রাগি বউ,পর্ব_১
শামিয়া খানম জিনিয়া ✍️🌺
সকাল হতে না হতেই চমকে উঠি। দেখি আমার ঘরে এন্ড্রোয়েড ফোন। এই ফোনের জন্য এতদিন ধরে অপেক্ষায় ছিলাম। বাবা এসে বললেন,
“এস.এস.সি পরিক্ষায় GPA-5 পাওয়ার জন্য এইটা তোর উপহার।”
“ওহ! বাবা থ্যাংকস। ”
এস.এস.সি পরিক্ষা দিয়েছি সুতরাং সামনে এখন অবসর আর অবসর। কি যে করি এই ফ্রি টাইমে? তাই ভাইয়ার কাছ থেকে ফেসবুক আইডি খুলে নিলাম। যেহেতু প্রথমবার এন্ড্রোয়েড ফোন হাতে করেছি এজন্য ফোন সম্পর্কে তেমন ধারনা নেই বললেই চলে।
ফেসবুক বলতে আমি শুধু এটাই বুঝি নাম এবং ছবি আপলোড করা। মোটামুটি নামাজ পড়ি, মাথায় কাপড় ও দিয়ে চলি কিন্তু সেইভাবে পর্দা করা হয়ে উঠেনা।
মাথায় হিজাব পেচানো একটা পিক দিয়ে দিলাম এফবিতে সাথে রিয়েল নাম টা ও দিয়ে দিলাম।
১ম ১ম ৪/৫ টা লাইক আসতে লাগলো, মন টা একটু খারাপ হয়ে গেল।
সেই মুহুর্তে মিম কে ফোন দিয়ে বললাম__
“এই মিম তোরা যে সবাই বলিস আমি নাকি খুব সুন্দরি, তাহলে সেটা কি মিথ্যা ছিল?”
” এই তামান্না তোর কি হয়েছে বলতো, এমন ধরনের প্রশ্ন তুই তো কোন দিন ও করিস না।”
“তা কি করব, এফবিতে পিক ছাড়লাম কিন্তু কোন লাইক ই আসেনা।”
” ও আচ্ছা এই ব্যাপার। তা এতই যখন লাইক নেওয়ার ইচ্ছা তাহলে ফ্রেন্ড বাড়া।”
মিমের কথায় এফবিতে ফ্রেন্ড বাড়ানো শুরু করি। একপর্যায়ে এমন হল যে, ফেসবুকে লাইক এর পরে লাইক আসতে শুরু করল।
সেখান থেকে ফেসবুকে ছবি দেওয়ার নেশা আরো বেড়ে যেতে লাগল………
হটাৎ ই নজরে পড়ে যায় সাকিবের আইডির দিকে। সাকিব আমার হারিয়ে যাওয়া সেই ভালবাসার মানুষ টি। আমি জানতাম প্রেম করা হারাম। এজন্য নিজে থেকেই ওর সাথে ব্রেক আপ করে দিই। কিন্তু আবার ও শয়তানের ধোকায় পড়ে সাকিব কে মেসেজ দিয়ে ফেলি। সাকিব ও আমার এস এম এস এর রিপ্লে দেয়। আবার ও হারাম রিলেশনে জড়িয়ে পড়ি ইসলামের প্রতি পুরাপুরি জ্ঞান না থাকার কারনে……….
এদিকে নতুন কলেজে ভর্তি হলাম। সাকিবের সাথে দেখা করার সুযোগ টা ও বেড়ে গেল। প্রতিদিন ওর সাথে দেখা করতাম।কিন্তু যখন নামাজ পড়তাম তখন শান্তি পেতাম না। এভাবেই চলছিল এলোমেলো জীবনের গল্প। যে জীবনের কোন লক্ষ্য উদ্দেশ্য কিছুই ছিলনা………..
কলেজে গিয়ে মাহাদি নামের একটা ছেলের প্রতি আমার দুর্বলতা বেড়ে গিয়েছিল। এত সুন্দর কুর আন তিলওয়াত করত ছেলেটা, কখন ও গান শুনিনি তার মুখে। চেহারা টা ও ছিল অসাধারণ। মাঝে মাঝে ভাবতাম এত্ত সুন্দর চেহারা তে দাড়ি রাখলে মানায় না। ছেলেটা কখন ও মেয়েদের সাথে মিশতোনা। ভাবতাম চেহারা সুন্দর এজন্য হয়ত মুড নিয়ে চলে……….
