রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,০৮,০৯

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,০৮,০৯
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(৮)

সূর্যের একটুকরো আলোর ছটা নোহানের মুখে এসে পড়তেই নোহানের ঘুমটা ভেঙে গেলো। নিজেকে নিজের বিছানায় দেখে একটু অবাক হলো,কাল তো সুহানির উপরে রাগ করে বারে চলে গিয়েছিলো। এই ঘরে কে নিয়ে আসলো সুহানি?

সুহানির নাম নিতেই সুহানি হাজির, এককাপ কফি নিয়ে নোহানের ঘরে আসলো। নোহান সুহানির দিকে তাকালো,মেয়েটাকে আজকে অন্যরকম লাগছে, মনে হচ্ছে প্রানহীন কোনো মানুষ। কি হয়েছে ওর, অজানা ভয়ে বুকটা কেঁপে উঠলো নোহানের।

সুহানি কফির মগটা এগিয়ে দিয়ে বললোঃ আজকে আমি কিছু প্রশ্ন করবো তার উত্তর দেবেন প্লিজ।

নোহান সুহানির দিকে তাকালো,চোখটা ছল ছল করছে যেকোনো সময় পানি গড়িয়ে পড়তে পারে। চোখে একরাশ কাকুতি মিনতি।

সুহানি নোহানের দিকে তাকিয়ে বললোঃ দিয়া কোথায়?

সুহানির মুখে সকাল বেলাতেই দিয়ার নামটা শুনে রাগটা বাড়তে লাগলো নোহানের‌। গম্ভীর স্বরে বললোঃ তোমাকে বলেছি না দিয়ার নাম উচ্চারন করবে না।

সুহানির চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়লো। নোহানের দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকিয়ে বললোঃ কি অপরাধ আমার,আমি কি করেছি যার জন্য আমার প্রিয় বান্ধবীর মৃ’ত্যু’র খবরটি পর্যন্ত আমি পাইনি।

নোহান সুহানির দিকে চমকে উঠে তাকিয়ে বললোঃ তুমি।

সুহানিঃ কালকে মদের নেশায় আপনি বলেছিলেন।

নোহান রাগে নিজের মাথার চুল টানতে লাগলো। নেশার ঘোরে দিয়ার মৃ’ত্যু’র খবরটা বলে দিয়েছে সুহানি কে।

সুহানিঃ বলুন সত্যিটা কি করেছি আমি।

নোহানঃ কি করেছো আবার জানতে চাইছো, শুধুমাত্র তোমার কারনে আমার দিয়া আজকে আমার কাছে নেয় আমি একা হয়ে গেছি।

সুহানিঃ আমি কি করেছি,আর কিসব বলছেন আপনি। দিয়ার কোনো ক্ষতি করা তো দূরের কথা সেটা কখনো ভাবতেও পারিনা আমি।আর কেনই বা আমি দিয়াকে মা’র’বো।

নোহানঃ এই কারনটাই খুঁজে বেরাচ্ছি।আর যেদিন পেয়ে যাবো। সেদিনই তোমার শে’ষ দিন হবে।।

নোহান ঘর থেকে চলে যায়। সুহানি কান্নায় ভেংগে পড়লো। এখন ওর কাছে সবটা পরিস্কার। নোহান ভাবছে দিয়ার মৃ’ত্যু’র পেছনে ওর হাত আছে‌। সেই জন্য ওর জীবনটা শেষ করবে বলে ওকে তিলে তিলে শেষ করবে বলে বিয়ে করে এনেছে। কিন্তু নোহানকে বোঝাবে কি করে দিয়ার কোনো ক্ষতিই কোনো দিন ওহ তাই নি। আর সেখানে ওর প্রান নেবে কিভাবে। যে করেই হোক সবকিছু নোহানের সামনে প্রকাশ করতে হবে। এই মিথ্যা বেড়াজাল থেকে বের হতেই হবে ওকে।

নোহান সুহানির কাছ থেকে চলে গিয়ে বাগানে চলে যায়, অশ্রুসিক্ত নয়নে সামনের দিকে তাকিয়ে আগের কথা ভাবতে থাকে…

