#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛,পর্বঃ১২,১৩
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ১২
অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সাথী হৃদের দিকে আর হৃদ সাথীর দিকে। কিছুক্ষনের জন্য হলেও দুজনেই শকট হয়ে তাকিয়ে রইলো দুজনের দিকে। হঠাৎই সাথীর হুস আসলো তাড়াতাড়ি সে ছেড়ে দিলো হৃদকে তারপর বললো,
‘ আই এক্সট্রিমলি সরি ডক্টর।’
‘ আর ইউ অলরাইট সাথী?’
‘ ইয়াহ,থ্যাংক ইউ,সরি ডক্টর।
‘ ইট’স ওকে।
উওরে সাথী আর কিছু না বলে দ্রুত গতিতে এগিয়ে যেতে লাগলো সামনে। আর হৃদ কিছুটা অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো সাথীর যাওয়ার পানে। কি হলো কিছুই যেন বুঝে উঠতে পারলো না সে। হৃদ জোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বেশি কিছু না ভেবে এগিয়ে গেল তার রুমের দিকে।
___
অফিসে নিজের রুমে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে আকাশ। হঠাৎই কি হলো হুট করেই তার কাল রাতের কথা মনে পড়লো তিথির সাথে রেস্টুরেন্টে বসে ডিনার করা,হুট করে কান্না ভেঁজা কন্ঠে তাকে জড়িয়ে ধরা,নিঝুম রাতে চাঁদমামাকে সাথে নিয়ে একসাথে হাঁটা সাথে সকালে তাঁর কাঁধে মাথা দিয়ে তিথির ঘুমন্ত মুখ সবই যেন ভেঁসে আসলো আকাশের সামনে আনমনেই মুচকি হাসলো সে।
‘মাঝখানে কেটে গেল এক সপ্তাহ। এই একসপ্তাহে তিথির মা অনেকটাই সুস্থ হয়ে গেছে। তবে হসপিটাল থেকে ছাড়া পায় নি।’
বিকেল চারটা, গ্র্যান্ডমার রুমে বসে আছে তিথি। তার পাশেই বসে আছে গ্র্যান্ডমা কিছু একটা বলবে উনি কিন্তু কি বলবে সেটাই বুঝতে পারছে না তিথি। তিথি তার ভাবনাগুলোকে দূরে সরিয়ে রেখে বললো,
‘ কি হলো গ্র্যান্ডমা কিছু বলছো না কেন?’
‘ হুম বলছি?’
‘ হুম বলো।”
তিথির কথা শুনে গ্র্যান্ডমা তিথির হাত ধরে বলে উঠল,
‘ তোমাদের বিয়েটা লাভ ম্যারেজ ছিল না তাই না তিথি?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে চমকে উঠলো তিথি তারপর আমতা আমতা করে বললো সে,
‘ মানে?’
‘ মানে এটাই তোমার আর আকাশের পরিচয় দু’বছর আগে হয় নি তাই না?’
এবারের কথা শুনে আরো বিস্মিত হয় তিথি, সে বুঝতে পারছে না হুট করে গ্র্যান্ডমা এমন প্রশ্ন কেন করছে তাহলে কি কোনোভাবে সন্দেহ করছে গ্র্যান্ডমা? তিথির ভাবনার মাঝে আবারো বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ কি হলো তিথি কথা বলছো না কেন?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে বিস্ময় ভরা কন্ঠ নিয়ে গ্র্যান্ডমার দিকে তাকিয়ে বললো তিথি,
‘ কিসব বলছো তুমি গ্র্যান্ডমা?’
তিথির এবারের কথা শুনে গ্র্যান্ডমা তিথির দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠলো। গ্র্যান্ডমার হাসি দেখে আরো ঘাবড়ে যায় তিথি,ঘাবড়ানো মুখ নিয়েই বললো সে,
‘ কি হলো গ্র্যান্ডমা তুমি হাসছো কেন?’
‘ হাসবো না তো কি করব এমন ভাব করছো যেন আমার কথাগুলোই সত্যি?’
‘ মানে..
