মেঘের_উল্টোপিঠ,২২,২৩

#মেঘের_উল্টোপিঠ,২২,২৩
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
#পর্ব__২২

গ্রীষ্মের প্রথমভাগ আজ হতে শুরু। ঝড়ের দাপটে আশপাশে দমকা হাওয়ার তান্ডবলীলা চলছে। হসপিটালের শুভ্র রঙের পর্দা গুলো অবিন্যস্ত ভাবে উড়ছে অনিলের প্রভাবে।শীতল অনিলে কেমন শীত শীত করছে। আমার পূর্ণবস্থা পর্যবেক্ষণ করে পূর্ব নিজের স্থান থেকে উঠে গিয়ে কেবিনের থাই গ্লাস গুলো লাগিয়ে দেন। শেষে নিজ স্থানে ফিরে এসে বসলেন। আমার এক হাত টেনে ফের টেনে নিয়ে নিজের হাতের মুঠোয় মুঠোবন্দি করে নিলো। তার দৃষ্টি শীতল তবে তার বর্তমান মুখোশ্রী দশা এমন যেনো ঝড় বাহিরে না পূর্বের ওপর দিয়ে বইয়ে গিয়েছে।

পূর্ব আমার মাথায় আলত হাত রেখে কোমল কন্ঠে বললেন,

‘ ঠিক আছো? কোনো সমস্যা হচ্ছে তোমার? ‘

আমি এপাশ – ওপাশ মাথা নাড়িয়ে ‘ না ‘ বলি। কেবিনের কোণায় বসে থাকা সায়ান ভাইয়ার পানে আমার দৃষ্টিপাত গিয়ে স্থির হয়। ভাইয়ার বিষন্ন চাহনি। আমি তাকাতেই সে উঠে এসে আমার পাশে দাঁড়ায়। মাথায় আদুরে ছোঁয়া দিয়ে নম্র কন্ঠে বলে,

‘ কি হয়েছে? কিছু বলবি? খিদে পায়নি তোর?খাবার আনি?’

আমি ওষ্ঠাধর প্রসারিত করে ধরা গলায় বলে উঠি,

‘ ভাইয়া! আমি সায়াশ ভাইয়াকে দেখেছি। সায়াশ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে হাসছিলো জানো?সেই আগেরকার প্রানবন্ত হাসি! আমায় হাত নাড়িয়ে ইশারা করে ডাকছিলো। আমি যেতে পারিনি ভাইয়া। সেন্সলেস হয়ে গিয়েছি। আমায় তুমি আবার নিয়ে যাওনা ওখানে। আমি ভাইয়ার সাথে দেখা করবো। বড় ভাইয়া বেঁচে আছে। বিশ্বাস করো তুমি! ‘

ভাইয়া নাক টানলেন। নেত্র কার্নিশে জমে থাকা অশ্রুকণা নিজ হাত দ্বারা আলত হাতে মুছলেন। শেষে শ্লেষের গলায় বললেন,

‘ এটা তোর হ্যালোসিনেশন দোল। বোঝার ট্রাই কর। তুই প্রতেকবার পাহাড়ে উঠলে ভাইয়াকে দেখিস কল্পনায় কারন তোর কল্পনায় তখন ভাই থাকে। ডাক্তার কি বলেছিলো মনে নেই আগের বার? পাহাড় থেকে সায়াশ ভাই পড়ে গিয়েই তো আমাদের থেকে দূরে চলে গিয়েছিলো। তার ওপর তোর চোখের সামনে থেকে তাই তুই এখনো ভুলতে পারিস নি ঘটনাটা। আমারই ভুল! পূর্বকে বলে রাখা উচিত ছিলো। আর হবেনা বোন। তোর এই অধম ভাইটাকে মাফ করে দে! আমি তোর প্রোপার কেয়ার করতে পারিনি। ‘

