#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি,০৪,০৫
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
(৪)
সুহানি অবাক হয়ে বললোঃ এইগুলো আপনি কোথায় পেলেন।
নোহানঃ ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখলে যে কেউ ভাবে।
সুহানিঃ আপনি আমাকে এইগুলো দিন।
নোহানঃ না,আগে উত্তর গুলো দাও।
সুহানিঃ কি উত্তর।
নোহানঃ এই ডিজাইন গুলো তুমি করেছো।
সুহানি মুখ বাঁকিয়ে বললোঃ এই বাড়িতে আপনি আর আমি ছাড়া কেউ নেয়। আর আপনি এইগুলো আমার ঘর থেকে পেয়েছেন তারমানে কি দাঁড়ালো এইগুলো আমার করা ডিজাইন তাই না।
নোহানঃ ওহ।
সুহানি নোহানের কাছ থেকে ডিজাইন গুলো নিয়ে চলে যায়। নোহান সুহানির বসের কথা ভাবতে লাগলো সে বলেছিলো সুহানি খুব ভালো একজন ডিজাইনার। সত্যি যদি সুহানি ভালো ডিজাইন করে,আর এইগুলো যদি ওর করা হয় তাহলে সেদিন অনুষ্ঠানে সুহানি সিলেক্টেড হলো না কেন?নোহানের মনে সন্দেহের দানা বাঁধতে শুরু করলো। আগে থেকেই কি সুহানি এত সুন্দর ডিজাইন করতো না নতুন লিখেছে। কিন্তু ডিজাইন গুলো দেখে মনে হচ্ছে অভিজ্ঞ হাত।
নোহানের মনে পড়ে আগের কথা। যেদিন প্রথম দিয়ার সাথে দেখা। অসম্ভব সুন্দর একটা প্রোজেক্ট সবার সামনে তুলে ধরেছিলো। নোহান দিয়ার কাজের প্রতি মুগ্ধ হয়েছিলো। আর সেই কাজের মুগ্ধতাটাই আসতে আসতে দিয়ার প্রতি ভালোবাসায় রূপ নিলো। কিন্তু একটা ঘটনা গোটা জীবনটাকে এলোমেলো করে দিলো।
নোহানের কিছু একটা মনে পড়ায় চোখ মুখ লাল বর্ন ধারন করলো। রাগে গজগজ করতে করতে বললোঃ ছাড়বো না তোমাকে আমি।
কোন অদৃশ্য প্রতিশোধের খেলায় মেতে উঠেছে নোহান শিকদার। আর এই খেলার পরিনতিই বা কি হবে,সেটা কেউ জানে না।
২দিন পর…
নোহান বাড়ির সব কাজ সুহানিকে দিয়ে করিয়েছে। সুহানি ও কোনো প্রতিবাদ করেনি চুপচাপ করে গেছে। সুহানি একা হয়ে গেছে,সারাদিন চুপ করে থাকে, আগের মতো হাসিখুশি আর নেয়।বাবা মায়ের সাথেও যোগাযোগ করতে নেয়নি নোহান। নোহান সুহানির সাথে কথা বলে না বললেই চলে, প্রয়োজনে একটা আধটা কথা বলে। সুহানি বসে আছে সোফায় নোহান সোফায় বসে বললো।
নোহানঃ সুহানি একটা কথা ছিলো।
সুহানিঃ কি
নোহানঃ তোমার জন্য একটা কাজ আছে,আমার কোম্পানিতে।
সুহানিঃ কি কাজ।
নোহানঃ আমার কোম্পানিতে ডিজাইনার হিসাবে জয়েন করবে।
সুহানি নোহানের এমন কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লো। নোহান ওকে এরকম একটা প্রস্তাব দেবে সেটা ভাবতেই পারে নি। এই নোহানের মাথায় আবার কি ঘুরছে উপর ওয়ালা ভালো জানেন।
নোহানঃ কি হলো বলো।
সুহানিঃ আপনার মাথায় কি ঘুরছেন বলুন তো,হুট করে আবার কাজে জয়েন করতে বলছেন।
নোহান কপাট রাগ নিয়ে বললোঃ কারোর ভালো করতেই নেয়।
সুহানি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললঃ আপনি আর আমার ভালো দুটো কথা একসাথে কখনোই যায়না। আপনি আমার ভালো চান না সেটা আমি ভালো করেই জানি ।
নোহান সুহানির হাতটা ধরে নিজের কাছে টেনে নিয়ে বললোঃ হ্যা সত্যি আমি তোমার ভালো চাইনা,আর কাজটা তোমাকে করতেই হবে।
সুহানিঃ জোড় করে করাবেন।
নোহানঃ না তোমাকে একটা অফার দিয়েছিলাম ,নিজের সময় কাটানোর জন্য সেটা না নিতে চাইলে নিতে হবে না।
সুহানি কিছু একটা ভেবে বললোঃ আচ্ছা আমি জবটা করবো।
নোহানের মুখে হাসি ফুটে উঠল।
পরেরদিন..
