হলুদ_বসন্ত,পর্ব_০৭,০৮
Eshika_Khanom
পর্ব_০৭
“আচ্ছা তাহলে আপনি কার মিসেস আয়াত?”
আয়াত অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে একটু গম্ভীর গলায় বলল,
“দেখুন মিস্টার আদ্রাফ, আমি একজন বিবাহিতা নারী। তাই আমি আমার স্বামীরই হয়ে থাকব। এটা একদম সাধারণ ব্যাপার।”
আদ্রাফ তাচ্ছিল্যের সুরে বলল,
“তুমি তো আমাকে বিয়েই করতে চাওনি আয়াত। আবার স্বামী হিসেবে স্বীকারও কর?”
আয়াত আদ্রাফের দিকে ঘুরে গেল। তারপর বলল,
“ইসলামিক শরিয়তে আপনি আমার স্বামী। হ্যাঁ আমার বিয়েটা করার কোনো ইচ্ছে ছিল না। আমার একটা স্বপ্ন ছিল, এমনকি এখনও আছে। স্বপ্নটা শুধু আমার একার নয়, আমার বাবারও। বাবা আমাকে একজন সফল ডাক্তার হিসেবে দেখতে চেয়েছিলেন। তবে আমার ভাগ্য, সেই স্বপ্নই আর পূরণ হলো না। আমি জানি স্বপ্নটা আর কখনোই পূরণ হবেনা। তাই যে মানুষটা আমায় ভালোবাসে তাকেই ভালোবেসে মরতে চাই।”
আদ্রাফ জিজ্ঞেস করলো,
“তোমাকে কে বলেছে আমি তোমায় ভালোবাসি?”
আয়াত বলল, “ভালোবাসা জানতে হয় না, বিষয়টা উপলব্ধি করতে হয়। যে মানুষটা রোজ ফুচকাওয়ালাকে টাকা দিয়ে রাখতো যাতে আমি মন ভরে ফুচকা খেতে পারি, আমার কাছে রিকশাভাড়া না থাকলে আগেই রিকশাওয়ালাকে টাকা দিয়ে আমার কাছে পাঠিয়ে দিত, মাঝরাতে লুকিয়ে লুকিয়ে পাইপ বেয়ে আমার রুমের জানালার কার্নিশে বসে আমায় দেখার চেষ্টা করত সেই ভালোবাসাকে অস্বীকার করার ক্ষমতা আমার নেই।”
আদ্রাফ অবাক হয়ে গেল। আয়াতের দুই বাহু ধরে একবার ঝাকি দিয়ে প্রশ্ন করল,
“মানে? তুমি জানতে এসব আমি করি?”
আয়াত বলল, “মেয়েদের মধ্যে এমন একটা শক্তি আছে যা তাকে ভালো করে উপলব্ধি করতে সাহায্য করে কে কখন তার জন্যে কি করছে। তার ব্যাপারে কি মন্তব্য করছে? আমিও এর ব্যতিক্রম নই।”
আদ্রাফ বলল, “মানে তুমি প্রথমেই আমায় চিনতে পেরেছিলে?”
