রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,১৪,১৫

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,১৪,১৫
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(১৪)

নোহান মেডের কথা শুনে তাড়াতাড়ি করে নোহা র ঘরে গিয়ে,দরজাটা ভেঙ্গে ঢুকে, চমকে উঠে চেঁচিয়ে উঠলোঃ দিদিয়া।

নোহা বিছানায় র’ক্তা’ক্ত হয়ে শুয়ে আছে। নোহান এত র’ক্ত দেখে শক খেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠিক এমন ভাবেই দিয়াকে দেখেছিলো।

নোহান নোহাকে কোলে তুলে ডাকতে লাগলো। নোহা আর সাড়া দিলো না। নোহা’র নি’থ’র দেহ পড়ে আছে। নোহান চিৎকার করে কাঁদতে কাঁদতে বললোঃ দিদিয়া কেন ছেড়ে গেলি তুই আমাকে, ছোটো বেলায় বাপি আর মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো আর এখন তুই। আমি কিভাবে বেঁচে থাকবো তোদের ছেড়ে। বল না তোর এই অবস্থা কে এরকম করলো।

নোহা কে পুলিশ পোস্টমর্টেম করার জন্য নিয়ে গেছে। নোহানের মানসিক অবস্থা খুব একটা ভালো নয়। একা চুপচাপ বসে আছে। সুহানিও কিছু না বলে চুপ করে বসে আছে।

নোহা র লা’শের পাশ থেকে একটা চিরকুট পাওয়া গেছে,তাতে লেখা ছিলো—

আমার মৃ’ত্যু’র জন্য কেউ দায়ী নয়। ভাই পারলে আমাকে মাফ করে দিস। আর আমার চোখ আর কিডনি গুলো যদি পারিস কোনো অসহায় মানুষকে দিয়ে দিস।

ইতি____
নোহা

পরেরদিন…

নোহার মৃ’ত দেহটাকে দাফন করা হয়েছে। নোহা ২টো চোখ আর ২ টো কিডনি দান করা হয়েছে ওর কথা মতোই। পুলিশ এটাকে সুইসাইড বলেই ধরে নিয়েছে। নোহান মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছে। নোহা র সু’ই’সাই’ড এর কারনটা এখনো রহস্যময়। সুহানি নোহানের দিকে তাকিয়ে আছে কাছের মানুষকে হারানোর কতটা কষ্ট সেটা নোহানকে না দেখলে বোঝা যায় না। জীবন থেকে সবকিছুই আসতে আসতে হারিয়ে গেছে।

সময় কেটে যায়, কিন্তু আঘাত গুলো শুকায় না। নোহানের মাঝে পরিবর্তন এসেছে। নোহান আর আগের মতো কোনো কিছুই ঠিক করে না। সারাদিন চুপচাপ বসে থাকে। কম কথা বলে।

রাহাত আজকে সুহানির বাড়িতে এসেছে। সুহানি একটু অবাক হয়েছে বটেই কিন্তু রাহাতকে কিছুই বুঝতে না দিয়ে বললোঃ কেমন আছো।

রাহাতঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো তুমি।

সুহানিঃ আলহামদুলিল্লাহ ভালো।

রাহাতঃ তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে

সুহানিঃ কি?

রাহাতঃ আমাকে ঠকানোর কারনটা কি?

সুহানি মাথা নিচু করে আছে। কি বলবে বুঝতে পারছে না।

রাহাতঃ দ্যাখো সুহানি তুমি আমাকে নাই পছন্দ করবে তাহলে কেন আমার প্রোপজাল এক্সসেপ্ট করলে।

সুহানিঃ সরি,আমার সেদিন হ্যা বলা উচিত হয়নি। আমাদের হাতে সবসময় সবকিছু থাকে না। কিছু কিছু কাজ নিজেদের ইচ্ছার বিরুদ্ধে করতে হয়। আর সবকিছুকে মেনে নিতেও হয়।

রাহাতঃ তুমি কি খুশি?

সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ খুশি না হয়ে যাবো কোথায়। তোমাকে একটা কথায় বলবো নতুন করে নতুন জীবন শুরু করো। জীবন কখনোই কারোর জন্য থেমে থাকে না।

রাহাত মনে মনে বললোঃ আমি তো তোমাকে নিয়ে জীবন সাজাতে চেয়েছিলাম কিন্তু আর সেটা হলো কোথায়।

রাহাত সুহানিকে বিদায় জানিয়ে চলে গেলো। সুহানি নাজের চোখের পানি মুছে নিলো। নোহানকে নিয়ে নিজের জীবন সাজাতে চাইছে কিন্তু কিভাবে সাজাবে। যখনি মনে করৈ নতুন করে সবকিছু শুরু করবে তখনি পুরানো কথাগুলো মনে পড়ে যায়।

রাত্রিবেলা…

নোহান চুপ করে বসে আছে। সুহানি নোহানের সামনে বসে বললোঃ কি ব্যাপার আপনার মন খারাপ কেন?

নোহানঃ আমি হয়তো জীবনে অনেক অ’প’রা’ধ করেছি তার জন্য আমার কাছের মানুষ গুলো আমার জীবন থেকে হারিয়ে যাচ্ছে।

সুহানিঃ অ’প’রা’ধ

নোহানঃ যখন বয়স ১২ তখন বাপি আর মা আমাকে ছেড়ে চলে গেলো।‌সেদিন মৃ’ত্যু’র মুখ থেকে আমি ফিরে এসেছিলাম। একজনকে ভালোবেসে নতুন করে নিজেকে সাজাতে চেয়েছিলাম কিন্তু সেও আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেলো। আর শেষে আমার দিদিয়াও আমাকে ছেড়ে চলে গেলো। আমি বেঁ’চে থাকবো কিভাবে?

সুহানিঃ আমি কে হয় আপনার?

নোহানঃ জানো ভালোবাসাটা মন থেকে আসে চাইলেও কারোর প্রতি ভালোবাসা জন্মানো যায় না। চেষ্টা করেও আমি পারিনি তোমাকে দিয়ার জায়গায় বসাতে। আমি চেয়েছিলাম নতুন করে শুরু করতে কিন্তু পারিনি। জীবন,স্মৃতি আমাকে নতুন করে সবকিছু শুরু করতে দেয়নি। আটকে পড়ছি দিয়ার মায়াজালে। হ্যা আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি অনেক অনেক অন্যায় করেছি। প্রথমে বিনা দোষে দোষী করেছি তারপরে নিজে ভালো থাকার জন্য তোমাকে নিজের কাছে বন্দি করেছি। আমি অপরাধি।

সুহানির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। নোহানের স্বীকারোক্তি সুহানিকে নাড়িয়ে দিচ্ছে।

সুহানিঃ আজ হঠাৎ সবকিছু স্বীকার করছেন কেন?

নোহানঃ আমার মনে হচ্ছে দিয়ার সাথে আমার দেখা খুব তাড়াতাড়ি হবে।

সুহানিঃ এসব কি বলছেন আপনি?

নোহানঃ হ্যা ঠিক বলছি।আমি তোমার অমতেই একটা কাজ করেছি।

সুহানিঃ কি কাজ।

নোহানঃ আমি লইয়ার কে দিয়ে ডির্ভোস পেপার রেডি করিয়েছি।

সুহানি চমকে উঠলো।

নোহানঃ তোমাকে মুক্ত করে দিলাম আর আমার সমস্ত সম্পত্তির অর্ধেক তোমার নামে আর অর্ধেক আমার তৈরি করা অনাথ আশ্রম, বৃদ্ধাশ্রমের নামে করে দিয়েছি।

সুহানিঃ আমার নামে কেন?

নোহানঃ দরকার ছিলো।

সুহানিঃ আমি নেবো না।

নোহানঃ না নিলে দান করে দিয়ো‌। ভালো থেকো তুমি আর নিজের খেয়াল রেখো। এখন নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।

সুহানি কিছু আর না বলে নিরবে ঘরটা ত্যাগ করবে তখনি নোহান সুহানির হাত ধরে টেনে নিয়ে নিজের কাছে নিয়ে আসলো।সুহানি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো নোহানের দিকে। নোহান আলতো করে সুহানির কপালে ঠোঁটের ছোঁয়া দিয়ে বললোঃ তোমাকে আমি বৈধ ভাবে প্রথম স্পর্শ এবং শেষ স্পর্শ করলাম।

নোহান কথাটা বলেই বেলকনিতে চলে গেলো।সুহানি হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইল। নোহানের এমন কাজের কোনো কারন কিছুই বুঝতে পারলো না। আর না বুঝতে পারলো নোহানের কোনো কথা।

১বছর পরে…..

