স্নেহের অবজেক্ট,পর্ব-১
Write : Sabbir Ahmed
-তোর বোন আসছে (মা)
-আমার তো আপন কোনো বোন নেই, (রাসিফ)
-তোর খালার মেয়ে আসছে
-কোন খালার মেয়ে?
-বড় খালা
-জিফ!
-জিফ মানে?
-মা ও তো জিন্স আর ফতুয়া ছাড়া কিছু পরেই না তাই ওর নাম জিফ
-তুই পারিস ও! আচ্ছা ও আজ আসছে
-আসুক
-তোকে আনতে যেতে হবে
-সময় নেই আমার কাজ আছে।
-একা আসতে পারবে না
-রাজশাহী থেকে কমলাপুর ট্রেনে একা আসতে পারলে, কমলাপুর থেকে আমাদের বাসায় অবশ্যই আসতে পারবে
-না পারবে না, তুই যা না একটু
-ধুরর পারবো না
,,
রাসিফ মায়ের কথা শুনলো না। বাসা থেকে বেড়িয়ে আসলো। সে এখন যাচ্ছে তার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে, সে তার এক বন্ধুর বাড়ি যাচ্ছে। হঠাৎ মাঝপথে কি যেন মনে হলো তার, তখন বন্ধুর বাসায় না গিয়ে স্টেশনের দিকে রওনা হলো। রাসিফ স্টেশনে পৌঁছে ইয়াশা কে কল করে।
-তুই স্টেশনে আসছিস?? (ইয়াশা কল ধরেই বলল)
-নাহহ যাচ্ছি স্টেশনের দিকে (রাসিফ)
-তাড়াতাড়ি আয় আমি আর একটুর মধ্যে পৌঁছে যাবো
-স্টেশন থেকে তুই একা বাসায় যেতে পারবি না?
-না আমার ভয় করে
-এটুকু আসতে ভয় করলো না?
-না এটুকু আসতে ভালোই লাগে
-আচ্ছা আমি স্টেশনে যাচ্ছি
,,
রাসিফ স্টেশনে পৌঁছাতেই,
-এই চানাচুরররর, এই বাদেম বাদেম এই বাদেম। তেলো ভাজা খাইতে মজা, তেলে ভাজা খাইতে মজা। এরকম নানান শব্দ স্টেশনে লেগে আছে সবসময়।
,,
রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটা একটু আগে কমলাপুর স্টেশনে এসে দাঁড়ালো। রাসিফ তার ফোন টা বের করে ইয়াশাকে কল করলো।
-কই তুই?? (রাসিফ)
-এইতো নামছি, তুই কই? (ইয়াশা)
-আমি এই যে দুই নাম্বার প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে
-আরে দুই নাম্বারে কেন? চার নাম্বারে আয়
-আচ্ছা আসছি
,,
দুজন প্রায় সমবয়সী তাই তুই করে বলে। ইয়াশা, রাসিফ দুজনেই মাস্টার্স করছে আলাদা সাবজেক্টে।
ইয়াশার সেই ছোট বেলা থেকেই অভ্যাস এক্সাম শেষ বা একটু বেশি সময় পেলে খালার বাড়িতে বেড়াতে আসা। তবে তার এবারের আসাটা একটু আলাদা। ইয়াশার বিয়ের কথা চলছে, ছেলেটা ঢাকায় বিজনেস করে, মূলত তার খোঁজ খবর নেওয়ার জন্যই বাবা-মা তাকে পাঠিয়েছে। দুদিন পর তার বাবা-মা ও আসবে। ইয়াশার যে বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে সেটা রাসিফ জানে না। জানবেই বা কি করে তার তো মন শুধু আড্ডাতে থাকে, বাসায় কি হচ্ছে আত্মীয় দের মধ্যে কি হচ্ছে এসব বিষয়ে খোঁজ খবর নেওয়ার তার সময় নেই।
,,
চার নাম্বার প্লাটফর্মের শুরুতেই রাসিফ ইয়াশে কে দেখতে পায়।
-কি রে আমাকে দেখে মুখ এমন বানালি কেন? (ইয়াশা)
-সেই জিন্স আর ফতুয়া (রাসিফ)
-তো তোর সমস্যা কি? বাসায় চল
-আসতে কোনো সমস্যা হয়েছে কি?
