কাশফুলের_ভালোবাসা #পর্বঃ১৫ #লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

#কাশফুলের_ভালোবাসা
#পর্বঃ১৫
#লেখিকাঃঅনন্যা_অসমি

” আমি তোমাকে ভালোবাসি না মেহেক।আমি রিয়াকে ভালোবাসি।আমি তো তোমাকে সহ্যই করতে পারিনা।”

” দেখেছিস মুগ্ধ তোকে না আমাকে ভালোবাসে।আরে তোর মতো কানিরে কেই বা ভালোবাসবে?তুই তোর মতো চারচোখ ওয়ালা কাউকে খুঁজে নে।মুগ্ধ বেবি চলো আমরা আমাদের সংসার সাজাই।”

” মুগ্ধ যেওনা প্লিজ,যেওনা।আমি তোমাকে ছাড়া থাকতে পারবোনা মুগ্ধ।প্লিজ একটাবার বলো এসব মিথ্যা।তুমি আমার কাছে ফিরে এসো মুগ্ধ।প্লিজ ফিরে এসো।”

মেহেক অঝোড়ে কাঁদছে।কিন্তু মুগ্ধ একবারের জন্যও ফিরে তাকাচ্ছেনা।সে রিয়ার সাথে পাড়ি দিচ্ছে নিজের সুখের সংসারে।

” মুগ্ধ ফিরে এসো,ফিরে এসো মুগ্ধ।মুগ্ধ……. ”

মেহেক ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে যায়,হাঁপাতে থাকে সে।ঘেমে পুরোই ভিজে গেছে মেহেক।মেহেক আশেপাশে তাকিয়ে দেখে সকাল হয়ে গিয়েছে।এটা যে একটা স্বপ্ন এটা জেনে মেহেক স্বস্তির নিশ্বাস নেয়।মেহেক তার সামনের চুলগুলো শক্ত ধরে পেছিয়ে ধরে।

” কেন আমি এই স্বপ্ন দেখলাম কেন?কেন আমি মুগ্ধ নাম প্রতারকরের কথা ভুলতে পারছিনা?কেন বারবার আমার তার কথা মনে পড়ছে?আমি তো ওর কথা ভুলার জন্যই ওই শহর ছেড়ে চলে এসেছিলাম তাহলে কেন ভুল পারছিনা?কেন প্রতিনিয়ত আমার ক্ষতটা তাজা হয়ে উঠছে।আমি ভুলতে চাই ওকে,ভুলতে চাই আমি।”

কথাগুলো বলতে বলতে কান্না করে দেয় মেহেক।হঠাৎ মেহেক নিজেই নিজেকে বলে,

” ভালো যখন বেসেছিস তার কষ্টটাও তোকেই পেতে হবে মেহেক।কেউ তোর কষ্টের ভাগিদার হবেনা।তোর ওই প্রতারকের কথা মনে পড়বে কিন্তু তোকে শক্ত থাকতে হবে,হাজার মনে পড়লেও তোকে শক্ত থাকতে হবে।”

চোখের পানি মুছে নিজেকে শক্ত করে নেয় মেহেক।

” হ্যাঁ আমাকে শক্ত হতে হবে,ভেঙে পড়লে চলবেনা।আমি আর দ্বিতীয় বার এই ভুল করবোনা।আর আমি কাউকে নিজেকে নিয়ে খেলতে দেবোনা।কাউকে না।”

মেহেক বিছানা থেকে নেমে ওয়াশরুমে চলে যায়।ফ্রেশ হয়ে এসে মেহেক আয়নার সামনে দাঁড়ায়।সে দেখে তার চোখ অনেকটা লাল হয়ে গিয়েছে আর কিছুটা ফুলে গিয়েছে।চোখে গাড়ো করে কাগল দিয়ে চশমাটা পড়ে নিচে চলে আসে মেহেক।

মেহেককে চুপচাপ দেখে তার বোন আন্দাজ করতে পারে তার কিছু নিয়ে মন খারাপ।তাই খাওয়া শেষ হলে সবার আড়ালে নিয়ে সে প্রশ্ন করে মেহেককে।

” কিরে কি হয়েছে তোর?”

” কি হবে?”

” এভাবে চুপচাপ কেন?মন খারাপ নাকি?”

