অরোনী, তোমার জন্য-৭,০৮
লিখা- Sidratul Muntaz
০৭
বৃষ্টি থেমে গেছে। অরোনী আর রাফাত দু’জনেরই বৃষ্টির পানিতে গোসল শেষ। অরোনী একের পর এক হাঁচি দিচ্ছে। হাঁচি থামার নামই নিচ্ছে না। রাফাত রাগান্বিত স্বরে বলল,” আগেই বলেছিলাম ঘরে চলো। এখন ভালো লাগছে?”
অরোনী জবাব দিল না। ওরনায় নাকের সর্দি মুছল। রাফাত বলল,” এবার অন্তত ঘরে চলো অরোনী।”
” তুমি এইখানে রাতে কিভাবে ঘুমাও? তোমার কি শীত লাগে না?”
” আমি কিভাবে এখানে ঘুমাই সেটা নিয়ে চিন্তা করার সময় এখন না। রিতু ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি কে জানে? জেগে থাকলে ওকে দিয়ে আদা চা বানানো যেতো।”
অরোনী হাঁচি দিতে দিতেই হেসে উঠল। হাসির জোরে তার হাঁচি হয়ে গেল বন্ধ। রাফাত ভ্রু কুচকে বলল,” কি ব্যাপার?”
” ব্যাপার হলো, তুমি ছাতা সেজেও আমার ভিজে যাওয়া বন্ধ করতে পারলে না। সেই তো আমাকে ভিজতে হলো। তোমার জায়গায় আমি হলে কি করতাম জানো?”
” কি?”
” কোলে উঠিয়ে ঘরে নিয়ে যেতাম।”
” না বাবা! এতোবড় সাহস আমার নেই। মাটি যেই পিচ্ছিল হয়ে আছে। এই অবস্থায় তোমাকে কোলে নিয়ে হাঁটতে গেলে ধপাশ করে পড়ে কোমড় আমার ভাঙবে।”
অরোনী ক্ষীপ্তদৃষ্টিতে বলল,” এর মানে? তুমি কি বলতে চাও আমি ভারী?”
” ভারী তো বলিনি। কিন্তু কাঁদামাটির মধ্যে আমি একা হাঁটলেও তো পিছলে যেতাম। সেখানে তোমাকে কোলে নিয়ে হাঁটা আরও বেশি রিস্ক না?”
অরোনী কটমটে দৃষ্টিতে বলল,” কথা ঘুরানোর চেষ্টা করবে না।”
” আই সুয়্যের! আমি এমন কিছু মিন করিনি।”
অরোনী হাত ভাজ করে জেদী মেয়ের মতো বলল,” আজকে আমি ভুলেও ঘরে যাবো না। প্রয়োজনে সারারাত এইখানে বসে থাকবো৷ এইভাবে হাঁচতে থাকবো।”
” ঠিকাছে থাকো। একটু পর ছোট ছোট সাপেরা আসবে তোমার সাথে বন্ধুত্ব করতে। তারপর..”
” আমাকে ভয় দেখিয়ে লাভ নেই!”
অরোনীর কণ্ঠ শুনেই বোঝা গেল সে যথেষ্ট ভয় পেয়েছে। রাফাত জোরে হেসে উঠল।
” ওকে তাহলে গুড নাইট। তুমি বসে বসে সাপদের সাথে আড্ডা মারো। আমি গেলাম।”
অরোনী ভাঙবে তবু মচকাবে না। তার ভয় লাগছে কিন্তু এটা সে রাফাতের কাছে ভুলেও স্বীকার করল না। বলল,” সমস্যা নেই। চলে যাও তুমি। আমি ভয় পাই না।”
রাফাত সত্যি সত্যি চলে যাচ্ছে। কি খারাপ! অরোনী মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল বেশি ভয় লাগলে সে উর্মিদের ঘরে চলে যাবে। তাও রাফাতের কাছে যাবে না। এই ভেবে অরোনী চুপচাপ ওখানেই বসে রইল। একটু পর রাফাত এলো। ব্যর্থ গলায় বলল,” ঠিকাছে যাও। আমি হেরে গেছি। তুমি জিতে গেছো। এইবার চলো।”
এই কথা বলে রাফাত অরোনীকে পাজাকোলায় নিল। অরোনী বিজয়ীনির মতো হেসে বলল,” গাঁধা পানি খেলেও ঘোলা করে খায়।”
” হোয়াট ডু ইউ মিন? আমি গাঁধা?”
” রামগাঁধা!”
রুমে এসে সবার আগে ভেজা পোশাক বদলাতে হলো। অরোনীর খুব শীত শীত লাগছে। জ্বরটা মনে হয় আবার আসবে। রাফাত এখন টের পেলেই ধমকানো শুরু করবে। অরোনী চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পড়ল। রাফাত কাছে এসে বলল,” দেখি তোমার গা গরম কি-না!”
