শূন্যতা,পর্বঃ-৩ (শেষ পর্ব)

শূন্যতা,পর্বঃ-৩ (শেষ পর্ব)
লেখাঃ- Rafsan Sydul

রাত যখন গভীর হয়ে আসছে, মাহিম আর রুবিনা বাসার বাহিরে হাটছে এমনা অবস্থায় সেই ঘটনা, আকাশে ঘনকালো মেঘ জন্মেছে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে, বুঝতে পারলো তারা সেই অপরিচিত তাদের আশেপাশেই আছে, পিছন ফিরতেই দেখে সেই অর্ধ নামব, তাদের চোখ পড়তেই “শয়তান” যে তাদের কাছে অপরিচিত। সে বলে উঠলো,
“আমাকে সাহায্য কর তোরা, আমি মরে যাচ্ছি আমাকে সাহায্য কর”

রুবিনা আর মাহিম বিস্মৃত হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে, সেদিন যাকে দেখেছিল তারা, তার চেয়ে আজ যাকে দেখছে ভয়ংকর এক রূপ। রুবিনা আর মাহিমের হাত পা অবশ হয়ে আসছে। নাড়াচাড়া করতে পারছে না, শুধু মুখ কান দিয়ে কথা বলতে এবং শুনতে পারছে।
সামনে দাঁড়িয়ে আছি এক অগ্নিদাহ অর্ধ মানব, সমস্ত শরীর দাউদাউ করে জ্বলছে। একটু সাহস করে মাহিম বললো,
“কী চাই আপনার.? আমি কীভাবে সাহায্য করবো.? আমাদের শক্তি নেই আপনাকে বাঁচানোর মত।”
ভয়ংকর উচ্চস্বরে “চুউউউউউপ” বলে থামিয়ে দিল মাহিমকে।
তারপর সে বলতে শুরু করলো।
“আমি মরে যাচ্ছি, আমার শরীর ধংস হয়ে যাচ্ছে। বেঁচে থাকার জন্য আমার একটা শরীর দরকার। শরীর নেই আমার। শরীর ছাড়া আমার আত্মা মুক্তি পাবেনা কখনো না। তোদের সাহায্য করেছি এখন তোরা আমাকে কর, তোদের একটি ছেলের শরীর আমাকে দিয়ে দে”
থরথর করে কাঁপছে মাহিম। রুবিনা শক্ত হলো। আর বললো
“আপনার জন্য আমার দুই সন্তানকে হারিয়েছি। আর নয়। যা হবার হবে। আমরা এমনিতেই তিল তিল করে মারা যাচ্ছি, সাধ্য থাকলে একসাথে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতাম। একবার ভুল করেছি দ্বিতীয়বার আর না”

“হা হা হা” ভয়ংকর সেই হাসি গড়গড় করে শব্দের সাথে হাসি। সেই সময়ে বিদ্যুৎ চমকালে হালকা আলো শয়তান এর মুখের উপড় পড়ে।
রুবিনা আর মাহিম পিছনে ছিটকে পড়ে যায়, এ এ এ তো শুভ্র আর সুহাসের কাটা মাথা। দুজনার মাথা এক করে শয়তান তার মাথা তৈরি করে নিয়েছিল। মাহিম আর রুবিনার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে, চোখের কোণে রক্তজল চলে আসে। তখন শয়তান বললো,
“তোরা তো বোকা নিজের কার্যসিদ্ধি করার জন্য তোদের ব্যবহার করেছি মাত্র। মরে যাচ্ছিলাম আমি দুটো শরীর দরকার ছিল আমার তাই তোদের থেকে তোদের দুটো ছেলেকে কেড়ে নেই। আমার ভুল ছিল শুধু একটাই একটা জীবিত শরীর দরকার ছিল, কিন্তু আমি ওদের বলি দিয়ে দিয়েছি। যার ফলোশ্রুতিতে বিনাশ এর আরো এক ধাপ এগিয়ে এসেছি। এখন এর দায়ী তোরা দুজন তোদের একটি ছেলে আমাকে দিতেই হবে” হা হা হা হাসির সাথে মেঘের গর্জন। অন্ধকার চারপাশ তার মাঝে শয়তান আর ওরা দুজন।