‘ মানে আবার কি তোমার সাথে মজা করছিলাম পাগলী।’
বলেই আবারো হেঁসে উঠলো গ্র্যান্ডমা। গ্র্যান্ডমার এবারের কথা শুনে যেন স্বস্তি পেল তিথি। অনেকটাই ঘাবড়ে গিয়েছিল সে গ্র্যান্ডমার কথা শুনে। তিথি স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে উঠল,
‘ তুমিও না গ্র্যান্ডমা।’
উওরে হাসলো গ্র্যান্ডমা। এমন সময় হঠাৎই হাসতে হাসতে কাশতে শুরু করলো গ্র্যান্ডমা, গ্র্যান্ডমার কাজে বিস্মিত হয়ে তিথি চটজলদি সে টেবিলের উপর থেকে পানির গ্লাসটা হাতে নিয়ে দেয় গ্র্যান্ডমার হাতে উনিও তাড়াতাড়ি পানিটা খেতে শুরু করে। কিন্তু কিছুতেই যেন কাশি কমছে না গ্র্যান্ডমার,,এই মধ্যে গ্র্যান্ডমা তার পেটে ব্যাথাও অনুভব করছে। ব্যাথায় কিছুটা কুঁকড়ে উঠলো গ্র্যান্ডমা। গ্র্যান্ডমাকে ছটফট করতে দেখে ঘাবড়ে যায় তিথি কিছুটা হতভম্ব হয়ে বললো সে,
‘ কি হলো গ্র্যান্ডমা তোমার?’
উওরে কিছু বললেন না গ্র্যান্ডমা ব্যাথায় নিস্তব্ধ হয়ে গেছেন উনি। গ্র্যান্ডমাকে ছটফট করতে দেখে তিথি কিছু বুঝতে না পেরে চটজলদি কল করলো আকাশকে।’
”
জাস্ট একটা মিটিং সেরে নিজের রুমে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছিল আকাশ এমন সময় তিথির কল আসায় চটজলদি ধরলো গ্র্যান্ডমার অবস্থার কথা শুনেই হতভম্ব হয়ে বললো সে,
‘ আমি এক্ষুনি আসছি।’
বলেই একপ্রকার দৌড়ে অফিস থেকে বের হয় আকাশ। তারপর হৃদকে কল করে সাথে দ্রুত স্পিডে গাড়ি চালিয়ে চললো সে বাড়ির উদ্দেশ্যে।’
___
বিছানায় শুয়ে আছে গ্র্যান্ডমা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে হৃদ আর তিথি। সেই মুহূর্তে দৌড়ে গ্র্যান্ডমার রুমে ঢুকলো আকাশ। গ্র্যান্ডমাকে শুয়ে থাকতে দেখে বললো আকাশ,
‘ গ্র্যান্ডমা।’
আকাশের কন্ঠ শুনেই হৃদ ধরে আকাশের হাত তারপর বলে,
‘ এখন ডাকিস না গ্র্যান্ডমা ঘুমাচ্ছে?’
‘ হৃদ।’
‘ হুম বলছি তুই বাহিরে চল।’
এই বলে আকাশকে বাহিরে নিয়ে যায় হৃদ। নিচতলায় বেলকনির সামনে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে হৃদ। আর পাশেই আকাশ অস্থিরতা নিয়ে দাঁড়িয়ে বলে উঠল,
‘ কি হলো হৃদ কিছু বলছিস কেন,গ্র্যান্ডমা ঠিক আছে তো?’
আকাশের কথা শুনে হৃদ মাথা নাড়িয়ে বলে উঠল,
‘ না।’
‘ তাহলে কি?’
‘ আমি আগেও বলেছি আকাশ আমাদের হাতে সময় খুব কম হয়তো সময়ই নেই যেকোনো মুহূর্তে কোনো কিছু হয়ে যেতে পারে।
উওরে নিস্তব্ধ হয়ে যায় আকাশ। কথা বলাই যেন বন্ধ হয়ে গেছে তার সাথে কষ্ট হচ্ছে। আকাশ মাথা নিচু করে বললো,
‘ এখন কেমন আছে গ্র্যান্ডমা?’
‘ এখন আপাতত ইনজেকশন দিয়ে গ্র্যান্ডমাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়েছি,তবে..