আমি নিস্তব্ধ হয়ে রইলাম! ভাইয়ার হাতটা শক্ত করে ধরে নিশ্চুপতা ধরে রাখলাম। আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়তাম তখন আমি এবং আমার বড় ভাই! সায়ান ভাইয়ার জমজ বড় জন যিনি, সেই ভাইয়া’সহ কক্সবাজার গিয়েছিলাম পরিক্ষা শেষে। সায়াশ ভাইয়া তখন অর্নাস ফার্স্ট ইয়ারে পড়তো। সেদিন খুব ভোরে আমার জেদের জোরে আমি, ভাই পাহাড়ে উঠি! পাহাড়ের সৌন্দর্য দেখার ছলে চোখ যায় আমার পাহাড়ি গাছের ফুলের দিকে। অনাবশ্যক জেদ ধরে বসি ফুলগুলো চাই আমার। গাছ একদম কিনারে হলেও ভাই ফুল আনতে যায়। কিন্তু খানিক এগোতেই আমি ভীতি নিয়ে বারণ করেছিলাম ভাইকে। তিনি শুনেননি! তার মতবাদ ছিলো, ‘ তার বোনের করা আবদার সে অপূর্ণ রাখবেনা৷ ‘

অপূর্ণ রাখেননি! ফুলগুলো কোনোরকম নিয়ে ফিরে আসার পথে পিচ্ছিলো জায়গায় স্লিপ করে তিনি পড়ে যান নিচে। আমার দম ফাটানো চিৎকারে সেদিন আকাশ – বাতাসে ছেয়ে গিয়েছিলো। পাহাড়ে যিনি আমাদের উঠতে সাহায্য করছিলেন তিনি ঘাবড়ে নিচে ঝুঁকে দেখলেন। সেই লোকটাও বারংবার নিষেধ করছিলো ওখানে যেতে। ভাই শুনেনি! আমার এক উদ্ভট জেদের জোরে সে আজ আর বেঁচে নেই। পাহাড়ের নিচটায় পানি ছিলো। ভীষণ গভীর! লাশ আজ অব্দি পাইনি আমরা। খোঁজার চেষ্টা চালিয়ে ব্যার্থ হয়েছে সকলে। ভাইয়ের মৃত্যুর কারণটা আমি আমার ওপরই আরোপ করে নিয়েছি। আমিই দায়ী!

নেত্র দ্বারা বর্ষিত হয় ক্ষুদ্র অশ্রকণা। অশ্রুসিক্ত নয়নে সায়ান ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,

‘ সায়াশ ভাইয়ার মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী। তোমরা কেনো আমায় জেলে দিচ্ছো না। জ্বলজ্যান্ত একটা মানুষকে হত্যা করেছি আমি। ‘

ডুকরে কেঁদে উঠতেই ভাইয়া ধমকে বললেন,

‘ একদম নিজেকে দোষারোপ করবিনা দোল। মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলবো তবে। এখানে তোর বিন্দুমাত্র দোষ নেই। ভাইয়ার মৃত্যু এভাবেই লিখা ছিলো। তাই এভাবে হয়েছে। পূর্ব বোঝা ওকে! অযথা কান্নাকাটি করে লাভ নেই। ‘

ভাইয়া তড়িৎ বেগে কেবিন থেকে প্রস্থান করলেন। নিঃশব্দে ক্রন্দনরত কালীন আমার গালে কারো ধীর স্পর্শ পড়ে। স্পর্শকারী ব্যাক্তি যে পূর্ব তা বুঝতে কিঞ্চিৎ সময় লাগেনি। তিনি দুই হাতে গালে বহমান অশ্রুকণা সুদক্ষ হাতে মুছে ফেললেন। অশ্রু কণা গুলো যেনো তার শত্রু সমেত। হাত দ্বারা মুছে’ও ক্ষ্যান্ত হলেন না তিনি। পকেট থেকে রুমাল বের করে গালে স্পর্শ করিয়ে বললেন,

‘ অযথা কাঁদছো এখন। সম্পূর্ণ অযথাই! সায়াশ তোমার কান্না দেখছে কিন্তু। কষ্ট পাচ্ছে প্রচুর। কান্না থামাও দোল। সায়াশের জন্য দোয়া করো যেনো ও জান্নাত লাভ করে। এভাবে কেঁদে লাভ আছে?’

