স্বপ্নচারিণী,পর্ব_১৪

স্বপ্নচারিণী,পর্ব_১৪
সামান্তা সিমি

নাস্তা বানাতে গিয়ে বেহাল দশা হয়েছে যূথীর।গ্রাম থেকে এখানে আসার পর রান্নাঘরের ধারে কাছেও যায় নি সে।এতদিন পর হঠাৎ রান্নায় হাত দিতে গিয়ে ভীষণ জ্বালায় পরে গেছে।
অনেক চিন্তা ভাবনা করে ডালপুরি বানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। শেষের পুরিটা তেল থেকে তুলেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল যূথী। অবশেষে নাস্তা বানানো সম্পন্ন। এখন শুধু ওদের আসার অপেক্ষা।
গরম তেলের কড়াই চুলা থেকে নামিয়ে নিচে রাখতে গিয়েই যত বিপত্তি ঘটল।অসাবধানতা বশত খানিকটা গরম তেল ছিটকে পরল যূথীর বাম হাতের কব্জিতে।
অসহ্য জ্বলুনিতে চিৎকার দিয়ে উঠল সে।মনে হচ্ছে তাঁর হাত কেউ গনগনে আগুনের ভেতর ঢুকিয়ে দিয়েছে।দেখতে দেখতে কয়েক সেকেন্ডের ভেতর জায়গাটা ফোসকা পরে গেল।

উপরে যাওয়ার জন্য মাত্রই সিড়িতে পা রেখেছে নিশান।তখনই রান্নাঘর থেকে যূথীর চিৎকার শুনে দাঁড়িয়ে পরল।ওইসময় ফোন আসাতে কথা বলায় ব্যস্ত হয়ে পরেছিল যে ভুলেই গেছিল যূথী কিচেনে আছে।
নিশান দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখে যূথী হাত নিয়ে লাফালাফি করছে।চোখ মুখ ব্যথায় জর্জরিত।

“—হোয়াট হ্যাপেন্ড যূথী! হাতে কি হয়েছে?”

যূথী ঠোঁট টিপে জ্বলুনি সহ্য করার বৃথা চেষ্টা করছে।এই মুহূর্তে নিশান কি বলছে কিছুই তাঁর মাথায় ঢুকছে না।

ফ্লোরে তেলের চিহ্ন দেখেই নিশান বুঝে গিয়েছে আসল ঘটনা কি!সে তাড়াতাড়ি যূথীর হাত টেনে ট্যাপের পানির নিচে দিয়ে দিল।

“—এত পাকনামি করতে কে বলেছে তোমায়?কে বলেছে এসব বানাতে? বাড়িতে আর কেউ ছিল না? ওদের বললে কি বানিয়ে দিত না?”

এমনিতেই হাতের জ্বলুনিতে যূথীর চোখে পানি জমা হয়েছিল।এখন নিশানের ধমক শুনে সেই পানি দ্রুত গতিতে গড়িয়ে পরল।সে ব্যথা পেয়েছে এর মধ্যেও লোকটা বকে চলেছে।এত নির্দয় হয় কিভাবে মানুষ?
যূথীকে চুপ থাকতে দেখে নিশান আবার বলল,

“—এখন চুপ কেনো? ইচ্ছে করছে কানের নিচে ঠাস করে একটা বসিয়ে দেই।”

করিডোর দিয়ে যাওয়ার সময় নিচ থেকে চিল্লানোর আওয়াজ শুনতে পেল কারিমা।ভাবছে কারো কোনো দুর্ঘটনা হলো না তো!
কিচেনের সামনে গিয়ে দেখল নিশান যূথীর হাত ট্যাপের পানির নিচে দিয়ে রেখেছে আর যূথী একটু পর পর চোখের জল মুছছে।
নিশানকে কিচেনে দেখে কারিমা দরজার সামনেই দাঁড়িয়ে রইল।ভেতরে ঢুকল না।বাড়ির অন্য সবার মতো সেও এই মানুষটাকে ভয়ের চোখে দেখে।কখন যে হুট করে রেগে যায় কেউ বলতে পারে না।তার উপর মাহিরের বড় ভাই উনি।
নিশান একপলক কারিমার দিকে তাকিয়ে যূথীকে বলল,

“—চুপচাপ এখানে দাঁড়িয়ে থাকো।আমি বার্নল ক্রিম নিয়ে আসছি।”

নিশান যেতে নিলেই তক্ষুনি কারিমা বলে উঠল,

“—ভাইয়া আপনি উপরে যান।আমি না হয় ওঁর হাতে ওষুধ লাগিয়ে দিই?”