সুহানি রেডি হয়ে আসতেই নোহান বললোঃ ট্যাক্সি নিয়ে চলে যাও।আর হ্যা ঠিক টাইমের মধ্যে পৌঁছাবে,নাহলে শাস্তি পাবে,আর অন্য কোথাও যাবার প্ল্যান করবে না মনে থাকে যেন সবগুলো কথা।
নোহান কথাগুলো বলে চলে যায়,সুহানি রাগে ফোঁস ফোঁস করে উঠে, কিন্তু কিছু করার নেয়। সবকিছু না জানা পর্যন্ত ওকে যে এসব সহ্য করতেই হবে।
সুহানি বাইরে ট্যাক্সির জন্য দাঁড়িয়ে থাকে। গরমের মধ্যে মুখটা লাল হয়ে আছে।রাগে গজগজ করতে,যদি পারে নোহানকে চিবিয়ে খাবে।
সময় ৯:৫৮…
সুহানি একপ্রকার দৌড়ে অফিসে প্রবেশ করলো।রিসেপশনে গিয়ে বললোঃ নোহান শিকদারের কেবিনটা কোথায়।
রিসেপশনে থাকা মেয়েটা সুহানির দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে,যেন ভূত দেখেছে।
সুহানিঃ কি হলো বলুন।
মেয়েটাঃ ওদিকে, কিন্তু আপনি যেতে পারবেন না স্যারের পারমিশন ছাড়া।
সুহানি মেকি হাসি দিয়ে বললঃ আপনাদের স্যার জানে আমি আসবো।
মেয়েটাঃ তবু ম্যাম একবার স্যারকে জিজ্ঞাসা করে নিই, একটু ওয়েট করুন।
মেয়েটা নোহানকে কল করলোঃ স্যার।
নোহানঃ হ্যা বলো।
মেয়েটাঃআপনার সাথে একটা মেয়ে দেখা করতে চাইছে।
নোহানঃ কি নাম বলুন।
মেয়েটাঃ ম্যাম আপনার নাম কি?
