শুভ্র_রঙের_প্রেম পার্টঃ০৬

শুভ্র_রঙের_প্রেম
পার্টঃ০৬
লেখনীতেঃ#রুবাইদা_হৃদি
জীবনে সবচেয়ে অস্বস্তিতে আজ পরেছি ৷ একরাশ লজ্জা হঠাৎ করে হানা দিলো বিপদের সামনে থেকেও ৷ মনে হচ্ছে,হাত দুটো ছেড়ে দেই! যা হবার হবে ৷ কিন্তু ভীতু মন বলছে না থাক৷ আমি চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছি ৷
–‘ ডোন্ট মুভ৷ ‘ স্নিগ্ধ স্যার বলতেই আমি চোখ খুলে তাকাই ৷ আমি ঝুঁকে আছি উনার দিকে ৷ উনার চোখে চোখ পরতেই আবারো লজ্জা আর ভয়ে হাতদুটো শক্ত করে খাঁমচে ধরি ৷
–‘ প-রে রেই যাবো ৷ প্লিজ হেল্প মি স্যার ৷ ‘

–‘ বি কুল ৷ আমার হাত ধরে রাখো শক্ত করে ৷ এতো উপরে কেন উঠেছো তুমি?? ‘

–‘ বে ল লুন লাগাতে ৷ আম্মু হেল্প মি! বাঁচাও ৷ আল্লাহ সেভ মি৷ প্লিজ স্যার নামান আমাকে ৷ ‘

–‘ স্টপ,আমি আছি তো ৷ একদম নড়বে না দাঁড়িয়ে থাকো আমার হাত ধরে ৷ ‘
আমি থামলাম না ৷ ইচ্ছামতো রাহাত আর রশীদ স্যারেকে বকে উদ্ধার করছি ৷ উনার হাত আরো খাঁমচে ধরলাম ৷ পরতে পরতে ঝুঁকেই উনার হাত ধরে ফেলি ৷ ভাগ্যিস উপরে পরি নি ৷ কোমর ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে ঝুঁকে থেকে আর একটু নড়তেই বেঞ্চ জোরে জোরে ঠকঠক করে কাঁপছে ৷ স্নিগ্ধ স্যার আশেপাশে খুজছেন কিছু ৷ নামার কোনো স্কোপ নেই আমি নামতে গেলেই বেঞ্চ দুটোও উল্টে পরবে৷ আল্লাহ বাঁচাও!

–‘ সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারবে?? ‘ আমি উনার কথা শুনে প্রায় কেঁদেই দিলাম ৷ ব্যাটা বলে কি??
— ‘ আমার হাত ছাড়ো একটু আরেকটা উঁচু বেঞ্চ নিয়ে আসছি।’

–‘ স্যার যাবেন না ৷ আমাকে অকালেই মৃত্যুর হাতে ঠেলে দিতে চান?? ‘ উনি আমার কথা শুনে বিপদের মধ্যেও হেঁসে উঠলেন ৷ আমি ভ্রুকুটি করে তাকালাম ৷ এইদিকে জীবন মরণের টানাটানি আর উনি হাসছেন?? আমি রাগ করে উনার হাত ছেড়ে দিলাম যা হবার হবে ভেবে ৷
হাওয়ায় ভাঁসছি আমি ৷ কলার সহ গলা শক্ত করে ধরে রেখেছি ৷ হাত ছেড়ে দিতেই ঘুরে পরে যাই ৷ যা হবার তাই হয়েছে,ডিরেক্ট স্নিগ্ধ স্যারের কোলে ৷
–‘ এতো জেদ কেনো তোমার?? ‘ উনি আলতো হাতে ধরে রেখেই বললেন ৷ লজ্জায় গলার শব্দ আটকে আসছে ৷ চোখ তুলে উনার দিকে তাকানোর সাহস একদম হলো না ৷ হঠাৎ করেই,দু-তিনটা বেলুন ফুঁটে তার ভেতরে থাকা সাদা গোলাপের পাঁপড়ি উপর থেকে পরছে ৷ ওয়েলকাম করার জন্য ব্যাবস্থা করেছিলাম আর সেখানে লজ্জার সাক্ষী হয়ে গেলো ৷
–‘ স.স্যার নামিয়ে দিন ৷ ‘ আমি বলতেই উনি নামিয়ে দিলেন ৷ ভাগ্যিস কেও আসে নি ৷ হঠাৎ করেই আমার দিকে এগিয়ে আসলেন আমি বেঞ্চে হাত দিয়ে পেছনে ঝুঁকে গেলাম ৷ উনি সামনে এসে বললেন, ‘ সাদা রঙের স্বপ্ন গুলো বাস্তব হচ্ছে ৷ ‘