সেদিন ছিলো শুক্রবার। দিয়া কোনো একটা কারনে ফার্মহাউজে গিয়েছিলো কারনটা এখনো পর্যন্ত নোহান জানে না জানলে হয়তো দিয়া আজকে ওর সাথে থাকতো। নোহান বিজনেস মিটিং এ ব্যস্ত ছিলো দিয়ার নাম্বার থেকে কল আসতে দেখে অনেকটাই অবাক হয়ে।ফোনটা রিসিভ করে দিয়ার গলার আওয়াজ শুনে ওর আত্মা কেঁপে উঠলো।

নোহানঃ দিয়া তুমি ঠিক আছে তো।

দিয়া কাঁপা কাঁপা গলায় বললঃ নোহান আমার হাতে বেশি সময় নেয় তুমি আমার কথাটা শোনো।

নোহানঃ কি সব বলছো তুমি,তুমি কোথায়।

দিয়াঃ আমি ফার্ম হাউসে।

নোহানঃ আমি এক্ষুনি আসছি।

নোহান তাড়াতাড়ি করে বের হয়ে ফার্ম হাউসে পৌঁছায়। সেখানে গিয়ে দিয়াকে দেখে বুকটা কেঁপে উঠলো। দিয়া র”ক্তা”ত্ব হয়ে মেঝেতে কাতরাচ্ছে। পেটের একপাশে ছুড়ির চিহ্ন।

নোহান চিৎকার করে উঠলোঃ দিয়া।

দৌড়ে গিয়ে দিয়ার মাথাটা নিজের কোলে তুলে নেয়।

নোহানঃ কি হয়েছে তোমার বলো আমাকে।

দিয়াঃ আমাদের আর একসাথে থাকা হলো না।‌ আমি আমার কথা রাখতে পারলাম না।‌আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাচ্ছি নোহান।

নোহানঃ এসব কিভাবে হলো বলো আমাকে। কে করেছে এসব।

দিয়া আটকে আটকে বললোঃ সুহা

নোহান অবাক হয়ে বললোঃ সুহা,এসব করেছে।

দিয়া আরো কিছু বলার চেষ্টা করছিলো কিন্তু কিছুই বলতে পারেনি তার আগেই ওর প্রানপাখিটা উড়ে যায়। নোহান কান্নায় ভেংগে পড়লো। দিয়ার হাতটাকে নিজের হাতের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললোঃ তোমাকে কথা দিচ্ছি তোমার মৃত্যুর প্রতিশোধ আমি ওর কাছ থেকে তিলে তিলে শোধ করবো।

হ্যা নোহান দিয়ার মৃত্যুর প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে আর সুহানিকেও জ্বালাচ্ছে এই এই ম’র’ণ খেলার পরিনতি কেই জানে না।

পরেরদিন অফিসে….

সুহানি আজকে অফিসে এসেছে। নোহান ওহ এসেছে কিন্তু কাল সকালের ঘটনার পর দুজন দুজনের সাথে কথা বলেনি।

সুহানি হাতে ফাইল দেখতে দেখতে হাটচ্ছিলো। হঠাৎ কারোর সাথে ধাক্কা লাগে আর হাতের ফাইলটা পড়ে যায়।নোহান নিজের কেবিন থেকে বের হতেই এই ঘটনা দেখতে পেলো।সুহানির সাথে ধাক্কা লাগা মানুষটার দিকে তাকিয়ে সুহানিকে একটা ধমক দিয়ে বললোঃ সরি আঙ্কেল। এই দেখে চলতে পারো না। সরি বলো্ ওনাকে।

স্যারঃ নোহান সুহানিকে কিছু বলো না। আমারই দোষ।

নোহানঃ আঙ্কেল ভেতরে আসুন।

নোহান ওনাকে নিয়ে চলে গেলো কেবিনে। উনি সুহানিদের কলেজের প্রফেসর।

নোহানঃ আঙ্কেল আমাকে বলতে পারতেন আমি চলে যেতাম।

স্যারঃ তুমি ব্যস্ত মানুষ তাই আমিই আসলাম আর আসলাম বলে একটা মানুষের সাথে দেখা হয়ে গেলো।

নোহান ভ্রু কুঁচকে বললোঃ কে?

