সর্বনাশীনি_তুমি #পর্ব:৬ #Mishmi_muntaha_moon

#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:৬
#Mishmi_muntaha_moon

গাড়িটা গাছ এ বাড়ি লাগলেও অনেক বেশি জোরে লাগে নি।কিন্তু সেহরিশ উপমাকে প্রটেক্ট করতে গিয়ে তার নিজের মাথার বাম পাশ এ বাড়ি লাগে সিটের সাথের জানালার অংশের সাথে।মাথার বাম পাশে কিছুটা ফেটে গিয়ে রক্ত বের হচ্ছে উপমা দেখতে পাচ্ছে কিন্তু কিছু করার বা বলার অবস্থায় নেই একটু শ্বাস নেওয়ার জন্য হাপাচ্ছে।সেহরিশ উপমাকে এইভাবে হাপাতে দেখে ঘাবড়ে যায়।নিজের খবর নেওয়ার হুশ নেই।উপমার গালে হাত দিয়ে হাল্কা ভাবে থাপ্পড় দিয়ে বার বার ডাকছে।

‘উপমা এই উপমা কি হলো এভাবে হাপাচ্ছো কেনো টেক আ ডিপ ব্রিথ।কাম ডাউন আমরা ঠিক আছি একদম সেফ আছি।’

বলে উপমার হাত ঢলতে লাগলো।উপমা চোখ দিয়ে ওর হ্যান্ড ব্যাগ এ ইশারা করছে কিন্তু মুখ দিয়ে যেনো কথা বের হচ্ছে না।
‘কিছুক্ষন ওয়েট করো আমি থাকতে তোমার কিচ্ছু হবে না।আমি কিছু করছি।’

সেহরিশ অস্থির হয়ে বিরবির করতে করতে গাড়ি থেকে নেমে একজন কে কল করে গাড়ি নিয়ে আসতে বলে। গাড়ি আসতেই উপমাকে নিয়ে হসপিটালে রোওনা দেয়।

__
‘কি হয়েছে ডক্টর ঠিক আছে উপমা’

‘জ্বী মিস্টার সেহরিশ উপমা ঠিক আছে। উনার হয়তো শ্বাসকষ্ট অথবা হাপানি রোগ রয়েছে তাই আকস্মিক কোনো ঘটনায় এমন হয়।ডোন্ট ওয়ারি আর আপনার মাথা ব্যান্ডেজ করে নিন রুমাল টাও তো রক্তে ভরে গেছে।’

ডক্টরের কথায় সেহরিশ গিয়ে ব্যান্ডেজ করে নেয়।তারপর উপমার কেবিনে যেতেই উপনার দুর্বল মুখ দেখে বেডের সামনে চেয়ার টেনে বসে গ্লাসে পানি নিয়ে উপমার মুখের সামনে ধরতে উপমা কিছুটা খেলো।সেহরিশ আবার গ্লাস টেবিলে রাখে।

‘আর ইউ ওকে উপমা?’

‘হুম আমি ঠিক আছি।আপনাকে ব্যাগের দিকে ইশারা করছিলাম তো ব্যাগে ইনহেলার রাখা ছিলো ওইটা নিলেই ঠিক হয়ে যেতাম এতো কষ্ট করার প্রয়োজন ছিলো না।`

‘শাট আপ বেশি কথা বলো না।’

উপমা চোখ বুজে জোরে শ্বাস নিয়ে সেহরিশের দিকে তাকাতেই আঁতকে ওঠে। ভালোভাবে বসে হাতের ক্যানেল খুলে অস্থির কন্ঠে বলল

‘আপনার পাঞ্জাবি ঘাড় রক্ত দিয়ে দেখি খাবড়ে গেছে।আপনি মাথা ব্যাথা পেয়েছিলেন নাকি আপনি,,,’

উপমার কথা মাঝেই থামিয়ে দিয়ে শান্ত কন্ঠে বলল

‘আমি ঠিক আছি একটি আকটু রক্ত ভেসে গেলে আমার কিচ্ছুই হবে না তোমার মত হ্যাংলা নয় আমি।আর হাতে ক্যানেল টা খুললে কেনো?’