অরোনী বলল,” খবরদার ডন্ট টাচ। কি ভেবেছো সব ঠিক হয়ে গেছে? এখনও কিছুই হয়নি।”
অরোনীর রাগী কণ্ঠ শুনে ভ্যাবাচেকা খেয়ে রাফত বলল,” এর মানে কি? আবার কি হলো?”
“তোমার মতলব আমি বুঝি না ভেবেছো? গায়ে হাত দিচ্ছো কেন আমার? মন না ছুঁয়েই শরীর ছুঁতে চাও? আমার মন ছোঁয়ার মতো কোনো কাজ এখনও করোনি তুমি। শুধু চড়টা মেরেছিলাম বলে খারাপ লাগছিল। তাই তোমাকে ডাকতে গেছিলাম। রেগে ছিলে তাই মিষ্টি করে কথা বলেছি। এর বেশি কিচ্ছু মিন করবে না।”
রাফাত দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,” আমি কিছুই মিন করিনি। আমার ওই ধরণের কোনো ইনটেনশন ছিল না। আমি শুধু দেখতে চেয়েছিলাম তোমার জ্বর আছে কি-না!”
” আমি কি তোমাকে বলেছি হাত দিয়ে আমার জ্বর দেখো?”
” আচ্ছা স্যরি। আমার অনেক বড় ভুল হয়ে গেছে।”
অরোনী কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল,” কাল থেকে আমি আর কখনোই নিচে যাবো না। তুমি ব্যবস্থা করে দিবে যেন আমার আর নিচে যেতে না হয়।”
” কেমন ব্যবস্থা করে দিবো?”
” এইখানে যে স্টোর-রুমটা আছে সেখানে চুলা লাগিয়ে তুমি একটা রান্নাঘর বানিয়ে দিবে। আমি এখানেই রান্না করবো। খাওয়া-দাওয়া সব এখানেই হবে। তুমি বাজার করে আনবে। তাহলেই আর নিচে যাওয়ার প্রয়োজন পড়বে না।”
অরোনী এই কথা আগেও অনেকবার বলেছিল। রাফাত তখন মানেনি। বরং অরোনীকে বলেছে মানিয়ে নিতে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আর এই কথা বলা সম্ভব না। আজকে বাড়িতে যে ঘটনাটা ঘটেছে তা ভুলে যাওয়ার মতো না। রাফাত নিজেই যে ঘটনা কোনোদিন ভুলতে পারবে না অরোনীকে সেটা কিভাবে বলবে ভুলে যেতে? রাফাত একটু ভেবে বলল,” রান্না করার কথা যে বলছো, তুমি কি রান্না করতে পারবে রেগুলার? ”
” চেষ্টা করলে সব পারবো। তাছাড়া রিতু তো আছেই। ও আমাকে সাহায্য করবে। প্রয়োজনে ওকে আমরা এক্সট্রা করে টাকা দিবো।”
” ঠিকাছে। সেটা না হয় করলাম। কিন্তু সকালে কি করবে? রান্নাঘর ঠিক করতে তো কমপক্ষে একদিন সময় লাগবে। ”
” এক সপ্তাহ সময় লাগলেও প্রবলেম নেই। আমি প্রয়োজনে না খেয়ে থাকবো।”
” না খেয়ে থাকতে হবে না। আমি রিতুকে বলে তোমার জন্য উপরে খাবার পাঠানোর ব্যবস্থা করবো। এখন শুয়ে পড়ো।”
রাফাত অরোনীর মাথায় হাত দিতে নিলেই অরোনী চটপট বলে উঠল,” ডন্ট টাচ মি!”
