সিক্রিট_গ্যাংস্টার♥পর্ব_০৬/৭/৮

সিক্রিট_গ্যাংস্টার♥পর্ব_০৬/৭/৮
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা

–কি করব আমি ঋতু?
–তুই ওনার সাথে কথা বল।
–কি বলব?
–বল যে তোর বিয়ে,
–বাবা আমাকে যেভাবে বলেছে তার উপর দিয়ে আমি কিছু করার ক্ষমতা রাখছি না।
–তাহলে বিয়েটা করতে হবে।
–আমার ভাগ্য টা খুব আজব খেলা খেলল তাই না।
–কাদিস না পাগল এক কাজ কর তুই আমান স্যারের সঙ্গে কথা বল
–কি বলব ওনাকে।
–ওনাকে বল তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস ওনাকে বিয়ে করতে পারবি না।
–কিন্তু উনি যদি বাবাকে বলে দয়।
–বুঝিয়ে বলিস একটু।
–বুঝবে না রে।
–আচ্ছা তুই ওনার সাথে কথা বল।
ঋতুর কথাটা বলার মাঝে ফোনটা আবার বেজে উঠলো,
আমি ওর দিকে তাকালাম,
তার পর ফোনটা কেটে সেই নাম্বার টাও ব্লক করে দিলাম।
সে দিন রাত কাঁদতে কাঁদতে কাটলো ঋতু সন্ধ্যার দিকে বাসায় গেলো।
মা বাবার আড়ালে খুব কান্নাকাটি করলাম
এক সময় ঘুমিয়ে গেলাম।
এভাবে চলতে থাকলো দিন সে অনেক গুলা নাম্বার দিয়ে আমার ফোনে ফোন করেছিল কিন্তু আমি সব গুলাই ব্লক করে দিয়েছি।
বাবার এ অনুরোধ আমার পক্ষে উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
দিন পার হতে লাগলো।
আমি ভার্সিটি যাওয়া বন্ধ করেছি আজ ৩ দিন।
প্রতিদিন ঘরের মধ্যে বসে কাদি।
আজ আমান স্যার আর তার বাবা আসবে আমাদের বাসায়।
অনেক সুন্দর করে ঘর ঘুছিয়েছে মা
আমাকে কোন কাজ করতে দিচ্ছে না।
মা খুব খুশি বাবাও।
এটা দেখে মনের মাঝে যাও বলার আসা ছিল তাও চলে গেছে।
আমাকে একটা লাল ঢাকাই শাড়ি পরিয়ে সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো মা।
ঋতুও আসছে বাসায়
ও মেকাপ করিয়ে দিলো
আমার মুখে হাসির কোন ছাপ নেই।
তার কথা মনে পরলে বুকের মধ্যে হাহাকার করে ওঠে

মাত্র কিছু দিনে মায়ায় পরে গেছি আমি।
,
কিছু সময় পর আমান স্যার আর তার বাবা চলে এলো।
মা বসতে দিয়ে অনেক খাতির আপ্যায়ন করলো
কিছু সময় পর মা আমাকে আসতে বলল,
ঋতুর সাথে বসার রুমে গেলাম।
মা ঋতুকে ইসারা দিয়ে আমাকে আমান স্যারের পাশে বসাতে বলল।
ঋতু সেই কাজ করল।
কিন্তু আমান স্যারের পাশে বসে কেন জানি না আমি সেই অদ্ভুত সুগন্ধি টা পাচ্ছি যেটা আমি ওই লোকটার কাছে আসা থেকে পেতাম।
হটাৎ করে এমন কিছু হওয়াতে বুকের মধ্যে ধক করে উঠল।
আমার পাশে ফিরে তাকানোর মতো ক্ষমতা নেই।
এই যোমকে আমি যোমের মতো ভয় পাই।
মাথা নিচু করেই বসে রইলাম আমি।
হটাৎ আরিফ কাকু বলে উঠলেন,
–কি গো মা মন খারাপ?
আরিফ কাকুর কথায় মাথা তুলে তাকালম,
–জি না (মলিন হেসে)
–তাহলে এতো চুপচাপ কেন রে মা?
–জি কি বলব (মাথা নিচু করে)
–কেমন আছিস এটা আগে বল
–জি আলহামদুলিল্লাহ আপনি?