সেহরিশের কথা উপমা মুখ বাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
‘ক্যানেল ফ্যানেল এর কোনোই প্রয়োজনে নেই হসপিটাল মানেই সব বেশি বেশি।’

হঠাৎ ঘড়ির দিকে নজর যেতেই ঘাবড়ে গেলো।প্রায় ১০টা বাজে।এখনো বাসায় গেলো না আব্বু নিশ্চিত চিল্লাফাল্লা করছে।আতংক নিয়ে উপমা সেহরিশকে বলল

‘আব্বু নিশ্চিত বকাঝকা করছে আম্মুর সাথে। ১০টা বেজে গেলো আবার আব্বু ইশফাকে কল দিয়ে আমার কথা জিজ্ঞেস করলে তো শেষ আমি।’

‘তোমার বাবা কে তো আমার ইদানীং মীরজাফর মনে হয়।’

সেহরিশের কথায় উপমা কিছুটা রেগে তাকায় সেহরিশের দিকে।সেহরিশ কথার রেশ পরিবর্তন করে বলে

‘এতো ভয় পাওয়ার কিছুই নেই।তোমার কেমন ফিল হচ্ছে সেইটা বলো ভালো না লাগলে হসপিটালেই থাকবে।’

সেহরিশের কথায় উওমা বিরক্ত নিয়ে বলল
‘আমি একদম ঠিল আছি এই সব আমার জন্য সাধারণ ব্যাপার স্যাপার।তারাতারি আমাকে বাসায় পৌছে দিয়ে আসুন।’

__
বাড়িতে পৌছে উপমা ভয় নিয়ে ঘরের বেল বাজালো।কিছুক্ষন জেতেই উপমার মা এসে দরজা খুলে দিলো।আর বললো ওর বাবা ঘুময়ে পড়েছে।
উপমা যেনো চিন্তামুক্ত হলো।রুমের দিকে পা বাড়াতেই উপমার মা পিছন থেকে জিজ্ঞেস করলো

‘এতো দেরি কেনো হলো’

উপমা ওর মার দিকে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বলল
‘রাস্তায় অনেক জ্যাম ছিলো তো তাই’

জোড়পূর্বক হাসি টেনে ওর আম্মুর দিকে তাকাতেই উনি নিজের রুমে চলে গেলো।
উপমা বুকে হাত দিয়ে শ্বাস টেনে রুমে চলে গেলো।যাক ওর মা সব সামলে নিয়েছে।আর এক্সিডেন্ট এর কথা বলে নি আবার টেনশন করবে তারপর দেখা যাবে তার আব্বুও জেনে গেছে তাই আর বলেই নি।

_
সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রাশ মুখে নিয়ে বারান্দায় গেলো উপমা।দুই তিনটা ফুলের টব আছে ওইগুলোতেই পানি ছিটিয়ে দিতে।উপমার আবার ফুল গাছ বেশি দিন টিকে না মরে যায় তার সত্ত্বেও ফুল গাছ কিনে নিয়ে আসে।
মুখ ধুয়ে ওর আম্মুর পাশে গিয়ে সোফায় বসতেই উপমার আম্মু আফসোস ভারাক্রান্ত কন্ঠে বলে

‘শুনলাম সেহরিশের মাথায় চোট লেগেছে অবস্থা বেহাল।কিন্তু ও তো কাল তোর সাথেই ছিলো তুই তো কিছুই বললি না।’

উপমা আড়চোখে ওর মার দিকে তাকিয়ে পরোটা ছিড়ে মুখে দিয়ে কোনোরকম চাবাতে চাবাতে বলল

‘আমি তো জানি না হয়তো পরে কিছু হয়েছে।তা তুমি দেখতে যাবেনা উনাকে?’

উপমার কথা শুনে ওর মা অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে টিভিটা বন্ধ করে বলল
‘হুম যাবো কিন্তু তুইতো মনে হয় যাবি না তাই বাড়িতে থাকিস কলেজে আর যেতে হবে না।’

উপমা তার মার কথা শুনে ভ্রু কুচকে বলল

‘নাহ আমি একা বাসায় থাকতে পারবো না।আমিও যাবো।’

বলে মাথা নিচু করে খেতে লাগলো।ওর আম্মুও কিছু না বলে রুমে গেলো।
দুপুরে খেয়ে দেয়ে উপমা ওর মার সাথে গেলো সেহরিশের বাড়ি।ওরা গিয়ে সেহরিশকে পেলো না বাহিরে গেছে।

‘কি বলেন রোকেয়া আপা এই অবস্থায় ছেলেটাকে বের হতে দিলেন কেনো?’

উপমার আম্মুর কথার পরিবর্তে রোকেয়া বেগম বলল
‘ছেলেটা আমার কথা শুনলে তো। প্রচুর ঘাড়ত্যাড়া স্বভাব ওর।’

রোকেয়ার আন্টির কথা শুনে উপমাক বেশ অসন্তুষ্ট হলো।এই অবস্থায় কি দরকার ছিলো বের হবার।
রোকেয়া বেগম উপমাদের কিছু ফলমূল দেয় জোর করে কিছুটা খাইয়ে আড্ডা দেওয়ার মাঝেই সেহরিশ ফিরে এলো।রোকেয়া বেগম দরজা খুললে ডানে বামে না তাকিয়ে সেহরিশ নিজের রুমের দিকে যেতে নিচ্ছিলো রোকেয়ার ডাকে থেমে সোফার দিকে তাকাতেই অবাকের রেশে ভ্রু গুলো কিঞ্চিৎ কুচকে যায়।তারপরই স্বাভাবিক হয়ে উপমার আম্মুকে সালাম করে পাশে বসে।

