রাজনীতির_রংমহল #সিমরান_মিমি #পর্বসংখ্যা_০৮

#রাজনীতির_রংমহল
#সিমরান_মিমি
#পর্বসংখ্যা_০৮

ভার্সিটি’র এক নতুন ফ্রেন্ডের নিজস্ব বাড়ি ঢাকাতেই।তার’ই বোনের বিয়ে আজকে।পাভেল ঢাকায় এসেছে শুনে বেশ আষ্টেপৃষ্টে ধরেছে বিয়েতে থাকার জন্য। শেষে বাধ্য হয়ে ভাইকে বলে চলে এসেছে।বিয়ে বাড়ির গেট পেরিয়ে সামনের রুমে ঢুকতেই এক ঝাক সুন্দরী তরুনীদের দেখা মিললো।ইতোমধ্যে বর এসে পড়েছে।সৈকতের সাথে নতুন ছেলে হিসেবে পাভেল কে দেখে তারা বরপক্ষ ভেবে ছুটে গিয়ে ঘিরে ধরলো।অন্য সময় হলে পাভেল নিজেও ফ্লার্ট করতো কিন্তু এই মুহুর্তে ভীষণ অসস্তিতে পড়েছে।অচেনা জায়গা তার উপর বেশ লাজ-লজ্জাহীন মেয়েগুলো।শেষে সৈকতের সাহায্যে তাদের কে কাটিয়ে রুমে ঢুকতে পেরেছে।

ছাদের বাম কার্ণিশে সব কাজিনরা মিলে আড্ডায় বসেছে।পাভেলের প্রথমে ভালো না লাগলেও এখন সবার সাথে পরিচিত হওয়ায় ভালো লাগছে।চারপাশে তাকাতে গিয়ে হঠাৎ চোখ আটকালো সবার বিপরীতে থাকা এক কিশোরী মেয়ের দিকে। যে কিনা সবার থেকে দুরত্বে ছাদের ডান দিকে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে।ভীষণ অদ্ভুত লাগলো পাভেলের।পাটি থেকে উঠে জুতো পড়ে ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সে দিকে।শান্ত কন্ঠে বললো-

এক্সকিউজ মি!

চোখ ফিরিয়ে পাভেলের দিকে তাকালো মেয়েটি।ভীষণ স্নিগ্ধ সে চাহনী। গায়ে-মাথায় সুন্দর করে ওড়না দিয়ে বেশ মার্জিত ভাবে হাসলো মেয়েটি।বললো-

জ্বী বলুন।

আরেকটু সামনে এগুলো পাভেল। ঠোট ভিজিয়ে বললো-

সবাই ওখানে আড্ডা দিচ্ছে।কিন্তু তুমি এখানে একা একা কি করছো?

ওপাশ থেকে উত্তর আশার আগেই কর্কশ কন্ঠে বেজে উঠলো পকেটে’র ফোনটি।হাতে নিয়ে স্ক্রিনের দিকে তাকাতেই গলা শুকিয়ে গেল। স্ক্রিনের উপর জ্বলজ্বল করে ভেসে উঠেছে দুই অক্ষরের নামটি “আর্শি”। ফোন বের করতে করতেই আরো দুবার রিং বাজলো।দ্রুত বেগে ফোন রিসিভড করে কানে নিতেই ওপাশ থেকে ঝাঝালো কন্ঠে ভেসে আসলো-

এই আপনি আমার ফোন ধরছিলেন না কেন?কোথায় আপনি?ঢাকা থেকে কি আসছেন?

দাত কেলালো পাভেল।ফোন হাতে ছাদের অন্যপাশে এসে বললো-

নাহ,বন্ধুর সাথে তার বোনের বিয়েতে এসেছি।আপাতত বাড়ি যাচ্ছি না।

তেতে উঠলো আর্শি।বললো-

বিয়েবাড়িতে মানে?তাহলে তো ওখানে অনেক ছ্যাচড়া ছ্যাচড়া মেয়ে থাকবে।এইই এই আপনি ওদের সবার থেকে দূরে থাকবেন।একদম ধারে কাছেও ঘেষতে দিবেন না কাউকে।কি দরকার ছিলো ওখানে যাওয়ার?

পুনরায় দাত কেলালো পাভেল।বললো-

জানো,এখানে একটা মেয়েকে ভীষণ ভালো লেগে গেছে।কি সুন্দর চাহনি।তুমি একবার দেখলে ফিদা হয়ে যেতা।

—পাভেল ভাই।(করুন কন্ঠে বলে উঠলো আর্শি)

–হুম বলো।

—আপনি এমন কেন?আমার অনুভূতি নিয়ে এভাবে খেলে কি মজা পান বলতে পারেন।(করুন কন্ঠে বললো)

বেশ সিরিয়াস হলো পাভেল। থমথমে কন্ঠে বললো-

আর্শি,আমি তোমাকে আগেই সাবধান করেছি।আজকেও বলছি।তুমি বড্ড ছোট,নিজের আবেগকে সামলাও।সামনে না এইচএসসি এক্সাম। মাথা থেকে এইসব ঝেড়ে লেখাপড়ায় মন দাও।আর হ্যা,আমাকে হুটহাট করে ফোন দিয়ে জ্বালাবে না।রাখছি।

কেটে দিল ফোন।জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ফোনের দিকে তাকিয়ে ফুপিয়ে কেদে উঠলো অষ্টাদশী আর্শি।

কি করছিস ওখানে?