সুহানিঃ সুহানি।
মেয়েটাঃস্যার সুহানি।
নোহান বাঁকা হেসে বললঃ ওকে,ওনাকে ওয়েটিং রুমে ওয়েট করতে বলুন।আমি পড়ে ডেকে নেবো।
মেয়েটাঃ ওকে স্যার
মেয়েটা ফোনটা কেটে দিয়ে সুহানি কে বললোঃ ম্যাম স্যার আপনাকে অপেক্ষা করতে বললো।
সুহানি এমন করে তাকালো যেন মেয়েটাকে কাঁচা গিলে খাবে। ওহ ভালো করেই বুঝতে পারছে নোহান ইচ্ছা করে এসব করছে। সুহানি অপেক্ষা করতে লাগলো আর নোহান ল্যাপটপে বসে ওকে দেখতে লাগলো।
নোহান মনে মনে কিছু একটা ভেবে বাঁকা হাসলো।
বিকালে…
সুহানিকে নোহান ইচ্ছা করে সারাদিন বাইরে বসিয়ে রেখেছিলো। ৩ টের সময় মেয়েটা বললোঃ ম্যাম আপনি ফিরে যান,স্যার চলে গেছে।
সুহানির মনে হচ্ছে নোহানের মাথাটা ফাটিয়ে দিতে। সারাদিন এভাবে বসিয়ে রাখার কোনো মানে হয় না। সুহানি প্রচুর পরিমাণে রেগে আছে।
রাগে গজগজ করতে করতে বাড়ি গিয়ে দেখলো, নোহান সোফায় বসে বসে সরবত খাচ্ছে। রঙ্গমূর্তি হয়ে নোহানের সামনে দাঁড়িয়ে বললোঃ আপনি আমাকে সারাদিন এভাবে হ্যারাস করলেন কেন?
নোহান সুহানির কথাকে পাত্তা না দিয়ে সরবত খেতে লাগলো।
সুহানিঃ এই আপনার আমার উপর কিসের রাগ বলুন তো,এভাবে অত্যাচার করছেন আমার উপরে।
নোহান সুহানির দিকে তাকিয়ে বললোঃ তোমাকে …
সুহানিঃ কি?
নোহানঃ তোমাকে
সুহানি রাগ নিয়ে বললোঃ আরে বলবেন তো।
নোহানঃ তোমাকে রাগলে হেবি লাগে।
সুহানি শক খেয়ে গেলো নোহানের এমন কথা শুনে,একটা অদ্ভুত শিহরন বয়ে গেল। নোহান ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললোঃ কি হলো ঝাঁসির রানি হূট করে লজ্জাবতী হয়ে গেলো কেন?
নোহান কথাটা বলেই অট্রহাসিতে ফেটে পড়লো। সুহানি নোহানের হাসির দিকে তাকিয়ে আছে, এই প্রথম নোহানকে হাসতে দেখলো, সত্যি দিয়া ঠিক বলতো নোহানের হাসিটা অসম্ভব সুন্দর।
সুহানিঃকি ব্যাপার দিয়া তুই যে মিস্টার শিকদারের উপরে পুরো ফিদা হয়ে গেলি।
দিয়াঃ কি করবো বল,মানুষটার হাসিটা অসম্ভব সুন্দর,এই হাসির প্রেমে কেউ না পড়ে থাকতেই পারবে না। তুই দেখলে তুইও পড়ে যাবি।
সুহানিঃধ্যাত খালি উল্টো পাল্টা কথা তোর।
সুহানির আজকে মনে হচ্ছে সত্যি নোহানের হাসির প্রেমে যেকোনো মেয়ে পড়ে যেতে পারে। মানুষটাকে হাসলে কত সুন্দর লাগে কিন্তু মানুষটা এভাবে মুখ গোমড়া করে থাকে কেন? কি হয়েছে ওনার। আর দিয়াই বা কোথায়?
নোহান হাসি থামিয়ে বললোঃ কি দেখছো হাঁ করে।
সুহানি ঘোরের মধ্যে থেকে বললোঃ আপনাকে।
নোহানঃ কি?
সুহানি ঘোর থেকে বেড়িয়ে আসলো। আর নোহানকে কিছু না বলে ভেতরে চলে গেলো। নোহান সুহানির যাবার দিকে তাকিয়ে মনে মনে কিছু একটা বললো।
#চলবে…
#রঙ_বেরঙের_অনুভূতি
#লেখনীতেঃতানজিলা_খাতুন_তানু
(৫)
পরেরদিন সকালে…
নোহানঃ সুহানি আজকে অফিসে যাবে তো।
সুহানি রাগ নিয়ে বললোঃ না আমি আর আপনার অফিসে যাবো না।
নোহানঃ কেন?
