#প্রেমোত্তাপ #মম_সাহা [৬]

#প্রেমোত্তাপ
#মম_সাহা

[৬]

আকাশে মেঘপুঞ্জ ভেসে বেড়াচ্ছে মনের আনন্দে। কড়া রোদ্দুরে নাজেহাল প্রকৃতি। সময় টা ঠিক বিকেলের আগমুহূর্ত। অহি ভার্সিটি থেকে ফিরেছে বাসায়। ঘরের বাহিরে জুতার স্তূপ দেখে আপনা-আপনি ভ্রু কুঁচকে এলো অহির। আজকে তো বাড়িতে কারো আসার কথা ছিলো না! তবে এত অপরিচিত জুতোর হাট বসেছে কেন? কৌতূহলী হয়েই সে পা রাখলো ড্রয়িং রুমে। অনেক অপরিচিত মুখের মাঝে একটি পরিচিত মুখমণ্ডল দেখেই চমকে গেলো অহি। বিরাট বড়সড় একটা ধাক্কাও যে খেলো তা নির্দ্বিধায় আঁচ করা যায়।

অহিকে দেখে বৈঠকখানার আলোচনা যেন বিরতি ঘোষণা করলো। মুহূর্তেই রমরমা পরিবেশটা থিতিয়ে গেলো। সোফা থেকে সুন্দরী এক ভদ্রমহিলা উঠে এলেন। অহির গোলগাল ছোটো মুখশ্রীতে হাত বুলিয়ে দিলেন বেশ আদুরে হাতে। আহ্লাদী কণ্ঠে বললেন,
“বড়ো হয়ে গেছিস তো!”

অহি জবাব দিলো না। সামনের চশমা পড়া, সুন্দর নারী মুখশ্রীটার দিকে তাকিয়ে রইলো। ভদ্রমহিলা আবারও আদুরে কণ্ঠে বললেন,
“কবে অত বড়ো হলি!”

“আপনি যাওয়ার পর পরই। খোঁজ নেন নি তো তাই জানেন না। অবশ্য খোঁজ নেওয়ার জন্য তো আপনি জাননি।”

অহির কাঠ কাঠ উত্তরে সামনের ভদ্রমহিলা বোধহয় কিছুটা ভড়কে গেলেন। সরু চোখে সোফায় বসে থাকা এক ভদ্র পুরুষের দিকে তাকালেন। লোকটা চোখ দিয়ে কি যেন ইশারা করে আশ্বাস দিলেন। তন্মধ্যে রান্নাঘর থেকে ব্যস্ত পায়ে ছুটে এলেন অবনী বেগম। হাতে এক গ্লাস ঠান্ডা শরবত। মেয়ের দিকে শরবতের গ্লাস এগিয়ে দিয়ে ভাঙা কণ্ঠে বললেন,
“নেও তোমার শরবত। বাহিরে ভীষণ গরম।”

অহি অবনী বেগমের দিকে পূর্ণদৃষ্টি দিলো। শ্যামলা গড়নের এই নারীর চোখ মুখ আজ বেশ শুকনো লাগছে। কপালে চিন্তিত একটা রেখাও আছে। সে যে বর্তমানে খুব ভীতিগ্রস্ত তা তার হাবভাবেই বোঝা যাচ্ছে। অহি ঠান্ডা শরবতের গ্লাসটা আলগোছে নিয়ে বেশ তৃপ্তি সহকারে পান করলো সেটা। যতক্ষণ না শরবত শেষ হয় ঠিক ততক্ষণ অবনী বেগম ঠাঁই দাঁড়িয়ে রইলেন। মেয়ের খাওয়া শেষ হতেই গ্লাসটা নিয়ে আবার চলে গেলেন রান্নাঘরে। অবনী বেগম রান্নাঘরে যেতেই অহি নিজের ঘরের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালো। তার মাঝেই ভদ্রমহিলা পিছু ডাকলেন,
“তোমার সাথে কিছু কথা ছিলো।”

অহি বিরক্ত হলো বেশ। বিরক্তিকর একটা শ্বাস ফেলে বললো,
“আমি এখন ক্লান্ত।”

ভদ্রমহিলা ফোড়ন কাটলেন। একরোখা ভাব নিয়েই বললেন,
“কথাটা বেশিই জরুরী অহু।”

“প্লিজ, ও নামে ডাকবেন না। আর হ্যাঁ, আপনি আগের মতনই রয়ে গেছেন। বিরক্তকর স্বভাবের।”

“অহি, ভদ্রভাবে কথা বলো। উনি তোমার,,”

নুরুল সওদাগরের গুরুগম্ভীর কণ্ঠ থেমে গেলো অহির মুখ ফিরানো দেখেই। অতঃপর অহি তাড়া দিয়ে বললো,
“কী বলবেন, বলুন।”

ভদ্র মহিলা আরেকটু এগিয়ে এলেন। প্রায় অহির গায়ের সাথে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে গদোগদো কণ্ঠে বললেন,
“আমার সাথে এভাবে কথা বলছিস কেন, বাবু?”

