হৃদপিন্ড পর্ব-২০
#জান্নাতুল নাঈমা
কী মজা, কী মজা মামাই মুসু আন্টিকে আদর করছে, পাপ্পি দিচ্ছে।
সুপ্তির খিলখিল করে হাসি আর হাত তালির আওয়াজ শুনে মুসকান ছিঁটকে দূরে সরে গেলো ইমনের থেকে। লজ্জায় তাঁর পুরো শরীর অবশ হওয়ার উপক্রম। ইমন সুপ্তিকে একবার আরেকবার মুসকানকে দেখে অসহায় ভঙ্গিতে চেয়ে হালকা কেশে ওঠলো। সুপ্তি আর এক মূহুর্ত দেরী না করে দৌড়ে নিচে চলে গেলো আর বলতে লাগলো কি মজা, কি মজা মামাই মুসু আন্টি কে আদর করছে,,,চুমু খাচ্ছে।
দিহান, তাহিয়া বেগম আর তিন্নি বসে আছে।
সায়রী রান্নাঘরে আছে বুয়ার সাথে হঠাৎ সুপ্তি দৌড়ে এসে দিহানের কোলে চেপে বসলো।
বাবাই, বাবাই জানো মামাই মুসু আন্টি কে আদর করছে আর এইভাবে চুমু খাচ্ছে বলেই ইমনের মতো করেই দিহানকে চুমু দিলো কপালে,গালে।আর খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
তিন্নি চোখ বড় বড় করে চেয়ে এক ঢোক গিললো। লজ্জায় শেষ, তাহিয়া বেগম অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেলো সুপ্তির কথা শুনে। প্রথমে ভাবলো বাচ্চা মানুষ আবার ভাবলো নাহ বাচ্চারা তো মিথ্যে বলে না। এই মুসুটা আবার কে??
,
মুসকান নিচে আসতেই সবাইকে দেখে সালাম দিয়ে রান্নাঘরের দিকে যেতে নিলো অমনি সুপ্তি বললো মুসু আন্টি তুমি আজ অনেক হ্যাপি,,, মামাই তোমায় কত্তো ভালোবাসা দিলো হিহিহি।
মুসকান লজ্জায় দ্রুত রান্নাঘরে চলে গেলো।
দিহান সুপ্তি কে থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো।
জোর পূর্বক হেসে মায়ের দিকে তাকালো।
তাহিয়া বেগম ভ্রু কুঁচকে চেয়ে আছে, তিন্নি বেশ অস্বস্তিতে ভুগছে মা ভাইয়ের সামনে এসব কথা শুনে।
দিহান গলা খাকারি দিয়ে বললো মা মানে হয়েছে কি,,,
ওর নাম মুসকান। ইমনের হবু বউ।
তাহিয়া সহ তিন্নি দুজনেই হকচকিয়ে গেলো।
–হবু বউ মানে মেয়েটা তো ইমনের থেকে বেশ ছোট স্কুলে পড়ে মনে হচ্ছে।
–আরে না কি বলছো এবার তিন্নির সাথেই।
–তবুও ও তো ছোট আর এর সাথে ইমন। ইমন ওকে কিভাবে চেনে?
–সব বলবো মা আগে তুমি সায়রীকে ম্যানেজ করো প্লিজ।
–সে জন্যই তো এসেছি বাবা তুই চিন্তা করিস না।
তিন্নি যা তো সায়রী কে নিয়ে আয় এখানে।
,
রাত দশটা ছুঁই ছুঁই রাতের খাবাড় খেয়ে সায়রী ছাদে হাঁটাহাটি করছে। আর ভাবছে বিষাক্ত অতীতের সেই দিনগুলোর কথা হঠাৎ ই ফোনটা বেজে ওঠলো রিসিভ করতেই দিহান বললো কি করছিস??
