হলুদ_বসন্ত,পর্ব_১৩,১৪

হলুদ_বসন্ত,পর্ব_১৩,১৪
Eshika_Khanom
পর্ব_১৩

পূর্বাকাশে যখন সূর্যের উদয় ঘটেছে তখন যেন কিছু নতুন আমেজ কারো জীবনের সঙ্গী বানিয়ে নিয়ে এসেছে। আবার কারো জন্যে নিয়ে এসেছে দুঃখের কলসি। আয়াত যখন আদ্রাফের সাথে সকালবেলা দেখা করতে যায় তখন আদ্রাফের মুখের অবস্থা দেখে কিছুটা চমকে উঠে। আদ্রাফের মুখমণ্ডলে এবং বাহুতে কিছু র‍্যাশ দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ আদ্রাফের এই র‍্যাশের কারণ খুজে বের করতে অস্থির হয়ে উঠে আয়াত। আদ্রাফ তখন আয়াতকে স্বান্তনা দিয়ে বলে,
“এই পাগল মেয়ে, শুধু শুধু এই র‍্যাশের জন্যে এতো অস্থির হয়ে উঠার কি আছে আমার বলোতো?”

আয়াতের মন মানে না। আদ্রাফের মুখে ও বাহুতে এমন হালকা লাল আবার কালচে র‍্যাশ তার কাছে স্বাভাবিক লাগেনা। আয়াত আদ্রাফকে বলে,
“আপনার মুখে হাতে তাহলে এসব র‍্যাশ কেন?”

আদ্রাফ ঠোঁটের হাসিটুকু আরও চওড়া করে বলল,
“এই শীতে তো অনেকের অনেক কিছুই হয়। আমারও তেমন কিছুই হয়েছে বোধহয়।”

“বোধহয়? ”

“হুম।”

“চলো নাস্তা করে ফেলি। আজ তো আবার বাসায় যেতে হবে। আর এমনিতেও শরীরটা আমার ওতো ভালো লাগছে না আয়াত। তাই আজ জলদিই বাসার জন্যে রওয়ানা দিব। আর সাজেকে থাকা যাবেনা। আচ্ছা আয়াত তুমি আবার এজন্যে রাগ করবে না তো?”

আয়াতের কেমন যেন এক অজানা ভয় কাজ করছে। সে মাথা নাড়িয়ে জানালো সে মোটেই রাগ করবে না।
.
.
.

ডক্টরের থেকে কিছুটা দূরে বসে রয়েছে আদ্রাফ। সাজেক থেকে সে ফিরেছে বেশ কিছুদিন হয়েছে। ইতিমধ্যে তার অসুস্থতা আরও একটু করে বৃদ্ধি পেয়েছে। দেহের র‍্যাশগুলো বেশির ভাগই কালচে রং ধারণ করেছে। শীতও প্রায় শেষের দিকে। পাখিরা জানান দিচ্ছে, “ওরে তোরা শোন, বসন্ত আসছে, হলুদ বসন্ত।” বেশ সময় ধরে ডক্টর আদ্রাফের রিপোর্টগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। উৎসুক দৃষ্টিতে চেয়ে আছে আদ্রাফ তার দিকে। আদ্রাফের মন বলছে, “তোর আর থাকা হবে না রে।” এক বড় নিঃশ্বাস ফেলে তাকালেন ডক্টর আদ্রাফের দিকে। মুচকি এক হাসি উপহার দিলেন তিনি। তারপর আদ্রাফকে বললেন,
“আদ্রাফ এক লম্বা শ্বাস নাও তো।”

বাধ্য ছেলের মতো ডক্টরের কথা শুনে একটি লম্বা শ্বাস নিল সে। তারপর ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বলল,
“আমিই ঠিক তাইনা ডক্টর?”

