সূর্যের_পারিজাত (পর্ব ১৪)

#গল্প১৩৮

#সূর্যের_পারিজাত (পর্ব ১৪)

১.
আজ বইমেলার প্রথম দিন। প্রকাশক সাহাদত হোসেন একবার করে মনে করিয়ে দিয়েছিলেন আসার জন্য। ফাইনাল প্রিন্ট এখনো দেখার সুযোগ হয়নি। প্রচ্ছদটা ওরাই করে দিয়েছিল, প্রথমে পারিজাতের পছন্দ হয়নি। কেমন একটা অন্ধকার মতো প্রচ্ছদটা। পারিজাতের অনুরোধেই আগুন রঙের সুন্দর একটা প্রচ্ছদ করা হয়েছে। সূর্যের বুকটা ঢিপঢিপ করছে, কেমন যে প্রিন্ট এল! পারিজাত এখনো এসে পৌঁছায়নি। সূর্য অধীর আগ্রহে ওর আসার অপেক্ষা করে।

পারিজাত যখন আসে তখন বিকেলের সূর্যকে আলসেমি পেয়ে বসেছে, যেন সারাদিনের কাজ শেষে এখন একটু জিরিয়ে নেওয়া। পারিজাতের মুখে শেষ বেলার আলোটা লুকোচুরি খেলছে, সূর্য মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে থাকে। একটা মানুষকে ও যতবার দেখেছে ততবারই নতুন করে মুগ্ধ হয়েছে।

পারিজাত কাছে এসে উত্তেজিত গলায় বলে, ‘সূর্য, বই দেখেছ?’

সূর্য অবাক গলায় বলে, ‘তোমাকে ছাড়া বই দেখব! পাগল নাকি। তোমার জন্যই অপেক্ষা করছি।’

পারিজাতের আর দেরি সয় না, সূর্যের একটা হাত ধরে ওকে নিয়ে ময়ূখ প্রকাশনীর স্টলের দিকে এগোয়। আজ প্রথম দিন, তাই কোনো ভীড় নেই। স্টলটা ফাঁকাই। সাহাদত সাহেব নিজে দাঁড়িয়ে সব তদারকি করছেন। ওদের দেখেই সহাস্যে বলেন, ‘আরে, তোমরা এসে গেছ। দাঁড়াও বই দিচ্ছি তোমাদের।’

স্টলের একটা ছেলে কাগজের মোড়ক খুলে কিছু বই বের করে, একটা সূর্যের হাতে দেয়। সূর্য দমবন্ধ করে চেয়ে থাকে বইটার দিকে, কী সুন্দর ঝকঝকে প্রিন্ট। সূর্য দ্রুত বইয়ের ভেতরটা খোলে, তারপর সন্তুষ্ট চিত্তে মাথা নাড়ে, বলে, ‘খুব সুন্দর প্রিন্ট হয়েছে। ঠিক এমনটাই চেয়েছিলাম।’

সূর্য পারিজাতের হাতে বইটা দেয়। পারিজাত অনেক মায়া নিয়ে বইটা হাতে নেয়। একটা হাত বোলায় প্রচ্ছদের উপর, কী মসৃণ! ভেতরের পাতাটা উল্টাতেই চোখে পড়ে,

উৎসর্গঃ এই পৃথিবীর দু’জন মায়াময় মানুষ, মেহেরুন্নেসা আর পারিজাত, যাদের জন্য সূর্য বেঁচে থাকে।

পারিজাতের বুকে একটা দারুণ ভালো লাগা ছড়িয়ে পড়ে। কেন যেন বেঁচে থাকাটা অনেক আনন্দের মনে হয়। সূর্য কাকে উৎসর্গ করেছে সেটা ও আগে জিজ্ঞেস করেনি, ইচ্ছে করেই করেনি। চায়নি ওর মনের উপর চাপ পড়ুক।

সেদিন ওরা অনেকক্ষণ থাকে, গল্প করে। পারিজাত পুরো প্ল্যান করে ফেলে, বলে, ‘তোমার বইটা ফেসবুকে প্রমোশন করতে হবে। আর আমাদের তো অনলাইন বুকস্টোরটা আছেই। সূর্যের পারিজাতের পেজ থেকে প্রতিদিন প্রমোশনাল পোস্ট থাকবে যাতে আমাদের কাস্টমার যারা আছে তারা অন্তত জানবে। আর তুমি কিন্তু আজ থেকে প্রতিদিন এখানে আসবে। লেখক উপস্থিত থাকলে বই বিক্রি হয়। ‘

সূর্য হাসে, বলে, ‘এত কিছু করতে হবে?’

