রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,০২,০৩

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,০২,০৩
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(২)

সুহানির মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জমা হয়েছে, তার এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাবে কিভাবে। নোহানের করা এই অদ্ভুত কাজ সুহানির মন-মস্তিস্ককে নাড়িয়ে দিয়েছে। যে দিয়ার জন্য এতকিছু করলো,আর তার জীবনেই সবথেকে বড়ো শত্রু হয়ে গেলো। দিয়া আর সুহানি আজ থেকে সতিন। সুহানি কথাগুলো ভেবেই তাচ্ছিল্যের হাসি হাসলো।

নোহান সুহানিকে গাড়িতে বসতে বলো,সুহানিও তাই করে। নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।সুহানি জানালার বাইরে তাকিয়ে আগের কথা গুলো ভাবতে লাগলো।

আজ থেকে ২ বছর আগে। দিনটা ছিলো বুধবার,

সুহানি আর দিয়া তখন ফ্যশান ডিজাইনার কোর্সের ফাইনাল ইয়ারের স্টুডেন্ট। ফ্যাশন ডিজাইনারদের কাছে নোহান শিকদার একজন আইকন, সব ডিজাইননাররা চাই নোহান শিকদারের কোম্পানিতে জব করবে,তার জন্য সবাই আপপ্রান চেষ্টা করছে। ইনস্টিটিউটে একটা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে, যেখানে স্বয়ং নোহান শিকদার ৫ জন ডিজাইনারকে বেছে নেবেন এবং তার মধ্যে ১জন শিকাদার ফ্যাশন গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিতে চাকরি পাবে।

সুহানি নিজের প্রোজেক্ট দেখছে, তখনি হতদন্ত হয়ে দিয়া ওর সামনে এসে দাঁড়ালো।

সুহানিঃ কি হয়েছে?

দিয়াঃ আমি কি করবো বুঝতে পারছি না।

সুহানি ভ্রু কুঁচকে তাকালো,দিয়ার গলার স্বরটা ধরা ধরা লাগছে।

সুহানিঃ কি হয়েছে।

দিয়াঃ মায়ের শরীরের অবস্থা খুব খারাপ, ডাক্তার দেখাতে হবে। একটা চাকরি পেলে ভালো হতো।

সুহানি দিয়ার দিকে তাকালো। দিয়াদের পরিবারের অবস্থা খুব একটা ভালো না, মায়ের শরীর অসুস্থ, বাবা নেয়। জমানো টাকা দিয়ার পড়াশোনার পেছনে শেষ করেছে, এখন সংসার চালানো কস্টকর হয়ে উঠেছে। তার সাথে মায়ের ডাক্তারি।

সুহানি দিয়ার অবস্থাটা ভেবে বললোঃ আচ্ছা তুই আমার প্রোজেক্ট টা নিয়ে নে।আমি অন্য একটা সাধারন প্রোজেক্ট করছি।

দিয়াঃ এটা তোর।

সুহানিঃ তো কি হয়েছে, আমি অন্য একটা কোম্পানিতে ঠিক চাকরি পেয়ে যাবো।তুই এটা নে।

দিয়াঃ সত্যি তূই আমাকে দিবি এটা আমার ধারনা ছিলো না। সত্যি তুই আমার সত্যি কারের বন্ধু।

দিয়া খুশিতে সুহানিকে জড়িয়ে ধরলো। সুহানি দিয়ার অগোচরে নিজের চোখের পানিটা মুছে নিলো।নিজের স্বপ্নটা দিয়ার হাতে তুলে দিলো।

অবশেষে সেই দিন হলো। সকলেই ধরে নিয়েছে সুহানিই চাকরিটা পাবে,তবুও ৫এর মধ্যে হবার চেষ্টা করছে। সুহানি স্টেজে আসলো,সবার মাঝেই একটা উত্তেজনা কাজ করছে, কিন্তু সুহানির প্রোজেক্ট দেখে সবার চোখ কপালে। সুহানি খুব সাধারন একটা প্রোজেক্ট তূলে ধরলো।সবার মাঝে একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, স্যার,ম্যামরাও অবাক। এরপর দিয়া নিজের প্রোজেক্ট সবার সামনে তুলে ধরলো,সকলেই চমকে উঠলো অসাধারণ একটা প্রোজেক্ট।অনুষ্ঠান শেষে,ফাস্ট হয়েছে দিয়া। সুহানি ৫ এর মধ্যেও হয়নি। সুহানি নিজেকে শান্ত রেখে দিয়াকে জড়িয়ে ধরলো।

