শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকেই চাই💞( প্রথম পর্ব )

শেষ পর্যন্ত আমি তোমাকেই চাই💞( প্রথম পর্ব )
কলমে – দেবিকা_সাহা

(১)

শরতকালের আগমনটা যেন শহর কোলকাতায় এক অন্যরকম আভিজাত্যের সৃষ্টি করে।শুধু শহর কোলকাতা কেন যেকোন বাঙালির কাছেই শরতের আগমন যেন এক বহুদিনের কাঙ্খিত আর প্রতিক্ষীত আনন্দ।আর বিশেষ করে শহর কোলকাতা তো তখন সেজে ওঠে আপন রঙে নতুন রূপে। প্রতিদিনের ব্যস্ততা তো থাকেই। আর তার সাথে যুক্ত হয় শত ব্যস্ততার মাঝেও আনন্দময় মুহূর্ত। দুর্গাপূজোর ওই কয়েকটা দিন বাঙালী যেন ক্লান্তির স্বাদটাকে একেবারেই ভুলে যায়।আসলে সময় যে ওই পাঁচদিনেই সীমিত। তাই ক্লান্ত বা পরিশ্রান্ত হয়ে ওই সময়টাকে নষ্ট করলে চলবে কেন?? যদিওবা এখন টেনেটুনে পাঁচদিন- টাকে ছয় বা সাত দিনে নিয়ে যাওয়া হয়। তবে কি ওই পাঁচদিনে পূজো পূজো ফ্লেভারটা যেমন ভিতর থেকে থাকে আগের বা পরের টেনে আনা দিনগুলোতে ওই ফ্লেভারটা ঠিক পাওয়া যায় না।এই আর কি।তাইতো নাওয়া-খাওয়া ভুলে ওই পাঁচদিন যেন একটাই কাজ। প্যান্ডেল হপিং। তা সে থিম পূজো হোক বা সাবেকি বা হোক না বনেদী বাড়ির বারোয়ারি পূজো। সব প্রতিমা দর্শন যে কমপ্লিট করতেই হবে।আর তার সাথে রয়েছে পুরোনো বন্ধুদের সাথে দেখা করা,ফ্যামিলিকে টাইম দেওয়া,লং ড্রাইভ,ফুল নাইট ঠাকুর দেখা,কোন রেস্টুরেন্টে কি স্পেশাল মেনু এসেছে, কবে কোথায় যাওয়া যায়, এসব নিয়ে কতো প্ল্যান।

