হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৩) #Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

#হৃদকোঠোরে_রেখেছি_তোমায়🖤(২৩)
#Maisha_Jannat_Nura (লেখিকা)

(৫৭)
সন্ধ্যাকে ওর রুমে শুইয়ে দিয়ে কুশল আবারও নিচে চলে আসে৷ সায়মন, রিজভী, সাগরিকা চৌধুরী ড্রয়িংরুমেই উপস্থিত আছেন। কুশল পুলিশ অফিসার এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো…

—“নিলাদ্র গতকাল সন্ধ্যায় আমাকে কল করেছিলো। বিশেষ কিছু কাজে শহরের বাহিরে যাওয়ার ছিলো ওর। কিন্তু এরপর চোখের পলকে কি থেকে কি হয়ে গেলো! যদি জানতাম আজ এমন একটা দিন দেখতে হবে তাহলে গতকাল আমি ওকে একা কোথাও যেতে দিতাম না। আমি আমার সবথেকে ভালো বন্ধুকে এভাবে হারিয়ে ফেলতাম না।”

রিজভী কুশলের পাশে এসে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে একহাত রেখে আফসোসের কন্ঠে বললেন…..

—“যার মৃ*ত্যু যেখানে লেখা আছে, থাকবে তার মৃ*ত্যু
সেখানেই হবে বাবা। তুমি আমি সাথে থাকলেও মৃ*ত্যু*র হাত থেকে আমরা কাওকে কখনও বাঁচাতে পারবো না। নিলাদ্রের এমন আকস্মিক মৃ*ত্যুর কারণে আমরা ভিষণ ব্যথিত। ওকে তো আমরা আমাদের পরিবারেরই একজন সদস্য হিসেবে মনে করে এসেছি সবসময়। তোমার মনের অবস্থাও আমরা কিছুটা আন্দাজ করতে পারছি। তবুও বলবো মনকে শক্ত করো। এভাবে ভে*ঙে পড়ো না। আল্লাহ নিলাদ্রকে জান্নাত বাসী করুণ।”

কুশল নিরব হয়ে দাড়িয়ে নিজের দু’হাত মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে। সায়মন শান্ত স্বরে বললেন…..

—“অফিসার আপনারা নিলাদ্রের লা*শ ওর পরিবারের কাছে পৌঁছে দিন। লা*শে*র যে বি*ভ*ৎ*স অবস্থা হয়েছে দ্রুতই দা*ফ*ন কার্য সম্পন্ন করতে হবে। আমি আপনাকে নিলাদ্রের বাসার ঠিকানাটা বলে দিচ্ছি।”

অতঃপর পুলিশ কনস্টেবল দু’জন নিলাদ্রের লা*শ নিয়ে চৌধুরী মেনশনের বাহিরে চলে যায়। পুলিশ অফিসার ও সায়মন ও তাদের পিছন পিছন বেড়িয়ে যায়। রিজভী নিজের রুমের দিকে পা বাড়ায়। সাগরিকা চৌধুরী সোফায় গিয়ে বসে পরে। কুশল নিজের জন্য নির্ধারিত সোফায় গিয়ে বসে পরে। কিছুসময় পর একজন মধ্যবয়সের ডাক্তারকে নিয়ে সায়মন মূল দরজা ভিতরে প্রবেশ করে। কুশল বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ডাক্তারকে নিয়ে কুশল ও সায়মন সিঁড়ি বেয়ে উপরে সন্ধ্যার রুমের যাওয়ার উদ্দেশ্যে হাঁটতে শুরু করে।

(৫৮)
সন্ধ্যা এখনও সেন্সলেস হয়ে আছে। সন্ধ্যার মাথার একপাশে বসে আছে সাবরিনা, আরেকপাশে বসে আছে তরুনিমা। সাবরিনার পাশে দাঁড়িয়ে কামিনী নিজের বিনুনি নাড়াতে নাড়াতে বললেন….

—“আজ এমন একটা ঘটনা না ঘটলে তো জানতেই পারতাম না নিলাদ্র ৬ বছর ধরে সন্ধ্যার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। এই কারণেই সন্ধ্যার পরীক্ষার রেজাল্ট সবসময় খারাপ এসেছে। ছেলেটা আমাদের মেয়েটার মাথা চি*বি*য়ে খে*তো সবসময়। ম*রে গিয়েও তো আমাদের মেয়েটার পিছু ছাড়লো না, ওর শোকে আমাদের ভো*লা-ভা*লা মেয়েটা পা*গ*ল না হয়ে যায়।”

সাবরিনা রাগী স্বরে বললেন….
—“আহহহ কামিনী, থা*মো তুমি এবার। বাড়িতে একটা শো*কের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আর তুমি কিনা এমন পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়েও নিজের নিচ চিন্তাধারার বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছো।”

সাবরিনার কথায় কামিনী কোনো প্রতিত্তুর না করে মুখ বাঁ*কিয়ে জোরে জোরে বিনুনী নাড়াতে থাকে। তরুনিমা সন্ধ্যার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে ওর দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে।

সেইসময় কুশল আর সায়মন ডাক্তারকে নিয়ে সন্ধ্যার রুমে প্রবেশ করে। তরুনিমা সন্ধ্যার মাথার পাশ থেকে উঠে কুশলের পাশে এসে দাঁড়ায়। ডাক্তার সন্ধ্যাকে চেকআপ করে একটা ইনজেকশন পু*শ করে দিয়ে বললেন…….