হাসপাতালে ডাঃ মনির হাতের যন্ত্রণায় কাতর, ডাঃ রুহুল এসে তাকে ব্যথাহত স্থানে একটা এন্টিবায়োটিক ইনজেকশন পুশ করে বললো,
“দেখেছিস আমি ওখান থেকে কেন এত তাড়াহুড়ো করে চলে এসেছি। আমার কথায় তো বিশ্বাস করছিলি না এখন তো বিশ্বাস হলো.? আমি বা তুই এর কিছু করতে পারবো না। ওর প্রতিশোধ নেওয়া শেষ হলে ও চলে যাবে। এর আগে ওই মেয়ে বা জীবিত ভাই দুটোর কেউ ক্ষতি করতে পারবে না। ”
“সরি দোস্ত আসলে আমি আত্মায় বিশ্বাসী নই, তবুও এসব ঘটে যাওয়ার পর কিছু বলার নেই আমার।
“শোন এখন এসব কথা ভুলে যা, তোর কাছে ওই মেয়ের যত টেস্ট রিপোর্ট আছে জ্বলিয়ে দিস, আর সাবধান ওই মেয়ের কথা আর কারো সাথে শেয়ার করবি না। এখানে . (ডট), কাল সকালে আমি আমেরিকা ফিরে যাচ্ছি, তবে যাওয়ার আগে ওই বাসার চারপাশে একটা কিছু রেখে যাব, যার ফলে ওই আত্মা দুটো ওই বাসার আঙিনা ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারবে না। আর নিরিহ মানুষদের ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না।

শয়তানের অর্ধদেহ ঝলসে পড়ছে, গড়গড় আওয়াজে শব্দ করছে, যে আওয়াজে রুবিনা আর মাহিমের কান ফেটে রক্ত বের হচ্ছে, এতটা ভয়ংকর সেই শব্দ। চোখের সামনে শয়তানের অর্ধদেহ পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। একটা ধোয়া শুধু বেচে আছে, সেটাই শয়তান। প্রতি একশো বছর পরপর একটা শরীর সম্পূর্ণ শিশুর দেহ দরকার, যা মাহিমের দুটো ছেলেদের মধ্যে একজন বিদ্যমান।
আজ শয়তানের যে দেহ ছিল তার শতবর্ষ পূর্ণ হয়েছে। তার ফলে সেই দেহ পুরে ছাই হয়ে গেছে।

ওদের সামনে একটা ধোঁয়া বাতাসের সাথে উড়ছে ওদের দিকে অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, জ্বলজ্বল করছে তার চোখ দুটো। অগ্নিগিরি ওই চোখ দুটোর মধ্যে দেখতে পাচ্ছে রুবিনা। রুবিনা চেষ্টা করছে নিজেকে শেষ করে দেবার কিন্তু পাড়ছে না। শয়তান দিচ্ছে না রুবিনাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে।
রুবিনার দেহে প্রবেশ করলো শয়তান। কব্জা করে ফেলেছে ওর শরীর। মাহিম জ্ঞান হারিয়েছে অনেক আগেই। মাহিম কে জাগিয়ে বাসার মধ্যে নিয়ে গেলো রুবিনা। বাসার ভিতর প্রবেশ করেই রুবিনার ভিতরে থাকা শয়তান ছেলে দুটোর খোঁজ শুরু করে। পুরো বাসা খুঁজেও তাদের না পেয়ে, শয়তান রুবিনার মস্তিষ্কে দখল করে নেয়। আর বুঝতে পারে তাদের বয়েজ হোস্টেলে রাখা হয়েছে।
অন্য রুম থেকে সুভাষিণীর কান্নার আওয়াজ আসছে, রুবিনা দৌড়ে তার কাছে গিয়ে ছুঁয়ে দিতেই রুবিনার শরীরের ভিতর থেকে ছিটকে বেড়িয়ে আসে শয়তান।..

