রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,পর্ব_১৬

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,পর্ব_১৬
#তানজিলা_খাতুন_তানু

সুহানের মুখের সবটা শুনে অরুণের মনের মাঝে অনেকগুলো প্রশ্ন উঁকি দিতে লাগলো।

অরুণঃ কিছু কথার উত্তর তো এখনো পেলাম না কি হয়েছিলো নোহানের সাথে,আর নোহানই বা কোথায় গেলো?

সুহানঃ নোহান’দা কার এ’ক্সি’ডে’ন্টে মা’রা যায়।

অরুণঃ হোয়াট, কিন্তু কিভাবে কি?

সুহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অতীতের পাতাতে ডুব দিলো….

অতীত…

নোহানের স্বীকারোক্তি শুনে সুহানির মনের মাঝে ভয় জমতে শুরু করলো, মনটা বড্ড কু ডাকছে কিছুতেই কিছু মন বসছে না। বার বার মনে হচ্ছে কিছু একটা হারিয়ে ফেলবে।

পরেরদিন সকালে নোহান নিজের গাড়ি নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। স্বাভাবিকভাবেই গাড়ি চলছিলো হুট করেই ব্রেক ফেল হয়ে যায় আর সামনে গাছে ধাক্কা মারে।

নোহানঃ ভালো থেকো সুহানি,পারলে মাফ করে দিও তোমার সাথে অন্যায় করার জন্য। আমি আসছি দিয়া আমি আসছি।

কথাটা বলতে বলতেই নোহান জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ফাঁকা রাস্তায় মানুষ চলাচল কম থাকাতে নোহানের গাড়িটা কারোর নজরে পড়েনি অথবা কেউ দেখেও এগিয়ে আসেনি কারন আমরা মানুষ জাতিটা এতটাই নীচে নেমে গেছি যে নিজেদের স্বার্থ ছাড়া আর কারোর কথাই চিন্তা করি না। বিপদেও কারোর প্রতি এগিয়ে আসি না কারন একটাই যদি ঝামেলা পোহাতে হয় কি দরকার এত ঝামেলা নেবার, নিজে বাঁচলে বাপের নাম।

সকাল গড়িয়ে দুপুর পড়েছে তখন একজন লোক নোহানের গাড়িটা ওইভাবে দেখে কয়েকজনের সাহায্য নিয়ে নোহানকে নিয়ে হাসপাতালে পৌঁছে ওকে ভর্তি করানোর ব্যবস্থা করে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই নোহানের মৃ”ত্যু হয়। খবরটা পেয়ে সুহানির অবস্থা পাগল প্রায় চাইলেও যে এড়িয়ে যেতে পারবে না নোহান তার বিবাহিত স্বামী।

বর্তমান…

সুহানঃ নোহান’দার মৃত্যুর পর দিদি খুবই ভেঙ্গে পড়েছিলো তখন রাহাত’দা দিদিকে পুনরায় স্বাভাবিক করে তোলে।

অরুণঃ রাহাত কে?

সুহানঃ দিদিকে পছন্দ করতো, বিয়ের প্রস্তাব ওহ দিয়েছিলো কিন্তু তখন দিদির বিয়ে হয়ে গিয়েছিলো,তাই আর ওদের মাঝে কোনো সম্পর্ক গড়ে উঠেনি। পরে ওনার কারনেই দিদি স্বাভাবিক হয়।

অরুণঃ তাহলে উনি এখন কোথায়?

সুহানঃ জেলে।

অরুণঃ কেন?

সুহানঃ দিদি স্বাভাবিক হবার ১৫ দিন পর। হঠাৎ করেই রাহাত’দাকে পুলিশে গ্রেপ্তার করে আর ওনার জেল হয়ে যায়। এবং সেইদিনই রাহাত’দা পুলিশের হাত থেকে বাঁচার জন্য দিদিকে ধাক্কা চলে যায় তখনি দিদির মাথায় আঘাত লাগে। আর তারপরেই এইসব কিছু।

সুহান একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নিজের প্রানপ্রিয় দিদিকে এই ভাবে মানসিক হাসপাতালে থাকতে দেখে ওর ভীষন কষ্ট হয় কিন্তু কি করবে ওর হাতে যে কিছুই নেয়।

সুহানঃ – আমি যতটুকু জানি সবটাই আপনাকে বললাম, বাকিটা দিদি ছাড়া আর কেউই জানে না।

অরুণঃ ঠিকাছে তুমি এইবার আস্তে পারো।

সুহানঃ ওকে,তবে আমি কি একবার দিদির সাথে দেখা করতে পারি।

অরুণঃ হ্যা শিওর।

সুহানঃ থ্যাঙ্ক ইউ।‌ যদি পারেন আমার দিদিকে সুস্থ করে দেবেন।

অরুণঃ চেষ্টা করবো বাকিটা উপর ওয়ালার হাতে।

সুহান অরুণের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে সুহানির ঘরটাতে গেলো। সুহানি নিজের মনে বক বক করতে করতেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো, সুহান নিজের দিদির সামনে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে চুমু দিলো। ছোট থেকে দিদির কাছে আদরে আদরে বড়ো হয়ে উঠেছে আজকে সেই দিদিই এইভাবে হাসপাতালে ভর্তি আছে সুহান চাইলেও কিছু করে উঠতে পারছে না।