আয়াত ভাব নিয়ে বলল, “ব্যাপারিটা খুব কঠিন ছিল না।”
আদ্রাফ মাথায় হাত দিয়ে হেসে ফেললো। আয়াত বলল,
“তবে কি করে জানতাম সেই মানু্ষটাই আমার স্বপ্নপূরণে এতো বড় একটা বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে। বিয়ের রাতে খুব ঘৃণা হচ্ছিল আমার আপনার উপর। তবে যখন আপনার এমনটা করার কারণ বুঝতে পারলাম তখন সেই ঘৃণাটাও উধাও হয়ে গেল।”
আদ্রাফ বলল, “মাঝে মাঝে রাগ উঠেনা তোমার? ভয় হয়না, আমি যদি তোমার সাথে কিছু করে ফেলি তাহলে তুমিও আমার মতো…”
আদ্রাফের কথাটা শেষ করার আগেই আয়াত আদ্রাফকে থামিয়ে বলল,
“আপনি কিছু করবেন না আমি জানি। আর আমার মরার ভয় নেই। আপনি আমার জীবনের নতুন রুপ দিয়েছেন। তাছাড়া আপনার কারণে আজ আমি প্রতিবাদ করতে পেরেছি। তাই আপনার জন্যে যদি আমার জীবনটাও যায়, আমার তাতে সমস্যা নেই। একদিন তো মরতেই হবে।”
আদ্রাফ হঠাৎ আয়াতের দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো। আয়াত পিছতে লাগলো আদ্রাফের এগিয়ে আসতে থাকতে দেখে। একদম দেয়ালের সাথে পিঠ ঠেকে গেল আয়াতের। তার সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে আদ্রাফ। আদ্রাফ আয়াতের মুখে একটা ফুঁ দিল। চোখ বন্ধ করে নিল। আদ্রাফ বিমোহিত হয়ে পড়ল আয়াতের কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো দেখে। বাম হাতটা এগিয়ে এনে যত্নসহকারে আয়াতের কপালের সামনে পড়ে থাকা চুলগুলো সরিয়ে নিল। আয়াত তখনো তার নয়নজোড় বন্ধ করেই রেখেছিল। আদ্রাফ নিঃশব্দে আয়াতের রুম থেকে প্রস্থান করল, আয়াত টেরও পেলো না। অনেক সময় অতিবাহিত হলো। আয়াত আদ্রাফের আর কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে চোখ মেলে তাকালো। আদ্রাফকে দেখতে পেল না , একটা বড় নিঃশ্বাস ছাড়লো সে।
.
.
.
পুরো ঘর অন্ধকার করে মাথায় হাত দিয়ে শুয়ে রয়েছে নুহাশ। চোখে জমে রয়েছে অশ্রু। একদিকে প্রিয় বন্ধুকে হারাতে হবে এই বেদনা, অপরদিকে নিজের সেই বন্ধুর স্ত্রীর প্রেমে পড়ে যাওয়া। এ যেন এক মহাপাপ করে ফেলেছে সে। প্রথম দেখাতেই আয়াতকে ভালো লেগে যায়। অতঃপর যখন শুনতে পারে সে আদ্রাফের কাজিন তখন একটা আশা মনের কোণে জাগে, যা দাদীর কথা শুনেই সঙ্গে সঙ্গে নষ্ট হয়ে যায়। এক প্রকার হতাশ হয়ে পড়েছে সে। জীবনে প্রথম কারো প্রেমে পড়েছে, তাও আবার বন্ধুর ভালোবাসা বন্ধুর স্ত্রীর। প্রথম প্রেমেই হার মানতে হবে তাকে। নাহ এতোকিছু ভাবতে পারছে না সে। উঠে পড়ল সে বিছানা থেকে। ওয়াশরুমে গিয়ে অযু করে নিল। মেঝেতে জায়নামাজ বিছিয়ে দুই রাকাআত নফল নামাজ আদায় করল সে। মোনাজাতে আল্লাহর কাছে পানাহ চাইলো, সকল বিপদ ও ঝামেলা থেকে মুক্তি চাইলো। সাথে চাইলো আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি। আদ্রাফের জন্যে বিশেষভাবে দুয়া করল সে।
.
.
.
ভোরের স্নিগ্ধ আলো পরিবেশে এক ধরণের শুভ্রতা ফুটিয়ে তুলেছে। এমন শুভ্রতা যা মুছড়ে যাওয়া হৃদয়কে নতুন করে বাঁচার শক্তি প্রদান করে। ধীরস্থির ভাবে দৃঢ় মনোবলে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার উদ্যম প্রকাশ করে। আসলেই আমরা যতদিন বাঁচি না কেন, মন ভরে, প্রাণ ভরে, নিজেকে সম্পূর্ণভাবে উপলব্ধি করে, শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত ভালো থাকার চেষ্টা করা উচিত। অন্যদের মধ্যেও জাগিয়ে দেওয়া উচিত বেঁচে থাকার নতুন প্রয়াস। তবেই না জীবন সার্থক!
আজ বাগানে সকাল থেকেই দাদী বসে আছেন, হাতে রেখেছেন একটা বই। আসলেই তিনি একজন বইপোকা। আয়াত এসে দাদীর সামনের টেবিলে এক কাপ চা রাখে। দাদী চোখ মেলে তাকায় আয়াতের দিকে। আয়াত বলে,
“দাদী আপনার চা।”
দাদি বললেন, “তা তো দেখতেই পাচ্ছি। তবে এক কাপ কেন? তুই খাবি না?”