তিনি উঠে দাঁড়িয়ে বেডে বসলেন। আমার হাত দুটো কোমল ভাবে ধরে কাছে টেনে নিজের বক্ষঃস্থলের সাথে চেপে ধরে মৃদু কন্ঠে বললেন,

‘ স্টপ ক্রায়িং! আমার কষ্ট হচ্ছে বুঝোনা? সর্বদা তুমি আমাকে কষ্ট দাও কেনো বলোতো? হুঁশশশ! আর কাঁদেনা। ‘

তার তুমুল আবেদনের নিকট আমার জোরালো কান্না খানিক মিইয়ে আসে। ক্রন্দনের খাদ নেমে আসার পরও হেঁচকি ওঠা বন্ধ হয়নি। নাক টেনে বললাম,

‘ আমার চোখ। আমি পানি ঝড়াবো! আমি কাঁদবো। এখানে আপনার কষ্ট পাওয়ার কি হলো?’

‘ আমার কষ্ট পাওয়ার কি হলো? এটা যদি বুঝতে তাহলে আমি নিশ্চয়ই তোমাকে ডাফার বলতাম না? ‘

ছিটকে দূরে সরে মুখোশ্রী পাংশুটে করে নিয়ে বলে উঠি, ‘ আপনি বদ! অত্যান্ত পরিমাণে বাজে লোক।’

পূর্ব হাসলেন। নিঃশব্দে। প্রানবন্ত হাসি। হুট করে আমার মুখোশ্রীর প্রতি কিয়ৎ পরিমাণ ঝুঁকে নিয়ে নেত্রযুগলের উল্টোপিঠে নিজের অধরের স্পর্শ দিলেন আলত রূপে। শেষে উঠে দাঁড়িয়ে কেবিন হতে বের হতে হতে বললেন,

‘ তুমি আমায় বদ বলো আর বাজে লোকই বা বলো আমার কাছে মিষ্টি লাগে শুনতে। আরো কিছু বলার থাকলে বলতে পারো। আই ডোন্ট মাইন্ড! ‘

পূর্ব চলে যেতেই হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ অরিনের। অরিন দম নিয়ে বলল,

‘ দেখ দোল! আর যাই কর এমন হুটহাট সেন্সলেস টেন্সলেস হইস না। তুই জানস?তুই যখন সেন্সলেস ছিলি তখন পূর্ব ভাইয়ের পাগলপ্রায় অবস্থা ছিলো। হসপিটালে তোরে নিয়া আইসা পুরা হসপিটাল মাথায় তুলে ফেলছে। বাপড়ে! কি একটা অবস্থা। আমি তো ভাবতেছিলাম পূর্ব ভাই কখন জানি সেন্সলেস হয়ে ধপাস করে পড়ে।’

অরিনের কথা শ্রবণ করা মাত্র মৃদু হাসি। আমার জানা আছে তার কিরূপ প্রতিক্রিয়া ছিলো আমার এই অবস্থায়। জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পূর্বেই তা বিন্দু খানেক দর্শন হয়েছে।
___

ফোন স্ক্রিনে ভেসে থাকা তথ্যগুলো দেখে কপালের চামড়া কুঁচকে এলো। তীক্ষ্ণতর দৃষ্টি প্রখরে রূপ নিলো। অন্তরালে চেপে রাখা ক্ষোভ দ্বিগুণে পরিণত হলো। শোভনের কু-কান্ড সম্পর্কে আগ হতে আমি কিয়ৎ পরিমাণ অবগত ছিলাম। আজ যা সন্দেহ আকারে ছিলো তা স্পষ্টত হয়ে সত্যিতে প্রমাণিত হলো। আমার অচঞ্চল নেত্রযুগল হটাৎই চঞ্চলতায় পরিণত হয়। সেদিন শোভন পূর্বকে যে যেই খারাপ কথা বলে গালমন্দ করেছিলো তা নেত্র সম্মুখে জ্বলজ্বল করছে। নিজের গালে নিজেরই আঘাত করার সুপ্ত বাসনা জন্ম নিলো। নেত্র যুগলের কার্নিশে জমে থাকা ক্ষুদ্র অশ্রু গাল বেয়ে পড়লো। নিদারুণ কষ্ট হচ্ছে! কেনো সেদিন পূর্বকে আমি শোভনের সেই ধারালো কুরুচিপূর্ণ কথা শ্রবণ করার আগ মাত্র কোনো প্রতিবাদ করতে পারলাম না?কেনো?