আদ্রাফের জন্যে যে হাসিটা মুখে সাজিয়ে রেখেছিলেন ডক্টর, আদ্রাফের কথা শুনে সেটা নিমিষেই মিলিয়ে গেল অন্তরালে। শুকনো মুখ হয়ে গেল যেন তার। সেভাবেই সে আদ্রাফকে উত্তর দিল,
“আমায় মাফ করো আদ্রাফ। জীবনের শেষ দরজার কড়াঘাত করাটাই এখন বাকী তোমার।”

হাসতে লাগলো আদ্রাফ। মানুষ তো কষ্ট পেলে বুক ফেঁটে কাঁদে, আর আদ্রাফ? তার বুক ফাঁটা আর্তনাদ প্রকাশ করছে হাসির মাধ্যমে। জড়িয়ে ধরল সে ডক্টরকে। তারপর ছেড়ে দিয়েও হাসতে লাগলো। কিন্তু কিভাবে যেন চোখের এক কোণ থেকে কিছুটা জল তার গাল বেয়ে গড়িয়ে পড়ল।
.
.
.

নিজেকে পুরোই ঘরবন্দী করে ফেলেছে আদ্রাফ। এখন আর কারো সাথে সে কথা বলতে চায়না, দেখা করতে চায়না। গুটিয়ে ফেলেছে সে নিজেকে। আয়াতের থেকে নিজেকে সরিয়ে ফেলছে। মায়া বাড়াতে চাইছে না আদ্রাফ আর কারো সাথে। অঝোরে কাঁদে সে বসে বসে নিজের ঘরে। নামাজ পড়ে, খোদা তায়ালাকে ডাকে। শেষ মূহুর্তে এছাড়া আর কিছুই করার নেই তার। আদ্রাফের দাদী দিলারা জামান আদ্রাফের এই অবস্থা দেখে কিছুটা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। আয়াত নিজেকে আর দাদীকে সামলায়। আদ্রাফের কাছে যেতে চাইলে তার ধারে কাছেও যেতে পারেনা। নিজের মনকে কিছুতেই মানাতে পারছে না সে। বসন্ত যেখানে প্রকৃতিকে, মানুষকে এসে নতুন রুপে রাঙায় সেখানে যেন পুরো আদ্রাফের পরিবারের মধ্যকার সকল রঙ শোষণ করে ফেলেছে।

অনেক সময় পরে আদ্রাফ বেরিয়েছে নিজের রুম থেকে। বাগানে এসে বসেছে সে। নুহাশকে ডেকে পাঠিয়েছে সে। নুহাশও ভালো নেই, হাজারো শোকে কাতরপ্রায়। তবুও বন্ধুকে সতেজ রাখার জন্যে মুখে কিছুটা হাসি ফুটিয়ে মুখোমুখি হয়েছে তার। আদ্রাফের সামনে বসে ভালো করে সে তাকায় আদ্রাফের পানে। বুকটা কেঁপে উঠে নুহাশের। কেমন শুকিয়ে গেছে আদ্রাফের চেহারা, চোখমুখ আবার ফুলে গিয়েছে। হুট করেই যেন আবার আদ্রাফ ভয়ানকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। নুহাশ এগিয়ে আদ্রাফের কাধে হাত রেখে বলে,
“যাইহোক, এমন হয়ে গেলি কেন তুই? কি অবস্থা করেছিস নিজের? এমনিতেই তুই অসুস্থ, তারপর আবার সবকিছু থেকে নিজেকে আলাদা করে আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছিস আদ্রাফ।”

আদ্রাফ বলে, “আর হব না আমি অসুস্থ। এটাই তো জীবনের শেষ অসুখ, শেষ অসুস্থতা। তারপর মুক্তি, সবকিছু থেকে মুক্তি।”

