ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_11

ছায়া হয়ে থাকবো পাশে,Part_11
Ariyana Nur

৭দিন পর…..

আজ সকাল থেকেই নুহার মন ভালো নেই।মনের মধ‍্যে কেমন যেন কু ডাকছে।কেন যেন মনে হচ্ছে খারাপ কিছু একটা ঘটতে যাচ্ছে।কিছুক্ষন মনের ভুল ভেবে অন‍্য কাজে মন দিল।কিন্তু কোন ভাবেই নিজের মনকে কেন যেন এসব ভাবনা থেকে ফেরাতে পারছেনা।

সকাল গড়িয়ে দুপুর হতে চলল।নুহা চুপচাপ বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে।সকালে সব কাজ শেষ করে আশুকে স্কুলে পাঠিয়ে নিজে কলেজের জন‍্য বের হওয়ার সময়ই আসফিয়া এসে বলল,আজ কলেজে যেতে হবে না।নুহা আর কি করবে।মার মুখের উপরে তো আর কথা বলতে পারবে না।তাই চুপচাপ ঘরে বসে রইল।আর মিলাতে লাগল মা কেন আজ কলেজে যেতে দিল না।

একটু পর বাড়ির সামনে গাড়ির হর্ণের শব্দ শুনে নুহা ব‍‍্যালকনি থেকে নিচে উকি দিয়ে দেখল নিচে তিনটি কালো রং এর গাড়ি ওদের গেডের সামনে এসে থেমেছে।গড়ি দেখেই নুহার মনে ভয় ঢুকে গেল।তাড়াতাড়ি রুমে গিয়ে বাবাকে ফোন করে জানানোর জন‍্য রুমের দিকে পা বাড়াল।রুমে ঢুকে ফোন হাতে নিয়ে বাবাকে কল করার আগেই কেউ ছু মেরে ফোনটা নিয়ে নিল।নুহা ভয়ে সামনে তাকিয়ে দেখে আসফিয়া ওর ফোন হাতে নিয়ে দাড়িয়ে আছে।আসফিয়া অপর হাত থেকে কিছু ব‍্যাগ নুহার বেডে ছুড়ে মেরে বলল….

—এগুলো পড়ে রেডি হয়ে আয়।কথাটা বলে অগ্নিদৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আর এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে হনহন করে চলে গেল।

নুহা কতক্ষন থ মেরে দাড়িয়ে থেকে রেডি হতে চলে গেল।বুঝতে তার বাকি রইল না তাকে যে দেখতে এসেছে।কিন্তু মনের মধ‍্যে কেমন যেন করছে।মাথায় একটা কথায় ঘুরপাক খাচ্ছে এতোগুলো গাড়ি নিয়ে মেয়ে দেখতে কেন এল???

ড্রয়িং রুমে আসফিয়া এর সামনে বসে রয়েছে একটি ছেলে।আসফিয়া ভ্রুকুচকে খুটিয়ে খুটিয়ে ছেলেটিকে দেখছে।সামনের ছেলেটির পড়নে ব্ল‍্যাক ড্রেস।হাতে গ্লাভস পড়া।মুখের মধ‍্যে অদ্ভুত রকমের একটা মাক্স পড়া।যার কারনে চেহারা বুঝা যাচ্ছে না।পিছনে দুজন লোক দাড়িয়ে আছে।পাশে একজন লোক বসে আছে।তার পরনেও কালো পোশাক।কিন্তু মুখ ভর্তি দাড়ি আর মাথায় এক ঝাকড়া চুল সামনে এসে পড়ায় চেহারা ভালো মত বুঝা যাচ্ছে না।ছেলেটি পায়ের উপর পা তুলে ফুল এটিটিউড নিয়ে ফোনে কিছু একটা করছে।ওর দিকে যে কেউ কড়া নজরে তাকিয়ে রয়েছে সেদিকে তার খবর নেই।

কিছুক্ষন আসফিয়া ছেলেটির দিকে তাকিয়ে থেকে প্রশ্ন ছুড়লো….

— আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন???

ছেলেটির আগের মতই বসে গম্ভীর গলায় বলল….

—আমার সম্পর্কে না জেনেই আপনার মেয়েকে আমার হাতে তুলে দিচ্ছেন???ব‍্যপারটা অদ্ভুত না।একটা অজানা -শুনা ছেলের হাতে নিজের মেয়েকে তুলে দিচ্ছেন???

ছেলেটির কথায় আফসিয়া একটু অপমান বোধ করল।তারপরেও নিজেকে সামলিয়ে বলল….