রাত করে ছাদে হাটাহাটি না করে রুমে যা ঠান্ডা লেগে যাবে।
–আমি কি বাচ্চা নাকি আমার ভালো টা আমি বুঝি তোকে ভাবতে হবে না।
–তুই তো বাচ্চাই তুই এক বাচ্চার মা বলে কি মাথা কিনে নিয়েছিস নাকি?? এখন এক বাচ্চার মা কদিন পর আরেকটা বাচ্চার মা হবি সুপ্তিও ওর ভাই বোন পেয়ে অনেক হ্যাপি হবে। তোর ঘরভর্তি ছেলে মেয়ে হলেও তুই আমার কাছে বাচ্চাই থেকে যাবি বুঝলি।
সায়রী খানিকটা লজ্জা পেয়ে গেলো। কানের পিঠে চুল গুজে মলিন হাসলো।
–বাহ কতোদিন পর এই মিষ্টি হাসিটা দেখছিরে,,,
সায়রী হকচকিয়ে গেলো।
নিচে চাইতেই ল্যামপোস্টের আলোতে দিহানকে দেখতে পেলো কালো জ্যাকেট, সাদা প্যান্ট পড়া একহাত পকেটে রাখা আরেক হাতে ফোন ধরে আছে এক গাল হেসে তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে।
–এই বয়সে এসে এতো টা এমন মানায় না দিহান বাড়ি যা।
–এই বুড়ি প্রেম,ভালোবাসার কি বয়স আছে নাকি। ইমন আর মুসকান কে দেখছিস না।
–কিহ,তুই আমাকে বুড়ি বললি, শয়তান ছেলে ফোন রাখ একদম ফোন দিবি না।
–তুই তো বুড়িই এতে কি তোর কোন সন্দেহ আছে নাকি। আমাকে দেখ এখনো ক্লাশ 11, 12এর মেয়েদের প্রপোজ পাই। তিন্নির বান্ধবী একটা তো আমার জন্য দিওয়ানা।
–ইশ কি চয়েজ রে তাঁদের। ছিঃ,
–এই মুখ সামলে কথা বল বলছি। তোকে বিয়ে করতে চাই বলে আমাকে এতো ফেলনা ভাবিস না।
–ওও তুই কি আমাকে ফেলনা ভাবসিস শোন এখনো এই সায়রীর পিছনে ছেলের অভাব নেই। স্কুলের কয়টা টিচারের প্রপোজ পেয়েছি জানিস।
আর ঐ রুবেলের কথা মনে নেই বেচারা এখনো বিয়ে করছে না একটা আশায় যে আমি ওকে দয়া করে হলেও মেনে নেবো।
–কি,,, রুবেল তুই এবার শেষ।
বলেই ফোন রাখতে নিতেই সায়রী বললো এই এই কি বলছিস। কোন ঝামেলা করবিনা দিহান।
দিহান ভূবন ভুলানো হাসি দিয়ে বললো তাহলে মায়ের প্রস্তাবে তুই পজিটিভ উওর দে জান। তুই যা বলবি তাই হবে। আর উওর নেগেটিভ হলে বাচ্চা হারাবি, রুবেলকে হসপিটালের বেডে দেখবি প্লাস নিজের জব হারাবি আর নিজেকে এক গুহায় বন্দি পাবি৷ এই শহড়ে ইমন ছাড়া কেউ নেই তোর।
আর ইমন যা করবে তোর আমার, আমাদের মেয়ের ভালোর জন্যই। এবার বল উওর টা কি??
