সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি #পর্বঃ১৫,১৬

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ১৫,১৬
#লেখিকাঃরাদিয়াহ_রাফা_রুহি
পর্বঃ১৫

নিকষকৃষ্ণ রজনী।শব্দহীন মেদিনী বর্তমানে আঁধারে নিমজ্জিত। ধরণীতে প্রবাহিত অনিলে মিশে রয়েছে বাহারি পুষ্পের সুমিষ্ট ঘ্রাণ। অন্তরীক্ষ কৃষ্ণ, মেঘহীন।চারিপাশে বিরাজমান নীরবতার মাঝে হঠাৎ হঠাৎ ডেকে উঠছে রাস্তায় অবস্থানরত বেওয়ারিশ কুকুরের দল।তারপর ফের প্রকৃতির মৌনব্রত পালন। অনিলে মিশে থাকা পুষ্পরাজের মাদকতার ন্যায় সুঘ্রাণ পরিবেশ এখন মিহি, অপূর্ব! কৃষ্ণকালো অন্তরীক্ষের মাঝে আজ বহুদিন পর দেখা মিলেছে চন্দ্রের।বসন্তের প্রথম পূর্ণিমার রাত আজ।স্বচ্ছতা, পবিত্রতা, চন্দ্রের মোহনীয় সৌন্দর্য ধ্বংস করেছে আঁধারের কলুষিত।খনে খনে স্ট্রুয়ার্ট এর কথা বলে উঠা,ডানা ঝাপটানো সব কিছুই পর্যবেক্ষণ করতে ব্যস্ত অনিলা।সে তো ভাবতেই পারছে না তার বুবুর বিয়েতে জুনইদকে আরও দুই দিন আগেই আসতে ব’লেছে।শুধু তাই ই নয় বিয়ের দুই দিন আগে এসেই তার রুম দখল করেছে জুনইদ।তার নাকি অনিলার রুমই পছন্দ হয়েছে।অবশ্য অনিলা জুনইদের পুরো পরিবার কেই বিয়ের ইনভিটিশন কার্ড দিয়ে এসেছে।নিশা সহ বাকিরা বিয়ের দিন আসবে।কিন্তু তার বুবু স্পেশালি নাকি জুনইদ কে বিয়ের দুই আগে থেকেই এই বাড়িতে এসে থাকতে বলেছে।অগত্যায় তার রুম টা জুনইদের জন্য ফাঁকা করে দিতে হয়েছে।আর তার স্থান হয়েছে বুবুর রুমে।বাকি রুম গুলোতে কিছু গেষ্ট এসেছে তারাই থাকছে।কিছুই করার নেই।পরে সে নিজের ইচ্ছে তেই বুবুর ঘরে থাকবে বলেই ঠিক করে নিয়েছে।কাল তার বুবুর গায়ে হলুদ সে জন্য আজকে কয়েকজন আত্নীয় এসেছে তাদের বাড়িতে।

এটা কি মানা যায়।নিজের বাড়ি নিজের ঘর অথচ এই ভাবে কিনা তাকেই তার ঘর ছাড়া করলো।এই মিষ্টার ল্যাম্পপোস্ট কে তো সে দেখেই নেবে।সে যতটা জানে জুনইদ ইদুর,তেলাপোকা, চামচিকে,বাদুর এসবকে ভীষণ ভয় পাই।এই কথাটা নিশার সঙ্গে গল্প করতে করতেই কথার মাঝে নিশা বলেছিলো।ছোট বেলা থেকেই এসবে ভীষণ ভীতি তার ভাইয়ের।কথাটা মাথায় আসতেই চট করেই মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি চলে এলো।এখন রাত প্রায় সারে দশটা।একটা প্লাস্টিকের ইদুর৷ আর তেলাপোকা রেডি করলো সে।গভীর রাতে যখন সকলেই ঘুমিয়ে পরবে সে আস্তে আস্তে জুনইদের রুমে গিয়ে ইদুর আর তেলাপোকা টা রেখে আসবে আর সকালে উঠে ইদুর, তেলাপোকা দেখলেই কেল্লাফতে।ভেবেই একটা শয়তানী হাসি দিলো অনিলা।

“আহা কি বুদ্ধিরে তোর অনিলা।কি সুন্দর এই না হলে তোর মাথা।এবার তোমাকে আমি আচ্ছা মতোই জব্দ করবো মিষ্টার ল্যাম্পপোস্ট।কি রে স্ট্রুয়ার্ট ঠিক আছে না।

স্ট্রুয়ার্ট মাথা ঘুরিয়ে মিষ্টি করে কিছুটা অস্পষ্ট ভাবেই বলে উঠলো,”লাভ,লাভ! লাভ ইউ, প্রেমের শুরু”

অনিলা ভ্রু কুচকে তাকালো স্ট্রুয়ার্ট এর দিক।সন্দিহান গলায় বললো, “এই তোকে এই শব্দ গুলো কে শেখালো বল তো?আমি তো তোকে ইংরেজি শব্দ শিখিয়ে দেইনি কখনোই!তাছাড়া এক সাথে এতো গুলো শব্দ তো নয়ই।একদিনেই কে শেখালো তোকে এসব!কারণ কি রে!”অনিলা ভ্রু নাচালো’..