কিন্তু এসবের মধ্যেও আদ্রিতার মনটা আজকে সত্যিই খুব খারাপ।ধুর এভাবে চলে নাকি।সামনে পূজো কিছুতেই আনন্দটা উপভোগ করতে চাইলেও করতে পারছে না মেয়েটা।আসলে আনন্দ করবেই বা কি করে। প্রতিবার পূজোটা কাটে বাবা,মা আর বোনের সাথে গ্রামের বাড়িতে।সেই সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে পাড়ার প্যান্ডেলে গিয়ে অঞ্জলি দেওয়া,মা কাকিমাদের হাতে হাতে টুকটাক পূজোর জোগাড় করা,পূজোর শেষে ভোগ খাওয়া, তারপর পাড়ার বাচ্চাদের সাথে সেই মজা করে একটু ক্যাপ বন্দুক ফাটানো,অষ্টমীর দিন বাড়িতে সেই কতো কতো মেনু নিয়ে পূজো স্পেশাল রান্না আর তাতে মাকে একটু একটু হেল্প করা,তারপর সন্ধ্যা হলে পুরোনো বন্ধুদের সাথে ঠাকুর দেখতে যাওয়া, জমিয়ে আড্ডা দেওয়া, হঠাৎ হঠাৎ মাঝপথে দাঁড়িয়ে ফুচকা,আইসক্রিম,ভেলপুরি খাওয়া।তারপর সবাই মিলে রেস্টুরেন্টে গিয়ে স্পেশাল মেনু অর্ডার করা।আর সবথেকে বড় ব্যাপার হলো এই পূজোর কয়েকটা দিন ঠাকুর দেখার জন্য আর ভিড়ের অজুহাতে অনেকটা রাত পর্যন্ত বাড়ির বাইরে থাকার ছাড়পত্রটা আদায় করা।সব মিলিয়ে বেশ সুন্দর একটা অভিজ্ঞতা হয় পূজোর কয়েকটা দিন।আর তার জন্যই তো সারা বছর ধরে ওয়েট করে থাকা এই কয়েকটা দিনের জন্য।কিন্তু এবার দেখো। কিছুই হবেনা এসব।এসব ভেবেই মনটা খারাপ হয়ে আসে আদ্রিতার।আসলে এবছর পূজোর সময় আদ্রিতার বোনের একটা ডান্স কম্পিটিশন পরে গেছে কোলকাতার বাইরে।আর সেই কারনেই বাবা মা আর বোনকে পূজোর এই কটা দিন কোলকাতার বাইরেই কাটাতে হবে।আদ্রিতা ভেবেছিলো যে ও যাবে বাবা মার সাথে।অন্তত পূজোর সময় চারজন মিলে একসাথে তো কাটানো যাবে।সারাবছর তো সবাই সবার মতো ব্যস্ত থাকে।তাই এই কটা দিন একসাথে থাকার সুযোগটাকে মিস করা যায় না।কিন্তু সেটাও আর হলো কোথায়।আদ্রিতা যে কর্পোরেট সেক্টরে চাকরি করে সেখানে এতো আগে থেকে ছুটি পাওয়া গেলো না।পঞ্চমীর দিন থেকেই ছুটিটা পাওয়া যাবে।কাজের প্রচুর চাপ।আর চাকরিটাও পেয়েছে সবে সবে।খুব একটা বেশিদিন হয়নি।তাই এখনি স্পেশাল লিভ নিলে মুশকিলে পরতে হবে।তাই আর অগত্যা কি করা যাবে।মনের হাজার আপত্তি সত্ত্বেও থেকে যেতে হলো এখানেই।তবে সান্ত্বনা হিসেবে একটাই যে একা একা থাকতে হবে না।আসলে আদ্রিতা ওর বন্ধু মৌলির বাড়িতে পিজি থাকে।তা আজ প্রায় তিন বছর হতে চললো।তাই নিজের পরিবারের সাথে সাথে এটাও আদ্রিতার কাছে আর একটা পরিবার।আর মৌলী তো ওর বেস্ট ফ্রেন্ড সেই কলেজ লাইফ থেকে।তারপর কলেজ শেষেও এখানেই থেকে যাওয়া।এখন একটাই সান্ত্বনা নিজের কাছে যে পূজোর সময় এদের সাথেই থাকা। কিছু কাছের মানুষ তো সাথে থাকবে।যদিও এর আগে কখনো পূজোতে এখানে থাকা হয়নি।পূজোর আগে আগেই তো বাক্স প্যাট্রা গুছিয়ে বাড়ি চলে যেতো আর আসতো সেই ভাইফোঁটার পর।তাই এবার আদ্রিতাকে পূজোতে নিজের কাছে পেয়ে মৌলি যেমন আনন্দিত মৌলির পরিবারের প্রতিটি সদস্যও তেমনি আনন্দিত। আর মৌলি তো খুব খুব এক্সাইটেড। নিজের বেস্ট ফ্রেন্ডকে পূজোতে এবার নিজের সাথে পাবে বলে।