বুঝে উঠার আগেই শয়তান এর আত্মার জ্বলজ্বল করে উজ্জ্বল আলোয় চমকাচ্ছে। রুবিনা তা দেখে সুভাষিণীকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে বুকের মাঝে নিয়ে নিলো। খিল খিলিয়ে হাসছে সুভাষিণী, হাসার শব্দে শয়তান উন্মাদ হয়ে যাচ্ছে, এ দেয়াল থেকে অন্য দেয়ালের কাছে গিয়েও বের হয়ে যেতে পারছে না এ রুম থেকে, অদৃশ্য এক মায়াজাল সৃষ্টি করে রেখেছে, কিন্তু কে রেখেছে.? শয়তান কে আটকানোর এতবড় শক্তি আজ পর্যন্ত কারো হয়নি, রুবিনা রুমের এক কোনে এসে বসে পড়ে সুভাষিণীকে নিয়ে। রুবিনা বুঝতে পারে সুভাষিণী তার কোল থেকে ছুটে বেড়িয়ে আসতে চাচ্ছে, রুবিনা সুভাষিণীকে ফ্লোরে রাখা মাত্রই বদ্ধ রুমের মধ্যে ঝড়ের গতিতে হাওয়া বইছে,অন্ধকার রুমের মধ্যে এক অলৌকিক আলোর সৃষ্টি। যার আলোয় শয়তানের আত্মা ধংস হয়ে যাচ্ছে। সুভাষিণী ফ্লোরে দাড়িয়ে গেছে চুল গুলো দুলছে বাতাসে, আর হাসছে এক পিশাচের মত। সেই সাথে উজ্জ্বল আলোর রশ্মি হয়ে তার পিছনে দাঁড়ালো সেই দুটি শিশু যাকে নৃশংসভাবে বলি দিয়েছিল শয়তান। শয়তানের আর বুঝতে বাকি রইলো না ওর ধংসের কারন দুটি বাচ্চার আত্মাই। “এক আত্মসিদ্ধি করে জানতে পেরেছিল শয়তান তার বিনাশ হওয়ার জন্য দায়ী দুটো বাচ্চার শুভ শক্তির কাছেই হবে। তখন কিছু করার উপায় থাকবে না। এমন স্থানে শয়তান এর বিনাশ হবে সেখানে কোনো প্রাকৃতিক আলো থাকবে না, আর আজ সে এমনি এক স্থানে বন্ধ” শয়তান বাচার জন্য ছটফট করছে কিন্তু শুভ্র বললো।
“বিনাশকারীর আজ বিনাশে ভয় পাচ্ছে”
শয়তান হাসি দিয়ে বলল, “আমার বিনাশ নেই আজন্মকাল থেকে আমার রাজ চলে এসেছে, আমি বসবাস করি প্রতিটা মানুষের অন্তরে, হিংসে, লোভের মাঝেই আমার পুঃরজন্ম হয়। আজ বিনাশ হচ্ছি আবার আসবো আমি হা হা হা ” অদ্ভুত হাসি হেসে উজ্জ্বল আলোয় ঝলসে যায় শয়তান। দমকা হাওয়ায় খুলে যায় দরজা,শুভ্রূ সুহাস মুক্ত হয় বদ্ধ রুম থেকে, রুবিনা পাগল প্রায়, সুভাষিণী রুবিনার কোলে উঠে আবার নিরব। শুভ্র সুহাস রুবিনার বাবার-মা এর রুমের দেয়াল ভেদ করে তার সামনে হাজির হয়, পুরো রুম তছনছ করে ভাংচুর করে দুজন। রুবিনার বাবা যখন চোখ খুললো চেহারার সামনে মৃত দুই নাতির আত্মাকে দেখে চমকিয়ে গেলো সে, কারন বলি দানের সময় সেও যে ছিল শয়তান এর সামনে… ওদের মৃত্যুর পিছনে যে তার ও হাত ছিল।