আর কিছু না বলেই নিশান চলে গেল।এদিকে যূথী এখনো চোখের জল মুছে যাচ্ছে। কেঁদে কেটে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে মেয়েটা।কারিমা যূথীর পুড়ে যাওয়া হাতটা দেখে বলল,

“—বেশ খানিকটা পুড়ে গেছে দেখছি।কেনো একা একা এসব করতে গেলে।আমাকে তো ডাকতে পারতে!”

“—মনীষাদের জন্য বানিয়েছিলাম ভাবী।”

“—আচ্ছা চলো। ক্রিম লাগিয়ে দিচ্ছি আমি।”

“—দেখেছো ভাবী! নিশান ভাইয়া আমাকে কেমন বকল।উনি সবসময় আমার সাথে এমন করে।”

সামান্য হাসল কারিমা।নিশান ভাইয়াকে নিয়ে কত জনের কত অভিযোগ। অথচ ওই মানুষটার এসবে কোনো ভ্রুক্ষেপও নেই।সে চলে নিজের গতিতে।মন যেটা চায় সেটাই করে।

“—ভাইয়া একটু রাগী এটাতো জানোই যূথী।আর উনি যে প্রফেশনে আছে সেখানে সারাদিন চিল্লানোর উপর থাকতে হয়।তো স্বাভাবিকভাবেই বাড়িতে আসলে একটু মাথা গরম থাকে।তুমি আর মন খারাপ করো না।চলো আমার ঘরে।”

* ডিনারের পর নিজের রুমে বসে বইয়ে মুখ গুঁজে রেখেছে যূথী। কিন্তু তাঁর চোখ চলে যাচ্ছে বিছানায় রাখা প্রিয় মোবাইলটার দিকে।হাত নিসপিস করছে ছুটে গিয়ে একটু মোবাইলটা ধরার জন্য।
কিছুক্ষণ মনের সাথে যুদ্ধ করার পর হেরে গিয়ে তড়িৎ গতিতে ফোনটা হাতে নিয়ে নিল।হয়তোবা কতগুলো নোটিফিকেশন এসেছে।না জানি কতগুলো মেসেজ জমা হয়েছে।
কয়েক সপ্তাহ হলো মনীষা তাঁকে ফেসবুক অ্যাকাউন্ট খুলে দিয়েছে।প্রথম দিকে ফেসবুকের কিছু না বুঝলেও এখন তাঁর মারাত্মক নেশা ধরে গেছে।পড়ার ফাঁকে একবার ফোন হাতে না নিলে ভালো লাগে না।
মনের সুখে যূথী ফেসবুক চালিয়ে যাচ্ছে। তখনই,

“—পড়া বাদ দিয়ে হাতে মোবাইল কেনো?”

চমকে উঠল যূথী।ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিশান দাঁড়িয়ে আছে।মুহূর্তেই বিষিয়ে উঠল তাঁর মনটা।মোবাইলের ধান্দায় তো দরজাটা লাগাতেই ভুলে গেছে।আর সেই সুযোগে এই জল্লাদ রুমে প্রবেশ করে নিয়েছে।

“—পড়তে আর ভালো লাগছিল না।তাই একটু ফোনটা হাতে নিয়েছি।”

নিশান যূথীর হাত থেকে ছো মেরে মোবাইলটা নিয়ে নিল।যূথী বাধা দেওয়ার সুযোগই পেল না।রাগে গজগজ করতে করতে বলল,

“—মোবাইলটা কেনো নিলেন।দিন আমার মোবাইল। ”

ফোন ফেরত দেওয়ার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না নিশানের মধ্যে।যূথী ছুটে এল ফোনটা নেওয়ার জন্য।কিন্তু নিশান একহাতে যূথীকে আটকে অন্য হাতে মোবাইলে কি যেন ঘাটাঘাটি করে যাচ্ছে।
যূথী চিল্লিয়ে বলতে লাগল,

“—দিন আমার ফোন।অন্যের মোবাইলে হাত দেওয়া কিন্তু অন্যায় কাজ। দিন বলছি।”

“—তুমি এখন আমাকে ন্যায়-অন্যায় শেখাবে?হাউ ফানি!ভুলে গেছো আমি কে?বেশি তিড়িংতিড়িং করলে কিন্তু আছাড় দিয়ে মোবাইল ভেঙে ফেলব।”