এতটুকুই বলেও আর কিছু বলে উঠতে পারলো না হৃদ। তারও তো কষ্ট হচ্ছে সেই ছোট বেলা থেকেই আকাশ হৃদের বন্ধুত্ব সেই সুবাদে অনেকবারই গ্র্যান্ডমার সাথে আলাপ পরিচয়। এককথায় বলতে গেলে আকাশের গ্র্যান্ডমাকে নিজের গ্র্যান্ডমা ভাবে হৃদ। হৃদ আকাশের কাঁধে হাত রেখে কিছুক্ষন ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে গেল ওদের বাসা থেকে,
বেলকনির দরজা পর্যন্ত যেতেই সামনে তিথিকে দেখে একপলক ওর দিকে তাকিয়ে কিছু না বলেই বেরিয়ে যায় সে। তিথিও কিছু বলে নি তার কারন সে সবটাই শুনেছে। তিথিরও কষ্ট হচ্ছে সেও তো এই কয়েকদিনে গ্র্যান্ডমাকে ভালোবেসে ফেলেছে। তিথি কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো আকাশের দিকে একবার ভেবেছিল একবার যাবে সে আকাশের কাছে আবার ভাবলো না থাক।’
আর আকাশ সে নিশ্চুপে শুধু তাকিয়ে রইলো আকাশের পানে।’
_____
রাত_৮ঃ০০টা…
বিছানায় বসে আছে আকাশ। কিছু ভালো লাগছে না তাঁর। পাশেই তার ফোনটা লাগাতার বেজে চলেছে কিন্তু সেদিকে আকাশের হুস নেই সে তার মতো নিশ্চুপে বসে আছে বিছানায় এমন সময় তার রুমে ঢুকলো তিথি। আকাশের অবস্থা বুঝতে পেরে এগিয়ে গেল আকাশের কাছে এবার কিছু বলবে সে। তিথি হেঁটে চলে যায় আকাশের কাছে তারপর ওর পাশে বসে বললো,
‘ স্যার আপনার ফোন বাজছে তো?’
‘ বাজতে দেও।’
আকাশের কথা শুনে তিথি কিছু নিশ্চুপ ভরা কন্ঠ নিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আমি জানি না স্যার আমার আপনাকে কিছু বলার রাইট আছে কি না কিন্তু আজ কিছু বলতে চাই আমি জানি স্যার আপনার মন খারাপ। আর মন খারাপ হওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এভাবে বসে মন খারাপ করাটা বেমানান মনে হচ্ছে না কারন যেখানে আমরা জানি সামনে কি হতে পারে।’
তিথির কথা শুনে আকাশ তাকালো তিথির দিকে তারপর জিজ্ঞেসাসূচকভাবে তিথির দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ তুমি কি বলতে চাইছো বলো তো?’
আকাশের কথা শুনে তিথিও কিছুটা সাহস জুগিয়ে আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ এটাই বলতে চাইছি এভাবে বসে থেকে মন খারাপ করবেন না স্যার চলুন কিছু একটা করি।’
‘ মানে?’
‘ দেখুন আমিও জানি আর আপনিও জানেন গ্র্যান্ডমা হয়তো আমাদের মাঝে বেশিদিন থাকবে তাই চলুন না গ্র্যান্ডমার জন্য কিছু করি?’
‘ কি করতে চাও বলো তো?’
আকাশের এবারের কথা শুনে তিথি আকাশের দিকে একটা ডাইরি এগিয়ে দিলো তারপর বললো,
‘ এইটা স্যার।’
তিথির কথা আর কাজ দেখে অবাক দৃষ্টিতে তাকালো আকাশ তিথির দিকে।’
____
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে তিথির মা পাশেই সাথী বসে আছে মেবাইল দেখছে সে। হঠাৎই বলে উঠল তিথির মা,
‘ আজকে তিথি আসে নি সাথী?’
‘ আসলে মা আপুর গ্র্যান্ডমা বিকেলে অসুস্থ পড়েছে তাই আর কি আসতে পারে নি।’
‘ ওহ কি হয়েছে ওনার?’
‘ তা তো জানি না মা।’
‘ আচ্ছা আমরা এই হসপিটাল থেকে বের হবো কবে সাথী? আর ভালো লাগছে না এখানে।’
‘ এই তো আর মাত্র দু’দিন তারপরই তোমার তোমার নিয়ে বাড়ি চলে যাবো আমি।’
উওরে তিথির মা আর কিছু বললো না চুপটি করে রইলেন উনি।’
.