অহির কণ্ঠ এবার ক্ষাণিকটা উঁচুতে উঠলো। মহিলাটার হাতটা ঝাড়া মেরে বললো,
“আমি এভাবেই কথা বলি। এটাই আমার স্বভাব। ভালো লাগলে ভালো আর না লাগলে রাস্তা মাপুন। আপনাকে আমার সহ্য হচ্ছে না।”

কথা শেষ করেই গটগট পায়ে অহি নিজের রুমে চলে গেলো। বেশ শক্ত হাতেই দরজা টা আটকালো। বিকট এক শব্দ হলো, যে শব্দ অহির রাগের পরিমাণ সম্পর্কে কিঞ্চিৎ ধারণাও দিয়ে দিলো। ভদ্রমহিলা তাজ্জব বনে কতক্ষণ তাকিয়ে রইলো সে দিকে।

_

চিত্রা ছটফটে মন নিয়ে বসে আছে বনফুলদের ছাঁদে। বনফুল নিজের বাংলা বইটা একটু ঘেটেঘুটে দেখছে। মেয়েটাও পড়াশোনায় বেশ ভালো। চিত্রা অধৈর্য হয়ে একবার সিঁড়ি আরেকবার রেলিঙ পেরিয়ে রাস্তার দিকে তাকাচ্ছে। বনফুল বার কয়েক চিত্রার দিকে তাকালো। মেয়েটার উৎকণ্ঠা সে কিছুটা অবশ্য আঁচ করতে পেরেছে। কিন্তু তবুও ইনিয়েবিনিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
“কিরে চিতাবাঘ, এমন করছিস কেন? কোনো সমস্যা?”

চিত্রা রাস্তা থেকে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বনফুলের দিকে তাকালো। মেয়েটা যে মিটমিট করে হাসছে তা চিত্রার চোখ এড়ালো না। তবুও সে বুঝতে পারে নি এমন একটা ভাব করে বললো,
“না রে, কোনো সমস্যা না। তোকে না একটা কথা বলতে ভুলে গেছি।”

বনফুল আগ্রহী কণ্ঠে বললো,
“কী কথা?”

“আসলে তুহিন ভাই আজ বাড়ি এসে পড়েছে তাড়াতাড়ি। আমি যখন তোদের বাসায় আসছিলাম তখন আমাকে বলেছিল তোকে যোন একটু যেতে বলি। দরকারি কথা আছে নাকি তোর সাথে। আমি বলতেই ভুলে গেলাম।”

তুহিনের নাম শুনতেই কাঁপা-কাঁপি শুরু মেয়েটার। কণ্ঠ খাদে নিয়ে বললো,
“কী কথারে চিতাবাঘ? তুই জানিস কিছু?”

চিত্রা পায়ের উপর পা তুলে মাথাটা হেলিয়ে দিলো চেয়ারে। আয়েশি ভঙ্গিতে বসে অতঃপর বললো,
“জানিনা তো, তুই গেলেই তো জানবি। তোর কথা আমি কীভাবে জানবো অদ্ভুত! যা তো তাড়াতাড়ি। এমনেতেই লেট হয়ে গেছে।”

বনফুল দ্রুত উঠে দাঁড়ালো। বইটা বন্ধ করেই ছুট লাগালো চিত্রাদের বাড়ির উদ্দেশ্যে। তা দেখে খিলখিল করে হেসে উঠলো চিত্রা, অস্ফুটস্বরে বললো “পা গ লি মেয়ে।”

