love is like a Cocktail,Part: 02

love is like a Cocktail,Part: 02
Writer: Abir Khan

জান্নাত পুরো থ হয়ে আছে। কোথাও আবির নেই। এমনকি নেই কোন রক্তের দাগও। পুরো ঘর টিপটপ হয়ে আছে৷ এ যেন স্বপ্নের মতো। জান্নাত অবাক পানে তাকিয়ে হেঁটে হেঁটে সোফার উপর এসে বসে। মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে থাকে, তাহলে কি ও স্বপ্নই দেখেছে? আবির গত রাতে ওর বাসায় আসে নি? এত কিছু হলো সবটাই কি স্বপ্ন! জান্নাত কোন উত্তর খুঁজে পায় না। ওর মাথায় কেমন জানি গন্ডগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। হঠাৎই ওর নজর যায় টেবিলের উপর রাখা একটা চিরকুটের দিকে। জান্নাত দ্রুত সেটা নিয়ে পড়তে শুরু করে। সেখানে লেখা,

– অসংখ্য ধন্যবাদ আমাকে রাতে থাকতে দেওয়ার জন্য। এবং আরও ধন্যবাদ জানাই আমার সেবা করার জন্য৷ আপনার জায়গায় অন্যকেউ হলে হয়তো এমন কিছুই করতো না। আপনি আমার পরিচয় না জেনেই অনেক সেবা করেছেন। তাই আর কষ্ট দিতে চাই না। আপনি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন ছিলেন তাই আর ডাকিনি৷ না বলেই চলে আসলাম। আর আসার আগে আপনার বাসাটা যেমন ছিল ঠিক তেমন করে দিয়ে গেলাম। ভালো থাকবেন।
– আবির আহমেদ।

জান্নাত স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে চিরকুটটার দিকে। তারমানে রাতের সব ঘটনা সত্যি। এত বড়ো একজন ফেমাস নায়ককে ও স্পর্শ করেছে, তাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিয়েছে। ওর ক্রাশকে এত কাছ থেকে ও দেখেছে। জান্নাতের মন খুশিতে নাচতে ইচ্ছা করছে৷ মেয়েটা আবার লজ্জা পেয়ে নিজের মুখ ঢেকে বসে থাকে। তারপর মিষ্টি একটা হাসি দিয়ে আবিরের চিরকুটটা সুন্দর করে নিয়ে একটা সেইফ জায়গায় ও রেখে দেয়৷ যাতে কোন ক্ষতি না হয় চিরকুটটার। তবে জান্নাতের এখন চিন্তা হচ্ছে আবিরের জন্য৷ কারণ ওর হাতের ক্ষতটা অনেক গভীর ছিল। জান্নাত ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দ্রুত উঠে পড়ে। ওকে ক্লাসে যেতে হবে৷ দেরি হয়ে যাচ্ছে। ও দ্রুত ফ্রেশ হয়ে সামান্য একটু নাস্তা বানিয়ে তা খেয়ে ক্লাসের জন্য রেডি হয়ে দরজাটা লাগিয়ে চলে যায়৷ জান্নাত নিচে এসে রাস্তায় দাঁড়াতেই ওর মনে হয় কেউ একজন ওকে ফলো করছে। ও এদিক ওদিক তাকিয়ে কাউকে দেখতে পায় না৷ তারপর একটা রিকশা পেলে সোজা ক্লাসে চলে যায়৷

আবিরের বাসায়,

আবির ওর বেডে শুয়ে আছে৷ একটু আগেই ওর বাম হাতটার বেশ ভালো ভাবেই ট্রিটমেন্ট হয়েছে। ওর পার্সোনাল ডাক্তার মানে ওর বন্ধু রিয়াদ ওর ট্রিটমেন্ট করেছে। রিয়াদ আবিরকে বলছে,

– অন্তত একমাস বেড রেস্টে থাকতে হবে তোকে৷ কোন শুটিং এ জাবি না একদম।
– বাট দোস্ত সিডিউল এ ঝামেলা হবে৷
– হোক। তুই যাবি না৷ একমাস রেস্ট নে। নাহলে হাত ভালো হবে না।
– আচ্ছা সে দেখা যাবে৷
– কথা শুনিস ভাই৷ এখন তোর বাইরে বের হওয়াটা রিস্ক।
– কাজটা যে কে করলো একবার জানতে পারলে হয়।
– আবির বাদ দে না এসব। কি হবে এগুলো করে?
– তুই বুঝবি না।

ওদের কথার মাঝে আবিরের সবচেয়ে কাছের লোক এবং বিশ্বস্ত, মানে নিলয় ওর রুমে আসে। আবির রিয়াদকে বলে,

– দোস্ত তুই তাহলে যা৷
– আচ্ছা নিজের খেয়াল রাখিস। আর কোন সমস্যা হলে আমাকে বলিস৷
– আচ্ছা৷