রাফাত রেগে বলল,” ওকে কুল। তোমাকে টাচ করার জন্য আমি মরে যাচ্ছি না।”
অরোনী মুখ ভেঙালেও মনে মনে ঠিকই হাসল। টাচ করার জন্য কে মরে যাচ্ছে সেটা তো সে দেখতেই পাচ্ছে। রাফাত গিয়ে সোফাতে শুয়ে পড়ল আর অরোনী বিছানায়। জ্বরের কারণে অনেক রাত পর্যন্ত তার ঘুম এলো না। খারাপ লাগছিল। আলমারি থেকে মোটা কাঁথা বের করল গায়ে জড়ানোর জন্য। তখন রাফাতের ঘুমন্ত মুখ ভালোমতো দেখল। ছোট্ট সোফায় রাফাতের শরীর আঁটছে না। হাঁটু পর্যন্ত পা সোফার ভেতরে। বাকিটা বাহিরে ঝুলে আছে। এই অবস্থাতেই সে ঘুমিয়ে আছে। অরোনী একটা টুল এনে রাফাতের পা দু’টো টুলে উঠিয়ে রাখল। তারপর বিছানায় বসে কল্পনা করতে লাগলো হাজারো অতীত। আচ্ছা, রাফাতের সাথে সে অন্যায় করছে না তো? তাদের সম্পর্কের সমীকরণ শুনলে যে কেউ বলবে অরোনী দজ্জাল বউ। কিন্তু আসলেই কি তাই? রাফাতও অরোনীর সাথে কম অন্যায় করেনি। তার সবচেয়ে বড় অন্যায় ছিল অরোনীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠানো।
ভার্সিটির নবীনবরণে অরোনীকে রাফাত প্রপোজ করেছিল। অরোনী শুধু বলেছিল ভেবে দেখবে। তার পরদিন থেকেই হাত ধুঁয়ে অরোনীর পেছনে লেগে যায় রাফাত। অরোনীকে ছায়ার মতো অনুসরণ করতে থাকে। অরোনী রীতিমতো ভয় পেয়ে গেছিল। ভার্সিটি কামাই দিতে শুরু করল। কিছুদিন রিল্যাক্সের জন্য খালার বাড়ি চলে গেল ঢাকার বাহিরে। অরোনীকে খুঁজে না পেয়ে রাফাতের অবস্থা পাগলপ্রায়। হন্যি হয়ে অরোনীর ডিপার্টমেন্টে খোঁজ নিতে শুরু করল। ভার্সিটির সবাই ঘটনা জেনে গেল। রাফাতের ফাইনাল এক্সাম তখন শেষ। সে দ্রুত চাকরিতে ঢুকেছিল শুধু অরোনীর বাড়িতে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবে বলে। রাফাতের ফুপাতো বোনের হাসব্যান্ড বিশাল ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট। তাই রাফাতের চাকরি পেতে কোনো অসুবিধাই হলো না। অরোনী খালার বাসা থেকে ফিরে এসে জানতে পারল তার বিয়ে ঠিক হয়েছে। পাত্র ভালো চাকরি করে, নিজেদের বাগানবাড়ি আছে, ভালো ফ্যামিলি। অরোনী তার ভাইকে ভীষণ মানে। তাই বিয়েতে রাজি হয়ে গেছিল। তখনও সে জানতো না পাত্র রাফাত। যেদিন রাফাত তার বাবা আর শীলা চাচীকে সাথে নিয়ে অরোনীকে দেখতে এলো সেদিন অরোনী প্রথম জানতে পেরেছিল। রাবেয়া অরোনীকে দেখার জন্যেও আসেননি। বিয়েতেও তিনি ছিলেন না। অরোনীর পরিবারের সবাই জানতো রাবেয়া অসুস্থ। অরোনীও সেটাই ভেবেছিল। কিন্তু বিয়ের পরে জানা গেল তিনি অসুস্থ নয়, অসন্তুষ্ট!
সকালে রাফাত বা অরোনী কেউ নিচে খেতে গেল না। রিতু তাদের দু’জনের জন্যই খাবার বেড়ে উপরে নিয়ে যাচ্ছিল। তখন রাবেয়া বললেন,” রিতু, এগুলো কোথায় নিচ্ছিস?”
রিতু ভয়ে ভয়ে জবাব দিল,” ছোটভাইয়ের ঘরে।”
” ওরা কি জমিদার হয়ে গেছে? নিচে নামতে পারে না?”
” হেইডা আমি কেমনে কইতাম বড় আম্মা? আমি হইছি হুকুমের দাসী। আমার কাজ আদেশ পালন।”
” তোকে ভাষণ দিতে হবে না। এমন চটাং চটাং করা কি ছোটভাবীর থেকে শিখেছিস?”
রিতু মাথা নিচু করল। উত্তর দিল না। রাবেয়া বললেন,” তোর ছোটভাইকে বলবি নিচে আসতে। আমি ডাকছি।”
” জ্বে আচ্ছা।”
রাফাত আধঘন্টা পর নিচে নামল। রাবেয়া চেয়ারে বসে ম্যাগাজিন পড়তে পড়তে অপেক্ষা করছিলেন ডাইনিংরুমে। সিঁড়ির কাছেই ডাইনিংরুমটা। রাফাত এসে শান্ত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,” আমাকে ডেকেছো?”
রাবেয়া মুখের সামনে থেকে ম্যাগাজিন সরিয়ে বললেন,
” এখন থেকে কি মহারাণীকে উপরে খাবার দিয়ে আসতে হবে?”
” প্রতিদিন দিয়ে আসার প্রয়োজন নেই। শুধু আজকের জন্যই। কাল থেকে অরোনী নিজেই রান্না করে খাবে।”
” কিভাবে রান্না করবে?”
” স্টোর-রুমে একটা চুলা বসিয়ে রান্নাঘর বানানোর পরিকল্পনা করেছি।”
” বাহ, এখন থেকে কি তাহলে তোদের সাথে আমাদের খাওয়া-দাওয়া আলাদা হয়ে যাবে?”
রাফাত করুণ দৃষ্টিতে চেয়ে বলল,
” এর জন্য কে দায়ী মা?”