পেছন থেকে গুরুগম্ভীর আওয়াজ শুনতেই পিলে চমকে ওঠে আর্শির।ঘুরে তাকাতেই দেখলো বড় ভাই সোভাম সরদার কে।

ভাই কি শুনে নিলো তার কথা?ভাবতেই সারামুখ পাংশুটে বর্ণ ধরলো।কোনোরকমে নিজেকে সামলিয়ে বললো-

ও কিছু না ভাইয়া,আমি ওই ওই পরিক্ষার টেনশন হচ্ছিলো। তাই,,,

আমলে নিল না সোভাম সরদার।নিজের রুমে ঢুকতে গিয়েই এ রুম থেকে ফোপানোর আওয়াজ পেয়েছিলো। তাই রুমের বাইরে দাড়িয়েই জিজ্ঞেস করলো।ছোট বোনের এমন ভয়জড়ানো কন্ঠ শুনে মনে মনে বেশ খুশি হলো।ত্রিশ বছরের এই যুবক পুরো সরদার বাড়ি কেন,সারা এলাকায় এক আতংকের মতো বিরাজ করে।লোকে তাকে ভয় পায়,কূর্ণিশ করে চলে এ যেন এক পৈশাচিক আনন্দের অনুভূতি তার কাছে।

নিস্তব্ধ রাত।দূর থেকে কুকুরের অভিশপ্ত ঘেউ ঘেউ আওয়াজ কানে ভেসে আসছে।হোস্টেলের রুমের মধ্যে নিজের ছোট্ট সিংগেল বিছানার সাথে লাগোয়া জানালার সাথে হেলান দিয়ে বসে বাইরের অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে আছে স্পর্শী।চোখের ভেজা পাপড়িটা বারকয়েক ঝাপটা মেরে চোখের মধ্যে থাকা অশ্রুগুলোকে বিদায় করলো।কেমন যেন লাগছে তার কাছে।কিছু একটা নেই নেই এমন অনুভূতি হচ্ছে।

কি হয়েছে বেবি।তুই ওমন চুপচাপ হয়ে আছিস কেন?
নিজের বিছানা ছেড়ে স্পর্শীর কাছে এসে আদুরে গলায় বলল অনন্দা।স্পর্শি চমকালো।ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলো একটা বেজে সাতচল্লিশ।অনন্দার দিকে তাকিয়ে বললো-

ঘুমাস নি এখনো?

–তোর কি হয়েছে?

অন্যদিকে তাকালো স্পর্শী।মুখে বিরক্তিকর শব্দ উচ্চারণ করে বললো-

জানিনা রে।ভাল্লাগছে না কিছু।

কিছু ভাবলো অনন্দা।তারপর স্পর্শির কাধে হাত রেখে বললো-

রাহুল ভাই কি খুব বেশী জ্বালাচ্ছে?

শান্ত চাহনিতে অনন্দার দিকে তাকালো।তারপর অন্ধকারের দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো-

তেমন কিছু না।রাহুল ভাইয়া খুব ভালো।অনেক ভালো মনের একটা মানুষ। তুই বিশ্বাস কর,ওর লাইফ পার্টনার হিসেবে যে মেয়েটা আসবে সে খুব সুখি হবে।খুব ভালোবাসবে তাকে।যে মানুষ টা আমার থেকে কোনোরুপ রেসপন্স না পেয়েও আজ এতটা বছর নিরবচ্ছিন্ন ভাবে ভালোবেসে যেতে পারে,আমার জন্য শখের চাকরি খোয়াতে পারে,এমনকি আজ এতটা সময় ধরে একা থাকতে পারে,নিঃসন্দেহে সে সেই মেয়েটাকে অসম্ভব ভাবে ভালোবাসবে যে কি না তাকে প্রায়োরিটি দেবে।

থেমে,
হয়তো আমার অবহেলা পেয়ে দিনদিন একটু খামখেয়ালীপনা করছে কিনতু দেখিস খুব শীঘ্রই সব কিছু সামলে নিতে পারবে।আমি ভাবছি,এবার আমার বিয়েটা করা উচিত। বয়স তো আর কম হলো না।আর কতদিন অন্যের ঘাড়ে থাকবো।তাছাড়া আমার ও একটা সস্তির পরিবেশ চাই।ভালোলাগার একটা মানুষ ও চাই।খুব কাছের।