–হুম আমার ছেলের এতো মিষ্টি একটা বৌ হবে সেটা ভেবে তো খুশি ধরে রাখা সম্ভব হচ্ছে না।
–(মাথা নিচু করে রইলাম)
–আমারও তো অনেক খুশি ভাইজান (মা বলল)
–হ্যাঁ তবে আমান আর মেঘকে একটু একা কথা বলতে দেও ততক্ষণে আমরা বিয়ের দিন নিয়ে আলোচনা করি।
–হ্যাঁ ভাইজান এটা ঠিক বলেছেন।
–ঋতু ওদের একটু,
–হ্যাঁ আন্টি।
–স্যার আসুন।
আমান স্যার আর আমাকে ঋতু আমার ঘরে দিয়ে আমাকে আস্তে করে বলল,
–সময় কিন্তু এখনি,
কথাটা বলে ও বেরিয়ে এলো,
–(তুই তো বলে গেলি সময় কিন্তু এখনি কিন্তু আমি যে বাবার কথা ফেলতে পারবো না ভরতে ভেতরেই মরে যাবো মনে, মনে,)
–কি ব্যাপার পড়ালেখার কি খবর? (গম্ভীর শুরে)
আমি মাথা তুলে তাকালাম,
–জি ভালো।
–দেখে তো মনে হচ্ছে খুব বেশি ভয়ে আছো আমি কি বাঘ নাকি?
–(বাঘের থেকে কম না মনে মনে,)
–এমনি সময় তো কথার বন্যা বইয়ে দেও এখন এতো চুপচাপ কেন?.
–কি বলব?
–কথা বলো,
–কথা।
আমার কথা শুনে তিনি ফিক করে হেসে দিলেন,
ওনার মুখের দিকে তাকালাম,
তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে নিলাম,
–বুঝলে তোমার মতো একটা বৌ হলে মন্দ হয় না।
–(আমি আপনার বৌ হতে চাই না মনে মনে,)
–মনে মনে কি আমার ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করছো নাকি?
–কেন?
–না তোমার মুখ দেখে মনে হচ্ছে।
–(কথাটা বলব নাকি বলব না মনে মনে,)
–কিছু বলবা?
–জি না (ভয়ে)
–ভয় পাচ্ছো তুমি?
–জি না (আরও ভয়ে)
–সমস্যা নাই তুমি কম্ফোর্ট ফিল করছো না আমি বুঝতেছি।
ভালো থাকো দেখা হবে জলদি আর খুব জলদি নিয়ে যাবো সাথে করে।
কথাটা বলে তিনি রুম থেকে চলে গেলেন।
আমি সেখানে বসে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম,
৩০ মিনিট পরে,
সবাই চলে গেছে শুধু ঋতু পাশে বসে আছে,
–কাঁদিস না সোনা।
–কবে ঠিক হয়েছে বিয়ে?
–শুক্রবার ২৬ তারিখ।
–এতো জলদি।
–হুম।
–ঋতু মা খেয়ে আয় সোনা সারা দিন দৌড়াদৌড়ি করছিস কতো বার বললাম খেয়ে নে খেলি না এখনো দেরি করছিস। (মা)
–খেয়ে আয় যা মা ডাকছে।
–হুম তুই কাঁদিস না শাড়ি পাল্টে নে।
–হুম।
ঋতু বাইরে চলে গেল
আমি ওয়াসরুমে গিয়ে কিছু সময় নিরবে কান্না করে গোসল করে বের হলাম
,
,
বিকলে,
ঋতু বাসায় চলে গেল,
আমার বাসায় পরলো বিয়ের ধুম।
কি করে কি হবে কার কি করতে হবে।
সব কিছুতে মেতে উঠলো আমার মা বাবা।
এদিকে সবাই অভিনন্দন দিচ্ছে
বিয়েটা তার মানে আর না হবার চান্স নাই হয়েই ছাড়বে,
রাতটা খুব কষ্টে কাটালাম নির্ঘুম।।
সে কি দেশে আসছে?
নাকি আমার কথা তার মনে হয় নি এক বারও?
অবশ্য কতোগুলো সিম তার ব্লক করেছি আমি তার খোজ নাই।
আচ্ছা সে কি আমাকে প্রতারক ভেবেছে?
