শুভ্র_রঙের_প্রেম পর্বঃ০৫

শুভ্র_রঙের_প্রেম
পর্বঃ০৫
লেখনীতেঃ#রুবাইদা_হৃদি
চারদিকে অন্ধকারের হাতছানি৷ ঘরময় সুন্দর সুবাসের ছড়াছড়ি ৷ আমি ভ্রু কুঁচকে ভয়ে ভয়ে চারদিক দেখে চলেছি ৷
–‘ আমার রুমে কি?? ‘ আমি চমকে উঠলাম সাথে ভয় পেলাম৷ এতোরাতে কেও আসতে পারে তাও ভার্সিটির অফিসরুমে ভেবেই গলা শুকিয়ে এলো ৷
লাইট আমার হাত থেকে পরতেই সারা ঘরে ঘুটঘুটে অন্ধকার নেমে এলো ৷ হালকা শীতেও ঘেমে গিয়েছি আমি ৷
ভয় পাওয়া কন্ঠে বললাম, ‘ নাথিং স্যার,আমি আসলে,,,আসলে…
–‘ হ্যাঁ,তুমি আসলে?? ‘
স্নিগ্ধ স্যার নিজের মোবাইলের ফ্ল্যাশ আমার মুখের উপর ধরতেই শাড়ির আঁচলের নিচে কাগজ গুলো লুকিয়ে ফেললাম ৷ আলো পরার জন্য চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে আছি ৷
–‘ এতো রাতে আমার অফিস কক্ষে কিসের প্রয়োজন তোমার??’
–‘ স্লিপিং ওয়ার্ক! ‘ আমি কিছু না ভেবেই বলে দিলাম ৷
–‘ ম্যাজিক পাওয়ার আছে তাই না তোমার কাছে?? ঘুমের ঘোরে বদ্ধ রুমে ঢুকে গেলে ৷ ‘
উনার কথার মানে বুঝতে পেরে চুপসে গেলাম ৷ হঠাৎ করেই নিজের বোকামির জন্য আফসোস হচ্ছে ৷ চিঠির লেখা মেলানোর জন্য দারোয়ান চাচাকে ঘুষ দিয়ে রাতের আঁধারে এসেছিলাম স্নিগ্ধ স্যারের বাংলা লেখা খুজতে ৷ ঘুম আসছিলো না তাই এই বোকামি ৷ বেরিয়ে যাওয়ার আগেই উনার আগমণ৷ এখন ভিসির কাছে বিচার দিলেই বাসায় যাবে কথা তারপর আম্মুর বকা৷ সব কিছু কল্পনা করতেই ইনোসেন্ট ফেস করে বললাম, ‘ সর‍্যি স্যার, আমি নোটস হারিয়ে ফেলেছি সেটাই খুজতে এসেছিলাম ৷ ‘
–‘ তোমার ফ্রেন্ডসদের থেকেও তো নিতে পারতে??’

–‘ আপনি এখানে কেন স্যার?? ‘ কথা ঘুরানোর জন্য বললাম৷ উনি এখনো সরু চোখে তাকিয়ে আছেন ৷
–‘ আর কখনো এইভাবে কোথাও যাবে না ৷ ‘ উনি এই কথা বলেই বাইরে বেরিয়ে গেলেন ৷ প্রচন্ড পরিমাণে অবাক হয়েছি ৷ স্যার হিসেবে,রাগারাগি করতেও পারতেন কিন্তু সব কিছু বাদ দিয়ে বললেন কি?? মুঠোয় কাগজ গুলো নিয়ে বেরিয়ে এলাম উনার পিছু পিছু ৷ আমি বেরিয়ে আসতেই উনি আবার বললেন, ‘ চাবিটা দাও৷ ‘
বিষ্ময় নিয়ে তাকালাম চাবি বাড়িয়ে দিলাম ৷ উনার ব্যাবহার কেমন স্নিগ্ধ ৷ তালা লাগিয়ে এগিয়ে গেলেন মাঠের মাঝে ৷ সামনে ঘুরেই বললেন, ‘ it Takes courage to lie! ‘
–‘ সিরিয়াসলি বলছি,, ‘
–‘ স্টপ টেলিং লাই! ‘ উনার ঠান্ডা কন্ঠের ধমকে চুপ হয়ে গেলাম আমি ৷ সে আমাকে ভুল বুঝুক এইটা চাইছি না আমি৷ কেন চাইছি জানি না ৷ আমাকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে উনি বললেন,
‘ সবার সাথে কেন মিশতে হবে তোমার?? ‘

–‘ মানে?? ‘ উনি চুপ হয়ে গেলেন৷ তার ব্যাবহার অবাক লাগে আমার৷ সুপ্ত এক অধিকার প্রকাশ পায় যেন ৷