স্যারঃ সুহানি।

নোহান অনেকটা অবাক হয়ে বললোঃ আপনি চেনেন ওকে।

স্যারঃ হুম।আর আমাদের কলেজে কে না চেনে ওকে। কলেজের সবথেকে বেশি নম্বরপ্রাপ্ত এখনো পর্যন্ত কেউ ওর বেশি নম্বর পাইনি।

নোহান চমকে উঠলো। কৌতুহল বশত হয়ে বললোঃ এত ভালো স্টুডেন্ট হওয়া সত্ত্বেও সেদিন অনুষ্ঠানে সিলেক্ট হলো না কেন?

স্যারঃ জানি না তবে আমার একটা সন্দেহ হয়

নোহানঃ কী?

স্যারঃ সুহানি ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের প্রোজেক্ট টা খারাপ করেছিলো। আর অদ্ভুত হলো সুহানির প্রোজেক্ট এর প্ল্যানের সাথে দিয়ার প্রোজেক্ট এর খুব মিল ছিল।

নোহানঃ আপনি কি মনে‌ করেন।

স্যারঃ আমার যতটা মনে হয় আর আমি যতটা সুহানি কে চিনি তাতে আমার মনে হয় দিয়ার প্রেজেন্ট করা প্রোজেক্ট টা সুহানির তৈরি।

নোহান অবাক হয়ে বললোঃ এটা কি বলছেন আপনি, ওটা যদি সত্যি সুহানির প্রোজেক্ট হয় তাহলে দিয়ার কাছে আসলো কিভাবে।

স্যার আলতো হেসে বললোঃ সুহানির প্রান ছিল দিয়া। দিয়ার জন্য ওহ সবকিছু করতে পারতো, দুজন দুজনের বন্ধু নয় বোন‌ ছিলো। দিয়ার একটা চাকরির দরকার ছিলো তাই হয়তো সুহানি এটা করেছে।

নোহানের মাথা ঘুরছে। ওনার কথা গুলো শুনে নোহানের মনে প্রশ্ন জাগছে সত্যি কি দিয়াকে সুহানিই মে”রে ছিল না অন্য কেউ। আর যদি সুহানিই এই কাজটা করে থাকে তার পেছনে কারনটা কি?

এরই মাঝে পিওন এসে,২কাপ চা দিয়ে গেলো। নোহান স্যারকে চা খেতে বললেন। যদিও নোহান একটু অবাক হয়েছে,কারন ওহ কিছুই আনতে বলেনি তার উপর চা এনেছে।

স্যার একটা চায়ের কাপ হাতে নিয়ে,এক চুমুক দিয়ে বললোঃ নোহান একটু সুহানিকে ডেকে দিতে বলো না।

নোহান তাই করলো। সুহানিকে দেখেই স্যার বললেনঃ কেমন আছিস মা।

সুহানিঃ হ্যা আঙ্কেল ভালোই আছি আপনি?

স‌্যারঃ আর আমি ভালো থাকবো কিভাবে আমার মা টা আমার একবারও খোঁজ নেয়নি।

সুহানিঃ কে বললো খোঁজ নেয়নি আমি ঠিকই খোঁজ নিই।

স্যারঃ তা আমি খুব ভালো করেই জানি।তোর বাড়িতে গিয়েছিলাম কিন্তু তোকে পাইনি। তোর বাবাকেও জিজ্ঞেস করলাম ওহ কিছুই বললো না। আমি ভাবতে পারিনি নোহানের অফিসে তোকে পেয়ে যাবো।তা কবে থেকে জয়েন করলি এখানে।

সুহানিঃ কিছুদিন আগেই।আগে আপনি বলুন আন্টি কেমন আছে,আর রাহাত এর খবর কি?

