#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,১২,১৩
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
(১২)
রাহাতের এমন কাজে সুহানি আর নোহান দুজনেই চমকে উঠলো।
রাহাত নিজের হাতে একটা গোলাপ নিয়ে সুহানির দিকে তাক করে বললোঃ আমি তোমাকে ভালোবাসি। আই উইল ম্যারি ইউ।
সুহানির কানে নোহানের বলা ওই একই কথাটা বাজতে লাগলো। নোহান ওহ সুহানিকে ঠিক একই কথা বলেছিলো।সুহানির চোখটা অশ্রুসিক্ত হয়ে উঠলো। নোহান গম্ভীর মূখটা সুহানির চোখে পড়লো। ওদিকে সকলেই সুহানিকে বলছে উত্তর দেবার জন্য। নোহান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সুহানির দিকে খুব করে চাইছে সুহানি রাহাতকে না বলে দিক। সুহানি চোখের পানিটা চোখেই আটকে দিয়ে নোহানের দিকে তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে রাহাতের হাত থেকে ফুলটা নিয়ে নিলো। সকলেই আনন্দে চেঁচিয়ে উঠলো। সবাই খুব খুশি কিন্তু দূটো মানুষ বাদে নোহান আর একজন সুহানি। কোনো এক কারনে খুশি হতে পারছে না। হয়তো নোহানের বৈধ স্ত্রী বলে। কিন্তু আদোও কি এই সম্পর্কের কোনো ভিত্তি আছে।
সবাই সবার মতো করে আনন্দ করতে লাগলো। সুহানি এক সাইটে দাঁড়িয়ে আছে হুট করে কেউ একজন ওকে টেনে সাইটে নিয়ে আসলো। সুহানি সামনে তাকিয়ে দেখলো নোহান।
সুহানিঃ কি হলো আমাকে আনলেন কেন?
নোহানঃ কি শুরু করেছো তুমি এসব কি?
সুহানিঃ আমি এতদিনে ঠিক কাজ করেছি। আমি আপনার থেকে মুক্তি চাই।কিছুদিন পরে ডির্ভোস চাই আমার।
নোহান সুহানিকে আরো একটু শক্ত করে চেপে ধরে বললঃ এত সহজে আমার থেকে মুক্তি তুমি পাবে না মিসেস সুহানি শিকদার।
সুহানিঃ আমি মিসেস শিকদার নয় আমি সুহানি হাসান বুঝেছেন।
নোহান বাঁকা হেসে বললঃ তুমি মানো আর না মানো সত্যি তো এটাই। আর এটা গোটা দুনিয়া জানবে তুমি নোহান শিকদারের স্ত্রী।
সুহানিঃ কোনোদিন না আমি কখনোই আপনাকে স্বামী হিসাবে মানবো না।
নোহানঃ আমার কথা না শুনলে অপমানিত হবার জন্য তেরি হও।
সুহানিঃ কি করবেন আপনি?