দিয়াঃ আজকে তোর জন্য এই সম্ভব হলো,আমি সারাজীবন তোর কাছে কৃতজ্ঞ থাকবো।

সুহানিঃ হুম না। বন্ধুত্বের সম্পর্ক মাঝে এসব এলাও না জানিস না।

কেটে যায় কয়েকটি দিন।

দিয়া শিকদার কোম্পানিতে চাকরি করেছে। আর সুহানি একটা অন্য,কোম্পানিতে চাকরি করছে। সুহানিকে চাকরি পাবার জন্য খুব একটা পরিশ্রম করতে হয়নি।সুহানির ডিজাইন দেখে যেকোনো কোম্পানিই ওকে নিয়ে নেবে।

সময়ের সাথে সাথে দিয়া নোহানের প্রিয় হয়ে উঠতে চালু করলো। দিয়া দেখতে খুব মিষ্টি চেহারার।
দিয়ার মা ও কিছুদিন পরে মারা যায়। দিয়া একা হয়ে যায়,দিয়ার একাকিত্ব সময়ে নোহান আর সুহানিকে নিজের পাশে পাই। এই সময়েই দুজনে দুজনকে ভালোবেসে ফেলে। নোহান আর দিয়ার ৬ মাস আগে বিয়ে হয়। আর এখন এসব ঘটনা ঘটে গেলো।

সুহানি ধ্যান থেকে ফিরলো,নোহানের ডাক শুনে।

নোহানঃ চলো।

সুহানি চুপচাপ নোহানের পেছন পেছন ভেতরে গেলো। এটা নোহান আর দিয়ার ভালোবাসার বাড়ি আর আজ থেকে এই বাড়িতে ওকেও থাকতে হবে। সুহানির নিজের উপরে নিজের ঘৃনা হচ্ছে।

সুহানি বাড়ির ভেতরে গিয়ে চারিদিকে দিয়াকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও দিয়াকে দেখতে পেলো না। বাড়িতেও কোনো লোক নেয়,যদিও বাড়ির সদস্য সংখ্যা খুব কম। তবে অনেক মেড ছিলো তারাও কেউ নেয়। সুহানি কিরকম জানো রহস্যের গন্ধ পাচ্ছে।

নোহান সুহানিকে একটা ঘরে নিয়ে আসলো।

নোহানঃ আজ থেকে তুমি এখানেই থাকবে।

সুহানি নোহানের কথাকে পাত্তা না দিয়ে বললোঃ দিয়া কোথায়?

নোহানের মুখে আবারো রাগের আভা দেখা গেলো কিন্তু কারনটা কি?

নোহানঃ সুহানি এটা লাস্ট বারের মতো বলছি তুমি দিয়ার নাম উচ্চারন করবে না।

সুহানি অবাক হয়ে বললোঃ দিয়া আমার বান্ধবী আমি কেন দিয়ার নাম নেবো না।

নোহান রাগে সামনে থাকা চেয়ারটা ধাক্কা মেরে বললোঃ বান্ধবী মাই ফুট। তোমার মুখে আর যাই হোক বান্ধবী কথাটা মানায় না।

সুহানিঃ আমি কি করেছি।

নোহানঃ কি করেছো আর কি করোনি তার কৈয়ফিয়ত আমি তোমাকে দেবো না।তবে এটা জেনে রেখো আমার দিয়ার নাম তূমি উচ্চারণ করবে না।

নোহান রাগে গজগজ করতে করতে চলে যায়। সুহানির সবকিছুই মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। নোহানের হঠাৎ করে রাগের কারন কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।

সুহানির ফোনটা বেজে উঠলো, ও তাকিয়ে দেখলো কলটা মা করেছে।

সুহানিঃ‌ হ্যা মা বলো।

মাঃ তুই কোথায়।বললি এখনি আসছি ,কোথায় গেলি।

সুহানির মনে পড়লো আজকে সকালের ঘটনা।নোহান হঠাৎ করেই ওকে ফোন করে একটা জায়গায় আসতে বললো, সুহানি আসতে চাইনি কিন্তু নোহান জানায় খুব দরকার তাই একপ্রকার জোর করেই আসে,যদি জানতো এরকম কিছু একটা হবে তাহলে কখনোই আসতো না। নিজের উপর রাগ হচ্ছে কেন আস্তে গেলো।

মাঃ কিরে চুপ করে গেলি কেন?