সায়রী চুপ হয়ে গেলো ফোন রেখে দিতে নিতেই দিহান বললো -সায়রী যে সময়টা চলে গেছে সেই সময়টা আমরা কেউ আর ফিরে পাবো না। আমাদের জীবন থেকে পাঁচ টা বছর নষ্ট হয়ে গেছে আর নষ্ট করতে চাইনা। সুপ্তিকে আমি আর পাঁচ টা শিশুর মতোই স্বাভাবিক জীবন দিতে চাই।
দোস্ত তুই সুপ্তির জন্য সবটা মেনে নে না।
আই প্রমিস ইউ তোকে আমি স্পর্শ করবো না।
স্বামীর কোন অধিকার ফলাবো না। আমরা দুজন বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলাম, আছি আর সারাজীবন তাই থাকবো। শুধু সুপ্তির বাবা হতে চাই প্লিজ দোস্ত।
আমি এখন সিরিয়াস একটুও ফান করছি না বিলিভ মি।
শুধু তোর সাথে জীবনের শেষ দিন অবদি কাটাতে চাই।
জীবনসঙ্গী হিসেবে তোকে পাশে চাই।
দেখ সুপ্তি তাঁর বাবা কে পাবে।দাদী,দাদা,ফুপি সব পাবে। পুরো একটা পরিবার পাবে বাবা, মা-কে একসাথে একি ছাদের নিচে পাবে। ওর সেই আনন্দ টা দেখার লোভ আমি সামলাতে পারছিনা। ওর মুখে বাবাই ডাক টা কে চিরস্থায়ী করতে চাই প্লিজ দোস্ত তুই আমার মেয়ের থেকে আমায় আলাদা করিস না।
সায়রীর চোখে পানি চিকচিক করছে এক ঢোক গিলে কিছু বলতে নিতেই দিহান আবারো বললো ছন্নছারা জীবন দিয়েই তো চলে গিয়েছিলাম। কেমন ছিলি সবটাই জানি আমি কেমন ছিলাম সেটাও আমি জানি। এভাবে বাঁচা যায় না সায়রী।
প্রত্যেকটা মানুষের জীবনেই একজন জীবনসঙ্গীর প্রয়োজন হয়।
বই পরিসনি নারী,পুরুষ একটি গাড়ির দুইটা চাকার মতো। একটা চাকা না থাকলেই গাড়িটা চলতে পারেনা দোস্ত। মানুষের জীবনও তেমনি যে নারীর জীবনে কোন পুরুষ স্থায়ী ভাবে না থাকে সেই নারীর জীবনটাই বৃথা। ঠিক তেমনি পুরুষের জীবন ও।
নারী পুরুষ একে অপরের পরিপূরক।
একজন মা বাবা ছাড়া তাঁর সন্তান কে কিভাবে মানুষ করে সেটা আমি জানি। হয়তো হাতে পায়ে বড় করতে পারে সব দিতে পারলেও ঘাটতি থেকেই যায়।
একটা শিশুর জন্য মা যতোটা জরুরি বাবা ঠিক ততোটাই জরুরি। তাই সুপ্তিকে আমি কোন কিছু থেকে বন্চিত করতে চাইনা,স্পেশালি ভালোবাসা থেকে।
“সমাজ ছাড়া যেমন মানুষ একা একা বাঁচতে পারেনা তেমনি ব্যাক্তিগত জীবনেও মানুষ একা বাঁচতে পারেনা । সব মানুষের ই একটা ব্যাক্তিতিগত মানুষের প্রয়োজন হয়”।
মনে রাখিস “আমাদের জীবন থেকে বন্ধু চলে গেলে আরেকটা বন্ধু আসবে,তুই আমি আজকে ভালো খাবাড় খাচ্ছি কাল মন্দ খাবাড় জুটতে পারে। আজ মাংস খাচ্ছি কাল লবন ভাত জুটতে পারে। আজ বাড়ি, গাড়ি টাকা পয়সা,সোনাদানা আছে কাল নাও থাকতে পারে। আবার পর্শু এসব কিছু আবার পুনরায় ফেরত আসতে পারে । কিন্তু তোর জীবন থেকে যদি একটা মানুষ চলে যায়। প্রচন্ড অভিমান নিয়ে যদি তোর জীবন থেকে এই পৃথিবী ছেড়েই চলে যায় সে কিন্তু আর ফিরে আসবে না।
“সময় গেলে সাধন হয় না” তোকে আমি আজকে রাত সময় দিলাম ভাবার জন্য বলেই ফোন রেখে দিলো।
,
বেলকুনিতে বসে কাজ করছে আর সিগারেট খাচ্ছে ইমন। মুসকান তাঁর পাশেই বসা ছিলো।
ইমন ইশারা করতেই মুসকান গিয়ে মদের বোতল নিয়ে ট্রি টেবিলে রেখে জগ আর গ্লাস নিয়ে এলো।
ইমন কাজ অফ রেখে বেশ অন্যমনস্ক হয়ে গেলো।
আর বললো এগুলো রেখে আসো খাবো না খেতে ইচ্ছে করছে না।
মুসকান খানিকটা অবাক হলেও গিয়ে আবার সব রেখে আসলো। চুপচাপ এসে বসলো ইমনের পাশে।
–কি ভাবছো, আমি ওটা কেনো খেলাম না??