নিজের চেম্বারে বসে আছে হৃদ মনটা প্রচন্ড খারাপ তাঁর। এমন সময় তার দরজায় নক করলো কেউ বললো সে,
‘ মে আই কাম ইন।’
আচমকা কারো কন্ঠ কানে আসতেই হৃদ তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে এসে বললো,
‘ ইয়েস কাম’….
!
!
#চলবে…..
#মেঘ_বসন্তের_মায়া💛
#লেখিকা:#তানজিল_মীম💛
— পর্বঃ১৩
হৃদের চেম্বারে বসে আছে সাথী আর ওর সামনেই বসে আছে হৃদ। হৃদ কিছুক্ষন সাথীর দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,
‘ হুম বলো কি বলতে এসেছো তুমি আমার চেম্বারে?’
হৃদের কথা শুনে সাথী নীরবেই বলে উঠল,
‘ আসলে ডক্টর মা বাসায় যাওয়ার জন্য অনেক উতলা হয়ে পড়েছে এখন কবে মাকে ছাড়বেন?’
‘ ওহ এই ব্যাপার,দেখ চাইলে তো কালই ছাড়া যায় কিন্তু…
হৃদের কথা শুনে সাথী কিছুটা সিরিয়াসভাবে বলে উঠল,
‘ কিন্তু কি ডক্টর?’
সাথীর কথা শুনে হৃদ কিছুটা এগোলো সাথীর দিকে তারপর ওর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ আসলে…
হৃদের কথা শুনে কিছুটা ঘাবড়ে যায় সাথী সেও হৃদের দিকে হাল্কা এগিয়ে এসে বললো,
‘ আসলে কি ডক্টর?’
‘ না মানে…
‘ কোনো সিরিয়াস কিছু?’
‘ আসলেনতোমার মাকে যদি ছেড়ে দেই তাহলে তো তোমায় আর দেখতে পাবো না।’
হৃদের কথা শুনে সাথী বিস্ময় নিয়ে বললো,
‘ কি?’
বলেই হেঁসে উঠলো সে। তারপর বললো,
‘ আপনি আমার সাথে এতক্ষণ ফ্লাট করছিলেন আর আমি কি কি না ভেবেছিলাম,আপনিও না ডক্টর।’
বলেই হাসতে লাগলো সাথী। সাথীর হাসি দেখে হৃদও হেঁসে উঠল কেন যেন এই মেয়েটার হাসি মাখা মুখ দেখলেই হৃদের মনটা ভালো হয়ে যায়। যেদিন থেকে মেয়েটাকে দেখেছে সেদিন থেকেই হৃদ আলাদা কিছু ফিল করে সাথীকে দেখলে। আনমনেই হেঁসে উঠল সে।’
____
দুপুরের কড়া রোদ্দুরে ঘিরে ধরেছে আকাশদের বাড়িটা। চারদিকে বসন্তের মৌসুমের বাতাস ছড়িয়েছে। গাছের পাতারা সেই বাতাসের ছোঁয়ায় দুলছে এদিকে থেকে ওদিকে। বাড়ির চারপাশে ঘিরে থাকা রঙিন পর্দাগুলোও উড়ছে খুব। যেন কিছু নতুন্তের গন্ধ পেয়েছে তাঁরা।
এসবের মাঝদিয়েই রান্নাঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আকাশ আর তিথি। কারন তাদের উদ্দেশ্য হলো গ্র্যান্ডমার জন্য নিজ হাতে কিছু তৈরি করে খাওয়ানো। আকাশ কিছুটা বিচলিত হয়ে তাকিয়ে আছে তার সামনে থাকা শাকসবজি আর মাছ মাংসের দিকে। সেই ভাবে কোনোদিন রান্নাঘরে তেমন একটা পা রাখেনি আকাশ। সেই ছোট্ট বেলায় একবার রান্না ঘরে পা রেখেছিল আর সেদিন যে কান্ড হয়েছিল ভাবলে এখন টেনশন হচ্ছে তাঁর। আজ কি থেকে কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না আকাশ। আকাশকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল তিথি,
‘ কি হলো তুমি ওভাবে দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
তিথির তুমি ডাক শুনে অবাক চোখে তাকালো আকাশ তিথির দিকে তারপর বললো,
‘ না মানে কি থেকে কি করবো কিছুই তো বুঝতে পারছি না।’
‘ আরে চাপ নিও না আমি তো আছি।’
বলেই এগিয়ে গেল তিথি সামনে। তিথিকে এগোতে দেখে আকাশও এগিয়ে গেল তিথির পিছন পিছন। তারপর প্রথমে সবজি কাটা দিয়ে শুরু করলো তিথি। হাতে একটা আলু নিয়ে চাকু দিয়ে কাটতে শুরু করলো তিথি। আর আকাশকে বললো,
‘ তো রেডি জামাই।’
এবারের কথা শুনে তো আকাশের কাশি উঠে গেল। আকাশকে কাশতে দেখে তিথি চটজলদি একগ্লাস পানি এনে দিল আকাশকে। আকাশও ঢকঢক করে পুরো পানিটা খেয়ে নিলো। আকাশ পানিটা খেয়ে বলে উঠল,
‘ একটু বাড়াবাড়ি হচ্ছে না তিথি।’
‘ আরে বাড়াবাড়ি কিসের জামাই আপনি আমার জামাই আর আমি আপনার বউ সো প্যারা নাই জাস্ট চিল বেবি..
