#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব ১২
-আপনি কী রাতে কোথায়ও গিয়েছিলেন?
আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টাই বাঁধছিল ইরান। আনাবিয়া ঘুম থেকে উঠে বিছানায় বসে। ঘোলাটে চোখে ইরানের দিকে তাকিয়ে উক্ত প্রশ্নটি করে। হকচকিয়ে যায় ইরান। নিজেকে স্বাভাবিক রেখে আনাবিয়ার উদ্দেশ্যে বলে,
-তোমার কেনো মনে হলো আমি রাতে কোথায়ও গিয়েছিলাম?
-আমি ঘুমের মধ্যে দেখলাম আপনাকে বাহিরে যেতে। এখন সেটা সত্যি নাকি স্বপ্ন বুঝতে পারছি না।
-বাহ্! তোমার স্বপ্নেও আমিই রাজত্ব করি! তো মনে কবে রাজত্ব করছি জানতে পারি কী?
-আমার মন অনেক ছোট আপনাকে জায়গা দেওয়ার মতো জায়গা অবশিষ্ট নেই।
বিছানা থেকে নেমে আইম দিতে দিতে ওয়াশরুম চলে যায় আনাবিয়া। ইরান কোট পড়ছে। অদ্ভুত এক হাসি তার মুখে। বিড়বিড় করে বলে,
-তোমার জায়গা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। আমি নিজের জায়গা নিজেই তৈরি করে নিতে পারব।
নাস্তা করে অফিসে চলে যায় ইরান। আনাবিয়া হাঁটতে হাঁটতে ইসরাফের রুমের কাছে আসে। দরজা খোলাই ছিল। হালকা ধাক্কা দিতেই খুলে যায়। আনাবিয়া ভিতরে ঢুকে। পুরো ঘর জুড়ে ইসরাফের অনেক ছবি। আনাবিয়া কিছুক্ষন ইসরাফের রুমে চোখ বুলিয়ে বাহিরে এসে পরে। জেসিকা তৈরি হচ্ছে। আনাবিয়া আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-কোথাও যাবে জেসিকা?
-হ্যাঁ মামী। ইসরাফ মামাকে দেখতে যাবো হসপিটালে। আপনি যাবেন?
-না।
আনাবিয়া দুপুরের রোদের মধ্যেই হাঁটতে হাঁটতে বাহিরে আসে। পুলের পানিতে পা চুবিয়ে বসে থাকে। হাতে সেলফোন। মেসেজে ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলছে। রাকিয়া তনুসফা আর জেসিকা হসপিটালে চলে যায়। রাকিয়া যাওয়া আগে ভৃত্যদের বলে গিয়েছে আনাবিয়ার খেয়াল রাখতে। আনাবিয়া ফোন টিপছে আর কিছুক্ষন পর পরই আনমনে হেসে উঠছে।
-এক্সকিউস মি?
পিছন থেকে কারো আওয়াজ শুনে আনাবিয়া পিছনে ফিরে তাকায়। নূরানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মৃদু হাসে সে। নূরান এগিয়ে আসতে আসতে বলে,
-বাড়ির ভিতরে কেউ নেই? একটু দরকারে এসেছিলাম কিন্তু কাউকে খুঁজে পেলাম না।
-সবাই ইসরাফকে দেখতে হসপিটালে গিয়েছে।
-আপনি যাননি?
-না যাইনি।
নূরান আনাবিয়ার পাশে ইশারা করে বলে,
-বসতে পারি?
-সিউর।
নূরানও আনাবিয়ার মতো পা ডুবিয়ে বসে পরে। আনাবিয়া ফোনটা কিনারে রাখে। নূরানকে জিজ্ঞেস করে,
-আপনি কোন দেশে থাকেন?
-মালদ্বীপ।
-মালদ্বীপ! আমি টিভিতে দেখেছি অনেক সুন্দর দেশটা।
-হ্যাঁ সুন্দর তবে আপনার থেকে কম।
নূরানের কথায় আনাবিয়া শব্দ করে হেসে দেয়। নূরান আহাম্মকের মতো চুল হাতায়। আনাবিয়া হাসি আটকে বলে,
-ফ্ল্যার্টিং করছেন?