–‘ রুমে যাও..! ‘

উনি বলতেই আমি দ্রুত পাঁ ফেলে চলে এলাম ৷ পেছনে ঘুরে দেখলাম এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে ৷ শান্ত দৃষ্টি,অদ্ভুত সম্মোহনী৷
_____________
লাইব্রেরি রুমে চাঁপা উৎকন্ঠা ঘুরেফিরে বেড়াচ্ছে৷ আশেপাশের স্টুডেন্টরা বিরক্তি চোখে তাকাতেই চুপসে যাচ্ছি আমরা তিনজন৷ ফেব্রুয়ারীর মাঝামাঝি সময়৷ চারদিকে হালকা ঠান্ডা আর গরমের ছুটোছুটি ৷ শাল টা আরেকটু জড়িয়ে নিয়ে আমি সিরিয়াস হয়ে বললাম, ‘ হাতের লেখা মিলে যাচ্ছে দোস্ত ! তারমানে স্নিগ্ধ স্যার দিয়েছেন ৷ ‘

–‘ পরশ স্যারেও বাংলা লেখা সেম উনিও তো দিতে পারেন৷ ‘ রাহাতের কথা শুনে নীতি হু হা করে হেসে উঠলো ৷ পাশে থেকে চাঁপা ধমক আসতেই চুপ হয়ে যায় ও ৷ নীতি বিশেষজ্ঞদের মতো হাতের লেখা মেলাতে মেলাতে বলল,

–‘ যেই দিক আমার মনে হচ্ছে,সে আগে থেকেই তোকে চেনেন ৷’

–‘ কিন্তু কীভাবে?? সিনিয়র কোনো ভাইয়া?? ‘

–‘ থার্ড ব্যাচের অরূপ ভাইয়া তোকে লাইক করে তাই না?? ‘ রাহাত সিরিয়ার হয়ে বলল ৷ আমি আর নীতি একে অপরের দিকে তাকালাম দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে দুইজনে একসাথে বলে উঠলাম,

–‘ অরুপ ভাইয়া আউট অফ কান্ট্রি ৷ সে কি প্লেন থেকে ছুড়ে মেরেছে?? ‘

আমাদের কথা শুনে বোকা চোখে তাকালো ৷ আবারো তপ্ত নিশ্বাসে ভারী হলো টেবিলের আনাচে কানাচে ৷ কাগজ গুলো মিলিয়ে দেখলে বোঝার উপায় নেই কার লেখা ৷ কোথাও মিলে আবার কোথাও না ৷

ইংরেজীর মতো বোরিং সাবজেক্ট দুনিয়ায় দুটো নেই ৷ ফোর্থ ব্যাচের ফেয়ারওয়েলের সমস্ত দায়িত্ব আমার উপরে আর এখন ক্লাস টেস্ট ৷ নীতি আর রাহাত রিহার্সাল করতে ব্যাস্ত ৷ ক্লাস নামক কোনো প্যারা তাদের মাথায় নেই বললেই চলে ৷ বাইরে থেকে রশীদ স্যার ডাকতেই ব্যাগ হাতে উঠে দাঁড়াই ৷ এই দমবন্ধ পরিবেশ থেকে এখন মুক্তি পেলেই
শান্তি ৷
বিশাল বড় অডিটোরিয়াম সাজানোর মূল দায়িত্ব পড়েছে আমার উপর ৷ আমি উদাস চোখে একবার অডিটোরিয়ামের চারদিক দেখছি ৷ মাথা ঘুরছে..!

–‘ তোমার সাথে আরো দুইজন থাকবে হেল্প করার জন্য ৷ ‘

–‘ কে কে স্যার?? ‘

–‘ রাহাত তোমার ব্যাচমেট ৷ ‘ স্যারের কথা শুনে মাথায় হাত ৷ বলদটার এইসব সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই ৷ অডিটোরিয়ামে আরো অনেক স্টুডেন্ট আছে ওরা নিজেদের রিহার্সালে ব্যাস্ত ৷ নিজেকে তাদের ভীরে অসহায়,দুর্ভিক্ষের নায়িকা মনে হচ্ছে ৷

–‘ কোন কালার কম্বনেশন করবে?? নীল আর লাল গোলাপ??’

–‘ নো স্যার,শুভ্র রাঙা হবে সব ৷ ‘ আমি চমকে উঠলাম ৷ কারণ উক্ত কথা আমার সাথে আরেকজন বলেছেন আর সেটা হচ্ছেন,স্নিগ্ধ স্যার৷
আমাদের কথা শুনে সবাই তাকিয়ে আছে ৷ আমি অপ্রস্তুত হয়ে পরলাম ৷
–‘ শুভ্র রঙটা মানাবে এইজন্যই বললাম ৷ ‘ স্নিগ্ধ স্যার পরিস্থিতি সামলাতে বললেন ৷ আমি হাফ ছাড়লাম৷ উনি আশেপাশে থাকলেই আমার মনে হয়,কিছু একটা ঘটবে সেটা ভয়াবহ যা রাতের ঘুম কেঁড়ে নেওয়ার জন্য যথেষ্ট ৷

