শুভ্র_রঙের_প্রেম পর্ব:বোনাস

শুভ্র_রঙের_প্রেম পর্ব:বোনাস

#রুবাইদা_হৃদি

আনন্দ ভীর হলে সব জায়গায় আনন্দ ভাব চলে আসে।আমি উচ্ছ্বাসিত চোখে সামনে দাঁড়ানো মানুষটাকে দেখে চলেছি।আমাকে অবাক করে দিয়ে এক গুচ্ছ সাদা গোলাপ বাড়িয়ে দিলেন উনি। আমি ভ্রুকুটি করে তাকাতেই হাতে গুজে দিয়ে বললেন,
–‘ প্রপোজ আমার দ্বারা হবে না।ফুল দিয়ে কখনো ভালোবাসা প্রকাশ পায় বলো তো?? আদি আর নোমানের জন্য এই সব প্ল্যান। আমি চেয়েছিলাম কোনো এক স্নিগ্ধ বিকেলে হাতে হাত ধরে হাঁটবো।অস্তমিত সূর্যের লাল আভায় দাঁড়িয়ে শুভ্র শাড়ি আর একমুঠো শুভ্র রাঙা চুড়ি দিবো সেই সাথে চিরকুট।’

–‘ আপনি বড্ড বেরসিক ! ‘ আমি ফুল গুলো হাতে তুলে নিয়ে ছুঁয়ে দিয়ে বললাম। উনি হাসলেন।
সামনেই অশান্ত সমুদ্রের রাজত্ব। চাঁদের আলোয় পানিতে ভেসে থাকা সাদা ফেনা গুলো ভাসমান তারার মতো লাগছে। দু একটা জোনাকি উড়ে বেড়াচ্ছে আশেপাশে। আমি এক পাঁ দু পাঁ করে সামনে এগিয়ে গেলাম। সে ঠায় পকেটে হাত গুজে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি সমুদ্রের নীলাভ পানির সামনে দাঁতাতেই পা গুলো কে ঠান্ডা পানি ছুয়ে দিয়ে গেলো। দূরে,বহুদূরে টিমটিমে আলো জ্বলছে। বোধহয় লঞ্চ। আমি ঘুরে তাকিয়ে বললাম,
–‘ লঞ্চে ঘুরে বেড়ানোর ইচ্ছা করছে। মাঝ সমুদ্রে গিয়ে চাঁদের আলোয় জোৎস্না বিলাস করার মতো এমন ইচ্ছা হয় আপনার??’

–‘ যেদিন সব পূর্ণতা পাবে আমার অস্তিত্বে তুমি বিরাজমান হবে সেই রাতটাই হবে তোমার এই ইচ্ছা পূরণের প্রথম ধাপ।’ উনি সামনে এগিয়ে এসে বললেন। আমার লজ্জায় ছুটে পালাতে ইচ্ছা হলো। এইভাবে কেউ বলে ??
–‘ আমি বলি। ‘
উনার কথা শুনে আমি আরো সামনে এগিয়ে গেলাম। লজ্জা নেই তার কিন্তু আমার তো আছে।
বিকেলের কথা মনে হতেই আরেকদফা লজ্জায় মিইয়ে যাওয়ার ইচ্ছা হলো। তার দেওয়া দ্বিতীয় শুভ্র শাড়ি পড়ে আছি। প্রথম টা যত্নে তুলে রেখেছিলাম অজানা মানুষটাকে পেলে ফিরিয়ে দিবো বলে। তবে সেই অজানা মানুষটাই আমার শুভ্র প্রেমিক। ভেবেই মুখের হাসি চওড়া হলো আরো।

বিকেলে মিম আপু হাত ভর্তি ব্যাগ নিয়ে এসে আমার সামনে দাঁড়াতেই আমি অবাক হতেই একটু পরে সে বললেন,

–‘ শাড়ি টা সে পচ্ছন্দ করে কিনেছে তবে বাকি সব আমার চয়েজ। পিচ্চি,সন্ধ্যার কথা ভেবেই তো আমার প্রেম প্রেম পাচ্ছে। ‘

–‘ সে?? মানে উনি?? ‘ আমি মাথা নিঁচু করে বলতেই নীতি কোথা থেকে উদয় হয়ে হেয়ালি করে বলল,

–‘ উনি ! বাবা। দেখেছো আপু কতো পরিবর্তন।’ নীতির কথা শুনে আমি গরম চোখে তাকাতেই নিজেকে সংযত করে ফেলি। দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দিলাম,
–‘ আমিও দেখবো তোর উনি কে তুই কি বলিস ।’