মুসকান চমকে গেলো।
সে সত্যি এটাই ভাবছে,,,
ইমন ওঠে দাঁড়ালো বেলকুনির রেলিঙের উপর হাত রেখে দূর আকাশে জ্বল জ্বল করা অনেক তাঁরার ভীড়ের সেই একটি চাঁদের ওপর দৃষ্টি স্থির রাখলো।
–ঐ চাঁদ টা যেমন রাতের বিদঘুটে অন্ধকার দূরে সরিয়ে দিয়েছে, ঠিক তেমনি তুমিও আমার জীবনের সেই বিদঘুটে, বিষাক্ত অন্ধকার টা দূরে ঠেলে দিয়েছো।
জোৎস্নার আলোর মতো আলোকিত করেছো আমার জীবন।
মুসকানের বুকের ভিতরটা ধক করে ওঠলো।
লজ্জায় গাল দুটো লালিমা আভায় ভরে গেলো।
বসা থেকে ওঠে দাঁড়ালো ইমনের পাশে গিয়ে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলো। কান দুটো যেনো ইমনের মুখের ওপর বসিয়ে রাখা। যেই সে কথা বলবে অমনি তাঁর কানের ভিতর ঢুকাবে সেখান থেকে মস্তিষ্কে কথাগুলো অটল রাখবে সেখান থেকে তাঁর ছোট্ট হৃদয়ে যত্ন করে রেখে দেবে তাঁর জীবনের মহাপুরুষ টির বলা প্রত্যকটা বানী।
–আমার জীবনে আগে কোন লক্ষ ছিলো না।
ছিলোনা বাঁচার কোন আগ্রহ। দিন চলছে তো চলছেই। রাত যাচ্ছে তো যাচ্ছেই। বিজনেস করছি সুনাম অর্জন করছি ব্যাস এইটুকুই এর বাইরে কোন চাহিদা ছিলো না। কিসের চাহিদা থাকবে আমার তো পরিবারই ছিলো না। ওহ সরি,,,পরিবার থেকেও নেই।
এই বিশাল পৃথিবী তে যার বাবা,মা নেই সেই বুঝে পৃথিবীতে বেঁচে থাকা কতোটা কষ্টের কতোটা যন্ত্রণার।
আমার সব থেকেও কিছু নেই। জীবনটা ফিকে মনে হতো। এই ঘর,এই বাড়ি,গাড়ি টাকা-পয়সা দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হাসতাম সব সময়। কি হবে এগুলো দিয়ে, কি করবো এগুলো দিয়ে। নিঃশ্বাসটা বন্ধ হয়ে গেলেই তো সব ছেড়ে চলে যেতে হবে। কেউ থাকবে না আমার যার এসবের দায়িত্ব নেবে। কেউ থাকবে না যে আমার স্মৃতি মনে রাখবে, এমন কেউ থাকবে না যে নামাজে দাঁড়িয়ে দুহাত তুলে আমার জন্য রবের নিকট পার্থ্যনা করবে। এমন কেউ থাকবে না যে আমার কবরের পাশে বসে এক ফোঁটা চোখের পানি ফেলবে।
ভাবতাম কোথায় পাবো স্বার্থহীন একটা নিষ্পাপ প্রান। এই শহড়ে সবাই ছলনা করে বেড়ায়। এমন কে আছে যে আমাকে আমার মতো করে বুঝবে কেউ নেই। জীবনের মায়াটা করা তখনি বাদ দিয়েছি।
নিজেকে মদের নেশায় মত্ত রেখেছি। এটাই ছিলো নিস্তব্ধ রাতের একমাএ সঙ্গী আমার।
এমনই একটা লক্ষহীন, আশা,ভরসা, ভালোবাসা হীন জীবনে দমকা হাওয়ার মতো চলে এলে তুমি।
ধীরে ধীরে উপরওয়ালা বুঝিয়ে দিলো তোর জীবনের লক্ষ এবার বদলানোর সময় এসে গেছে।
তোর জীবন এখন অন্যকারো সাথে বাঁধার সময় এসে গেছে।