সুহানঃ দিদি তুই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যা,দ্যাখ তোকে ছাড়া মা বাবা আমরা কেউই ভালো নেয়। মা প্রতিদিন তোর জন্য কান্না করে আর বাবা তো সামনে কাঁদতে পারে না কিন্তু আড়ালে ঠিকই কাঁদে। বাবা এই সবকিছুর জন্য নিজেকে দায়ী করে তুই প্লিজ ফিরে আয় আমাদের কাছে। আগের মতো হয়ে ফিরে আয় দিদি।

সুহান নিজের চোখের পানি মুছতে মুছতে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো। সুহান চলে যেতেই সুহানি নিজের চোখ খুললো, ঘুমিয়ে পড়লেও সুহানের পায়ের শব্দে ঘুম ভেঙে যায় তবুও ঘুমের ভান করেছিলো ভালো লাগে না আর কারোর সাথে কথা বলতে, সুহানের কথাগুলো শুনে সুহানির চোখগুলো ছলছল করে উঠলো। বাবার প্রতি অভিমান জমা হলেও রাগ করে তো থাকতে পারেনি,যতই হোক বাবা তো।

৩ মাস পর…

সুহানি ভালো করেই বুঝতে পারছে না অরুণ চৌধুরী ওকে নিয়ে একটু বেশিই ভাবছে। অরুণের করা কেয়ার গুলো সুহানিকে বড্ড বেশি ভাবাচ্ছে। সুহানি চাই না নতুন করে কারোর মনে নিজের জন্য অনুভূতির জন্ম দিতে। তবুও সুহানি কিছু বলেনি স্বাভাবিক ভাবেই চলছিলো কিন্তু সমস্যা বাঁধলো অন্যকিছুতে।

হুট করেই আবারো সুহানির মাথার যন্ত্রনা শুরু হলো। অসহ্য যন্ত্রনায় চিৎকার করতে করতে সুহানি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে যায়, আবারো মাথায় চো’ট লাগে।

তড়িঘড়ি সুহানিকে হাসপাতালে ভর্তি করালেও,, অবস্থার কোনো রকমের উন্নতি ঘটেনি। অরুণ চৌধুরী পুরোটা সময়েই হাসপাতালে থেকেছে, খেয়াল রেখেছে।

অরুণঃ ডক্টর সুহানির অবস্থা কেমন

ডক্টরঃ দেখুন ডক্টর চৌধুরী আমরা আমাদের নিজেদের সাধ্যমতো চেষ্টা করে চলেছি তবে প্রেশেন্ট নিজেই রিকভারি করতে চাই না, আমাদের মানসিক শক্তিটাই আমাদের সুস্থ থাকার সবথেকে দামী মেডিসিন আর প্রেশেন্ট নিজেই চাই না সুস্থ হতে। বাকিটা উপর ওয়ালার হাতে দেখুন কি হয়।

ডক্টর চলে যায়, অরুণ কি করবে বুঝে উঠতে পারে না। এই ৩ মাসে সুহানির প্রতি নিজের অনুভূতির জন্ম হয়েছে, ভালোবেসে ফেলেছে সুহানি নামক মানসিক রোগী টাকে কিন্তু কি হলো তাকে ভালোবেসে তো নিজেই মানসিক রোগী হয়ে যাচ্ছে।

ভাগ্য আর পরিস্থিতি কোনটাই সহায় হলো না অরুণের প্রতি, সুহানি চিরনিদ্রায় চলে যায় ফিরে আসে না আর। সুহানির চলে যাওয়ার ধাক্কাটা সামলে নিতে অরুণের কয়েকদিন সময় লাগে, সামলে নিয়ে নিজের কাজ নিজের পেশা নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়লো পুনরায়।

হাসপাতালে কেবিনে বসে কাজ করছিলো অরুণ,সুহানিকে দেখাশোনা করা নার্সটা দরজা ঠেলে অনুমতি নিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলো।।

অরুণঃ কোনো সমস্যা কি?

নার্সঃ স্যার আপনাকে একটা জিনিস দেবার ছিলো।

অরুণঃ কি?

নার্সটি একটা ডাইরি এগিয়ে দিলো অরুণের দিকে। অরুণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো…

– কার ডাইরি এটা আর কেনই বা আমাকে দিচ্ছো কেন।

নার্সের উত্তর শুনে অরুণ চমকে উঠলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here