#প্রেমের_অগ্নি
#পর্ব_০৬
#অধির_রায়
প্রেম অফিসের যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই প্রীতি পিছন থেকে বলে উঠে,
“প্রেম নিশাঙ্ক দশ মিনিট অপেক্ষা করে যান৷ আমার একজন স্পেশাল গেস্ট আসবে।”
.
প্রেম তীক্ষ্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“প্রীতি তুমি ভুলে যাচ্ছো৷ বর্তমানে এই বাড়ির মালিক হলাম আমি৷ তাই আমার অনুমতি ছাড়া কেউ এই বাড়িতে প্রবেশ করবে না৷”
.
সো ফানি৷ আপনি যা বলবেন আমি তাই মেনে নিব৷ দেখে যান কে আসছে?
.
আমার হাতে একদম সময় নেই৷ আমাকে এখনই বের হতে হবে৷ আমার অনেক কাজ আছে৷
.
প্রীতি প্রেমের সামনে দাঁড়িয়ে কোমারে হাত রেখে,
“প্রেম নিশাঙ্ক আপনার কি এমন জরুরি কাজ আছে৷ সরি ভুলে গিয়েছিলাম। গোডাউন থেকে মাল রাতের আঁধারে চুরি করতে পারেন নি সেজন্য। নাকি আপনার মাস্টার মশাই ডেকেছে।”
.
প্রেম অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“হোয়াইট? গোডাউন থেকে মাল পাচার হয় রাতের আঁধারে। তুমি ঠিক বলছো তো?”
.
রাতের আঁধারে প্রীতির কোম্পানি থেকে বাহিরে মাল পাচার করা হয় প্রেম জানে না৷ প্রেম শুধু এটাই জানে তাকে দিয়ে এসব কাজ করাচ্ছে অন্য কেউ। কিন্তু গোডাউন থেকে বাহিরে মাল সরানোর কথা জানে না৷
.
গলার আওয়াজ কম। আমি সব জেনে গেছি৷ আর বাহিরে পাহারাদার বসিয়েছি৷ আমার অনুমতি ছাড়া কোন ট্রাক বাহিরে যাবে না৷ আর বাহিরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাকে জেলে পচে মরতে হবে৷
.
প্রেম হতাশাজনক কন্ঠে বলে উঠে,
“রাতের আঁধারে বাহিরে মাল পাচার করা হয় আমি সত্যিই জানতাম না৷ আমি এসব কিছু জানি না৷ প্লিজ আমাকে বিশ্বাস করো৷”
.
প্রীতি অট্টহাসি দিয়ে,
“আমার সামনে সাধু সাজতে হবে না৷ আমি সব জানি৷ আর আমি সব শত্রুকে গোড়া থেকে তুলে ফেলবো। আমার প্রোপার্টি আমাকেই ঠিক রাখতে হবে৷ আর হ্যাঁ আমি আপনার মতো কাঁচা খেলোয়াড় না৷ আমার সাথে খেলতে আসলে আপনাকে আবার জন্ম নিতে হবে৷”
.
আমি জানি ব্যবসায় আমার থেকে তোমার অভিজ্ঞতা বেশি৷ তুমি স্যারের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছো। আমি তো ছিলাম…
.
প্রেম বলার আগেই প্রীতি বলে উঠে,
“মাইনে করা কাল সাপ। সুযোগ বুঝে কামড় দিয়েছেন৷ কিন্তু আমি ভেঙে পড়িনি৷”
.
প্রেম প্রীতির কথা শুনে মাথা নিচু করে ফেলে। প্রেম প্রীতিকে কি জবাব দিবে। প্রীতি তো মিথ্যা কথা বলেনি৷ যা বলেছে সবই সত্য কথা৷৷ কিন্তু প্রেম কি করবে? প্রেম নিরুপায় হয়ে এমন বাজে কাজে সম্মতি দিয়েছে। তার হাতে দ্বিতীয় কোন অপশন ছিল না৷
.