“লক্ষহীন মানুষ দুনিয়াতে বেঁচে থাকতে পারেনা।
আর যারা বাঁচে তারা জীবন্ত লাশ হয়ে বাঁচে”
বাঁচতে হলে তোমাকে নির্দিষ্ট একটা লক্ষ নিয়ে বাচঁতে হবে।
আমিও জীবন্ত লাশ হয়ে বেঁচে ছিলাম।
কিন্তু এখন আমি প্রতি পদে পদে ফিল করি আমার বাঁচতে হবে দীর্ঘ এক সময় পার করতে হবে আমার এই মানুষ টার সাথে।
মুসকানের দিকে তাকালো, মুসকানের অঝড়ে কান্না দেখে ইমন চোখ সরিয়ে নিলো।
পরোক্ষনেই মুসকানের দিকে ফিরে মাথায় হাত রেখে বললো কেঁদো না মুসকান। আমাদের জীবনে দুজনকে এমন ভাবে এগুতে হবে যাতে কোন কষ্ট আমাদের ছুঁতে না পারে। আর যদি কোন কষ্ট চলে আসে তাহলে যেনো দুজনই সেটার মোকাবিলা করতে পারি।
তোমাকে অনেক বড় হতে হবে। আমার দায়িত্ব নিতে হলে তোমায় অনেক বড় হতে হবে। মানসিকভাবে নিজেকে আরো অনেক স্ট্রং করতে হবে।বলেই গালের পানি বুড়ো আঙুলে মুছে আবারো একি ভাবে দাঁড়ালো।
আমার এখন বাঁচতে ইচ্ছে করে যা আগে করতো না।
আগেতো আমার কাছে মুসকান নামের এই নির্মল প্রানীটা ছিলো না। আমার কাছে এতো স্নিগ্ধতা,মুগ্ধতা ভরানো মুখটা ছিলো না।
এখন আছে যার জন্য আমার খুব বাঁচতে ইচ্ছে করে।
আমার ছোট্ট একটা সংসার সাজাতে ইচ্ছে করে।
আমার জীবনে এখন লক্ষ স্থির হয়ে গেছে।
“মদের নেশার থেকেও ভয়ংকর নেশা প্রতি পদে পদে গ্রাস করছে আমায়”
মদের নেশা আমাকে নিঃশ্বেষ করে দেবে। আর এই নেশা আমাকে নতুন করে বাঁচতে শেখাবে।
মুসকান কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বললো আসুন না আমরা সংসার করি। আমরা খুব ভালো থাকবো চলুন না আমরা বিয়ে করে নেই। দাদী তো বলেছে বিয়ে হয়ে গেলেই আর কেউ আমাদের দিকে আঙুল তুলবে না।
আপনি কেনো এটা করছেন না বলেই কাঁদতে লাগলো।
ইমন মুসকানের হাত ছাড়িয়ে বললো বোকার মতো কাঁদছো কেনো। এখনো তুমি অনেকটা ছোট বিয়ের বয়স হলে তো বিয়ে করবো এমনি এমনি রেখে দেবো নাকি।
মুসকান শান্ত হয়ে ইমনের দিকে তাকালো উৎসুক কন্ঠে বললো দাদীর তো নয় বছরে বিয়ে হয়েছে।
আমাদের গ্রামে আমার বয়সি অনেকের হয়তো ছেলে -মেয়েও হয়ে গেছে। তাহলে আমারো বিয়ের বয়স হয়েছে।
ইমন হকচকিয়ে গেলো। এই প্রথম কোন মেয়ে এভাবে বিয়ের প্রস্তাব দিচ্ছে নেহাতই ছেলেমানুষ। নয়তো এভাবে বলতে পারতো না ভেবেই মুচকি হাসলো।
তাঁর এই হাসিতে মুসকানের সাহস যেনো একটু বেড়ে গেলো।
