প্রেমের_অগ্নি #পর্ব_০৯

#প্রেমের_অগ্নি
#পর্ব_০৯
#অধির_রায়

প্রীতি প্রেমের মুখে যা শুনে তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিল না৷ প্রেমের কাথা শুনে প্রীতি ধপাস করে সোফায় বসে পড়ে।
.
প্রীতি মায়া ভরা কান্না জনিত আগ্রহ কন্ঠে বলে,
“আপনি সত্যি বলছেন। আমার মা বাবা এখনো বেঁচে আছে৷ আমার মা বাবার কোন ক্ষতি হয়নি৷”
.
প্রীতিকে দাঁড় করিয়ে,
“হ্যাঁ তোমার মা বাবা এখনো বেঁচে আছে। আমি এতদিন জানতাম না এই খেলা কে খেলছে? সেজন্য তোমাকে জানাতে পারিনি৷ গতকাল আমার সামনে এসেছিল তোমার পিসিমার ছেলে দ্বীপ৷ এই খেলার মাস্টার মাইন হলো দ্বীপ৷”
.
প্রীতি এক গ্লাস জল খেয়ে,
“হ্যাঁ আমি জানি এই খেলার মাস্টার মাইন দ্বীপ রাজ সিং৷ কিন্তু আমার কাছে তেমন কোন প্রমাণ ছিল না৷”
.
প্রেম চকিত হয়ে,
“তুমি জানতে তাহলে আমাকে আগে বলোনি কেন?”
.
বলার প্রয়োজনবোধ মনে করিনি৷ আমি আপনাকে আজ এই কথা বলতাম৷ আমি দ্বীপের বিরুদ্ধে সব প্রমাণ সংগ্রহ করে ফেলেছি৷
.
তাহলে বসে আছো কেন? চল আজই আমরা দ্বীপের মুখোমুখি হবো৷ দ্বীপকে তার জবাব দিয়ে দিব৷
.
এখন দ্বীপকে জবাব দেওয়ার আগে আমার প্রশ্নের উত্তর দেন?
.
মায়া ভরা চোখে সুপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“তুমি কি জানতে চাও? আজ তোমার কাছ থেকে কিছু লুকাবো না৷”
.
প্রীতি প্রেমের দিকে চোখ ছোট করে তাকিয়ে বলে,
“আপনি এসব প্রোপার্টি নিজের নামে কেন নিয়েছেন? আর আমাকে বিয়ে করার মানে কি?”
.
প্রেম একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলে,
“দ্বীপ একটা পরিচিত সস্তা উকিলকে দিয়ে জাল দলিল বানায়৷ আর সেখানে তোমার সাইনের দরকার পড়ে৷ প্রেম আমাকে ফোন দিয়ে একটা হোটেলে নিয়ে যায়৷ আমার হাতে দলিল ধরিয়ে দেয়৷ আমি যদি এই দলিলে সাইন না করাই তাহলে তাহলে তারা তোমার মা বাবাকে মেরে ফেলবে৷”
.
দ্বীপ একটু থেমে আবার বলতে শুরু করে,
“আমি সেদিন খুব অবাক হয়েছিলাম স্যারের কথা শুনে৷ আমিও বিশ্বাস করে নিয়েছিলাম বাবার মতো স্যার এই দুনিয়ায় আর নেই৷ পরে তারা একটা ভিডিও কলে দেখায় স্যার আর ম্যামকে৷ তাদের বাঁচানোর জন্য আমি এই সিদ্ধান্ত নেয়৷”