পারিজাত দুষ্টুমি করে বলে, ‘জ্বি, মশাই। আপনি শুধু দেখেন আমি কী করি।’

সূর্য একটা ভালো লাগা নিয়ে পারিজাতের দিকে তাকিয়ে থাকে, ওর নিজেরও ভালো লাগে। পারিজাতের জন্য ও নিজে কিছু একটা করতে পারছে, যেটা একদমই ওর নিজস্ব।

ফেরার সময় প্রকাশক সাহাদত হোসেন সূর্যের হাতে দশটা বই দিয়ে বলে, ‘এটা আপনার জন্য, লেখক কপি। আর ভাই, মেলায় নিয়মিত আসবেন কিন্তু। ম্যাডাম আপনিও আসবেন। মানুষজন যখন জানবে আপনারাই সেই দু’জন তখন বই হু হু করে বিক্রি হবে।’

পারিজাত হাসে, মাথা নেড়ে সম্মতি জানায়। বিদায় নেয়ার সময় পারিজাত আবদারের গলায় বলে, ‘আমায় একটা বই দেবে না?’

সূর্য অপ্রস্তুত হয়ে যায়, বোকা বোকা গলায় বলে, ‘কী বলো! বই তো সব তোমারই। তুমি আমাকে দুটো দিয়ে বাকিগুলো নিয়ে যাও।’

পারিজাত মাথা নাড়ে, ‘উহু, আগে আমাকে একটা দাও।’

সূর্য হেসে ওর হাতে একটা বই দিতেই পারিজাত আবার আবদারের গলায় বলে, ‘উহু, এভাবে না। অটোগ্রাফ কই?’

সূর্য এবার বিপাকে পড়ে, কি লেখা যায় ওকে? একটু ভেবে লেখে ‘পারিজাত শুধু সূর্যের জন্যই ফোটে না, সূর্যও পারিজাতের জন্যই উদিত হয় নতুন ভোরের প্রত্যাশায়। পারিজাত ছিল বলেই সূর্য আবার আলো ছড়াতে পারছে।’

বইটা হাতে নিয়ে পারিজাত দেখে, তারপর নরম গলায় বলে, ‘সূর্যের জন্যই পারিজাত বেঁচে থাকে। আর শোন, বাসায় মিষ্টি নিয়ে যেও। মাকে বইটা দেখাবা, খুব খুশি হবেন।’

সূর্য মাথা নাড়ে, আজ সত্যিই ওর আনন্দের দিন, প্রিয় দু’জন মানুষের জন্য কিছু করতে পারার ভালো লাগাটা ওকে জড়িয়ে ধরে।

সেদিন বাসায় ফিরেই মায়ের হাতে বইটা দেয়। মেহেরুন্নেসা গভীর আগ্রহের সাথে বইটা উল্টেপাল্টে দেখেন। উৎসর্গের পৃষ্ঠায় এসে চোখ থেমে যায়, একটা আনন্দ চোখের তারায় ঝিলিক দিয়ে যায়। ভীষণ গর্ব হয় ছেলের জন্য, সূর্য যে তার গুণী ছেলে, ভালো ছেলে, ও অপরাধী না। ইচ্ছে করছে পৃথিবীর সবাইকে ডেকে বলেন, এই দ্যাখো, আমার সূর্য খুনী না, একজন সত্যিকারের সাহসী মানুষ ও।

২.
সূর্য শুকনো মুখে বইমেলায় ময়ূখ স্টলের সামনে দিয়ে হাঁটাহাঁটি করছে। গত কয়েক দিন ধরে ও বিকেলেই চলে আসে, রাত অবধি থাকে। পারিজাত মাঝে মাঝে আসে, ও এখন বুকশপটায় সময় দেয়। কিন্তু এখন পর্যন্ত একটা বই বিক্রি হয়নি। বাসায় ফিরলেই মায়ের সাথে মুখোমুখি হতে এখন কেমন একটা সংকোচ লাগে। পারিজাতও ইদানীং সচেতন ভাবেই বই বিক্রির কথাটা এড়িয়ে যায়। সূর্য ওকে এক দু’বার বলার চেষ্টা করেছে, পারিজাত ওকে আস্বস্ত করেছে, ‘আরে, একে তো নতুন বই তার উপর মেলা মাত্রই শুরু হলো, ক’টা দিন যেতে দাও, লোকজন জানুক, দেখবে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়েছে।’