-না। জাস্ট বললাম। আপনাকে দেখেও লাগে না আপনি বাংলাদেশি?
-হুম, আমি রাশিয়া থেকে এসেছি।
-ওওও! রাশিয়ান সুন্দরী?
-আপনিও না! স্টাডি করেন?
-না জব করি। আপনি?
-মেডিকেল কলেজে পড়ছি। আমরা হয়তো সমবয়সী। আপনি আমাকে তুমি করেই বলতে পারেন।
-তাহলে আপনিও তুমি বলবেন?
-ওকে বলবো।
নূরান চুপ হয়ে যায়। অকারণেই আনাবিয়ার সামনে সরম পাচ্ছে সে। হাত ঘড়িতে সময় দেখে বলে,
-আচ্ছা আমি তাহলে আসি। এখানে যেহেতু আছ আবারও দেখা হবে।
প্রতিউত্তরে আনাবিয়া শুধু হাসি দেয়। নূরান চলে যায়। আনাবিয়া আশেপাশে তাকিয়ে লাফ দেয় স্বচ্ছ পানির মধ্যে। মনের সুখে সাঁতার কাটতে থাকে সে। কিছুক্ষন সুমিং করে পুল থেকে উঠে যায়। সাদা টপ্স পড়ায় পানিতে ভিজে শরীরের সাথে লেগে আছে। ওড়না দিয়ে শরীর ঢাকতে ঢাকতে সামনে আগাচ্ছে। হঠাৎ অসাবধানতার কারণে কারো সাথে ধাক্কা লেগে নিচে পরে যেতে নেয় আনাবিয়া। কিন্তু পরে না। সামনের মানুষটি বলিষ্ঠ হাত দিয়ে আনাবিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে। ইরানের কঠিন চেহারা দর্শন হতেই আনাবিয়া ইরানের থেকে দূরে সরে যেতে নেয়। কিন্তু ইরান নিজের হাত সরায় না। আরো শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে আনাবিয়াকে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে ব্যর্থ হয় আনাবিয়া। কিছু একটা ভেবে আচমকা ইরানের গলায় ভীষণ জোরে কামড় বসিয়ে দেয়। ব্যাথায় আতনাদ করে আনাবিয়াকে ছেড়ে দেয় ইরান। আনাবিয়াকে আর কে পায়। এক দৌড়ে বাড়ির ভিতরে চলে যায়।
ইরান গলায় হাত দিয়ে মুচকি মুচকি হাসে। বিয়ের পর আনাবিয়ার দেওয়া প্রথম ছোঁয়া এটা। একটু বেশিই স্মরণীয় হয়ে থাকবে।
___________________🌸
রাতে তারা এক বিছানায় ঠিকই ঘুমায় কিন্তু দুইজনের ঘুম একটু বেশিই ভালো। আনাবিয়া নাতো ঘুমের মধ্যে ইরানের কাছে আসে আর ইরান নাতো যায়। প্রতিরাতে একসাথে থাকলেও আনাবিয়ার মনে ঐরকম কোনো চিন্তা ভাবনা জন্ম নেয়নি। ইরান পুরুষ মানুষ। আনাবিয়ার মুখ দেখেই রাত পার করে সে। ঘুমিয়ে গেলে যদি কোনোভাবে আনাবিয়াকে ছুঁয়ে বিরক্ত করে এই ভয়ে।
ড্রেস চেঞ্জ করে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে আনাবিয়া। ইরান কী জানো করছে। আনাবিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,
-আপনি হঠাৎ এইসময় বাসায় এলেন কেনো? অফিসে কী মন বসে না আপনার?
-না একদমই বসে না। যার বাসায় এইরকম সুন্দরী বউ তার কী অফিসে মন বসবে?