বাড়িতে এসে ওর নাম টা সার্চ দিই। সত্যি সত্যিই মাহাদির আইডি টা পেয়ে যায়। ওর কোন পিক দেওয়া ছিলনা ওর বায়োডাটা দেখেই বুঝেছিলাম এই সেই মাহাদি। মাহাদিকে দেখার পর থেকে যেন সাকিবের সাথে কথা বলতে মন ই চাইতনা।
মাহাদির আইডিতে গিয়ে দেখি অনেক ইসলামিক পোস্ট দেওয়া। ওকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠায়, কিন্তু দিনের পরে দিন চলে যায়, ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট ঝুলতেই থাকে। রাগে মাথায় আগুন উঠে গেল। ভাবছিলাম যে তামান্নার ফেসবুকে এত ফলোয়ার সেই তামান্নাকে একটা সামান্য ছেলে ইগনোর করছে………..!!!
না পেরে মাহাদিকে মেসেজ দিয়ে বলি এই নিজেকে কি মনে করেন কি আপ্নি? বড় সুন্দর ভাবেন তাইনা। আপনি জানেন ফেসবুকে আমার কত ফলোয়ার। আর আপনি কিনা আমার রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করছেন না।
“আসসালামু আলাইকুম…”
সালামের উত্তর না দিয়ে আমি আবার ও বকবক করতে শুরু করি। ও আমাকে বলল,
“বোন সালামের জবাব দেওয়া ওয়াজিব।”
একটু বিরক্তিকর ভাব নিয়ে সালামের উত্তর দিয়ে বললাম,
” ভাইয়া রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করলে কিই বা হতো?
“বোন ইসলামে গায়রে মাহরাম মেইন্টেন করতে বলা হয়ছে। যখন কোন গায়রে মাহরাম ছেলে মেয়ে নির্জনতা অবলম্বন করে তাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হয় শয়তান। আর নারীদের পর্দায় থাকতে বলা হয়েছে। এভাবে মাথায় হিকাব পেঁচানোর নাম পর্দা নয়।
পর্দা তো এমন ই জিনিস যা কিনা নারীর সৌন্দর্য কে আড়াল করে রাখে।”
“ওহ! প্লিজ থামুন আপনার কাছ থেকে এখন আমায় জ্ঞান নিতে হবে? যত্তসব!”
” আমার কথা এখন ও শেষ হয়নি। আচ্ছা ভাবুন তো একটা পিকের জন্য জাহান্নাম জোগাড় করার কি কোন মানে হয়? আপনি যে লিখে রেখেছেন In a relationship কিন্তু আপনি কি জানেন না ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম হারাম।
হাদিসে আছে___
‘কোনো পুরুষ কোন নারীর সাথে নির্জনে একত্রে মিলিত হলে তাদের মধ্যে তৃতীয় ব্যক্তি হয় শয়তান।
(মিশকাত, ইবনে মাজাহ, তিরমিযী হাঃ২১৬৫)।’
হাদিসে আরো আছে_
‘ইসলামে বিয়ের পুর্বে প্রেম ভালোবাসা হারাম।
(মুসলিম ২/৩৩৬)।
কেন জানিনা সেদিন মাহাদির কথাগুলা শুনে ফেসবুক থেক সব পিক গুলা ডিলিট করে দিয়েছিলাম। মনের মধ্যে এক অদ্ভুত ভয় কাজ করছিলো। মৃত্যুর চিন্তা বারেবারে আমায় ভাবনায় ফেলছিল। শুধু ভাবছিলাম যদি এই ছবি ডিলিট করার আগেই মারা যেতাম? তাহলে!
ভেবে নিয়েছিলাম, সাকিবের সাথে একটা দিন দেখা করে ওকে প্রভুর সতর্কবাণী সম্পর্কে জানাবো আর ওর সাথে ব্রেক আপ করে দিব! কিন্তু ভাবতে ও পারিনি সব কিছু এভাবে উলটে পালটে যাবে।
যেই মুহুর্তে নিজেকে বদলে ফেলতে চেয়েছিলাম আর ঠিক সেই মুহুর্তে সাকিবের ওই ভালোবাসা অর্থ্যাৎ শয়তানের ধোকা আমায় এত বড় বিপদে ফেলবে।
__________
চলবে????