স্ট্রুয়ার্ট ডানা ঝাপটাতেই খাচা নড়ে উঠলো, “ছেলেটা,ছেলেটা, সেই ছেলেটা!”

অনিলার সন্দেহ বাড়লো।এই কথাটা কি তবে জুনইদ শিখিয়েছে স্ট্রুয়ার্টকে।তাছাড়া আর কে শেখাবে।আর তো কোনো ছেলেও নেই জুনইদ ছাড়া।মনে মনে রাগ বাড়লো অনিলার।এই লোকটা কে তো সে দেখেই নেবে।একে তো তার ঘর দখল করেছে তারপর আবার স্ট্রুয়ার্ট কেও এসেই একদিনে আজেবাজে কথা শেখাচ্ছে।অনিলা স্ট্রুয়ার্ট খানিক কে রাগ দেখালো।এই স্ট্রুয়ার্ট ই বা কেমন একজন একটা কথা শিখিয়ে দেবে জন্য কি ওকেও সেটা শিখতে হবে হ্যাঁহ।সে কোনো কথা শিখিয়ে দিলে তবেই স্ট্রুয়ার্ট শিখতো আর এই লোকটা কে দ্বিতীয় দর্শনেই স্ট্রুয়ার্ট তার বলা বুলি মুখে এটে নিয়েছে।ভেবেই আরেকদফা রাগ মনে জেগে উঠলো।

তোকে কে পুষেছে রে স্ট্রুয়ার্ট? আমি নাকি তোর ওই সেই ছেলেটা রে?একজন তোকে একটা কথা শিখিয়ে দেবে আর তোকে শিখতে হবে।যাহ এরপর থেকে যে তোকে এই কথা শিখিয়ে দিয়েছে তার কাছেই থাকবি একদম আমার কাছে আসবি না।

অনিলার কথায় স্ট্রুয়ার্ট তার ছোট্ট ছোট্ট চোখে বোকা বোকা চাহনিতে চেয়ে রইলো টুকুর টুকুর করে।সে কি করবে তাকে যদি কেউ কথা বলা শিখিয়ে দেই তো সে তো শিখবেই।

অনিলা মুখ ঘুরিয়ে নিলো স্ট্রুয়ার্ট এর দিক থেকে।এই বাড়ির সবাই কেমন যেনো তার সাথে পর পর ভাব করছে।ওই অচেনা একজন আসায় তাকে কিনা সোজা ঘর ছাড়া করে বুবুর ঘরে পাঠালো।কি আদর যত্ন করছে তার।গা জ্বলে যাচ্ছে একেবারে।বাবাকে জুনইদ বাচিয়েছে বলেই জুনইদ কে স্পেশালি দাওয়াত করা হয়েছে।

“সব কিছু করুক গে জুনইদকে নিয়ে বাড়ির সবাই।কিন্তু তা বলে আমার সঙ্গে এমন পর পর ব্যবহার করতে হবে।এরকম নানান ভাবনায় সময় কাটলো অনিলার।

মায়াবী রুমে ঢুকেই দেখলো অনিলা বসে বসে বিড়বিড় করছে।সে সন্তপর্ণে দরজা টা আটকে দিয়ে অনিলার কাছে যেতেই অনিলা কিছু টা চমকালো।তাকিয়ে দেখলো তার বুবু।অনিলা ঘাবড়ে যাওয়া কন্ঠে বললো,

বুবু তুমি কখন এলে।এভাবে কেউ চুপিচুপি আসে নাকি।চমকে গেছি তো।

এতো শব্দ করে এলাম আর তুই আমার পায়ের শব্দ টাও পেলি না।তার আগে বল তো তুই এভাবে একা একা বিড়বিড় করছিলি কেন রে?” মায়াবী চোখ কোণা করে চেয়ে রইলো অনিলার দিকে।

ক-কই ব-বুবু কিছু না তো।অনিলা দেখলো তার বুবুর বাকা চাহনি বদলায় নি।তাই অনিলা কথা ঘুরানোর জন্য আবার বলে, “তা বুবু কি এতো কথা বললে ফাহাদ ভাইয়ের সাথে হু হু!