–‘ ওকে ফাইন,লাল গোলাপ থাক তাহলে..! ‘

–‘ না,সাদা গোলাপ ৷ ‘ আবারো আমি আর স্নিগ্ধ স্যার একসাথে বলে উঠলাম ৷ আমি লজ্জায় মিইয়ে যাচ্ছি ৷ রশীদ স্যার অবাক চোখে তাকিয়ে আছেন সাথে বাকিরা ৷ সাদা জিনিসটার প্রতি আরো ভালোবাসা বৃদ্ধি পেলো আমার ৷ কতো সুন্দর রঙ! দেখলেই চোখ জুড়িয়ে ভালোবাসা প্রকাশ পায় ৷

হলে থাকার একটাই সুবিধা বাসার কোনো প্যারা নেই ৷ বিকেলের নরম রোদে সবাই মিলে গল্প করা আবার পড়ালেখা নিয়ে সিরিয়াস আলোচনা করেই ভুলে যাওয়ার মতো আনন্দ আর কোথাও নেই৷ সিনিয়র আপুদের প্রেমের আলোচনা শুনে নিজেদের প্রেম করতে হবেই হবে ভাবাটাও যেন সব কিছু ছাঁপিয়ে একঝাঁক আনন্দ নিয়ে আসে ৷ তবে গত একদিন ধরে সেইসব পাত্তা না দিয়ে সাজ সজ্জার কাজে বড্ড ব্যাস্ত আমি আর আমার হেল্পিং হ্যান্ড অকাজের বড় ভাই রাহাত ৷ একহাজার বেলুন ফুলিয়ে মুখ ব্যাথায় বেঁকে গেছে আমার ৷ আর এখনো মহাশয়ের দেখা নেই ৷
–‘ মামা, জ্যামে পরেছিলাম বিশ্বাস কর৷ এতো বড় জ্যাম আমি বাপের জন্মে দেখি নাই ৷ ‘

–‘ ক্যাম্পাসে জ্যাম ! ইতিহাস সৃষ্টি হয়ে গেলো তাই না?? ‘ আমি দাঁতে দাঁত চেঁপে বললাম ৷ রাহাত মাথা চুলকিয়ে বলল,

–‘ তুমি বুঝবা না মামা,পাবলিক টয়লেটের কত বড় জ্যাম ৷ ‘
আমি ওর কথা শুনে বেলুন ছুঁড়ে মারলাম ৷

–‘ সাদা বেলুনের ছড়াছড়ি আর তোর শরীরে সাদা শাড়ি আমার মনে হচ্ছে,বিধবা রাজ্যের প্রজা আমি৷’
আমি ওর কথা শুনে হেসে উঠলাম ৷ কালো সুতার কাজ করা শাড়ি পড়েছি ৷ কথা না বাড়িয়ে চারদিক সাজাতে ব্যাস্ত হয়ে পরলাম ৷ কাল অনুষ্ঠান ৷ আজ শেষ না করতে পারলে মান সম্মান কিঁছু থাকবে না ৷ এতো বড় দায়িত্ব আমার ঘাড়েই পরেছে ৷ সাত ফিট উপরে উপরের দেয়াল আর সেখানে বেলুন লাগাতে হবে ৷ আমি অসহায় চোখে তাকালাম রাহাতের দিকে ও নিরস কন্ঠে বলল,

–‘ উঁচুতে আমার ফোবিয়া আছে ৷ আমি পারবো না একদম না৷’
ওর কথা শুনে আরেকদফা রশীদ স্যারকে বকে উদ্ধার করেও শান্তি হলো না আমার ৷ বাইরে থেকে উঁচু দুইটা বসার বেঞ্চ এনে একটার উপর আরেকটা দিয়ে দিলো রাহাত ৷ আমি দুঃখী দুঃখী চোখে তাকিয়ে আছি ৷ ওই উপর থেকে পরলে কোমরের হাড় একটাও আস্ত থাকবে না আমার ৷ আমি উঠে দাঁড়ালাম তবুও ৷ বেঞ্চ ভূমিকম্পের হারে ঠকঠক করে কাঁপছে ৷ আমি ভয় পাওয়া কন্ঠে বললাম,
–‘ দোস্ত, এর চেয়ে পরশ স্যারের ইয়া বড় পেটটাও ভালো ছিলো অত্যন্ত এতো নড়াচড়া করতো না ৷ ‘
নিচে থেকে কোনো সাড়াশব্দ পেলাম না ৷ রাহাত নেই ৷ আমি নড়তেও পারছি না আর নামতেও ৷ হারামি গেলো কোথায় ৷ গলা দিয়ে শব্দ বের করলেও বেঞ্চ আরো নড়ছে ৷ আমি এক পাঁ নড়তেই…..
চলবে….

~হাত ব্যাথা প্রচন্ড..! দেওয়ার ইচ্ছা ছিলো না একদম ৷ ভুল গুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন ~♥

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here