“দাদু ভয় হচ্ছে আজ.? আমাদের দেখে, তোমার পূর্বপুরুষের নিয়ম মানতে হত্যা করেছিলে আমাদের। মৃত্যুর সময় হয়নি আমাদের কিন্তু পাষাণ তোমরা বাঁচতে দেওনি আমাদের. আজ ভয় করছে কেন তোমাদের.?”
বীভৎস হাসি হাসছে ওদের দুই আত্মা আর সামনে থাকা ওদের নরপশু দাদু যে এক নাতনীর জন্য দুই নাতির জীবন বলি দিয়েছে সে। হাত পাঁ কাঁপছে তার মুখ বেকে গেছে, কথা বলার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছে তাদের দাদু।
শুভ্র তার দিদা এর শরীর কব্জা করে নেয়। মৃত্যুর যন্ত্রণা কতটা ভয়ানক তা আজ দিবে তার সমস্ত পরিবার কে, কাউকে বাঁচিয়ে রাখবে না।
সামনে পড়ে থাকা দাদু তার স্ত্রীর ভিতরের নাতিকে দেখছে, এর মধ্যে দাদুর শরীর এও কব্জা করে ফেলেছে সুহাস,, কেমন করে যন্ত্রণা দিয়ে হত্যা করছে তাদের তার চেয়েও ভয়ানক মৃত্যু দিবে দাদু দিদাকে।
দুজন একসাথে একজন আরেকজনার হাট টেনে ছিড়ে ফেলছে, দুজনার একটি করে হাত ছিড়ে ফেলে আত্মা দুটো। অন্য হাত দিয়ে দুজন দুজনার পেটের ভিতরে হাত ঢুকিয়ে দেয়। পেটের ভিতরের সমস্ত কিছু বের করে নিয়ে তাদের শরীর ত্যাগ করে আত্মা দুটো। মৃত্যু যন্ত্রণায় ছটফট করছে সামনে পড়ে থাকা দাদু দিদার দেহ। বড় বড় চোখ করে কিছু বলতে চাইছিল আত্মাদের কিন্তু এতটা যন্ত্রণার ফলে মুখ থেকে একটাও কথা বের করতে পারলো না তারা, চোখের জলে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করে তারা, আর আত্মা দুটো তৃপ্তির ন্যায় হাসি দিচ্ছে। ধংশ করে দিব এমন পরিবার যে পরিবার আমাদের বাঁচার অধিকার দেয়নি তাদের ও কোনো অধিকার নেই বেঁচে থাকার।

ডাঃ রুহুল তার পরিচিত কিছু তান্ত্রিকদের সাহায্য নিয়ে একটা বদ্ধ রুমের ভিতর এক চক্রের সৃষ্টি করে। গোলাকার চক্র যার চারপাশে বসে একটা নির্দিষ্ট বস্তুকে কেন্দ্র করে মন্ত্র পড়তে শুরু করে যা একটানা ৫ ঘণ্টা চলে, দুজনার শারীরিক অবস্থা প্রায় ধংশের পথে তবুও তাদের মন্ত্র যব করা বন্ধ হয়নি, এই মন্ত্র এতটা শক্তিশালী যে কারনে তাদের এমন হয়েছে।
মন্ত্র পুত সেই বস্তুটারর চার টুকরো করে মাহিমের বাসার চারকোণে পুতে দেয় সেই রাতেই ডাঃ রুহুল। বাসার ভিতরে বসে আত্মা দুটো সব করতে পারলেও বাসার বাহিরে যেতে পারবে না একটুও না। যেদিন তাদের মুক্তির সময় হবে সেদিন আপনাআপনি এই মন্ত্র নষ্ট হয়ে যাবে। এমন উজ্জ্বল চমকে দিয়ে এই মন্ত্র নষ্ট হবে যা পুরো গ্রামের মানুষ দেখতে পারবে।