মায়াবী একটু লজ্জা পেলো।রক্তিম আভা ছড়িয়ে পরলো সেই মুখশ্রী তে।অনিলা তাকিয়ে সব টাই লক্ষ্য করেছে।ফাহাদ ভাইয়ের কথা বললেই কেমন একটা ব্লাস করে তার বুবু।

“কি হলো বুবু? এতো লজ্জা পাচ্ছো কেন গো”

অনিলা কপট রাগ দেখানোর ভান করে বললো, অনি তুই কিন্তু খুব পেকেছিস।চল ঘুমাবি চল।বলেই মায়াবী গিয়ে বিছানায় শুয়ে
পরলো।অনিলাও আর কথা না বাড়িয়ে শুয়ে পরলো বুবুর পাশে।

ঘড়ির কাটা বারোর ঘরে পৌঁছতেই অনিলার টনক নড়লো।এতক্ষণ সে ঘুমানোর ভান ধরে ছিলো।আর এটা সে খুব ভালো করেই পারে।সকালে সবার সম্মুখে সে তো আর নিজের রুমে যেতে পারবে না।আফটার অল তার রুমে এখন জুনইদ থাকে।এতো রাতে নিশ্চয়ই সবাই ঘুমিয়ে গেছে।অনিলা অতিব সাবধানতার সহিত রুম থেকে বেরিয়ে এলো কোনো রকম শব্দ ছাড়া।এখন তার বুবুও বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।তার বুবু একবার ঘুমিয়ে গেলে ভুমিকম্প হয়ে গেলেও বুঝবে না কিছুই।অনিলার হাতে প্লাস্টিকের তেলাপোকা আর ইদুর।এই দুটোতেই কাজ হয়ে যাবে এখন।মোটামুটি সবাই ঘুমিয়ে গেছে।এই সুযোগ টা তো সে কিছুতেই মিস করবে না।রিস্ক তো নেবেই সে।অনিলা নিজের রুমের সামনে এসে দাঁড়িয়ে দরজায় কান পেতে শুনতে পেলো একটা অদ্ভুত শব্দ।এটা তো নাক ডাকার শব্দ। তার মানে কি এই মিষ্টার ল্যাম্পপোস্ট নাক ডাকে।নাক মুখ কুচকে গেলো তার।

যাক গে তাতে তার কি।সে দরজা টা ফাঁক করে হালকা উঁকি ঝুঁকি দিয়ে দরজা টা ঠেলে ভেতর প্রবেশ করলো।প্রথমেই সে জুনইদের স্যুটকেসের ভেতরে ইদুর আর তেলাপোকা রেখে দিলো।সকালে যখনই স্যুটকেস খুলবে জুনইদ তখনই টের পাবে সব টা।ঠোঁট এলিয়ে হেসে স্যুটকেস টা সরালো।সামান্য শব্দ হলো তাতে।অনিলা কাজ শেষ করেই আস্তে করে যেই রুম থেকে বেরোতে যাবে তখনই ঘরের টেবিল ল্যাম্প টা জ্বলে উঠলো।অনিলা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে পরলো।আস্তে আস্তে ঘাড় ঘুরিয়ে সে সামনে তাকিয়ে দেখলো জুনইদ টেবিল ল্যাম্প টা জ্বালিয়ে তার দিকে ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে আছে।

অনিলা ভাবছে,ওরেহ বাপরে এর থেকে তো ভুতের দেখা ভালো ছিলো।এতো আস্তো বাঘের মুখে পরেছে সে।অনিলা ভয়ে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রইলো।জুনইদ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“মিস সুনামি তুমি এতো রাতে এই ঘরে কি করছো?”

অনিলা মেকি হাসার চেষ্টা করলো।এখন সে কি বলবে।আমতা আমতা করে বলে উঠলো,

আ-আমি আমার বালিশ ছাড়া ঘুমাতে পারি না তাই এসেছিলাম আমার বালিশটা নিতে।

জুনইদ এর বিশ্বাস হচ্ছে না ব্যাপার টা।কেমন সন্দেহের গন্ধ পাচ্ছে যেনো।জুনইদ কিরকম অভিব্যক্তি দেখাবে বুঝতে পারছে না।হালকা করে ঘুম এসেছিলো সে।কিন্তু অল্প আওয়াজেই তার ঘুম ভেঙে যাওয়ার অভ্যাস আছে।মৃদু শব্দ পেয়েই আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসে অন্ধকারে কোনো মানবীর ছায়া দেখতেই সে উঠে বসেই চমকে উঠে।টেবিল ল্যাম্প জ্বালাতেই পেছন দিক থেকে দেখলেও অনিলাকে চিনে ফেলে।গলায় সামান্য আক্রোশ টেনে জুনইদ বলে,

“একটা সদ্য যুবকের ঘরে এতো রাতে ঢুকতে তোমার ভয় করলো না।এই সামান্য বালিশের জন্য তুমি আমার রুমে এসেছো?”

“এক মিনিট,এক মিনিট, এটা আমার রুম ওকে!আপনাকে থাকতে দেওয়া হয়েছে রুম আপনার নামে লিখে দেওয়া হয়নি বুঝলেন!”

অনিলা কয়েক কদম এগিয়ে এলো!, আর কিসের ভয় এটা তো আমার রুমে।ভয় কেন পাবো?”

জুনইদ অভিলাষ প্রগাঢ় গলায় জিজ্ঞেস করলো, “তুমি সত্যিই কি শুধু বালিশ নিতে এসেছো নাকি অন্য কোনো মতলব আছে তোমার শুনি?”

