যে এটা কোন সাবজেক্টর বই!তাহলে এতোক্ষণ মাথা নেড়ে নেড়ে কি করছিলি?”

” আসলে আমি না কিছু বুঝতে পারিনি।” বোকাদের মতো হেসে কথাটা বলে রিফা।

” এবার তাহলে কি হবে?আমি পড়াটা বুঝবো কিভাবে?”

” আরে তুই ইউটিউব থেকে দেখেনে।”

” ধুর ওইসব ইউটিউব টিউটিউব আমার মাথায় ঢুকেনা।”

” হুম…….তাহলে তুই ভাইয়ার কাছে যা।ভাইয়া তোকে সুন্দর করে বুঝিয়ে দেবে।”

” (কি!আমি যাবো তাও ওই গোমড়া মুখো স্পর্শের কাছে?না না তার থেকে বরং মিস্টার সৌন্দর্যের কাছে যায়— মনে মনে) মিস্টার সৌন্দর্য বুঝিয়ে দিতে পারবেন না?”

” হ্যাঁ দাভাইও পড়বে।”

” আচ্ছা তাহলে আমি আসছি।”

” আচ্ছা যা আমি টিভি দেখি।তোর জন্য আমার মু্ভির সিন মিস হয়ে গেলো।”

” এতো মুভি না দেখে পড়ালেখা কর।নয়তো পরীক্ষার খাতায় কিছু লিখতে পারবিনা।”

” ধুর এখন পড়ে কি হবে?পরীক্ষার আগের দিন পড়বো।”

” যা তোর যা ইচ্ছা তাই কর।”

মেহেক বইটা নিয়ে সৌন্দর্যের দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়।প্রথমে মেহেক আস্তে আস্তে করে দরজা নক করে কিন্তু অনেক্ষণ হয়ে যাওয়ার পরেও কেউ দরজা যখন খুলেনা তখন মেহেক জোরে দরজা নক করে।কিন্তু ফলাফল একই,তাই মেহেক হালকা করে দরজাটা ধাক্কা দেয় আর ধাক্কা দেওয়া ফলে দরজা একটু করে খুলে যায়।মেহেক দরজাটা ঠেলে ভিতরে উঁকি মেরে দেখে,না কেউ নেই ভেতরে।মেহেক নিঃশব্দে ভিতরে ঢুকে পড়ে।এদিক-ওদিক তাকিয়ে সৌন্দর্যের ঘরটা দেখে মেহেক।হঠাৎ তার চোখ পড়ে বেডের পাশে থাকা ছোট টেবিলটাতে যেটাতে ছোট একটা ফ্রেমে সৌন্দর্যের ছবি লাগানো আছে।মেহেক ছবিটার দিক থেকে চোখ সরিয়ে সৌন্দর্যের পড়ার টেবিলের দিকে তাকাই।মেহেক আস্তে আস্তে পড়ার টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ায়।মেহেক নিজের বইটা সাইডে রেখে একটা একটা করে সৌন্দর্যের বইগুলো দেখতে থাকে।বইগুলো আলাদা হলেও সব বইয়ের মধ্যে একটা জিনিস মেহেক কমন দেখেছে আর সেটা হচ্ছে কাশফুলের ছবি।বইয়ের প্রায় প্রত্যেকটা পাতায় কাশফুল আঁকা নয়তো কাশফুল শব্দটা লেখা।

” তুমি আমার রুমে কি করছো?”

হঠাৎ কারো আওয়াজে মেহেক ভয় পেয়ে তার হাতের বইটা তাড়াতাড়ি টেবিলে রেখে দেয়।মেহেক পেছন ফিরে দেখে পকেটে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সৌন্দর্য।

” কি হলো মেহেক তুমি আমার রুমে কি করছো?”

” ওই আসলে…..”

” হ্যাঁ আসলে কি?”

” আসলে আমি কিছু পড়া বুঝতে পারছিলাম তাই এসেছিলাম।”

” কিন্তু আমার কাছেই কেন?’ ভ্রু-কুচকে প্রশ্ন করে সৌন্দর্য।

” ওই রিফা বলেছিল।আর কাছেও গিয়েছিলাম কিন্তু ও নিজেও নাকি কিছু বুঝতে পারছিলনা।তাই বলেছে আপনার কাছে আসতে।”

” আচ্ছা বইটা নিয়ে এদিকে এসো।”

সৌন্দর্য গিয়ে তার পড়ার টেবিলটাতে বসে।মেহেককেও একটা চেয়ারে বসতে বলে।তারপর সৌন্দর্য মেহেককে আস্তে আস্তে পুরো টপিকটা বুঝিয়ে দেয় আর মেহেকও ভালো মেয়ের মতো পুরো পড়াটা বুঝে নেয়।

” ব্যস শেষ।বুঝতে পেরেছে?”