–আমাদের ক্লাশের এক মেয়ের ও তো নাইনে বিয়ে হয়েছে। কতো মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে তাঁরা বয়ফ্রেন্ডের সাথে স্বামী-স্ত্রীর মতোই থাকে। ওরা যদি আমার বয়সি হয়ে এতো সব পারে আমি কেনো পারবো না। আমি রান্না, পারি, ঘর গোছাতে পারি, কাপড় ধুতে পারি। আপনার সব কাজই তো আমি করে দিতে পারি। শুধু আপনার বউই না আমি বলেই মন খারাপ করলো ভীষণ।
ইমন আড় চোখে একবার চেয়ে আবার দৃষ্টি দূরে স্থির রাখলো।
মুসকান আবারো বলতে লাগলো।
–দেখুন আমাদের সাথে যে মেয়েটা পড়তো নাইনে ওর নাম তমা। হাইটে আমার এইটুক বলেই হাত কাধ অবদি করলো।
ওর স্বামী ইয়া লম্বা আর ও এইটুক ছিলো তবুও তো ওকে বিয়ে করেছে। আমিতো ওর থেকে একটু বড়ই তাহলে আমারো বিয়ের বয়স হয়েছে তাইনা বলুন।
আমি তো সবার থেকে বেশী কাজ করতে পারি। বলেই হাতের কড় গুনে গুনে বলতে লাগলো ঘর সামলাতে পারি,রান্নাঘর সামলাতে পারি।
আপনার কাপড়চোপড় সবটা সামলাতে পারি।
ইমন নিজেকে আর স্থির রাখতে পারলো না।
মুসকান কে এক ঝটকায় নিজের কব্জায় নিয়ে নিলো। গাঢ় দৃষ্টি রেখে বললো আমায় সামলাতে পারবে,,,
মুসকান ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে রইলো। কথাটার উওর মনে এনেই মুখে নিয়ে নিলো।
–কেনো সামলাতে পারবো না। আপনার সবটা তো আমিই দেখি আমি সব সামলাতে পারবো।
ইমন চোখ সরিয়ে মনে মনে বললো কথার মানে বুঝারই বয়স হয়নি সে আবার আমাকে সামলাবে।
দূর এর সাথে কথা বলা মানেই সময় নষ্ট।
বিয়ে করবে বিয়ে করবে বিয়ের বুঝে টা কি বলেই হাত আলগা করে দিলো৷ মুসকান মনটা ভাড় করে ঠিক হয়ে দাড়ালো।
–যাও গিয়ে ঘুমাও অনেক রাত হয়েছে।
মুসকান মাথা নিচু করেই বললো আপনি বিয়ে করবেন না,,,
–যাও ঘুমাও গিয়ে।
মুসকান বড্ড অবাধ্য হয়ে আবারো বললো বলুন না বিয়ে করবেন না।
এবার ইমন বেশ রেগে গেলো।
–এই বিয়ে বিয়ে করছো কেনো বিয়ে মানে বুঝো। যাও রুমে যাও ।
–আমি সব বুঝি, আপনি বিয়ে না করলে সবাই আমাকে আজে বাজে কথা বলে, আপনাকে খুব বাজে কথা বলে এসব আমি সহ্য করতে পারিনা। বলেই কাঁদতে লাগলো।
ইমনের ধৈর্যের বাঁধ যেনো ভেঙে গেলো।
মুসকানকে একটান দিয়ে নিজের অনেকটা কাছে নিয়ে নিলো।
দুগালে শক্ত করে দুহাতে চেপে বললো বিয়ে করবে,,,
মুসকান ড্যাব ড্যাব করে চেয়ে মাথা নাড়ালো।
ইমন বললো একটা ছেলে মেয়ের বৈবাহিক সম্পর্ক বিষয়ে কি বোঝ তুমি। এইটুকুন মেয়ে সব সামলাবে বড় বড় কথা তাইনা। ওকে পাঁচমিনিট সামলাও আমায় বলেই মুসকানের ঠোঁট জোরা নিজের দখলে নিয়ে নিলো।
চলবে………..