সূর্য তখন পশ্চিম আকাশে প্রায় হেলে পড়েছে। প্রকৃতি আঁধার। চিত্রার চোখ ঘুমে ভার ভার হয়ে এসেছে। চোখ কিছুটা লেগে আসতেই কারো পায়ের ধ্বনি কানে ভেসে এলো। চোখে গভীর ঘুম আর মনে প্রমিক পুরুষকে দেখতে চাওয়ার তীব্র ইচ্ছেয় তার ভেতর ভেতর তুমুল যু দ্ধ শুরু হলো। অতঃপর ঘুমে ভেঙে আসা চোখ গুলোকে সে টেনে খোলার চেষ্টা করলো। বার কয়েক চেষ্টায় সে সফলও হলো। নিভু নিভু চোখের পাতা ঝাপ্টাতে ঝাপ্টাতে অস্পষ্ট ভাবে তার আশপাশের দৃশ্য ফুটে উঠলো চোখের পাতায়। এমন গরম আবহাওয়ার মাঝেই একটা শীত শীত ভাব তাকে জেঁকে ধরেছে। প্রকৃতিটা বেশ আরামদায়ক ঠেকছে। চিত্রা নড়েচড়ে বসলো। চোখ গুলোকে পুরোপুরি খুলে আশেপাশে তাকাতেই দেখলো প্রকৃতির বুকে গম্ভীর রাত নেমে গিয়েছে ততক্ষণে। তার চোখ লেগেছে অনেকটা সময়ই হয়েছে বোধহয়। চিত্রা বা’দিকে তাকাতেই তার শীত শীত লাগার উৎস উদ্ভাবন করতে পারলো। বাহার ভাইয়ের ঘরের বিশাল টেবিল ফ্যানটা তার দিকে ঘুরিয়ে চালু করা। জানালা ভেদ করে সেই দা ন বী য় ফ্যানের বাতাসই তাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। ছাঁদের হলুদ বাল্বটাও জ্বালিয়ে দেওয়া এমনকি চিলেকোঠার ঘরেরও আলো জ্বলছে।

চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। বাহার ভাই এসে পড়েছেন অথচ তাকে ডাকলো না কেন! গত তিন চার দিন যাবত পড়াতেও যাচ্ছেন না! বাহার ভাই এর এমন উদাসীনতা বেশ ভাবাচ্ছে চিত্রাকে। চিত্রা উঠে দাঁড়ালো। অনেকক্ষণ এক টানা বসে থাকার কল্যাণে পা গুলো ঝিমঝিম করছে। সে দাঁড়িয়ে কতক্ষণ পা ঝাঁকালো। হাঁটার শক্তি সঞ্চিত হতেই সে ধীরে ধীরে এগিয়ে গেলো বাহার ভাই এর ঘরের দিকে। জানালার কাছটাতে এসেই সে থামলো। ঘরের ভেতরে কারো দেখা নেই। আলোটা জ্বালালো কে? ফ্যানটাও বা ছাড়লো কে? চিত্রা ধপধপ করে সিঁড়ি বেয়ে নিচে নেমে গেলো। রান্নাঘরের বনফুলের মা তখন ব্যস্ত হাতে রাঁধছিলেন। চিত্রাকে দেখেই মুচকি হাসলো। আদুরে কণ্ঠে বললো,
“কী ব্যাপার হুম? তুই কী আজকাল ঘুমোস না? ছাঁদেই দেখি ঘুমিয়ে গেলি?”

চিত্রা রান্নাঘরের সামনে থাকা ওয়াশরুমে গেলো। হাত মুখ ধুয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো,
“ওহ্, তুমিই তবে ফ্যান লাইট জ্বালিয়ে এসেছো?”

আয়েশা খাতুন মুচকি হাসলেন মেয়েটার কথা শুনে। কাজে মনযোগ রেখেই বললেন,
“তো, তুই কী ভেবেছিস? কে জ্বালিয়েছে।”

চিত্রা আমতা-আমতা করে বললো, “কেউ না।”

আয়েশা খাতুন খিলখিল করে হাসলেন। চিত্রার কাছে এসে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“তুই যার কথা ভেবেছিস সে তো গত চারদিন ধরে বাড়িতেই আসে নি। কোথায় গেলো, কি হলো কিছুই জানিনা। ছেলেটা যে কবে মানুষ হবে।”

“তোমার ছেলে কী মানুষ না? পরী টরী নাকি গো?”

কথা শেষ করে দু’জনই আবার নতুন উচ্ছ্বাসে হেসে দিলো।

_

তুহিন খাটে হেলান দিয়ে ফোন টিপছে। বনফুল কফির কাপ নিয়ে দরজার বাহিরে দাঁড়ালো। এ বাড়িতে এসেছে অনেকক্ষণ হলেও এঘরে এতক্ষণ আসার সুযোগ হয় নি। যখন দেখেছে তুহিনকে কফি দিতে হবে তখনই কাজটা নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছে উছিলায়।

“আসো বনফুল, দাঁড়িয়ে আছো কেন?”

তুহিনের কণ্ঠে কেঁপে উঠলো মেয়েটার সর্বাঙ্গ। সে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তুহিনের কাছে, কফির কাপটা এগিয়ে দিতে দিতে বললো,
“তোমার জন্য দিয়েছিল বড়ো চাচী।”

তুহিন উঠে বসলো, মিষ্টি হেসে বললো, “তুমি কষ্ট করে আনতে গেলে কেন?”