” অবশ্যই তোর বউ দায়ী। সে আমার মুখে মুখে তর্ক করে আমার চক্ষুশূল হয়েছে।”
” সে না হয় তর্ক করেছে। কিন্তু তুমি কি করেছো? কখনও তাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছো? প্রত্যেক ক্রিয়ারই বিপরীতমুখী প্রতিক্রিয়া থাকে।”
” তার মানে তুই বলতে চাইছিস তোর বউ যা যা করেছে সব ঠিক আর আমিই ভুল?”
” তুমি অরোনীর গায়ে হাত তুলেছো এটা নিশ্চয়ই ভুল। যেখানে নিজের মেয়ের গায়ে তুমি কখনও হাত তোলোনি সেখানে অরোনীকে কিভাবে মারলে?”
” আমার মেয়ে আমার সাথে কখনও বেয়াদবি করেনি। অরোনী করেছে। তুই যদি ওইসময় ওখানে থাকতি তাহলে আমার আগে তুই ওকে চড় মারতি।”
” আমি কখনোই ওকে চড় মারতাম না। যাইহোক, তুমি যেটা করেছো সেটা অন্যায় করেছো। এর জন্য তুমি অরোনীর কাছে ক্ষমা চাইবে। নাহলে..”
রাবেয়া গর্জন করে উঠলেন,” ওই বেয়াদব মেয়ের কাছে আমি ক্ষমা চাইবো? তুই এখনি আমার চোখের সামনে থেকে চলে যা।”
রাফাত চলে যেতে নিচ্ছিল। রাবেয়া আবার বললেন,” দাঁড়া।”
রাফাত দাঁড়াল কিন্তু পেছনে তাকাল না। রাবেয়া কাছে এসে বললেন,” দিন দিন বউয়ের দালাল হয়ে যাচ্ছিস। রুমা ঠিক কথাই বলেছিল। তুই ওকে চড় মারলি কোন সাহসে?”
” বড়ভাইয়ের সাথে বেয়াদবি করা তোমার কাছে ঠিক মনে হচ্ছে?”
” অরোনীর বেয়াদবি যদি তোর কাছে ঠিক মনে হয় তাহলে রুমার বেয়াদবিও আমার কাছে ঠিক। তোরও উচিৎ রুমার কাছে ক্ষমা চাওয়া।”
রাফাত শীতল হেসে বলল,” আমি রুমার কাছে ক্ষমা চাইলে যদি তুমি শান্তি পাও তাহলে আমি এখনি ক্ষমা চাইবো।”
এ কথা বলেই রাফাত হাঁটতে লাগল রুমার ঘরের দিকে। রাবেয়াও এলেন পেছন পেছন। রুমা বারান্দায় দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছিল। হুট করে রাফাত আর রাবেয়া সেখানে চলে এলেন। রাফাত নতমাথায় হাত জোর করে রুমাকে বলল,” কাল তোকে থাপ্পড় মারা আমার উচিৎ হয়নি। আমি অনেক বড় অপরাধ করেছি।সেজন্য স্যরি। আমাকে ক্ষমা করে দে।”
রুমা থতমত খেয়ে গেল। চড়ের কথা মনে পড়তেই গালে হাত রাখল। রাফাত মায়ের দিকে চেয়ে বলল,” এভাবে চলবে? নাকি পায়েও ধরতে হবে?”
রাবেয়া জবাব দিলেন না।
চলবে
গত পর্বে লাস্ট লাইনটা নিয়ে অনেকেই বিরূপ মনোভাব প্রকাশ করেছিলেন। ব্যাপারটা আমি একটু বলি। ওই লাস্ট লাইনটা দিয়ে আমি আসলে সম্পর্কের গুরুত্ব বোঝাতে চেয়েছিলাম। মা যেমন সবার কাছে প্রিয় তেমন বউও প্রিয় হওয়া উচিৎ। দু’জনই জীবনে সমান গুরুত্বপূর্ণ। মা সন্তানকে অনেক ভালোবাসে তেমনি স্ত্রীরাও স্বামীদের ভালোবাসে। মানুষ বলে মা মরলে মা পাওয়া যায় না কিন্তু বউ মরলে নাকি বউ পাওয়া যায়। এই কথাটা আমার বিছরি লাগে। বউ মারা গেলে নতুন কাউকে পাওয়া যায়। আগের জনকে কি আর পাওয়া যায়? সর্বোপরি বেহেশত বলতে আমি সুখ বুঝিয়েছি। মায়ের কাছে সন্তান সুখী তেমন স্ত্রীর কাছে স্বামী সুখী। যে স্বামী স্ত্রীকে নিয়ে সুখে থাকতে পারে না তার মতো দূর্ভাগা আর কে আছে?
অরোনী,তোমার জন্য~৮
লিখা- Sidratul Muntaz
অরোনী গোসল শেষ করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে চোখে কাজল দিচ্ছিল। উর্মি এসে বলল,” ভাবী তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে।”
উর্মির দুইহাত হাত পেছনে গুটানো। অরোনী হেসে বলল,” কি সারপ্রাইজ? দেখি!”
