#সুখ_পাখি #Ayrah_Rahman #part:-12

#সুখ_পাখি
#Ayrah_Rahman
#part:-12

আরু দরজা খোল,,সোনা পাখি দরজা খোল না বাবা,,মা ডাকছি তো শুনতে পাচ্ছিস?

–আমি খুলবো না মা যাও তো তুমি,,

ভেতর থেকে মেয়ের এরুপ উত্তর শুনে মিসেস আয়েশা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন,, গত ২ঘন্টা যাবত তিনি মেয়েকে ডেকে চলেছেন কিন্তু আরুর কোন হেলদোল দেখতে পাচ্ছেন না,,,

আয়েশাঃ– আরু খোল না মা দরজাটা,, রাতেও তো কিছু খাসনি,,এখন সকাল ১১ টা,, এত বেলা হলো কিছু তো খেয়ে নে না হলে শরীর অসুস্থ করবে তো মা,,

আরুঃ- আমি খাবো না মা,,জোর করো না,,

— কি হয়েছে আয়েশা? আরু দরজা খুলছে না কেন?

পিছন থেকে মাহমুদ রাহমানের গলা শুনতে পেয়ে পিছন ফিরে তাকালেন আয়েশা রাহমান,,

আয়েশাঃ– দেখো না তোমার মেয়ে দরজা খুলছে না,!রাতেও কিছু খাইনি,,

মাহমুদ ঃ– আচ্ছা সরো আমি দেখছি….

আয়েশাঃ- হুম..

মাহমুদ ঃ– আইরাহ মা আমার কি হয়েছে বাবাকে বলো,,মা বকেছে?

আরুঃ- বাবা তুমি যাও আমি এমনি তেই টেনশনে আছি,,

মাহমুদ ঃ– আরে বাবা এত টেনশন করার কি আছে,যা হবে ভালো হবে,,দেখি খুলো তো মা,,আমি জানি আমার মা কখনো বাবার কথা ফেলতে পারবে না,,তাই না মা?

আরু আর কিছু না বলে দরজা খুলে দিলো,,

আরু সোজা বিছানায় বসে বিপরিতে মুখ করে বসে পড়লো,,

মিসেস আয়েশা এবং মাহমুদ রাহমান ও আরুর রুমে ঢুকে পরলো,,

মাহমুদ ঃ– মা আমার কি হয়েছে সোনা? দেখো রেসাল্ট ভালো আসবে,,বাবার উপর বিশ্বাস আছে না?বাবা বলছি তো, আর না হলে দেশের সবচেয়ে ভালো মেডিক্যাল এ পড়াবো তোমাই তাও এমন করে থেকো না সোনা,,

মাহমুদ রাহমানের কথা শুনে আরু বাবার মুখোমুখি হয়ে বসলো,,

আরুঃ- But বাবা আমি তো প্রাইভেট এ পড়বো না,,

মাহমুদ ঃ– দরকার পড়লে তোমাকে এভ্রোড পাঠাবো যদি তুমি চাও,,

আরুঃ- পড়লে আমি পাবলিকেই পাড়বো আর না হলে বিয়ে করে স্বামীর সংসার করবো,,ব্যস..

মাহমুদঃ– শুনো মেয়ের কথা,,তোমার বাবার কি কম টাকা আছে,,তুমি যেখানে পড়তে চাও সেখানেই পড়াবো,,এখন খেয়ে নাও,,

— আরুর মা.. আরুর জন্য খাবার নিয়ে আসো,,আমার মেয়েকে আমি খাইয়ে দিবো,,

আয়েশা ঃ– আচ্ছা যাচ্ছি,,

কিছুক্ষণ পর….

আরুর মা খাবার দিয়ে গেছে,,

মাহমুদ রাহমান মেয়েকে খাবার খাইয়ে দিতে দিতে বললেন,,

মাহমুদ ঃ– কি ভাবছিস?

আরুঃ- বাবা,,তরু আপু কই?