কিন্তু আমি কি করব।
কিছুইতো আর আমার হাতে নেই।
ধিরে ধিরে সময় অবহিত হতে লাগলো।
প্রতিটি সেকেন্ড আমি ওনার কাথা ভাবছি।
এমন একটা সেকেন্ড আমার কাটে নি যখন আমি ওনাকে না ভেবেছি।
মা বাবা আমাকে সব সময় হাসি খুশি দেখতো।
নিজের কষ্ট নিজের মধ্যে রাখতে চাই মা বাবা কে দেখাতে চাই না।
কাল আমার হলুদ আজ আমার হাতের অনেকটা অংশে মেহেদীর ডিজাইন করে দেওয়া হইছে।
মাঝে লেখা হয়েছে আমান এর নাম।
মেহেদী লাগিয়ে রুমের মাঝে বসে আছি।
প্রায় শুখিয়ে গেছে।
আর একটু হলে গোসল করব।
কিছু সময় পর গোসল করে বের হলাম
রুমে এসে দেখি ফোনটা ক্রমাগত বেজে চলেছে,
ফোনটার কাছে গিয়ে ফোনটা উঠাই,
–হ্যালো আসসালামু আলাইকুম,
–আলাইকুম মসললাম।
কেমন আছো?
–জি আলহামদুলিল্লাহ,
–তোমায় কাল প্রথম হলুদ টুকু আমি লাগাবো।
–আমান স্যার?
–আজ বাদে কাল আমদের বিয়ে আর তুমি এখন আমাকে চিনতেই পারছো না।
–না মানে তা নয়।
–তো কি?
–সেটা কি করে?
–কোনটা কি করে?
–হলুদ লাগাবেন,
–সেটা কাল দেখা যাবে কি করে কিন্তু প্রথম এটা আমি করবো দেখো।
–দেখা যাবে।
আল্লাহ হাফেজ।
ফোনটা আমি কেটে দিলাম ওনার কথা না শুনে।
দিনটা আমি ঘুমিয়ে কাটালাম
বিয়ের জন্য বাড়ি ভর্তি মেহমান। কাউকে তোয়াক্কা না করে আমি চুপচাপ ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিলাম দিন আর রাত।
পরের দিন,
সকাল থেকে হলুদ এর কাজ শুরু হইছে,
এটা সেটা কতো কি।
আমাকে সুন্দর করে শাড়ি পরিয়ে দিয়ে সাজিয়ে দিয়ে গেছে কিছু মহিলা।
একটু পর আমার রুমে কাঁচা হলুদ রঙের শাড়ি পরে আসলো ঋতু।
ওকে দেখতে খুব সুন্দর দেখাচ্ছে আজ।
ভাইয়াও আসছে বোধহয় কিন্তু আমার কিছুতেই কোন আগ্রহ নাই,
মনের মাঝে যতদুর দেখা যায় শুকনো মরুভূমির মতো হয়ে আছে।
–দোস্ত তোকে সুন্দর দেখাচ্ছে।
ঋতুকে হেসে কথাটা বললাম
কিন্তু আমার হাসির মাঝে মলিনতা তার চোখকে ফাকি দিতে পারে নি।
ও এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে,
–কষ্ট পাস না।
–কষ্ট কি না বলে পায় বল। যদি কষ্ট পাস না বললে কষ্ট না পাওয়া হতো তাহলে কতোই না ভালো হতো,
চলবে,

#সিক্রেট_গ্যাংস্টার♥
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
#পর্ব_০৭(হলুদ স্পেশাল 🥳)
ঋতু বুঝতে পারে কিছু বলে কিছু হবে না তাই কথাকে ঘুরাতে চেষ্টা করে,
–আরে বেব তোর বিয়ে তাও সবার ক্রাশ আমান স্যারের সাথে ভাবতে পারতেছিস উফ আমার তো ভেবেই মজা লাগছে।
কতোনা অপেক্ষা করেছি এই বিয়ের জন্য ফাইনালি সেই বিয়ে হতে চলেছে
তাও সবার ক্রাশ দ্যা গ্রেট আমান স্যারের সাথে,
আমি তো মহা খুশি স্যার এখন দুলাভাই হয়ে যাবে।
ঋতুর কথার ভঙ্গি দেখে হাজার কষ্টের মাঝে ফিক করে হেসে দিলাম।
আমি হাসতে ও আমাকে জড়িয়ে ধরল।
আমি এই মায়ার টানটা বুঝতে পেরে ওকে জড়িয়ে ধরি,
,
,
,
হলুদ রঙের একটা পাঞ্জাবি আর উপরে কটি পরে হাতে একটা ঘড়ি নিতেই আমান কে অসম্ভব সুন্দর দেখাচ্ছে নজর কাড়া সুন্দর যাকে বলে,
সবাই অনুষ্ঠানে ব্যাস্ত,
একটা ফাকা সময় পেয়ে আমান মেঘকে ফোন করে,
কিন্তু তখন তার ছবি তোলা হচ্ছিল বলে মেঘ ফোন ধরতে পারে না।
,
,
,
অনেক গুলা ছবি তোলা হলো আমার না চাইতেও মলিন হাসি হাসতে হলো আমায়।
মা বাবার মুখের হাসি আমার কলিজা জুড়িয়ে
যাচ্ছে।
এতো খুশি তাদের আগে দেখি নি।
মেয়ে বিদায় হবার খুশি নাকি ভালো পাত্রের হাতে তুলে দেবার খুশি!