” না মন কেন খারাপ হবে?আমি ঠিক আছি।তুই চিন্তা করিসনা।আমি যাই ভার্সিটিতে,দেরি হয়ে যাবে না হয়।”

মেহেক সৃষ্টিকে আর কোন কথা বলতে না দিয়ে ব্যাগ নিয়ে চলে আসে।

ভার্সিটিতে একটা বড় গাছের নিচে বসে আছে মেহেক,রিফা আর অথৈ।মেহেক আর রিফা তো কথা বলছে তবে মেহেক এখনো মন খারাপ করে বসে আসে।

” কিরে মেহু মন খারাপ নাকি?” রিফার মেহেককে হালকা ধাক্কা দিয়ে প্রশ্ন করে।

” কিরে মেহু,জামাই ছেঁকাটেকা দিছে নাকি?” হাসতে হাসতে বলে অথৈ।

কিন্তু মেহেক এসব কিছুই শুনছেনা।সে তো তার খেয়ালে মত্ত।

” এই অথু সব জায়গায় মজা করিসনা।আমার তো মনে হচ্ছে কোন সিরিয়াস কারণে মেহুর মন খারাপ।”

” এই মেহু।বান্ধবী বল আমাদের কি হয়েছে।”

” মেহু?এই মেহু?” মেহেককে জোরে ধাক্কা দিয়ে বলে রিফা।

মেহেক তার খেয়াল থেকে বেরিয়ে আসে তবে কিছু বলেনা।

” কি হয়েছে?” রিফা প্রশ্ন করে।

” না কিছু না।চল ক্লাসে চল।”

মেহেক ব্যাগ উঠিয়ে ক্লাসের দিকে চলে যায়।রিফার আর অথৈ এখনো অবাক হয়ে মেহেকের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
__________________________________________

ক্লাস শেষে গেটের কাছে দাঁড়িয়ে আছে রিফা আর অথৈ।মেহেক গিয়ে টিউশনে।অথৈ দাঁড়িয়ে আছে রিকশার জন্য আর রিফা দাঁড়িয়ে আছে অথৈর জন্য।

” ধুর ছাতার মাথা,আজ একটা রিকশাও পাচ্ছিনা।এমনিতেই দেরি হয়ে গিয়েছে।না জানি আজ বাসায় গেলে মা আমার কি করে।”

” আজ তোর কপাল খারাপ তা আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।আজকে নির্ঘাত আন্টি তোকে ঘর মোছার কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করবে।” হাসতে হাসতে বলে রিফা।

” চুপ বজ্জাত মাইয়া।তোর মতো বান্ধবী থাকলে আর শক্রুর প্রয়োজন নাই।তুই একাই যথেষ্ট।”

রিফার আর অথৈ কথা বলছে।হঠাৎ তাদের সামনে এসে একটা বাইক দাঁড়া।আচমকা বাইক থামাতে রিফা আর অথৈ ঘাবড়ে গিয়ে হালকা পিছিয়ে যায়।
বাইকের মধ্যে কে বসে আছে তা হেলমেট পড়ার কারণে বোঝা যাচ্ছে না।বাইকে বসে থাকা লোকটা হেলমেট খুলে পেছন ফিরে তাকাই।

” হায় আমাদের অথুকি হিরো এসে পড়েছে।হাউ লোমেন্টিক।” মনে মনে বলে রিফা কারণ বাইকে বসে আছে শান্ত।

তাকে দেখে যে অথৈ মোটেও খুশি হয়নি তা তার মুখ দেখেই বুঝতে পেরেছে যায় শান্ত আর এটা বুঝতে পেরে নিচের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসে শান্ত।

” কিরে রিফু এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”

” আসলে শান্ত ভাইয়া ওই অথু এর জন্য দাঁড়িয়ে আছি।আসলে বেচারি না রিকশা পাচ্ছেনা।”

” কারো যদি প্রবলেম না থাকে তো আমি তাকে ড্রপ করে দিতে পারি।”

অথৈ বুঝতে পারে শান্ত তাকেই কথাটা বলছে।তাই সেও ইনডিরেকলি বলে,

” রিফু আমার কারো সাহায্যের প্রয়োজন নেই আমি নিজের কাজ নিজে করতে পারি।”

” হায়রে গাধি মাইয়া।” মনে মনে বলে রিফা।

” ওকে তাহলে রিফু আমি যাই হ্যাঁ।”

” আরে শান্ত ভাইয়া দাঁড়াও দাঁড়া।”

রিফা অথৈকে টেনে একটু দূরে নিয়ে আসে।

” কিরে এখানে নিয়ে এলি কেন?”

” তুই কি করছিস হ্যাঁ?এতো ভালো সুযোগটা মিস করিস।”

” এতো ভালো সুযোগ মানে?”