সূর্যের অবশ্য তেমনটা মনে হয় না। এই যে একজন ওর বইটা এখন নেড়েচেড়ে দেখছে, সূর্য আড়চোখে আগ্রহ নিয়ে দেখতে থাকে। বুক ঢিপঢিপ করে, লোকটা কি বই কিনবে? গত কয়েকদিন ধরেই দু’ একজন বইটা নিয়ে একটু দেখে, তারপরই রেখে দেয়। কিন্তু, এই লোকটা পড়ছে। কিছুক্ষণ পর সূর্যের অমূলক সব ভয় দূর করে লোকটা যখন বই কেনে, ও বুকের ভেতর একটা অবিশ্বাস্য আনন্দ টের পায়। দোকানের ভেতরে থাকা ছেলেটা ওকে ইশারায় দেখিয়ে দিতেই লোকটা ওর দিকে এগিয়ে আসে। আসলে এই পাবলিশার্সটা অনেক বড়, ওর মতো নতুন লেখকদের ভেতরে বসার সুযোগই হয় না। সূর্য তাই সারাটা বেলা স্টলের বাইরে দিয়েই পায়চারি করে।

লোকটা কাছে আসতেই ও হাসিমুখে তাকায়,’ভাই, বইটা কয়েক পাতা পড়েই খুব ভালো লেগেছে, একটা অটোগ্রাফ দেবেন?’

সূর্য বিনয়ের সাথে বলে, ‘অবশ্যই।’

তারপর কাঁপা হাতে এলোমেলো অক্ষরে সূর্য একটা লাইন লিখে দেয়। কেমন যেন একটা অনুভূতি হচ্ছে, এই বইমেলায় ওর লেখা বই একজন সম্পুর্ণ অচেনা মানুষ গভীর আগ্রহে কিনে নিচ্ছে, এর চেয়ে সুখের আর কী হতে পারে! খুব ইচ্ছে করছে পারিজাতকে ফোন দিতে, খবরটা জানাতে। কিন্তু, ভাবে, আচ্ছা আর কেউ যদি আজ কেনে তবে জানাবে।

সেদিন সন্ধ্যায় আরো সাতটা বই বিক্রি হয়। সূর্যের কিছুতেই বিশ্বাস হচ্ছে না। একদল কম বয়েসী ছেলেরা এসেছিল, ওরা কেন জানি ওর বইটা কিনে নিল, অটোগ্রাফ নিল। তাই দেখে স্টলের ভেতরে থাকা লোকজন ওকে বলল ভেতরে এসে বসতে। সূর্যের কেমন একটা সংকোচ লাগে। তাহলে কী ওর বই সত্যিই ভালো বিক্রি হচ্ছে??

সেদিন সন্ধ্যায় সূর্যের মুখটা বহুদিন পর আলোকিত দেখে পারিজাত, বুঝতে পারে আজ বইটা ভালো বিক্রি হয়েছে। উচ্ছাসের সাথে সূর্য সেই গল্প বলতে থাকে, প্রথম যে বইটা বিক্রি হলো তার গল্প, তারপর যে একসাথে আরো সাতটা। পারিজাত গভীর মায়া নিয়ে এই শিশুর মতো সরল মানুষটার মুখের দিকে মুগ্ধতা নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ভাবে, এবার বাবা মাকে বলতেই হয় বিয়ের কথাটা, তার আগে সূর্যের ফিরে আসার গল্পটাও।

সেদিন রাতে সূর্য যখন মাকে আজকের বইয়ের খবর বলে, মেহেরুন্নেসা আনন্দ নিয়ে ছেলের মুখে তাকিয়ে থাকেন, সূর্য যেন এখন সেই ছোটবেলায় ফিরে গেছে, বাচ্চাদের মতো খুশিতে চোখমুখ উজ্জ্বল হয়ে আছে। মনটা ভালো হয়ে যায় মেহেরুন্নেসার, সূর্য এভাবেই ওর অন্ধকার অতীত মুছে ফেলুক মানুষের মন থেকে।

এরপর দিন যখন আবার কিছু ছেলে বই কিনতে আসে তখন সূর্যের কৌতুহল হয়, একজকে অটোগ্রাফ দিতে দিতে কোথায় পড়ে জিজ্ঞেস করতেই ঢাকার একটা নামকরা কলেজের নাম বলে। সূর্যের হাতটা থেমে যায়, ভ্রু কুঁচকে ভাবে, আরে এটা তো পারিজাতের কলেজ, ও তো ওখানেই পড়ায়। তাহলে পারিজাত কী এদের পাঠিয়েছে! ভাবনাটা ভাবতেই ওর মনের সব আনন্দটুকু বিষাদে পালটে যায়।

