#প্রেমের_অগ্নি
#পর্ব_০৮
#অধির_রায়
সকল প্রমাণ আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে প্রীতির চার মাস লেগে যায়৷ প্রীতি এই চার মাস একদিনও দ্বিপকে ফোন করা ছাড়েনি৷ চারমাস পর প্রীতি আবার দ্বীপের বাড়িতে আসে৷
.
দাভাই এখন পরিস্থিতি অনেকটা স্বাভাবিক। এখন প্রেমকে ফাঁসালে প্রেম কিছু বুঝতে পারবে না৷ আমার প্রোপার্টি আমার কাছে চলে আসবে৷ আর প্রেম যাবে জেলে।
.
দ্বীপ সন্দেহ নিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“হ্যাঁ তুই একদম ঠিক বলেছিস৷ এবার দ্বীপকে আর কেউ বাঁচাতে পারবে না৷ তুই এবার দেখে যা। তোর দাভাই কিভাবে দ্বীপকে শাস্তি দেয়৷
.
ঠোঁটের কোণে মিকি হাসি নিয়ে,
দাভাই তুমি আমার কত বড় উপকার করলে বলে বুঝাতে পারবো না৷ আমি এই মাস একটুও শান্তিমতো ঘুমাতে পারিনি৷ এতদিন প্রেমের সাথে অভিনয় করে এসেছি৷”
.
হ্যাঁ আমি জানি৷ এখন প্রেমের অবস্থা কি? সে তোকে পুরোপুরি বিশ্বাস করে তো৷
.
হ্যাঁ দাভাই তুই যেমনটা বলেছিলি আমি প্রেমের সাথে তেমনই করেছি৷ প্রেমকে আমার ভালোবাসার মায়াজালে ফাঁসিয়েছি৷ এখন আমি যা বলবো প্রেম তাই করবে৷
.
একদম ঠিক কাজ করেছিস৷ তুই এই প্রথম আমার বোনের মতো কাজ করেছিস৷
.
দ্বীপ ঠোঁটের কোণে শয়তান হাসির রেখা টেনে মনে মনে বলে উঠে,
“তুই এত বোকা আমি জানতাম না৷ প্রথম দিকে তুই যেভাবে উঠে পরে লেগেছিলি৷ আমি তো ভেবেছিলাম তুই সব সত্য জানতে পারবি৷ কিন্তু তুই আমার খেলার অসাধারণ একটা গুটি হলি৷ তোরা কেউ বাঁচতে পারবি না৷ সাথে প্রেমের ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে দিয়ে আমি তোদের বাড়ির রাজত্ব করবো।”
.
প্রীতি এক বুক ক্ষোভ নিয়ে স্মৃতি চরণে নিজেকে নিজেই বলে উঠে,
“তুই তোর দাভাইকে নিয়ে ভাবিস না৷ তোর দাভাই প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে তোদের ক্ষতি করে যাছে।তোর দাভাইয়ের লোভ তোর দাভাইকে শাস্তি দিবে৷ তোর দাভাই ভুলে গিয়েছে লোভে পাপ পাপে মৃত্যু। এই বার চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিবি৷ পাপ করলে পাপের প্রায়শ্চিত্ত হয় না৷ পাপের প্রায়শ্চিত্ত শুধু মৃত্যু হয়৷”
.
কি রে কি ভাবছিস? এভাবে মুখ গোমড়া করে ফেললি কেন?
.
প্রীতি আমতা আমতা করে,
“দাভাই আমরা কি প্রেমের সাথে কোন অন্যায় করছি কি? আমি কিন্তু কোন অন্যায় করতে পারবো না৷ আমার বাবা আমাকে আমাকে অন্যায় করতে শেখায়নি।”
.
দূর পাগলি আমরা কোন অন্যায় করছি না৷ আমরা প্রেমকে প্রেমের জায়গা বুঝিয়ে দিচ্ছি৷ ওকে বুঝিয়ে দিতে হবে প্রীতি একা বলে তার কোন ক্ষমতা নেই৷ আমি আছি তোর পাশে৷
.
দাভাই যা করার একটু ভেবে চিন্তে করো। কোথাও যেন কোন প্রমাণ না থাকে৷
.
তোকে এইসব নিয়ে চিন্তা করতে হবে না৷ তুই এখন নিশ্চিন্তে বাড়িতে ফিসে যা।
.