–ঋতু অনেক ছবি তোলা হইছে আমি একটু রুমে যাচ্ছি হলুদ এর অনুষ্ঠানের আগে নিয়ে যাস।
–আচ্ছা যা,
,
মেঘ রুমে চলে এলো,
এদিকে এতো সুন্দর ঋতুর সাজ দেখে কিরন এর হার্টবিট তো সেই জোরে লাফালাফি করছে,
মেঘের ভার্সিটির বড়ো ভাই হিসাবে কিরন ভাইয়া কেও আসতে হয়েছে নিমন্ত্রিণ এ,
–মেঘের কি অবস্থা ঋতু।
–ভালো না আমি বুঝতেছি না কি করব।
–তুমি শুধু ওর পাশে থাকো আর ওকে স্যারের সম্পর্কে ভালো ধারনা দেও।
–ভালো আর অভালোর কিছু নাই
ওর মনের অবস্থা বোঝার ক্ষমতা তোমার আমার আছে।
আমাদের সাথে এমন হলে,
কথাটা পুরো বলার আগে করিন ঋতুর মুখে হাত দিয়ে দেয়,
–এমন বলো না আমি মরেই যাবো।
ঋতু মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থাকে কিরনের দিকে।
,
,
রুমে এসে দরজা লাগিয়ে সামনে তাকাতে চমকে উঠি,
–আল্লাহ! আপনি এখানে কেন?
–কি হলো চমকে উঠার কি আছে,আমি তো বলেছিম তোমায় প্রথম হলুদ আমি লাগাবো।
–কিন্তু আপনি আসলেন কেথা দিয়ে বাইরে এতো মানুষ কেউ আপনাকে দেখে নি কেমনে কি?
–তোমার বোঝার প্রয়জন নাই কি করে এসেছি,
আমান আমার দিকে একপা একপা করে এগোতে থাকে আর আমি ক্রমশ দেয়ালের দিকে পেছতে থাকি।
এক পর্যায়ে ঠেকে যায় দেয়ালে,
–হলুদ রঙের ঢাকাই শাড়ি মেয়েটার ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক,
কিন্তু এগুলার কিছুই আকর্ষণীয় না,
আকর্ষণীয় তো ঠোঁটের উপরে সবার চোখ এড়ানো ওই ছোট্ট একটা তিল,
আর মায়াবী এই চোখ দুটো।
স্যারের কথা শুনে রীতিমতো আমি থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।
এই উগান্ডা টাইপ মানুষ টা এতো রোমান্টিক। আল্লাহ!