মুখ কালো করে যূথী চেয়ারে গিয়ে ধুপ করে বসে পরল।সে চায় না তাঁর মোবাইলটা এত নিষ্ঠুরভাবে ধ্বংস হয়ে যাক।তাই চুপচাপ বসে রইল।
ভীষণ রাগ হচ্ছে তাঁর।মাঝেমাঝে মনে হয় এই লোক প্ল্যান করে তাঁকে জ্বালাতে চলে আসে।নাহলে এত রাতে না ঘুমিয়ে তাঁর রুমে এসে মোবাইলের উপর তদন্ত চালাচ্ছে কেনো।ভালো লাগে এসব!
পাক্কা পাঁচ মিনিট পর মোবাইলটা ফেরত দিল নিশান।যূথী তাড়াতাড়ি লক খুলে দেখতে লাগল এতক্ষণ কোথায় কোথায় নির্যাতন চালিয়েছে ।ফেসবুকে ঢুকে মুহূর্তেই তাঁর মেজাজ হাইপার হয়ে গেল।

“—আমার ফেসবুক আইডি কোথায়?কি করেছেন আমার আইডিটার?”

যূথীর কথা পাত্তা না দিয়ে নিশান বেশ আয়েশ করে বিছানায় এক পায়ের উপর আরেক পা তুলে বসল।এমন একটা ভাব করছে যেন কিছুই হয়নি।
যূথী আবার বলল,

“—আপনি কি শুনতে পাচ্ছেন আমার কথা? আমার আইডি কোথায়?”

“—নেই। ডিলিট করে দিয়েছি।”

“—কেনো করলেন এটা?”

নিশান হাত দিয়ে সামনের চুলগুলোকে পেছনে নিয়ে বলল,

“—কয়েকদিন পর পরীক্ষা। পরীক্ষা শেষ করে তারপর আইডি খুলবে।তোমার ভাগ্য ভালো কোনো ছেলের সাথে মেসেজ পাই নি।তাহলেই না বুঝতে নিশান কি চিজ।”

যূথী থম মেরে বসে রইল।তাঁর ইচ্ছে করছে দৌড়ে গিয়ে বিছানায় বসা লোকটার চুল টেনে ছিড়ে ফেলে।তাঁর সুন্দর সময়গুলো এই মানুষটা সবসময় নষ্ট করে দেয়।কিসের এত শত্রুতা তাঁর সাথে!

“—হাতের জ্বলুনি কমেছে?দেখি হাতটা!”

নিশানের কথা গায়ে মাখল না যূথী।যেখানে বসে ছিল সেখানেই বসে রইল।কথা বলবে না সে।মাথায় বজ্র পরলেও সে নিশান ভাইয়ার সাথে আজ কথা বলবে না।
যূথীর নড়নচড়ন না দেখে ধমকে উঠল নিশান।

“—আমি উঠে আসলে কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে।”

ভয় পেয়ে উঠে এল যূথী।হাতটা সামনে বাড়িয়ে দিতেই নিশান নেড়েচেড়ে দেখে বলল,

“—লাল হয়ে আছে এখনো।ক্রিমটা ডেইলি লাগালে ঠিক হয়ে যাবে।”

কিছু বলছে না যূথী।তাঁর আইডি ডিলিট করে এখন দরদ দেখাতে আসছে।
হঠাৎ নিশান যূথীর হাতের উল্টো পিঠে আলতো করে একটা চুমু খেয়ে নিল।
কেঁপে উঠল যূথী।নিশানের এমন কান্ডে থ হয়ে গেছে। হাত ছাড়িয়ে লাফ দিয়ে দূরে সরে গেল সে।চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে নিশানের দিকে।

“—মাই সানফ্লাওয়ার! ”

মুচকি হেসে নিশান যূথীর দিকে চোখ মেরে বেরিয়ে গেল।

_________________

* বছর ঘুরে আবার এসেছে পহেলা বৈশাখ। পুরনো দিনের জড়তা, তীক্ততা কাটিয়ে সবার প্রাণে নিয়ে এসেছে উচ্ছ্বসিত আনন্দ। সূর্যের প্রখর তাপ কারোরই বিরক্তিকর কারণ হচ্ছে না।সবাই রাস্তা-ঘাটে মেতে উঠেছে বৈশাখের আনন্দে।

পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে যূথীদের কলেজে আজ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।কলেজ প্রাঙ্গণ ছাত্র-ছাত্রীদের কলহাস্যে মুখরিত।ছেলেদের লাল পাঞ্জাবি আর মেয়েদের রঙিন শাড়ীতে আশপাশটা যেন ঝিলিক দিয়ে উঠছে।
যূথী,মনীষা এবং নীলিমা কমনরুমের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তিনজনের পরনেই লাল সাদা সংমিশ্রণের উজ্জ্বল শাড়ি।খোঁপায় গোঁজা হলুদ ফুল।
আজ বাধ্য হয়েই শাড়ি পরতে হয়েছে যূথীকে।মনীষা নীলিমা এত জোর করল যে আর না করতে পারেনি।কিন্তু এখন পরেছে মহা ঝামেলায়।এভাবে শাড়ি জড়িয়ে হাঁটা চলা করতে খুব অস্বস্তি হচ্ছে। বারবার মনে হচ্ছে এই বোধ হয় শাড়ি খুলে গেল।
যূথী নিচের দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি কুচি খুলে গেছে।একটু না অনেকখানিই। ব্যস! এটারই বাকি ছিল এতক্ষণ পর্যন্ত।