(২)
আজ রবিবার। এবার মহালয়াটা রবিবার পরেছে।তাই ছুটিটা সবাই বিনা নোটিশেই পেয়ে গেছে।আর সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে মহালয়া শোনাটা তো বাঙালির একটা অন্যতম ট্র‍্যাডিশন বলা যেতে পারে।আদ্রিতার ঘুম ভাঙলো ভোর ৪ টের সময় বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্রের কন্ঠে চন্ডীপাঠ শুনে।মৌলির বাবার ঘর থেকে বাজছে সুরটা।সত্যি কাকুকে সকালবেলা গিয়ে গুড মর্নিং এর সাথে সাথে একটা মিষ্টি করে থ্যাংক ইউ তো বলতেই হবে।এতো মিষ্টি একটা উপলব্ধি তো কাকুর জন্যই পাওয়া গেলো।নাহলে যা বেঘোরে ঘুমোচ্ছিলাম যে এতো তাড়াতাড়ি ঘুম আর ভাঙতো না।( মনে মনে বললো আদ্রিতা)
তারপর সকালটা বেশ ভালোই কাটলো। মহালয়া শোনার পর সবাই মিলে ড্রয়িংরুমে একসাথে বসে টিভিতে মহালয়া দেখা।তারপর সকাল বেলা মহালয়া উপলক্ষে কাকিমাদের হাতের স্পেশাল লুচি, আলুরদম আর জলভরা সন্দেশ। তারপর আবার বাড়ির খুদে সদস্যরা বায়না ধরেছে যে সকালবেলা তাদের সাথে লুডো খেলতে হবে।সত্যি এসব কি কম পাওনা নাকি।তবে এর সাথে সাথে আর একটা নতুন খবর পাওয়া গেলো। আর তা নিয়ে এবাড়ির লোকজন খুব খুব এক্সাইটেড। আর এক্সাইটেড তো হবারই কথা।এ তো আর যে সে খবর নয়।আর খবরটা হলো পূজো উপলক্ষে এবাড়ির আদরের পুত্র আবির্ভাবের আগমন বার্তা।আর এবারের আগমন একেবারে পার্মানেন্টলি।আবির্ভাবের সাথে এর আগে আদ্রিতার সাক্ষাৎ না হলেও তার এতো গল্প শুনেছে বিশেষত মৌলির কাছ থেকে যে মনে মনে তার একটা বর্ননা আদ্রিতা করে নিয়েছে।

আসলে আভির্ভাব হলো মৌলির আদরের দাদাভাই।মৌলি তো তার দাদাভাই বলতে একেবারে পাগল।সারাদিন সুযোগ পেলেই তার নামে প্রশংসা জুড়ে দিতো।যখন তখন যে কোন কারনে।এই যেমন আমার দাদাভাই এটা পারে,সেটা পারে,দাদাভাই খুব স্টুডিয়াস,দাদাভাই আমাকে সবথেকে ভালো বোঝে,
দাদাভাই খুব সুন্দর গিটার বাজাতে পারে,কলেজে পড়ার সময় দাদাভাই কতো মেয়ের হার্টথ্রব ছিলো। ছিলো বলছি কি ইভেন এখনো আছে।অবশ্য থাকবে নাইবা কেনো বল।যা সুন্দর পার্সোনালিটি।ওরকম খুব কমই পাওয়া যায়।অবশ্য দাদাভাই কাউকে পাত্তা দেয় না।আসলে কি বলতো খুব ম্যাচিওর তো।এভাবে আবেগে গা ভাসায় না।জীবনে হিসেব করে,সুন্দর করে চলতে জানে।এরকম আরো কতো প্রশংসা। আদ্রিতা তো একবার ঠিক করেছিলো গিটার শিখবে। আর তখনও হাজির হলো মৌলির অসাধারণ সাজেশন। সে তো বলেই দিলো-

” আদ্রি তুই একটা কাজ কর।গিটার শেখার জন্য অন্য কোথাও যাওয়ার দরকার নেই।দাদাভাই আসলে ওর থেকে কয়েকদিনের জন্য একটু শিখে নিস।দেখবি তুই কিছুটা হলেও এক্সপার্ট হয়ে গেছিস।”
আদ্রিতা এবার আর চুপ থাকতে পারলো না।আরে এই মেয়েটা বলে কি।সে তো এবার মৌলিকে বলেই দিলো-

” দেখ।মানছি যে তোর দাদা একেবারে রত্ন।খাটি রত্ন।অবশ্য রত্ন বললে ভুল হবে মানে একটু কম বলা হবে।মানে পৃথিবীর সপ্তম আশ্চর্যের পর অষ্টমটা যদি কেউ বা কিছু হয় সেটা একমাত্র তোর দাদা।আমি মেনে নিচ্ছি বিশ্বাস কর।কিন্তু আমি তো অত্যন্ত সাধারণ। তাই অতোটা অসাধারণত্বটা আমার ঠিক সহ্য হবে না বিশ্বাস কর।তাই আমাকে আমার মতোই শিখতে দে।আর শোন তোকে একটা কথা বলছি সারাদিন আমার সামনে দাদার এতো গুনোগান না গেয়ে একটা বইটই তো লিখতে পারিস নিজের দাদাকে নিয়ে।তাতে দেখবি তুইও পপুলার হয়ে গেছিস রাইটার হিসেবে আর তোর দাদার গুনাগুনও শহর পেরিয়ে শহরতলি,গ্রাম সব জায়গায় ছড়িয়ে পরবে।বেশ হবে কিন্তু ব্যাপারটা।তাই আর দেরি না করে কাজে লেগে পর।”
আর এবার এই পূজো উপলক্ষে মৌলির সেই সেলিব্রিটি দাদার সাথে আদ্রিতা সাক্ষাৎ করতে পারবে।তাই আদ্রিতা নিজেও বেশ খানিকটা এক্সাইটেড এই মহাপুরুষের সাথে সাক্ষাৎ করবে বলে….