— দিয়া সত্যি তুই খুব ভাগ্যবতী। নোহান সত্যি তোকে খুব ভালোবাসতো,তাই তো দ্যাখ না। সবকিছু থেকে কি সুন্দর ফাঁকি দিয়ে চলে গেলো। একটা বার আমার কথা ভাবলো না।একটা বার বুঝলো না আমার কি হবে।‌আমি না মানলেও নোহান আমার স্বামী ছিলো‌।আর বাপির কথা সত্য ছিলো,বাপি বলেছিলো পবিত্র সম্পর্কের টানে একজন অপর জনের উপর দূর্বল হয়ে পড়ে। আমি আগে বুঝিনি কিন্তু তুমি চলে যাবার পরে বুঝে ছিলাম আমি তোমার প্রতি দূর্বল হয়ে গিয়েছি। আচ্ছা নোহান তুমি কি কখনোই আমার প্রতি দূর্বল হওনি।আমার প্রতি কোনো মায়া জন্মায়নি। না জন্মায়নি,জন্মালে হয়তো আমাকে একাকে রেখে চলে যেতে না। কারন তুমি তো সবসময়ই দিয়াতেই আসক্ত ছিলে,কখনোই দিয়ার থেকে বের হতে পারোনি। সত্যি বলতে কখনোই চাওনি, তোমার সবটা জুড়ে ছিলো শুধুমাত্র দিয়া। আমার রঙযুক্ত জীবনটা তুমিই রঙহীন করেদিলে,আমার তুমিই নতুন রঙের অনুভূতির জন্ম দিলে। কিন্তু কি হলো সেই তো আমাকে আবারো রঙহীন করে দিলে।

দিয়ার কবরের সামনে দাঁড়িয়ে অশ্রুসিক্ত নয়নে কথা গুলো বললো সুহানি।জীবন সুহানির সাথে বড্ড বেশি খেলছে। এই খেলার পরিনতিই বা কি?

#চলবে…

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(১৫)

কেটে গেছে ২ টো বছর। এই ২ টো বছরে অনেক কিছুর পরিবর্তন ঘটেছে, সময়ের স্রোতে ভেসে গেছে সবকিছুই। ভাগ্যের পরিহাসে সুহানির ঠাঁই হয়েছে মানসিক হাসপাতালের একটা ছোট ঘরে।

সুহানি নিজের মনে পুতুল নিয়ে খেলছে।তখনি একটা কন্ঠস্বর ভেসে আসলো…

– কি করছো?

কারোর করা প্রশ্ন শুনে সুহানি মাথা তুলে তাকিয়ে দেখলো একটা এপ্রোন পড়া এক পুরুষ দাঁড়িয়ে আছে,মুখের কোনো নেশা ধরানো একটা হাসি। যে কেউ সেই হাসির প্রেমে পড়বে সুহানি সুস্থ থাকলে হয়তো সেও পড়তো আবার নাও পড়তে পারতো।

———–

ডক্টর অরুণ চৌধুরী। পেশা একজন সাইকোলজিস্ট ডক্টর। আজকে এই মানসিক হাসপাতালে প্রথম দিন, হাসপাতাল পরিদর্শনে এসে সুহানিকে পুতুল নিয়ে খেলতে দেখে বললো….

অরুণঃ কি হলো বলো কি করছো।

সুহানিঃ বিয়ে দিচ্ছি।

অরুণঃ কার?

সুহানিঃ দিয়া আর নোহানের।

অরুণ সুহানির সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বললো….
– কিন্তু এইখানে তো দুটো বউ। নোহানের কি দু- দূটো বউ ছিলো।

সুহানিঃ হ্যা।

অরুণঃ কি কপাল আর আমাকে দ্যাখো আমি এখনো পর্যন্ত একটাও বিয়ে করতে পারলাম না। আর নোহান দুটো বিয়ে করলো। আচ্ছা বাদ দাও, আমাকে নোহানের বিয়ের গল্প বলো না।

সুহানি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো…
– সত্যি তুমি শুনবে।

অরুণঃ হ্যা বলো।

সুহানি খুশি হয়ে যায়। আনন্দে হাততালি দিয়ে উঠলো,তারপরে অরুণের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলো…