‘😳😳😳
আকাশের রিয়েকশন দেখে হেঁসে উঠলো তিথি। তিথির হাসির দেখে কিছু বললো না আকাশ। আপাতত আকাশ আর তিথির কথায় নজর না দিয়ে কাজে নজর দিলো। তারপর শুরু হলো আকাশ তিথির কুকিং।’
পাক্কা দু’ঘন্টা রান্না করে অনেক কিছু তৈরি করেছে আকাশ তিথি। এখন শুধু পায়েস তৈরি করা বাকি। আকাশ তো পুরোই ক্লান্ত হয়ে গেছে রান্না করতে করতে ঘেমে একাকার অবস্থা তাঁর। আকাশের অবস্থা দেখে হেঁসে উঠলো তিথি। তিথিকে হাসতে দেখে অবাক হয়ে বলে উঠল আকাশ,
‘ কি হলো তুমি হাসছো কেন?’
‘ হাসবো না তো কি করবো জামাই জীবনে মনে হয় আজই রান্না ঘরে ঢুকেছো তাই না..
‘ কি বলতে চাইছো বলে তো..
‘ না মানে এভাবে আর আর দু’দিন রান্না ঘরে আসলে তোমাকে তো আর খুঁজে পাওয়াই যাবে না।’
‘ খুঁজে পাওয়া যাবে না কেন? এই রকম বড় বড় রান্না করা কোনো ব্যাপার নাকি..
‘ হুম তা তো দেখতেই পাচ্ছি, পুরো ফ্রিজে রাখা তরমুজের মতো দেখাচ্ছে তোমাকে?’
‘ কি বললে তুমি?’
‘ না কিছু বলি নি।’
বলেই তাড়াতাড়ি রান্নার দিকে মনোযোগ দিলো তিথি। হয়তো এবার একটু বেশি বাড়াবাড়ি করছে সে।’
তিথিকে চুপ হতে দেখে আকাশও আর বেশি কিছু বললো না একটা শসা হাতে নিয়ে চাকু দিয়ে কাটা শুরু করতে লাগলো সে। হঠাৎই শসা কাটতে গিয়ে আঙুল কেটে গেল আকাশের। সাথে সাথে মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো তাঁর,
‘ আহ্।’
আকাশের মুখে হুট করে এমন শব্দ শুনে চমকে উঠলো তিথি। সামনেই আকাশের আঙুল দিয়ে রক্ত পড়তে দেখে দৌড়ে গেল সে। কিছুটা হতভম্ব কন্ঠ নিয়ে বললো সে,
‘ আপনি ঠিক আছেন স্যার?’
‘ হুম ওই একটু কেটে গেছে কি?’
‘ কই দেখি কতখানি কেটেছে?’
‘ না আমি ঠিক আছি।’
‘ হাতটা তো দেখান।’
বলেই জোর করে আকাশের হাতটা নিজের দিকে এগিয়ে নিল তিথি। অনেকখানি কেটে গেছে হাতটা। তিথি হাল্কা ঘাবড়ানো ফেস নিয়ে বললো,
‘ আপনিও না একটু সাবধানে কাটবেন না?’