উনি আমাকে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হেঁসে তার হাতে থাকা হলুূ টুকু আমি মুখে লাগিয়ে দেয়।
আর নিজে আমার মুখ থেকে হলুদ মেখে নেয়।
এই কাজ হবার সময় সে আমার অতিরিক্ত কাছে ছিল যার ফলে তার নিশ্বাস তার হৃৎস্পন্দনের গতি মনে হচ্ছিল আমার সব বুঝা।
কিন্তু তার কাছে আসা তার ছোয়া আমার কাছে খুব চেনা লাগে।
কিন্তু কেন এমন ফিল হয় তা আমি জানি না।
হলুদ লাগানো শেষ হলে আমার থেকে সরে আসে,
–প্রথম হলুদ টুকু আমি লাগালাম মিসেস.খান।
কথাটা বলে বিশ্ব উজার করা হাসি দিয়ে আমার রুমের দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল
আমি এখনো তাকিয়ে আছি তার যাবার দিকে,
অবাকের সপ্তম আকাশে আমি এখন।। কিন্তু সব কিছুর মাঝেও আমি যার সাথে আমার জীবন কল্পনা করেছি সেই নেই,
সব কিছু ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বসতে যাবো
তখনি ঋতু এলো ঘরে,
–কিরে তোর হলো রেস্ট নেওয়া?
–হুম হলে,
–তাহলে আয় অনুষ্ঠান শুরু করতে হবে।
ঋতু আমাকে নিয়ে বাইরে স্টেজ এ বসিয়ে দিলো,
একটা সুন্দর গানে ও আর কিরন ভাইয়া ডান্স করলো।
সত্যি দু জন কে দেখলে কলিজা জুড়িয়ে যায়
অসাধারণ তারা।
তার পর আমাদের ভার্সিটির আরও কিছু বন্ধু বান্ধবী আসছে সবাই মিলে ডান্স করলো।
সবার সাথে ছবি তোলা হলো,
এবার হলুদ লাগানোর পালা,
প্রথম মা এলেন হলুদ লাগাতে।
তার পর একে একে সবাই,
অনেক ছবি তোলা হলো,
সত্যি ভিশন টায়ার্ড হয়ে আছি আমি,
মাথা ঝিম ঝিম করছে।
বিকালে খাবার খেয়ে যে যার বাসায় চলে গেল।
এখন ঋতুর যাবার পালা।
কিন্তু কাল যেহেতু বিয়ে তাই মা ঋতুকে আর যেতে দেয় নি।
ও বিয়ের দিন আমার বিদায়ের পর যাবে,।
গোসল করে সুতি কাপড় পরে ঘরে এসে আয়নাতে তাকালাম,
সত্যি আমার ঠোঁটের উপর ছোট্ট করে একটা তিল আছে যা এই পর্যন্ত আমার চোখে পরে নি তা ওই লোক টার চোখে পরে গেল।
আল্লাহ কেমনে সম্ভব,
–কিরে কি দেখিস?
–দোস্ত আমার ঠোঁটের উপর যে এই তিল তা তুই দেখেছিস কখনো?
–না তো কোথায় তের মুখে কোন তিল নাই।
–নারে আছে এই দেখ।
–তুই হটাৎ তিল নিয়ে পরলি কেন?.
–না মানপ এমনি হুট করে চোখে পরলে তাই,
–আমাকে ইতিহাস পড়িয়ে লাভ নাই আমান স্যার আসছিল বল।
–কি করে জানলি?
–তোর মুখে প্রথম হলুদের দাগ দেখে কেউ না বুঝলেও আমি বুঝে গেছি।।
–ওহ আচ্ছা।
–হুম।
–দোস্ত,
–হ্যাঁ,
–সত্যি বিয়েটা হয়ে যাচ্ছে তাই না।
ঋতু আমার কথা শুনে আমার দিকে এগিয়ে আসে,
–হুম হয়ে যাচ্ছে তাই অতিত ভুলে এখন বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবো।
যা কপালে নেই তা ভেবে লাভ নাই আল্লাহ যা লিখছে তাই হবে তুই কষ্ট পাস না সোনা।
আমি ঋতুর দিকে তাকিয়ে একটু হেসে গিয়ে বিছনায় শুয়ে পরলাম।