.
প্রীতি সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
“দ্বীপ দলিল দেয় নিজের মানে লিখে নেওয়ার জন্য৷ বাট দলিল তোমার নামে কেন হলো? তুমি কি আমাকে বোকা বানাতে চাও?”
.
না তোমাকে বোকা বানানোর কোন ইচ্ছাই আমার নেই। ভিডিও কলে স্যার বলেছিল,
“প্রেম তুমি যা করবে ভেবে চিন্তে করবে। আমাদের কথা চিন্তা করতে হবে না৷ আমি তোমাকে যা বলতে চেয়েছি তুমি তাই করতে হবে।”
.
আমি স্যারের কথা বুঝতে পারি৷ আর যখন দলিল নিয়ে দরজার বাহিরে পা রাখি তখনই দ্বীপ অট্টহাসি দিয়ে নিজেই নিজেকে বলে,
“দ্বীপ তুই কত সহজে বোকা বানিয়ে দিলি প্রেমকে। আগে সমস্ত প্রোপার্টি আমার নামে আসুক। তারপর বুইড়া, বুড়ি, প্রীতি আর চামচা প্রেম এক করে সবাইকে সরিয়ে দিব৷”
এটা শুনার পর আমি বুদ্ধি করে সমস্ত প্রোপার্টি নিজের নামে করে নেয়৷
.
হ্যাঁ আপনার কথা বুঝতে পারলাম৷ কিন্তু আপনি আমাকে বিয়ে করলেন কেন? বিয়ের পিছনে আপনার কারণ কি?
.
যদি দ্বীপ আমাকে মেরে ফেলে আমার নামে থাকা সমস্ত প্রোপার্টি তোমার নামেই হয়ে যাবে৷ আর আর আমি জানতাম দ্বীপ আমাকে মারতে পারবে না৷ আমি তাকে বলে দিয়েছি “আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হলে তোমার সমস্ত কু-কর্ম সোসাল মিডিয়ায় পৌঁছে যাবে। আমি তোমার সব কথা আমার শেষ নিঃশ্বাস দিয়ে সেভ করে রেখেছি৷ আর আমি ছাড়া অন্য কেউ এই পাসওয়ার্ড হ্যাং করতে পারবে না৷’ তখন দ্বীপ ভয় পেয়ে যায়৷ স্যারকে মারার হুমকি দেয়৷ তখন আমি বলি,
“একটা প্রোপার্টি কারো নামে করে দিয়ে সেই প্রোপার্টি তিন মাস পর অন্যের নামে করে দেওয়া যায়৷ কিন্তু স্যারকে সে ছেড়ে দিতে চাইনা৷ তার কাছে রেখে দেয়। আমি যদি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকা করি তাহলে সে স্যার ম্যামকে সরিয়ে দিবে৷’
.
প্রীতি প্রেমের কথা শুনে কান্না করে দেয়৷ প্রীতি এতদিন কতই না প্রেমকে ভুল বুঝে এসেছে৷ সেই প্রেম তার মা, বাবাকে বাঁচানোর জন্য এসব কিছু করে করেছে। যে প্রেমকে দুই চোখে দেখতে পারতো না৷ আজ সেই প্রেম তার বিপদে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।

