ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_12
Ariyana Nur
আশু কাপা কাপা গলায় বলল…..
—আ..আপি…..
আশুর ডাকশুনে নুহা অস্রু ভরা নয়নে আশুর দিকে তাকালো।নুহার চেহারা দেখে আশুর চেহারার রং পাল্টে গেল।কান্না করার কারনে নুহার চোখ,মুখ পুরো লাল হয়ে গেছে।আশু আবার কাপা কাপা গলায় বলল….
—কি… হচ্ছে এখানে???
আশুর কথা শুনেও সবাই চুপ করে বসে রয়েছে কারো মুখেই কোন কথা নেই।
সবাইকে চুপ করে থাকতে দেখে আশু এবার চেচিয়ে বলল….
—কি হল কেউ কিছু বলছে না ???কি হচ্ছে এখানে???
আসলামঃছোট ভাগ্নী এমন করছো কেন???দেখেছো সামনে বড়রা আছে।মাথা ঠান্ডা করে এখানে এসে বস।আজ তোমার বোনের বিয়ে।
আশু অবাক হয়ে বলল….
—বিয়ে মানে???কার সাথে আপির বিয়ে হচ্ছে???
আসলাম ছেলেকে দেখিয়ে বলল….
—এই ছেলের সাথে বড় ভাগ্নীর বিয়ে হচ্ছে।ছেলে অনেক ভালো।তুমি চিন্তা করো না।আমি আছি তো।
আশু দাতে দাত চেপে বলল….
—আপনার মত হিটলার,ক্লিকবাজ মামা যাদের থাকে তাদের চিন্তা না সব সময় মাথার মধ্যে দুশ্চিন্তা থাকে।
আসফিয়া ধমক দিয়ে বলল….
—আশু বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় জানো না।
আশুঃ না জানিনা।কেননা আমার মা আমাকে কখনো শিখায় নি বড়দের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয়।
আসফিয়াঃআশু…..(চেচিয়ে)
আশুঃআওয়াজ নিচে।আমি নুহা না।তাই আপনার ঐ ঠিৎকারে আমি ভয় পাই না।কেমন মা আপনি??? এমন একটা ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ে দিচ্ছেন???
নুহা কান্না করতে করতে কাপা গলায় বলল…..
—আশু…..
উনি তোর মা।মায় সাথে কেউ এভাবে কথা বলে না।আমার মনে হয় না আমি তোকে এমন শিক্ষা দিয়েছি।
আশু গুটি গুটি পায়ে নুহার সামনে বসে কান্না মাখা গলায় বলল….
—আপি তুমি চুপ করে আছো কেন?কেন এই ছেলেকে বিয়ে করছ???একে তো দেখতেই আমার পছন্দ হচ্ছে না।দেখ কেমন চোরের মত মাক্স পরে রয়েছে।আমার একে একটুও পছন্দ না।প্লিজ আপি তুমি এই বিয়ে করো না।আমি বলছি আমি তোমার জন্য রাজপুএ খুজে নিয়ে আসবো।প্লিজ আপি তুমি না করে দাও।প্লিজ…..
আশু কথাগুলো বলে নুহার কোলে মাথা রেখে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো।
নুহা কাপাকাপা হাত আশু মাথায় রেখে সে ও কান্না করতে লাগলো।আশুকে কি বলে সান্তনা দিবে সেই ভাষা নুহার নেই।নিজের কষ্টের থেকে আশুর কান্না দেখে নুহার কষ্ট বেশি হচ্ছে।
আসলাম নিজের জায়গা থেকে উঠে ছেলেটার সামনে গিয়ে ফিসফিস করে বলল….
—আমার ছোট ভাগ্নী কিন্তু দেখতে খারাপ না।আপনারা চাইলে তাকেও নিয়ে যেতে পারেন।আপার ব্যপারটা আমি সামলিয়ে নিব।বেশি দিতে হবে না।বড়টাকে যা দিবেন বলেছেন তার থেকে একটু বেশি দিলেই হল।
আসলাম এর কথা শুনে অগ্নি চোখে পাশের লোকটা তার দিকে তাকাতেই আসলাম আমতা আমতা করে বলল….
—থাক আপনাদের পছন্দ না হলে নাই।আমি অন্য কাউকে দেখে নিব।
কথাটা বলে আসলাম কাচুমাচু করে অন্য দিকে চলে গেল।
আসলাম উঠে চলে যেতেই তারা ইশারায় কিছু একটা বলল।
🌨🌨🌨🌨🌨
আশু আর নুহা একে অপরকে ধরে কান্না করছে।কারো চোখের জল মনে হয় আজকে বাধ মানছে না।আশু কিছুতেই নুহাকে বিয়ের জন্য না করতে রাজি করাতে পারছে না।ওদের কে এভাবে কান্না করতে দেখে মাক্স পড়া ছেলেটি রাগি গলায় বলল….
—আর কতো নাটক করবে।এবার এসব বন্ধ কর।আমাদের দেড়ি হয়ে যাচ্ছে।এই মেয়ে তাড়াতাড়ি পেপারে সাইন করে দাও।
ছেলেটির কথা শুনে আশু নুহাকে ছেড়ে দিয়ে নিজের চোখের পানি মুছে ছেলেটির সামনে গিয়ে কড়া গলায় বলল….
