হৃদপিন্ড পর্ব-৩৬

#হৃদপিন্ড পর্ব-৩৬
#জান্নাতুল নাঈমা

ইমন আদর করে ক্লান্ত হচ্ছে না অথচ মুসকান আদর পেয়ে ক্লান্ত। মুখ দিয়ে অল্প আওয়াজ ও বের করতে পারছেনা। ঘনঘন শ্বাস ছেড়ে ইমনের গালে হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরলো। ইমন মুসকানের হাতে চুমু খেয়ে আবারো ডুবে রইলো তাঁর মাঝে।
“বাড়ি ফিরেছিলো তৃষ্ণার্ত হয়ে সেই তৃষ্ণা মেটাতে পারেনি বলে শুধে আসলে ভালোবাসার তৃষ্ণা মিটিয়ে নিচ্ছে ”
,
সন্ধ্যা হয়ে এসেছে ইমন নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে রেখেছে মুসকান কে।
ঘুমিয়েছে কিনা বুঝতে পারছে না।
হালকাভাবে ছাড়াতে নিতেই ইমন চোখ খুললো।
মুসকানের দিকে চেয়ে মৃদু হেসে ফিসফিস করে বললো,,,

— ভয় কেটেছে,,,নাকি আবারো ট্রাই করবো ভয় কাটানোর??

মুসকান যেনো এবার লজ্জায় কেঁদে ফেলবে।
ছাড়াতে চেষ্টা করতে নিতেই ইমন তাঁকে আবারো জাবটে ধরে ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলো।
মুসকান এক ঢোক চিপল মনে মনে ভাবলো এখন যদি আবারো পাগলামো শুরু করে আমি শেষ।
মিনমিনে স্বরে বললো,,,

— সন্ধ্যা হয়ে গেছে প্লিজ ওঠতে দিন রান্না করতে হবে। আপনিতো কিছু খাননি,,,

ইমন থেমে গেলো চোখ তুলে চেয়ে কপালে আলতো করে চুমু খেলো।

— মহারানীর খেয়াল হলো যে তাঁর মহারাজের খিদে পায়।

মুসকান অপরাধীর মতো মুখ করে রইলো।
ইমন মুসকানের জামা হাতে নিয়ে ইশারা করলো,,,
— পড়ে নিয়ে সোজা বাথরুম চলে যাও।

মুসকান বড় বড় চোখ করে নিজের কম্বল টা ভালোভাবে গায়ে জরিয়ে নিলো।
ইশ কি অসভ্য ছিঃ, পরোক্ষনেই ইমনের মাতলামো ভরা পাগলামো মনে পড়তেই শিউরে ওঠলো।
লজ্জায় মুখ লুকাতে থাকলো।

ইমন বাঁকা হেসে ওপাশ হয়ে বালিশে মুখ গুঁজে শুয়ে পড়লো।

শরীরটা ব্যাথায় টনটন করছে। অমনি শাওয়ার নিয়ে নিলো। নিচে গিয়ে রান্নাটা সেরে ফেললো।
রাত হয়ে গেছে বেশ ইমন ঘুমে আছে। এতদিন না ঠিকভাবে ঘুম হয়েছে আর না খাওয়া দাওয়া।
তাই এখন তৃপ্তি সহকারে ঘুমাচ্ছে।
মুসকানের শরীর টা ভালো লাগছে না।
বিছানাটা টানছে ভীষণ কিন্তু ইমন তো ওঠছেই না।
তাঁকে খাওয়িয়ে তারপর শুবে তাই ধীরে ধীরে বিছানার কাছে গিয়ে ডাকলো,,,

— এই যে শুনছেন খাবাড় রেডি ওঠুন এখন আটটা বাজে।

শ্যাম্পুর কড়া স্মেল পেয়ে জোরে একটা শ্বাস নিয়ে চোখ খুললো ইমন।
ভেজা চুলে তাঁর মুগ্ধময়ী কে এখন স্নিগ্ধময়ী লাগছে।
ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটিয়ে ওঠে বসলো।
পিঠে বেশ জ্বালা করছে বুকেও দাগ লেগেছে।
ইমন গাড় চোখে চেয়ে বললো,,,
বড্ড জ্বালিয়েছো এতদিন, আজ এসব না করলেও পারতে বলেই নিজের বুকের দিকে ইশারা করলো।
মুসকান অবাক হয়ে চেয়ে খামচির দাগগুলো দেখলো। কিন্তু সে এগুলো কখন করলো।
ভ্রু কুঁচকে চেয়ে বললো,,,