রুবিনার বাবার শুধু এক কন্যা রুবিনাই ছিল। মাহিম রুবিনার বাবার বাসায় ই থাকতো, দাদু দিদাকে খুন করার পরে সময় আসে রুবিনাকে হত্যা করার। নিস্তব্ধ পুরো বাসায় রুবিনা আর মাহিম। মাহিম তো জ্ঞানহারা নিথর পড়ে থাকা লাশের মত ঘুমিয়ে আছে। নিস্তব্ধ রুমের মধ্যে রুবিনা একা জাগ্রত। তখন গুঙিয়ে কান্নার শব্দ শুনতে পায় তার বাবার রুমের ভিতর থেকে। ভিতু মন নিয়ে রুবিনা ভীরু পায়ে চুপি চুপি এগিয়ে যাচ্ছে তাদের রুমের দিকে, যত এগুচ্ছে ততো ভয়ানক গুঙিয়ে কাঁদার শব্দ। আজ অন্য রকম কান্নার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে, বাবার কণ্ঠের মত শুনতে পারছে রুবিনা। রুবিনা বাবার রুমের সামনে দাঁড়িয়ে দরজায় নক করে “বাবা বাবা” বলে জোরে জোরে ডাকছে, কিন্তু কোনো সারা শব্দ নেই তার বাবার, গুঙানির শব্দ বন্ধ হয়ে যায়
রুবিনা রুমের দরজা ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে যায় ঘন অন্ধকার রুম, নিস্তব্ধ মৃত্যুপুরী মনে হচ্ছে। একটা ঠাণ্ডা হাওয়া রুবিনাকে ছেদ করে বাহিরে বের হয়ে যাওয়া মাত্রই রুবিনা রুমের সমস্ত আলো জ্বালিয়ে দিয়েই এক চিৎকার। বীভৎস ভাবে হত্যা করা তার মা বাবার লাশ চোখের সামনে পড়ে আছে। দেহ থেকে শরীরের ভিতরের সবকিছু আলাদা হয়ে আছে.. দেয়ালে পিঠ মিশে গেছে রুবিনার। পাশের রুমে যেখানে শুভ্র সুহাস থাকতো সে রুম থেকে, “মা এই মা চলে আসো আমাদের কাছে চলে আসো না মা। হা হা হা তুমি আর বাবাই আছো শুধু আমাদের কাছে আসার, চলে আসো”

রুবিনা মাথা নাড়িয়ে “না না” করে দৌড়ে অন্য রুমে চলে যায়, যেখানে সুভাষিণী রয়েছে, সুভাষিণীকে নিয়ে বুকে জড়িয়ে মাহিমের কাছে চলে আসে। মাহিমের জ্ঞান ফিরতেই সুভাষিণী মাহিম রুবিনা বাসার বাহিরে চলে যায়, আত্মা দুটো সুভাষিণীর পিছু পিছু বাসা থেকে বাহির হতে যাবে এমন সময় রুহুলের পুতে রাখা অদৃশ্য শক্তি চমকিয়ে উঠে, উজ্জ্বল আলোয় তাদের বন্দী করে ফেলে, আত্মা দুটো পুরো শক্তি দিয়ে বাহিরে আসার চেষ্টা করে যত ততোই দুর্বল হয়ে পরে। বাহিরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে রুবিনা দেখছিলো ঘটনা গুলো, বুঝতে পারে আত্মা দুটো বাসার বাহিরে আসতে পারবে না। রুবিনা সুভাষিণীকে বুকের সাথে মিশিয়ে গ্রাম ছেড়ে শহরের বাসাতে চলে আসছে। গ্রামের বাসায় আটকে পড়ে আছে অতৃপ্ত দুটি আত্মা।

শহরে এসে রুবিনা তাদের বাকি ছেলে দুটোকেও হোস্টেল থেকে নিজের কাছে নিয়ে আসে, সবাই মিলে এক সুখী সংসার বাঁধে এ শহরে।
গ্রামের বাড়িতে এখন রাতের নিস্তব্ধে গ্রামের মানুষ অদ্ভুত সব শব্দ শুনতে পায়। তাই সেই বাড়ির ভিতর কেউ প্রবেশ করার সাহস করেনা। সবাই সেটাকে ভুতুরে বাড়ি বলে এখন জানে।