—“যেহেতু খুব বড় একটা শ*কড পেয়েছেন তাই পেশেন্টের মানসিক ভাবে সেরে উঠতে লম্বা সময়ের প্রয়োজন। এমন অনেক পেশেন্ট আছেন যারা মানসিক ভাবে ভে*ঙে পড়লে নিজের শারীরিক বড়-ছোট ক্ষ*তি করে ফেলেন। তাই এইসময় ওনাকে একলা ছাড়া উচিত হবে না। বিভিন্ন আনন্দদায়ক, মন ভালো হওয়ার মতো বিষয় গুলো ওনার সামনে বেশি করার চেষ্টা করবেন। এতে পেশেন্ট মানসিক ভাবে দ্রুত স্বাভাবিক হতে পারবে। আমি আপাতত একটা ঘুমের ঔষধ ইনজেক্ট করে দিয়েছি। তাই উনি এখন কিছুসময় ঘুমাবেন। চিন্তার কোনো কারণ নেই।”

এই বলে ডাক্তার বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়ায়। সায়মন ডাক্তারকে নিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়।

(৫৯)
তরুনিমা কুশলের হাত ধরে সন্ধ্যার রুম থেকে বেড়িয়ে নিজেদের রুমে প্রবেশ করে ভিতর থেকে দরজা আটকে দেয়। কুশল ড্রেসিং টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে হাত দিয়া নিজের চুলগুলো ঠিক করতে থাকে। তরু কুশলের পাশে এসে ওর উপর নিজের দৃষ্টি স্থির রেখে বুকের উপর দু’হাত ভাজ করে দাঁড়িয়ে বললো….

—“নিলাদ্র ভাইয়া যে এতো বছর ধরে সন্ধ্যাকে ভালোবাসতো এই কথা আপনি জানতেন না?”

কুশল তরুর দিকে ঘুরে ড্রেসিং টেবিলের পাশের দেওয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে শান্ত স্বরে বললো…….

—“না। নিলাদ্র কখনও আমাকে এ বিষয়ে কিছু বলে নি। আর সন্ধ্যার বয়সও কম। এতো তাড়াতাড়ি ওর বিয়ের বিষয় নিয়েও কেও চিন্তা করবে না। তাই হয়তো নিলাদ্র আমাদের কারোর কাছে সন্ধ্যাকে ঘিরে ওর মনের ভিতরের অনুভূতিগুলোর বহিঃপ্রকাশ করে নি।”

—“কিন্তু এখন তো জানতে পারলেন সন্ধ্যাও নিলাদ্র ভাইয়াকে ভালোবাসে। নিলাদ্র ভাইয়ার জীবন বাঁচাতে আর আসল কা*ল*প্রি*টকে ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে সকলের সামনে নিলাদ্র ভাইয়াকে মৃ*ত প্রমাণ করতে যে মিথ্যে নাটক করালেন এর জন্য সন্ধ্যার মন তো বা*জে ভাবে ক্ষ*ত-বি*ক্ষ*ত হয়ে গেলো। অতিরিক্ত ডি*প্রে*স*ড হয়ে সন্ধ্যা যদি নিজের বড় কোনো ক্ষ*তি করে ফেলে তখন কি হবে?”

—“আশা রাখছি সন্ধ্যা এমন কোনো কাজ করবে না।”

—“যদি করে তখন কি হবে? এতোটা রি*স্ক না নিয়ে সন্ধ্যাকে সত্যিটা জানিয়ে দিলেই ভালো হয় না কি?”