-আসতে আর কি সমস্যা হবে! সমস্যা বাসা থেকে ঘাড়ে করে নিয়ে আসছি
-মানে?
-আর বলিস না আমার জন্য ছেলে দেখেছে আব্বু
-সেই জন্য পালিয়ে আসছিস নাকি?
-আরে নাহহ পাগলা ছেলে এই ঢাকাতে তার সাথে দেখা করতেই আসলাম। খালা তো সব জানে তুই জানিস না
-কই মা তো আমাকে কিছু বলেনি
-কিভাবে বলবে? তোকে তো খালাম্মা দুই মিনিট এর জন্য বাসায় পায় না
-না এখন তো বাসায় থাকি
-তাও অন্য কাজে ব্যস্ত থাকিস
-তা ঠিক
-জানি আমি
-এই ডাব খাবি??
-এই গরমে খাওয়াই যায়, তবে তুই খাওয়ালে খাবো
-ফকির মিসকিন নিয়ে ঘুরাঘুরি করি
-কি বললি তুই?
-কিছু না, চল ডাব খাই
,,
এক গাছের নিচে দাঁড়িয়ে দুজন ডাব খেতে খেতে কথা বলছে।
-তোদের শহরে অনেক বেশি গরম (ইয়াশা)
-হ্যাঁ অনেক বেশি (রাসিফ)
-আমাদের রাজশাহী ভালো, গাছে ভরপুর। আর এতটা অপরিষ্কার না
-হয়েছে আর পঁচাতে হবে না চল এখন
-হুমমম চল
,,
দুজন বাসায় আসলো, ইয়াশা এসে তার খালার সাথে গল্প শুরু করলো আর রাসিফ সেই বন্ধুর বাসায় গেলো।
-দোস্ত তোর আসতে এত দেড়ি হলো! (একটা বন্ধু)
-আমার বোন আসছে (রাসিফ)
-তোর কোন বোন?
-আরে ঐ যে ইয়াশা
-দোস্ত অনেকদিন হলো তোদের বাসায় যাই না,
-চালাকি করে লাভ নেই, কিছুদিন পর ওর বিয়ে হবে, ছেলে দেখতে আসছে
-আরেএএ আমি তো এমনি বলছিলাম
-বাকিগুলো কই রে?
-ওরা চলে গেছে
-তাহলে থাক আমিও যাই
-যাবি তো এখন বাড়িতে তে যে একজন আসছে
-একা থেকে কি তোর সাথে আমি পিরিতের ম্যালা দিমু?
-ঐ যে তার সাথে দে
-তোরে পরে বুঝাবো। তোর বাসায় যখন কোনো মেয়ে আসবে তখন
-পরের হিসেব পরে, এখন যা বাসায় যা
,,
রাসিফ বাসায় আসতেই…
-কই গিয়েছিলি??(মা)
-একটু বাইরে (ইয়াশা)
-তোর ফোন অফ কেনো?
-মনে হয় চার্জ নেই (চার্জ আছে, রাসিফ এমনি করে বাইরে গেলে ফোন বন্ধ রাখে যাতে তাকে কেউ ডিস্টার্ব না করে)
-তোর বাবা একটু অফিসে যেতে বলেছে
-অফিসে কেনো?
-আমি জানি না
-আমি যেতে পারবো না
-এমন করিস কেনো?
-অফিসে ঢুকলে আমার দম বন্ধ হয়ে আসে। আমি যাবো না (কথাটা বলে রাসিফ তার রুমে গেলো)
-এগুলো কোনো কথা? ছেলেটা যে কবে ঠিক হবে কে জানে
-তোমরাই এমন বানিয়েছো(ইয়াশা)
-তুই একটু ওরে বুঝিয়ে বলিস তো
-ও যে মানুষ আমার কথা শুনবে না, উল্টো আমাকে বুঝ দিয়ে বসিয়ে রাখবে
-হুমমম
-বাদ দাও দুপুরে কি রান্না করবা?