— আমি কখন এসব করলাম মোটেও আমি এসব করিনি।

ইমন হেচকা টান দিয়ে নিজের ওপর ফেলে কোমড় জরিয়ে চুলে নাক ডুবিয়ে বললো,,,

— ইমন চৌধুরীর গায়ে এই দাগ মুসকান ছাড়া কেউ দিতে পারবেনা মাইন্ড ইট।

মুসকান এক ঢোক চিপে ভয়ে ভয়ে বললো,,,
“আপনি শুধু আমার দোষটাই দেখলেন নিজের দোষটা দেখলেন না বলেই কেঁদে ফেললো”

ইমন চোখ খুলে মুসকানের মুখ তাঁর মুখোমুখি নিয়ে বললো এমন ছিঁচকাঁদুনি হচ্ছো কেনো।
বেশী আদর দিয়ে দিয়ে মাথায় তুলে ফেলেছি তাইনা।
বলেই মুসকানের ঠোঁটের ঝখম হওয়া জায়গাটায় হাত বুলাতে লাগলো।
মুসকান লজ্জায় মিইয়ে গেলো খুব।
সরে যেতে নিতেই ইমন ঘাড়ের সেই গাড় লাল হওয়া জায়গাটায় ঠোঁট ছোঁয়ালো।
কেঁপে ওঠলো মুসকান,,,
প্রত্যেকটা জখম হওয়া জায়গায় ইমন ঠোঁট ছুয়িয়ে বললো,,,
— যাও আদর করে দিয়েছি।
তোমার মতো হিংসুটে নই আমি।
আমি যেমন আঘাত করতে পারি তেমন ভালোবেসে পুষিয়েও নিতে পারি।
,
খাওয়া শেষে সব গুছিয়ে উপরে আসতেই ইমন দুটো টেবলেট এগিয়ে এক গ্লাস পানি দিলো।
মুসকান জিগ্যাসু চোখে তাকাতেই ইমন বললো,,,
— রেডি হও মিসেস পাঁচ দিনের সবটা উসুল করতে হবে তো,,,

মুসকান চমকে তাকালো। ইমন বাঁকা হেসে ইশারা করলো ওষুধ গুলো খেতে।
মুসকান মুখটা কাচুমাচু করে বললো,,,

— আমার খুব খারাপ লাগছে।
পুরো শরীর ব্যাথায় অবশ হয়ে যাচ্ছে।
আর কিছু করবেন না প্লিজ।

ইমন দুষ্টু হাসি দিয়ে কড়া চোখে ইশারা করলো ওষুধ খেতে।
মুসকান কাঁদো কাঁদো মুখ করে খেয়ে নিলো।
ইমন গ্লাসটা রেখে মুসকানকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়িয়ে দিলো।
মুসকানের হাত পা কাঁপছে। শুধু তাঁর শরীরের কাঁপুনি নয় বুকের ভিতরের কাঁপুনিও অনুভব করছে ইমন।
গায়ে কম্বল জরিয়ে মুসকান কে টেনে নিজের বুকের সাথে মিশিয়ে নিয়ে কানের পিঠে কিস করে বললো,,,

— ওগুলো শরীর ব্যাথা, জ্বরের ওষুধ ছিলো।
এবার ঘুমাও কাল অফিসের লোকজন আসবে এ কদিনে অফিসের অনেক কাজ জমে আছে।
ফ্রাইডে থাকায় বাড়িতেই ডেকেছি। বুয়া আসবে তুমি শুধু দেখিয়ে দিবে কি কি করবে ওকে।

মুসকান স্বস্থির এক শ্বাস ছাড়লো।
— মানুষ কতোটা ভালো হতে পারে। নিজের বোনের সাথে এতো বড় একটা জঘন্য ঘটনা ঘটে গেলো যার জন্য তাঁকেই কিনা এতটা আগলে রাখছে।
অথচ আমি ভয়ে ভয়ে মরেই যাচ্ছিলাম।
যে ওনি আমায় আর ভালোবাসবে না।
আমায় অপরাধী ভেবে দূরে ঠেলে দিবে ওদের মতোই আমাকে আঘাত করবে।