– এটা হলো নোহান গল্পের নায়ক আর এটা হলো দিয়া নোহানের বউ আর এই মেয়েটা হলো সুহানি,নোহানের দ্বিতীয় বউ। কিন্তু কি জানো নোহানটা না বড্ড পঁচা,নোহান শুধুমাত্র তার দিয়াকেই ভালোবাসে সুহানিকে একটুও ভালোবাসেনি, তাই তো সুহানিকে ছেড়ে দিয়ার কাছে চলে গেছে।

কথাগুলো বলেই সুহানি কেঁদে উঠলো। অরুণ প্রথমে একটু ঘাবড়ে গেলো আচমকা এইরকম কেঁদে উঠতে দেখে। সুহানির কান্নার আওয়াজ শুনে সুহানিকে দেখাশোনা করা নার্সটা দৌড়ে ঘরে উপস্থিত হলো।

নার্সঃ স্যার আপনি এইখানে।

অরুণঃ হ্যা সবটা ঘুরে দেখছিলাম, বেশ আমার সাথে কথা বলছিলো হুট করেই কেঁদে উঠলো।

নার্সঃ স্যার আপনি কি ওকে কিছু জিজ্ঞেস করেছিলেন?

অরুণঃ হ্যা।

অরুণ নার্সকে সবটা বললো।

নার্সঃ স্যার কিছু মনে করবেন না একটা কথা বলছি। আপনার সুহানিকে ওই কথাটা বলা উচিত হয়নি ওইসব কথা বললেই ওহ কষ্ট পাই আরো তীব্রতর ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।

অরুণঃ সুহানি কে?( ভ্রু কুঁচকে)

নার্স সুহানিকে দেখালো। অরুণের ভ্রু কুঁচকে গেলো,গোটা বিষয়টা জানার জন্য আরো কৌতুহলী হয়ে উঠলো। ইতিমধ্যেই নার্স সুহানিকে নিয়ে বেডে শুইয়ে দিয়ে ইনজেকশন পুশ করে দিয়েছে। সুহানি কান্না করতে করতে ঘুমের দেশছ তলিয়ে যায়।

অরুণঃ নার্স আমি কি সুহানির বিষয়ে সবটা জানতে পারি।মানে আমি চাইছিলাম ওর কেসটা হাতে নিতে।

নার্সঃ স্যার আপনার মতো একজন নামকরা ডক্টরের কাছে চিকিৎসা পাওয়াটা ভাগ্যের ব্যাপার। আর আপনি হয়তো একটা বিষয় জানেন না, বিশেষত সুহানির কারনেই আপনাকে এই হসপিটালে আনা হয়েছে,তাই আপনাকেই ওকে হ্যান্ডেল করতে হবে।

অরুণ অবাক হলো। যদিও বা হাসপাতাল বোর্ড কথাটা আগেই জানিয়েছিলো কিন্তু সেই পেশেন্টটা যে সুহানিই এটা বুঝতে পারেনি।

নার্সঃ যদিও আমি সুহানির অতীত সম্পর্কে সবকিছু জানি না। তবে ওর কথাবার্তা ব্যবহার থেকে কিছুটা জেনেছিলাম। আমি যতটা জানি ততটাই বলছি বাকিটা ওর গার্জেনের্ সাথে কথা বলে জেনে নেবেন।

অরুণঃ আচ্ছা,আপনি যতটা জানেন ওটাই বলুন।

নার্সঃ গত ২ বছর ধরে সুহানি এই হাসপাতালে আছে। অন্য সব পেশেন্টের তুলনায় ওহ একটু অন্য রকমের কারোর সাথেই কথা বলেনা চুপচাপ থাকে। একা একা পুতুল নিয়ে খেলে আর কেউ কিছু জানতে চাইলেই,কিছু একটা বলে কাঁদতে শুরু করে দেয়। স্যার আমি শুনেছিলাম সুহানির বান্ধবীর হাসবেন্ডের সাথে ওর বিয়ে হয়। বিয়ের কয়েকদিন পরেই ওর হাসবেন্ড মারা যায় আর সুহানিও একটা এক্সিডেন্টে দীর্ঘদিন কোমায় থাকার পর মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে।

সবটা শুনে অরুণের মনের মাঝে অনেকগুলো প্রশ্ন উঁকি দিতে থাকলো।

অরুণঃ সুহানির গার্জেনকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার সাথে দেখা করতে বলো।

নার্সঃ ওকে স্যার।

পরেরদিন…

অরুণ নিজের কেবিনে বসে সুহানির রির্পোট গুলো দেখছে, খুব জোরে আঘাত পাবার কারনে সুহানির ব্রেন ঠিকমতো কাজ করছে না,কিছু স্মায়ু ঠিকমতো রক্ত চলাচল করতে পারছে না।