–‘ কিসের স্বপ্ন?? ‘

–‘ সময় হলেই বুঝতে পারবে ৷ ‘ আমি চমকে উঠে তাকালাম ৷ ছাই রাঙা শার্টে অতিরিক্ত সুন্দর লাগছে তাকে ৷ উনার দৃষ্টি আমাতে নিবদ্ধ ৷ হার্ট বিটের শব্দ ছন্দ ছড়াচ্ছে ৷ আমি পাশে সরে দাঁড়ালাম উনি নিজের বেঞ্চের উপর উঠে দাঁড়ালেন৷ আমি বললাম,
–‘ আস্তে পরে যাবেন ত… ‘

–‘ আমি যেভাবে তোমাকে সেভ করেছি তুমিও করবে আমাকে ..! ‘

–‘ ইম্পসিবল, আপনি পরলে আমাকে খুজে পাওয়া যাবে না ৷ ‘ আমার কথা শুনে স্নিগ্ধ স্যার কিঁছু বললেন না ৷ বেঞ্চ আমি দুইহাতে ধরে রেখেছি৷ লজ্জায় আর অস্বস্তিতে মাটির নিচে ঢুকে যেতে ইচ্ছা হচ্ছে ৷

–‘ দোস্ত জিন্দা আছিস?? ‘ রাহাত রুমে ঢুকতে ঢুকতে বলতেই আমি ওর পায়ে জোরে পারা দেই ৷ হাই হিলের পারা খেয়ে ব্যাথাতুর কন্ঠে বলল,
–‘ মারিয়া ম্যাসেজ দিয়েছিলো ওর রিহার্সালে হেল্প লাগবে তাই চলে গিয়েছি ৷ ‘
–‘ দূরে যা ৷ আমার আশেপাশে আর আসবি না ৷ ‘
আমি রাগী কন্ঠে বলতেই ও আহত দৃষ্টিতে তাকালো৷ মিনতির কন্ঠে বলল,

–‘ জীবন থাকতে তোরে রাইখা আর কোথাও যামু না প্রমিস ৷ দরকার হইলে তোর বাসর ঘরেও চুপ মেরে আলাভোলা হয়ে থাকবো তবুও মাফ কর৷ ‘
ওর কথা শুনে হাসি পেলেও রাগী চোখে তাকিয়ে চুপ মেরে স্যারকে বেলুন দিতে ব্যাস্ত হয়ে পরলাম ৷ রাহাত আমার হাতের মুভমেন্ট ফলো করে উপরে তাকাতেই চিৎকার করে উঠলো ৷ আমি আর স্যার দুজনেই কেঁপে উঠলাম ওর ভয়ানক চিৎকারে ৷

–‘ চিৎকার করছিস কেন বলদ?? ‘ আমি ঝাঁঝি কন্ঠে বলতেই ও আমার পাশ ঘেষে দাঁড়িয়ে ফিসফিস করে বলল,
–‘ ইংরেজ কি করে এইখানে?? উপর থেকে নামলি কেমনে?? ‘
–‘ কেন স্যারের কোলে করে ৷ ‘ আমার জবাব শুনে রাহাতের মাথায় হাত ৷ স্নিগ্ধ স্যার কেঁশে উঠলেন৷ আমার মাঝে কোনো ভাবান্তর নেই ৷
স্যার এখনো ডেকোরেশন করছেন সাদা বেলুন আর গোলাপের কম্বিনেশনে ৷ আমি মাথা নীচু করে রোবটের মতো হেল্প করে চলেছি ৷ আর রাহাত একটু পর পর আমার হাতে খোঁচা মেরে বলছে, ‘তোর ভারে স্যার কাইত হয় নাই?? ‘