নুহাশ বলল, “আমি জানি তোর অবস্থা। আমি জানি হাজার চাইলেও সেই সত্য থেকে লুকানো সম্ভব নয়। মরতে একদিন আমাদের সবাইকেই হবে আদ্রাফ। হাজার চাইলেও আমরা কেউ তোকে এই ভয়ানক সত্য থেকে লুকিয়ে রাখতে পারবো না। জানিস আদ্রাফ, মনটা এখনো মানছে না আমার। কিন্তু সেদিন আমি তোর রিপোর্ট দেখেই সব বুঝতে পারলাম। পুরো ডিপ্রেসড হয়ে গিয়েছিস তুই। জানি আদ্রাফ আমি, কিন্তু এই শেষ সময়টুকু আমাদের সবার সাথে হেসে খেলে পার কর। দেখবি অতো আফসোস থাকবে না। আয়াতের অবস্থা দেখেছিস কি তুই? দাদীও অসুস্থ কিছুটা সেটাও তুই জানিস। আর ঐদিকে আয়াত কেঁদেকেটে নিজের জীবনকে অর্ধেক করে ফেলেছে। আমরা নাহয় আমাদের জীবনের পূর্বের সময়টুকুতে অনেক মজা করেছি, কিন্তু আয়াতের কথা চিন্তা কর। মেয়েটা কি সারাজীবন এভাবেই কষ্ট পাবে?”

নুহাশের কথাগুলো আদ্রাফের কর্ণকুহরে পৌছতেই কিছুটা অস্থির হয়ে পড়ল সে। নুহাশের এক হাত নিজের দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বলল,
“নুহাশ আমার কিছু কথা ঠাণ্ডা মাথায় শুনবি ঠিক আছে? তুই কি রাখবি আমার কিছু কথা?”

নুহাশ বলল, “হুম, কি কথা বল?”

আদ্রাফ বলল, “সবাই তো বুঝেছিসই যে আমি আর বেশিদিন নেই। তাই আমি আমার সময় শেষ হওয়ার আগেই একটা সিদ্ধান্ত নিলাম। আমি আমার অবর্তমানে আমার সকল সম্পত্তি আমার দাদী এবং আয়াতের নামে দিয়ে যেতে চাই। আর দাদীর অবর্তমানে সবকিছুই আয়াতের নামে থাকবে। আর আমার সকল সম্পত্তির পাওয়ার অব এটর্নি আমি তোর আর আয়াতের নামে দিয়ে যেতে চাই।”

“আমার নামে কেন?”

“কারণ আছে। এটাই আমার সিদ্ধান্ত এবং ইচ্ছে নুহাশ।”

নুহাশ কি যেন চিন্তা করল। ভাবুক দৃষ্টি নিয়ে কিছু সময় মেঝের দিকে তাকিয়ে রইল সে। তারপর বলল,
“আচ্ছা ঠিক আছে।”

আদ্রাফ নুহাশকে বলল,
“আমাকে কখনো ভুল বুঝিস না প্লিজ। মনে করবি না যে আমি শুধু তোকে ব্যবহার করছি। আমি সত্যিই তোকে অনেক বেশি বিশ্বাস করি নুহাশ। আর তোকে ভরসা করেই সব দায়ভার দিচ্ছে।”

নুহাশ বলল, “আচ্ছা ঠিক আছে।”

আদ্রাফ বলল, “হুম”।

নুহাশ প্রশ্ন করল, ” তবে কি আমি উকিলকে দিয়ে সব কাগজপত্র তৈরি করাবো?”

আদ্রাফ বলল, “হ্যাঁ খুব জলদিই করিয়ে ফেল। আমার না কেমন যেন এখন ভয় লাগা কাজ করে। আমার সাহস যেন সব মরে গিয়েছে।”

নুহাশ বলল, “তুই সাহসী ছিল, আছিস এবং যতদিন বাঁচবি তুই সাহস নিয়েই বাঁচবি।”

আদ্রাফ বলল, “হুম।” নুহাশও সম্মতি দিল।

আদ্রাফ নুহাশের হাত আরও আগলে নিয়ে বলল,
“আমার আরও একটা ইচ্ছে আছে।”

“কি?”

“রাগ করবি না বল।”

“তোর উপর কিভাবে রাগ করি আমি আদ্রাফ? বল তুই।”

“আমি চাই আমার মৃত্যুর পর তুই আমার পরিবারকে আগলে রাখ এবং..”