আনাবিয়া কিছু বললো না। আয়নার সামনে যেয়ে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখতে থাকে। ইরান আনাবিয়ার ঠিক পিছনে এসে দাঁড়ায়। মুগ্ধ হয়ে বলে,
-আমাদের একসাথে একটু বেশিই পারফেক্ট লাগে না? কারো নজর না লাগুক।
-একদমই ডিসগাস্টিং লাগে।
উক্তিটি বলে আনাবিয়া আয়নার সামনে থেকে সরে যেতে নেয়। ইরান আনাবিয়ার কোমর ধরে পুনরায় আয়নার সামনে দাঁড় করায়। আনাবিয়ার কাঁধে নিজের থুতনি রাখে।
-চুল বড় করবে। কাল যেভাবে সেলোয়াড় কামিজ পড়েছিলে সেভাবেই ড্রেসআপ করবে।
আনাবিয়া ভোঁতা মুখে মাথা ঘুরিয়ে ইরানের দিকে তাকায়। নড়তে পারছে না সে। জীবনে প্রথম কোনো পুরুষের ছোঁয়া পেয়ে একদম জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। রাশিয়ার বেশিরভাগ মেয়ে বিয়ের আগেই নিজেদের ভার্জিনিটি হারিয়ে ফেলে। সেখানে আনাবিয়া তার ২৫ বছর বয়সে একটা রিলেশনও করেনি। ছেলেদের সাথে রাত কাটানো তো দূরের কথা। একমাত্র এই বাংলাদেশি ছেলে ইরানই পারল তার এতো সনিকটে আসতে। আনাবিয়া জানো কিছু বলার ভাষা হারিয়ে ফেললো। ইরান স্মিত হেসে বলে,
-এভাবে তাকিয়ে থেকো না। হয়তো তুমি প্রেমে পরবে নয়তো তোমার চাহনি দেখে আমি প্রেমে পরে যাবো।
-আপনি যে আমার প্রেমে পড়েছেন সেটা কিন্তু আমি বুঝতে পেরেছি। ২৫ বছরের জীবনে অনেক কিছুই দেখেছি এবং জেনেছি।
ইরান আশ্চর্য হলো না। স্বাভাবিক থেকেই বলে,
-তাই? তাহলে বুদ্ধি আছে তোমার।
-বুদ্ধিহীন আপনি। যে নিজেকে একটু বেশিই চতুর ভাবে।
-ওকে। তো ধরে নেবো তুমিও ভালোবেসে ফেলেছো?
আনাবিয়া এবার ইরানের হাত নিজ কোমর থেকে সরিয়ে দেয়। বাঁকা হেসে বলে,
-আমার কাছে এই বিয়েই মূল্যহীন আর ভালোবাসা! ঐসব ফালতু টাইম ওয়েস্ট ছাড়া কিছুই নয়। আমাকে ইমপ্রেস করতে এসে বিপদে পরে যাবেন ইরান শেখ। আমি সাধারণ মেয়ে নই। তাই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিন।
-অফ কোর্স তুমি অসাধারণ। কজ ইউ আর ওয়াইফ অফ ইরান শেখ। তোমার ভালোবাসার প্রয়োজন নেই। আমার একার ভালোবাসা দিয়েই জীবন পার হয়ে যাবে। বাট ডিভোর্স ওয়ার্ড দ্বিতীয়বার মুখে এনো না।
আনাবিয়া দূরে সরে যায়। শান্ত স্বরে বলে,
-আমি অন্য রুমে শিফট হতে চাই।
-হাসব্যান্ড যেখানে ওয়াইফও সেখানে। সারাদিন যেখানে মন চায় সেখানে যাও তবে রাতে তোমাকে এই রুমেই উপস্থিত হতে হবে।
-আই হেট ইউ ইরান শেখ।
-আই লাভ ইউ টু সুইটহার্ট। আমি অফিসে যাচ্ছি। রাতে আসতে লেট হবে।
🌸