(৩)

আজ পঞ্চমী।মানে বাঙালির ক্যালেন্ডারে পূজো টা প্রায় চলেই এসেছে।যদিও দেবীর বোধন হয়নি।কিন্তু তাতে কি।মা দূর্গা তো স্বপরিবারে বাপের বাড়িতে বেড়াতে চলেই এসছেন।প্রায় প্রতিটা পূজো প্যান্ডেলেই মা চলে এসেছেন।আর একদম শেষ মুহূর্তের সাজো সাজো রব আর প্রস্তুতি চলছে পুরো শহর জুড়ে। কেউবা শেষ মুহূর্তের পূজো মন্ডপ প্রস্তুতিতে ব্যস্ত তো কেউ শেষ মুহূর্তের শপিংটা সেরে নিচ্ছে।কেউ আবার প্যান্ডেল হপিং এর প্ল্যান, আবার কেউ পূজোতে কি কি স্পেশাল মেনু বানানো যায়,কি কি খাওয়া যায় এই প্ল্যানটাও একদম মন দিয়ে করে নিচ্ছে।আফটারঅল ভোজনরসিকতা তো বাঙালির একটা ঐতিহ্য। তাই খাওয়া-দাওয়ার প্ল্যান ছাড়া দুর্গা পূজোটা কেমন যেন অসম্পূর্ণ।
আজ মৌলীদের বাড়িতে তে তো আবার এক্সট্রা আনন্দ।আজ যে আবির্ভাব আসছে।একে পূজো তার উপর আবার এতোদিন বাদে ঘরের ছেলে ঘরে ফেরা। একি কম আনন্দের নাকি।
আদ্রিতাকে আজও অফিস যেতে হলো। যদিও আজ হাফ ডিউটি হয়েই পূজোর ছুটি পরবে।তবু্ও। এই পূজোর দিনে সেই একই রোজকার দিনের মতো বাধাধরা লাইফস্টাইল সত্যিই মেনে নেওয়া যায়না।আরে বাবা বছরে তো পূজোটা একবারই আসে।আজকের দিনে কি কাজটা না ফেললেই হতো না।ইস্ কোথায় ভাবলাম বাড়িতে থাকবো। তা না এখন ছুটতে হবে অফিসে।এভাবে আরো কতো কি বলে নিজের অফিসের উপর একটা ঠুনকো রাগ দেখিয়ে আদ্রিতা অফিসে ছুটলো।আর এদিকে তো বাড়িতে এলাহি আয়োজন। মৌলির মা কাকিমা তো আদ্রিতাকে একেবারেই ছাড়তে নারাজ।শেষ পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ফিরে আসবো এই প্রমিস করে কাকিমাদের কোনরকমে রাজি করিয়ে সে অফিসে ছুটলো।
কিন্তু যাবার সময় ঘটলো এক অদ্ভুত গন্ডগোল। আরে একে এতো দেড়ি হয়ে গেল তাই কোনদিকে ঠিকঠাক না তাকিয়েই প্রায় ছুটতে ছুটতেই বাসস্ট্যান্ডে আসছিল মেয়েটা।হঠাৎ করে কোথা থেকে একটা বড় গাড়ি আচমকা আসায় রাস্তায় পাশে ছোট ছোট গর্তে জমে থাকা জল বেশ সুন্দর করেই আদ্রিকার গায়ে এসে ছিটলো।একে তো পূজো উপলক্ষে নতুন চুড়িদার টার উদ্ভোধন করেছিলো।আর সেটাতেই সকাল সকাল এরম কাদা লেগে গেলো।একে তো মুড অফ।তারপর আবার দেরি হয়ে গেছে।আর তারপর সকাল সকাল এরকম একটা ঘটনা।ব্যাস রাগটা চট করে বেশ হায়ার অর্বিটেই উঠে গেলো।তাই বেশ খানিকটা রেগেমেগেই গাড়ির মধ্যে থাকা অজানা অচেনা লোকটার উদ্দেশ্যে বলেই ফেললো কিছু কথা।একেবারে কোন কিছু না ভেবেই।
