ম্যাডাম পর্ব(০৭) শেষ

ম্যাডাম
পর্ব(০৭)শেষ
#Writer_Nandita_priti

ম্যাডাম হতবম্ব হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন।আমি মৃদু হাসলাম।ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে কপাল কুঁচকে বললেন

তারমানে আপনি আমাকে চিনেন?

ম্যাডামের প্রশ্নের বিনিময়ে আমি হাসলাম।ম্যাডাম বুদ্ধিমতি মেয়ে তাই আমার হাসির মানে সহজেই বুঝে গেলেন।ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে বললেন

আন্টি বলেছেন?

নাহ।আমি শুনেছি।তুমিই যে রিদিতা।তুমিই যে সেই ছোটবেলার মেয়ে রিদি।আর মায়ের সঙ্গে প্লেন করে যে তুমি সবকিছু করেছো তাও অজানা নয় আমার।আমি ভেবেছিলাম আমার চোখে সমস্যা তাই সবজায়গায় তোমাকে দেখি।পরে বুঝলাম সবটাই তোমার প্লেনের অংশ।

ম্যাডাম কিছু একটা ভেবে কড়াস্বরে বললেন

সবমেয়ে পাল্টে যায় না বুঝলেন?ছেলেদের মতো মেয়েরা এত ফোর টুয়েন্টি নয়।

সবছেলেও পাল্টে যায় না ম্যাডাম।আর সবছেলে ফোর টুয়েন্টি হয় না। কিছু কিছু ছেলেরা জানপ্রাণ অষ্টাগত করে নিজের ভালোবাসকে ধরে রাখে।

ম্যাডাম কপাট রাগ দেখিয়ে বললেন

হয়েছে আপনার ডঙ আপনার কাছে রাখেন।যদি নাই পাল্টাতো তবে কেন গার্লফ্রেন্ড যোগাড় করতো?আমার জন্য অপেক্ষা করা যেত না?নাকি তর সইছিলো না?

কে বলল আমি অপেক্ষা করি নি?

মূহুর্তে ম্যাডামের মুখের রাগটা উধাও হয়ে গেল।ম্যাডাম আমার দিকে তাকিয়ে বললেন

মানে?

আমার গার্লফ্রেন্ড টালফ্রেন্ড এসব কিছু নেই।

মিথ্যে কথা বলবেন না দিগন্ত।

মিথ্যা কথা নয় রিদি।আমার কোনো গার্লফ্রেন্ড নেই।আমি জাস্ট অভিনয় করেছি।তবে হুম প্রথমে তোমাকে চিনতে পারি নি ঠিকি।তোমার আপত্তিকর ব্যবহারগুলো খুব খারাপ লাগতো।তাইতো জবটা ছেড়ে দিলাম।তবে মায়ের সঙ্গে কথা বলতে শুনেছিলাম একদিন।তারপর তোমার নিজের মুখে ভালোবাসার কথা স্বীকার করানোর জন্য গার্লফ্রেন্ডের নাটক করলাম।ওমা তাতে তুমি জেলাস হয়ে কাছে আসবে কি?আমার থেকে আরো দূরে সরে গেলে।তাই বাধ্য হয়ে আমাকেই বলতে হলো।

ম্যাডাম চুপচাপ টেবিলের উপর ভর করে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।আমার কথাগুলো যে উনার হৃদয় উতাল পাতাল ঢেউ তুলতে সক্ষম তা আমার চেয়ে ভালো আর কেউ জানো না।আমি ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে ভাব নিয়ে বললাম

ম্যাডাম আপনি বরাবরই বদ।আশপাশে মানুষকে লক্ষ্য করুন।

ম্যাডাম মৃদু হেসে বললেন

আমার জিনিস আমি দেখবো।এখানে খারাপ কিছু দেখছি না মিস্টার দিগন্ত।

আমি মৃদু হেসে বললাম

ম্যাডাম..

বলো..

চলুন না অফিস রুমটায় যাই।

ম্যাডাম ভ্রু কুঁচকে বললেন

কোন অফিসরুম?

যেখানে আপনি আপত্তিকর পরিস্থিতিতে আমাকে ফেলতেন।

ওগুলো আমি তোমাকে জ্বালাতন করতে করেছিলাম।

আমিওতো জ্বালাতন করতে চাইছি ম্যাডাম।

শাট আপ দিগন্ত।

আমি মুচকি হাসলাম।

দিগন্ত আমি কিন্তু খুব কষ্ট পেয়েছি তোমার গার্লফ্রেন্ডের গোলক ধাঁধায় পড়ে।

জানি আমি।তবে চিন্তা করবে না এই কষ্ট বিয়ের পর পুষিয়ে নিবো।

ম্যাডাম আর আমি দুজনে হাসলাম।ম্যাডামের মুখে আমি বিজয়ের আনন্দ দেখলাম।যে হাস্যমুখটা আমার হৃদয় কেড়ে নিয়েছে।
*

তারপর কি হয়েছিলো?নিশ্চয়ই রিদিতা ম্যাডামের সঙ্গে আপনার বিয়ে হয়েছিল তাই না?