–‘ অকালে মরতে না চাইলে চুপ থাক ৷ ‘
আমার ধমক শুনে ও চুপ করে বসে রইলো ৷ হাত ঘড়িতে সময় দেখলাম রাত ১০ঃ৫৬ ৷ ক্লান্তিতে ঘুম পাচ্ছে আমার ৷ তিনজনে মিলে পুরো অডিটোরিয়াম সাজিয়ে রাত বারোটা পার হয়ে গিয়েছে ৷ রাহাতের হল উল্টো দিকে বিধায় আমি নিজেই ওকে চলে যেতে বলে বোকামি করেছি ৷ অডিটোরিয়াম বাইরের দিকে আর এখানে থেকে আমার হলে যেতে পুরো ক্যাম্পাস সাথে মাঠ পার করতে হবে ৷ শুকনো ঢোক গিলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিতেই স্নিগ্ধ স্যার বললেন,

–‘ লেটস গো টুগেদার ৷ ‘
–‘ ইউ গো স্যার ৷ আমি যেতে পারবো ৷ ‘
আমি বলতেই উনি কথা না বাড়িয়ে সামনে চলে গেলেন ৷ কেমন স্যার রে বাবা ৷ মানা করেছি কোথায় ধমক দিয়ে বলবে তার সাথে যেতে ৷ আমি ভয়ে অডিটোরিয়ামের বাইরে এখনো ভয়ে দাঁড়িয়ে আছি ৷
–‘ চলো ৷ ‘ হুট করে এসেই আমার হাত টেনে নিয়ে যাচ্ছেন স্নিগ্ধ স্যার ৷ হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ খেলে গেলো ৷ কেঁপে উঠে হাতের টানে এগিয়ে চলেছি ৷ উনি স্বাভাবিক ৷ আমি মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছি ৷ হঠাৎ করেই কেমন অনুভূতির বেড়াজালে বেঁধে যাচ্ছি ৷
_________
বসন্তের আগমনের ঠিক আগের দিন মানে আজকেই ফেয়ারওয়েলের বিশাল আয়োজন৷ কাল রাতে দেরি করে ফেরার জন্য ঘুম এখনো ছাড়ে নি আমার ৷ আলো এসে পড়তেই কম্বল মুড়ি দিয়ে মাথা আরো ঢেকে ফেলছি ৷
–‘ হৃদি, নয়টা বাজে৷ প্লিজ উঠ দোস্ত ৷ রশীদ স্যার তোকে না দেখলে পুরো ক্যাম্পাস কাঁপিয়ে ফেলবে!’

–‘ তুই তো আছিস! যা তো ৷ ‘ আমি ঘুমুঘুমু কন্ঠে জবাব দিলাম৷ ও আমার কম্বল টেনে ফেলে দিয়ে সিরিয়াস হয়ে বলল,

–‘ তোর জন্য একটা পার্সেল এসেছে কাল সন্ধ্যার পর ৷ ‘ আমি বিরক্তিতে চোখ-মুখ কুঁচকে উঠে বসলাম ৷ নীতি আমার হাতে নীল রাঙা রেপিং পেপারে মোড়ানো বক্স ধরিয়ে দিলো ৷ বাক্সটা দেখেই আমার ঘুম ছুটে পালালো ৷ মূহুর্তেই কে দিয়েছে?? ভেবে নীতির দিকে প্রশ্নমাখা চোখে তাকালাম ৷
–‘ আমি জানি না ৷ কাল দারোয়ান চাচা দিয়ে বললো হৃদির জন্য হে কিছু একটা দিছে৷ ‘

–‘ হে টা কে?? ‘

–‘ আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম সেটার উত্তরে চাচা “হে ” বলেই চলে গেছে ৷ ‘

আমি দোটানায় পরে গেলাম খুলবো কিনা ভেবে ৷ আমার উত্তরের অপেক্ষা না করেই নীতি রেপিং টেনে খুলে ফেললো ৷ আমার নিজেরো জানার ইচ্ছা কি আছে ভেতরে আর কে দিয়েছে৷ বাসা থেকে এইভাবে পার্সেল দেওয়ার মানে হয় না ৷ আর দিলেও অফিস রুমে দিবে ৷
নীতি বক্সটা খুলতেই একটা নীল পাড়ের সাদা শাড়ি বেরিয়ে এলো । তার সাথে আরেকটা ছোট বক্স । আমি বক্সটা তুলে নিয়ে খুলতেই দুই মুঠো সাদা চুড়ি বেরিয়ে এলো সাথে একটা চিরকুট ।