নোহানঃ আমি তোমার কিছুই করবো না।ভাবো একবার যদি সকলে জানে আমাদের বিয়ের হবার পরেও তুমি রাহাতকে বিয়ে করছো তাহলে একবার ভাবো এই সমাজ তোমার পরিবারকে কি ছেড়ে কথা বলবে।
সুহানির দূর্বলতা ওর পরিবার। আর নোহান সবসময় ওই জিনিসেই আঘাত করে।
সুহানিঃ আমাকে এই সবকিছু থেকে মুক্তি দিন না দয়া করে।
নোহান সুহানির কানের কাছে মুখ নিয়ে এসে বললোঃ আমার থেকে তুমি মুক্তি পাবে না মিসেস শিকদার,,তুমি আমার ছিলে আর থাকবে।আমাদের বন্ধনটা উপর ওয়ালার দ্বারা সৃষ্টি। মৃ”ত্যু ব্যতীত তোমাকে আমার থেকে আলাদা করতে কেউ পারবে না।
নোহান চলে গেলো কথাটা বলে,সুহানি থম মেরে দাঁড়িয়ে রইল। কি প্রতিক্রিয়া করা উচিত সেটা বুঝে উঠতে পারলো না।
পরেরদিন সকালে…
সুহানি ওর বাবার সাথে বসার ঘরে বসে আছে। কলিং বেলের শব্দ শুনতে পেয়ে সুহানির মা উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলেন।
মাঃ আসলে নোহান বাবা তুমি
সুহানি নোহানের নাম শুনে চমকে উঠলো। উঠে দাঁড়িয়ে দেখলো সত্যি সত্যি নোহান এসেছে।
নোহানঃ আন্টি আমি কি ভেতরে আসতে পারি
মাঃ হ্যা বাবা এসো।
নোহান ভেতরে এসে বসল। সুহানির বাবা নোহান এর দিকে তাকিয়ে আছে।
নোহানঃ আঙ্কেল আমি আপনার মেয়েকে নিয়ে যেতে চাই।
সুহানি চমকে উঠলো নোহানের কথায়। নোহান বাড়ি তে এসে ওকে এভাবে নিয়ে যেতে চাইবে এটা ওর ধারনার বাইরে ছিলো।
বাবাঃ আমি কেন তোমার সাথে আমার মেয়েকে ছাড়বো?
নোহানঃ আঙ্কেল সুহানি আমার বিবাহিত স্ত্রী। আমি চাইলেই ওকে নিয়ে যেতে পারি তাই না।
বাবাঃ কিন্তু তুমি ওর মতের বিরুদ্ধে বিয়ে করছো।
নোহানঃ সমস্তটাই পরিস্থিতির শিকার। আমি চাইলেও এটা বদলাতে পারবো না সুহানি আমার স্ত্রী।
বাবাঃ ভালোবাসো আমার মেয়েকে?
নোহান সুহানির দিকে তাকালো। সুহানি এতক্ষন মাথা নীচু করে ছিলো কিন্তু বাবার করা এমন প্রশ্ন শুনে মাথা তুলে তাকিয়ে অবাক হয়ে বাবার দিকে তাকিয়ে রইল।
বাবাঃ কি হলো উত্তর দাও।
নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে বললোঃ ভালোবাসি না।
সুহানি নোহানের দিকে তাকালো। নোহান সুহানির চোখের দিকে তাকিয়ে বললোঃ কিন্তু আমার রঙহীন জীবনটাকে রঙিন করার জন্য সুহানিকে আমার লাগবে। আমার বেঁচে থাকার জন্য সুহানিকে আমার লাগবে।
সুহানির বাবা নোহান এর দিকে তাকিয়ে আছে। নোহান ওনার দিকে তাকিয়ে বললোঃ আঙ্কেল আমার হাতে কি নিজের মেয়েকে তুলে দেবেন।
সুহানির বাবা নোহান আর সুহানির দিকে একপলক তাকালো। তারপরে কিছু একটা চিন্তা করে বললেনঃ আমি আমার মেয়েকে তোমার হাতে তুলে দেবো না।
সুহানি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। নোহান হতাশ চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সুহানির বাবা নোহানের দিকে তাকিয়ে বললোঃ আমি আমার মেয়েকে আমার জামাই এর হাতে তুলে দেবো।