আরো এক সপ্তাহ পর। ফ্রাইডে আজ। সকাল সকাল তনুসফা শেখের সাথে তুমুল ঝগড়া লেগেছিল ইরানের। তনুসফা শেখের একটাই কথা এই মেয়েকে ডিভোর্স দিয়ে দিতে। আর ইরান মরে যাবে তবুও ডিভোর্স দেবে না। শেষে জেদ করে ইরান বলেছে সে আজই আনাবিয়াকে নিয়ে তার বাসায় চলে যাবে। রাকিয়া ছেলেকে এতো বুঝালো কিন্তু ঘাড়তেড়া ইরান আজ কারো কথা শুনতে ইচ্ছুক না। এখন বিকেল। আনাবিয়া গোমড়া মুখে বসে আছে। ইরান রুমে আসতেই আনাবিয়া বলে,
-আমি এখান থেকে কোথায়ও যেতে চাই না।
-যেতে হবে কিছু করার নেই। আমি গেলে তোমাকে এখানে একা রেখে যাবো না।
রেগে যায় আনাবিয়া। কয়দিন ধরে সে জাস্ট বিরক্ত ইরানের ওপর। এটা করলে বাধা দেয়, ওটা করলে বকে, কোনো ছেলের সাথে কথা বললে কথা শুনায়। আনাবিয়া চিৎকার করে বলে,
-কী পেয়েছেন আপনি? আমি বিয়ে মেনে নিয়েছি? একদমই না। আপনার মতো মানুষকে আমি কখন স্বামী হিসেবে মানবো না ইরান। বুঝলেন? আরেকটা কথা, আমার পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করবেন না আপনি।
-একশত বার করব। কী করবে তুমি?
-মাথা ফাঁটিয়ে হসপিটালে নিজের ভাইয়ের পাশের ক্যাবিনে ভর্তি করে দিয়ে আসবো।
-তাই?
ইরান বুকে দুইহাত গুঁজে দাঁড়ায়। নিশ্চিত ভঙ্গিতে বলে,
-তৈরি তো তুমি? চলো তাহলে।
-যাবো না আমি।
-বেশি কথা শুনতে চাই না আমি আনাবিয়া। নিচে এসো চুপচাপ।
ইরান চলে যায়। উপায় না পেয়ে আনাবিয়াও পিছু পিছু নিচে চলে যায়।
গাড়িতে বসে কিছু সময়ের মধ্যেই ইরানের নিজস্ব বাসায় চলে আসে দুইজন। আনাবিয়া গোমড়া মুখে বাড়ির ভিতরে ঢুকে। ডুপেক্স বাড়ি। দেখতে খারাপ নয় বাট আনাবিয়ার ঐ বাসায়ই ভালো লেগেছে। গম্ভীর মুখে বেড রুমের ভিতরে ঢুকে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দেয়। এই রুমটা বেশি সুন্দর। আনাবিয়া বিছানায় বসলো। বাসায় বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত সে। যাও একটা ফ্রেন্ড পেয়েছিল সেও চলে গেলো। নূরানের দাদি অসুস্থ তাই তাঁদের গ্রামে যেতে হয়েছে কয়দিনের জন্য। আনাবিয়া বসে বসে ভাবতে লাগলো তার অনিশ্চিত ফিউচার নিয়ে। ইরানের সাথে জীবনে কিভাবে আগে বাড়বে!
তীব্র আওয়াজ তুলে মুঠো ফোনটা বেজে উঠে। ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে আনাবিয়া। স্ক্রিনে দাদির নাম দেখে দুই ঠোঁট প্রসারিত হয়। কল রিসিভ করে বলে,
-হ্যালো কিউটি।
-একদম কথা বলবে না তুমি! ঐদেশে যেয়ে বিয়ে করে ফেলেছো আমাদের না জানিয়ে।
আনাবিয়া হতভম্ব হয়ে যায়। থমথমে গলায় বলে,
-কিউটি তোমাদের কে বললো এটা?
-লিলি এসেছিল আজ। কথায় কথায় ও বলে দিয়েছে।
-আসলে কিউটি আমার অনেক পছন্দ হয়েছিল ছেলেকে তাই হঠাৎ করেই বিয়ে করে ফেলেছি।
-আমি কিছু শুনতে চাই না। আজ রাতের ফ্লাটে আমি আর তোমার ডার্লিং বাংলাদেশ আসছি। আমার একমাত্র নাতনির হাসব্যান্ড দেখার তর সইছে না আমার।
-কিইই? কালই আসছো?