প্রেমকে হালকা ধাক্কা দিয়ে,
“কি হলো, কি ভাবছেন? আমার স্পেশাল গেস্টের আসা সময় হয়ে গেছে৷ তাই আমার থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করবেন৷”
.
প্রেম আনমনা হয়ে বলে উঠে,
“ওকে। আপনি যা বলবেন তাই হবে৷ আমি তার থেকে দূরে দূরে থাকবো।”
.
প্রীতি মুচকি হেঁসে,
“গুড বয়৷ এভার নিজের পজিশন বুঝতে পেরেছেন৷ এরপর কিভাবে ম্যাম ডাক ফিরিয়ে আনি সেটা ভাবেন?”
.
প্রেম বুঝতে পারে সে ভুল কিছু বলে ফেলেছে। তাই প্রেম কিছু না বলে এক কাপ চা নিয়ে আসতে বলে৷ প্রেম সোফায় বসে চা খেতে শুরু করে। প্রীতি তার দিকে একবার তাকিয়ে দরজার দিকে অতি আগ্রহে মুখ করে তাকিয়ে আছে।
_______
প্রেম চা শেষ করতেই প্রীতি দৌড় দেয়৷ প্রীতি দৌড়ে একটা সুদর্শন যুবক ছেলেকে জড়িয়ে ধরে৷ প্রেম নিজের এমন দৃশ্য দেখবে কোনদিন ভাবেনি৷ প্রেমের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে৷ মনের অজান্তেই প্রেমের চোখ থেকে দুই ফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ে৷ প্রেম দৃষ্টি অগোচরেই চোখের অশ্রু মুছে ফেলে।
.
প্রীতি সুদর্শন যুবক ছেলের সাথে প্রেমের পরিচয় করিয়ে দেয়৷ প্রীতি বলে উঠে,
“প্রেম নিশাঙ্ক উনি হলো স্বার্থ চৌধুরী। আমার হবু হাসবেন্ড।”
.
স্বার্থ প্রেমের দিকে হাত বাড়িয়ে দেয়,
“হ্যালো প্রেম আমি তোমার কথা অনেক শুনেছি প্রীতির কাছ থেকে।”
.
মানবতার খাতিরে প্রেমও স্বার্থের হাতের সাথে হাত মেলায়। এক বুক কষ্ট নিয়ে হাসিমুখে বলে উঠে,
“তোমাকে দেখে আমি ভীষণ অবাক হয়েছি৷ সত্যি বলতে প্রীতি কোনদিন তোমার কথা বলেনি৷ আজ প্রথম তোমার কথা আমাকে বলল। আর এভাবে আমাদের দেখা হবে আমি ভাবতে পারিনি৷”
.
স্বার্থ পকেটে হাত গুঁজে,
“তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে তুমি আমাকে দেখে খুশি নয়৷ তোমার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেছে৷”
.
প্রেম চোখ ছোট করে,
“তুমি কি মনোবিজ্ঞানী? তুমি আমার মনের কথা সহজেই বুঝতে পারলে৷ বাট আমার মন একটুও খারাপ হয়নি৷ যদি খারাপও হয়ে থাকে তাহলে তোমাকে দেখে ভালো হয়ে গেছে৷”
.
প্রীতি স্বার্থকে আলতো করে জড়িয়ে,
“আপনি কি এভাবে দাঁড়িয়ে থেকে গল্প করবেন৷ বসে বসে গল্প করেন৷ আর জমিয়ে খাওয়া হয়ে যাক।”
.
ইয়া সিউর৷
.
স্বার্থ প্রীতিকে এক বাহুর মাঝে জড়িয়ে রেখেছে৷ প্রীতি স্বার্থের বুকে মাথা রেখে ঝর্ণার জলের মতো খিলখিল করে হেঁসে যাচ্ছে। যেন মনে হচ্ছে প্রীতি স্বার্থের বুকে পৃথিবীর সমস্ত সুখ খুঁজে পেয়েছে।
.