—“আমাদের চারপাশেই ঘোরাফেরা করছে সেই নি*ম্ন-মানসিকতার মু*খো*শ*ধা*রী শ*ত্রু। যতোক্ষণ না পর্যন্ত জানতে পারছি সেই অজানা শ*ত্রু আসলে কে ততোক্ষণ পর্যন্ত নিলাদ্রের বেঁচে থাকার খবর তুমি আমি ব্যতিত এই পরিবারের কাওকে জানানো সম্ভব না।”

তরুনিমা হতাশার নিঃশ্বাস ফেলে বিছানায় গিয়ে পা ঝুলিয়ে বসে।

(৬০)
রাত ৯টা…..
নিজের রুমে জানালার গ্রি*ল ধরে দাঁড়িয়ে বাহিরের দিকে দৃষ্টি স্থির করে রেখেছে সন্ধ্যা। সেইসময় তরুনিমা খাবারের ট্রে হাতে নিয়ে সন্ধ্যার রুমে প্রবেশ করে। খাবারের ট্রে টা বেডসাইড টেবিলের উপর রেখে সন্ধ্যার পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে ওর কাঁধে এক হাত রাখে। তরুর উপস্থিতি বুঝতে পেরে সন্ধ্যা ফুঁ*পাতে শুরু করে। সন্ধ্যার এহেনু অবস্থা দেখে তরুর বুকটা ফে*টে নিলাদ্রের বেঁচে থাকার সত্যটা বেড়িয়ে আসতে চাইছে কিন্তু কুশলের কড়া নি*ষে*ধা*জ্ঞাকে অ*মান্য করার শক্তি সে পাচ্ছে না। সন্ধ্যা ফুঁ*পাতে ফুঁ*পাতে বললো…..

—“ভাবী….যাকে সারাজীবন পাশে পাওয়ার তীব্র আ*কা*ঙ্ক্ষা এই মনের ভিতর খুব করে কাজ করে, আমরা তাকে পাওয়ার আগেই কেনো হারিয়ে ফেলি? সৃষ্টিকর্তা আমার সাথেই কেনো এমন নি*ষ্ঠু*র বিচার করলেন বলতে পারবে? একটা মানুষ ৬টা বছর ধরে আমাকে ভালোবেসে আসলেন, আজ যখন সেই মানুষটার ভালোবাসা আমি উপলব্ধি করতে সক্ষম হলাম তখন সেই মানুষটাকে ভালোবাসি শব্দটুকু জানানোর আগেই আমার থেকে কে*ড়ে নিলেন!”

সন্ধ্যার বলা প্রতিটি শব্দ যেনো তীরের মতো তরুনিমার বুকের ভিতর গিয়ে আ*ঘা*ত হাঁ*ন*ছে। তরু একবার দীর্ঘশ্বাস ফেলে সন্ধ্যার হাত ধরে বিছানায় এনে বসিয়ে দিয়ে নিজেও ওর পাশে বসে শান্ত স্বরে বললো…

—“সন্ধ্যা…আমার জান…তোমাকে বুঝানোর বা শান্তনা দেওয়ার মতো ভাষা আমার জানা নেই। শুধু এতোটুকুই বলবো এভাবে ভে*ঙে পড়ো না তুমি। তোমার এই ভে*ঙে পড়া রূপ দেখা যে তোমার কাছের মানুষদের সহ্য ক্ষমতা বাহিরে।”

সন্ধ্যা আর নিজেকে ধরে রাখতে পারে না। তরুনিমাকে জড়িয়ে ধরে ডু*করে ডু*করে কাঁদতে কাঁদতে বললো….

—“ভাবী…ও-ওনাকে আ-আমার ক-কাছে এনে দ-দাও না…! আ-আমার স-সত্যি খ-খুব ক*ষ্ট হচ্ছে। ও-ওনার শ-শূণ্যতা আমি ক-কিছুতেই মেনে নিতে প-পারছি না। এ-এনে দ-দা……..”

পুরো কথা শেষ করার আগেই সন্ধ্যা নিরব হয়ে যায়।তরুনিমা সন্ধ্যার মাথা তুলে ওর বুঁজে যাওয়া মুখশ্রী দেখে ওকে বিছানায় শুয়ে দিতেই নিজের পিঠের জামার অংশ ভিজা অনুভব করে ভিজা অংশে হাত বুলিয়ে সামনে আনতেই তা*জা র*ক্ত দেখে ভ*র*কে উঠে। তরুনিমা সন্ধ্যার দিকে লক্ষ্য করতেই ওর ডানহাতে ছোট একটা ব্লে*ড আর বাম হাতের শিরা কা*টা অংশ থেকে র*ক্ত ঝ*ড়*তে দেখতে পায়। চোখের পলকে সন্ধ্যা এমন একটা কাজ করে ফেলবে তা বুঝতে পারে নি তরুনিমা। তরু দ্রুত বসাবস্থা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে এক ছুটে রুম থেকে বেড়িয়ে রেলিং ধরে নিচে ড্রয়িংরুমে বসারত সবাইকে উদ্দেশ্য করে উচ্চস্বরে বললো…..

—“সন্ধ্যা…..সন্ধ্যা ও বাম হাতের শিরা কে*টে ফেলেছে। অনেক র*ক্ত ঝরছে সেখান থেকে….!”

তরুর মুখে এমন কথা শোনামাত্র নিচে বসারত সবাই উঠে দ্রুত কদমে সিড়ি বেয়ে উপরে আসতে শুরু করে।

চলবে ইনশাআল্লাহ…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here