—না আসলে আপনার সম্পর্কে তো আসলামের কাছ থেকে সব সুনেছি তার পরেও আমি আপনার কাছ থেকে জানতে চাচ্ছি।

—আমি নিজের পরিচয় নিজে দেওয়া পছন্দ করি না।

আসফিয়া মুখটা ছোট করে বসে রইল।মনে মনে ভাইকে বকতে বকতে বলল…..

—রংবাজ ছেলে পছন্দ করতে বলেছি বলে এমন ছেলেই পছন্দ করেছে যে কোন দামই দিচ্ছে না।আর ঐ গাধাটা যে কাল ফোন করে বলল, ছেলের কথা।তারপর থেকে নিজেরই কোন খবর নেই।আজ এদের সাথে আসলোও না।

(কাল আসলাম আসফিয়াকে ফোন করে বলেছে,ওরা যেমন ছেলে খুজছে তেমন একটা ছেলে পেয়েছে।ছেলে মারামারি,কিডন‍্যাপ,চাদাবাজি করে।আসলামের নাকি ছেলে অনেক পছন্দ হয়েছে।আসফিয়াও ভাইয়ের পছন্দের কথা শুনে বাড়িতে নিয়ে আসার জন‍্য অনুমতি দিয়ে দিয়েছে)

🌨🌨🌨🌨🌨

একটু পর নুহাকে এনে ছেলেটির মুখোমুখি বসানো হল।ছেলেটি কতক্ষন নুহার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে আসফিয়াকে উদ্দেশ করে বলল…

—মিসেস…..আমি সোজা কথা সোজা ভাবেই বলতে পছন্দ করি। আমার আপনার মেয়েকে পছন্দ হয়েছে।আর আমি আজি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে চাই।

ছেলেটির কথা শুনে নুহার মাথায় যেন বাজ পড়ল।নুহা মনে মনে আল্লাহ্ কে ডাকতে লাগল যাতে তার মা না করে দেয়।কেননা লোকগুলোকে নুহার মোটেও পছন্দ হচ্ছে না।আর বাসায় আশুও নেই আর না বাবাকে কোনভাবে জানাতে পেরেছে।

আসফিয়া কাচুমাচু করে বলল….

—আমাদের কোন সম‍্যসা নেই।কিন্তু আমার ভাই তো এখানে নেই।ও না আ…..

বাকি কথা শেষ করতে না দিয়েই আবার ছেলেটি গম্ভীর গলায় বলল…..

—আপনি ভুলে যাচ্ছেন আপনার ভাই আমাকে এখানে পাঠিয়েছে।আপনার ভাইয়ের আমার পছন্দ না হলে সে নিশ্চই আমাকে এখানে পাঠাতো না।আজকে আমি ফ্রি আছি।আর আমার মতে শুভ কাজে দেড়ি করতে নেই।এবার আপনার মতামত বলুন।আপনি ভাববেন না আপনি না করলেও আমি আপনার মেয়েকে এখানে রেখে যাব।আপনি রাজি থাকলে স-সম্মানে ওকে বিয়ে করে নিয়ে যাব।আর রাজি না হলে আপনাকে এখানেই গুম করে আপনার মেয়েকে উঠিয়ে নিয়ে যেতে আমার দুই মিনিট ও লাগবে না।এবার আপনিই বলুন আপনি কি করবেন।

ছেলেটির মুখে এমন কথা শুনে আসফিয়া একটা বড় সড় ঢোক গিলল।আর নুহা সে তো অবাক হয়ে তাকিয়ে রইল ছেলেটির দিকে।

(এবার সাইফ এর কি হবে।বেচারাতো দেবদাস হয়ে যাবে)

🌨🌨🌨🌨🌨

সোফার মধ‍্যে গালে হাত দিয়ে মন খারাপ করে বসে রয়েছে মিসেস চৌধুরী।একটু পর কাজের মেয়ে রুনা এসে বলল….

—খালাম্মা আপনে অহন বইয়া রইছেন এহানে???ওডেন খাইয়া লন কয়ডা।কত বেলা হইছে আপনের খবর আছে???

রুনার কথায় মিসেস চৌধুরী এটকু নড়েচড়ে বসে বলল….
—সব ঢেকে রেখে দে।খাবো না আমি।ভালো লাগছে না।

—কইলেই হইবো খাইবেন না।হেই সকালে কয়ডা খাইছেন।অহত তরিই কিছুই খান নাই।আপনার শরীর কি ভালো না?কথাটা বলেই রুনা তার মাথায় হাত দিয়ে বলল…..

—আপনের মাথাডা তো গরম হইয়া গেছে।আমি তেলপানি দিয়ে দেই একটু ভালো লাগবো।

মিসেস চৌধুরী মন খারাপ করে বলল…..