–‘ তোর শুভ্র প্রেমিক দিয়েছে বোধহয় । ‘ আমি ওর দিকে তাকিয়ে চিরকুটের ভাজ খুলে দেখলাম,

শুভ্র রাঙা শুভেচ্ছা নাও,
” ক্যাম্পাস কাঁপানো শুভ্র পরীর গায়ে শুভ্র রঙটাই বড্ড মানায় । কিন্তু আমার এই রঙটাকেই বড্ড হিংসে হয় জানো ??
শুভ্র রাঙা শাড়িটা পরা দেখতে চাই আমি সাথে তোমার কোমল হাতে শুভ্র চুড়ি । চুড়ির ঝংকার গুলোও তোমার হাতে শুভ্র লাগবে । সেই ঝংকারে আমি মুগ্ধ হবো তোমার আশেপাশে থেকে । ”

–‘ কতো কিউট । দোস্ত তুই পরে ফেল । বেঁচারা যেই হোক তোকে বড্ড ভালোবাসে । ‘

–‘ অচেনা কোনো ব্যাক্তির দেওয়া জিনিস আমি কেন পরবো ?? জিনিসটা হয়তো ভুল করে এসেছে । মোট কথা ক্যাম্পাসে এমন কোনো মানুষ নেই আমার জন্য । ‘

আমার কথা শুনে নীতি অসহায় মুখ করে রইলো । মনে হচ্ছে,এই শাড়ি না পরলে দুনিয়ায় সবচেয়ে মহাপাপ করে ফেলবো । আমি ওর দৃষ্টিকে পাত্তা না দিয়ে উঠে দাঁড়ালাম ফ্রেশ হতে । কে দিলো এই আবেগময় ভালোবাসা প্রকাশ ?? বড্ড চিন্তার বিষয় ..!
—————
আমি আর নীতি সবথেকে দেরিতে অডিটোরিয়ামে পৌছালাম । একপ্রকার যুদ্ধ জয় করে । আমি সালোয়ার কামিজ পরেই এসেছি । শাড়ি পরার তীব্র ইচ্ছা থাকলেও অচেনা ব্যাক্তিকে ধরার জন্য এই ব্যাবস্থা । সে হয়তো আমার অপেক্ষায় আছেন আমি শাড়ি পরি নি দেখে হয়তো বেরিয়েও আসতে পারেন রহস্যের বেড়াজাল থেকে ।

–‘ এইদিকে আয় ,একদম সামনের ঝকঝকা সিট রাখছি তোদের জন্যে । ‘ রাহাত সামনে থেকে চিল্লিয়ে বলছে । আমি আর নীতি ওর দিকে ভীর ঠেলে এগিয়ে চলেছি । ভীরের মাঝে হাতে কিছু একটা ছোঁয়া লাগে আমি পাত্তা না দিয়ে সামনে এগিয়ে যাই । চেয়ারে বসতেই হাতের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যাই । চুইংগাম দিয়ে কাগজ আটকানো ! ইয়াক ছিঃ ! কাগজ টান দিয়ে উঠাতেই উঠে আসে । কৌতূহল আটকাতে না পেরে খুলে দেখি,

” আমার কথার গুরুত্ব কেন দিচ্ছো না তুমি ?? সামনে এসে তোমাকে মাটিতে পুঁতে ফেলার মতো জঘন্য কাজটাও করতে ইচ্ছা হচ্ছে আমার । শেষ সময়টুকুতে পাশে পাবো কিনা জানি না তবে এই সময়টুকু গুলোতে আমার অহেতুক আবদার গুলো পূর্ণ করো শুভ্র রাঙা পরী । ”

হ্ঠাৎ করেই অন্যমনস্ক হয়ে পরেছি আমি । শেষ সময়টুকু পড়তেই কি জন্য কান্না উঁপচে আসছে । এমন কেন লাগছে অচেনা সেই মানুষটার জন্য ???

চলবে,,,

~ হাতের ব্যাথা তীব্র চার ঘন্টা ধরে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে লেখেছি এতোটুকু । গঠনমূলক মন্তব্য পাচ্ছি না একদম। ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন ~♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here