-হ্যাঁ, রাখি ফোন।
-ঠিক আছে। এয়ারপোর্টে এসে আমাকে কল দিও আমি রিসিভ করতে যাবো।
-আচ্ছা।
আনাবিয়ার মাথায় বাঁশ ভেঙে পরে। মিথ্যে তো বলে দিলো কিন্তু তারা আসলে তো জেনে যাবে আনাবিয়া আর ইরানের মধ্যে স্বাভাবিক সম্পর্ক নেই। আনাবিয়া দরজা খুলে বাহিরে বেরিয়ে আসে। ড্রইংরুমে ইরান আর তাজীব কথা বলছিল। আনাবিয়া সেখানে যেয়ে চিন্তিত ভঙ্গিতে বলে,
-ইরান, অনেক বড় একটা গ*ন্ডগো*ল হয়ে গিয়েছে।
-কী হয়েছে?
-আমার গ্রান্ডমা এন্ড গ্রান্ডফাদার আসছে কাল।
-তো এখানে চিন্তার কী? বরং তোমার তো খুশি হওয়ার কথা!
আনাবিয়া মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে পরে। তাজীব আর ইরান তাজ্জব বনে আনাবিয়ার কাজ দেখছে। আনাবিয়া নিজের দুই গালে হাত দিয়ে বলে,
-আপনি আমার দাদা দাদিকে চিনেন না! তারা অন্য সংস্কৃতির মানুষ। তাঁদের চালচলন, ধারণা,জ্ঞান অন্যরকম। আবার আমি তাঁদের বকার থেকে বাঁচতে বলেছি যে আমাদের লাভ ম্যারেজ হয়েছে। এখন আমাদের দেখলেই তো বুঝে যাবে যে আমার কথা মিথ্যা।
ইরান বাঁকা হাসে। শান্ত কণ্ঠে বলে,
-এটা তো আমার জন্য আরো ভালো। যে কয়দিন তারা থাকবে তুমিও একটু আমাকে ভালোবাসার নাটক করবে। তাহলেই তো হলো।
আনাবিয়া রাগী চোখে ইরানের দিকে তাকায়। তাজীব আনাবিয়ার রাগী মুখ দেখে পাশ কেটে উঠে চলে যায়। যেতে যেতে বিড়বিড় করে বলে,
-যে সাহসী মানুষ কাউকে ভয় পায় না, সেও তার স্ত্রীকে এতো ভয় পায়! ভাই আমি বিয়ে করছি না এই জীবনে।
___________________🌸
পরেরদিন সকালে আনাবিয়া ভৃত্যদের বলে নিজের মন মতো পুরো বাড়ি সাজাচ্ছে। ইরান আজ অফিসে যায়নি। দুতালার বারান্দায় দাঁড়িয়ে আনাবিয়াকে দেখছে সে। একদম আদর্শ গৃহিনীর মতো আনাবিয়া হুকুম চালাচ্ছে। কিছুক্ষন পর পর কপালে দুই ভাঁজ পড়ছে। ইরান এইরকম আনাবিয়াকেই তো চায়। আনাবিয়া সহসা ওপরে তাকাতেই ইরানের সাথে চোখাচোখি হয়। ইরান বাঁকা হেসে ঠোঁট চোখা করে চুমু দেখায়। আনাবিয়া বিরক্ত দেখিয়ে নজর সরিয়ে ফেলে।
বাড়িতে একজনও ছেলে কাজের লোক নেই। ইরান ইচ্ছে করে কোনো ছেলেকে বাড়িতে রাখেনি। তার অন্দরমহলে তার রানীকে শুধু সে দেখবে পর পুরুষ না। সব কাজ শেষ করে ফ্রেশ হয়ে নেয় আনাবিয়া। বিকেলে দাদির ফোন আসতেই ইরান আর আনাবিয়া বেরিয়ে পরে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে। এতজন গার্ড দেখে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকায় আনাবিয়া। ইরান বলে,
-আচ্ছা তারা কী বাংলা পারে? অথবা বুঝে?