রিয়াদ গেলে আবির নিলয়কে বলে,

– হুম বল। কি নিউজ আছে।
– স্যার অল ক্লিয়ার। কোন ঝামেলা নেই।
– ওকে। বাট আমার উপর অ্যাটাক করলো কে? সেটা জানতে পেরেছিস?
– এখনো না৷ কিন্তু কয়েক দিনের মধ্যেই জেনে যাবো।
– তাড়াতাড়ি নিলয় তাড়াতাড়ি। আমার রক্ত যে এখনো ঠান্ডা হয় নাই।
– জি স্যার। আপনি কোন চিন্তা করবেন না। আমি সব দেখছি। আপনি রেস্ট নিন৷
– হুম।

আবিরের কথা শেষ হতে না হতেই হঠাৎ করে একটা মেয়ে আবিরের রুমে ঢুকে ওর উপর রীতিমতো ঝাপিয়ে পড়ে অস্থির হয়ে। সে আর কেউ নয় আবিরের একমাত্র ভালবাসা, মাইশা। মাইশা আবিরকে এভাবে দেখে অস্থির হয়ে কান্নাসিক্ত কণ্ঠে বলে,

~ আমার আবিরের কি হয়েছে? কিভাবে কি হলো? ইসস!

আবির নিলয় এর দিকে তাকালে ও মুচকি হাসি দিয়ে বিদায় নিয়ে চলে যায়। এবার আবির ওর ডান হাতটা মাইশার গালে রেখে বলে,

– আহ! আমার বেবিটা শান্ত হও। আমি ঠিক আছি। তেমন কিছু হয় নি।
~ তুমি জানো আমি কতটা ভয় পেয়েছি? এখন কেমন আছো তুমি?
– একদম ভালো। তবে একমাস রেস্টে থাকতে হবে। তোমাকে হয়তো সময় দিতে পারবো না৷ তুমি কিছু মনে করো না প্লিজ।
~ কি যে বলো না তুমি! কোন সমস্যা নেই। একমাস পড়েই নাহয় তোমার বেবিটাকে সময় দিও।
– আচ্ছা দিব। জানো তোমাকে কাছে পেলে আমার সব কষ্ট দূর হয়ে যায়। মনে যে কতটা শান্তি পাই তা বলে হয়তো কখনো বুঝাতে পারবো না।
~ আমিও সেইম। তুমি ইঞ্জুর শুনে আমি দৌড়ে চলে আসছি৷ অনেক ভয় পেয়েছি আমি।

আবির মাইশাকে কাছে টেনে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

– চিন্তা করে না বেবি। আমি এখন ঠিক আছি। আর শোনো মিডিয়ার কেউ যাতে না জানে আমি অসুস্থ। ওকে?
~ কেন? জানলে কি হবে?
– আমার ফ্যানরা অনেক কষ্ট পাবে, অযথা চিন্তা করবে তাই।
~ আচ্ছা কেউ জানবে না৷ তুমি খালি তোমার ফ্যানদের কথাই চিন্তা করো আমার কথা একটুও ভাবো না৷
– তোমার কথা আমি সারাদিন সারাক্ষণ ভাবি। কারণ তোমাকে অনেক বেশি ভালবাসি আমি।
~ সত্যিই?
– হুম।
~ আচ্ছা বেবি একটা কথা বলি? কিছু মনে করবে না তো?
– না না বলো।
~ না থাক তুমি তো অসুস্থ। থাক লাগবে না।
– আরে বলো। সমস্যা নেই। বলো কি লাগবে?
~ আসলে সামনে কিছু স্যুট আছে। বাট আমার কাছে কোন নিউ কালেকশন নেই।
– ওহ! এই কথা? শোনো নিলয়কে আমি বলে দিচ্ছি। তোমার যত টাকা লাগে ওকে বলে দিও ও তোমার একাউন্টে পাঠিয়ে দিবে।

মাইশা অসম্ভব খুশি হয়ে আবিরকে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ থ্যাঙ্কিউ থ্যাঙ্কিউ সো মাচ।

আবির মাইশার স্পর্শে হারিয়ে যায়। মাইশা কিছুক্ষণ পর ওকে ছেড়ে উঠে বলে,

~ তাহলে আমি আজ যাই। স্যুট শেষ হলে আসবো নি।
– আচ্ছা। নিজের খেয়াল রেখো।
~ ওকে বেবি৷

বলেই আবিরের গালে একটা চুমু দিয়ে মাইশা চলে যায়৷ আবির যেন মনে অজানা শান্তি অনুভব করে। মাইশার সাথে ওর সম্পর্কের প্রায় ২ বছর হলো। ওদের প্রথম দেখা হয় একটা স্টিডিওতে। আবিরের সাক্ষাৎকার নিচ্ছিলো মাইশা। আর এরপর বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মাইশার সাথে আবিরের দেখা হতে থাকে। আস্তে আস্তে ওদের মাঝে ভালো একটা বন্ধুত্ব হয়,ভালো একটা বন্ডিং হলে ওরা রিলেশনে চলে যায়। আবির মাইশাকে মনে প্রাণে অনেক ভালবাসে। মানে নিজের থেকেও বেশি। তাই তো প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা আবির মাইশাকে দেয়। একবার ভাবেও না মাইশা টাকাগুলো নিয়ে কি করে। নিলয়ের পর আবির সবচেয়ে বেশি বিশ্বাস এবং পছন্দ করে মাইশাকে। ওকে বিয়ে করার ইচ্ছাও আছে আবিরের। শুধু সময় আর সুযোগ খুঁজছে আবির।