” আগে বলো সারপ্রাইজটা পেয়ে আমাকে কি দিবে?”
” তুমি কি চাও?”
” আজকে সন্ধ্যায় আমরা দু’জন ফুচকা খেতে যাবো।”
অরোনী একটু ভেবে বলল,” ওকে যাবো। এখন দেখাও সারপ্রাইজ।”
উর্মি দুইহাতে ধরা প্যাকেটটা অরোনীর সামনে এনে চিৎকার করে বলল,” ট্যানট্যানা!”
অরোনী খুলে দেখল সেই ঐতিহাসিক শাড়িটা। শাড়ি দেখে অরোনীর চোখ ছানাবড়া।
” এই শাড়ি তুমি কোথায় পেলে?”
উর্মি মুখের কাছে হাত নিয়ে ফিসফিস করে বলল,” চুরি করেছি।” এই কথা বলেই সে চোখ মারল। যেন খুব বীরের মতো কাজ করেছে। অরোনী রেগে বলল,” এটা একদম ঠিক হয়নি। শাড়িটা যেখান থেকে এনেছো সেখানে রেখে আসো।”
উর্মি ভ্রু কুচকে বলল,” কেন? এটা তো তোমার শাড়ি। তুমি পছন্দ করে কিনেছো। রুমা আর তানজু আপু ইচ্ছে করে শাড়িটা নিয়ে গেছে। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য।”
অরোনী তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলল,” একটা শাড়ি নিয়ে যদি ওরা নিজেদের বিজয়ী মনে করে তাহলে করতে দাও।”
উর্মি জেদ ধরল,” না ভাবী। এই শাড়ি আমি ওদের পরতে দিবো না৷ এটা তোমার শাড়ি তুমি পরবে।”
অরোনী চোখ রাঙিয়ে উর্মির দিকে তাকাল।
” যা বলছি তাই করো উর্মি। নাহলে কিন্তু আমি তোমাকে বকবো এখন।”
উর্মি মনখারাপ করে শাড়িটা নিয়ে বের হয়ে গেল।রুমা এই শাড়ির প্যাকেট বিছানায় রেখে গোসলে ঢুকেছিল। তখন রুমে কেউ ছিল না। উর্মিও সুযোগ বুঝে শাড়িটা হাতিয়ে নিয়েছে। এখন আবার রেখে আসতে গেলে সে নিশ্চিত ধরা খাবে। উর্মি শাড়িটা নিয়ে রুমার ঘরে গেল না। নিজের ঘরেই ফিরে এলো। পড়ার টেবিলে শাড়িটা রেখে বিছানায় শুয়ে ভাবতে লাগল কি করবে? নিলীমা আপুর সাথে ব্যাপারটা আলোচনা করা যায়। সে একটা বুদ্ধি বের করতে পারে। কিন্তু মাঝে মাঝে উর্মির মনে হয় নীলিমা আপুও রুমা আপুদের দলে। সেও ভাবীকে দুই চোখে দেখতে পারে না। আসলে অরোনী ভাবী দেখতে অনেক সুন্দর। একেবারে চোখ ধাঁধানো রূপ যাকে বলে। শুধুমাত্র এই কারণেই তাকে নিয়ে সবার এতো হিংসা। সবাই ভাবে অরোনী রূপের অহংকারেই এতো চটাং চটাং কথা বলে। সবই তার রূপের বড়াই। কিন্তু উর্মি জানে, অরোনী ভাবী রূপের বড়াই করে না। সে মানুষটাই এমন, রগচটা ধরণের। যে যেমন অরোনী ভাবী তার সাথে ঠিক তেমন। এইযে উর্মি, সে তো অরোনী ভাবীকে খুব পছন্দ করে। তাই অরোনীও উর্মিকে কত ভালোবাসে! উর্মির মা আশা মেয়ের ঘরে বিছানা ঝারতে এসেছিলেন। তখন পড়ার টেবিলে শাড়ির প্যাকেট দেখেই হাতে নিলেন। প্যাকেট খুলে শাড়িটা দেখে অবাক হয়ে বললেন,” এটা রুমার শাড়ি না? তুই কোথায় পেলি উর্মি?”
উর্মি নির্বিকারচিত্তে বলল,” রুমা আপু না, এটা ছোটভাবীর শাড়ি।”
আশা চোখ বড় বড় করে বললেন,” সেটা তো বুঝেছি। কিন্তু এই শাড়ি তো রুমা নিয়ে গেছিল না?”