আয়াত বলল, “না দাদী আমার চা ওতোটা ভালো লাগেনা চা।”
দাদী বইটা টেবিলে রেখে হাতে সেই চায়ের কাপ তুলে নিয়ে আয়াতকে বললেন,
“এই তুই বসলি না যে?”
আয়াত সাথে সাথে বসে পড়ল। দাদী এক চুমুক দিলেন চায়ের কাপে। আয়াত কিছুটা উসখুস করছে। দাদী এক ভ্রু উচিয়ে আয়াতের দিকে তাকালেন। তারপর বললেন,
“আজ চায়ের স্বাদ একটু অন্যরকম। কে বানিয়েছে? তুই?”
আয়াত মাথা নেড়ে বলল, “হুম দাদী।”
দাদী বললেন, “বেশ ভালো চা বানাতে পারিস তো তুই। একটা আবদার করি তোর কাছে, রাখবি?”
আয়াত বলল, “আদেশ করুন দাদী।”
দাদী হেসে দিলেন। তারপর বললেন,
“এখন থেকে রোজ সকালে তুই আমার জন্যে চা বানাতে পারবি?”
আয়াত বলে, অবশ্যই দাদী। ইনশাআল্লাহ রোজ বানাবো আপনার জন্যে চা।”
দাদী বললেন, “ধন্যবাদ রে সতীন। তা আচ্ছা তুই আর আদ্রাফ হানিমুনে যাওয়ার কোনো প্ল্যান করেছিস?”
আয়াত মাথা নিচু করে নিল। এসব তো তারা চিন্তাই করেনি। আয়াত মাথা নিচু রেখেই বলল,
“না দাদী।”
দাদী যেন কিছুটা ক্ষুব্ধ হলেন। একজন সার্ভেন্টের মাধ্যমে আদ্রাফকে ডেকে পাঠালেন। আদ্রাফ তো এলোই, সাথে সাথে নুহাশও এলো। আসলে তারা দুইজন একসাথে কথা বলছিল, সার্ভেন্ট আদ্রাফকে ডাকায় সাথে সাথে নুহাশও আসে। আয়াতকে দেখে নুহাশের দৃষ্টি আয়াতের পানে নিবদ্ধ হয়। আবার মূহুর্তেই সে নিজের দৃষ্টি অন্যদিকে ঘুরিয়ে নেয়। আদ্রাফের দাদী আদ্রাফের সাথে নুহাশকে দেখে বলেন,
“ভালো হয়েছে তুইও আসলি নুহাশ। দেখ আমার হাতে তো এতো জোর নাই, তুই একটু আদ্রাফের পিঠে একটা কিল বসা তো!”
নুহাশ চমকে দাদীর দিকে তাকিয়ে বলল, “আয় হায় দাদী কেন?
দাদীর কথা শুনে আয়াত, আদ্রাফ এবং নুহাশ প্রত্যেকেই ভ্যাবাচেকা খেয়ে যায়। আদ্রাফের আদী নুহাশকে এরপর বললেন,
” তুই আগে মার দে একটা ওকে তারপর আমি বলি।”
আদ্রাফ ভাব মেরে বলে, “ইস নুহাশ আমাকে মারবে? ওর এতো জোর আছে নাকি দাদী?”
সাথে সাথেই নুহাশ ধপ করে একটা কিল বসিয়ে দেয় আদ্রাফের পিঠে। তারপর বলে,
“কি বললি আমার হাতে জোর নাই? এই নে আরেকটা কিল।”
আবারও একটা কিল আদ্রাফের পিঠে বসিয়ে দেয় নুহাশ। আদ্রাফ অসহায় চোখে আয়াতের দিকে তাকিয়ে বলে,
“এইযে আয়াত দেখ তোমার সামনে তোমার বরকে মারে সবাই।”
নুহাশের হাস্যজ্জ্বল মুখে আবার আধার নেমে আসে। আদ্রাফের দাদী বলেন,
“ও কি বলবে রে আদ্রাফ? তুই এই দুইদিনে হানিমুনের প্ল্যানও করলি না?”
আদ্রাফ কি বলবে খুজে পেল না। সে তো আর বাঁচবেই না, আবার কিসের হানিমুন?