২১ বছর পর…

এই ২১ বছরের মধ্যে সুখের সংসার করে রুবিনা। তার ছেলে দুটো এখন অনেক বড় হয়েছে, আর মেয়েটা সুভাষিণী এক অদ্ভুত মেয়ে এখনো, ২১ বছরে সে একটুও অসুস্থ হয়নি। ডাক্তার থেকে সবসময় দূরত্ব বজায় রেখেছে, একদম চুপচাপ, শুধু ভাই দুটোর সাথে কথা বলে আর কারো সাথে কথা বলেনি ২১ বছরে। স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে সবচাইতে মেধাবী সুভাষিণী,, পশুপাখি থেকে শুরু করে গাছপালা সবকিছু প্রতি ওর ইন্টারেস্ট ছিল.. এমনকি মৃত গাছ সুভাষিণীর স্পর্শে জীবিত হয়ে উঠতো। যেগুলো সে সবার চোখের আড়ালে করে বেরাত.. কেউ জানতো না সুভাষিণী এক মায়াবিনী পিশাচিনী। সাধারণ মেয়ের মত থাকলেও ওর ভিতরে বড় হয়েছে এক পিশাচী শক্তি যা জন্ম থেকে পেয়েছে সুভাষিণী দুই মৃত ভাইয়ের কাছ থেকে। হঠাৎ করেই আজ তার বাবা এক এক্সিডেন্টে বীভৎস ভাবে মারা যায়। মাহিম এর শেষ ইচ্ছে ছিল যখন সে মারা যাবে তার দেহ যেন গ্রামের বাড়িতে কবর দেওয়া হয়। সুভাষিণী তার বাবার মৃত্যুতে একটুও কষ্ট হয়নি বরং হাসছে সুভাষিণী। কারন আজ তার আশা পুরন হবে, গ্রামের বাসায় যাওয়া হবে আজ। মনে মনে সে মহা খুশি।
মাহিম এর মৃত দেহ নিয়ে তারা গ্রামের বাড়ি আসছে, সামনে তাদের সেই পুরানো বাড়ি, যেখানে আটকে আছে সুভাষিণীর দুই ভাই মনের একাংশ। তাদের সাথে গ্রামের প্রায় অনেক মানুষ আছে এখন,

অদৃশ্য দেয়ালের ওপাশে সুভাষিণীর মৃত ভাই দুটির আত্মা হাসছে আজ, একমাত্র সুভাষিণী পায়ের আঘাত মুক্তি দিতে পারে ওদের এই অদৃশ্য দেয়াল থেকে, যা সুভাষিণী ও অনুভব করতে পারে। কেননা সুভাষিণীর একটা মনের টুকরো তাদের ভাইয়ের আত্মার সাথে জড়িত। সবাই একজায়গায় দাঁড়িয়ে আছে সুভাষিণী তাদোর উপেক্ষা করে হাসতে হাসতে এগিয়ে বাসার ভিতরে প্রবেশ করলো.. প্রবেশ করতেই এক উজ্জ্বল চমক, ডাঃ রুহুল এর কথা অনুযায়ী আজ সেই চমক পুরো গ্রামবাসীর নজর কারে। অতৃপ্ত আত্মা দুটো সুভাষিণীর শরীরে প্রবেশ করেই রুবিনার কাছে গিয়েই এক কামর দিয়ে দেহ থেকে মুণ্ডু আলাদা করে ফেলে সকলের সামনে। পুরো গ্রামবাসী এক ঝটকা খেয়ে দৌড়ে পালিয়েছে , কারো চিহ্ন মাত্র দেখা নেই। মাহিম আর রুবিনার বেজান দেহ মাটিতে পড়ে আছে, জ্যান্ত ভাই দুটো শক্ত পাথর হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ওর সামনে।

সুভাষিণীর শরীর ছেড়ে বাহির হয়ে যায় আত্মা দুটো, আজ তারা মুক্ত, বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে তারা দুজন ই বাতাসে বিলিয়ে যায়।
সুভাষিণী তার জীবিত ভাই দুটির দিকে হালকা একটু তাকিয়ে মুচকি একটু হাসি দিল। তাদের কপালে দুটো চুমু দিয়ে বিদায় নিলো তাদের থেকে, সুভাষিণী তাদের মাঝে থাকলে তাদের ই ক্ষতি হবে তাই চলে যাচ্ছে এক শূন্যতায়, জঙ্গলের রাস্তা ধরে, যেখানে জনমানব নেই। চারদিকে শুধু শূন্যতা শূন্যতাই। আপন করে নিয়েছে সুভাষিণী শূন্যতাকে।

——-(সমাপ্ত)——–

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here