সুহানিঃ মা আমি কখন বাড়ি ফিরতে পারবো জানি না।

মাঃ কেন?তুই এখন কোথায় আছিস।

সুহানিঃ দিয়ার শশুরবাড়িতে।

মাঃ কিন্তু কেন?

সুহানি কোনোরম ভনিতা ছাড়াই বললোঃ কারন নোহান শিকদার আমার স্বামী।

সুহানির মা চমকে উঠলো।অবাকের শেষ পর্যায়ে গিয়ে বললোঃ কি বলছিস এসব।

সুহানিঃ হ্যা মা ঠিক বলছি।

সুহানির মা কিছুটা উত্তেজিত হয়ে পড়লেন। দিয়াকেও উনি ওনার মেয়ের চোখে দেখতেন।

মাঃ তুই কিভাবে পারলি,নিজের বেস্টফ্রেন্ড এর সাথে এরকম করতে। কিভাবে ঠকালি দিয়াকে।

সুহানি বুঝতে পারলো এর মা উত্তেজিত হয়ে পড়ছে। মাকে শান্ত করতে বললোঃ মা চিন্তা করো না। তোমার মেয়ে কোনো অন্যায় করেনি,তোমাকে আমি সবটা বলতে পারবো না।তবে এটা জেনে রেখো তোমার মেয়ে পরিস্থিতির শিকার।

সুহানি ফোনটা কেটে দেয়। কিভাবে তার মাকে বলবে নোহান ওকে জোর করে বিয়ে করেছে। এই বিয়ে করার পেছনে কারনটা আগে জানতে হবে‌।কিছুতো একটা কারন আছে এসবের পেছনে।

সুহানির মা অসুস্থ বোধ করতে থাকে। সুহানির বাবা ওনাকে তাড়াতাড়ি বসিয়ে বললোঃ কি হয়েছে সুহার মা তুমি এতটা উত্তেজিত হয়ে যাচ্ছো কেন?

মাঃ সুহা বিয়ে করেছে।

বাবাঃ কি? কাকে?

মাঃ দিয়ার বরকে।

সুহানির বাবার পায়ের তলার মাটি সরে গেলো। তার মেয়ে শেষমেশ তারই বান্ধবীর বরকে বিয়ে করলো।

বাবাঃ এসব কি বলছো তুমি

মাঃ হ্যা সত্যি বলছি। সুহা নিজে সবটা বললো।

সুহানির মা ওনার স্বামিকে সবটা বললো।সুহানির বাবা নিজের স্ত্রীকে শান্ত রাখার জন্য বললোঃ আমাদের মেয়ে কোনো অন্যায় করতে পারে না। দেখবে এই বিয়ের পেছনে কোনো না কোনো কারন আছে।

মাঃ কি কারন,ওহ তো একজনের সংসার ভাঙছে।

বাবাঃ বাইরে থেকে কাউকে বিচার করা ঠিক না। সত্যি যদি সুহা কোনো দোষ করে থাকে তাহলে আমি সারাজীবনেও ওর মুখদর্শন করবো না। কিন্তু আমার মেয়ের উপর আমার ভরসা আছে।

সুহানির বাবার কথায় ওর মা একটু শান্ত হলেন। কিন্তু মনের মাঝে খুঁতখুঁতানি ঠিক রয়ে গেলো।

ওদিকে,
ফোনের আওয়াজ শুনতে পেয়ে নোহান আবার সুহানির ঘরে ফিরে আসলো।নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে গম্ভীর স্বরে বললঃ কে ফোন করেছিলো।

সুহানিঃ মা।

নোহান সুহানির হাতে থাকা ফোনটা কেড়ে নিলো।

সুহানিঃ কি হলো ফোনটা নিলেন কেন?