-তুই কি খাবি বল
-তুমি তো জানো আমার গরুর গোশত খুব প্রিয়,
-ওটা তো রান্না করাই আছে
-আগেই রান্না করে রাখছো!
-তুই আসবি জেনেই তো রেখেছি
-কোথায়?
-তুই দাঁড়া আমি আনছি
,,
ইয়াশা কে এক বাটি গরুর গোশত দেয় তার খালা। চপ চপ শব্দে গোশত খেতে খেতে রাসিফ এর রুমে যায় ইয়াশা।
-এই যে দেখ খাচ্ছি (ইয়াশা)
-খা, খাওয়ার জন্যই জন্ম তোর। এত খাস তো শরীরে একটু গোশত বারতে দেখলাম না,
-এটাই টেকনিক
-পাঙ্গাশ খাইস মোটা হবি
-বেশি বুঝিস তাই না। আচ্ছা তুই কি খুঁজিতেছিস?
-আর বলিস না, দুই হাজার টাকা কই যে রাখছি খুঁজে পাচ্ছি না
-আমি হেল্প করবো?
-দরকার নেই
-ওকে
,,
শুভ খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত।
-পেলি না? (ইয়াশা)
-উহুমমম (রাসিফ)
-পাবিও না, মন তো থাকে সবসময় ঘরের বাইরে
-ঘরের ভেতরে রেখে কি করবো?
-শোন তোকে একটা ভালো বুদ্ধি দেই, একটা বিয়ে কর৷ বিয়ে করলেই তুই ঘরমুখো হবি।
-ফালতু বক বক বন্ধ কর, টাকা খুঁজে দে
-আহা এখন কেন? তখন বললাম কানে গেলো না।
-খুঁজে দে না একটু
,,
এবার দুজন মিলে খোঁজা শুরু করলো। রাসিফ-ই তার টাকা খুঁজে পেলো।
-এই দেখি টাকা গুলো এদিকে দে (ইয়াশা)
-কেনো??(রাসিফ)
-দেখবো একটু
-এই যে এক, এই যে এক, দুহাত মিলে দু-হাজার
,,
ইয়াশা রাসিফ এর এক হাতের এক হাজার টাকা নিয়ে নিজের কাছে রাখলো।
-এটা কি হলো?? (রাসিফ)
-আমি খুঁজেছি, এটা আমার মজুরি(ইয়াশা)
-দেখ এত অল্প সময়ে এত টাকা কেউ মজুরি দেয় না। আমাকে টাকা টা দে আমি একশ টাকা দিয়ে দিবোনি তোকে
-না না একশ টাকায় হবে না
-আচ্ছা পরে বেশি করে দিবোনি এখন তো টাকা টা দে
-টাকা দিয়ে কি করবে
-আছে একটা কাজ
-জি এফ এর জন্য গিফট কিনবি
-জি এফ টি এফ নাই
-তোর যা অবস্থা কেউ তোকে পছন্দই করবে না
-তোকে কয়জন পছন্দ করে?
-করে অনেকেই
-সবাইকে কি বিয়ে করবি?
-না
-তাহলে সব মেয়ে আমাকে পছন্দ করুক এটা আমি চাই না। আমার বউ আমাকে পছন্দ করুক এটাই চাই
-আজাইরা লজিক দিয়ে কথা ঘুরানো তোর পুরোনো অভ্যাস
-ফালতু একটা কথা নিয়ে তর্ক করা তোর পুরনো অভ্যাস
-তুই চোর, খালার ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করিস
-সেই টাকা আমি রুমে রাখার পর কে চুরি করেছিলো? তুই চুরি করেছিস চুন্নি
-দু-বছর আগে তুই আমার গালে চুমু খেয়েছিস আমি এখন খালা কে বলে দিবো
-আরে আমি কখন করলাম কি বলিস এগুলা?
-…(ইয়াশা খালার কাছে যাওয়ার জন্য রওনা হয়েছে)
-মেয়ে মানুষ এমন কেন? এখন কত সুন্দর করে মিথ্যা কথা বলবে, আমার দুদিন এর জন্য বাসা ছাড়া হতে হবে…
চলবে