রাগি বউ,পর্ব_২
শামিয়া খানম জিনিয়া ✍️🌺
— সাকিব কে বললাম শনিবারে ক্লাস শেষে আমার সাথে দেখা করতে……..
শনিবার দিন ওর সাথে দেখা করতে গেলাম কালো রঙে নিজেকে রাঙিয়ে……
এবার আরর একা নয় সাথে আমার ছোট ভাইয়ে কে নিয়ে যায় ওইদিন……..
সেদিন মাহাদির মুখ থেকে শুনেছিলাম নির্জনে গায়রে মাহরাম এর সাথে কথা বলা ঠিক না তাই সাথে একটা মাহরাম নিয়েছিলাম……….
সাকিব আমায় দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল এবং বলল,
” তুমি এমন ভূত সেজে এসেছো কেন আর সাথে দেখছি ছোট ভাইটাকে ও নিয়ে এসেছো তুমি কি পাগল হয়ে গেছ হুম।”
“আপনার যা খুশি আপনি বলতে পারেন, আমার কিছু যাই আসেনা। আমার আল্লাহ প্রত্যেক মুসলিম রমনীর উপর পর্দা ফরয করেছেন, যে হুকুম না মানলে নিশ্চিত জাহান্নাম। এতদিন ধরে অনেক অন্যায় করেছি, এখন নিজের ভুল টা শুধরে নেওয়ার সময় এসেছে।”
” আচ্ছা তো আমায় দেখা করতে বললে যে। কারন টা কি?”
” কারন আমি আপনার সাথে আর কোন রিলেশন রাখবনা। প্রেম হারাম,রাসুল বলেছেন_
‘
” দু চোখের জিনা হলো দৃষ্টিপাত করা, দু কানের জিনা হলো হলো শ্রবণ করা,জিহ্বার জিনা কথোপকথন করা,হাতের জিনা স্পর্শ করা,পায়ের জিনা হল হেটে যাওয়া, অন্তরের জিনা হল আকাঙ্ক্ষা ও কামনা করা।আর গুপ্তাঙ্গ তা বাস্তবায়িত করে এবং মিথ্যা প্রতিপন্ন করে।
( সহিহ মুসলিম,কিতাবুল কদর বা তাকদীর অধ্যায়, বই_৩৩ হাদিস_৬৪)।
এই হাদিস টি দ্বারা বোঝা যাচ্ছে যে আমরা এতদিন জিনা করে এসেছি, আর এবার এই জিনা থেকে আমি মুক্তি চাই।
” মুক্তি চাইলেই কি মুক্তি পাওয়া যায়। তোমার যে অনেক ছবি আছে আমার কাছে। আমার সাথে রিলেশন না করলে দেখো তোমার কি হাল_ই না করি।”
” আপনি বোঝার চেষ্টা করুন প্লিজ, আমার পিক গুলা ডিলিট দিন, আমি আর এই হারাম সম্পর্ক রাখতেই চাইনা।”
এতদিন তোমার এই ভাষন গুলা কোথায় ছিল, যখন অনেক টা দিন পেরিয়ে গেছে আর তখন_ই তুমি আমাকে বলছো সব শেষ করে দিতে? অত সোজা নাকি সব কিছু।”
আমাদের কথা বলার মধ্যে হটাৎ ই দেখতে পেলাম আমাদের পাশের বাসার এক আন্টি ওই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে তাড়াতাড়ি সাকিব কে লুকাতে বলি।আনটি টা আমায় বলল,
” তুই তামান্না তাই না। তোকে তো চেনায় যায়না। একেবারে গেট আপ চেঞ্জ করে ফেললি যে।”
“হ্যা আনটি নিজের ভুল গুলা এবার শুধরানোর সময় এসেছে। ”
“তুই এখানে দাঁড়িয়ে কি করছিস? বাড়ি যাবিনা। চল একসাথেই যায় আমরা।”
আর কথা বলা হয়নি আমার সাকিবের সাথে। বড় দুশ্চিন্তা আমাকে ঘিরে ধরেছিল। না জানি আমার ছবি গুলা নিয়ে সাকিব কি করে? সেই চিন্তায় ঘুম আসছিল না। সাকিবের কাছে কথা না বলতে চাইলে সাকিব ফোন দিয়ে শুধু হুমকি দিত আমাকে। আমি আল্লাহর কাছে তাহাজ্জুদ নামাজে কেঁদে কেঁদে সাহায্য চাইতাম। মা আমার এই অন্যমনস্কতার কারন জিজ্ঞাস করলে শুধু মা’কে জড়িয়ে ধরে কাঁদতাম। কোন উত্তর দিতে পারতাম না। মিথ্যা বলা পাপ তাই মন গড়া কোন যুক্তি ও দিতে পারতাম না শুধুই কাঁদতাম।
নিজের করা ভুল গুলার জন্য আমি অত বড় ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছিলাম। বুঝতে পারিনি মেয়েরা ঝিনুকের মধ্যে থাকা মুক্তা। ভেবেছিলাম নিজের সৌন্দর্য প্রকাশ করতে পারলেই বোধ হয় নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পায়।
আবার ও পরের সোমবার সাকিব আমায় দেখা করতে বলে, আর বলে যদি দেখা না করি তাহলে আমার ছবিনিয়ে কিছু একটা করবে! আবার ও ছোট ভাই মাফুজ কে নিয়ে আমি ওর সাথে দেখা করতে যায়। আর এবার ও আমাকে বলে ওর সাথে পালিয়ে যেতে, যদি না যায় তাহলে নাকি আমার মা বাবার কাছে আমার ছবি দেখাবে। আমি খুব ভয় পেয়ে যায়। তাছাড়া আমি জানতাম আমাদের এই রিলেশন কেউ মেনে নিবেনা, দ্বীনের জ্ঞান হওয়ার পর থেকে তো সাকিন কেও আমি মেনে নিতে পারিনি। কি করব বুঝে উঠতে পারছিলাম না শুধু কেঁদেই যাচ্ছিলাম। আল্লাহ কে ডাকছিলাম। অবশেষে আল্লাহর সাহায্য এসে যায়। একটা বুদ্ধি আসে মাথায়। ওকে বলি,
“আপনি মিথ্যা বলছেন, আমার পিক আপনার কাছে নেই।”
কথাটা বলার সাথে সাথেই সাকিব ওর ফোনটা আমার হাতে দিয়ে বলে
“দেখো তো এগুলা কি তোমার ছবি না? ”
প্লিজ! পিক গুলা ডিলিট দিন। আমি আল্লাহরর পথে চলতে চাই, আমায় বাঁধা দিবেন না প্লিজ!
সাকিব তো সমানে আমায় হুমকি দিতেই থাকে। আমি সেই সুযোগে ওর ফোন টাই রিসেট দিয়ে দিই।ও বুঝতে পেরে ফোন টা আমার হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ঘাটতে থাকে।সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমি আমার ভাই মাফুজ কে নিয়ে একটা গাছের আড়ালে লুকিয়ে পড়ি। সাকিব বোধ হয় ভেবেছিল আমরা দৌড় দিয়েছি তাই সাকিব ও সামনের রাস্তার দিকে দৌড় দেয়।
তারপর থেকে শুরু হয়ে যায় আমার দ্বীনের পথে চলার গল্প। কিন্তু এক বারেই যে সবকিছু হয়না তা আর বুঝতে বাকি রইলনা আমার। আবার ও শয়তান আমায় ধোকায় ফেলে। আর এবার যে ধোকায় পড়েছিলাম, তাকে বলে নেক সুরতে শয়তানের ভন্ডামি।
চলবে????