উর্মি শোয়া থেকে উঠে বসে বলল,
” আমি রুমা আপুর ঘর থেকে শাড়িটা চুরি করে এনেছি মা। ভাবীকে দেওয়ার জন্য। কিন্তু ভাবী শাড়িটা নেয়নি। ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে। এখন এটা আবার রুমা আপুর ঘরে নিয়ে যেতে ইচ্ছে করছে না আমার।”
আশা কিছুক্ষণ শাড়িটার দিকে চেয়ে থেকে বললেন,” ভালোই হয়েছে। রুমা তো আর জানে না তুই নিয়েছিস। অরোনীও ভাববে তুই শাড়ি ফেরত রেখে এসেছিস। কিন্তু শাড়িটা থাকবে আমাদের কাছে।”
এই কথা বলেই আশা আলমারী খুলে শাড়ি ঢুকিয়ে রাখলেন। উর্মি অবাক হয়ে বলল,” আরে,এটা কি করছো? রুমা আপু যদি শাড়ি খোঁজে?”
” খুঁজবে না। ও এই শাড়ি এমনিই অরোনীকে ফেরত দিয়ে দিতো। রাফাত তাকে চড় মেরেছে তাও অরোনীর জন্য। এরপরেও কি অরোনীর শাড়ি ও পরবে?”
” তাহলে তো ভালোই হলো। এই শাড়ি রুমা আপুকে দিয়ে আসি। রুমা আপু ভাবীর শাড়ি ভাবীকে ফিরিয়ে দিক।”
” তুই-ই না মাত্র বললি অরোনী শাড়ি নেবে না? তাহলে ফিরিয়ে দেওয়ার দরকার কি? শাড়িটা তোর ছোট খালার বিয়েতে উপহার দেওয়া যাবে।”
উর্মি বিস্মিত কণ্ঠে উচ্চারণ করল,” মা!”
আশা এড়িয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে বললেন,” পড়তে বস, পড়তে বস। বিকালে না তোর কোচিং-এ পরীক্ষা? ভালো করে পড়।”
আশা রুম থেকে বের হয়ে গেলেন। উর্মির এতো মেজাজ খারাপ হচ্ছে! সে বুঝতে পারছে না সামান্য একটা শাড়ির প্রতি সবার এতো লোভ কেন? শেষমেষ তার নিজের মা পর্যন্ত! ধ্যাত!
সারাদিন স্টোর-রুম পরিষ্কার করতেই সময় লেগেছে। বিকালে মিস্ত্রী এনে চুলা সেট করা হলো। গ্যাসের মিটার বসানো হলো। রাফাত সুপার শপ থেকে ফ্রাইপেন, প্লেট, গ্লাস আরও বিভিন্ন জিনিস কিনে আনল। বাজারও আনা হলো। অরোনীদের বেডরুমে ফ্রীজ আগে থেকেই ছিল। সেই ফ্রীজ এনে নতুন রান্নাঘরে সাজানো হলো। একটা কিচেন র্যাক লাগবে। সেটাও আনা হবে। আপাতত টেবিলের উপর সরঞ্জাম রেখে কাজ চালানো হচ্ছে। দুপুরের খাবার তারা এখনও খায়নি। মিস্ত্রী চলে যাওয়ার পর অরোনী দ্রুত ভাত বসালো। ডিম ভাজার জন্য তাড়াহুড়ো করে পেঁয়াজ কাটতে নিয়ে তার হাতের আঙুল কেটে গেল। রক্তে মাখামাখি সবকিছু। রিতু জলদি নিচে থেকে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এলো। অরোনীর হাতে ব্যান্ডেজ করে দিতে লাগল। অরোনী বলল,” দ্রুত করো। ক্ষিদেয় মরে যাচ্ছি। রান্না না হলে খাবো কখন?”
রাফাত বলল,” হয়েছে থাক। আর রান্না করার দরকার নেই। ফুডপান্ডায় পিজ্জা অর্ডার করেছি।”
অরোনী আঁড়চোখে তাকিয়ে বলল,” এই কাজটা আর পাঁচমিনিট আগে করলে আমার হাতটা কাটতো না।”
রিতু কথা শুনে খিলখিল করে হেসে উঠল। রাফাত বলল,” তুই হাসছিস কেন? ভাবীকে পেঁয়াজ কাটতে না দিয়ে নিজে কাটতে পারলি না?”
” আমি তো কইসিলামই। ভাবীই আমারে দিল না।”
রাফাত বিড়বিড় করে বলল,” সব জায়গায় খালি পাকনামি। ”
অরোনী চোখ রাঙিয়ে বলল,” এই তুমি কথাটা কাকে বললে?”
রাফাত উত্তর না দিয়ে চলে যাচ্ছিল। তখন রিতু ডেকে বলল,” ছোটভাইয়া, বড় আম্মা আজকা সারাদিন কিছু খায় নাই।”
রাফাত অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল,” খায়নি মানে? কেন?”
” আফনে আর ভাবী বলে উনার সাথে বেয়াদবি করছেন। যতক্ষণ এই বেয়াদবির বিচার না হইবো ততক্ষণ উনি কিচ্ছু খাইবো না। এইটাই বলতাছে।
রাফাত দীর্ঘশ্বাস ছাড়ল৷ এই ঝামেলা কি থামবে না? রিতু একটু চুপ থেকে আবার বলল,” আমার মনে হয় সকালের ঘটনার লাইগাই বড় আম্মা এমন করতাছে।”
অরোনী কৌতুহলী কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল,” সকালে কি হয়েছিল?”