প্রেম একইভাবে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে৷ মনটা কাঁচের টুকরোর মতো ভেঙে গেছে৷ প্রেমের কেন এত কষ্ট হচ্ছে৷ এমনই হওয়ার কথা ছিল তো৷ প্রীতি তো প্রেমকে আর ভালোবাসে না৷ তাহলে কেন প্রেমের জন্য প্রীতির কষ্ট হবে৷
.
প্রেম চলে যেতে নিলেই প্রীতি বলে উঠে,
“কোথায় যাচ্ছেন? এখানে বসে আমাদের সাথে আড্ডা দেন৷ আপনার কি মন খারাপ। কারো জন্য কি কষ্ট হচ্ছে?”
প্রীতির কথা প্রতিটি কথা প্রেমের বুকে তীরের মতো লাগল৷ কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা দেওয়ার জন্য প্রীতির এসব কথায় যথেষ্ট।
.
প্রেম আমতা আমতা করে বলে উঠে,
“আমাকে অফিসে যেতে হবে৷ আমার অনেক কাজ আছে৷ অন্যদিন না হয় আমরা এক সাথে বসে গল্প করবো।”
.
স্বার্থ বলে উঠে,
“কাম অন প্রেম৷ সব সময় তো কাজই করো৷ আজ আমাদের সাথে একটু আড্ডা দাও৷ আমাদেরও ভালো লাগবে৷”
.
প্রেম না চাওয়া সত্ত্বেও তাদের সাথে আড্ডা দিতে রাজি হয়ে যায়৷ এদিকে মনের মন কষ্টে পাথর হয়ে যাচ্ছে। ভালোবাসার মানুষ অন্যের কাছে থাকলে মনে হয় এভাবেই কষ্ট হয়৷ প্রেম চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে উঠে,
“মানুষ দূরে গেলে ঠিক ভালোবাসা বুঝতে পারে। এতদিন কেন আমার মনের কথা প্রীতিকে বলিনি৷ কিছু দিন আগে প্রীতিকে আমার মনের কথা বললে আমাকে আজ এই দিন দেখতে হতো না৷”
প্রেম বার বার স্বার্থের চোখের দিকে তাকাচ্ছে৷ প্রেমের কাছে স্বার্থের চোখ দুটো চেনা চেনা লাগছে৷
___________
প্রেমের চোখ থেকে অগ্নি লাভা বের হচ্ছে৷ ধীরে ধীরে প্রীতির দিকে প্রেম এগিয়ে যাচ্ছে৷ প্রীতি বুঝতে পারছে প্রেম ভীষণ রেগে আছে। প্রীতি ভয়ে ভয়ে বলে উঠে,
“আজ কি অফিসে কোন ঝামেলা হয়েছে? আপনাকে এমন দেখাচ্ছে কেন? আপনি ঠিক আছেন তো?”
.
প্রীতির কোন কথা প্রেমের কর্ণধার অব্ধি পৌঁছাচ্ছে না৷ প্রেমের লক্ষ্য হলো প্রীতি৷ প্রেম ধীর পায়ে প্রীতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রীতি এক পা দুই পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে৷ প্রেমে আলমারির ছেলে লেগে যায়৷ প্রেম প্রীতির বাহুর খুব জোরে চেপে ধরে৷
প্রেম ক্ষোভ নিয়ে অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
“তোমার সাহস কি করে হলে স্বার্থের সাথে মেলামেশা করা?”
.
প্রীতি কাঁদো কাঁদো স্বরে,
“প্লিজ আমাকে ছেড়ে দেন৷ আমার ব্যথা লাগছে।”
.
চোখ পাকিয়ে,
‘”এখন ব্যথা লাগছে। যখন স্বার্থ জড়িয়ে ধরেছিল তখন ব্যথা লাগেনি৷ স্বার্থের ছোঁয়ায় ভালোবাসা খুঁজে পাও৷ আর আমার ছোঁয়ায় বিরক্ত।”
.
