#সর্বনাশীনি_তুমি
#পর্ব:১৪
#Mishmi_muntaha_moon
উপমার আব্বু এসেছে ক্লান্ত শরীরে।উপমার মা তারাতারি করে লেবুর সরবত বানিয়ে দিলো।খেয়ে উপমার বাবা সোফায় গা এলিয়ে দিলো।উপমা কাছেই দাঁড়িয়ে ছিলো। জাফর সাহেব উপমাকে দেখে হাতে ইশারা করে কাছে আসতে বলল।উপমা ভ্রু কুচকে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো তার বাবার দিকে।সোফায় তার বাবার সাথে বসতেই জাফর বেগম মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।উপমা আর তার মা কিছুটা অবাক নিয়ে তাকাতেই জাফর সাহেব বলে
‘তারেক চিনো না ওইযে আমাদের বাড়ির পিছের বাড়ির তারেকের মেয়ে ছিলো না তারা মেয়েটা সুইসাইড করেছে আশেপাশের মানুষজন বলছে কোন এক ছেলের জন্য কিন্তু তার মা বাবারা বলছে না পরীক্ষায় খারাপ করার জন্য।পড়ায় তো বেশ ভালো ছিলো মেয়েটা।’
উপমার কথাটা শুনে খারাপ লাগলো।মেয়েটার সাথে মোটামুটি সখ্যতা ছিলো ভালোই। চুপচাপ ছিলো পড়ুয়া একটা মেয়ে।উপমার সমবয়সী তাই হয়তো জাফর সাহেবের এতো আফসোস লাগছে তার নিজেরও তো মেয়ে আছে।
‘পরীক্ষা তো ভালোই দিয়েছো বললে। আর রেজাল্ট ভাগ্যে যা আছে তাই হবে বেশি টেনশন নিবে না ঠিকাছে?’
উপমা মাথা দুলালো।উপমার আম্মু তার বাবাকে বিছানায় শুয়ে কিছুক্ষন বিশ্রাম করতে বললে জাফর সাহেব উঠে চলে যায়।উপমাও তার রুমে যায়।
__
আজকে জুইয়ের বয়ফ্রেন্ড সবাইকে ট্রিট দেবে বলে জুই কল করে সবাইকে বলে দিলো বিকেল দিকে থাকতে উপমার একদমই ইচ্ছে করছে না কোথাও জেতে কিন্তু ঘাড়ত্যাড়া জুইয়ের ঘাড়ত্যাড়ামির কারনে রাজি হতে হলো।
উপমার এখন নিজের জন্য মায়া হচ্ছে আর তার বাবার জন্যও কেনো জেনো মন খারাপ হচ্ছে।পরীক্ষাটা ভালোই হয়েছে কিন্তু একেবারে ফার্স্টক্লাস বলা যায় না।তার বাবা হয়তো অনেক ভালো কিছু আশা করেছিলো তার থেকে কিন্তু এখন এই তারার ঘটনার কারনে এমনটা বলছে।
তবুও উপমা কিছুটা স্বস্তি পেলো রেজাল্ট খারাপ হলে কমসেকম বকাঝকা তো করবে না।
উপমা চুল গুলো হাত দিয়ে ঠিক করতে করতে তার মার রুমে গেলো।কিন্তু তার মাকে না পেয়ে রান্নাঘরের দিকে বাড়তে নিতেই রুম থেকে উপমার বাবা ডেকে উঠে
‘কিছু বলতে তোমার আম্মুকে?’
উপমা তার বাবার কথায় ঠোঁট কামড়া কামড়ি করে বলল
‘আমার ফ্রেন্ড আছে না জুই ও নাকি আমাদের ট্রিট দিবে সবাইকে জেতে বলেছে বেশিক্ষণ না কিছু সময়ের জন্য আমার সকল ফ্রেন্ডই যাচ্ছে তো আমিও যাই?’
উপমার মুখের দিকে জাফর সাহেব কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে হেসে বলল
‘আচ্ছা যাও কিন্তু তারাতারি আসবে কেমন।’
উপমা খুশি হলো।মুচকি হেসে রুমে চলে গেলো। বেগুনি রঙের একটা থ্রি-পিস পড়ে ব্যাগ নিয়ে বের হতে নিতেই উপমার মা টিভি অফ করে ভ্রু কুচকে বলল
‘কোথায় যাচ্ছিস?’