রিতু সকালের কাহিনী বিস্তারিত বলল। অরোনী রাফাতের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল,” তুমি সত্যি রুমার পায়ে ধরে মাফ চেয়েছো নাকি?”
রাফাত অবজ্ঞার স্বরে বলল,” আরে নাহ।”
” কিন্তু এখানে মায়ের ভাত না খেয়ে থাকার মতো কি হলো? তিনি কার উপর রেগে আছেন?”
রাফাত শান্ত স্বরে বলল,” মনে হয় তোমার কাছে মাফ চাওয়ার কথা বলেছিলাম তাই।”
অরোনী আফসোসের হাসি হাসল,” কেন যে বলতে গেলে? তোমার মাকে তুমি চেনো না? এখন দেখো, আবার কি নতুন ড্রামা শুরু হয়!”
সন্ধ্যায় সত্যিই বাড়িতে একটা বিশাল ঝড় হলো। রাফাতের বড়ভাই রাহাতকে ডেকে আনা হয়েছে। সে তার বউ নিয়ে উত্তরায় থাকে। মায়ের কাঁদুনী শুনে অফিস থেকেই ছুটে এসেছে বড় ছেলে। এমনিতে সপ্তাহে একবারও মায়ের খোঁজ নেয় না। আর আজকে সেজেছে মায়ের বীরপুরুষ। রাফাতকে ডেকেই ধমকানো শুরু করল।
” মায়ের সাথে তুই এমন ব্যবহার করার সাহস কিভাবে পেলি? মা তোর বউয়ের কাছে মাফ চাইবে? এই কথা তুই বললি কিভাবে? ছেলে নামের কলঙ্ক তুই।”
রাবেয়া কেঁদে-কেটে একাকার হয়ে যাচ্ছেন। সিঁড়ির উপর থেকে উঁকি মেরে দৃশ্যটা দেখছে অরোনী। মহিলার চোখে এতো পানি কোত্থেকে এলো? বড় ছেলেকে দেখেই মেলো ড্রামা শুরু করেছেন। অরোনী মনে মনে বলল,” হে আল্লাহ, আমাকে ধৈর্য্য দাও।”
রাফাত মাথা নিচু করে বলল,” আমি ভুল কিছু বলিনি। মা অরোনীর গালে চড় মেরেছেন। তোমার বিচারে কি বলে ভাইয়া? কাজটা ঠিক?”
” তাই বলে তুই মাকে তোর বউয়ের পায়ে ধরে ক্ষমা চাইতে বলবি?”
” পায়ে ধরার কথা আমি একবারও বলিনি।”
” যাই বলেছিস। মিনিং তো একটাই। মাকে তোর বউয়ের কাছে মাথা ঝোঁকাতে হবে।”
” মাথা ঝোঁকালে কেউ ছোট হয়ে যায় না। ক্ষমা চাওয়া মানেই অপমান না। তাছাড়া মা যেটা করেছে সেটা যথেষ্ট অন্যায়। মায়ের উচিৎ ছিল নিজে থেকেই ক্ষমা চাওয়া।”
রাবেয়া চোখ মুছে বিলাপ করতে লাগলেন,” শুনেছিস তোর ছোটভাইয়ের জবাব? আমার কথা তো বিশ্বাস করিসনি। এখন দ্যাখ কত অধঃপতন হয়েছে ওর।”
রাহাত কপালে হাত দিয়ে বলল,” দিস ইজ জাস্ট ইম্পসিবল। রাফাত তুই এতো বদলে গেছিস? মা, তোমার আর এখানে থাকার দরকার নেই। তুমি আমার সাথে আমার বাড়িতে চলো।”
রাবেয়া বললেন,” না। আমি আমার নিজের সংসার ছেড়ে কেন যাবো? গেলে অন্যকেউ যাবে। আমি না।”
রাহাত রাফাতের সামনে এসে বলল,” দ্যাখ রাফাত, আমি এতোকিছু বুঝি না। তুই মাকে ক্ষমা চাওয়ার কথা বলে অপমান করেছিস। তিনি আমাদের মা! আমাদের মাথার ছায়া। তার সাথে এমন ব্যবহার করার আগে তোর একবার চিন্তা করা উচিৎ ছিল। এখন তুই চুপচাপ নিজের অপরাধের জন্য মায়ের কাছে ক্ষমা চাইবি। আর অরোনীকেও বলবি ক্ষমা চাইতে।”
রাফাত মাথা তুলে বলল,” আমি একবার কেন? একশোবার ক্ষমা চাইবো। ছেলে হয়ে নিজের মায়ের কাছে ক্ষমা চাইতে লজ্জা কিসের? কিন্তু অরোনী ক্ষমা চাইবে না। কারণ মা আসলেই তার সাথে অন্যায় করেছে। প্রথমত তার পরিবার নিয়ে কথা শুনিয়েছে তারপর তার গায়েও হাত তুলেছে। এতোকিছুর পরেও যে অরোনী এই বাড়িতে আছে এটাই অনেক বড় ব্যাপার। ভাবীর সাথে এমন হলে তুমি তখনি ভাবীকে নিয়ে বাড়ি থেকে বের হয়ে যেতে। তাই মায়ের অবশ্যই উচিৎ অরোনীর কাছে ক্ষমা চাওয়া।”
রাহাতের মাথার রক্ত টগবগিয়ে উঠল।
” আমার মা ক্ষমা চাইবে?তুই আবার এই কথা বললি?”