” (এইরে কি বলে ফেলাম।–মনে মনে) মানে দেখ তুই কোন রিকশা পাচ্ছিস না আর মনে হয়না পাবি।তাই বলছি তুই শান্ত ভাইয়ার সাথে চলে যা।”

” আমি যাবোনা ওনার সাথে।”

” কেন?উনি কি বাঘ না ভাল্লুক?তোকে কি খেয়ে ফেলবে?”

” না তাও আমি যাবোনা।”

” তুই আমার উপর বিশ্বাস করিস তো?”

” হুম।”

” তাহলে বিশ্বাস রাখ আমার উপর।শান্ত ভাইয়া তোর কোন ক্ষতি করবেনা।উল্টো উনি নিজের জীবন দিয়ে হলেও তোকে প্রটেক্ট করবে।”

” আচ্ছা তোর উপর বিশ্বাস আছে আর আমি তোকে কষ্ট দিতে চাইনা।তাই যাচ্ছি।”

রিফার খুশি মনে শান্তের কাছে আসে।

” শান্ত ভাইয়া আমি কিন্তু তোমার লাইন সেট করে দিলাম।পরে কিন্তু ট্রিট নেবো।”

” ওকো মেরি লিটেল বেহেনা আর থ্যাঙ্ক ইউ আমার এই অবুঝ পরিটারে রাজি করানোর জন্য।” মুচকি হেসে বলে শান্ত।

” হুম হুম বুঝতে পেরেছি।এবার যাও না হলে পরে আমার অথু বেঁকে বসবে।আচ্ছা অথু তাহলে তোরা যা।আমি আসছি আর অথু খেয়াল রেখো শান্ত ভাইয়া।অথুনি তুইও শান্ত ভাইয়ার একটু খেয়াল রাখিস।” শেষের কথাটা অথৈর কানে কানে বলে রিফা।

অথৈ কিছু বলবে তার আগেই রিফা চলে যায়।

” বসুন মেডাম।”

অথৈ বাইকে উঠে বসে কিন্তু যথাসম্ভব দূরত্ব রেখে বসে।অথৈকে এভাবে বসতে দেখে মুচকি হাসে শান্ত।

” এতো দূরে বসোনা,পড়ে যাবে তো।”

” পড়বো আমি চালান।”

” দাঁড়াও দূরে বসাছি তোমাকে।” মনে মনে কথাটা ভেবে ডেভিল স্মাইল দেয় শান্ত।

হুট করে বাইক স্টার্ট করে দেয় শান্ত আর কিছুটা গিয়ে হুট করেই বন্ধ করে দেয়।যার ফলে অথৈ এসে পড়ে শান্তের উপর।এখন অথৈ আর শান্তের মাঝে একবিন্দুও ফাঁকা জায়গা নেই।তাড়াতাড়ি সোজা হয়ে বসে।সাইড মিরারে অথৈয়ের কান্ড দেখে হাসে শান্ত।

” ধরে বসো,নয়তো এবার বাইক থেকেই পড়ে যাবে।”

পড়ে যাওয়া ভয়ে অথৈ কাঁপা কাঁপা হাতে শান্তের কাঁধে হাত রাখে।অথৈয়ের ছোঁয়া পেয়ে শান্ত মন ভরে একটা শান্তির নিশ্বাস নেয়।সে সাইড মিরারে অথৈর এর প্রতিচ্ছবির দিকে একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে বাইক স্টার্ট দেয়।

বাড়ির কাছাকাছি চলে এসে অথৈ বাইক থামাতে বলে।

” এখানে থামাতে বললে কেন?তোমার বাসাতো…..”

” আমি চাইনা কেউ আমাকে আপনার সাথে দেখুক।ধন্যবাদ আমাকে ড্রপ করে দেওয়ার জন্য।”

” যেতো পারবে তো?”

” হুম।”

” সাবধানে যেও।”

” আপনিও সাবধানে যাবে।” অনেকটা হেজিটেশর নিয়ে বলে অথৈ।

কথাটা বলার পর অথৈ আর দাঁড়িয়ে না থেকে সে স্হান ত্যাগ করে।তবে অথৈ কিছুটা দূরে গেলেই শান্ত বাইক দাঁড় করিয়ে অথৈয়ের পেছন পেছন আসতে থাকে এবং যতক্ষণ না অথৈ তার বাড়ির ভেতরে ঢুকচ্ছে ততক্ষণ শান্ত তার পেছন পেছন তাকে অনুসরণ করে।

চলবে……

(কাল গল্প দেবোনা।কারণ কাল আমার দুটো টিচার আছে যার কারণে লেখা সম্ভব নয়।তবে পরশু যথাসময়ে পেয়ে যাবেন।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here