আদ্রাফের দাদী বললেন,
“যাহ নুহাশ আর আমি মিলে তোর আর আয়াতের হানিমুনের ব্যবস্থা করব। ঠিক আছে না নুহাশ?”।
নুহাশ অবনত স্বরে বলে, ” জ্বি দাদী। দাদী আমি আসছি এখনই।
নুহাশ এটা বলে আর কিছুর অপেক্ষা না চলে গেল।
#চলবে
#হলুদ_বসন্ত
#পর্ব_০৮ (বোনাস)
#Eshika_Khanom
নুহাশ এটা বলে আর কিছুর অপেক্ষা না করে দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেল। দরজা বন্ধ করে মেঝেতেই বসে পড়ল। নিজের মাথাটা দুই হাত দিয়ে চেপে ধরল নুহাশ। মোটেও সে নিজেকে কাপুরুষের পরিচয় দিতে চায় না। অঝোর ধারায় অশ্রু ঝরছে তার দুই চোখ থেকে। নিজের মনের সাথে যুদ্ধ করা শুরু করেছে সে ইতিমধ্যে। ইচ্ছে করছে এ বাড়ি থেকে চলে যেতে, কিন্তু প্রিয় বন্ধুর শেষ সময়টুকুতে সে যে তার পাশে থাকতে চায়। তবে এখানে থাকলেই নিজের অব্যক্ত ভালোবাসাও তার নজরবন্দী হবে৷ নিজেকে দিশেহারা লাগছে তার। এমন একজনকেই ভালোবাসলো সে যাকে সে কখনোও পাবে না সে। প্রথমবার আয়াতকে দেখেই ভালোবেসে ফেলেছে সে। তবে এমন এক তরফা ভালোবাসা যে কখনোই পূর্ণতা পাওয়ার নয়। নিজের সুখের জন্যে কারো দুঃখের কারণ হতে পারবে না সে। আদ্রাফ হয়তো দুনিয়াতে থাকবে না, তাই বলে তার স্ত্রীকে নিজের করতে পারবে না সে। আয়াতকে কষ্ট দিতে পারবে না নুহাশ, একদমই পারবে না সে। আয়াতের চোখে ইতিমধ্যেই আদ্রাফের জন্যে ভালোবাসা দেখে ফেলেছে সে। আজ নুহাশের নিজের প্রতি ঘৃণা হচ্ছে। সহ্য করতে পারছেনা সে আদ্রাফ আর আয়াতকে একসাথে। দুইজনের মধ্যকার নীরব ভালোবাসা সেও অনুভব করছে, তবে তা মেনে নিতে পারছে না। কাঁদতে কাঁদতেই উঠে পড়লো নুহাশ। সোজা চলে গেল তার ওয়াশরুমে। শাওয়ারটা ছেড়ে তার নিচে দাঁড়িয়ে পড়লো সে। বসন্তের আগমনের পূর্বে বিরাজমান শীতও আজ তাকে কাবু করতে পারলো না। নিজের অশ্রুধারাকে বিলিয়ে দিল কনকনে ঠাণ্ডা পানির মধ্যে। কষ্টগুলোকে সহ্য করা যে এখন বেশিই কঠিন হয়ে পড়ছে। তবে কি কাপুরুষেই পরিণত হবে সে?
.
.
.
“আচ্ছা শুনুন আমার না আপনার রুমটাতেও একবার ঢুকার খুব ইচ্ছে। আমি যদি একবার ঢুকি তাহলেও কি খুব সমস্যা হবে?” আদ্রাফকে প্রশ্ন করল আয়াত।
আদ্রাফ নাক মুখ কুচকে বলে, “আয়াত তুমি জানো তো আমার রোগ সম্পর্কে। আমার ব্যবহার্য কিছুই তোমার এখন স্পর্শ করা উচিত নয়। তোমাকে সাবধান থাকতে হবে।”
আয়াত বাচ্চাদের মতো ঠোঁট উল্টিয়ে বলে, ” উফচ আপনি বেশি ভয় পান। আমি শুধু দেখেই চলে আসবো।”
“কি দরকার আয়াত?”
“একটু প্লিজ, দুই মিনিট থাকব আপনার রুমে।”
আদ্রাফ ফোন চালাতে চালাতে বলল, “জেদ করো না তো!”