‘ না মানে।’
‘ হইছে রাখুন আপনার না মানে।’
বলেই চটজলদি গ্যাসের চুলা অফ করে পায়েস ঢেকে দিল তিথি। তারপর আকাশের হাত ধরে চললো সে উপরে। রান্না তাদের প্রায় শেষ।’
___
বিছানায় বসে আছে আকাশ আর ওর পাশেই তুলোর মধ্যে স্যাভলন লাগাচ্ছে তিথি। তিথির কাজে আকাশ বলে উঠল,
‘ তিথি এগুলো কিছু করতে হবে না আমি ঠিক আছি।’
‘ আপনি না বড্ড বেশি কথা বলেন। কই দেখি আপনার হাত?’
এবার আর কিছু বললো না আকাশ নিশ্চুপেই নিজের হাতটা এগিয়ে দিল সে তিথির দিকে। আর তিথিও আকাশের হাতটা ধরে আস্তে আস্তে স্যাভলন দিয়ে ক্ষতের জায়গাটা পরিষ্কার করতে লাগলো। হাতে স্যাভলন লাগতেই চমকে উঠলো আকাশ। আকাশের কাজ দেখে তিথিও বেশি কিছু না ভেবে ফুঁ দিতে লাগলো আকাশের আঙুলে।
আর আকাশ তাকিয়ে রইলো তিথির মুখের দিকে। একরাশ মুগ্ধতা এসে করলো তাঁকে। আনমনেই মুচকি হাসলো সে।’
____
ডাইনিং টেবিলে বসে আছে গ্র্যান্ডমা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে আকাশ তিথি। ওদের এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ কি হলো তোমরা দাঁড়িয়ে আছো কেন?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশ উৎসাহের সাথে বলে উঠল,
‘ গ্র্যান্ডমা তোমার জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে?’
আকাশের কথা শুনে গ্র্যান্ডমা অবাক হয়ে বললো,
‘ সেটা কি?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশ এগিয়ে আসলো ডাইনিং টেবিলের কাছে তারপর ঢেকে রাখা খাবারগুলোর ঢাকনা উঠিয়ে দিয়ে বললো,
‘ গ্র্যান্ডমা এই সব খাবারগুলো আমি আর তিথি মিলে বানিয়েছি।’
আকাশের কথা শুনে গ্র্যান্ডমার অবাকের চরম সীমানায় পৌঁছে গিয়ে বললো,
‘ সত্যি তুমি আমার জন্য রান্না করেছো আকাশ?’
‘ হুম এই দেখো কত কিছু রান্না করেছি তোমার জন্য সব তোমার ফেভারিট খাবার।’
‘ আর রান্না করতে গিয়েই হাতটা কেটে ফেলেছো তাই না?’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশ মাথা চুলকিয়ে বললো,
‘ ওই আর কি ওসব বাদ দেও। আগে দেখ তোমার জন্য কি কি রান্না করেছি?’
আকাশের কাজ দেখে প্রচন্ড খুশি হয়ে বললো গ্র্যান্ডমা,
‘ আমার তো বলে বিশ্বাসই হচ্ছে না আকাশ তুমি আমার জন্য।’
‘ কেন বিশ্বাস হচ্ছে না শুনি আমি কি রান্না করতে পারি না গ্র্যান্ডমা।’
‘ না তা হবে কেন? মনে আছে ওই যে ছোট বেলায়?’
‘ তুমিও না গ্র্যান্ডমা ওসব বাদ দেও..
গ্র্যান্ডমাকে চুপ করাতে দেখে বললো তিথি,
‘ ছোট বেলায় কি হয়েছিল গ্র্যান্ডমা?’
‘ না কিছু হয় নি (আকাশ)
‘ গ্র্যান্ডমা তুমি বলো ছোট বেলায় কি হয়েছিল?’
‘ আসলে ছোট বেলায় একদিন রান্না করতে গিয়ে পুরো রান্না ঘর মাখিয়ে ফেলেছিল আকাশ সাথে নিজেকেও হলুদ দিয়ে ভূত বানিয়েছিল আর রান্নার কথা তো বাদই দেও খাবার পুড়িয়ে কালো বানিয়ে ফেলেছিল।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথি উচ্চ স্বরে হেঁসে উঠল। তিথিকে হাসতে দেখে বললো আকাশ,
‘ হুম এখন হাসা শেষ হলে খাবার খাওয়া শুরু করা যাক…
“আকাশের কথা শুনে গ্র্যান্ডমাও বলে উঠল,
‘ হুম।’
‘তাহলে এখন তাড়াতাড়ি খাওয়া শুরু করো গ্র্যান্ডমা।’
বলেই আকাশ নিজেই খাবার সার্ভ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো। গ্র্যান্ডমা খেতে নিলেই আকাশ বলে উঠল,
‘ ওয়েট গ্র্যান্ডমা আজ তোমায় আমি খাইয়ে দিবো।’
বলে আকাশ চেয়ারে বসে খাইয়ে দিতে লাগলে গ্র্যান্ডমাকে আকাশের কাজে আরো খুশি হলো গ্র্যান্ডমা। গ্র্যান্ডমার মুখে এক চামচ খাবার মুখে দিয়েই বললো আকাশ,
‘ খাবার কেমন হয়েছে গ্র্যান্ডমা?’