নড়েচড়ে বসলো অনন্দা।বললো-

তাহলে তুই রাহুল ভাইয়াকে বিয়ে করে ফেল।

শান্ত দৃষ্টিতে পুনরায় দগ্ধ হয় অনন্দা।স্পর্শী তার দিকে তাকিয়ে বললো-

করতাম।কিন্তু ওই যে বললাম রাহুল ভাইয়া।সে আমাকে বোন হিসেবে না ভাবলেও আমি আজীবন তাকে বড় ভাইয়ের নজরে দেখেছি।সেই ছোটবেলা থেকে তার কাধে চরে বেরিয়েছি, কোথাও অভিভাবক হিসেবে দেখাতে হলে সবার আগে ভাইয়াকে পরিচয় করিয়েছি সেই তাকে বিয়ে করা কিছুতেই সম্ভব নয় আমার পক্ষে।

–তাহলে তোর নেতামশাইকে করে নে বিয়ে।বেচারা এমপি হয়েও আদাজল খেয়ে তোর পেছনে পড়ে আছে।

হাসলো স্পর্শী। বললো-

তোর কি মনে হয় উনি সিরিয়াস।কই,আমার তো মনে হচ্ছে মজা করছে।

চোখ বড়-বড় করে ফেললো অনন্দা।মাথায় হাত দিয়ে বলল-

তুই কি আদোও মানুষ স্পর্শি। একজন এমপি হয়েও উনি তোকে টাইমলি ফোন দিচ্ছে,দেখা করছে, ফোন বন্ধ থাকার কারনে ছটফট করতে করতে দেখা করতে এসেছে,এমনকি তোর এত্তো ত্যাড়ামির পরেও সে তোকে বিয়ের প্রোপোজাল করেছে।এর থেকে আর কি চাস তুই?সিরিয়াসলি এটাকে মজা মনে হয় তোর কাছে?

নড়েচড়ে বিছানায় পা হেলিয়ে বসলো স্পর্শী।ঠোট উলটে বললো-

ধুর বাল।জানি না রে কি হয়েছে আমার।সবার থেকে সবকিছু বেশী এক্সপেক্ট করি আমি।এই জন্য তো দিন শেষে কিছুই পাই না।কেউ কিছু বললেই মনে হয় সে মজা করছে আমার সাথে।এই জন্য আমিও তেড়ামি করি।কারো কথা বিশ্বাস হয় না।মনে হয়, সেও হয়তো কারো সাথে বাজি ধরে আমাকে পটাতে চাইছে।

মাথায় দুম করে টোকা মেরে থমথম করতে করতে নিজের খাটে গিয়ে শুলো অনন্দা।মেজাজ তুংগে এনে বলল-

এমনটা না হওয়ার কোনো চান্স আছে।ওই যে তুই সবসময় মজা করিস,এইজন্য তোরও সবাইকে জোকার মনে হয়।ধুর,ঘুমা তো।তোর জন্য শুধু শুধু আমি জেগে থাকবো।

বলেই ওপাশ ফিরে শুয়ে পড়লো অনন্দা।স্পর্শী কিছুক্ষণ নিরব রইলো।আজকাল নিজেকেও বুঝে উঠতে পারছে না সে।সবকিছুতে কিছু একটা মিসিং মনে হচ্ছে।এপাশ ওপাশ করতে করতে বন্ধ সিমটা অন করলো।আকাশ সমান আশা নিয়ে সিম অন করলেও হতাশ হয়ে চেয়ে থাকলো স্ক্রিনের দিকে।কাঙ্ক্ষিত নাম্বার টা থেকে নতুন করে কোনো মেসেজ বা কল আসেনি।তাহলে কি সে আর ফোন দেবে না?
স্পর্শী রিজেক্ট করেছে বলে ভুলে যাবে?
এই তার ভালোবাসার পরিধি?

রাগে গজগজ করতে লাগলো স্পর্শী। ব্যঙ্গ করে বলতে লাগলো পরশের বলা কথাগুলো-

এহহহহ,সামান্য রিজেক্ট করতেই ফোন-টোন দেওয়ার কোনো নামই নেই।এ আবার বলে,বিয়ের পরে টাইম ধরে পুরো এক ঘন্টা জ্বালাবে তাকে।ঢং,শালার গিরগিটি কোথাকার?একটা কথাতেই রঙ বদলে গেল।

মন মানছে না স্পর্শীর।কতক্ষন ভাবছে নিজে থেকেই ফোন দিবে।কিন্তু আবারো ব্যাক্তিত্ব তাকে সফল হতে দিলো না।কেন দিবে সে ফোন?ওই লোক দিতে পারে না।সে না মনে করলে স্পর্শীও ভুলে যাবে।স্পর্শী নিজের অনুভূতিকে বেশ সামলাতে জানে।

কিন্তু পরক্ষনেই মস্তিষ্ক সাড়া দেয় “নেতামশাই তো কত্তবার বেহায়ার মতো ফোন দিয়েছে। সে একবার দিলে ততটাও ছ্যাচড়ার মতো লাগবে না।

কিন্তু পুনরায় মনে হয়” এতো রাতে নিশ্চয়ই লোকটা ঘুমিয়েছে।শুধু শুধু ফোন দেওয়া উচিত হবে না।”

এভাবেই আকাশ-পাতাল ভাবতে ভাবতে একসময় জোর করে চোখ বন্ধ করে মরার মতো পড়ে রইলো স্পর্শী।

চলবে?

রি-চেইক দেওয়া হয়নি।ভুল হলে সরি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here