অনিলা কিছু টা ঘাবড়ে গেলো ভেতরে ভেতরে।কিন্তু চোখে মুখে তা প্রকাশ করতে চাইলো না।সে আমতা আমতা করে উত্তর দিলো,

“আরে মতলব আবার কিসের।আমি বালিশ নিতেই এসেছিলাম।আপনি ঘুমিয়ে গেছেন দেখেই চলে যাচ্ছিলাম।আপনি ঘুমান না ঘুমান।”

কথা শেষ করেই অনিলা জুনইদের দিকে এগিয়ে এসে ওঁকে শুইয়ে দিয়ে চাদর টেনে দিলো।এসব কিছু জেনো মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে জুনইদের।কি হচ্ছে এসব বুঝতে পারছে না।অনিলাকে এতো কাছ থেকে দেখে আর এমন মিষ্টি কথায় জুনইদের মনের ভেতর টা কেমন করে উঠলো।আবার হঠাৎ করেই তার মনে পরলো অনিলা তার স্যুটকেস নিয়ে কিছু একটা করছিলো।অনিলা চলে যাচ্ছিলো জুনইদ অনিলার হাত টেনে ধরে বলে,

“তুমি বালিশ নিতে এসেছো ভালো কথা তার জন্য বালিশ নিতে এসে আমার স্যুটকেস ঘেটে দেখা টা কি খুব জরুরি ছিলো মিস সুনামি?”

ইশ এই মিস্টার ল্যাম্পপোস্ট না!সবকিছুই লক্ষ করে কেন এই ব্যটা।অনিলা কি বলবে আর ভেবেই পেলো না।সত্যিটা বলার তো প্রশ্নই আসে না।কিন্তু এই সময়ে কি এমন বললে জুনইদ সন্তুষ্ট হবে পেলো না।এখনো তখনকার মতোই একটা মিথ্যা কথা বলে ফেললো,

সত্যিই বলবো,আসলে আমার না আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো।

“আচ্ছা তাই।জুনইদ গভীর গলায় জিজ্ঞেস করলো।”

জুনইদ এর এই অর্ধেক ঘুমের গলা যেনো কেমন অন্য রকম ভাবে আকৃষ্ট করলো অনিলাকে।অনিলা কয়েক সেকেন্ডের জন্য অন্য মনষ্ক হয়ে পরলো।আস্তে আস্তে গম্ভীর হয়ে অনিলা বললো,

“এটাই বলার ছিলো যে আপনি ঠিক করে জড়িয়েও ধরতে পারেন না!”

অনিলা জুনইদকে অন্য মনষ্ক করার জন্য এমন একটা কথা বললো।আর জুনইদ স্যুটকেসের ব্যাপার টা ভুলেও গেলো এই কথা শুনে।হসপিটালে যখন সে জুনইদের বুকে মুখ গুজে ছিলো তখন জুনইদ তাকে ধরেনি অব্দি।সেটা মনে পরতেই চট করেই এই কথা বলে ফেলেছে।আর কি বলে ফেলেছে ভেবেই লজ্জায় অনিলা উঠে চলে যাচ্ছিলো।

জুনইদ অবাক হয়ে গেলো।জড়িয়ে ধরতে পারে না বলতে অনিলা কি বোঝালো তাকে। জুনইদ অনিলার হাত টেনে ধরলো।

আরে এরকম করে ধরে আছেন কেন।আমার আর কিছু বলার নেই।ছাড়ুন আমাকে।অনিলা আটসাট হয়ে গেলো একেবারে।জমে স্থীর চিত্তে দাঁড়িয়ে রইলো।

জুনইদের সঙ্গে অনিলা পেরে উঠবে না সেটা ওরা দুজনেই জানে।তাই জুনইদ আস্তে করে ওঁকে পিছনে টেনে আনলে অনিলা ব্যালেন্স হাড়িয়ে জুনইদের পাশেই বিছানায় বসে পরে।হুট করেই জুনইদ আর একটু এগিয়ে এসে অনিলাকে অবাক করে দিয়ে ওঁকে জড়িয়ে ধরলো।

অনিলা ভয় পেয়ে গেলো।এই ছেলেটার আবার মাথা খারাপ হলো না তো।এতো রাতে আবার উল্টো পালটা কিছু করে ফেললে।এতো রাতে এরকম একটা রিস্ক নেওয়ার কোনো মানেই হয় না অনিলা।এনাকে জব্দ করতে এসে নিজেই না আবার ফেসে যায়।ভয়ে তার বুক দুরু দুরু করছে।আবার ভেতর ভেতর অন্য রকম শিহরণ ও হচ্ছে।অনিলা ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো,

“একি করছেন আপনি?”

জুনইদ আস্তে আস্তে অনিলার কানে কানে বললো,

অনুভব করতে পারলে তাহলে তুমি? যদি না পারো তাহলে তোমার উচিত আমাকে একটু শিখিয়ে দেওয়া!তোমার সততার আমি সম্মান করি।তাই তুমিই বরং আমাকে শিখিয়ে দাও!”