” হ্যাঁ বলেছি। মাকে ক্ষমা চাইতেই হবে। নাহলে আজকের পর থেকে আমি মায়ের সাথে আর কোনোদিন কথা বলবো না।”
রাহাত ঠাস করে রাফাতের গালে চড় মারল। গরম কণ্ঠে বলল,
” তুই সেই কুলাঙ্গার, যারা বউকে খুশি করার জন্য মায়ের সম্মানহানী করতেও পিছপা হয় না। ছিঃ! ধিক্কার তোকে।”
এইবার অরোনী আর চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকতে পারল না। মাথায় ঘোমটা টেনে নেমে এলো সিঁড়ি থেকে। বরফশীতল কণ্ঠে বলল,” আর আপনি কোথাকার কোন বীরপুরুষ? এতোই যদি মায়ের প্রতি দরদ তাহলে থাকেন না কেন মায়ের কাছে? মা নাকি মাথার ছায়া! তাহলে মাথার ছায়া ফেলে চলে গিয়েছেন কেন? ও যদি কুলাঙ্গার হয় তাহলে আপনি হবেন অধম! যেই ছেলে বউ নিয়ে মায়ের সাথে একটাদিনও থাকতে পারে না তার মুখে এতো বড় বড় কথা মানায় না। এতোই যখন মায়ের প্রতি সম্মান, তাহলে নিজে এসে পাহারা দিন। বউকে এনে মায়ের সেবা-যত্ন করান। আর সেটা যদি না পারেন তাহলে খবরদার মায়ের হয়ে তরফদারি করতে আসবেন না।”
অরোনী রাফাতের হাত ধরে তাকে টেনে সেখান থেকে নিয়ে এলো। রাহাত অরোনীর মুখের উপর একটা জবাবও দিতে পারল না। কেমন যেন পরিবেশ স্তব্ধ হয়ে গেল। অরোনী রাফাতকে নিয়ে রুমে ঢুকেই দরজা আটকে দিল। রাফাত বিছানায় বসে দুইহাতে মাথা চেপে ধরল। এসব কি হয়ে যাচ্ছে বাড়িটায়? অরোনী সোফায় এসে বসল। রাগে তার বুক এখনও ধপধপ করছে। চোখ-কান দিয়ে ধোঁয়া বের হচ্ছে। রাফাত একটু পর দূর্বল গলায় বলল,” তুমি কেন ওখানে গিয়ে কথা বললে অরোনী? এখন আবার সবাই তোমার পেছনে লাগবে।”
অরোনী হুংকার ছাড়ল,” তো আমার কি করা উচিৎ ছিল? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তোমার মার খাওয়া দেখবো? আমার স্বামীর গায়ে কেউ হাত তুলবে আর আমি সেটা নীরবে সহ্য করবো?”
রাফাত হতবাক হয়ে গেল। অরোনী এইজন্য এতো রেগে আছে! তার নিঃশ্বাস নেওয়া দেখে রাফাতের নিজেরই ভয় লাগছে। রেগে থাকলে অরোনীকে ভয়ংকর দেখায়। অরোনীর চোখ দু’টো খুব বড়। রেগে গেলে আরও বড় হয়ে যায়। ওই দৃষ্টিতে কারো দিকে তাকালে সে হার্ট অ্যাটাকও করে ফেলতে পারে। রাফাত কিছুক্ষণ থম মেরে থেকে বলল,” তুমিও তো আমাকে কথায় কথায় চড় মারো।”
অরোনী ফুঁসে উঠল,” আমার চড় মারা আর মানুষের চড় মারা কি এক? আমার চড় খেয়ে কি তুমি মরে যাও? তাছাড়া আমি তোমাকে মারবো, কাটবো, যা ইচ্ছা তাই করবো। কিন্তু অন্যকেউ যদি ফুলের টোকাও দেয় তাহলে আমি সেটা সহ্য করবো না। এবার সে যেই হোক, তাকে আমি ছেড়ে কথা বলবো না!”
রাফাত কি বলবে বুঝতে না পেরে হেসে দিল। হাসিও পাচ্ছে আবার দুশ্চিন্তাও হচ্ছে। এরপরে কি হবে?
চলবে