প্রীতি প্রেমকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দেয়৷ আজ প্রথম প্রীতি প্রেমকে নিজে থেকে জড়িয়ে ধরেছে৷ প্রীতি একটা নিরাপদ জায়গা খুঁজে পেয়েছে৷
.
প্রীতির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে,
“প্লিজ প্রীতি কান্না করো না৷ নিজেকে সামলিয়ে নাও৷ তোমাকে এখন অনেক লড়াই করতে হবে৷”

প্রীতি কিছু না বলে দৌড়ে অন্য রুমে চলে যায়৷ রুমের দ্বার লাগিয়ে কান্না শুরু করে দেয়৷ প্রীতি বুঝতে পারছে না সে কি করবে? প্রেম ডাক দিতে নিলেও ডাক দিল না৷ কেঁদে মনটা একটু হালকা করে নেক। রাতে আর কারো খাওয়া হলো না৷
________

নিজের তেজস্বী আলো ছড়িয়ে নতুন দিনের সূচনা করলেন সূর্যদেব। পূর্ব দক্ষিণার কাঁচের জানালা বেঁধে করে আসছে সকালের লালচে সোনালী রোদ। দিনের সূচনা শুরু হতেই জেগে উঠে দুই প্রান্তের দুটি মানুষ৷
.
প্রেম প্রীতির দ্বারে নক করে বলে,
“প্রীতি সকাল হয়ে গেছে। ঘুম থেকে উঠা।
.
প্রীতি দ্বার খুলে,
“আমিও অনেক আগেই ঘুম থেকে উঠে পড়েছি৷ আপনি কি সারারাত জেগে ছিলেন?”
.
প্রেম রুমে প্রবেশ করতে করতে বলে উঠে,
“আমায় নিয়ে কোন চিন্তা করতে হবে না৷ কি ভাবলে? কিভাবে তোমার মা বাবাকে মুক্ত করবে?”
.
এখনো কিছু ভাবিনি৷ তবে ভেবে দেখতে হবে৷
.
আমার হাতে তো অনেক প্রমাণ আছে৷ আমরা পুলিশের সাহায্য নিতে পারি তো৷
.
না আমরা এখন পুলিশের সাহায্য নিতে পারবো না৷ পুলিশের সাহায্য নিলে দ্বীপ আমার মা বাবাকে মেরে ফেলতে পারে।
.
তাহলে এখন আমাদের উপায় কি? কিভাবে আমরা তোমার মা বাবাকে মুক্ত করবো? আমার মাথায় কিছুই আসছে না!
.
আমি ভেবে নিয়েছি৷ আমাকে আর কেউ আটকাতে পারবে না৷ আমি দ্বীপের বাড়ি যাচ্ছি৷ আমার কোন সমস্যা দেখা দিলে আপনি দ্বীপের বাড়ি ঘিরে ফেলবেন।
_________

“প্রীতি তোর কি হয়েছে? তোর এমন অবস্থা করে করেছে?”
দ্বীপ প্রীতির কাঁধে হাত রেখে।
.
প্রীতি কান্না করতে করতে,
“দাভাই প্রেম আজ আমার গায়ে হাত তুলেছে৷ আজ আমাকে প্রেম বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে৷”
.
দ্বীপ চিৎকার করে বলে,
ওই প্রেমের এতো বড় সাহস তোর গায়ে হাত তুলেছে৷ তুই চিন্তা করিস না৷ আজই ওই প্রেমের শেষ দিন হবে৷”
.
দাভাই আমার খুব কষ্ট হচ্ছে৷ আমাকে এক গ্লাস জল এনে দাও৷
.
দ্বীপ প্রীতির দিকে এক গ্লাস জল এগিয়ে দেয়৷ প্রীতি জল খেয়ে বিষ্ময়ভাবে বলে,
“দাভাই আমার খুগ কষ্ট হচ্ছে। আমার কিছু হলে তুই ওই দ্বীপকে ছেড়ে দিবি না৷”
.
আমি তোর কিছু হতে দিব না৷ আমি আছি তোর সাথে। তোর কিছু হবে না৷ তুই আবার আগের মতো ঠিক হয়ে যাবি৷
.
প্রীতি আর কিছু না বলেই দ্বীপের বুকে লুটিয়ে পড়ে। জ্ঞান হারানোর নাটক শুরু করে৷ দ্বীপ প্রীতির গাল চেপে ধরে,
“প্রীতি চোখ মেলে তাকা৷ তোর কি হলো?”
.
দ্বীপ মুচকি হেঁসে,
“প্রীতি তুই আমার কাজ আরও সহজ করে দিলি৷ তুই হলি আমার ডিম পাড়া সোনার রাজহাঁস৷ তোকে মরতে দেওয়া যাবে না৷ তোকেই এখন এই খেলার গুটি বানিয়ে নিব৷ তুই নিজে থেকে আমাকে ধরা দিলি৷”
.
দ্বীপ প্রীতিকে পাঁজা কোলা করে নিজের রুমে নিয়ে যায়৷ প্রীতিকে বিছানায় শুয়ে দেয়৷ ডক্টরের কাছে ফোন করবে, করবে না। এই নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দে আছে দ্বীপ৷
.
দ্বীপ মনে মনে বলে উঠে,
“না ডক্টরের কাছে ফোন করা যাবে না৷ কিছুক্ষণ পর প্রীতির এমনি জ্ঞান ফিরে আসবে৷ সে একটু দুর্বল হয়ে পড়বে৷ আর তার দুর্বলতাই আমাকে লক্ষে পৌঁছে দিতে সাহায্য করবে৷ আমি বরং সবকিছু প্রস্তত করে ফেলি৷”
.
দ্বীপ বাহিরে চলে যেতেই প্রীতি উঠে পড়ে৷ প্রীতি জানতো দ্বীপ বাহিরে চলে যাবে প্রীতিকে রেখে। দ্বীপ এখানে বসে থাকলে তার কাজ পূরণ হবে না৷ দ্বীপ এতটায় এক্সাইটেড যে, ‘দরজা বন্ধ করতে ভুলে গেছে৷’ সেজন্য প্রীতিকে কোন কষ্ট করতে হয়নি৷