স্যারঃ তোর আন্টি তো ভালোই আছে। আর রাহাত কিছুদিন পরে দেশে আসবে।

সুহানিঃ ওহ,অনেকদিন পর আসবে তো‌

স্যারঃ‌ হুম,এবার হলে ওর বিয়েটা দিয়েই দেবো।

সুহানিঃ এটা তো খুব ভালো কথা। রাহাত জানে এই কথাটা।

স্যারঃ হুম জানে। আর ওর পছন্দ করা মেয়ের সাথেই বিয়েটা হবে।

সুহানিঃ কে সে?

স্যারঃ ওটা সারপ্রাইজ থাকুক।

সুহানি হেসে দিলো। স্যারের শেষ কথাটা নোহানের ঠিক ভালো লাগলো না।উনি আরো কিছুক্ষন কথা বলে চলে গেলেন।

নোহানঃ আঙ্কেলের সাথে এতটা পরিচিতি কিভাবে?

সুহানি হেসে বললোঃ আমি দিয়া আর রাহাত খুব ভালো বন্ধু ছিলাম। কিন্তু রাহাত পড়াশোনার জন্য দেশের বাইরে চলে যায় অনেকদিন আগে।

নোহান ভ্রু কুঁচকে তাকালো সুহানির দিকে।

#চলবে…

#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু

(৯)

সময়ের সাথে নোহানের মাঝে পরির্বতন আসে। নোহান যতবার সুহানিকে কষ্ট দিতে যায় ততবারই মনে একটা করে প্রশ্ন‌ এসে জমা হয়। দিয়ার শেষ বলা কথাটা “সুহা” ছিলো, নোহানের কথার উত্তরের কথাটাও সুহা ছিলো। স্বাভাবিক ভাবেই নোহানের মনে হয়েছে দিয়ার খু”নি সুহানিই। কিন্তু কেন এখন সেটা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছে সেটাই বুঝে উঠতে পারছে না।

সুহানিও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে দিয়ার মৃ”ত্যু রহস্য উদঘাটন করার। কিন্তু কোনোকিছুই খুঁজে পাচ্ছে না। কে দিয়াকে মা”র”তে পারে সেটাই বুঝতে পারছে না। দিয়ার কোনো শত্রু ছিলো বলো সুহানির জানা ছিলো না‌। তাহলে কেন দিয়াকে এভাবে প্রান হারাতে হয়েছে। তার উত্তরটা এখনো পুরোটাই রহস্যাভৃত।

নোহান সুহানির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছে। মাঝে কেটে গেছে আরো একটা মাস। নোহানের নিরবতা সুহানিকে আরো কষ্ট দিচ্ছে। বিনা কারনে,বিনা দোষে দোষী হয়ে আছে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না সুহানি।

সুহানি রোজকার দিনের মতোই অফিসে যাবে বের হয়েছে। এমন সময় পেছন থেকে একটা গাড়ি এসে খুব জোরে ধাক্কা মারলো। সুহানি মুখ থুবড়ে পড়ে গেলো রাস্তায়। র’ক্ত গড়িয়ে পড়ছে, সুহানির চোখটা আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে আসছে। সুহানির মনে হচ্ছে ওর প্রান পাখিটা আর বেশিক্ষন নেয়,এখনি মনে হয় প্রানটা উড়ে চলে যাবে। নিভু নিভু চোখে দেখতে পেলো,কেউ একজন ওকে জড়িয়ে ধরে পাগলামি করছে। তাকে স্পর্শ করার আগেই ও অজ্ঞান হয়ে গেলো।

অন্যদিকে..

কেউ একজন অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো।

– বলেছিলাম না সুহানি শিকদার। আমার পথে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে আসলে অ’কা’লে ঝরে যেতে হবে,দিয়া শিকদারের মতো। দিয়া তো ম’রে’ই গেছে তোমাকেও যে ম’র’তে হতো। নাহলে আমার সব প্ল্যানটা শেষ হয়ে যেতো। একবার যদি সবকিছু তোমার হাতে চলে আসে তো তাহলে আমি যে বড্ড বিপদে পড়ে যাবো। তাই তোমাকেও চলে যেতে হলো। দুই বান্ধবী উপরে গিয়ে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করো।