সেদিনকার ঘটনা শোভন ইচ্ছাকৃত ভাবে হাজির করেছে। নয়তো গ্রামের সেই ২০ কয়েক জন আর যাইহোক স্বামী স্ত্রীর এক রুমে থাকা নিয়ে কোনো রূপ মতবিরোধ করবে না। নানু বাড়িতে থাকা আমার রুমটি ছিলো বদ্ধাকার। কিন্তু সেদিন! সেদিন আমার রুমটায় রঙের কাজ চলছে বলে অন্য এক খোলামেলা রুমে পাঠিয়ে দেয় আমাকে। রুমটায় বেশ কয়েক জানালা ছিলো। পর্দা ছাড়া। ৩ তলার উপরে হওয়াতে আমি সেদিন পর্দা নিয়ে কোনো রকম মাথা ঘামায়নি। পূর্ব এবং বাকিদের ইচ্ছাকৃত ভাবে মদ খাওয়ানোর কাজটা হাসিল হয়েছে শোভনের আদেশে। অতঃপর পূর্ব যখন আমার রুমে আসে গোপনে লোক দিয়ে ভিডিও করা। গ্রামবাসীর মধ্যে মিথ্যা গুজব ছড়ানো আমাদের এখনো বিয়ে হয়নি। সকাল – সকাল গ্রামের অর্ধেকাংশ মানুষকে এই গুজব দিয়ে ডেকে আনা হয়েছে শুধুমাত্র আমরা স্বামী, স্ত্রী না। এতোটা দূর যেতে পারতো না শোভন। ওর অতো সাহস নেই। এর পিছনে যে নানুর হাত আছে তা আমার ভীষণ বড় আঘাতপ্রাপ্ত হওয়ার কারণ। শোভনের সাথে বিয়েতে সটান ‘ না ‘ বলে দেয়ায়, সিহা মামী, নানু এবং শোভন মিলে এই পরিকল্পনা তৈরি করেছে।

গ্রামের ব্যাক্তিবর্গ’রা হয় সাধাসিধে। তারা কোনো প্যাচ বুঝে না। এইযে, তারা যখন কাঙ্খিত স্থানে উপস্থিত হলো তখনই জেনে গেলো আমি, পূর্ব হ্যাজবেন্ড – ওয়াইফ! তারা তখনই চলে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতে শোভন এবং তার চেলা -পেলার কড়া দৃষ্টি উপেক্ষা করে ওখানেই থেমে যায় ভীতিতে। শোভনের এক অদৃশ্য দাপট আছে গ্রামে। ওর দাপটে যেই মানুষগুলো কুপোকাত তাদেরই ধরে ধরে ডেকে আনা হয়েছে। নয়তো গ্রামে থাকা শিক্ষিত কোনো ব্যাক্তিবর্গকে আনলে তারা নিশ্চিত এই কান্ডে চুপ থাকতেন না। মেরে তক্তা বানিয়ে ফেলতেন শোভনকে। কিন্তু শোভন বুদ্ধিমত্তার সাথে গ্রামে থাকা মূর্খ, সাধাসিধে মানুষ দের ধরে এনেছে দাপট এবং হুমকি দিয়ে। বাকিরা যদিও পরবর্তীতে এসে বিচার বসিয়েছিলো এমন উদ্ভট কর্ম সম্পাদনের জন্য। কিন্তু ফলাফল শূন্য এসেছে। নানা চেয়ারম্যান পদে থাকায় সেদিন শোভন শাস্তির হাত থেকে সুরসুর করে সরে গিয়েছিলো।

দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলি! রাগে দেহ কাঁপছে রীতিমতো। আমার কাছে এই তথ্য সমূহ প্রদান করেছে শোভনের এক চ্যালা। টাকা দিয়ে তাকে হাতের মুঠোয় এনে অতিকষ্টে সব তথ্য জোগাড় করেছি। এবার শুধু সবকিছু প্রকাশিত করার পালা। ফোনের কর্কশ ধ্বনি কর্ণপাত হতে সেদিকে দৃষ্টিপাত ফেলি। শোভনের ফোন। বিগত কয়েক দিন যাবৎ ফোন দিচ্ছে। ধরিনি! কিন্তু আজ ধরার তুমুল ইচ্ছা জাগ্রত হলো। ফোন রিসিভ করে কানের বহির্ভাগে ধরতেই ওপাশ হতে গমগম সুরে শোভন বলল,

‘ ফাইনালি ডার্লিং! ফোনটা ধরলে তবে? এতো কিসের ব্যাস্ততা তোমার? কবে থেকে ফোন দিচ্ছি। নাকি পূর্ব! তোমার সো কল্ড কু** স্বামী আমার ফোন রিসিভ করতে দেয়নি?’