ইমনের বুকে পরম আবেশে মুখ গুঁজে ঘুমিয়ে পড়লো মুসকান।

মাঝরাতে ফুঁপানির শব্দে ঘুম আলগা হয়ে গেলো ইমনের। ভ্রু কুঁচকে মুসকানের দিকে তাকালো।
হ্যাঁ মুসকান কাঁদছে,,,
— কেনো কাঁদছে ব্যাথা কমেনি??
কপাল চেক করতে দেখলো স্বাভাবিক তাপমাত্রা।
নরম স্বরে বললো মুসকান,,,
— কি হয়েছে??

মুসকান কিছু বললো না তাঁর বুকে মুখ গুঁজে কেঁদেই চলেছে। বুঝলো মনস্তাত্ত্বিক সমস্যা।
ইমন আদুরে গলায় বললো,,,

— কি হয়েছে বলো? মায়ের কথা মনে পড়ছে?

— আপনি আমায় ও বাড়ি কেনো নিয়ে যাচ্ছেন না।
সবাই আমাকে অপরাধী ভাবছে তাইনা,ইয়াশফা আপুও বলেই হুহু করে কাঁদতে লাগলো।

ইমন এক দীর্ঘ শ্বাস ছাড়লো।
মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,,,

— এমনটা নয় মুসকান। কেউ তোমায় অপরাধী ভাবছে না। যারা অপরাধী সবাই তাঁদেরকেই অপরাধী ভাবছে।

মুসকান রেগে গেলো। জোর গলায় বললো,,,

— তাহলে আমাকে নিয়ে চলুন। আমি ওখানে যেতে চাই।

ইমনের মেজাজ গরম হয়ে গেলো। বার বার নিষেধ করার পরও মাঝরাতে সিনক্রিয়েট শুরু করেছে।
ইদানীং যে সব আচরন করছে সবটাই অস্বাভাবিক।
যেখানে ওর শুধু ইমনকে নিয়ে ভাবা উচিত সেখানে অন্যদের নিয়ে এতটাই মগ্ন যে কতটা খারাপ আচরন করে ফেলছে নিজেও জানেনা।
ইমনের কাছে এই মূহুর্তে মুসকান কে চরম বেয়াদব একটা মেয়ে লাগছে।
চোখ তুলে কথা বলার সাহস যে মেয়ে দেখায় না সেই মেয়ে এমন গর্জন ছাড়ে কি করে।
রাগ ওঠে গেলো ভীষণ।
দুহাত বিছানায় নিজের দু’হাতে চেপে মুখোমুখি হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,,,

— আর একটা কথা তুমি বলবে না।
অসভ্যতামির একটা সীমা আছে। আমি যখন বলেছি তুমি ও বাড়ি যাবে না তো যাবে না,,,আমি যদি বলি এই চারদেয়ালে সারাজীবন বন্দী থাকবে তুমি।
তাহলে কারো সাধ্য নেই এখান থেকে বের করার।
সো,,, নিজেকে সংযত রাখো।

ইমন মুসকানের থেকে সরে ওপাশ হয়ে চোখ বুজে রইলো। রাগটা নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা করছে সে।
মুসকান ও পিছন ঘুরে চোখের পানি ফেলতে লাগলো।

,
ইয়াশফা শারীরিক ভাবে অনেকটাই সুস্থ।
আজ সকাল থেকে বেশ অন্যমনস্ক আছে সে।
কিছু খাচ্ছেও না, নিপ্রা ইমনকে মেসেজ করে জানাতেই ইমন অফিস থেকে সোজা তাঁদের বাড়ি চলে গেলো।

চলবে….
এটুকু লিখে রাখার পর আর লিখতে পারিনি। অসুস্থ হয়ে পড়েছি একটু। যেহেতু গল্পটা শেষের দিকে সেহেতু আজকে ছোট করেই দিয়ে দিলাম।
লাষ্ট পার্ট টা অবশ্যই বড় হবে। ছোট হওয়ায় কারো খারাপ লাগলে দুঃখীত।
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here