“হুম তা তো রাখবোই ইনশাআল্লাহ। তুই চিন্তা করিস না। আর এবং কি?”

“নুহাশ আমি চাই আমার মৃত্যুর পর তুই আয়াতকে বিয়ে করবি। করবি তো?”

#চলবে

#হলুদ_বসন্ত
#পর্ব_১৪
#Eshika_Khanom

“নুহাশ আমি চাই আমার মৃত্যুর পর তুই আয়াতকে বিয়ে করবি। করবি তো?” আদ্রাফকে করুণ স্বরে প্রশ্ন করল নুহাশ। ঝটপট কিছুটা দূরে সরে গেল নুহাশ আদ্রাফের থেকে। বলল,
“এটা তুই কি করে বলছিস আদ্রাফ? শোকে কি তোর মাথা পুরোই নষ্ট হয়ে গিয়েছে?”

অপরাধী স্বরে আদ্রাফ বলল,
“আমি জানিনা আমি কি বলছি। আমি আয়াতের ভালোর জন্যই এটা চিন্তা করেছি। আর তাই তোকে জানালাম। বলতে পারিস প্রস্তাব দিলাম। বলনা আমায়, করবি আয়াতকে বিয়ে?”

নুহাশ বলল, “সবকিছুর একটা সীমা থাকা উচিত আদ্রাফ। তুই বুঝতে পারছিস তুই কি বলছিস?”

আদ্রাফ বলল, “কেন তুই কিসের ভয় পাচ্ছিস নুহাশ? তোর কি এটায় সম্মানে আঘাত লাগছে যে তুই একজন বিবাহিতা নারীকে আবার বিয়ে করছিস? মেয়েটা বিবাহিতা হলেও কি হয়েছে, ও খুব ছোট। আর এমনিতেই অনেক কষ্ট পেয়েছে সে জীবনে। আমি মারা যাবার পর যদি ওর দিকে কেউ কুদৃষ্টি নিয়ে তাকায়? তার চেয়ে ভালো না আমি মরবার আগে ওর একটা ভালো ব্যবস্থা হয়ে যাক। ও নিজের জন্যে একজন যোগ্য জীবনসঙ্গী পেয়ে যাক। আমি সবার ভালোর জন্যেই তো এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”

তারপর নুহাশ কিছু বলার আগেই আদ্রাফ নুহাশকে বলল,
“এই দাঁড়া, নুহাশ তুই কি মনে করছিস আমি তোকে ওর বডিগার্ড টাইপ কিছু হতে বলছি? উহু, তোকে ওর সম্পূর্ণ অধিকার দিয়ে দিতে চাইছি। যে অধিকার আমার ছিল, কিন্তু আমি কখনো প্রয়োগ করিনি।”

নুহাশ নিজেকে কিছুটা ধাতস্থ করে বলল,
“ভাই তুই একটু ঠান্ডা হো। তুই কিন্তু বাড়াবাড়ি করছিস। আরে ভাই আমি ওকে বিয়ে করতে পারবো না।”

“কেন পারবি না নুহাশ? তুই ওকে বিয়ে করলে আমি কতটা নিশ্চিন্তে মরতে পারবো তুই আসলে বুঝতে পারছিস না। আর নুহাশ, তুই তো আয়াতকে ভালোবাসতি। হ্যাঁ হ্যাঁ আমি তো তোর চোখে আয়াতের প্রতি ভালোবাসা দেখেছি। তাহলে কেন আমার প্রস্তাবকে নাকোচ করছিস তুই?”