#চলবে

আসসালামু আলাইকুম।নামাজ কায়েম করুন।

#সম্মোহনী_সেই_মেয়েটি
#পর্বঃ১৬
#লেখিকাঃরাদিয়াহ_রাফা_রুহি

ঘড়ির কাঁটায় তখন সকাল ১২টা।নীরব, নিস্তব্ধ, সুনসান রুম।সেই রুমে দুজন মানুষ আছে তা কেউ বুঝতে ও পারবে না।দুটো মানুষ মুখোমুখি বসে আছে।রাগে লজ্জায় কপালের রগ ফুলে উঠেছে অনিলার।মুখে কথা নেই দুজনের কারোরই।নিস্তব্ধ এই রুমে শধুই দুজন ব্যাক্তির নিঃশ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ পাওয়া যাচ্ছে।

“বিপদ আর কাটে না।অনিলার ভেতর টা ভয়ে কেঁপে উঠলো।জুনইদের কথা গুলো শুনে।আজ দুপুরে এতো অসভ্যতা করেও ওর মন শান্ত হয়নি।তারই বাসায় তারই পাখিকে উল্টো পালটা কথা শিখিয়ে দিয়েছে।এসব না হয় মানা যায় তাই বলে এটা কিভাবে মানবে।তখনকার কথা গুলো অনিলা একেবারেই ভেবে বলেনি।তখন শুধু জুনইদের মন অন্য দিকে ঘুরানোর জন্য এগুলো ওর মুখ থেকে বেরিয়ে গেছিলো।যাতে জুনইদ ব্যস্ত হয়ে পরে আর না বুঝতে পারে ও জুনইদের স্যুটকেস নিয়ে কি করছিলো।কিন্তু এতে হিতে বিপরীত হবে সেটা কি অনিলা জানতো?জুনইদ যে কথা গুলো শুনে এতোটা উত্তেজিত হয়ে পরবে সেটা অনিলা ভাবতেও পারেনি।”

সত্যি কথা বলতে অনিলা এর আগে এভাবে কখনোই কারোর সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে পরার মুহুর্ত অনুভব করেনি।এমন কি সে কখনো কোনো ছেলের সঙ্গে বন্ধুত্ব পর্যন্ত গড়ে তুলেনি।তাই রিলেশনশিপ তো অলিক স্বপ্ন।আজ জুনইদ হইতো কোনো সূচনা ছাড়াই,অনুমতি ছাড়াই অনিলাকে জড়িয়ে ধরেছে।এটা তে তো অনিলার রাগ হওয়ার কথা ছিলো কিন্তু সে রেগে যায় নি।কারণ প্রতিটি মেয়ের এই সময় টা অনেকটাই লজ্জার।রেগে গিয়ে হইতো তখন অনেক গুলো কথা বলে ফেলেছিলো অনিলা কিন্তু জুনইদ যে এগুলো পারে না সেটা বলা তো একেবারেই ভুল।বরং জুনইদ খুব ভালোই পারে।অনিলা খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে পরলো।তাছাড়া জুনইদ খুব সুন্দর দেখতে ছেলে আর অনিলার ও কিশোরী বয়স।এরকম সময়ে একটু আধটু এরকম ইচ্ছে আসতেই পারে।প্রতিটি মেয়েই খারাপ স্পর্শ, নোংরা স্পর্শ কে চিনতে পারে।অনিলার একবারের জন্যও মনে হয়নি জুনইদের স্পর্শ বাজে।বরং এতে অন্য রকম একটা পবিত্র ছোঁয়া আছে বলে মনে হচ্ছে তার কাছে।তাও জুনইদের কথা শুনে যতটা ভীত হয়ে পরেছিলো ঠিক ততটাই উত্তেজিত বোধ করেছিলো।আস্তে আস্তে অনিলা বলে উঠলো,

“ইয়ে মানে তার কোনো প্রয়োজন নেই।আমি নিজেই ঠিক করে এসব পারি না।আপনাকে কি শেখাবো মিষ্টার ল্যাম্পপোস্ট।আপনি ঠিক
শিখে নেবেন।”

জুনইদ মসৃণ স্বরে জিজ্ঞেস করলো,”যদি আমি বলি আমার অন্য কারোর কাছ থেকে শেখার ইচ্ছে নেই তাহলে?”

অনিলা অল্প আলোর মধ্যেও দেখতে পেলো জুনইদের চোখ কেমন যেনো জ্বলজ্বল করছে।এরকম চাহনী এর আগে কখনোই ও জুনইদের চোখে দেখেনি।জুনইদ এমন মানুষ যে যত রেগে যায় তত বেশি শান্ত দেখাই।এরকম লোকদের অনিলা ভয় পাই।যারা নিজেদের ইমোশন এতো ভালো করে আড়াল করতে পারে তাদের কোনো ভরসা নেই।তাই অনিলা জুনইদকে দেখে বুঝলো ওর রাগ হয়েছে কিনা।তবে কি অনিলা জুনইদের এই রুপ দেখে উত্তেজিত হয়ে পরলো।নাকি সে জুনইদকে ভয় পাচ্ছে বলে এমন উইয়ার্ড বিহেভ করছে।