সুহানিঃ আপনি আমার কেন বলছেন?কাল সারাদিন আমাকে বাইরে বসিয়ে রাখলেন তারপরেও আপনি বলছেন এসব।
নোহানঃ কাজ ছিলো তাই বলেছি। আজকে যদি চাও যেতে পারো। আজকেই কিন্তু তোমার জয়েনিং।
সুহানিঃ তারমানে কালকে আপনি আমাকে এমনি এমনি ডেকেছিলেন?
নোহান বাঁকা হেসে চলে গেলো। সুহানি রাগে গজগজ করতে করতে বললোঃ একবার সবকিছু আমাকে জানতে দিন।তারপরে আপনার আর আপনার বউয়ের আমি বারোটা বাজাবো।
সুহানি অফিসে যথা সময়ে এসে রিসেপশনে থাকা মেয়েটা বললোঃ এক্সকিউজ মি।
মেয়েটা ওর দিকে চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বললোঃ আপনি সুহানি তো।
সুহানিঃ হুম।
মেয়েটাঃ স্যারের কেবিনটা সোজা গিয়ে ডান দিকে। আপনি যান।
সুহানি একটা হাসি দিয়ে চলে গেলো। কিন্তু মেয়েটা কেমন কৌতুহল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল সুহানির যাওয়ার দিকে, মেয়েটার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। কালকে মেয়েটাকে স্যার সারাদিন বসিয়ে রাখলো আর আজকে অফিসে এসেই বললো সুহানি আসলে যেন তাড়াতাড়ি ওনার কেবিনে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
সুহানি নোহানের কেবিনে গিয়ে নক করলোঃ আসবো।
নোহান নিশ্চুপ।
সুহানি আবারো বললো আসবো। তখনো চুপ। সুহানির ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙে যাচ্ছে, ও ভালো করেই বুঝতে পারছে নোহান ইচ্ছা করে এরকম করছে। দাঁতে দাঁত চেপে আবারো একবার জিজ্ঞেস করলো কিন্তু তখনও নোহান কিছু বললো না। রাগে সুহানি কেবিনের ভেতরে ঢুকে পড়লো।
সুহানি কে ভেতরে আসতে দেখে নোহান বললোঃ কারোর কেবিনে আসতে গেলে পারমিশন নিয়ে আসতে হয় এইটুকু জানা নেয়।
সুহানি রাগে লাল হয়ে বললোঃ কেউ দরজায় নক করলে তার রেসপন্স করতে হয় এইটুকু জ্ঞান আপনার নেয়।
নোহান খেয়ে ফেলবো এরকম একটা লুক করে সুহানির দিকে তাকালো। সুহানি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
নোহান দাঁতে দাঁত চেপে বললোঃ বাইরে বেড়িয়ে দরজাটা নক করে আবার আসো।
সুহানিঃ না।
নোহানঃ সুহানি এটা আমার অফিস তাই ভালো হবে আমার কথা শোনা।
সুহানি রাগ নিয়ে বাইরে গিয়ে বললোঃ আসবো।
নোহান দাঁত বের করে বললোঃ আসো।
সুহানি ভেতরে আসতেই নোহান ওকে বসতে বলে একটা ফাইল এগিয়ে দিলো।
সুহানি ভ্রু কুঁচকে বললোঃ কি এটা।
নোহানঃ এগ্রিমেন্ট পেপার,দেখে সাইন করে দাও।
সুহানিঃ আবার এগ্রিমেন্ট পেপারে সাইন করতে হবে।
নোহানঃহুম।
সুহানি বিরক্ত হয়ে সাইন করে দিলো কিছু না পড়েই, নোহান সেটা দেখে বাঁকা হাসলো।
নোহানঃ এবার বাইরে তোমার ডেস্কের আছে, চলে যাও।
সুহানিঃ ওকে।
সুহানি বাইরে চলে গিয়ে চমকে উঠলো কারন এটা দিয়ার ডেস্ক। সুহানির রাগ হচ্ছে খুব, বার বার ওহ দিয়ার জিনিসে ভাগ বসিয়ে দিচ্ছে।
কিছুক্ষন পর,,
পিওন এসে জানায় নোহান সুহানিকে ভেতরে ডাকছে, সুহানি ভেতরে আসতেই নোহান বললোঃ সুহানি এককাপ কফি করে আনো না।
সুহানির মুখটা হা হয়ে গেছে, এই লোক বলে কি।
সুহানিঃ আমি কি এখানে কফি করতে এসেছি।
নোহানঃ না,তবে আমি যেটা বলবো সেটা করতে হবে।
সুহানিঃ কি?