—আপনার কাছে এসব নাটক মনে হচ্ছে মিঃড্রাকুলা।
—এই মেয়ে ঠিক করে কথা বল।আমি ড্রাকুলা???আমার চেহারা দেখে তোমার ড্রাকুলা মনে হয়???
—চোরের মত তো মাক্স পরে চেরারা ঢেকে রেখেছেন।চেহারা দেখলাম কই???
—এই মেয়ে তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো।বেশি বাড়াবাড়ি করো না।
—বাড়াবাড়ি তো আপনারা করছেন।আমার আপির মত একজনকে বিয়ে করতে এসে।বলি দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পরেছে? আপনি আমার আপিকে বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছেন।আপনি যেমন তেমন একটা খুজে নিল।তাহলেই তো হয়।
—এই পিচ্ছি, তুমি আমি যেমন বলতে কি বুঝাতে চাচ্ছ???
—প্রথমত আমি পিচ্ছি না।আর ২য়ত আপনার মত বলতে আমি বুঝাতে চাচ্ছি…..
আশুকে আর কিছু বলতে না দিয়ে নুহা ওকে টেনে এনে বলল…..
—কি করছিস তুই আশু???পাগল হয়েছিস???
আশুঃ পাগলের কি আছে আপি।এরা কি মনে করেছে এদের দেখে আমি চুপ করে বসে থাকবো।কখনো না।এই আশু কাউকে ভয় পায় না।
ছেলেটি সোফা আয়েস করে বসে, পায়ের উপর পা তুলে ফুল এটিটিউট নিয়ে বলল….
—আই লাইক ইট।তোমার এটিটিউড,তেজ সব কিছুই আমার পছন্দ হয়েছে।ঠিক বলেছ তুমি ।তোমার আপির সাথে আমার যায় না।আমার সাথে তো তোমার মত একজনকেই যায়।তাই আগের প্লান কেন্সেল।মিস আশু আমি তোমার আপিকে না তোমাকে বিয়ে করতে চাই।
ছেলেটির কথা শুনে নুহার পায়ের নিচের মাটি সড়ে গেল।আশু তো এখনো ছেলেটির মুখের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে।আর এদিকে মনে মনে শয়তানী হাসছে।আসফিয়া অবাক হয়ে বলল….
—এ কি বলছেন আপনি???
ছেলেটিঃকেন শুনতে পান নি আমি কি বলেছি???
আসফিয়াঃপাগল হয়ে গেছেন???নুহাকে বিয়ে করতে চেয়ে এখন আশুকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন???
ছেলেটিঃএই যে আমার আপ কামিং শাশুরী মা। আমার প্রথমে আপনার বড় মেয়েকে পছন্দ হয়েছে এখন ছোটটাকে হচ্ছে।এতে সম্যসা কই।আর আপনার তো আমাকে পছন্দই।তাই আমি মনে করি এখানে কোন সম্যসা থাকার কথা না।আর যদি মনে করেন বড়টাকে রেখে ছোটটাকে বিয়ে দিচ্ছেন এতে সম্যসা হবে।তাহলে তার ব্যবস্থাও আমি করে দিব।সো নো টেনশন।
আসফিয়াঃঅনেক সম্যসা আছে।আমি তোমাকে নুহার জন্য পছন্দ করেছি আশুর জন্য না।
ছেলেটি ইশারা দিয়ে আসলামকে কিছু বললে আসলাম এসে আসফিয়াকে বলল…..
—আপা অমত করছো কেন???রাজি হয়ে যাও।সে তো বললই নুহার ব্যবস্থাও সে করে দিবে।
আসফিয়া রাগি গলায় বলল….
—পাগল হয়েছিস তুই আসলাম???আমি এমন একটা ছেলের সাথে আশুকে বিয়ে দিব???
আসলামঃআরে আপা এতো রাগছিস কেন???দুটোই তো তোর মেয়ে।
আসফিয়াঃহ্যা মানছি দুটোই আমার মেয়ে কিন্তু আশু আর নুহা এক না।তাই এই ব্যপারে তুই কোন কথা বলিস না।সে যদি নুহাকে বিয়ে করে তাহলে করতে পারে।এতে আমি বাধা দিব না।কিন্তু আশুকে আমি তার সাথে বিয়ে দিব না।কিছুতেই না।
আশু অবাক হয়ে কিছুক্ষন ওর মার দিকে তাকিয়ে থেকে নুহার দিকে তাকাতেই ওর কলিজায় লাগলো।কেননা নুহা পাথরের মত দাড়িয়ে থেকে ওর মার দিকে তাকিয়ে চোখের জল ফেলছে।আশু নুহাকে পাশের সোফায় বসিয়ে নিজের চোখের জল মুছে ছেলেটার সামনে গিয়ে বলল…..
—আমি আপনাকে বিয়ে করতে রাজি।আপনি বিয়ের ব্যবস্থা করুন।(কেছা লাগা ঝাটকা😎)
চলবে
(ভুলক্রটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।ধন্যবাদ)