নুহাশ স্তব্ধ হয়ে গেল আদ্রাফের কথায়। চিন্তা করতে লাগলো যে ও কিভাবে বুঝতে পারলো যে সে আয়াতকে ভালোবাসে। আদ্রাফ নুহাশের চিন্তিত মুখ দেখে মৃদু হেসে বলল,
“একজন মানুষ যে ভালোবাসতে জানে সে অপরজনের ভালোবাসাটাও বুঝতে পারে। তাই এটা নিয়ে এতো ভাবতে হবেনা তোর।”

নুহাশ তখন আদ্রাফকে বলল,
“আমি পারবো না রে তবুও আয়াতকে বিয়ে করতে।”

আদ্রাফ নুহাশের উত্তর শুনের নিজের চোখটা বন্ধ করে নিল। তারপর চোখ আবার খুলে হুট করেই নুহাশের কলার চেপে জিজ্ঞেস করল,
“এই এই তুই কি আবার ওকে সেকেন্ড হ্যান্ড টাইপ কিছু মনে করছিস না তো? সাধারণত এটাই তোর অসম্মতির কারণ হতে পারে। তুই এসব নীচ চিন্তা কিভাবে করতে পারলি নুহাশ। ওর প্রতি তো তোর কোনো ভয়ও থাকবার কথা না। আয়াতের দ্বারা তো তোর কোনো ক্ষতি হওয়ারও সম্ভাবনা আমি দেখছি না।”

নুহাশ আদ্রাফের হাত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
“নিজের চিন্তা নিজের কাছে রাখ। আমি আয়াতকে ভালোবাসলেও তাকে নিজের বন্ধুর স্ত্রী হিসেবে বেশি শ্রদ্ধা করেছি। আর যাইহোক আমি আয়াতকে বিয়ে করতে পারবো না। আর মনে রাখিস আয়াতও তোর এসবে রাজী হবেনা। আমি তোর অন্যান্য কাজের ব্যবস্থা করছি। এসব উটকো চিন্তা মাথা থেকে বের কর।”

নুহাশ বাগান থেকে প্রস্থান করল। আদ্রাফ চিন্তায় পড়ে গেল, ওর মাথা একটুও কাজ করছে না। বাগানে হাঁটু মুড়ে বসে কাদঁতে লাগলো আদ্রাফ। হৃদয় ভেঙে যেন চুরমার হয়ে যাচ্ছে তার। একদিকে মৃত্যুর ভয়, আরেকদিকে প্রিয় মানুষদের হারানোর যাতনা। তার মৃত্যুর পরই বা আয়াতের কি হবে সেটা নিয়ে চিন্তা ভাবনা। ভেবে পায় না আদ্রাফ যে সে কি বলছে, কি করছে এবং আসলেই তার কি করা উচিত। কারো নরম হাতের স্পর্শ পেয়ে আদ্রাফের বুঝতে বাকি রইল না সে কে। তবে মনে ভয় লাগলো, এতোক্ষণ তার এবং নুহাশের মধ্যকার কথোপকথন কি সে শুনতে পেরেছে? সেগুলো শোনার পর অভিব্যক্তি কি আয়াতের? কিছু প্রশ্ন করলে কি উত্তর দিবে সে? পারবেনা, তাই পিছনে ফিরে তাকালো না আদ্রাফ। অগ্যতা আয়াত আদ্রাফের সামনে এসে নিজেও হাঁটু মুড়ে বসে পড়ল। আদ্রাফের চোখে ও কপোলে অশ্রুকণার আভাস পেয়ে নিজের ডান হাত দিয়ে মুছিয়ে দিল সেগুলো। আদ্রাফ চোখ বন্ধ করে রেখেছে, সে কিছুতেই আয়াতের সম্মুখীন হতে পারবে না। আয়াত নিজের চোখের পানি হাত দিয়ে মুছে ওষ্ঠাধরে মৃদু হাসি ফুটিয়ে বলল,
“কি হলো? চোখ বন্ধ করে এভাবে বসে রয়েছেন কেন? আমায় দেখতে ইচ্ছে করেনা বুঝি আপনার?”