প্রীতি ডেবিল মার্কা হাসি দিয়ে বাড়িতে চলে আসে৷ দ্বীপ পকেট থেকে রিভলবার বের করে ঝার বাতিতে সুট করে। অট্টহাসি দিয়ে বলে উঠে,
“আমার এত দিনের স্বপ্ন পূরণ হবে৷ আমার পথে যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে তাকে আমি দুনিয়ায় থেকে সরিয়ে দিব৷”
__________
প্রীতি ক্ষেপে বলে উঠে,
“আপনাকে না কতদিন বলেছিনা রুমে আসতে নিলে নক করে আসবেন৷ আমি আপনাকে নিজের কিছু মনে করিনা৷ তাই তো শাখা পলা সিঁদুর কিছুই নেই আমার কাছে৷”
.
প্রেম প্রীতির দিকে এগিয়ে আসতে আসতে,
“আইনগত ভাবে তুমি আমার ওয়াইফ। তাই আমার সবকিছু তোমাকে সহ্য করতে হবে৷”
.
জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে সব বিধাতার হাতে৷ তিনি যদি চাইতেন তাহলে আমাদের বিয়ে হয়ে যেত৷ আপনার প্রতি আমার কোন ইন্টারেস্ট নেই৷
.
প্রেম মায়া ভরা কন্ঠে আকুল আবেদনে বলে,
“আমি জানি তুমি আমাকে আপন করে নিতে পারো না তাহলে আজ কিসের জন্য কাছে টানছো? তুমি ভাবো আমি তোমার এমন পরিস্থিতির জন্য আমি দায়ী৷”
.
কি হলো ম্যাম? এভাবে কি ভাবছেব? যা ভাবছেন আমাদের সাথে শেয়ার করেন৷ আমিও আপনার সাথে একটু অংশীদার হয়৷
.
প্রীতি আমতা আমতা করে,
কই কিছুই ভাবছি না৷ আমি কি ভাববো। আমি এটাই ভাবছি আপনি দূরে সরে দাঁড়ান।”
.
তোমার ভাবনায় মাঝে জল পড়ে গেল৷
.
প্রীতি চকিত হয়ে,
“আমার ভাবনার মাঝে জল পড়লো কিভাবে! আপনি সত্যি পাগল হয়েছেন!”
.
প্রীতির কোমরে হাত দিয়ে প্রীতিকে নিজের কাছে নিয়ে আসো৷ প্রীতির নাকে নাক ঘেঁষে নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে,
“হ্যাঁ আমি পাগল হয়েছি তোমার মায়াবী হাসিতে৷ আমি পাগল হয়েছি তোমায় মাঝে থাকা তোমার ভালোবাসার মনটার জন্য।আমি পাগল হয়েছি তোমায় হরিণের মতো ডাগর কাজল রাঙা চোখে৷ আমি পাগল হয়েছি পড়ন্ত গোধূলি বেলায় তোমার ঠোঁটের মিকি হাসির উপর৷”
.
প্রেজ কথাগুলো এমন নেশা ভরা কন্ঠে বলে উঠে প্রীতি প্রেমের নেশায় আটকে পড়ে৷ প্রীতি কি বলবে বুঝতে পারছে না? প্রেম আরও প্রীতির কাছে চলে আসছে৷
.
প্রেম প্রীতির ঘাড়ে আলতো করে ভালোবাসার পরশ এসে দেয়৷ প্রীতির সারা দেহে কারেন্ট চলে যায়৷ কেঁপে উঠে প্রেমকে চেপে ধরে৷ প্রেমও মুচকি হেঁসে প্রীতিকে জড়িয়ে ধরে। পরক্ষণেই বুঝতে পারে প্রেম যা করছে তা ভুল করছো৷
____________
প্রীতি আমাকে একটু সাহায্য করবে। আমি তাওয়াল নিতে ভুলে গেছি৷ প্লিজ প্রীতি একটু ওয়াসরুমের দ্বারের কাছেও তাওয়ালটা রেখে যাও৷
.
প্রীতি রাগী গলায় বলে উঠে,
“আমি পারবো না৷ আমি কি আপনার বিয়ে করা বউ যে ‘আপনার সব কাজ আমি করে দিব৷’ আমি তাওয়াল দিতে পারবো না৷”
.