আমি নেত্রযুগল বন্ধ করে দাঁতে দাঁত চেপে আগত রাগ দমন করি। এখন আমার অবগত কিছু কোনো মতে প্রকাশ করা সঠিক হবেনা। তবুও শেষে রুষ্ট কন্ঠে বলে উঠি,

‘ আমার স্বামীকে তুই এ যাবৎ যতগুলো বাজে কথা বলে তার সম্মানে হানি এনেছিস! তার এক একটা জবাব আমি কড়ায় – গন্ডায় মিটিয়ে দিবো।বি প্রিপ্রেয়ার’ড! ‘

অপর পক্ষ হতে কোনো জবাব আসার পূর্বেই ফোন ছুঁড়ে ফেলি ফ্লোরে। সঙ্গে সঙ্গে ফোন দুই ভাগ হয়ে দু’পাশে ছড়িয়ে পড়ে। রাগের মাত্রা কিয়ৎ কমাতে বেলকনিতে চলে আসি। হসপিটাল থেকে রিলিজ কালই দিয়েছে। আসার পর ঘুমে কুপোকাত ছিলাম। পূর্বকে দেখা হয়নি। ঘুম থেকে উঠেও না! এই মানব কোথায় আসলে?

বেলকনিতে স্থির হয়ে দাঁড়ানোর কিয়ৎক্ষন পর উপলব্ধি হয় পিছন হতে এক জোড়া বলিষ্ঠ হাত আমায় আলত করে জরীয়ে ধরছে। হাত এসে ঠেকে তার রেলিঙ। আমি আলত সুরে বলি,

‘ কোথায় ছিলেন সকাল থেকে?’

পূর্ব আমার ঘাড়ে নিজের থুতনি স্থাপন করলেন আলত করে। তার এবং আমার মধ্যকার সম্পর্ক এখন আস্তেধীরে অনেকটাই স্বাভাবিক হচ্ছে। বলা চলে পূর্বের দিক দিয়ে! আমি এখনো থম। পূর্ব ভরাট কন্ঠে বললেন,

‘ ছিলাম আশপাশেই। কেনো মিস করছিলে আমায়?’

তার বলা কথাটি কাঁটায় কাঁটায় সত্য হলেও আমি তা অন্যত্রে সরিয়ে কাঠ কাঠ গলায় বললাম,

‘ উঁহু! একটুও না। আপনি কে যে আপনাকে মিস করবো? ‘

পূর্ব আদুরে কন্ঠে বললেন, ‘ তোমার একমাত্র স্বামী আমি। মিস করাটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। ‘

‘ আপনি আমার স্বামী। এটা আমার কোনো ক্ষেত্রে মনে হয়না। সর্বদা আপনার গম্ভীর চেহারা দেখলে টিচার টিচারই ফিলিং’সই আসে। স্বামী হিসেবে মানবো কিভাবে? স্বামী হিসেবে কি কাজ করেছেন
যে আপনাকে হ্যাজবেন্ড মানবো?হুহ্?’

কথা সমাপ্ত হতেই চোখমুখ খিঁচে বন্ধ করে নেই। অধর কামড়ে নিভৃতে বলি, ‘ এটা কি বললাম? এই কথাটা বলা আদও ঠিক হলো?’