প্রীতি সারা বাড়িতে তার মা বাবাকে খুঁজতে থাকে৷ কিন্তু কোথাও পায় না৷ প্রীতির তখন মনে পড়ে যায় সে স্টোর রুমে খুঁজ করেনি৷ তাই সে স্টোর রুমের দিকে পা বাড়ায়৷ স্টোর রুমের দরজা একটু খোলে উঁকি দেয়৷ উঁকি মেরে দেখতে পায় কেউ একজন দাঁড়িয়ে আছে৷ প্রীতি দরজা খোলে ধীরে ধীরে রুমে ঢুকে। লাঠি দিয়ে লোকটাকে পিছন থেকে আঘাত করে৷ লোকটা সাথে সাথে জ্ঞান হারায়৷
.
প্রীতি তার মা বাবাকে দেখতে পেয়ে দৌড়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। দ্বীপ তার মা বাবাকে চেয়ারের সাথে বেঁধে রেখেছে। প্রীতি সময় নষ্ট না করে তারাতাড়ি করে তার মা বাবার হাত পায়ের বাঁধন খোলে দেয়৷ আর যে লোককে আঘাত করে তাকে চেয়ারে বেঁধে রাখে৷ মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দেয়৷ যেন কোন আওয়াজ করতে না পারে৷

প্রীতি তার মা বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে। তার বাবা প্রীতির মাথায় হাত রেখে,
“মা কাঁদিস না৷ এবার আর কান্না নয়৷ এবার আমরা প্রতিশোধ নিব৷ দ্বীপকে আমরা আর ছেড়ে দিব না৷
.
হ্যাঁ বাবা আগে আমাদের বাড়ি ফিরে যেতে হবে। এখন আর সময় নষ্ট করলে দ্বীপ আমাদের ধরে ফেলতে পারে৷
.
হ্যাঁ তারাতাড়ি চল৷
.
প্রীতি তার মা বাবাকে নিয়ে ডাইনিং রুমে আসতেই দেখতে পাই দ্বীপ সোফায় বসে আছে৷ দ্বীপকে দেখে প্রীতি ভয় পেয়ে যায়৷ প্রীতি প্রেমকে ফোন করে। কিন্তু কোন কথা বলে না৷ যেন প্রেম এখানকার কথা শুনতে পাই৷ আর বাহির থেকে স্টেপ নিতে পারে৷
.
দ্বীপ সোফা থেকে উঠে এসে,
“প্রীতি তুই যদি ডালে ডালে ঘুরিস আমি ঘুরি পাতায় পাতায়৷”
.
প্রীতি ক্ষেপে বলে উঠে,
“তুই আমার ভাই হয়ে এটা কিভাবে করতে পারলি? তোকে ভাই ভাবতেও আমার ঘৃণা হচ্ছে।”
.
প্রীতির গালে কষিয়ে একটা চর বসিয়ে,
“এখানে নীতি কথা বলতে এসেছিস৷ তোর নীতি কথা তোর কাছে রাখ৷ আমি তোর কাছ থেকে নীতি কথা শিখবো।”
.
প্রীতির বাবা ক্ষেপে দ্বীপের দিকে এগিয়ে যেতে নিলেই,
“মামু ওখানে দাঁড়িয়ে যান৷ আর এক পা এগিয়ে আসলে আপনার প্রাণপ্রিয় প্রীতি আর দুনিয়ায় থাকবে না৷”
_________

প্রীতি কান্না করতে করতে,
“প্রেম আপনি মরতে পারেন না৷ আমি আপনাকে মরতে দিব না৷ আপনি আপনার ভালোবাসাকে রেখে চলে যেতে পারেন না৷ প্লিজ চোখ মেলে তাকান! আমিও আপনাকে খুব ভলোবাসি৷”
প্রেমের শার্টের কলার ধরে

চলবে…..

ভুল ত্রুটিগুলো ধরিয়ে দিবেন৷

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here