ছেলেগুলোকে ও বিদায় করে স্টল থেকে বের হয়। পাশেই একটা রেডিমেড কফিশপ। এক কাপ কফি নিয়ে ও হাঁটতে হাঁটতে বইমেলার একপাশে লেকটার পাশে এসে বসে। পুরো লেক জুড়ে সুন্দর বসার ব্যবস্থা। অনেকেই বসে আছে, গল্প করছে প্রিয় মানুষের সাথে। শীতের শেষে বসন্তের ঠিক আগে আগে এই সন্ধ্যাগুলো আসলেই প্রিয় মানুষের পাশে বসে গল্প করার মতো সময়। সূর্য একটা খালি বেঞ্চিতে বসে, কফিতে চুমুক দিয়ে ভাবতে থাকে, পারিজাত ওর জন্য জীবনের সর্বস্ব করে যাচ্ছে। বুকশপটায় পারিজাতের অনেক টাকা খরচ হয়েছে, খুব যে একটা বই বিক্রি হয় তা না। কোনোমতে খরচটা ওঠে। ওর জন্যই যে পারিজাত এই বুকশপটা করেছে তা ও বুঝতে পারে। আবার এখন বইমেলায় ওর বই যাতে বিক্রি হয়, ওর মন যাতে খারাপ না হয় সেজন্য ও ওর ছাত্রদের পাঠিয়ে দিয়েছে বই কিনতে। এভাবে কী ও লেখক হতে পারবে! পারিজাতের এই চেষ্টাটা যদি সফল না হয়? ও যদি সূর্যের উপর আস্থা হারিয়ে ফেলে, কোনোদিন অধৈর্য হয়ে বলে ফেলে, ‘তোমাকে দিয়ে কিছু হবে না।’
ভাবনাটা ভাবতেই ওর অস্থির লাগে। নাহ, এভাবে হবে না, একটা চাকরির ব্যবস্থা করতে হবে, না হলে অন্য কিছু, যেটা থেকে অন্তত কিছু টাকা আসে। তা না হলে ও নিজেই স্বস্তি পাবে না যে।

৩.
নিলুফার বেগম আর আশরাফ চৌধুরী স্তম্ভিত হয়ে পারিজাতের দিকে তাকিয়ে আছেন। এই মেয়ে কী বলছে এসব! সূর্য নাকি জেল থেকে দু’মাসেরও বেশি সময় আগে মুক্তি পেয়েছে। এত দ্রুত! পারিজাত আবার খুঁজে খুঁজে বের করেছে সূর্যকে। এখন বলছে বিয়ে করবে আগামি মাসে!

আশরাফ সাহেব ক’দিন আগেই রিটায়ারমেন্টে গিয়েছেন। মনে একটা খেদ, মেয়েটা তার কথা শুনলই না। আর ভাগ্যটাও এমন করে একটা দূর্ঘটনার মোড়ে দাঁড় করিয়ে দিল যে কিছুতেই পারিজাতকে আর ফিরিয়ে আনতে পারেননি। এমন কেন হয় মানুষের জীবনে?

আশরাফ হতাশার গলায় বলেন, ‘আমি ভেবেছিলাম তুই ওই ছেলেটাকে ভুলে গেছিস। কিন্তু এখন দেখছি সেটা একদমই ভুল। আচ্ছা, তুই আমাকে বল তো, সূর্য এখন কী করবে? তুই সারাজীবন এই ছেলেটাকে বসে বসে খাওয়াবি?’

পারিজাত অসহিষ্ণু গলায় বলে, ‘বাবা, সূর্য নিজেই অনেক কিছু করতে পারে এবং সেটা সে করবেও। এর মাঝেই ও শাহবাগে একটা বুকশপ দিয়েছে, সাথে অনলাইন বুকস্টোরও আছে। নিশ্চয়ই ও ভালো করবে। আর তোমার জানার জন্য বলছি, এবারের বইমেলায় বিখ্যাত ময়ূখ পাবলিশার্স থেকে ওর একটা বই বের হয়েছে। কে বলতে পারে এই সূর্যই দেশের একজন নামকরা লেখক হয়ে গেল। আমার বিশ্বাস ও ভালো কিছুই করবে। যাই করুক, আমি যে ওকে ছাড়ছি না সেটা তোমরা এতদিনে নিশ্চয়ই বুঝে গেছ।’

নিলুফার বেগম আশাভঙ্গ দৃষ্টিতে মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছেন, ভেবেছিলেন মেয়েটা সূর্যকে ভুলে গেছে। ওর কলেজের ওই ধ্রুব ছেলেটার সাথে ভাব হয়েছে। তাহলে এজন্যই পারিজাত ইদানীং রাত করে বাড়ি ফেরে! হায়, কি ভেবেছিলেন আর কি হচ্ছে।