“—আমি আর একমিনিটও শাড়ি পরে থাকতে পারব না মনীষা।দেখো কি হাল হয়েছে শাড়ির।”

“—তাই তো দেখছি।আচ্ছা এক কাজ করো।কমনরুমে এখন কেউ নেই।তুমি শাড়ি পাল্টে জামা পরে নাও।জামা নিয়ে এসেছো না?”

“—হ্যাঁ বুদ্ধি করে এনেছি।”

“—বাহ্! তাহলে চটপট চেঞ্জ করে আসো।আমরা এখানে দাঁড়িয়ে আছি।ভেতরে কেউ ঢুকবে না।”

“—দারুণ একটা বুদ্ধি দিয়েছো।অনেক অনেক ধন্যবাদ।”

দুই মিনিটের মধ্যে শাড়ি পাল্টে বাইরে আসল যূথী।যূথীকে আসতে দেখে মনীষা বলে উঠল,

“—আর কলেজে থেকে কাজ নেই যূথী।নিশান ভাইয়া নাকি গেইটের সামনে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।এক্ষুনি ফোন করে বলল আমাদের বাসায় নামিয়ে দিবে।”

যূথী কাঁদোকাঁদো চেহারা নিয়ে বলল,

“—অনুষ্ঠান তো এখনো অনেক বাকি।এত তাড়াতাড়ি চলে যাব?”

“—কি আর করবে বলো।মহারাজা হুকুম দিয়েছে না মানলে কতল করে দেবে। চলো দেরি হয়ে যাচ্ছে। ”

যূথীর চিল্লিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করছে।এই লোক তো তাঁর জীবন অতিষ্ঠ করে তুলল।কোথায় ভাবল নাচের প্রোগ্রামটা দেখে বাড়ি ফিরবে কিন্তু তা আর হলো কই।আনন্দ মাটি করতে একজন হাজির হয়ে গেছে যে। আজকাল তো তাঁর দিন শুরু হয় নিশান ভাইয়ার মুখ দেখে আবার রাতও শেষ হয় নিশানের হুমকি ধমকি শুনে।ভালোই গেঁড়াকলে পরেছে সে।
গেইটের সামনে যেতেই দেখে নিশান গাড়িতে বসে আছে।মনীষাদের দেখতে পেয়ে ধমকে উঠে বলল,

“—কখন ফোন দিয়েছি তোদের? এতক্ষণ সময় লাগে আসতে? কাজ ফেলে এখানে এসেছি আমি।জলদি উঠ গাড়িতে। ”

“—কে বলেছে আপনাকে কাজ ফেলে আসতে?সেধে কেউ নিয়ে আসেনি। আবার মেজাজ দেখানো হচ্ছে। ”

মনে মনে কথাগুলো আওড়ে নিল যূথী।এছাড়া উপায় কি! সামনাসামনি এগুলো বলার দুঃসাহস সে কখনো দেখাবে না।
যূথীর পা থেকে মাথা পর্যন্ত চোখ বুলিয়ে ভ্রু কুচকে নিশান জিজ্ঞেস করল,

“—সকালে তো দেখলাম শাড়ি পড়ে বের হয়েছো।এখন শাড়ি কোথায়?”

যূথী মাথা নিচু করে উত্তর দিল,

“—ভালো লাগছিল না তাই খুলে ফেলেছি।”

“—বেশ করেছো।গাড়িতে উঠো এখন।”

নিশান মুখ শক্ত করে স্টিয়ারিংয়ে হাত রাখল।সকালে যূথীকে শাড়ি পরা অবস্থায় দেখে তাঁর হুঁশ উড়ে গেছিল।অফিসে গিয়েও ঠিকমত কাজে মন বসাতে পারেনি।তাঁর ইচ্ছা করছিল যূথীকে তুলে এনে সামনে বসিয়ে রাখে।শেষমেষ আর সহ্য করতে না পেরে কলেজে এসেছিল একনজর দেখার জন্য।কিন্তু মহারানী তো সেই আশাটা পূরণ হতে দিল না।

চলবে…………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here