নদীর পাশে বসে আছে দিগন্ত আর একটা মেয়ে।নদীতে একের পর এক ঢেউ এসে দোল খাচ্ছে।শু শু শব্দে বাতাস বইছে।দিগন্তের মাথার লম্বা চুলগুলো বাতাসের ঝপটায় উড়ছে।পাশে বসা মেয়েটি উৎসুক হয়ে প্রশ্নটা করলো।দিগন্ত এতক্ষণ নদীর দিকে তাকিয়ে মেয়েটাকে সবটা বলছিলো।এবার চোখ থেকে চশমাটা খুলে বলল

হুম।

তারমানে আপনি বিবাহিত?তাই আমার প্রপোজাল গ্রহণ করছেন না?

হুম।

কিন্তু ম্যাডামকেতো একদিনও দেখলাম না।কোথায় উনি?

রিদিতার সঙ্গে আমার সংসার জীবনটা ছিলো দুদিনের।তারপর ও আমাকে ছেড়ে চলে যায়।

মেয়েটি হতবাক হয়ে গেল।চোখমুখ কুঁচকে বলল

কি বলছেন কি?এত ভালোবাসা দুজনের থাকার পরও আপনাদের ছাড়াছাড়ি হলো?

কি করবো?ভালোবাসা দিয়ে ওকে আটকানোর সাধ্য যে ছিল না আমার।

তারমানে ম্যাডাম ছেড়ে চলে গেছেন?একদম ঠিক করেন নি।দু দিন সংসার করে চলে যেতে হলো?বুঝলাম না কিছু?আপনি ম্যাডামের তুলনায় গরিব ছিলেন বলে নাকি ছেড়ে দিলো?

দিগন্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল

নাহ।

আকাশের দিকে এক আঙুল উচিয়ে দিগন্ত বলল

ওই ওখানে আমার ম্যাডাম আছে।বিয়ের পরের দিনের পরের দিন শপিংমলে গিয়েছিলাম ওকে নিয়ে।ও আমায় বিয়েতে কিছু গিফট করে নি।তাই নাছোড়বান্দা হয় শপিংমলে যাওয়ার জন্য।আমাকে নাকি গিফট করবে।সেখানে ডাকাত আক্রমণ করে।এক পর্যায়ে আমার দিকে গুলি ছুড়ে।আমাকে ধাক্কা দিয়ে ও নিজের বুকে গুলিটা নিয়ে নেয়।ম্যাডাম ভেবেছিলো গুলিটা নিজের বুকে নিয়ে আমাকে বাঁচিয়ে দিয়ে গেছে।কিন্তু ম্যাডাম এটা জানে না।গুলিটা নিজের বুকে নিয়ে আমাকে জীবন্ত লাশ করে দিয়ে গেছে।ম্যাডাম সেদিন আমাকে জীবনের সবচেয়ে বড় গিফট দিয়ে যায়।যার ভার সইতে দিশেহারা হয়ে যাই আমি।আপনিই বলুন এরকম গিফট কেউ দেই?

দিগন্তের পাশে বসা মেয়েটা চুপচাপ দিগন্তের দিকে তাকিয়ে রইল।উত্তর দেওয়ার মতো কোনো ভাষা খু্ঁজে পাচ্ছে না।নিজের চোখের কোণে জলের উপস্থিতি অনুভব করল মেয়েটা।দিগন্ত আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল

আমি ওকে ছুঁতে পারি না ঠিকি।কিন্তু অনুভব করি।আমার হৃদয়ে ও বসবাস করছে।ভালোবাসি যে আমি ওকে।আমার ম্যাডাম আমার কাছে আজও জীবন্ত।

দিগন্তের চোখ জলে পরিপূর্ণ হয়ে গেল।বসা থেকে দাঁড়িয়ে বলল

আসি আমি।

মেয়েটা নিজেকে সামলে পেছন থেকে বলল

আমাকে একটা সুযোগ দেন না?

দিগন্ত পেছনে না ফিরে সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল

এ জীবনে সম্বভ নয়।আমি ম্যাডামকে ভালোবাসি।ওর স্মৃতি আমাকে বাঁচিয়ে রেখেছে।দিন গুনছি কবে ওর কাছে আমি যাবো।ও যে অপেক্ষা করছে আমার জন্য।আমি মোনাজাতে একটা কথাই বলি হে আল্লাহ আমাকে তাড়াতাড়ি ম্যাডামের কাছে নিয়ে যাও।আমার ভালোবাসার কাছে নিয়ে যাও।আর কিছু আমি চাই না।এইটুকু রহম করো আমার উপর।

দিগন্ত হাঁটা ধরলো।রাস্তাঘাট ঝাপসা লাগছে।চশমার গ্লাস চোখের জলে পরিপূর্ণ। চশমা খুলে একহাত দিয়ে আবার চোখের জল মুছে নিলো।
——
(সমাপ্ত)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here