মেয়ের কথা শুনে ওনারা দু’জনই কিছুক্ষণ চুপ করে বসে থাকেন। একটু সময় নিয়ে আশরাফ গম্ভীরমুখে বলেন, ‘পারিজাত, তোরে জীবনের তিক্ত বাস্তবতাটা বলি। সূর্য ইচ্ছে করলেই এত সহজে বুকশপটা দিয়ে ভালো করতে পারবে না। আর ওই যে বললি ওর বই বের হয়েছে, মা রে, এত দ্রুত কেউ বিখ্যাত হয় না। যখন দেখবে ওর বই বিক্রি হচ্ছে না, আবার বুকশপটাও ভালো চলছে না, তখন ও আবার অন্ধকার জগতে ফিরে যাবে। আর ওকে দোষও দেওয়া যায় না। ও যেহেতু জীবন থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে তাই ও সবকিছুতে দ্রুত সাফল্য চাইবে, কিন্তু সেটা পাবে না। আর তখনই ও ভুলটা করবে।’

পারিজাত বাবার কথা শুনছিল, আর দুশ্চিন্তার পারদ বেড়ে যাচ্ছিল। কথাগুলো তো আসলেই সত্য। সূর্য যদি এমন করে তাহলে যে ও সবার কাছেই হেরে যাবে। ওর সূর্য যেন আলোকিত হয়ে ওঠে ও প্রাণপণ সেই চেষ্টাই করে যাচ্ছে। না, সূর্যকে ও কখনোই হেরে যেতে দেবে না।

পরদিন কলেজে যেয়েই ও প্রথমে ধ্রুবর সাথে কথা বলে, ‘আচ্ছা, সূর্যের বইটার প্রচারণা কী করে আরো বাড়ানো যায় বলেন তো? আমি চাচ্ছি বইটার কথা অন্তত সবাই জানুক।’

ধ্রুব মাথা চুলকে বলে, ‘উম, নামীদামী কাউকে দিয়ে বইটার একটা রিভিউ যদি পত্রিকাতে ছাপানো যেত তাহলে অনেকেই কিনত। আর অনলাইনে যারা বই কেনে তারা একটা জিনিস দেখে, বেস্ট সেলার বই কোনটা। সেটা করতে হলে অনলাইনে বেশি বেশি অর্ডার হতে হবে।’

পারিজাত চিন্তিত মুখে বলে, ‘পত্রিকায় আমার পরিচিত লোক আছে, সেটা না হয় ম্যানেজ করলাম। কিন্তু অনলাইন বুকস্টোরগুলোতে বেস্ট সেলার হবে কী করে, বিক্রি না হলে?’

ধ্রুব দুষ্ট হাসি হেসে বলে, ‘একটা বুদ্ধি আছে, আমি আর আপনি মিলে আগামি এক সপ্তাহ প্রতিদিন বিশ ত্রিশটা করে বই অর্ডার করব, তাহলে সূর্যের বই বেস্ট সেলার লিস্টে চলে আসবে।’

পারিজাত অবাক হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে, তারপর হেসে ফেলে, ‘এত দুষ্ট বুদ্ধি আপনার মাথায় থাকে! নাহ, ও জানলে কষ্ট পাবে।’

ধ্রুব জোরে মাথা নেড়ে বলে, ‘আরে, নতুন লেখকদের অনেক স্ট্রাগল করতে হয়। বইগুলো কিনে আমরা মানুষদের গিফট করব, তাতে অন্তত লোকজন পড়বে।’

পারিজাত একটু ভাবে, ‘আচ্ছা, আপনার কিনতে হবে না, আমি কিনব। আপনি শুধু কবীর স্যারের কাছ থেকে বইটার একটা রিভিউ লিখে দেন, স্যারের নামেই ছাপাব। উনি তো এমনিতে পরিচিত মুখ। নিজেও অনেক লেখালেখি করেন।’

ধ্রুব আশ্বাস দেয় ও ঠিক একটা রিভিউ এনে দেবে স্যারের কাছ থেকে।

পারিজাত মনে মনে ভাবে, সূর্য, আমি তোমাকে একটু এগিয়ে দেবার জন্য সব করব। কখনোই তোমাকে হতাশ হতে দেব না, বাবা মায়ের কথাগুলো আমি মিথ্যে করে দেব।

(চলবে)

মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান সুবাস
শিমুলতলী, গাজীপুর
০৯/০৩/২০২২

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here