পূর্ব হুট করে আমার ঘাড় চেপে আমায় তার মুখোশ্রী সম্মুখে টেনে আনলেন। চিবুক স্পর্শ করে থাকাকালীন হটাৎ তিনি আমার গাল ধরে উঁচু করে তার ওষ্ঠাধর দ্বারা আমার অধর জোড়া কোমল ভাবে আঁকড়ে ধরলেন। আমি হাত দিয়ে তার বক্ষঃস্থলে যতোটা তেজে ধাক্কা দিচ্ছি, তিনি তার অধরের ছোঁয়া ততটাই গভীর করছেন। শেষে নেত্রযুগল অনায়াসে বন্ধ করে নেই। দমকা হাওয়া দাপটের সহিত আমাদের দু’জনের সর্বাঙ্গ ছুঁয়ে যায়।

চলবে…

#মেঘের_উল্টোপিঠ
#সাদিয়া_মেহরুজ_দোলা
#পর্ব__২৩

‘ আই হোপ এবার আর আমায় দেখে টিচার টিচার ফিলিং’স আসবে না। রিসেন্ট করা কাজটার মাধ্যমে এটলিষ্ট আমি তোমার হ্যাজবেন্ড এটা তোমার মনে থাকবে। রাইট? নাকি এখনো না? অন্য কিছু করতে হবে? ‘

শেষোক্ত শব্দফালি সন্দিহান গলায় বললেন পূর্ব। আমি আমার অধর যুগলের ওপর হতে হাত সরিয়ে লজ্জায় চুপসে গিয়ে নতজানু হই। গালের দুপাশে যে ইতিমধ্যে রক্তিম আভা তার নিজ দায়িত্বে ফুটে উঠেছে তা বুঝতে বেগ পেতে হলো না। কন্ঠনালি যেনো জমে গিয়েছে। তাই পূর্বের ফের আমার প্রতি ঝুঁকে পড়ার থেকে বারণ করতে কয়েকটা কঠিন শব্দগুচ্ছো ছুঁড়ে মারা হলো না।

পূর্ব আমার মুখোশ্রীর প্রতি কিয়ৎ পরিমাণ ঝুঁকলেন।তিনি তার হাত বাড়িয়ে আমার গালে রেখে গাল ধরে আলত টেনে বললেন,

‘ তোমার গালদুটো লজ্জা পেলে এতো কিউট লাগে। কামড় দেই? তাহলে আমায় স্বামী মনে করার তোমার ফিলিং’সটা ডিপ হবে। ‘

পূর্ব আমার গালে তার ওষ্ঠদ্বয় আনার পূর্বেই তেজী কন্ঠে কিছু বলবো তৎক্ষনাৎ নিচ থেকে অরণ্য ভাইয়া চেঁচিয়ে বললেন,

‘ এই পূর্ব! ওখানে দাঁড়িয়ে কি করিস?জলদি নিচে আয় তো একটু। গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে। ‘

পূর্ব ভীষণ বিরক্তি আভাস টেনে আনলেন চেহারায়। সটান হয়ে দাঁড়িয়ে ঘাড় বাঁকালেন। আমি তার আড়ালে হওয়াতে অরণ্য ভাইয়া বা নিচ হতে অন্য কেও আমায় দেখতে পাবে না। অরণ্য ভাইয়াও আমায় দেখতে পায়নি বলে স্বস্তির শ্বাস ফেললাম। নয়তো তুমুল লজ্জা গ্রাস করে নিতো আমায়। পূর্ব উল্টোপিঠ হয়ে আমায় নিজের আড়ালে রেখেই বললেন,

‘ কি সমস্যা? ডিস্টার্ব করিস কেনো?’

‘ ডিস্টার্ব কই করলাম ব্যাটা। ফ্রীই তো আছিস দেখছি। নিচে আয়! কথা আছে। জলদি আসিস একটু। গুরুত্বপূর্ণ না হলে তো ডাকতাম না। আমি জানি তুই এখন ভালোবাসা আদান প্রদান করতে ব্যাস্ত। তোর রোমান্সে ডিস্টার্ব করার শখও নেই। ‘

লালাভ আভায় রঞ্জিত হয়ে পাশ দেখে কেটে পড়ি।এদের দু’জনের কথার মাঝে থাকার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই। তবে বেলকনি থেকে রুমে আসার পর দৃশ্যমান হয় পূর্ব রুষ্ট, ক্ষুদ্ধ দৃষ্টি। তা দেখে অরণ্য ভাইয়া নিজ মুখোশ্রীতে খানিক ভীতির প্রভাব ফুটিয়ে তুলে বলল,

‘ দোস্ত! ওমনে তাকাইস না। ভয় লাগে। আমি তো মজা করতেছি। দেখ, নিচে নেমে আবার থাপ্পড় টাপ্পড় মারিস না। তোর তো কথায় কথায় থাপ্পড় মারার অভ্যাস৷ সেদিন বাসর ঘর সাজানো নিয়ে হুদাই দিলি এক থাপ্পড় তোরে না জানানোর জন্য। পিঠে এখনো আমার জ্বলতেছে জানিস?’