মেয়েটার থুতনি প্রায় চিবুকের সাথে লেগে যাওয়ার জোগাড়। মাথাটা তেমন নিচু রেখেই ছোটো ছোটো করে বললো,
“কোথায় কষ্ট! অল্প একটু কাজ তো।”

তুহিন ক্ষীণ হেসে কফির কাপটা নিলো। পা দুলাতে দুলাতে বললো,
“পড়াশোনার খবর কী?”

“ভালো।”

“মন দিয়ে পড়াশোনা করবে কেমন?”

বনফুল ডানে মাথা দুলালো। তুহিন কফিতে চুমুক দেওয়ার পর মেয়েটা প্রশ্ন ছুড়লো,
“তুমি কী কিছু বলবে আমাকে? চিতাবাঘ বললো।”

চিত্রার নাম শুনে তুহিন ভ্রু কুঁচকালো। কপাল কুঁচকে কিছুক্ষণ মনে করার চেষ্টা করে বললো, “না তো! কী বলবো!”

বনফুল চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালো৷ তার যা বোঝার সে বুঝে গেছে। মেয়েটা তার সাথে নিশ্চয় মজা করেছে আর সে কিনা লাফাতে লাফাতে চলে এলো! নিজেে কাজে নিজেই লজ্জা পেলো সে। লজ্জায় সেখান থেকে চলে আসতে নিলে বাঁধ সাধলো তুহিন। কফির কাপটা খাটের সাথে লাগানো ছোটো টুলটার উপর রেখে বললো,
“বনফুল দাঁড়াও, এসেছো ভালো হয়েছে। একটা কথা আছে।”

বনফুল চোখ তুলে তাকালো। কিছুটা আগ্রহী হয়েই জিজ্ঞেস করলো,
“কী কথা?”

তুহিন খাট ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। অফিসের ব্যাগটা থেকে একটা প্যাকেট বের করে এগিয়ে দিলো বনফুলের দিকে, মিষ্টি হেসে বললো,
“শুনেছিলাম, তোমার পায়ে নুপুর নাকি ভীষণ ভালো মানাবে? তাই এনেছি।”

তুহিনের কথা শুনে মেয়েটা চমকে গেলো। অনাকাঙ্খিত আনন্দে৷ তার চোখ টলমল করে উঠলো। কাঁদতে গিয়েও কাঁদলো না। বহু কষ্টে চোখের জল আটকে রেখে বললো,
“কে, কে বলেছে!”

“শুনেছি কোথায় যেন। এবার নেও তো দেখি।”

তুহিনের তাড়া দেখে বনফুল হাত এগিয়ে দিলো। কাঁপা কাঁপা হাতে প্যাকেট টা নিয়েই ছুটে চলে গেলো তুহিনের ঘর ছেড়ে। লোকটা তার পছন্দের এত দাম দেয়! এতটা? ভাবতেই তার ভীষণ রকমের কান্না এলো।

_

বেশ রাত করে ঘুমানোর ফলে চিত্রার মাথা ভার হয়ে আছে ঘুম থেকে উঠার পরপরই। বাহার ভাই এর চিন্তায় মেয়েটার আজকাল ঘুম হচ্ছে না। কিন্তু সে খবর কী মানুষটার আছে? গত চার পাঁচদিন ধরে নিখোঁজ হয়ে আছে। এদিকে চিত্রা মানবী কেঁদেকেটে রাত পাড় করেছে। তাছাড়া রাতে ভীষণ বাজে স্বপ্নও দেখেছে যার জন্য শরীরটা ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে গেছে।

চিত্রা ঘড়ির দিকে তাকালো। দুপুর একটা বাজছে! চিত্রা অবাক। এত বেলা অব্দি সে ঘুমিয়েছে! ধড়ফড় করে খাট থেকে উঠে বসলো। বার কয়েক নিজের মাকে ডাকলো। কিন্তু উত্তর এলো না। একে একে সবাইকে ডাকলো কিন্তু কোনো জবাব নেই। পুরো বাড়ি নিশ্চুপ, নিস্তব্ধ। চিত্রার কেমন ভয় ভয় করতে লাগলো। এর মাঝেই ছোটো চেরি ছুটে এলো। খুব বিজ্ঞ স্বরে বললো,
“এই চিত্রা বুবু, জানো কী হয়েছে?”

চিত্রা ভ্রু কুঁচকালো। মাথা দুলিয়ে বললো,
“কী হয়েছে? আর বাড়ির সবাই কই রে?”

“বাড়ির সবাই তো বাহার ভাইদের বাড়িতে। বাহার ভাই তো একটা বউ এনেছে বিয়ে করে। একটুও সুন্দর না।”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here