জুনইদ অনিলার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন।ওদের দুজন কে এতটা কাছে দেখাচ্ছিলো যে অনিলার নিঃশ্বাস নেওয়া অনুভব করতে পারছিলো জুনইদ।ওর হৃদস্পন্দন আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছিলো সেটাও জুনইদ অনুভব করতে পারছিলো।অনিলার চোখে চোখ রেখে জুনইদ আস্তে আস্তে ওর আরও কাছে চলে এলো।

কয়েক সেকেন্ডের জন্য অনিলা বিস্মিত হয়ে গেলো।আবার এরকম।এরকম করলে তো সে বেসামাল হয়ে পরিস্থিতি বেগতিক হয়ে যাবে।আস্তে আস্তে অনিলার বিমুঢ় ভাব টা কেটে যাওয়ায় ও জুনইদকে ঠেলে সরিয়ে দিতে চেষ্টা করলো।অনিলার নিজের ই ভেবে অদ্ভুত লাগছিলো এতো কেন ভালো লাগছে ওর।এর আগেও তো সে একবার তার অজান্তেই জড়িয়ে ধরেছিলো জুনইদকে।তখন না হয় সে স্বাভাবিক অবস্থায় ছিলো না কিন্তু আজকের ব্যাপার টাই তো ওর রাগ হওয়ার কথা ছিলো।কিন্তু এই লজ্জা মেশানো অদ্ভুত উত্তেজনা ওর মধ্যে কেন কাজ করছে।নিজের ভেতরের এই দ্বন্দ্ব না সামলাতে পেরে জুনইদকে সরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করলো আবারও। আস্তে আস্তে কথা বলার চেষ্টা করলো।কিন্তু ওর চাপা স্বর ছাড়া কিছুই বেরোলো না ওর মুখ থেকে।বরং ও কথা বলার চেষ্টা করাই জুনইদ ওঁকে আরও গভীর ভাবে জড়িয়ে ধরলো।নিঃশ্বাস নেওয়ার জন্য যখন জুনইদ ওঁকে ছাড়লো তখন যেনো অনিলা হাফ ছেড়ে বাঁচলো।অনিলা ভীত স্বরে বললো,

“আমায় ক্ষমা করুন প্লিজ।আমি না বুঝে ওই সব কথা বলেছিলাম।”

এক অদ্ভুত ক্ষুদার্ত চাহনি নিয়ে জুনইদ অনিলার দিকে তাকিয়ে রইলো।

জুনইদের এমন তাকানোই অনিলা ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেলো।অনিলা নিদারুণ কন্ঠে বললো, “এবার এরকম কিছু করলে কিন্তু আমি চিৎকার করে লোক জড়ো করবো!সেই অপমান আপনি নিতে পারবেন তো মিষ্টার ল্যাম্পপোস্ট?”

জুনইদ এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে কিছু টা গা ছাড়া ভাব নিয়ে ফিচেল গলায় বললো,”এতো রাতে কোনো কথা ছাড়া তুমি লুকিয়ে আমার ঘরে এলে।তারপর আমি এরকম কিছু করে বসলে সেটা সম্পুর্ন আমার দোষ!বারে আমি তো এখনো জানতেই পারলাম না তুমি সত্যিই কোনো মতলব নিয়ে এসেছো কিনা?তুমি নিশ্চয়ই কোনো সৎ উদ্যেশ্য নিয়ে আসো নাই এই রুমে!তাই না?”

অনিলা কোনো উত্তর দিতে পারলো না এরকম কথায়।অনিলাকে চুপ থাকতে দেখে জুনইদ আবার বলে উঠলো, “তাহলে তুমি চিৎকার করে যদি লোক ও ডেকে আনো তাতে আমার থেকে তোমার সম্মানহানীই কিন্তু বেশি হবে।”

জুনইদ লক্ষ করলো ওর কথা গুলো শুনে অনিলা কেমন যেনো চুপসে গেলো।অনিলার এমন মায়াবী চোখ দেখে মনে হচ্ছিলো এক্ষুনি শ্রাবণের মেঘগুলো ভেঙে বৃষ্টি হয়ে ঝড়বে।তাতে জুনইদ এর বক্ষস্থল ভারী হয়ে এলো।নিজের সব টুকু দিয়ে নিজেকে সংবরণ করার ভীষণ চেষ্টা করছিলো।অনিলার চোখের কোণে জল দেখে জুনইদ ওর কাছে থেকে সরে গেলো একেবারে।নিজেকে একবার দোষলো এভাবে সংযম হাড়িয়ে ফেলার জন্য।আগে তো কখনো ওর এরকম উত্তেজনা হয়নি।কতজন ওর সঙ্গে সম্পর্ক গড়তে চেয়েছিলো।কিন্তু জুনইদের তাদের প্রতি বিরক্তি ছাড়া আর কিছুই অনুভূত হয়নি।তাহলে এই মিস সুনামি হঠাৎ করে তার সেলফ কন্ট্রোল এভাবে ছাড় খাড় করে দিলো কি করে।