অন্যদিকে জান্নাতের ক্লাসে,

জান্নাত ক্লাসে যেতেই ওর বেস্ট ফ্রেন্ড নিতু ওর কাছে আসে। ওরা একসাথে বসতেই নিতু জান্নাতের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলে,

~ কিরে আজ তোকে অন্যরকম লাগছে যে? কাহানী কি বলতো?
~ আরে না না তেমন কিছু না।
~ শোন সবার চোখ ফাকি দিতে পারলেও তুই আমার চোখ কখনো ফাকি দিতে পারবি না৷ কারণ আমি তোর অনেক পুরনো ফ্রেন্ড। সো বল কাহানী কি?
~ আগে প্রমিজ কর কাউকে কিছু বলবি না? আর আমার কথা শুনে শান্ত থাকবি? প্রমিজ কর।
~ এমন কি কথা? আচ্ছা যা প্রমিজ। এবার তো বল।
~ কালকে রাতে আবির আহমেদ আমার বাসায় এসেছিল।
~ কিহ! (জোর গলায়)

সবাই ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। জান্নাত নিতুর দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায় আর বলে,

~ আস্তে আস্তে…..
~ সরি সরি দোস্ত। তুই সত্যি বলছিস? আবির আহমেদই ছিল?
~ হ্যাঁ। আসলে সে অনেক বড়ো একটা বিপদে পড়ে আমার কাছে আশ্রয় নিতে এসেছিল। সারারাত থেকে সকালে না বলেই চলে গেছে৷ (দুঃখি ভাবে বলল)
~ কি! সারারাত ছিল? এইইই কিছু উলটা পালটা করিস নি তোরা? বল না?
~ তোর মনে হয় আমি ওই ধরনের মেয়ে?
~ একদম না।
~ তাহলে জিজ্ঞেস করিস কেন?
~ না মানে আবির তো তোর ক্রাশ৷ তাই যদি কিছু করিস আর কি হাহা।
~ ধুর আমি ওই ধরনের মেয়ে না।
~ জানি জানি। মজা করছিলাম পাগলি।

জান্নাত আর নিতু যখন হেসে খেলে কথা বলছিল ঠিক তখন ওদের কাছে একটা ছেলে আসে। এসে বলে,

– জান্নাত…

জান্নাত মাথা তুলে উপরে তাকিয়ে দেখে ক্লাসের সবচেয়ে সুন্দর হ্যান্ডসাম ছেলেটা মানে হৃদয় ওকে ডাক দিয়েছে। জান্নাত আস্তে করে বলে,

~ জি?
– তোমার সাথে একটু কথা ছিল। আমার সাথে আসবে?

নিতু অবাক নয়নে জান্নাতের দিকে তাকায় আর জান্নাত নিতুর দিকে। যে ছেলের জন্য কলেজের হাজার মেয়ে পাগল সেই ছেলে জান্নাতের সাথে কি কথা বলতে চায়! নিতু ইশারায় যেতে বলে। জান্নাত না করলেই নিতু জোর করে বলে, যা। জান্নাত বলে,

~ আচ্ছা চলো।

হৃদয় খুব খুশি হয়ে জান্নাতকে নিয়ে ক্লাসের বাইরে আসে। ক্লাসের সব মেয়ে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে। অবশ্যই হিংসা করে। কারণ জান্নাত দেখতে কিন্তু অনেক সুন্দরী আর মায়াবী। গায়ের রঙ ফরসা, চোখগুলো ভাসানো, বড়ো বড়ো পাপড়িওয়ালা চোখ, নাকটা খাড়া, ঠোঁটগুলো একদম গোলাপি আর মিষ্টি। আর গায়ের গড়ন একদম মনকাড়া। তবুও ও অনেকের কাছে অবহেলিত। কারণ ও অনাথ, ওর কারিকারি টাকা নেই, নেই অনেক দামি ড্রেস। তাই অনেকেই ওর সাথে তেমন মিশে না৷ এছাড়া ওর সুন্দর রূপের জন্য ওর সাথে অনেক মেয়ে হিংসা করে। এতে অবশ্য জান্নাতের কোন কষ্ট নেই। ও সব কিছুই মেনেই নিয়েছে। জান্নাত আর হৃদয় বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। হৃদয় কেমন আমতা আমতা করে এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। জান্নাতের হৃদস্পন্দন বেড়েই যাচ্ছে। হৃদয় কি এমন কথা বলার জন্য এত সংকোচ করছে? জান্নাত বুঝতে পারছে না। হৃদয় একটু সময় নিয়ে বলে,

চলবে…?

সবার ভালো সাড়া চাই। আর কেমন লেগেছে জানাবেন কিন্তু। সাথে থাকবেন সবসময়।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here