আকাশের কথা শুনে তিথিও তাকালো গ্র্যান্ডমার দিকে। কিছুটা অস্থিরতা ফিল হচ্ছে দুজনের। দুজনের অবস্থা বুঝতে পেরে গ্র্যান্ডমা হেঁসে বলে উঠল,
‘ হুম খাবার খুব ভালো হয়েছে আমার নাতি যে এত সুন্দর রান্না করতে পারে আগে জানতাম না তো।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশ তিথি দুজনেই খুশি হলো। আকাশ তো একটু ভাব নিয়েই বলে উঠল,
‘ দেখতে হবে না কে বানিয়েছে।’
আকাশের কথা শুনে হেঁসে উঠলো গ্র্যান্ডমা সাথে আকাশও। তারপর দাদি-নাতি মিলে খুব হাসিখুশি ভাবে খাবার খেতে লাগলো।’
অন্যদিকে তিথি শুধু তাকিয়ে রইলো আকাশ আর গ্র্যান্ডমার মুখের দিকে এক অদ্ভুত ভালো লাগা এসে গ্রাস করেছে তাকে। হঠাৎই তিথি বলে উঠল,
‘ এটা কিন্তু ঠিক না দুই দাদি নাতি একসাথে হয়ে আমায় তো ভুলেই গেছে।’
তিথির কথা শুনে আকাশ বলে উঠল,
‘ দেখছো গ্র্যান্ডমা একটু তোমায় খাইয়ে দিচ্ছি ওমনি তোমার নাতবউর হিংসে হতে শুরু হয়েছে।’
আকাশের কথা শুনে তিথি কোমড়ে হাত দিয়ে বললো,
‘ কি বললে তুমি।’
‘ না কিছুই বলি নি।
তিথি আর আকাশের কান্ড দেখে হেঁসে উঠল গ্র্যান্ডমা। তারপর খুশি মনে বললেন উনি,
‘ আরে ভুলবো কেন আয় এখানে।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে তিথি আকাশকে একটা ভেংচি কেটে বসে পড়লো আকাশের সামনে থাকা চেয়ারে তারপর তিথিও বললো,
‘ আমিও তোমায় খাইয়ে দিবো গ্র্যান্ডমা?’
তিথির কথা শুনে গ্র্যান্ডমাও খুশি হয়ে বললো,
‘ ঠিক আছে।’
আর আকাশ বলে উঠল,
‘ দেখেছো গ্র্যান্ডমা বলেছিলাম না হিংসে হচ্ছিল তোমায় নাতবউর।’
আকাশের কথা শুনে তিথি বলে উঠল,
‘ এটা কিন্তু ঠিক না গ্র্যান্ডমা তোমার নাতি আমায় হিংসুটে বলছে।’
‘ হুম তুমি সেটাই…
‘ গ্র্যান্ডমা।’
তিথির কথা শুনে গ্র্যান্ডমাও বলে উঠল,
‘ ওর কথা বাদ দেও তো তিথি তুমি আমায় খাইয়ে দেও।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে খুশি হয় তিথি। তারপর সেও গ্র্যান্ডমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো। এরপর আকাশ তিথি দুজন মিলেই খুশি মনে লাঞ্চ করিয়ে দিল গ্র্যান্ডমাকে। হঠাৎই গ্র্যান্ডমা বলে উঠল,
‘ এবার তবে তোমরা দুজন দুজনকে খাইয়ে দেও আকাশ তিথি।’
গ্র্যান্ডমার কথা শুনে আকাশ তিথি দুজনেই একে অপরের দিকে তাকিয়ে বললো,
‘ কি?’
!
!
#চলবে…..