প্রেম দুষ্ঠু হেঁসে,
“কেন মনে নেই? সেদিন মন্দিরের সবার সামনে তোমার সিঁথি সিধুর দিয়ে রাঙিয়ে দিলাম৷”
.
ওইটা একটা এক্সিডেন ছিল৷ আমি পারবো না তাওয়াল দিতে৷
.
ওকে দিতে হবে না৷ আমি উলঙ্গ শরীরে ওয়াসরুম থেকে বের হচ্ছি৷ এতে আমার কোন দোষ থাকবে না৷
.
এই না না আমি তাওয়াল দিচ্ছি।
.
প্রীতি তাওয়াল নিয়ে ওয়াসরুমের দ্বারের কাছে এসে হাত বাড়িয়ে দেয়৷ প্রেম তাওয়াল নেওয়ার পরিবর্তে প্রীতির হাত টান দিয়ে ওয়াসরুমে নিয়ে আসে৷ প্রীতিকে দেয়ার সাথে চেপে ধরে ঝর্ণা ছেড়ে দেয়৷ তারা দু’জনে ঝর্ণার জলে ভিজে যাচ্ছে৷
.
প্রীতি অপলক দৃষ্টিতে প্রেমকে দেখে যাচ্ছে৷ প্রেমের চুল থেকে মুক্ত দানার মতো জল ঝড়ে পড়ছে৷ প্রেমের ঠিক বুকের সাথে প্রীতিকে জড়িয়ে রেখেছে।প্রেম দুই চোখ বন্ধ করে রেখেছে৷ প্রীতি প্রেমের বুকে নিজেকে সুরক্ষিত মনে হচ্ছে।
.
প্রীতি আমতা আমতা করে,
“এসব কি? আমি তো একটু আগেই শাওয়াল নিলাম৷ এখন আবার শাওয়ার নিবো৷ ছাড়েন আমাকে৷”
.
প্রীতির মুখে হাত দিয়ে,
“একদম চুপ কোন কথা বলবে না৷ এখন থেকে তুমি আমার সাথেই শাওয়াল নিবে।”
.
প্রেমকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে,
“আমি পর পুরুষের সাথে শাওয়ার নিবো। আপনি এটা কিভাবে ভাবলেন৷ আপনার ভাবনা এতো নিচে নামছে বলে বুঝাতে পারবো না৷”
.
আইনগত ভাবে তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী।সকলের সামনে আমি তোমার সিঁথিতে সিঁদুর পড়িয়েছি৷ তুমি মিথ্যা কথা বলতে পারবে।
.
আপনি সব কিছু আমাকে ঠকিয়ে করেছেন৷ আর কাউকে ঠকিয়ে কিছু করা যায় না৷ আপনি নিশ্চয় জানেন ঠকানো ভালোবাসা কোনদিন ঠিকে থাকে না৷
.
আমি আমার ভালোবাসাকে আমার ভালোবাসা দিয়ে সব সময় আগলে রাখবো৷ কখনো কষ্ট পেতে দিব না৷
.
তাহলে এতদিন থেকে কি দিয়ে আচ্ছেন? আপনি আমার মনটাকে ভেঙে দিয়েছেন৷ আমার মনে আপনার জন্য কোন ভালোবাসা নেই৷ কোনদিন আপনাকে ক্ষমা করে নিজের করে নিতে পারবো না৷ আমাকে ক্ষমা করে দেন৷
.
প্রীতি কান্না করতে করতে বাহিরে চলে আসে৷ প্রেম কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ প্রেম সিদ্ধান্ত নেয় প্রীতিকে সব সত্যি বলে দিবে৷ প্রীতির সাথে এক হয়ে প্রীতির শত্রুদের সাথে মোকাবেলা করবে।
_______
প্রীতি তুমি আজ একটা বিশাল বড় সত্যের মুখোমুখি হচ্ছো?
.
কেমন সত্য৷ যার জন্য আপনার হাত পা কাঁপছে।
.
তুমি জানতে চাও তো কেন আমি এই কাজ করেছি৷
.
হুম জানতে চাই। কেন আপনি আমাকে ঠকিয়ে সবকিছু নিজের নামে করে নিয়েছেন৷
.
প্রীতি প্রেমের মুখে যা শুনে তা প্রীতির কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না৷ প্রীতি ধপাস করে সোফায় বসে পড়ে৷
চলবে…..