সুহানির চোখ কোটর থেকে ঠেলে বেরিয়ে আসার উপক্রম। নোহানের মুখে হাসি ফুটে উঠল।
বাবাঃ কিন্তু আমার একটা শর্ত আছে।
নোহানঃ কি শর্ত।
বাবাঃ দ্যাখো নোহান আমরাও এই সমাজে বাস করি। আমাদেরও কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। তাই আমি চাইনা আমার মেয়ের চরিত্র নিয়ে কেউ কোনো কথা বলুক। আমি চাই তোমাদের বিয়ে দিয়ে সুহাকে তোমার হাতে তুলে দিতে।
নোহানঃ কিন্তু আঙ্কেল আমাদের তো বিয়ে হয়ে গেছে।
বাবাঃ সেটা তো আমরা জানি অন্য কেউ তো জানে না।
নোহান আর কিছু বললো না। সুহানি কি করবে বুঝে উঠতে পারছে না।
বাবাঃ কি রাজি তো।
নোহানঃ ওকে।
বাবাঃ তাহলে আমি বিয়ের দিন ঠিক করে তোমাকে জানাচ্ছি।
নোহানঃ ঠিকাছে। কিন্তু আঙ্কেল আমি সুহানিকে নিয়ে যেতে চাই।
বাবাঃ কিন্তু
নোহানঃ প্লিজ আঙ্কেল।
বাবাঃ ওকে।
সুহানি ওর বাবার দিকে তাকিয়ে আছে ওর বাবা রাজি হয়ে যাবে সেটা বুঝতে পারেনি।
সুহানি নিজের ঘরে বসে আছে। রাস্তায় নোহানের সাথে একটাও কথা বলেনি। চুপচাপ ছিলো। বাড়িতে এসেও কিছু বলেনি একদম চুপচাপ ছিলো।
নোহান হাতে খাবার নিয়ে বললোঃ সুহানি এটা খেয়ে নাও।
সুহানিঃ আমি খাবো না।
নোহানঃ আমি তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি। আমি খেতে বলেছি।
সুহানি কিছু না বলে চুপ করে বসে থাকলো। নোহান ওর পাশে বসে খাবারটা নিজের হাতে নিয়ে সুহানির মুখের সামনে ধরলো। সুহানি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নোহানের দিকে।
নোহান বাঁকা হেসে বললঃ এভাবে তাকিয়ে না থেকে কি বলবে বলো। আমি জানি আমি দেখতে ভালো।
সুহানি যেই না কিছু বলবে বলে মুখটা খুললো তখনি নোহান ওর মুখে ঢুকিয়ে দিলো খাবার টা।সুহানি নোহানের কাজে হতভম্ব হয়ে গেলো।
২ দিন পর…
নোহান সুহানির খেয়াল রেখেছে। আগের মতো ব্যবহার আর করে না। এখন সবসময় আগলে রাখে। সুহানি নোহানের এরকম পরিবর্তন এ অনেকটাই অবাক হয়ে গেছে। নোহান আর সুহানির বিয়ে ঠিক করা হয়েছে সামনের সপ্তাহে শুক্রবার।
নোহান আর সুহানির বাবা ফুল দমে ডেকোরেশন করছে।
সুহানির বাবা রাহাতের বাড়িতে আসতেই রাহাতের বাবা অবাক হয়ে বললোঃ আরে আপনি । আমি তো ভাবছিলাম আপনার কাছেই যাবো।যাক ভালোই হয়েছে এসেছেন।
সুহানির বাবাঃ কি করবো বলুন আরো আগেই আসতাম কিন্তু একা মানুষ তো কত দিক সামলাবো বলুন।
রাহাতের বাবাঃ সেটাই তো। আপনার সাথে একটা কথা ছিলো। আপনি কি সুহানির বিয়ের কথা নিয়ে কিছু ভাবছেন।
সুহানির বাবাঃ সেই জন্যই এখানে আসা।
রাহাতের বাবা একটু খুশি হলেন।
সুহানির বাবাঃ এই নিন কার্ড।
রাহাতের বাবা একটু অবাক হয়ে বললোঃ কিসের কার্ড।
সুহানির বাবাঃ সুহানি আর নোহানের বিয়ের কার্ড।