– ” আরে ঠিকমতো ড্রাইভিং করতে পারেননা নাকি? না ড্রাইভিং করার সময় চোখদুটো স্টিয়ারিং এর দিকে থাকে না? কোনটা শুনি।নাকি গাড়ি নিয়ে যাতায়াত করছেন বলে আশেপাশের যারা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করে তাদের দিকে তাকাতে নেই? কি ভাবেন কি হ্যা নিজেদেরকে?? ”
এবার গাড়ির ভিতরের থাকা ব্যক্তিটিও একটু হকচকিয়ে গেলো এরকম হঠাৎ আক্রমনের স্বীকার হয়ে।তাই কোনরকমে সাইডগ্লাস টা নামিয়ে বোঝার চেষ্টা করলো যে তাকে কি বলা হচ্ছে এবং কে বলছে।সেও কিছু কথা ভেবে নিয়ে বললো-
” আরে আমি কোথায়? আপনিই তো ঠিকঠাক হাঁটছিলেন না।তাইতো প্রবলেমটা হলো।”
– ” কি?? নিজে দোষ করে কোন অনুশোচনা তো নেই-ই। উল্টে আমাকে দোষ দিচ্ছেন।সাহস তো দেখছি কম নয় আপনার। আর এই পাড়াতে তো আপনাকে নতুন মনে হচ্ছে।এখানে কিন্তু আমাকে সবাই চেনে।তাই বলছি যদি কোন ঝামেলা করার চেষ্টা করেন ব্যাপারটা কিন্তু মোটেই ভালো হবে না।”(আদ্রিতা)
উল্টোদিকের ব্যক্তিটিতো অবাক হওয়ার সীমাস্থ পর্যায়ে উঠে গেছে।শুধু এটুকুই বলতে পারলো আদ্রিতার কথার উত্তরে –
” কিন্তু আমি তো শুধু………”
একথাটাকেও মাঝপথে থামিয়ে দিলো মেয়েটা।
” শুনুন আপনাকে আর কিচ্ছু বলতে হবে না।একে তো আপনার জন্য আমার পূজো উপলক্ষে প্রথম উদ্ভোধন করা নতুন জামাটা নষ্ট হয়ে গেলো।তারপর এখন আবার অফিসেরও লেট হয়ে যাচ্ছে।একটা সরিও বলতে এদের কি ট্যাক্স লাগে জানি না।যত্তসব।”
– ” আপনি কি কিছু বললেন?? আমি না আসলে শেষের কথাটা ঠিক শুনতে পেলাম না”
– ” না কিচ্ছু বলিনি আমি”।এই কথাটা বলে উল্টোদিকের ব্যক্তিটির আর কোন উত্তরের প্রতিক্ষা না করে বাসস্ট্যান্ডের দিকে ছুট লাগালো আদ্রিতা।
আর সেই ব্যক্তিটি শুধু আদ্রিতার চলে যাওয়ার দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো আর তার মুখ থেকে একটা কথাই বের হল-
” আমি কি করলাম???????”
(৪)

এদিকে আবির্ভাবের আসার কথা ছিলো দুপুরের দিকে।কিন্তু সে সবাইকে তাক লাগিয়ে সকাল সকাল এসেই হাজির।
” আরে দাদাভাই হোয়াট এ সারপ্রাইজ। তোর তো দুপুরবেলা আসার কথা ছিলো তাই না।সক্কাল সক্কাল চলে এলি যে।আমাদের মিস করছিলি না?? তবে একটু আগে জানাবি তো।আমাদের তো ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট।মায়ের হাতের গরম গরম লুচি।কিন্তু তোর জন্য তো নেই রে।” ( বেশ মজা করেই বললো মৌলি)