নোহান যেটা বললো,তাতে সুহানি চমকে উঠলো।

সুহানিঃ আপনি কেন করছেন আমার সাথে এরকম আমি কি করেছি।

#চলবে…

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(৩)

সুহানিঃ কি হলো জবাব দিন আমি আপনার কি করেছি,কেন এরকম করছেন আমার সাথে।

নোহানঃ সবকিছু তোমার না জানলেও চলবে,তবে এটা জেনে রাখো তুমি তোমার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করতে পারবে না। আর যদি করো তাহলে তোমার পরিবারের মানুষগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

সুহানি চমকে উঠলো। নোহান কেন এরকম করছে তার কারন ওর অজানা।

নোহানঃ সুহানি কিছু রান্না করো।

সুহানিঃ কি আমি।

নোহানঃ হ্যা তোমাকে এমনি এমনি বাড়িতে বউ করে আনিনি। আজ থেকে এই বাড়ির সব কাজ তুমি করবে।

সুহানি একটা ঢোক গিললো,এতবড়ো বাড়িটা একবার ঝাঁট দিতে গেলে সারাদিন লেগে যাবে। আর ওহ একা হাতে সবকিছু করবে কিভাবে?

নোহানঃ যাও তাড়াতাড়ি।

সুহানি রান্নাঘরে চলে গেলো। সকাল পেড়িয়ে সন্ধ্যা হয়ে গেছে।তাই সুহানি কফি করলো নোহানের জন্য,দিয়ার মুখে শুনেছিলো নোহান কফি খাই।সুহানি নোহানকে কফিটা দেবার জন্য ওর ঘরে গিয়ে দেখলো ঘরে নেয়, বেলকনি থেকে আওয়াজ আসছে তাই বেলকনিতে যাবার সময় শুনতে পেলো।

– তোমার করা প্রতিটা অন্যায়ের শাস্তি তোমাকে পেতে হবে, ঠিক আমি যেভাবে কষ্ট পাচ্ছি তুমিও ঠিক সেভাবেই তিলে তিলে শেষ হয়ে যাবে।

কথাগুলো নোহান বলছিলো,হাতে একটা ছবি নিয়ে। সুহানির পায়ের আওয়াজ শুনতে পেয়ে নোহান ছবিটা তাড়াতাড়ি লুকিয়ে সামনে তাকালো।

নোহানঃ তুমি এখানে কি করতে এসেছো।

সুহানিঃ আপনার কফি।

নোহান চোখ মুখ খিঁচে বললোঃ আমি কবি খাইনা।

সুহানিঃ কিন্তু দিয়া…

সুহানির কথাটা শেষ করার আগেই নোহান কফির মগটা ফেলে দিলো। গরম কফির কিছুটা অংশ সুহানির হাতেও পড়ে যায়। সুহানি ব্যথায় আ করে উঠলো।নোহান রক্ত চক্ষু করে সুহানির হাতটা শক্ত করে চেপে ধরে ঘরের বাইরে বের করে বললোঃ তোমাকে বারন করেছিলাম কিন্তু তুমি সেই বার বার দিয়ার নাম উচ্চারন করছো। এর ফল কিন্তু ভালো হবে না। আর তুমি এই ঘরে কখনোই আসবে না।

নোহান সুহানিকে ধাক্কা দিয়ে ঘরের বাইরে বের করে দিয়ে দরজা দিয়ে দিলো।

সুহানি পড়তে গিয়েও নিজেকে সামলে নিয়েছে।গরম কফি পড়া তার পর নোহান সেখানেই ধরাতে হাতটা লাল হয়ে আছে। সুহানি নিজের ঘরে চলে যায়। সুহানির মাথায় নোহানের তখনের কথাগুলো আসছে।

সুহানিঃ কে ওনাকে কষ্ট দিয়েছে,আর কি কষ্টই বা দিয়েছে,যার জন্য উনি একেবারে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। সবকিছু কেমন জানো দলা পাকিয়ে যাচ্ছে।