রাহাতের বাবা চমকে উঠে বললঃ কি বলছেন আপনি এসব কবে হলো।
সুহানির বাবাঃ কিছু দিন আগেই নোহান ভালো ছেলে তাই আর না করিনি। আসবেন কিন্তু আজ আসি।
সুহানির বাবা চলে গেলেন। রাহাতের বাবা চিন্তায় পড়ে গেলেন।কিভাবে এই কথাটা তার ছেলেকে জানাবে। কিন্তু তার আগে সুহানির সাথে কথা বলতে হবে। কেন করলো ওহ এটা।
#চলবে…
#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
(১৩)
সারা বাড়ি জ্বলজ্বল করছে রঙিন হয়ে আছে। কিন্তু সুহানির মনে কোনো আলো নেই রঙ নেই। রঙহীন একটা মানবে পরিনত হয়েছে ও।
সুহানির আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললোঃ দিয়া কেন তুই চলে গেলি। তুই থাকলে কখনোই আমাকে এই পরিস্থিতিতে পড়তে হতো না। তোমার স্বামীতে আমাকে ভাগ বসাতে হতো না।
সুহানি পেছন থেকে একটা কন্ঠস্বর শুনে পেছনে তাকিয়ে চমকে উঠে কাঁপা কাঁপা গলায় বললঃ দিয়া।
দিয়াঃ হ্যা আমি। তুই বলেছিলিস না আমার মৃ”ত্যু”র প্র”তি”শো”ধ নিবি। আমার খু”নী”কে নিজের হাতে শা”স্তি দিবি কোথায় গেলো তোর প্রতিজ্ঞা বল।
সুহানিঃ আমি সব কথা রাখবো আমাকে একটু সময় দে।
দিয়াঃ সুহা ওহ তোকেও ছাড়বে না তোকেও ছাড়বে না ছাড়বে না।
দিয়া আসতে আসতে মিলিয়ে গেলো অন্ধকারে। সুহানি চিৎকার করে বললোঃ দিয়া কোথায় গেলি তুই। দিয়া।
তারপরে আর কিছুই মনে নেয় ওর। যখন চোখ খুললো তখন দেখলো কেউ একজন মাথার কাছে বসে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে দেখলো নোহান বসে আছে। সুহানি উঠে বসে নোহানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।নোহান আচমকা একরকম আক্রমনে প্রস্তুত ছিলো না। সুহানিকে কিছুই না বলে চুপ করে সুহানির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো। সুহানি আসতে আসতে স্বাভাবিক হয়ে আসে,তারপরে নিজের উপস্থিতি টের পেয়ে সরে আসে নোহানের বুক থেকে।
নোহান সুহানিকে স্বাভাবিক হতে দেখে জিজ্ঞেস করলোঃ কি হয়েছিলো তুমি অজ্ঞান হয়ে গেলে কিভাবে?
সুহানি নোহানকে বলতে গিয়েও আটকে গেলো। নিজেকে স্বাভাবিক করে বললোঃ এমনি শরীরটা খারাপ লাগছিলো তাই।
নোহানঃ ও তুমি রেস্ট নাও আমি আসছি।
নোহান চলে যায়। সুহানি দিয়ার বলা কথাগুলো ভাবতে লাগলো। সুহানির ভাবনার মাঝেই হয়তো দিয়া এসেছিলো কিন্তু দিয়ার কথাগুলো ফেলে দেবার মতো নয়। কিন্তু কে আছে এই সবকিছুর পেছনে।
সুহানির ভাবনার মাঝেই একটা কল আসে। সুহানি ফোনটা রিসিভ করে দেখলো কলটা করেছেন রাহাতের বাবা।
সুহানিঃ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।
আঙ্কেলঃ ওয়া আলাইকুমুস সালাম। তোমার সাথে কথা আছে।
সুহানিঃ আমি খুব ভালো করেই জানি আপনি আমাকে কেন কল করেছেন।
আঙ্কেলঃ এরকম করার মানেটা কি?