-উহুম। শুধু কয়েকটা বাক্য পারে কিন্তু বুঝে না।
-ওহ। তাঁদের ভাষা কী আমি বুঝবো?
-ইংলিশে বললে বুঝবেন আমাদের ভাষায় বললে আর কিভাবে বুঝবেন!
-সেটাই তো!
এয়ারপোর্টে এসে দাঁড়ায় তারা দুইজন। আনাবিয়া অস্থির হয়ে হাত কচলাচ্ছে। ইরান রোবটের মতো চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। তাঁদের সাথে তাজীবও এসেছে। ইরানের পাশে দাঁড়িয়েছে সে। বেশ কিছু সময় অপেক্ষা করার পর আনাবিয়া অতি পরিচিত মুখশ্রীর দর্শন পায়। দাদা দাদির সাথে নিজের প্রিয় বন্ধুদের দেখে খুশিতে আত্মহারা আনাবিয়া। দৌড়ে যেয়ে দাদি দাদাকে জড়িয়ে ধরে। তাজীব ইরানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,
-স্যার এখানে ম্যামের দাদির কোনটা? উইযে সাদা রঙের চুল আলীটা নাকি ম্যাম যাকে জড়িয়ে ধরলো সে?
ইরান বিরক্ত হয়ে বলে,
-আমি নিজেও বুঝতে পারছি না তাজীব।
-ওহ! আচ্ছা স্যার তারা না কি শুধু দুইজন আসবে? বাকি গুলো কী তাঁদের বডিগার্ড?
-জাস্ট শাটআপ তাজীব।
আনাবিয়া দাদি দাদাকে ছেড়ে বন্ধুদের ওপরে ঝাঁপিয়ে পরে। পাঁচজন তাকে আঁকড়ে ধরে। খুশিতে কান্না করে দেয় আনাবিয়া। ছেলেদের এভাবে জড়িয়ে ধরা পছন্দ হলো না ইরানের। তবুও চুপচাপ এক কিনারে দাঁড়িয়েই রইলো। আজ হয়তো বোবার মতো দাঁড়িয়ে থাকাই তার কাজ! সবাইকে এদিকে আসতে দেখে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ায় ইরান। সালাম দেবে নাকি ভেবে পেলো না। সাদা চামড়ার একজন মহিলা ইরানের সামনে আসে। মহিলাটিকে দেখে বুঝাই যাচ্ছে অনেক স্টাইলিশ সে। আনাবিয়ার মতোই ফেইস কাটিং। পরনে পেন্ট আর লেডিস শার্ট। পাশেই একজন বৃদ্ধ লোকও আছে। একদম ফিটফাট। ইরান বুঝলো এরাই আনাবিয়ার দাদা দাদি। কী সুন্দর ক্যাপল! ইয়ং থাকতে হয়তো ম্যাচ ফর ইচ আদার ছিল!
আনাবিয়া ইরানকে দেখিয়ে কাঁপাকাঁপা কণ্ঠে বলে,
-কিউটি তোমাদের নাতিন জামাই।
সবাই একসাথে ইরানের দিকে তাকায়। ইরান হালকা হাসার চেষ্টা করল। এলিয়েনের মতো তাকে দেখে আনাবিয়ার দাদির গম্ভীর মুখে হাসি ফুটে। মুগ্ধ হয়ে বলে,
-মাশাআল্লাহ! আমার নাতিন জামাই তো ডায়মন্ডের টুকরা।
ইরান কিছুই বুঝলো না। আনাবিয়া মেকি হাসি দিয়ে বলে,
-কিউটি তোমার নাতিন জামাই এই ভাষা বুঝে না ইংলিশে বলো।
-ওহ হ্যাঁ, একদম আমার নাতিনের যোগ্য ছেলে। আই লাইক ইউ সো মাচ নাতিন জামাই।
-ধন্যবাদ গ্রান্ডমা। আপনারা অনেক হয়রান হয়ে এসেছেন। বাকি পরিচয় বাসায় পৌঁছে হওয়া যাবে।
>>>>চলবে।