অরণ্য ভাইয়া চোখমুখ কুঁচকে ব্যাথাতুর আভাস ফুটিয়ে তোলার তুমুল চেষ্টা করলেন। অতঃপর শেষাংশ দৃষ্টিপাত বেলকনিতে পূর্বের পানে ফেলে চটজলদি প্রস্থান করলেন। অরণ্য ভাইয়া যেতেই পূর্ব মৃদু হাসলেন! সেই হাসি শুভ্র পর্দার আড়াল হতে দেখে শিউড়ে উঠি। ছেলেদের হাসি এতোটা চমৎকার হয়? মাই গড!

সোফায় বিষ্ময় নিয়ে বসলাম। পূর্ব আসলেন তার সেকেন্ড খানেক বাদে। এসেই ধপ করে আমার পাশে বসলেন। দু’হাত টান টান করার ভঙ্গিমা করে বললেন,

‘ অরণ্য কি বলেছিলে শুনলে? আমি নাকি রোমান্সে ব্যাস্ত! এটা যে সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা তা তো শুধু আমরা জানি তাই না? পুরো দুনিয়া ভাবছে আমরা ভালোবাসা আদান প্রদানে ব্যাস্ত। এতো মানুষের ভাবনা মিথ্যে প্রমাণিত করার কোনো মানে হয় দোলপাখি? আসো রোমান্স করি! ‘

আকাশ’সম চমকে ড্যাবড্যাব নেত্রে তার পানে দৃষ্টি ফেলি। পূর্বের আচার – আচরণ ঠিক হজম হচ্ছে না। হুট করে এতোটা পরিবর্তন? এতো লাগামহীন কথাবার্তা? শুধুমাত্র পূর্ব অবগত হয়েছে যখন থেকে আমি তার অন্তরালে আমার জন্য গুপ্ত প্রণয় অনুভূতি সম্পর্কে জেনে গিয়েছি বলে! আমি স্থির চাহনি ফেলে আমতা আমতা করে বলে উঠি,

‘ আপনার কি হয়েছে বলুন তো? আপনি এমন উদ্ভট ব্যাবহার কেনো করছেন? গম্ভীর ছিলেন সেই গম্ভীরতাই আপনাকে বেশ মানায়। এমন লাগামহীন কথাবার্তা তাও আপনার মুখে? আকাশ পাতাল পার্থক্যের ন্যায় লাগে! ‘

পূর্ব ঠোঁট বাঁকিয়ে বললেন, ‘ আমি যেমন তেমনটাই প্রকাশ করেছি। হোয়াটএভার, ফ্রেশ হয়ে আসো খাবার আনছি আমি। ‘

‘ আমার ক্ষুধা নেই। ‘

পূর্ব যেতে যেতে সেই আগের কন্ঠ, আগেরকার সুর, রাশভারী কন্ঠে বললেন,

‘ তোমার ক্ষুধা নেই এটা তো আমি জানতে চাইনি।আমি খাবার আনছি তুমি খাবে। দ্যাট’স ফাইনাল!’

চারপাশে পিনপতন নীরবতা। তপ্তশ্বাস ফেলে মাথা চেপে ধরি। একজন ব্যাক্তির এতো রূপ হয় কেনো?মিনিটে, সেকেন্ডে যেই লোক আমার সাথে গম্ভীরতা ছাড়া কথা বলে না সে আজ হুট করে লাগামহীন, ঠোঁটকাটা কথা বললো? অদ্ভুত!