নোহানঃ তোমাকে আমি বলেছিলাম ফাইলটা পড়ে তারপর সাইন করো কিন্তু তুমি এমনি করে নিয়েছো। আর এতে কি লেখা আছে পড়ে নাও একবার।
সুহানি নোহানের হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে দেখতে লাগলো। এতে লেখা আছে, নোহানের সব কথা আমি শুনবো, চাকরি ৫ বছরের আগে ছাড়া যাবে না,আর যদি ছাড়ে তাহলে নোহান যা জরিমানা চাইবে তাই দিতে হবে। এমনকি নোহান সুহানির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে পারবে ইত্যাদি ইত্যাদি।
সবটা পড়ে সুহানির মাথায় বাজ পড়লো,এই ছেলে তো ওকে শায়েস্তা করবে বলে উঠে পড়ে লেগেছে।এইগুলো থেকে ওহ বাঁচবে কিভাবে।
সুহানি বাধ্য হয়ে কফি করতে চলে গেলো। নোহানকে কফি দিয়ে বের হতেই একটা মেয়ের সাথে দেখা হলো ওর।
লীলিঃ হ্যালো আমি লীলি
সুহানি একটা মিস্টি হাসি উপহার দিয়ে বললোঃ আমি সুহানি।
লীলিঃ তোমাকে তো আগে দেখিনি এখানে তুমি নতুন নাকি।
সুহানিঃ হ্যা নতুন ডিজাইনার হিসাবে জয়েন করেছি।
লীলিঃ ওহ।আগে তো ডিজাইনার ছিলেন দিয়া ম্যাম।
সুহানি না জানার ভান করে বললোঃ ওহ তা উনি কোথায় এখন?
লীলিঃ জানি না ঠিক, গত ১ মাস ধরে অফিসে আর আসেননি। আচ্ছা এসব বাদ দাও সকলের সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দিই চলো।
সুহানিঃ আচ্ছা
লীলি মেয়েটা সবার সামনে সুহানি কে নিয়ে গিয়ে বললোঃ হাই গাইজ, এই দ্যাখো আমাদের নতুন ডিজাইনার সুহানি।
সুহানি সবার সাথে পরিচিত হলো। অল্প সময়ের মাঝেই সবার সাথে মিলে মিশে গেলো। এখানের সকলেই খুব ভালো সুহানির এখন মনেই হচ্ছে না কিছুক্ষন আগে এদের কাউকে চিনতো না। মনে হচ্ছে আগে থেকেই পরিচিত।
কোনো কাজ ছাড়াই প্রথমদিন কেটে যায়। বিকালে সুহানি বাড়ি ফিরে যাচ্ছে,মনের ভেতরে লীলির কথাগুলো মনে পড়ছে দিয়া একমাস ধরে অফিসেও আসেনি। সুহানির শেষ যেদিন দিয়ার সাথে কথা হয়েছিলো…
দিয়াঃ কি ম্যাডাম কেমন আছেন?
সুহানিঃ আর বলিস না কাজের চাপে জীবন ত্যানাত্যানা হয়ে যাচ্ছে।
দিয়াঃ কেন রে,কি হয়েছে।
সুহানিঃ আরে এতটাও কাজের চাপ এই মাসে বলার বাইরে।আচ্ছা বাদ দে বল তোর খবর কি?
দিয়াঃ চলছে এই।
সুহানিঃ তোর বরের খবর কি?