আবারো হাসিতে ফেটে পড়লো। সত্যি না মিথ্যা।কিসের হবে জয়। ষড়যন্ত্র না সত্য কোনটা জিতে যাবে।সুহানিও কি চলে যাবে দিয়ার কাছে। জিতে যাবে কি ওই ষড়যন্ত্রকারী।

নোহান হসপিটালের ও.টির সামনে বসে আছে। আজ এলোমেলো লাগছে নোহানকে ৩ মাস আগে এই একিরকম ভাবে দিয়াকে র’ক্তা’ক্ত ভাবে দেখেছিলো। দিয়াকে বাঁ’চা’তে পারেনি এবারেও কি সুহানিকেও পারবে না। নোহানের কোনো কিছুই ভালো লাগছে না। সুহানির অপারেশন চলছে।

নোহানের কাঁধে কেউ একজন হাত রাখলো। নোহান পেছনে ফিরে তাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। ছেলেদের নাকি কাঁদতে নেয়, কিন্তু ছেলেরাও তো মানুষ তাদেরও তো প্রান আছে‌,তাদেরও তো মন আছে। কাছের মানুষকে হারানোর কষ্ট আছে,বুকে একরাশ বেদনা আছে,যন্ত্রনা আছে আর এই সবকিছুই প্রকাশিত হতে পারে কান্নার মাধ্যমে। কান্না করা ভালো সেটা ছেলে হোক বা মেয়ে। বিশেষ করে ছেলেরা তারা কাঁদতে না পেরে আরো গম্ভীর হয়ে পড়ে এটা ক্ষতিকর।

নোহান কাঁদতে কাঁদতে বললোঃ দিদিয়া আমার সাথেই এরকম কেন হয় আমি কি করেছি। আমার ভাগ্যটা এতটা খারাপ কেন। আমার কাছে যেই থাকে তারই ক্ষতি হয়ে যায় কেন বল না।

নোহাঃ ভাই শান্ত হ। দ্যাখ এখানে তোর কোনো দোষ নেয়। এখানে তোর কি হাত আছে বল।

নোহানঃ হ্যা সবকিছুই আমার দোষ আমিই খারাপ। নাহলে দ্যাখ প্রথমে বাবা-মা,তারপরে দিয়া আর তারপরে সুহানি আমার জন্য বিপদে পড়ে গেছে।‌আমিই খারাপ আমারই সব দোষ।

নোহাঃ ভাই নিজেকে সামলা। দ্যাখ বাবা মায়ের সাথে যেটা হয়েছে ওটা একটা অ্যাক্সিডেন্ট। আর দিয়ারটা খু’ন।‌আর সুহানির টাও অ্যাক্সিডেন্ট তাহলে এখানে তোর হাত থাকলো কিভাবে?

নোহানঃ সবকিছু আমার জন্যই হচ্ছে। আমি জানি।

নোহাঃ চুপ একদম চুপ। ডক্টর আসছেন দাঁড়া কথা বলি।

নোহা এগিয়ে গিয়ে জিজ্ঞেস করলোঃ ডক্টর সুহানি কেমন আছে।

ডক্টরঃ অবস্থা খুবই গুরুতর। ৪৮ ঘন্টা না কাটা পর্যন্ত কিছুই বলা যাবে না।

ডক্টর চলে গেলো। নোহা নোহানের কাছে গিয়ে বললোঃ ভাই এবার বল তো কি হয়েছে। আর সুহানিকে ই বা তুই কোথায় পেলি।

নোহানঃ সুহানি অফিসে আসছিলো আর আমি ওর পেছনেই গাড়িতে ছিলাম হঠাৎ দেখলাম একটা গাড়ি দ্রুত এসে সুহানিকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো। সুহানি র’ক্তা’ক্ত হয়ে রাস্তায় পড়ে গেলো।‌আর আমি এসব দেখেও কিছূই করতে পারলাম না।

নোহান নিজের হাত দিয়ে চুলগুলো কে টানতে লাগলো।

নোহাঃ ভাই বুঝলাম না।‌সুহানির পেছনে ছিলি কেন?