–‘ বাচ্চার বাপ বলবো। ‘ নীতির কথায় মিম আপু হেসে উঠলেও আমি সরু চোখে তাকিয়ে রইলাম। আমার হাতে শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বলল,
–‘ আমার দায়িত্ব শেষ এইবার তোমার দায়িত্ব শুরু শুভ্র পরী। তোমার উনি ওয়েট করছেন।’
মিম আপু বলেই মুচকি হেসে চলে গেলেন। নীতি আমার দিকে তাকিয়ে মুখে হাসি ফুঁটিয়ে বলল,

–‘ Go ahead. আমার প্রচুর পরিমাণে নাচতে ইচ্ছা হচ্ছে। স্নিগ্ধ ভাইয়ার পাশে তোকে তার রাণীর মতো লাগে। নজর না লাগুক কারো। ‘

ওর কথা শুনে দীর্ঘশ্বাস ব্যাতীত উত্তর দেওয়ার জন্য কথা খুজে পেলাম না। তোর আরিফ ভাইয়াও যদি এইভাবে আসতো তাহলে সব সুখ গুলো আমাদের হাতের মাঝেই থাকতো। কখনো সম্ভব হবে কি? টানাপোড়নের এই অপ্রকাশিত প্রেমের ভবিষ্যৎ?? জানি না। চেষ্টা কর‍তে ক্ষতি কি ? আমি চেষ্টা করবো অবশ্যই। তোর মুখের সত্যিকারের হাসির জন্য।

তোমার চোখ হাসে,, ঠোঁট হাসে,,,
আমার ডানে বামে চারপাশে,,
এলো মেলো করে দিলে
সব ঘুম কেড়ে নিলে,,,
ডাকলে ইশারায় ভালবাসা দু হাত বাড়ায়,,


তোমার চোখ হাসে,, ঠোঁট হাসে,,,
আমার ডানে বামে চারপাশে,,
এলো মেলো করে দিলে
সব ঘুম কেড়ে নিলে,,,
ডাকলে ইশারায় ভালবাসা দু হাত বাড়ায়,,

আমার ইচ্ছেরা দিচ্ছে তারা,,,,
তুমি কি বল দেবে সারা,,,
আমার ইচ্ছেরা দিচ্ছে তারা,,,,
তুমি কি বল দেবে সারা,,

সুবহানাল্লাহ,,, সুবহানাল্লাহ
সুবহানাল্লাহ,,, সুবহানাল্লাহ
সুবহানাল্লাহ,,, সুবহানাল্লাহ

ভাবনা থেকে বের হয়ে অপলক চোখে তাকিয়ে আছি।চাদের আলোয় দাঁড়ানো মানুষটাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে। আমি বাকরুদ্ধ গলায় বললাম,
–‘ আপনার কন্ঠের গান মা শা আল্লাহ । ‘

–‘ অল ক্রেডিট গোস টু আদি।গান না থাকলে প্রেম নাকি জমে না।’ আমি উনার বলা কথায় হেসে উঠলাম। সরু চোখে তাকিয়ে বললাম,

–‘ আদি ভাইয়া মিথ্যা বলেন নি একদম। ‘

আমার কথা শুনে হাসলেন উনিও। হাত বাড়িয়ে দিলেন হাত ধরার জন্য। আমি ইতস্তত করতেই উনি সামনে এগিয়ে এসে শক্ত করে হাত ধরলেন। আমি বিষ্ময়ে অবাক হয়ে পরলেও উনার হাত শক্ত করে ধরলাম।

সমুদ্রের গর্জনে নতুন পথ চলার সাক্ষী। বালুর উপর হেটে চলেছি একসাথে। কিছুদূরে করুন সুরে কারো গাওয়া গান ভেসে আসছে। তার গলায় কষ্টের ছাপ। বুকের মাঝে কেমন করে উঠলো। আমি তার পাশ ঘেষে দাঁড়ালাম। এখন প্রশান্তি হচ্ছে।
–‘ ছেড়ে যাবেন না তো কখনো ??’

–‘ ছেড়ে যাওয়ার জন্য বুঝি হাত ধরেছি ? অচেনা এক মেয়েকে না দেখেই তিন বছর পার করলাম আর এখন ?? ‘

–‘ এখন ??’

–‘ ভালোবাসি তাকে দেখেই আর অনুভূতি ছিলো না দেখেই দুটো মিলে নিখুঁত বন্ধনে আবদ্ধ। ‘

–‘ আমি সব জানতে চাই। ‘ আমি থেমে গিয়ে উনার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম ।উনি হ্ঠাৎ করেই আমাকে টেনে নিয়ে বললেন,
–‘ সহ্য কর‍তে পারবে তো??

উনার শান্ত শীতল কন্ঠের আওয়াজে হৃৎপিন্ড তড়িৎ গতিতে লাফিয়ে উঠলো। কি এমন কথা?? যা সহ্য করতে পারবো না ???
চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here