অনিলা চট করে ছিটকে দূরে সরে এলো।চোখের কোণের অশ্রু টুকু মুছে নিলো।

জুনইদ ইতস্তত হয়ে অথৈ দ্বীপকুলে ভাসছে যেনো।সে আস্তে আস্তে বললো,”তুমি এবার আসতে পারো!অনেক রাত ও তো হয়ে গেছে।”

সঙ্গে সঙ্গে অনিলা এক দৌড়ে নিচে নিজের বুবুর ঘরে ঢুকে পরলো।আস্তে আস্তে দরজা লক করে শুয়ে পরলো বুবুর পাশে।বুবুর দিকে তাকিয়ে দেখলো তার বুবু নিশ্চিন্তে ঘুমুচ্ছে। একটা অদ্ভুত অনুভূতিতে ওর সারা গা হাত পা কাপছিলো তার।তবে অনিলা বুঝলো সেটা রাগ বা অপমান নয় অন্তত।যদিও জুনইদের এরুপ আচরণ একেবারেই পছন্দ হয়নি ওর।ছেলেটার প্রচন্ড দুঃসাহস।হঠাৎ করেই তার জীবনে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে এই মিষ্টার ল্যাম্পপোস্ট।এই মানুষ টা এতোটা গুরুত্বপূর্ণ কবে হয়ে গেলো ওর জীবনে।এখন প্রতিদিন, প্রতি ঘন্টায়, প্রতিটি ঘটনায় জুনইদ নামক ব্যাক্তিটি জড়িয়ে পরছে তার সঙ্গে। কিন্তু অনিলা ভাবছে জুনইদ তো অন্য একজনকে ভালোবাসে এটাই বলেছিলো ম্যাসেজ এ।সে নিজেকে কি ভাবে?যখন খুশি তখন ওর অনুভূতি নিয়ে খেলা করবে সে।অনিলা কি তবে সত্যিটা জেনেও সেই মানুষ টার প্রতি আসক্ত হয়ে পরছে।এপাস অপাশ করেই রাত টা কাটলো অনিলার।চোখ বন্ধ করতেই ওর চোখে ভেসে উঠছে জুনইদের মুখ।এতো মহা মুশকিলে পরলো সে।

এদিকে জুনইদ এর একি অবস্থা।সেও নিজেকে প্রশ্ন করতে লাগলো,কি রে জুনইদ এই মিস সুনামির মধ্যে কি এমন দেখলি তুই।যে তোর মধ্যে তৈরি করা সব কটা প্রাচীর গুলো এতো সহজেই ভেঙে দিলো।এতো বছর ধরে জুনইদ কঠিন ভাবে নিজেকে শিখিয়েছিলো নিজের ইমোশন কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে।ওর সংকল্প কি এতটাই ভঙ্গুর যে প্রথম দিন থেকেই এতো সাধারণ একটা মেয়ে
আইমান জুনইদ কে এতটা ইমোশনাল বানিয়ে দিলো।বলাই বাহুল্য সেদিন রাতে অনিলা বা জুনইদ এর কারোর ই ঠিক করে ঘুম হলো না।

সকালের প্রভাত উঠতেই জুনইদের আড়মোড়া ভেঙে গেলো।সে ঘড়িতে সময় দেখে হম্বিতম্বি করে উঠে বসলো।সারে এগারোটা বাজে ঘড়িতে।মাথায় হাত দিয়ে ভাবতে লাগলো কাল রাতের কথা।ওতো কিছু ভাবতে ভাবতেই কখন ঘুমিয়ে গেছিলো বুঝতে পারেনি।সে যে অন্য একটা বাড়িতে আছে এটা সে কিভাবে ভুলে গেলো।আজ কে মায়াবীর গায়ে হলুদ।জুনইদ সেই মোতাবেক তো তাকে সকালে উঠতে হতো।ছিঃ কি ভাববে সবাই।এভাবে এতটা বেলা অব্দি তো বাড়িতেও ঘুমোই না সে।ভীষণ লজ্জা পেলো সে এরম কান্ডে। চট করে উঠে নিজের স্যুটকেসের ভেতরে থেকে জামা বের করবে তখনই তার চোখ আটকে গেলো অপ্রত্যাশিত কিছুর উপর।ঘর ফেটে গেলো তার এক চিৎকারে।প্রায় অর্ধেকের বেশি মানুষ জুনইদ এর গলা পেয়ে রুমে ছুটে এলো।

আলিফ হোসেন,মনিরা বেগম এসে পরেছে রুমে।অনিলাও এমন বিকট চিৎকারের শব্দ শুনে ছুটে এসেছে।পিছনে পিছনে মায়াবী ও এসেছে।দুজন ভদ্র মহিলা ও এসেছে।এসেই ঘরে ঢুকে যা দেখে সবাই তো অবাক।জুনইদ ভয় পেয়ে এক জায়গায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে।মাথায় হাত দিয়ে।মায়াবী ভ্রু কুচকে তাকালো জুনইদের দিকে। সে এগিয়ে এলো জুনইদের দিকে আর জিজ্ঞেস করলো,

“এই জুনইদ তুমি এভাবে গুটিসুটি মেরে এই এক কোণায় বসে আছো কেন।কি হয়েছে তোমার?”