প্রীতি প্রেমের পায়ে লাথি দিয়ে প্রেমকে সরিয়ে দেয়। অগ্নিমূর্তি ধারণ করে বলে উঠে,
“হ্যাঁ আমার স্বার্থকে ভালো লাগে৷ স্বার্থ আপনার মতো রাগী নয়৷ স্বার্থের মনে কোন পাপ নেই৷ উনি একজন সৎ মানুষ৷ উনার সাথে তোমাকে তুলনা করো না৷”
.
হ্যাঁ মানছি আমি ভালো না৷ কিন্তু আমার ভালোবাসায় কোন ত্রুটি নেই৷ আমি তোমাকে সত্যি সত্যি অনেক ভালোআাসি৷ তোমার ভালোবাসার জন্যই আজ আমি এভাবে তোমার সামনে অপরাধী হয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷”
.
আচ্ছা৷ নিজেকে বাঁচানোর জন্য ভালোই নাটক করতে পারেন৷ আমাকে ড্রামাবাজের জন্য এওয়ার্ড দিতে হবে৷
.
তুমি আমাকে যায় মনে করো না কেন? আমি তোমার কথায় একটুও রাগ করবো না৷ শুধু একটাই অনুরোধ স্বার্থকে তোমার লাইফে নিয়ে আসবে না৷
.
প্রীতি মুচকি হেঁসে,
“হাসালেন আমাকে৷ ছিঁড়া কাথায় শুয়ে চাঁদ দেখা যায়৷ কিন্তু চাঁদ ধরা যায় না৷ আপনার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যাবে।”
.
তুমি যাকে বিশ্বাস করছো কাল সে তোমার বিশ্বাস ভেঙে চুরমার করে দিবে৷ সেদিন তোমার পাশে কেউ থাকবে না৷ সেদিন বুঝবে ভালোবাসার অর্থ৷
.
সে আপনার মতো নয়। আপনি তো আমাকে পিছন থেকে ছুরি মেরেছেন৷ কিন্তু স্বার্থ পিছন থেকে ছুরি মারবে না৷
.
এতটা ভরসা করা ঠিক নয়৷ আবার ঠকে যেতে পারো।
.
যেভাবে তুমি আমাকে ঠেকিয়েছো।তুমি তো মানুষকে শুধু ঠকাতেই জানো৷ ঠকানো যে তোমার সাথে মিশে আছে৷
.
আমি জানি আমি ভুল করেছি৷ আমি সংশোধন করার চেষ্টা করছি। তবে তুমি যেদিন আমার সত্য জানতে পারবে সেদিন তুমিই আমার পিছু পিছু ঘুর ঘুর করবে।
.
প্রীতি ভেংচি কেটে,
“প্রীতি রায় চৌধুরী আপনার পিছনে ঘুর ঘুর করবে। আমার লাইফে স্বার্থ ছিল, আছে, আর সারাজীবন থাকবে৷”
.
প্রেম কষ্ট নিয়ে বলে উঠে,
“তুমি ভুল করছো।তোমার জীবনে কোনদিন স্বার্থ ছিল না। আর কোনদিন স্বার্থ তোমার জীবনে আসবে না৷ স্বার্থ আমার থেকে বড় ফল্ট।”
.
অগ্নি দৃষ্টি নিক্ষেপ করে,
আমি স্বার্থের বিষয়ে কোন কথা শুনতে চাই না। আপনার কাছে কি প্রমাণ আছে স্বার্থ ভালো মানুষ না?”
.
তার চোখ প্রমাণ করে দিয়েছে স্বার্থ ভালো না৷ আমার কাছে তার চোখ খুব চেনা চেনা লাগছিল৷ তার ভালো মানুষের পিছনে লুকিয়ে আছে খারাপ মানুষ৷
.
স্বার্থ ভালো হোক আর খারাপ হোক৷ আমি স্বার্থকেই বিয়ে করবো৷ আর সারাজীবন স্বার্থকে ভালোবেসে যাবো৷
.
প্রেম আর প্রীতির কথা নিতে পারছে না প্রীতিকে থামানোর জন্য প্রেম…….
চলবে….