মাহমুদ ঃ– তরু তো সেই কোন সকালে বের হয়ছে এখনো তো আসলোনা,,

আরুঃ- ওহ আচ্ছা,,

খাওয়া শেষে…

মাহমুদ ঃ– রেসাল্ট পাবলিস্ট হতে আরু অনেক দেরি,,এখন একটু রেস্ট নাও,,

আরুঃ- আচ্ছা,,আপু আসলে আমাকে ডেকে দিও,,

মাহমুদ ঃ– আচ্ছা,,,

বলেই মাহমুদ রাহমান চলে গেলেন,,

আরু সুয়ে সুয়ে ভাবতে লাগলো এত সকালে তরু গেলো কোথায়? কখনো তো এত সকালে বাড়ির বাইরে যায় না আজ হঠাৎ গেলো কোথায়?

_____________________________

অন্যদিকে..

তরু বসে আছে অভ্রের সামনে একটা কফি সপের ভেতরে,,,

তরু বেশ খানিকক্ষন চুপ থেকে নিজের মন কে শান্ত করে হঠাৎ করেই বলে উঠালো….

তরুঃ– কি ব্যপার মিস্টার হায়দার? হঠাৎ এই কালসাপের সাথে দেখা করতে চাইলেন?আরো কি অপমান করার বাকি আছে?

অভ্রঃ- শালিক,, একবার আমার কথা টা শুনো?( অনেকটা কাতর কন্ঠে)

তরুঃ– please Mr.Haidar,, don’t call me shalik,,my name is Toru,,Toru Rahman,..

অভ্রঃ-ওকে ওকে,, তরু প্লিজ,

তরুঃ– হ্যা হ্যা বলুন,, শোনার জন্য ই এলাম এতদুর,,বলেই একটা তাচ্ছিল্য পূর্ণ হাসি দিলো,,

___________________

ফ্লাসব্যাক…..

কাল রাতে….
তরু ঘুমানোর জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলো,,এমন সময় তরুর ফোনের রিংটোন হঠাৎ বেজে উঠলো,,

ফোনটা হাতে নিয়ে দেখে এটা আননোন নাম্বার তাই সে আর রিসিভ করলো না,,
তরু সচরাচর কোন আননোন নাম্বার রিসিভ করে না।

ফোনের রিংটোন বন্ধ হবার সাথে সাথে পুনরায় আবার বেজে উঠলো,,
তরু ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত তখন প্রায় ১২ টা,, বিরক্তিতে তরুর কপাল খিঁচে গেলো,,
একরাস বিরক্তি নিয়ে সে মোবাইল রিসিভ করলো,,

তরুঃ– আসসালামু আলাইকুম,, কে বলছেন?

অপর পাশ ঃ– নিশ্চুপ,,

তরুঃ– কি হলো কথা বলুন,,কে আপনি,,এত রাতে একজন মেয়েকে ফোন দেয়া কোন ধরনের সভ্যতা?

অপর পাশ তখন ও নিশ্চুপ,,

তরু কিছুক্ষন অপেক্ষা করে লাইন কেটে দেয়,,

ফোনটা টেবিলে রাখার সাথে সাথে আবার বেজে উঠলো,,

তরু ফোন হাতে নিয়ে দেখে সেম নাম্বার,,ফোন রিসিভ করে,,

তরুঃ– এই যে মিস্টার অর মিসেস,, কি দরকার আপনার? বারবার ফোন দিচ্ছেন কেন?

অপর পাশে কোন সারা শব্দ নেই,,

তরুঃ– ধুর বা*ল,,আবার যদি ফোন দেছ,,, মোবাইলের ভেতর দিয়ে গিয়ে তোরে থাপরামু,,

বলেই তরু ফোন কেটে দিলো,,রাগে তার শরীর রি রি করছে,,

শা*লা কথা বলবি না তো ফোন দিলি কেন,,আবার যদি ফোন দেই তবে সত্যি সত্যি ই ফোনের ভিতর দিয়ে গিয়ে ওরে থাপরামু,,বেদ্দপ….