আর ঋতু কাপড় নিয়ে ওয়াসরুমে ডুকলো,
,
,
,
আমান এর বাসায় হলুদের অনুষ্ঠান শেষ,
আমান কাপড় পাল্টে ফ্রেশ হয়ে বসে আছে,
তখনি তার রুমে তার বাবা আসে,
–বাবা আমান,
–হ্যা বাবা।
–তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।
–হ্যাঁ বাবা বলো।
–তোমার বিয়ে কাল তুমি তো জানো ঠিক এই দিনে আমিও তোমার মাকে বিয়ে করেছিলাম।
–হ্যাঁ বাবা কাল তোমাদের ম্যারেজ এনিভার্সিটি।
–হুম কাল আমাদের বিবাহ বার্ষিক।
তুমি জানো প্রথম যখন তোমার মাকে আমি আমার বাসায় নিয়ে এলাম তখনও অদ্ভুত ভাবে এমন সিচুয়েশন ছিল তোমার দাদি মারা গেছিল আমি আর তোমার দাদা থাকতাম।
আমার বিয়ের দুই বছর পর যখন তুমি তোমার মায়ের পেটে তখন তোমার দাদজান মারা যায় আর তুমি হবার সময় আমার কোলে তোমায় দিয়ে গিয়ে আমাকে একা রেখে চলে জান তোমার মা।
কাল আমার বাড়ি ঘর আলো করে আবার তোমার বৌ আসবে।
আজ প্রায় ২৭ বছর পর আমার ঘরে আবার কোন মেয়ে আসবে বৌ হয়ে।
আমি চাইনা আমার বৌমা লোন কষ্ট পাক।
আমি চাই তুমি যা তুমি তা হয়েই থাকো।
তুমি তোমার সিক্রেট কে সিক্রেট রেখো ওটাকে ধামাচাপা দিয়ে মেরে দেও।
মেঘ আর তুমি তোমাদের সংসারে কোন খারাপ কিছু ছায়া আমি দেখতে চাই না।
আমি আসা করব আমি যা বলছি তুমি তা বুঝতে পারছো।
–জি বাবা আমি আপনার কথার মানে বুঝেছি।
–যদি বুঝে থাকো তাহলে আমাদের উপরে মৃত্যুর ছায়াটা আর থাকবে না
চলবে,

#সিক্রেট_গ্যাংস্টার♥
#লামিয়া_রহমান_মেঘলা
#পর্ব_০৮(wedding special 🥳)
বাবার কথায় মলিন হেসে তার হাত দুটো ধরে আমান,
–নিশ্চিন্তে থাকো আমার মেঘ আর তোমার কিছু হবে না আমি আছি তো।
–তুমি আমার পৃথিবী আমান আমার পৃথিবীতে তুমি ছাড়া কেউ নেই নিজের বাবাকে এতিম আর নিঃসঙ্গ করে দিবি না তো।
–আমি বেঁচে থাকতে না বাবা।
আমানকে তার বাবা জড়িয়ে ধরে,
এদিকে,
দিন পেরিয়ে রাত হলো,
মাত্র এই রাত টার ব্যবধান আছে।
রাত টা পে-রোলে কাল আমার বিয়ে আমান স্যারের সঙ্গে।
জীবনের জন্য তার কাছে বাঁধা পরে যাবো।
না আমার এই অজানা ভালোবাসার কথা কেউ জানবে না কখনো এই অর্ধেক ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে।
অপূর্ণ ভালোবাসার হাত ধরে বেঁচে থাকতে হবে চিরকাল।
কথাগুলো জানালার কাছে বসে ভাবছি আর আকাশের বুকে থাকা ওই অর্ধেক চাঁদ টাকে দেখছি।
মনের আকাশে যতদুর পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে ধুধু কালো মেঘের আচ্ছন্ন।
তার কাছে আসা, তার ছোয়া, তার কথা সবি এখন স্মৃতি।
–মেঘ,
হটাৎ ঋতুর কন্ঠ পেয়ে কিছুটা কেঁপে উঠলাম।
–হুম।
–দোস্ত জানিস আমাদের জীবন টা না একটা বাইসাইকেল এর মতো।
Just control, look straight and run.