‘ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে।বাবা থেকে পারমিশন নিয়েছে।’
উপমার হাসিমাখা মুখ তাকিয়ে তার মা বলল
‘তো আমি কিছু বলেছি নাকি।’
উপমা হেসে চলে গেলো।কড়া রোদ ধীরে ধীরে মিষ্টি রোদে পরিবর্তন হচ্ছে।অটোরিকশায় উঠে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে নামলো।বাহিরে কিছুক্ষণ দাড়ালো ভিতরে একা যেতে কেমন যেনো লাগছে।যদি ইশফা অথবা মারজিয়াকে আসতে দেখে তাহলে একসাথেই যেতে পারবে।কিন্তু কাউকে না পেয়ে একাই ভিতরে ঢুকলো।আশেপাশে তাকাতেই সকলকে একটা রাউন্ড টেবিলে বসে থাকতে দেখলো।ধীর পায়ে এগোলো।
সবাইকে পরোখ করতেই স্কাইব্লু রঙের শার্ট পরিহিত শ্যামলা গড়নের ছেলেকে দেখে ব্রু কুচকে তাকালো।ছেলেটাকে আগেও দেখেছে মনে হলে। ব্রেইনে জোড় দিতেই মনে পড়লো সেহরিশের সাথে দেখেছিলো যেই দিন মারামারি করলো সেহরিশ সেইদিন তার সাথেই ছিলো দুইটা ছেলে তার মধ্যে এই ছেলেটাও ছিলো।
ছেলেটাও মনে হয় চিনতে পারলো উপমাকে। দাঁড়িয়ে বিনয়ী কন্ঠে বলল
‘আরেহ উপমা না? জুই তোমার ফ্রেন্ড আমি তো জানতামই না।’
বলে হাসলো।উপমাও হেসে খালি একটা চেয়ারে বসে পড়লো।কথাবার্তা বলে উপমা জানতে পারলো সেহরিশের দলেরই ছেলেটা তার বিশস্ত একজন মানুষ নাম তার ইউসুফ।
সকলের সাথে ভালোই ভদ্র ভাবে কথা বলল।অনেক খাবার অর্ডার করলো।টুকটাক সকলে খেয়ে দেয়ে বসতে ইউসুফ ছেলেটাকে পিছে মেইন দরজায় তাকিয়ে হেসে দাঁড়িয়ে যেতে দেখে উপমা সহ বাকি সকলে তাকালো।
সেহরিশকে দেখে উপমা ঢোক গিললো।
ভাবতে লাগলো সে যে এইখানে সেহরিশ জানলো কি করে।নিজেকে নিজে প্রশ্ন করতেই ইউসুফ এর দিকে নজর গেলো।দাতে দাত চেপে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল
‘ইউসুফ ভাই উনাকে আপনি খবর দিয়েছেন।এইটা একদমই ঠিক করেন নি।’
ইউসুফ হাসলো।ঘাড়ে হাত বুলয়ে বলল
‘আমি তো এমনিতেই বলেছিলাম তোমার কথা ভাই যে এসে পড়বে তা কি জানতাম বলো?’
উপমা দীর্ঘশ্বাস ফেললো।সেহরিশ আসতেই ইউসুফ হাসিমুখে কথা বললো।সেহরিশও কথা বলে উপমার হাত ধরে দার করালো।সকলে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো তাদের দিকে।
সকলের থেকে বিদায় নিয়ে হাসিমুখে উপমার হাত টেনে বাহিরে চলে যেতে লাগলো সেহরিশ।
__
উপমার মুখে গম্ভীরতা বিরাজ করছে।গাড়ি সেহরিশ একটা নির্জন জায়গায় দার করিয়ে চুপচাপ বসে আছে।উপমা সেহরিশকে দেখলো।ব্রাউন শার্ট গায়ে টাই ও গলায় ঝুলানো।অবাক হলো কিন্তু কিছু বলল না।
‘কি সমস্যা আপনার?’