সুহানিঃ আঙ্কেল বাপি চাই আমি নোহানকে বিয়ে করি। আর তার ইচ্ছাকে প্রাধান্য দেবার জন্য আমাকে এটা করতেই হবে।
আঙ্কেলঃ তাই বলে নিজের ইচ্ছার বিরুদ্ধে
সুহানিঃ আঙ্কেল জীবনে অনেককিছুই হয় যেইগুলোর উপরে আমাদের কোনো হাত থাকে না। ভাগ্য আর কঠিন বাস্তবতার কাছে বারবার হেরে যায় আমাদের ইচ্ছাগুলো।
আঙ্কেলঃ তবুও একবার বলবো ভেবে দ্যাখো।
সুহানিঃ ভাবার কিছু নেয়। নোহান আর আমার বিয়েটা হবে।
আঙ্কেল হতাশ হয়ে বললেনঃ ওকে তোমাদের নতুন জীবনের শুভেচ্ছা রইলো।
ফোনটা কেটে দিয়ে সুহানি বিরবির করে বললোঃ নতুন জীবন না ন’র’কী’য় জীবন।
আসতে আসতে দিন এগিয়ে আসলো। সুহানি নিজের বাড়ি ফিরে এসেছে। নোহান নিজে দিয়ে গেছে সুহানিকে।
সুহানির বাবাঃ মা মন খারাপ করিস না। যেটা হয় ভালোর জন্যই হয়।
সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ আমার ভাগ্যে আর ভালো কিছু নেয় বাপি। আমার জীবনটা রঙহীন হয়ে গেছে আর এই রঙহীন জীবনটা কখনোই রঙিন হবে না।
বাবাঃ সবটাই বিধাতার লিখন। মেনে নে আর কি করবি।
বাবা চলে গেলেন। সুহানি ওর মাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।
সুহানিঃ মা এরকম কেন হলো আমার সাথে কি দোষ আমার।
মাঃ সবার তো দোষ থাকে না। বিনাদোষে ও যে শাস্তি পেতে হয়।
সুহানি মায়ের বুকেই থাকলো আর উঠলো না।
সময় চলে যায়। বিয়ের আর কয়েক ঘন্টা বাকি আছে। সুহানিকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে কিন্তু সুহানির মনে কোনো আনন্দ নেয়,ফূর্তি নেয়। নোহান কিছুটা হলেও সম্পর্ক টাকে মেনে নিয়েছে। তাই ওহ আগের তুলনায় একটু স্বাভাবিক আছে।
নোহান আকাশের দিকে তাকিয়ে বললোঃ দিয়া আমি তোমার বান্ধবীকেই বিয়ে করছি অন্যায় করলে আমাকে মাফ করে দিও। সুহানি আমার প্রয়োজনে পরিনত হয়েছে আমার বেঁচে থাকার জন্য সুহানিকে লাগবে আমার।
কয়েকঘন্টা পরে…
নোহান বিয়ে করতে চলে এসেছে। সুহানিকে নিয়ে আসার জন্য ঘরে আসলো কয়েকটা মেয়ে। কিন্তু ঘরের দরজা বন্ধ। ধাক্কা ধাক্কি করার পরেও সুহানি দরজা খুললো না। সকলেই চিন্তিত হয়ে পড়লো।মেয়েগুলো সুহানির বাবা মাকে ডেকে নিয়ে আসলো। খবরটা নোহানের কানে পৌঁছাতেই নোহান তাড়াতাড়ি দরজাটা ভেঙ্গে অনেক কষ্টে ভেতরে গিয়ে যা দেখলো তাতে সবাই চমকে উঠলো।
নোহান চিৎকার করে উঠলোঃ সুহানি…
সুহানি অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। নোহান তাড়াতাড়ি করে ওকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলো। ডাক্তারকে ফোন করা হলো। তিনি এসে জানালেন, সুহানি কোনো বিষয়ে উত্তেজিত হবার ফলে এরকম হয়েছে।
নোহান চিন্তায় পড়ে গেলো। সুহানি কি বিষয় নিয়ে এতটা উত্তেজিত এই বিষয়টা আগেই একবার হয়েছে। সুহানি অজ্ঞান হয়ে গিয়েছিলো।