-” আরে ছেলেটা আসতে আসতেই আবার শুরু করে দিলি তো।ওকে একটু বসতে দে।তারপর তুই যত ইচ্ছা তোর দাদাভাই এর সাথে মজা করিস।এখন ওকে একটু শান্তভাবে ঘরে আসতে দে।”
– হ্যাঁ বৌদি এই মেয়েটাকে একটু ভালোভাবে বকে দাও তো।( আবির্ভাব)
এইভাবেই আবির্ভাবের আসার সাথে সাথেই বাড়ির পরিবেশটা একমুহূর্তে অন্যরকম হয়ে গেলো।একটা অদ্ভুত সুন্দর আনন্দময়।
বিকেলবেলায় ভাইবোনদের সাথে আড্ডা দিতে দিতে আবির্ভাব হঠাৎ করে মৌলিকে বলে উঠলো –
” হ্যাঁ রে বুনু।আমাদের পাড়ায় কি নতুন কেউ এসেছে??”
– না তো।সেরকম তো কেউ আসেনি।কেনো বল তো।
আবির্ভাব এবার সকালের ঘটনাটা বললো মৌলিকে।তারপর দুজনেরই একসাথে হাসতে শুরু করলো।

” তবে দাদাভাই মেয়েটার কিন্তু সাহস আছে বলতে হবে।মানে নাহলে তোর কথার তোয়াক্কা না করে তোকে এতগুলো কথা শুনিয়ে গেলো। তোকে পাত্তাও দিলো না?? এলেম আছে বলতে হবে।অবশ্য আদ্রিতাকে যখন বলি সেও পাত্তা দেয় না।কিন্তু সে তো তোকে দেখেনি।কিন্তু এ তোকে দেখে তোর মুখের উপর এতো কথা শুনিয়ে দিলো।যে তুই কিছু বলতেই পারলি না।সত্যি মেয়েটার সাথে একবার দেখা করতে ইচ্ছে করছে বিশ্বাস কর।”
– ” আরে আরে এক সেকেন্ড ওয়েট।এই আদ্রিতাটা আবার কে??মানে নতুন মনে হচ্ছে ”
– ” আরে আদ্রিতা আমার বেস্টফ্রেন্ড।ইনফ্যাক্ট ও আমাদের বাড়িতেই পিজি থাকে।যদিও তোর সাথে দেখা হয়নি।কিন্তু তোকে তো কতবার বলেছি ওর কথা ভুলে গেলি??”
– ” ও হ্যাঁ মনে পরেছে।সেই যে প্রতিবার মানে পূজোর সময় যখন আসি বাড়ি চলে যায় আর একেবারে ভাইফোঁটা সেরে ফেরে।তাই আর কখনো দেখা হয়নি।তা ম্যাডাম এবারেও নিশ্চই বাড়ি চলে গেছেন।তো প্রবলেম নেই পরে সে ফিরলে একদিন দেখা হয়ে যাবে।”
– ” আরে না না ও তো এবার এখানেই আছে।নো বাড়ি।ওর আসলে আজও অফিস ছিল। কিন্তু ফেরার টাইম হয়ে গেছে।এক্ষুনি চলে আসবে।”
বলতে বলতেই আদ্রিতা হাজির।
” আরে আদ্রি তোর কথাই হচ্ছিল। আয় বোস।তোর সাথে আলাপ করিয়ে দিই এই হল আমার আদরের দাদাভাই আবির্ভাব। আর দাদাভাই এটা আদ্রিতা।আমার বেস্টি।”
আদ্রিতার তো এবার একেবারে চক্ষু চরকগাছ।কি বলবে, কোথায় মুখ লোকাবে কিছুই বুঝতে পারছে না।তবু্ও ভদ্রতার খাতিরে আবির্ভাবের দিকে তাকিয়ে একটু হাসি বিনিময় ছাড়া আর বিশেষ একটা কথা বলে উঠতে পারলো না।
আর ওদিকে আবির্ভাব-ও যে অবাক হয়নি তা নয়।তবে সে আদ্রিতার দিকে তাকিয়ে মুচকি মুচকি হেসেই যাচ্ছে।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here