সুহানির হাতে মলম লাগিয়ে,রান্নাঘরে গেলো রাতের রান্না করার জন্য।

অন্যদিকে…

– ম্যাম নোহান স্যার সুহানি ম্যাডামকে বিয়ে করেছেন।

রাগে ফোনটাকে আছাড় মেরে বললোঃ না এটা কিছুতেই হতে পারে না। নোহান সুহানিকে বিয়ে করতে পারে না। তাহলে কি নোহান কিছু জেনে গেছে, না এটা হতে পারে না আমার এতদিনের প্ল্যান কিছুতেই শেষ করতে দেবো না। সুহানি,এই সুহানি একটা নাম আমার জীবনকে এলোমেলো করে দিচ্ছে, আমার পথের কাঁটা আমি কখনোই রাখি না। এবারেও তোমাকেও রাখবো না মিসেস সুহানি শিকদার।

কথাটা বলেই অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো‌। কোন অজানা বিপদে পড়তে চলেছে সুহানি। কে এই মেয়ে?তার সাথে কি শত্রুতা সুহানির,অনেক অনেক রহস্য জমা হচ্ছে।

রাতে নোহান আর খেতে আসেনি। সুহানি ও কিছু খাইনি আর।

পরেরদিন সকালে,,

নোহান অফিসে যাবার জন্য বের হচ্ছে।

সুহানিঃ ব্রেকফাস্ট টা করে যান।

নোহানঃ অফিসে করে নেবো।

নোহান চলে যাচ্ছিলো।

সুহানিঃ দাঁড়ান।

নোহান বিরক্ত হয়ে বললোঃ কি হয়েছে।

সুহানিঃ বলছি আমি অফিসে যাবো।

নোহান ভ্রু কুঁচকে বললোঃ কোন অফিস?

সুহানিঃ আমি যেখানে কাজ করি।

নোহানঃ কোথায় কাজ করো তুমি।

সুহানিঃ এম ডি গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রিতে।

নোহান বাঁকা হেসে বললঃ আচ্ছা যাও।

সুহানি কিছুটা অবাক হলো নোহান রাজি হবে সেটা ওর ধারনাতেই ছিলো না।‌নোহান চলে যায়, সুহানি খুশি হয়ে রেডি হতে যায় কিন্তু সমস্যা হলো একটাই সুহানির কোনো জামাকাপড় নেয় এখানে কি করে যাবে এখন। সুহানি কোনো উপায় না পেয়ে দিয়ার একটা সালোয়ার কামিজ পড়লো।

সুহানি বাড়ি থেকে বের হতে যাবে,তখনি দেখলো নোহান রাগে কটমট করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। আর ওর হাতে কয়েকটা প্যাকেট।

নোহানঃ তোমার সাহস কি করে হলো দিয়ার জামাকাপড় পড়ার।

সুহানিঃ আমি কি করবো আপনি আমাকে জোড় করে এখানে আনলেন।আমার তো কিছুই নেয় এখানে।

নোহানঃ এই নাও জামাকাপড়। কিছু দরকার লাগলে আমাকে বলবে কিন্তু কখনোই দিয়ার কিছুতে হাত দেবে না।

সুহানির হাতে প্যাকেটগুলো দিয়ে নোহান গটগট করে চলে গেলো।

সুহানিঃ এই মানুষটাকে দিয়া কিভাবে ভালোবাসলো অদ্ভুত মানুষ।

সুহানি রেডি হয়ে চলে গেলো।অফিসে গিয়ে দেখলো ওর ডেস্কে অন্য একজন বসে আছে।

সুহানিঃ কে আপনি আর এখানে কি করছেন?

মেয়েটাঃ আমি শিয়া এই কোম্পানিতে নতুন জয়েন করেছি আর এই ডেস্কটা আমাকে দেওয়া হয়েছে।

সুহানিঃ কি এটা তো আমার।

শিয়াঃ আপনি বসের সাথে কথা বলুন।

সুহানি একগাদা রাগ নিয়ে বসের দরজায় কড়া নাড়লো।

সুহানিঃ স্যার আসবো।

বসঃ হ্যা আসো।

সুহানিঃ স্যার এসব কি,আমার ডেস্কে অন্য একজন কেন?