জুনইদ চোখ বন্ধ করেই উত্তর ভয়ে ভয়ে দিলো,”আ-আপু আমার ব্যাগ এ ইদুর আর তেলাপোকা আছে!ওগুলো সরান এক্ষুনি?”

অনিলা এতক্ষণে ব্যাপার টা ঠিকই ধরতে পেরেছিলো।সে ঠোঁট কলে শয়তানি হাসি ফুটিয়ে তুললো।সবাই এভাবে জুনইদ কে দেখে তো থ।কি হচ্ছে এসব।আলিফ হোসেন আর বাকি সবাই ঠোঁট চেপে হাসলো।তার পর একে একে বেরিয়ে গেলো।অনিলা আর মায়াবী রইলো শুধু।এসব কিছু জুনইদের চোখে পরলো।ভীষণ লজ্জায় পরলো সে।কিন্তু কিছু করার নেই।তার এসবে ছোট্ট বেলা থেকেই ভয়।যে যা ভাবার ভাবুক গে।

মায়াবী তো হতবাক হয়ে গেলো।এতো বড় দামড়া ছেলে তেলাপোকা আর ইদুর দেখে ভয় পাচ্ছে।তাদের বাড়িতে ইদুর আর তেলাপোকা কিভাবে এলো।মায়াবী ওর দিকে তাকিয়ে থেকেই জুনইদের ব্যাগ ঘাটতে গেলো।অনিলা তো ভয় পেয়ে গেলো।এখন যদি মায়াবী দেখে তবেই তো ধরে ফেলবে এই তেলাপোকা আর ইদুর এগুলো তার কাছে ছিলো।সে হড়বড়ে উল্লম্ফনের মতো এগিয়ে এসে বলে,

বুবু তুমি যাও আমি দেখছি ব্যাপার টা।আজ কে তোমার গায়ে হলুদ কোথায় আনন্দ করবা তা না এখানে কাজ করছো।যাও আমি দেখছি বাকিটা।

মায়াবী কিছু টা অবাক হলো বোনের ব্যবহারে।কিন্তু তাও কিছু না বলে বেরিয়ে গেলো ঘর থেকে।মায়াবী যেতেই অনিলা জুনইদের দিকে এগুলো।আর বলে উঠলো,

“বেরিয়ে আসুন এবার কোণা থেকে!”

জুনইদ ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো, তুমি আগে আমার ব্যাগ থেকে সরাও ওসব।আমি ফ্রেশ হবো জামা কাপড় লাগবে আমার।

অনিলা প্লাস্টিকের ইদুর আর তেলাপোকা হাত দিয়ে ধরে জুনইদের সামনে ধরলো আর মুখে কিছুটা শয়তানি হাসি ফুটিয়ে নাড়ালো ওর সামনে।জুনইদ এক ঝাপ দিয়ে বিছানার উপর উঠে পরলো সেটা দেখে।

“স-সরাও প্লিজ।” জুনইদ কোনো মতে বলে উঠলো।

অনিলা হাসতে হাসতে পেটে হাত দিয়ে বসে পরলো।গলায় ব্যাঙ্গাত্মক স্বর টেনে বলে উঠলো,

আপনি এই সামান্য প্লাস্টিকের ইদুর আর তেলাপোকা দেখে এতো ভয় পেলেন।ভীতুর ডিম একটা।গায়ে গতরেই দামড়া ছেলে আর কাজের বেলায় লবডঙ্কা।বলেই আবার হাসতে লাগলো অনিলা।

জুনইদের রাগ হলো।তাকে নিয়ে মজা করা।এর শোধ সে তুলবে।সে জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকলো।কি পরিমাণ সরম করছে তার শুধু সেই ই জানে।আর একটু হলেই তো প্রান টা বেরিয়ে যাচ্ছিলো।ইশ সবাইকে কিভাবে দেখছিলো তাকে।তার বাড়িতে হলে না হয় অন্য কথা ছিলো।কিন্তু অন্য একজনের বাড়ি এসে এভাবে এরকম একটা কান্ডে তার যেনো লজ্জার শেষ নেই।এখন সবার সামনে গিয়ে দাঁড়াবে কি করে।আচ্ছা তার ব্যাগ এ-সব এলো কিভাবে।রাতের কথা স্মরণ হতেই চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো।তার মানে সব কিছু তবে মিস সুনামির কাজ।সে উঁকি দিয়ে দেখলো অনিলা এখনো রুমে দাঁড়িয়ে তেলাপোকা আর ইদুর দেখে হাসছে।সে হুমকির স্বরে বললো,

“এখন যত খুশি হাসার হেসে নেও মিস সুনামি।কে বলতে পারে এর পরের হাসি টা আমি হাসবো।আর তুমি কাদবে।”

কথা শেষ করেই চোখ মারলো জুনইদ। মুহুর্তের মধ্যে অনিলার এমন হুমকি শুনে হাসি মাখা বদন চুপসে গেলো।

#চলবে।

আসসালামু আলাইকুম। নামাজ কায়েম করুন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here