– মে আই কাম ইন।

অরুণ সামনে তাকিয়ে দেখলো একটা যুবক দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে, অরুণ ওকে ভেতরে আসতে বললো।

– আমি সুহান। সুহানির ভাই।

সুহানের পরিচয় পাবার পরে অরুণ সোজা হয়ে বসলো। সুহানকে বসতে বললো।

অরুণঃ আমার কিছু কথা জানার ছিলো তাই আপনাকে কষ্ট করে ডেকে পাঠালাম।

সুহানঃ না ঠিক আছে। আমার দিদি ঠিক আছে তো।

অরুণ তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। অর্থাৎ মানসিক রোগীদের আর কখনোই ভালো থাকা হয় না।

সুহানঃ ডক্টর আপনি হাসছেন কেন?

অরুণঃ না কিছু না আমাকে বলুন তো সুহানির সাথে ঠিক কী হয়েছিলো।

সুহানঃ সে‌তো অনেক বড়ো কাহিনী।

অরুণঃ অসুবিধা নেয় বলো। একজন প্রেশেন্টের ভালোর জন্য আমি সবটা শুনতে রাজি আছি।

সুহানঃ আচ্ছা। দিদি আর দিয়া দিদি দুজনেই খুব ভালো বন্ধু ছিলো একে অপরের, দিয়া দিদি অনাথ। দিদির খুব আপন ছিলো দিয়া। নোহান’দা আর দিয়া’দিদি একে অপরকে ভালোবেসে বিয়ে করে, সুখেই চলছিলো সবকিছু কিন্তু একদিন হুট করেই নোহান’দা এসে বললো….

– ইউ উইল ম্যারি মি।

তার পরের কাহিনী গুলো সকলেরই জানা। সুহান অরুণকে একে একে সবটা বলতে লাগলো, সবটা জানার কৌতুহল আরো বেড়ে যাচ্ছে অরুণের।

অন্যদিকে…

সুহানি দেয়ালাতে নিজেদের নাম লিখছে। দিয়া+ নোহান + সুহানি লিখেও নিজের নামটা কেটে দিলো সুহানি। নিজের মুখেই তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে তুলে বলে উঠলো…

– কেন এই বিষাক্ত রঙ বেরঙের অনুভূতির জন্ম দিলে নোহান। আমি তো ভালোই ছিলাম,কেন আমার মনে নিজের জন্য অনুভূতির জন্ম দিলে আর কেনই বা আমাকে একা করে দিয়ে চলে গেলে। জানো সকলেই ভাবছে আমি মানসিক ভাবে অসুস্থ, কিন্তু সত্যিটা তো আমি জানি আমি অসুস্থ নয় আমি পুরোপুরি ভাবেই সুস্থ হ্যা মাঝে মধ্যে একটু অসুবিধা হলেও আমি পাগল নয়। তবুও কেন জানো এই খানে পড়ে আছি মা বাবার সাথে থাকা মানেই আমাকে পুনরায় বিয়ের জন্য জোর করবে কিন্তু আমি তো বিয়ে করতে পারবো না কাউকে,আমি যে আমার সবকিছুই তোমাকে দিয়ে দিয়েছি অন্য কাউকে বিয়ে করলে তাকে ভালোবাসা দেবার মতো আমার কাছে কিছুই যে অবশিষ্ট নেয়। আমি ওই স্বার্থপর মানুষগুলোর থেকে দূরে থাকতে চাই তাই এই হাসপাতালটাকে বেছে নিয়েছি, জানো এইখানে থাকা মানুষগুলো বড্ড সরল হয়তো পাগল বলে। মনের ভেতরে কোনো রকমের দ্বিধা, ঘৃণা,লোভ কিছুই নেয় এদের মনে। মনটা পুরোই একটা বাচ্চা শিশুর মতো এদের্ মাঝেই আমি ভালো আছি তবুও তো প্রানভরে শ্বাস নিতে পারি ওই মুক্ত আকাশের তলাতে থাকলে যে সেটাও নিতে পারতাম না। ভালো আছি আমি এই মানসিক হাসপাতালে।

#চলবে…

ভুল-ত্রুটি মার্জনীয়।
।।হ্যাপি রিডিং।।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here