বসঃ আসলে সুহানি তুমি আর এই অফিসে চাকরি করতে পারবে না।

সুহানি আকাশ থেকে পড়লো।

সুহানিঃ কি সব বলছেন আপনি?

বসঃ হ্যা,তোমাকে এইকাজটা থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে। তুমি আর এই অফিসে কাজ করবে না।

সুহানিঃ‌এসবের মানে কি,আমার নিজের যোগ্যতায় এখানে চান্স পেয়েছিলাম আপনি আমাকে বাদ দিচ্ছেন কেন কোনো একটা রিজন দেখান।

বসঃ আমি কিছুই বলতে পারবো না তোমাকে শুধু এটাই বলবো তোমাকে আমি কেন কোনো কোম্পানিই চাকরি দেবে না।

সুহানিঃ কেন আমি কি করেছি।

বসঃ কিছু না তুমি আসতে পারো। নাহলে আমাকে অন্য স্টেপ নিতে হবে।

সুহানির রাগে দুঃখে অপমানে চোখ থেকে পানি পড়তে লাগলো। চোখের পানিটা মুছে বের হয়ে গেলো।

সুহানি বেড়িয়ে যেতেই বস একজনকে কল করলোঃ স্যার আপনার কথা মতো কাজ করেছি।

নোহানঃ ওকে।

বসঃ স্যার একটা কথা বলছি কিছু মনে করবেন না,সুহানির মতো ডিজাইনার কোনো কোম্পানির কাছে থাকা মানে তার কপাল খুলে যাওয়া।রাখছি স্যার।

নোহান ফোনটা কেটে বললোঃ ঠিক এভাবেই তোমাকে সব দিক থেকে একা করে দেবো। একদম একা।

সুহানি বাড়ি ফিরে আসে মনটা ভালো নেয়। ফ্যাশান ডিজাইন ওর স্বপ্ন ওর ইচ্ছা। আর সেখানে চাকরিটা চলে গেলো ভাবতেই মন খারাপ হয়ে যাচ্ছে। মনটাকে ঠিক করার জন্য ডিজাইন করতে বসলো। নিজের মন খারাপ ভালো করার একটাই উপায় ডিজাইন করা,সুহানি ডিজাইন করতে করতে ডুবে গেলো,নিজের রাগ, ক্ষোভ,অভিমান,অপমান সবটা ডিজাইনের উপর ফুটিয়ে তুললো।

নোহান আজকে একটু তাড়াতাড়িই বাড়ি ফিরলো। দরজা খুলে ভেতরে গিয়ে এদিক ওদিক সুহানিকে খুঁজতে লাগলো। কিন্তু কোথাও না পেয়ে সুহানির ঘরে গিয়ে দেখলো চারিদিকে কাগজ ছড়িয়ে আছে। সুহানি কাগজের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছে। চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। গালেতে পানির দাগ আছে তার মানে কান্না করেছে।

নোহান ঘর থেকে বের হতে যাবে তখনি একটা জিনিসের উপর ওর চোখ যায়। কৌতুহল বশত সেটা তুলে নিয়ে চমকে উঠলো।

সুহানির ঘুম ভাঙ্গলো সন্ধ্যার দিকে,মাথাটার অসহ্য যন্ত্রনা হচ্ছে। মাথা ব্যথা কমানোর জন্য কফি করতে গেলো।কফি করে ড্রইং রুমে এসে দেখলো নোহান গভীর চিন্তায় মগ্ন।

সুহানিঃ কি ভাবছেন।

নোহান ধ্যান থেকে ফিরে বললোঃ না কিছু না।

সুহানি ভয়ে ভয়ে বললোঃ কফি খাবেন?

নোহানঃ দাও।

সুহানি চমকে উঠে কফির মগটা এগিয়ে দিলো। নোহান চুপচাপ কফিটা শেষ করে বললোঃ ভালো হয়েছে কফিটা।

সুহানি আলতো হেসে উঠে যেতে যাবে,তখনি নোহান পেছন থেকে বললোঃ সুহানি।

সুহানিঃ হুম বলুন।

নোহান হাতে কিছু পেপার নিয়ে বললোঃ এইগুলো তোমার।

সুহানি নোহানের হাতে কাগজ গুলো দেখে খুব অবাক হলো।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here