পেছনে অনেক কিছু হয়েছে।
হ্যাঁ অনেক কিছু হয়েছে কিন্তু তার দিকে তাকাবো না কারন পেছনে তাকাতে গেলে একটা দুর্ঘটনা ঘটবে।
আর একটা দুর্ঘটনা সারা জীবনের দুঃখের কারন।
সামনে এগিয়ে যা অনেক কিছু আছে যা পেছনে ফিরে তাকানোর কথা ভাবাবে না।
কখনো না।
তুই চিন্তা করিস না সব ঠিক হয়ে যাবে আমার বিশ্বাস স্যার তোকে খুব বেশি ভালোবাসবে।
আর সত্যি বলতে এখন চাইলেও কিছু করা সম্ভব নয়।
আর তুই তো বলিস যা সম্ভব নয় তা করা উচিৎ না।
ঋতুর কথা গুলো মন দিয়ে শুনলাম।
তার পর ওকে জড়িয়ে ধরলাম।
সত্যি ওর কথা গুলো মানতে হবে ও যেগুলা কথা বলল তা সব সঠিক।
আমার মন টা অনেকটা হালকা হলো।
তখনি মা খাবার নিয়ে এলো।
আজ মা নিজ হাতে আমাকে খাইয়ে দিলো।
বাবা এসে আমাকে বলল,
–রাজকুমারী কাল রানি হয়ে কারোর ঘরে প্রবেশ করবে।
আমি জানি এটা অনেক কঠিন হবে প্রথম প্রথম কিন্তু আমি জানি আমার রাজকুমারী সব কিছুকে আপন করে নিবে
মা বাবার চোখের পানি আর কথায় আজ বুঝতে পারলাম তারা আমাকে কতোটা ভালোবাসে।
কালকের পর থেকে আমি আর এ বাড়িতে থাকবো না আমি ঠিকানা বদলে যাবে।
আমার ২০ বছরের অবহিত জীবন এর স্মৃতি সব আমার মস্তিষ্ক এবং মনে থাকবে।
আমি কালকের পর থেকে কারোর স্ত্রী কারোী বৌ মা কারোর চাচি কারোর মামি কারোর ভাবি। ইত্যাদি আরো কতো সম্পর্কে পরিনত হবো।
আমার দাঁয়িত্ব অনেক।
ছোট্ট মায়ের মেঘ কাল বড়ো হয়ে যাবে।
তার সংসার হবে স্বামী হবে।
একটা মেয়ের জীবনের সব থেকে পরিবর্তন আসে যে সময় টায় কাল আমার জীবনে সেই সময় টা।
আমাকে ভুলতে হবে সব কিছু নতুন এই সম্পর্ক গুলাকে গুরুত্ব দিতে হবে।
মা বাবা ঋতুর সাথে অনেক কথা হলো এ রাতে প্রায় রাত ১ টা বাজে।
তখন ঋতুর সাথে শুয়ে পরলাম।
সারা দিনের ক্লান্তি তাই ঘুমিয়ে গেলাম।
,
সূর্য তার আলোর বিস্তার করেছে চারিদিকে,
ফজরের নামাজ আদায় করে সকালের খাবার খেয়ে নিলাম।
বিয়ে বাড়ি মেহমানে ভরপুর।
আমি রুমের মধ্যে বসে আছি সবাই যে যার কাজে ব্যাস্ত।
ঋতু মাঝে মাঝে এসে টু টা দিচ্ছে।
বাকি সময় একা বসে থাকছি।
হাতের মেহেদী দেখছি মাঝে আমান নামটা লেখা আছে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম।
১২ টা বেজে ২০ মিনিট,
বিয়ের সাজ সাজানো শুরু হলো।
প্রায় ২ ঘন্টা পর লাল বেনারসি আর নানা রকমের জুয়েলারি তে সেজে উঠলাম আমি।
ঋতুও খুব সুন্দর করে সেজেছে,
বেনারসি টাইপ লাল শাড়ি কুঁচি করে পরে সেজেছে।
–আজ ভাইয়া জ্ঞান হারাতে বাধ্য।
–হুম স্যার ও।
স্যার কথাটা শুনে কিছুটা কষ্ট পেলাম।
যাকে কল্পনা করেছিলাম সে তো নেই।
–ওরে আমার কলিজা প্লিজ তুই আর এমন মুখ করিস না আমি আর এভাবে তোকে দেখতে পারছি না।
বুঝেছিস।
কথাটা বলে আমাকে জড়িয়ে ধরলো।
আমারা ছবি তুললাম কিছু।
,
,
,
ঋতু বাইরে কিছু ফুল সাজাতে বসেছিল এমন সময় কিরন তার পাশে এসে হুট করপ কানের কাছে বলল,
–হার্ট এটাক করানোর চিন্তা।
–ও মা তুমি কখন এলে (চমকে)
–এই মাত্র আমার বৌ টাকে দেখে তো আমি সত্যি জ্ঞান হারাবো।
–ইস রে ঢং।
–ধুর ঢং বলছো কিছু দিন পর আমিও তোমায় নিয়ে যাবো।
–হ্যাঁ হ্যা দেখা যাবে।
–আচ্ছা ওর কি খবর?