সেহরিশ তাকালো উপমার মুখপানে। উপমার বসার সিট পিছনের দিকে হেলিয়ে দিয়ে উপমার উপর ঝুকে পড়লো।
উপমা খিচে রইলো।সেহরিশ কন্ঠের তেজ বাড়িয়ে বলল
‘কালকের ঘটনা আমি ভুলিনি বুঝলে।ওইটার হিসাব নিকাশ করা এখনো বাকি আছে।’
উপমা জানালায় থমকে রাখা চোখ সেহরিশের দিকে ফেললো।মৃদু কন্ঠে বলল
‘হিসাব নিকাশ আমার না আপনার করা উচিত।’
উপনার কথায় সেহরিশ ভ্রু উচিয়ে তাকালো। ঠোঁট কামড়ে বলল
‘ওহ আচ্ছা তাহলে করো হিসাব নিকাশ আমার সমস্যা নেই।’
উপমা সেহরিশের বুকে হাল্কা ধাক্কা দিলো।কিন্তু সেহরিশ নড়লো না শক্ত হয়ে আগের মতই থাকলো।উপমা বলল
‘আপনার বাবা কিভাবে তাকিয়ে ছিলো দেখেছেন আর তাছাড়া উনি আমায় একদম পছন্দ করেন না।’
সেহরিশ দাতে দাত চাপলো।উপমার উপর থেকে সরে ঠিক হয়ে বসে বলল
‘আমি সব ব্যাবস্থা করছি।যেখানে আমি তোমাকে চাই কারো সাধ্য নেই আমাকে তোমার থেকে দূরে রাখতে আর না তোমাকে আমার থেকে বুঝলে।’
উপমা চুপ করে রইলো।পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে বলল
‘আমাদের গ্রামে কোনো এক মেয়ে সুইসাইড করেছে পরীক্ষায় খারাপ করায় কেউ কেউ অবশ্য বলছে ছ্যাকা খেয়েছে বলে। কিন্তু আসল ব্যাপার হলো এখন আমি খারাপ রেজাল্ট করলেও বাবা কিছু বলবে না।’
উপমা ঠোঁট বাকিয়ে হাল্কা হাসলো।সেহরিশ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকালো উপমার দিকে।চুল ব্যাকব্রাশ করে বলল
‘তোমার বাবাও তোমার মতো নির্বোধ। বাবা মেয়ে একই।’
বলে গাড়ি স্টার্ট করতে লাগলো।উপমা ভ্রু কুচকে তাকালো সেহরিশের দিকে। রেগে গিয়ে বলল
‘আপনি যেমন অনেক বিবেক বোধগম্য মানুষ। যত্তসব আমার বাবার পিছে লেগে থাকে।’
সেহরিশ পাত্তা দিলো না উপমার কথায়।
রাত হয়ে গেছে।উপমাকে কিছুটা চিন্তিত দেখালো।গাড়ি উপমাদের বাড়িতে পৌছাতেই উপমা নেমে পড়লো।সেহরিশকে গাড়ি থেকে বের হতে দেখে ভ্রু কুচকে বলল
‘আপনি নামলেন কেনো।চলে জান আব্বু দেখে ফেললে?’
‘দেখলে দেখবে সমস্যা কোথায়?’
উপমা বিরক্ত হলো।সেহরিশ উপমার হাত টেনে ঠোঁট ছোয়ালো।ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটিয়ে বলল
‘যাও উপরে যাও।আর নতুন কিছুর অপেক্ষা করো জাস্ট কাউন্ট ডাউন।’
উপমা অবাক হলো সেহরিশ কি বলতে চাচ্ছে?সেহরিশকে মুচকি হাসতে দেখে উপমাও মুচকি হেসে উপরে চলে গেলো। সিড়ি ডিঙিয়ে ফ্ল্যাটে পৌছাতেই বেল বাজাতে নিবে তখনই তার বাবা দরজা খুলে।
চোখে চশমা ঠিক করে উপমার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুচকে বলল
‘যাও বাড়িতে যাও।’
‘তুমি কোথায় যাচ্ছো আব্বু?’
‘এই নিচে কিছু কাজ ছিলো।’
বলে চলে গেলো।উপমা সিড়ির পানে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে ভিতরে চলে গেলো। সেহরিশ চলে গেছে কিনা ভাবতে ভাবতে নিজ রুমে গেলো।
চলবে,,
(ভুল ত্রুটি গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন সবাই। ছোট হওয়ার জন্য দুঃখিত 🥲🥲)