‘এই অবস্থায় বাহিরে গিয়েছিলে কেনো।আহা কতটা চোট পেয়েছো মাথায়।’

উপমার মায়ের কথায় সেজরিশ হেসে দিয়ে বলল
‘ও কিছুনা আমি একদম ঠিক আছি এইটা তো সামান্য চোট।’

আরও কিছু কথা বলে সেহরিশ উঠে নিজের রুমে চলে গেলো।রোকেয়া আর উপমার আম্মু সোফা থেকে উঠে রোকেয়ার রুমে গিয়ে বসলো।উপমা বাড়ি ঘুরতে ঘুরতে সেহরিশের সাথের রুমটা বন্ধ দেখে খুলে সেই রুমে ঢুকে।আশেপাশের পরিবেশ আর সাদাতের ছবি দেখে বুঝতে পারলো যে এইটা সাদাত এর রুম।
সাদাতকে আরও অনেক আগে দেখেছে উপমা তখন ছোট ছিলো কিছুটা। তার পর পরই স্টাডির জন্য আমেরিকায় যায়।সেহরিশ বাহির থেকে পড়ে এসেছে বলে সাদাতের ও ছোট বেলা থেকেই বাহিরে গিয়ে পড়ার ইচ্ছা ছিলো বড় ভাইয়ের মতো।সাদাত উপমার কিছুটা বড় হবে ২,৩ বছরের বেশি না।

খাটের পাশের ফ্যামিলি ফোটো দেখে সেইটা হাতে নিয়ে দেখছে তখনি পিছন থেকে সেহরিশ খোপা করা চুল খুলে এক পাশ করার সময় ঘাড়ে হাতের স্পর্শ লাগতেই কেপে উঠে উপমা।সাথে সাথেই হাতের ফোটোফ্রেম টা নিচে পড়ে কাচ ভেঙে যায়।কিছুক্ষন আহত চোখে ভেঙে যাওয়া ফ্রেমে তাকিয়ে থেকে অস্থির হয়ে কাচ তুলতে লাগে।

‘সরি সরি হাত থেকে ছুটে পরে গেলো। আমি ইচ্ছা করে ফালাই নি।’

উপমাকে এমন অস্থির হতে দেখে সেহরিশ উপমার কাধ ধরে তুলে বিছানায় বসিয়ে দিয়ে বলে

‘ইটস ওকে উপমা,এতো অস্থির হওয়ার মতো কিছুই হয় নি।তাছাড়া এই ফ্রেমের কোনোই মূল্য নেই এখন এটা ভেঙে গেলেও যেমন সাজিয়ে রাখলেও তেমনই।’

বলে ফ্রেম টাকে তুলে টেবিলের উপর উল্টিয়ে রেখে দেয়।কাচ গুলো রুমাল দিয়ে এক পাশ করে রেখা উপমার পাশে বসে। উপমার হাত নিজের হাতের ভাজে নিয়ে ঠোঁট ছুয়ে দেয়। হাত ছেড়ে উপমার পায়ের উপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ে।সেহরিশের ঘন চুলগুলো উপমার কোমরে লাগতেই শিরশির করে উঠে পুরো শরীর জুরে।
তার উপর সেহরিশ উপমার হাত দুটো টেনে নিজের চুলে রাখাতেই হাতের পাতায় সুরসুরি লাগলো।

‘তোমার মিষ্টি হাতজোড়া দিয়ে আমার উষ্কখুষ্ক চুলগুলো ছূয়ে দেও তো রমনী।’

উপমার শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি। বুকটা যেনো ক্রমশই ভার হয়ে যাচ্ছে।এতো কাছাকাছি আসার কি প্রয়োজন ছিলো সেহরিশের উপমার যে স্বাভাবিক মনে অশান্ত ঝড় উঠছে।

‘তোমার চোখজোড়ায় বিনা অনুমতিতে চোখ রাখতে চাই।হাত দুটো নিজের হাতে জড়িয়ে রাখতে চাই।তোমাকে নিজের করে পেতে আর কত সময় অপেক্ষা করতে হবে বলো দেখি?’

উপমা কোনো জবাব দিলো না।হাতদুটো সেহরিশের চুলের ভাজে নিয়ে স্পর্শ করতে লাগলো।ও তো নিজেও চায় সেহরিশের সকল চাওয়ার সমাপ্ত ঘটাতে। তার সাথে ঘর সাজাতে।তার মুগ্ধ চোখের চাহনিতে মিইয়ে যেতে।কিন্তু তা কখন হবে তা জানা নেই।’

চলবে,,,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। ❤️❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here