—আর মাথা গরম….তোর তেল পানিতে কমবে নারে।ছেলেদুটো যতদিনে না ফিরছে ততোদিনে এই মাথাগরম থাকবেই।

—আপনে একটু কম চিন্তা করেন দাদারা আইয়া পরবো।দাদারা আইয়া যদি জানে আপনে এমন করছেন তইলে দেইখেন কেমন করে।বহেন আমি তেল নিয়া আইতেছি।

রুনা চলে গেল তেল আনতে মিসেস চৌধুরী মাথায় দেবার জন‍্য।আর এদিকে মিসেস চৌধুরী আবার মন খারাপ করে বসে রইল।

আজকে সাইফ আর নীলাভ ৩দিন হল বিজনেসের কাজে দেশের বাহিরে গিয়েছে।নীলাভ বিজনেস এর কোন কাজ করেনা।তারপরেও এবার ফ্রি থাকায় সাইফ এর সাথে গিয়েছে।আর এদিকে মিসেস চৌধুরীর ছেলেরা বাড়ির বাহিরে পা দেবার পর থেকে এমন মন খারাপ,উদাস হয়ে বসে থাকে।

🌨🌨🌨🌨🌨

আসফিয়া কাচুমাচু করে বসে আছে কি বলবে ভেবে পাচ্ছেনা।এতোদিন নিজে যতই মেয়েকে অত‍্যাচার করুক।আর রাগের মাথায় এমন ছেলে খুজে আনার কথা বললেও এখন একটু খারাপ লাগছে এমন ছেলের কাছে মেয়ে বিয়ে দেবার জন‍্য।যতই হোক মা তো।একটু তো খারাপ লাগবে।আর নুহা সে তো কান্না করেই যাচ্ছে। মার কথার উপর দিয়ে তো কিছু বলতে পারছে না।মা যদি না করে তারপরে না হয় দু’চার কথা তাদেরকে শুনানো যাবে।কিন্তু সে তো কিছুই বলছে না।

আসফিয়াকে চুপ করে থাকতে দেখে ছেলেটি বলল….

—কি হল কথা বলছেন না কেন??? আপনি কি এই বিয়েতে রাজি না???তাহলে কি আমি ২য় অপশনে যাব???

আসফিয়া কিছু বলার আগেই আসলাম এসে বলল….

—রাজি না মানে!!আমরা রাজি।আপনার মত সোনার টুকরো ছেলে কি আমরা আর ২য়টা পাবো।(জোর পূর্বক হেসে)

নুহা ওর মামার কথা শুনে অবাক হয়ে বলল….

—মামা এগুলো তুমি কি বলছো???আর মা তুমি কিছু বলছো না কেন???আমি কি তোমার কাছে এতোই বোঝা হয়ে গেছি???(ছলছল চোখে)

আসফিয়া নুহার কথার জবাব না দিয়ে বলল….

—আপনারা বিয়ের কাজ শুরু করুন।আমাদের কোন সম‍্যস‍া নাই।

নুহা ওর মার কথা শুনে টপটপ করে চোখ দিয়ে পানি পরতে লাগল আর করুন চোখে ওর মার দিকে তাকিয়ে রইল।ও জানতো ওর মা ওকে কথা শুনায় দেখতে পারে না।তাই বলে যে ওর মা ওকে ঘৃণা করে তা ওর জানা ছিল না।ও ওর মার কাছে এতো অপছন্দ???যে আজকে এমন একটা ছেলের হাতে ওকে দিয়ে দিচ্ছে???

🌨🌨🌨🌨

আশুর আজ সব ক্লাস না করেই বাড়িতে চলে এসেছে।তারও আজ ক্লাসে মন বসছিলো না।তাই ক্লাস শেষ হবার আগেই সে ছুটি নিয়ে চলে এসেছে।বাড়িতে ঢোকার সময় বাড়ির সামনে গাড়ি দেখে আশুর মনে একটু খটকা লাগল।তারপরেও গুটিগুটি পায়ে ভিতরে প্রবেশ করতে তার মুখটা হা হয়ে গেল।কেননা সামনে নুহা মাথা নিচু করে বসে কান্না করছে।তার সামনে দুজন লোক বসা।আর পাশেই মা আর মামা বসে আছে।আর আপর পাশে দুজন লোক কি যেন কাগজ পএে লিখছে।

আশু গুটিগুটি পায়ে সামনে গিয়ে দাড়াতেই শুনতে পেল একজন একটা পেপার নুহার সামনে দিয়ে বলল…..
—সাইন করুন।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here