মনে মনে কথা টা বলেই..

তরু ডোর লক করে বিছানায় সুয়ে পরে,,

হঠাৎ আবার ফোনটা বেজে উঠে,,

এবার সে উঠে বসে,,, মনে মনে ঠিক করতে থাকে সে এখন কি বলবে,,

বকা ঝকা রেডি করে ফোন টা হাতে নেই,,নাম্বার না দেখেই সে কলটা রিসিভ করে,,

তরুঃ– ওই তুই আবার ফোন দিসিস,,কথা ক…

অপর পাশ ঃ– শালিক… ( অনেকটা ধীর কন্ঠে)

চেনা কন্ঠ শুনতে পেয়ে তরু র চারপাশ কেমন যেন নিস্তব্ধতাতে ছেয়ে গেলো,,তরু ধীরে ধীরে কান থেকে ফোনটা নামিয়ে নাম্বার টা দেখে,,সেখানে বড় বড় অক্ষরে লেখা মিস্টার অভদ্র…

আজ থেকে ২ বছর আগে যখন সব কিছু স্মৃতির পাতা থেকে মুছে ফেলতে চেয়েছিলো,, তখন এই অভদ্রের নাম টা শত চেষ্টা করে ও ডিলিট করতে পারেনি,,শত হোক এই অভদ্র কেই নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসেছিলো তরু,,পুরনো কথা মনে পরতেই মুখে ফুটে উঠলো তাচ্ছিল্যের হাসি,,,

ফোনের ওপাশ থেকে অভ্রর ডাকে,,পুনরায় তরু ফোনটা কানের পাশে ধরে,,

অভ্রঃ-শালিক পাখি শুনতে পাচ্ছো?

তরুঃ– হ্যালো কে বলছেন?

অভ্রঃ– শালিক চিনতে পারছো না? আমি তোমার মিস্টার অভদ্র,

তরুঃ– sorry Mr. First of all.. আমি তরু রাহমান..
secondly.. আমি কোন ভদ্র বা অভদ্রকে জাজ করতে ফোন টা ধরি নি,,so time waste না করে আপনার পরিচয় দেন,,
অভ্রঃ– আমি অভ্র…চিনতে পেরেছো?
তরুঃ– শুধু ই অভ্র? এর আগে পিছে কিছু নেই?
অভ্রঃ- তরু প্লিজ আমি জানি আমার প্রতি তোমার আকাশ সম রাগ অভিমান,, তবুও একটি বার কথা বলো প্লিজ,,,

তরুঃ– শুনোন মিস্টার আমি আপনার নাম জিজ্ঞেস করেছি সো নাম টা বলেন..

অভ্রঃ- অভ্র হায়দার,,

তরুঃ– তো মিস্টার হায়দার কেন ফোন দিয়েছেন জানতে পারি?

অভ্রঃ- তরু,, আমি শুধু একটি বার তোমার সাথে কথা বলতে চাই,, দেখা করতে চাই,,প্লিজ না করো না ( অনুরোধের স্বরে)

তরুঃ– সরি মিস্টার হায়দার,, সম্ভব না,,আমি অচেনা কারো সাথে দেখা করতে ইচ্ছুক নই,,

অভ্রঃ- দয়া করো আরু,,শুধু কাল আর কখনো তোমাকে এরকম বিরক্ত করবো না,
,
তরুঃ– ঠিক আছে সকালে মেসেজ করে বলবেন কোথায় আসতে হবে,,

বলেই আরু ফোন রেখে দিলো,,

পুরাতন সেই ঘা আবার জীবিত হয়ে উঠেছে,,বুকের বা পাশ টা কেমন জানি চিনচিন ব্যথা করছে,,চোখ থেকে পরছে অঝোর ধারায় বৃষ্টি,,

—— এমনটা না হলেও পারতো——-

চলবে……..

[ প্লিজ সবাই গঠন গত মন্তব্য করবেন]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here