দিয়াঃ চলছে ভালোই।
সুহানিঃ অফিসে যাস এখন।
দিয়াঃ হুম
সুহানিঃ সবাই খুব সম্মান দেয়তো নোহান শিকদারের স্ত্রী তুই।
দিয়াঃ কেউ জানে না আমার আর নোহানের বিয়ের কথা।
সুহানি অনেকটা অবাক হয়ে বললোঃ কেন?
দিয়াঃ আসলে আমিই বলেছিলাম নোহানকে কাউকে কিছু না বলতে।
সুহানিঃ কেন?
দিয়াঃ আমি চাই আমি একজন ডিজাইনার হিসাবে আগে প্রতিষ্ঠিত হয়,তারপর বলবো।
সুহানিঃ কেন বিয়ের কথা বললে কি তুই প্রতিষ্ঠিত হতে পারবি না।
দিয়াঃ সেটা না। নোহান আর আমি ঠিক করেছি আমাদের একবছরের বিবাহ বার্ষিকীতে সবাইকে জানাবো।
সুহানিঃ বিয়ের একবছর পরে সবাই জানবে অদ্ভুত।
দিয়া হাসলো কিছুই বললো না। তারপরে সুহানি প্রচন্ড ব্যস্ত হয়ে পড়ে আর দিয়ার সাথেও যোগাযোগ করা হয় না। আর তারপরেই এসব কান্ড,কি থেকে কি হয়ে গেলো কিছুই মাথায় ঢুকছে না সুহানির।
সুহানি ভাবনা থেকে বের হয়ে আসলো ট্যাক্সি ড্রাইভারের কথায়। সুহানি বাড়ির ভেতরে ঢুকে দেখলো,দরজা খোলা আছে, অনেকটা অবাক হয়ে ভেতরে গিয়ে দেখলো অনেকগুলো মেড। সুহানির মাথায় আসছে না নোহান আবার কেন মেডদের আস্তে বললো।
রাত্রিবেলা…
কিছুক্ষন আগেই নোহান বাড়ি ফিরে এসেছে, স্টাডি রুমে বসে কাজ করছে। সুহানি ওর কাছে কফি নিয়ে গিয়ে বললোঃ একটা কথা বলবো।
নোহানঃ হুম বলো।
সুহানিঃ আপনি হঠাৎ করে মেডদের আস্তে বললেন কেন?
নোহানঃ তুমি কি আমাকে সারাদিন না খাইয়ে রাখার প্ল্যান করছো নাকি।
সুহানিঃ আরে না সেরকম কিছু না।
নোহানঃ তাহলে জিজ্ঞাসা করছো। তুমি অফিসে গেলে রান্না কে করবে,তাই মেডদের আস্তে বলেছি।
সুহানি নোহানের দিকে তাকিয়ে হাসলো মানুষটা এতটাও খারাপ না।সুহানি ওই ঘর থেকে চলে যায়, মনের মাঝে আরো অনেক প্রশ্নের ভিড় জমে আছে এই প্রশ্ন গুলোর উত্তর পাবে কোথায়?
সুহানি মনে মনে ভাবছে, যদি একবার দিয়াকে পাই তাহলে সবকিছুর উত্তর পেয়ে যাবে। কিন্তু দিয়া কোথায়?
কেটে যায় একটা মাস…
সুহানিকে নোহান ইচ্ছা মতো কাজ করাই, ইচ্ছাকৃত ভাবে বসিয়ে রাখে,অত্যাচার করে। সুহানি সবটাই করে কোনো প্রতিবাদ ছাড়া। সুহানি এখনো অন্ধকারে রয়েছে,ওর কাছে সবকিছু এখনো ধোঁয়াশা। নোহান আগের থেকে বদমেজাজি হয়ে উঠেছে, সুহানিকে উল্টো পাল্টা করে বলে। কথাই আছে ছুড়ির আঘাতের থেকে মানুষের জিভের আঘাত অনেক কষ্টকর। নোহান সুহানিকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে।কারনটা এখনো রহস্যময়।
#চলবে….