নোহানঃ দিদিয়া তোকে বলা হয়নি আমি সুহানি কে বিয়ে করেছি।

নোহা চমকে উঠলো। নোহান সুহানিকে বিয়ে করেছে,এসবের কিছুই জানে না।

নোহাঃ ভাই এসব কি বলছিস তুই?

নোহানঃ‌দিদিয়া তোকে পড়ে সবটা বলবো কিন্তু এখন একটু চুপ করে থাক।

৩দিন পর….

নোহাকে নোহান সবটা বলে দিয়েছে।

নোহাঃ ভাই এটা কিন্তু তোর ঠিক হয়নি।‌তুই কিছু না জেনে সুহানিকে বিয়ে করে নিলি কেন,একবার ভাবলি না কোনটা সঠিক আর কোনটা ভুল।

নোহানঃ দিদিয়া আমি তখন ওই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে কি করবো কখনোই বুঝে উঠতে পারিনি। আমি সুহানির উপর রেখে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রতিশোধের আগুনে দগ্ধ হয়ে ওর জীবনটা নরক বানাতে উদ্ধৃত হয়েছিলাম।‌তবে সুহানি কোনো না কোনো ভাবেই এই ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত তার শাস্তি ওহ পাবেই । আমার দিয়ার মৃ’ত্যু’র প্রতিশোধ আমি নেবোই।

নোহান গটগট করে চলে গেলো। নোহা ওর ভাইয়ের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। কোন অজানা যুদ্ধে যেতে উঠেছে সবাই কেউ জানে না।

হসপিটালে..

৪৮ঘন্টার আগেই সুহানির জ্ঞান ফিরে আসে। আজকে নোহান সুহানিকে বাড়িতে নিয়ে যাবে,ডক্টর বলেছিলেন কিছুদিন রাখার জন্য কিন্তু নোহান রাজি নয়।

সুহানিকে নোহান কোলে করে ঘরে নিয়ে আসলো। সুহানি পুরোটা সময় নোহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো। ওহ ভালো করেই এই দুদিন মানুষটাকে দেখেছে কিভাবে অস্থির হয়ে উঠেছিলো। সুহানি এটাও জানে এটা ওর জন্য নয় দিয়ার মৃ’ত্যু’র প্রভাবেই এরকম করছিলো নোহান।

নোহান সুহানিকে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে বললোঃ আমি তোমার খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

সুহানিঃ খাবো না আমি

নোহানঃ তোমাকে জিজ্ঞেস করিনি আমি।

সুহানিঃ আমিও আপনাকে আমাকে বাঁচাতে বলিনি।‌কেন বাঁচালেন আমাকে এই নরক যন্ত্রনার থেকে মৃ”ত্যু টাই ভালো ছিলো।

নোহান সুহানির কাছে গিয়ে বললোঃ তোমাকে এত সহজে ম’র’তে দিচ্ছি না আমি,তোমাকে তিলে তিলে শে’ষ করবো। শারিরীক যন্ত্রনা না মানসিক যন্ত্রনায় তোমাকে শে’ষ করবো মিসেস নোহান শিকদার।

নোহান চলে যায়। সুহানি হাসলো, আর কিছুই তো শেষ হবার নেয় যা হবার হয়েই গেছে। নিজের বোন তূল্য বান্ধবীর খু’নী হিসাবে তার দিকে আঙুল উঠেছে। সে কি পারবে কখনোই এই আঙ্গুলটাকে নিজের দিক থেকে সরাতে নাকি সারাজীবন মিথ্যা টাকে বয়ে বেড়াতে হবে।

অন্যদিকে…

– তাহলে আমার ধারনা এতদিন ভুল ছিলো। সুহানি কিছুই জানে না এখনো পর্যন্ত। এবারেই তো আসবে মজা। কাঁটা দিয়ে কিভাবে কাঁটা তুলতে হয় এবার দেখবে তোমরা। সুহানি তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে নাও,তুমি না সুস্থ হলছ মজা হবে কিভাবে। কিভাবে আসল খেলাটা জমবে।‌ সুহানি তুমি আর নোহান কখনোই আমার তৈরি করা জ্বাল থেকে বের হতে পারবে না।‌ হা হা হা হা হা।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here