আয়াত জোর গলায় বলল, “আপনি না নিয়ে গেলে আমি জেদই করব। আমার অধিকার আছে আপনার রুমে যাওয়ার।”
আদ্রাফ আয়াতের কাছে একটু ঘেঁষে বসে ধীর কন্ঠে বলল,
“আমারও তো অনেককিছুর অধিকার আছে আয়াত।”
আয়াত পুনরায় কেঁপে উঠল। মানুষটা এই শীতের মধ্যেও আরও কাঁপিয়ে দেয় তাকে। বুঝেনা কি সে যে আয়াত তখন কি অনুভব করে? আয়াত কিছুটা চেপে আরও দূরে গিয়ে বসলো। বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো আদ্রাফ৷ আয়াতের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল,
“চলো আয়াত।”
আয়াত প্রশ্ন করল, “কোথায়?”
আদ্রাফ বলল, “যেখানে যেতে চেয়েছিলে।”
আয়াতের ঠোঁটে সুক্ষ এক হাঁসি ফুটে উঠলো। আদ্রাফের সাথে সেও চললো আদ্রাফের রুমে।
তবে রুমে গিয়ে অবাকের শেষ সীমানায় পৌছে গেল আয়াত। খুব সুন্দর করে মোহনীয়ভাবে সজ্জিত ঘরটির দেয়ালের বেশ কিছু অংশে আয়াতের ছবি টাঙানো। আয়াতের জীবনের পরিসরের ছোট ছোট কিছু মূহুর্তকে বিশেষভাবে সাজিয়ে তুলেছে আদ্রাফ। একবার আয়াত তার এক বান্ধবীর পোষা বিড়ালকে কোলে তুলেছিল। তার বান্ধবী তাকে দেখাতে নিয়ে এসেছিল বিড়ালটি। সেই বিড়ালটিকে আদর করার মুহূর্তটি আদ্রাফ ফ্রেমে বন্দী করে রেখেছে। আয়াত বিমোহিত হয়ে আদ্রাফের রুমে হেঁটে যাচ্ছে। আরেকটা ছবিতে সেই মূহুর্তকে অবলোকন করা যাচ্ছে যেখানে সে একটা বাবলগাল খেয়ে খুব বড় করে ফোলানোর চেষ্টা করছিল কিন্তু সেটা ফেটে গিয়ে আয়াতের নাকে লেপ্টে রয়েছে। বাবলটি বড় করে ফোলাতে না পারার কষ্টে আয়াত দুঃখভরা মুখ নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। ঠিক সেই মূহুর্তেই ছবিটি তোলা হয়েছে। আনমনেই হেসে উঠলো আয়াত। দূর থেকে সেই দৃশ্য দেখে মুগ্ধ হলো আদ্রাফ। আয়াত আরও এগিয়ে গিয়ে একটা ছবি স্পর্শ করতে নিলে আদ্রাফ বাঁধা দিয়ে বলল,
“ছুয়ো না এগুলো আয়াত, এগুলো মরণ পর্যন্ত আমার সম্পদ। তোমায় তো ছুয়ে দিতে পারব না আমার ভালোবাসা দিয়ে, তাই এই ছবিগুলোতেই নিজের ভালোবাসা কিছুটা উজাড় করব।”
.
.
.
মাত্র গোসল শেষে ওয়াশরুম থেকে বেরোলো আয়াত। ঘন কেশ চুয়ে চুয়ে এখনো পানি পড়ছে।সেই সাথে ভিজে যাচ্ছে তার পিঠ। এই শীতের মধ্যেও দ্বিতীয়বার গোসল করতে হলো তাকে একমাত্র আদ্রাফের কারণে। আয়াত আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে একা একাই বলতে লাগলো,
“লোকটা ভীষণ খারাপ, আমায় গোসল করতে বাধ্য করল।”
আবার আনমনেই হেসে উঠলো আয়াত। মাথাটা কোনোরকম মুছে নিচে নেমে এলো। সোজা গেল দাদীর রুমটিতে। সদ্য গোসল করায় যথেষ্ট আবেদনময়ী লাগছে তাকে একজন পুরুষের। তবে তাকে দূর থেকেই দেখলো সে। আবার নিজেকে সংযত করে চোখ ফিরিয়ে নিল সে। আয়াত দাদীর রুমে গিয়ে পিছন থেকে দাদীর দুই চোখ চেপে ধরল। ভয় পেয়ে গেলেন দাদী। নিজের চোখ ছাড়িয়ে পিছনে ঘুরে দেখতে পেল যেন এক সদ্য প্রস্ফুটিত ফুলকে। হাসি ফুটে উঠলো দিলারা জাহানের মুখে। আয়াতের ভেজা চুলগুলো দেখে ভ্রু কুচকে প্রশ্ন করলেন,
“এই অবেলায় গোসল? কারণটা কি রে সতীন?