কিছুক্ষন পর,,সুহানির জ্ঞান ফিরে আসলো। সবাই জানতে চাইছে কি হয়েছে। কিন্তু কোনো কিছুর উত্তর না দিয়ে বললোঃ বিয়ের সময় চলে যাচ্ছে।
সুহানির কথায় সবাই বিয়ের জোগাড় করতে থাকে।
কাজিঃ মা তুমি কি রাজি,রাজি থাকলে কবুল বলো।
সুহানিঃ কবুল, কবুল,কবুল
একফোঁটা চোখের পানি ফেলে দিয়ে মনে মনে বললোঃ তোর কথা রাখতে আবারো নোহানের সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসলাম। তোর কথা রাখতেই নোহানকে মেনে নেবো দিয়া। তুই এবার খুশি তো।
নোহান আর সুহানির বিয়ে হয়ে যায়। নোহান বিয়ে শেষে সুহানিকে নিয়ে ওর বাড়িতে যাবে। সুহানির মা,ভাই কাঁদছে। কিন্তু সুহানি অনুভুতি হীন হয়ে আছে। কোনো কান্না আসছৈ না।চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে।
সুহানির মা ওকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো।বাবা এসে মেয়েকে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিয়ে বললোঃ মা’রে ভালো থাকিস,,অনেক সুখী হ তুই।
সুহানি কিছুই বললো না। শুধু মাত্র চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো।
নোহান আর সুহানি বাড়িতে উঠে বসলো,সুহানি জানালার বাইরে তাকিয়ে ভাবছে,, কিছুক্ষন আগের কথা,
সুহানি নিজেকে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো। তখনি পেছন থেকে একটা কষ্ঠস্বর ভেসে আসলোঃ কি সুন্দর লাগছে তোকে সুহা।
সুহানি তাড়াতাড়ি পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখলো,দিয়া দাঁড়িয়ে আছে।
সুহানিঃ দিয়া তুই এসেছিস,জানিস আমি তোর..
দিয়াঃ চুপ,আমি সবটাই জানি।
সুহানিঃ তুই খুশি তো।
দিয়াঃ না এখনো খুশি হয়নি।
সুহানিঃ কেন?
দিয়াঃ আমার নোহানের জীবনটা গুছিয়ে দে না সুহা।নতুন করে ওকে নিয়ে বাঁচতে শুরু কর না সুহা।
সুহানিঃ কি বলছিস এসব তুই।
দিয়াঃ ঠিক বলছি ওকে আপন করে নে না।
সুহানি কিছু বলবে তার আগেই একটা ঝলকানি চোখে পড়লো।আর দিয়া কোথায় যেন হারিয়ে গেলো।
সুহানিঃদিয়া,দিয়া দিয়া কোথায় গেলি তুই।কেন আমাকে ছেড়ে গেলি।
সুহানি দিয়াকে অনেক খুঁজেও খুঁজে পেলো না।আর উত্তেজিত হবার জন্য অজ্ঞান হয়ে গেলো।
সুহানি বাস্তবে ফিরে আসলো গাড়ির হর্নের আওয়াজে।
নোহানঃ চলো।
সুহানিঃ হূম।
নোহান সুহানিকে নিয়ে বাড়িতে প্রবেশ করেই দেখলো সবার মুখগুলো কিরকম যেন হয়ে আছে।
নোহানঃ কি হয়েছে।আর দিদিয়া কোথায়?
মেডঃ ম্যাম তো ঘরেই।
নোহানঃডাকো।
মেডঃ স্যার ডেকেছিলাম, কিন্তু দরজা খোলেননি।
নোহানঃকখন থেকে।
মেডঃআপনার বাড়ি থেকে বের হবার পড়ে থেকে।
নোহান তাড়াতাড়ি দৌড়ে উপরে গিয়ে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।কিন্তু কেউ দরজা খুললো না। নোহান কোনো কিছু না ভেবেই দরজাটা ভেঙ্গে ঢুকে যা দেখলো তাতে …
#চলবে