–কাল বুঝালাম সব ও বুদ্ধিমান মেয়ে ইনশাআল্লাহ বুঝবে।
–হুম সেটাই যেন হয়।
–তুমি দেখো তো বর আসছে মনে হয়।
–তুমি না গেটে দাড়াবা।
–হ্যাঁ তার জন তো ফুল সাজাইতেছিল।
–ওহ দেখো চলে আসছে মনে হয়।
কিছু সময় পর,
বর আসলো,
সব নিয়ম কানুন মেনে বিয়েটা সম্পূর্ণ হলো।
সব ধরনের খুনসুটি হলো ঋতু আর আমনের মাঝে।
মেঘের কোন কাছের বোন নেই যেহেতু ঋতুই সব করেছে।
মেয়ে দুইটার মধ্যে বন্ধুত্ব অটুট।
★★★
গাড়িতে আমান স্যারের পাশে বসে আছি।
সব কিছুর পর বিয়েটা হলো।
খুব ভালো করেই মিটমাট হলো সব।
হয়ে গেলাম তার।
আমার স্বপ্ন তা তো স্বপ্ন ই থেকে গেল।
কিছু রঙিন স্বপ্ন কুরবানী হয়ে আজ জন্ম নিলো নতুন এক সম্পর্কের।
গাড়িতে আমান স্যার আমার সাথে একটা কথাও বলেন নি।
কিছু সময় পর আমরা তাদের বিশাল বাড়িতে চলে আসি।
এখানে আসতে সবাই আমাকে অভিনন্দন জানাতে ব্যস্ত।
ফুল ছেটাতে ব্যাস্ত।
ঘরের দরজার সামনে আসতে দেখি স্যারের বাবা (আজ থেকে আমাও বাবা) হাতে এক গুচ্ছ ফুল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
আমি আসতে আমাকে ফুল গুলে দিলেন,
–অভিনন্দন এ বাড়িতে কোন মেয়ে মানুষ নাই তুমি আজ থেকে এই রাজ্যের রানি মা।
বাবার মুখের হাসিটা দেখার মতো।
সে যে অনেক খুশি তা বুঝা যাচ্ছে।
সব আয়োজন শেষে আমাকে আমানের ঘরে বসিয়ে দেওয়া হলো।
এই ভারি সব কাপড় গয়না পরে খুব কষ্ট হচ্ছে আমার। কিন্তু তাও কাপড় পরে বসে আছি তার জন্য।
কিছু সময় পর,
তিনি রুমে এসে কিছু না বলে আলমারির দিকে গেলেন,
একটা হালকা কম্ফোর্ট শাড়ি আমাকে দিলেন,
–এগুলা ছেড়ে গোসল করে নেও ভালো লাগবে।
আমি তার আচরণে মুগ্ধ।
তার হাত থেকে শাড়িটা নিয়ে তার বলা মতো কাজ করলাম
বাধরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে চুল গুলা ছাড়াতে শুরু করলাম। ওরা চুল ফুলানোর জন্য চুল গুলালে এক দম বাজে বানিয়ে ফেলছে।
চুল গুলা ছাড়িয়ে উঠতে আমান আমার হাত ধরে বসালো৷ বিছনায়। —
–মেঘ আজ থেকে আমার স্বামী এবং স্ত্রী। খুব পবিত্র সম্পর্ক তৈরি হলো আজ।
আমি আমার বাবাকে খুব ভালোবাসি পৃথিবীতে উনি ছাড়া আমার কেউ নেই।
এক মাত্র দুনিয়া তিনি সে যেন কখনো তোমার থেকে কষ্ট না পান এটুকু আমি আসা করতে পারি?
–জি অবশ্যই।
–ঘুমিয়ে পরো।
আমার এক পাশে শুয়ে পরলেন তিনি।
আমিও আমার স্থানে শুয়ে পরলাম
এই যে পার্থক্য শুরু হচ্ছে।
কখনো এমন কল্পনা করি নি। আজ বিয়েটা আমার হয়েছে তার প্রমান সরুপ তিনি আমার পাশে শুয়ে আছেন।
আমাকে সব ভুলতে হবে এই সংসার আর পরিবার টাকে আপন করে নিতে হবে ❤️

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here