দাদীর মুখে ফুটে উঠেছে দুষ্টুমি ভরা হাসি। নয়নেও খেলা করছে দুষ্টুমি। আয়াত দাদীর প্রশ্ন ও চোখের ভাষা বুঝতে পারলো। মূহুর্তেই লজ্জার লালিমা ছেয়ে গেল তার কপোলদ্বয়ে। লজ্জাভরা হাসি নিয়ে বলল,
” ধুর দাদী তেমন কিছুই না।”
দাদী প্রশ্ন করলেন, “তাহলে বল এই অবেলায় কেন গোসল করলি?”
আয়াত বলল, “দাদী আদ্রাফ…”
আর কথা শেষ করতে পারলো না আয়াত। দিলারা জাহান আয়াতের কথা থামিয়ে মাঝপথে বললেন,
“হুম জানি তো কারণটা আদ্রাফ। পোলাটা দিনে দিনে বেশরম হয়ে উঠছে।”
আয়াত এবার বলল, “ধ্যাত দাদী আপনি যা বলছেন তেমন কিছুই না।”
দাদী বললেন, “হয়েছে হয়েছে এই সময়টা আমিও পার করে এসেছি বুঝলি সতীন। এই সময়ে তোর গোসলের কারণ জানি আমি।”
আয়াত মুখ ভার করে বলল, “হুম বেশি জানেন।”
দাদী ভাব নিয়ে বললেন, “হুম তা তো জানবই।”
আয়াত দাদীর হাত ধরে আহ্লাদের সুরে বলল,
“ও দাদী আজ রাতের রান্নাটা আমি করি?”
দাদী অবাক হয়ে বললেন, “তুই করবি?”
আয়াত বলল, “হুম আমিই করব। আপনার কি মনে হয় আমি রান্না পারিনা? প্লিজ দাদী না করবেব না প্লিজ।”
দাদী বললেন, “হুম না করব না, তবে শর্ত আছে।”
আয়াত জিজ্ঞেস করল, “কি শর্ত?”
দাদী কিছুটা আবদারের সুরে বললেন, “এইযে তুই আমায় আপনি করে ডাকিস না আমার নিজেকে খুব পর পর লাগে। তোর এখন থেকে তাহলে আমায় তুমি করে ডাকতে হবে।”
আয়াত ফিক করে হেসে দিল। তারপর বলল,
“ওহ আচ্ছা। ওকে সোনা দাদী, আমি এখন থেকে তোমাকে তুমি করেই ডাকবো। এখন অনুমতি দাও না?”
দাদী আয়াতের গালে আলতো করে এক চড় দিয়ে বললেন,
“যাহ বানিয়ে ফেল আজকের রাতের খাবার। আর কোনো সমস্যা হলে আমাদের সার্ভেন্টদের সাহায্য নিবি।”
আয়াত খুব খুশি হয়ে গেল অনুমতি পেয়ে। খুশি হয়ে দাদীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আই লাভ ইউ দাদী।”
দাদী আয়াতকে ধরে বললেন,
“এটা আদ্রাফকে বল, কাজে দিবে।”
আয়াত বলল, “তুমি তো উত্তর দাও!”
দাদী বললেন, “হুম আই লাভ ইউ টু সতীন।”
এবার দুইজনেই শব্দ করে হেসে দিল।
.
.
.
রাতের খাবার বানানোর জন্যে পূর্ণ উদ্যমে রান্নাঘরে কাজ করছে আয়াত। পাক্কা গৃহিণীর মতো কাজ করছে। নিজের সম্পূর্ণ মনযোগ রান্নার মধ্যেই দিয়েছে সে। হঠাৎ করে রান্নাঘরে প্রবেশ করলো নুহাশ। ধীর পায়ে আয়াতের দিকে এগিয়ে নিল সে। তাদের মধ্যে আর কয়েক ইঞ্চি দূরত্ব হবে। নুহাশ আয়াতকে তখনই বলল….
#চলবে