” হুম বুঝতে পেরেছি।ধন্যবাদ বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য আর বিরক্ত করার জন্যও ধন্যবাদ।”

” আমি মোটেও বিরক্ত হয়নি।তুমি আমার কাছে পড়া বুঝতে এসেছো এতে আমার ভালো লেগেছে।”

” আচ্ছা আমি আসি তাহলে।”

মেহেক চলে যেতে নিলে সৌন্দর্য তাকে দাঁড় করিয়ে বলে—

” দিন কেমন কাটলো তোমার?”

” ভালো।”

” টিউশনে গিয়েছিলে?”

” হুম।”

” সবঠিক আছে তো?নাকি কোন সমস্যা হচ্ছে?”

” না না সব ঠিক আছে।”

” কোন সমস্যা হলে বলো কিন্তু।”

মেহেক মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিয় আর চলে যায়।মেহেক চলে যেতে সৌন্দর্য আবারো তার পড়ার টেবিলে ফিরে আসে আর বই খুলে তার আঁকা কাশফুলের ছবিটা দেখতে থাকে।

সৌন্দর্যের রুম থেকে বেরিয়ে পড়াগুলো মনে করতে করতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছে মেহেক।তবে হুট করে কারো সাথে ধাক্কা খেতে গেলেও মেহেক নিজেকে সামলে নেয়।মেহেক সামনে তাকিয়ে দেখে স্পর্শ বিরক্তিকর মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে।মেহেক সরি বলতেই যাবে তার আগেই স্পর্শ যেখান থেকে চলে যায়।তবে এবার মেহেক স্পর্শের ব্যবহারে অবাক হয়না।

” এই লোক কি জন্ম থেকেই এরকম?নাকি শুধু আমার সাথেই এরকম ব্যবহার করে?আমি ওনার কোন পাঁকা ধানে মই যে দিয়েছি কে জানে।”

রাতে খাওয়ার পর শুয়েছে মেহেক কিন্তু সারাদিন পরিশ্রম করার পরও এখন তার মোটেও ঘুম আসছেনা।মেহেক অনেকক্ষণ এদিক-ওদিক করেও ঘুম আনতে পারে।বিরক্ত হয়ে মেহেক উঠে বসে।

” ধুর ঘুম আসেনা কেন?সারাদিন এতো কাজ করলাম কই বিছানায় শোয়ার সাথে সাথে ঘুম আসবে কিন্তু তা না উল্টো ঘুম বাবাজি তো উধাও।যাই একবার ছাদ থেকে ঘুরে আসি।তাহলে বোধহয় ঘুম আসবে।যাবো?এতো রাতে যাওয়া কি ঠিক হবে?ধুর কি হবে যাই বরং।”

মেহেক নিজের মোবাইলটা নিয়ে ছাদে চলে আসে।কিন্তু ছাদে এসে মেহেক দেখে কেউ আগে থেকেই ছাদে বসে আসে,তা দেখেই মেহেক চলে যেতে নিলে ছাদে বসে থাকা কেউটা বলে উঠে—-

” চলে যাচ্ছো কেন?এসো।”

গলা শুনে মেহেক বুঝতে পারে এটা সৌন্দর্য।মেহেক আস্তে করে গিয়ে সৌন্দর্যের পাশে দাঁড়ায় তবে অনেকটা দূরত্ব রেখেই দাঁড়ায় সে।

” এতো রাতে ছাদে কেন তুমি?”

” ঘুম আসছিলনা তাই এসে ছিলাম।আপনি কি করছেন?”

” রুমে ভালোলাগছিল না তাই ভাবলাম একটু ছাদ থেকে হেঁটে আসি।হয়তো মনটা ভালোও হয়ে যেতে পারে।”

মেহেক আর সৌন্দর্য আর কিছু বলেনা।দুজনেই চুপচাপ দূর আকাশে তাঁরা দেখতে থাকে।হঠাৎ মেহেক সৌন্দর্যকে বলে—

” আচ্ছা আপনার কি কাশফুল পছন্দ?”

মুচকি হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয় সৌন্দর্য।

” তবে সেটা তুমি কি করে জানলে?”

” আপনার বইয়ে দেখেছিলাম আপনি প্রতিটা পাতায় কাশফুলের ছবি আর নাম লিখে রেখেছিলেন।তাই আন্দাজ করলাম।”

সৌন্দর্য কিছুনা বলে মুচকি হাসে শুধু।

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here