নয়নযুগল তবুও খুললো না আদ্রাফ। কাঁপা কন্ঠস্বরে বলল, “এখানে থেকে যাও আয়াত।”

আয়াত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “ঠিক আছে, তবে মনে রাখবেন আমি মরে গেলেও আপনার ওমন বাচ্চামো সিদ্ধান্তে রাজী হব না। শুধু নুহাশ ভাইয়া নয়, আপনি বিহীন কোনো পুরুষ আমার জীবনে নেই এবং আমি ইনশাআল্লাহ আসতেও দিব না। ইনশাআল্লাহ আমি ইহকালেও আপনার এবং পরকালেও।”

কথাটা শেষ হতেই আয়াত আদ্রাফের মুখের একটু কাছে চলে গেল। নিজের অধর দিয়ে আদ্রাফের অধরপান হালকা ছুয়েই বাগান থেকে প্রস্থান করল আয়াত। চোখ খুলে তব্দা মেরে বসে রইল আদ্রাফ। আয়াতের কাণ্ডে আদ্রাফ যেন নির্বাক এবং শক্তিহীন।
মুচকি হাসলো আদ্রাফের। আমরণ এই মিষ্টি মূহুর্তকে আগলে রাখার নিজের হৃদয়ে সিদ্ধান্ত নিল।
.
.
.

“আদ্রাফের এই রোগের কোনোই চিকিৎসা কি আর নেই?” ডক্টরকে জিজ্ঞেস করল আয়াত। ডক্টর নিশ্চুপ। আসলে মাঝে মাঝে সময় এতোটাই কঠিন হয়ে যায় যে কাউকে একটু ভরসার হাতও বাড়িয়ে দেওয়া যায় না। ডক্টরেরও ঠিক একই অবস্থা। আয়াত আবার বলল,
“ডক্টর আমারও স্বপ্ন ছিল ডক্টর হওয়ার, চিকিৎসাবিজ্ঞানের অনেক বিষয়ের উপর ধারণা রাখতাম আমি। এইডস এর প্রতিষেধকও তো বের হওয়ার কথা ছিল। সেটা তৈরির প্রচেষ্টা চলছিল তাইনা?”

ডক্টর নিজের ডানহাতে থাকা কলমটি টেবিলে রেখে বললেন,
“মিসেস আদ্রাফ আপনি কি আপনার হাজবেন্ডের মেডিকেল রিপোর্টটি দেখেছেন? তার শারীরিক অবস্থা দেখে বুঝতে পারছেন যে তার কাছে আর কতটুকু সময় আছে?”

আয়াত বলল, “আমি দেখেছি। তবে কি শেষ একটা চেষ্টা করা যায়না?”

ডক্টর বললেন, “আদ্রাফের কি অবস্থা?”

আয়াত বলল, “আদ্রাফের খুব জ্বর। আমাদের কাউকেই তো নিজের ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয়না। ২জন নার্স রেখে নিয়েছে তাই আপনার কথামতো নিজের জন্যে। নাহলে তো সেটাও করতো না। মেন্টালি ডিপ্রেসড আদ্রাফ।”

ডক্টর প্রশ্ন করলেন, “দেহের কোন কোন অংশে ব্যথা হয় এখন?”

আয়াত উত্তরে বলল, “সে তো আমাদের কিছুই জানায় না। তবে আমি নার্সের থেকে জানতে পেরেছি তার ঘাড়ে এবং বগলে একটু বেশিই ব্যথা অনুভব হয়।”

“এইডসের লাস্ট স্টেজে এমনই হবে।”

আয়াত আগ্রহ নিয়ে বলল, “ডক্টর আমি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখেছিল এইডসের ভ্যাক্সিন আবিষ্কৃত হয়েছে এবং এর ট্রায়ালও সফল হয়েছে।”

“জ্বি আপনার কথা সত্য।”

“তবে কি আমরা সেই ভ্যাক্সিন বা প্রতিষেধক আনাতে পারিনা? যত টাকা লাগুক, আদ্রাফকে বাঁচানোর কি শেষ চেষ্টা করতে পারিনা আমরা?”

ডক্টর গম্ভীর দৃষ্ট নিয়ে আয়াতের দিকে তাকিয়ে রইলেন। আয়াত উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আবার প্রশ্ন করল,
“ডক্টর সেই সফল প্রতিষেধক দিয়ে কি আর একটা চেষ্টা করা যায়না?”

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here