অতঃপর ফ্রেশ হয়ে আসতেই সোফায় দৃশ্যমান হলো পূর্বকে। পায়ের ওপর পা তুলে ফোনে দৃষ্টি এলিয়ে রেখেছেন। মনোযোগী দৃষ্টিপাত। আমি সেই ফাঁকে রুম হতে কেটে পড়ার সিদ্ধান্ত নেই। পা টিপে টিপে বের হতে নিলেই হাতে আলত জোরে হেঁচকা টান পড়ে। পায়ের গতি হারিয়ে পূর্বের পাশে গিয়ে পড়ি। তিনি আমার হাত ছেড়ে বললেন,

‘ চোরের মতো পালাচ্ছো? লজ্জা হওয়া উচিত। ‘

হাত ডলে নাক কুঁচকে বললাম, ‘ আমি খাবোনা। ‘

পূর্ব তার হাতের ফোনটা রেখে দিলেন। উঠে গিয়ে ওয়াশরুম থেকে চটপট হাত ধুয়ে এসে আমার ওষ্ঠাধর সম্মুখে খাবার তুলে ধরলেন। আমি মাথা অন্যদিকে ফিরিয়ে নিতেই তিনি শক্ত কন্ঠে বললেন,

‘ ত্যাড়ামি করলে তখনকার অসম্পূর্ণ কাজটা আমি সম্পূর্ণ করবো। মনে আছে?তখন গালে..? ‘

ক্ষোভ নিভৃতে চেপে ‘ হা ‘ করতেই তিনি খাবার খাওয়াতে শুরু করেন। পূর্বের বদলে যাওয়া রূপটা আমায় অতিষ্ঠ করে তুলছে ক্ষনে ক্ষনে!

___

গোধূলি প্রহর! আকাশ এখন লাল, হলদেটে রঙে সজ্জিত হয়েছে। দূর দূরান্ত থেকে মুক্ত আকাশের পাখিগুলো ডানা ঝাপটে তাড়া লাগিয়েছে নিজেদের মধ্যে নীড়ে ফেরার তাগিদে! স্বচ্ছ পানিতে আকাশের পূর্ণরূপ প্রতিবিম্ব আকারে পড়ে অসীম সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে যেনো। সুইমিং পুলে আমার ডুবিয়ে রাখা পা যুগল খানিক নড়চড় করতেই অসমান্তরাল ঢেউ পুরো সুইমিং পুল জুড়ে ছেয়ে গেলো। অদ্ভুত মোহনীয় দৃশ্য!

সবাই আপাতত ঘুরতে ব্যাস্ত। আমি হোটেলে পড়ে আছি কারণটা পূর্ব। তার মতবাদ কাল রাতে হসপিটাল থেকে রিলিজ পেয়েছি আজ রেষ্ট নেয়াটা আবশ্যক! পূর্বের বন্ধুগণ! তারা নারাজ ছিলো আমায় ছাড়া যেতে কিন্তু আমি তাদের কোনো রকমে ঠেলেঠুলে পাঠিয়ে দিয়েছি। তাদের ছুটি শেষ হওয়ার বেশি সময় নেই। এমনিতে গ্রামের কাহিনিতে ঘোরার তুমুল ইচ্ছেটা তাদের পূরণ হয়নি। এখন আমার জন্য ফের তাদের ইচ্ছে তে ঘাটতি হলে এটা আমার জন্য কষ্টজনক। পূর্ব, অরণ্য ভাইয়া এবং ভাইয়া আর অরিন এই চার জন যায়নি। তাদের কেনোকিছু বলে রাজি করানো যায়নি। হোটেলেই থেকে গেছে। তবে কিয়ৎক্ষণ আগে আমি ভাইয়া আর অরিনকে হোটেলের বাহিরে হেঁটে আসার জন্য পাঠিয়েছি। নতুন কাপল!নিজেদের মধ্যে দূরত্ব না কমালে বাকি জীবন পার করবে কিভাবে?

পূর্ব এতক্ষণ অব্দি আমার পিছন দিকটায় ছায়ার মতো দাঁড়িয়ে ছিলেন। মিনিট খানেক হবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাজ থাকায় আমায় বলে হোটেলের ভিতর গিয়েছেন। আমি আপাতত একা। পুল সাইডে তেমন কেওই নেই সন্ধ্যাক্ষণ হওয়াতে। তবে একটু পর ভীড় হবে।

নীলচে পানির দিকটায় দৃষ্টি থাকাকালীন হটাৎ আমার ধপ করে কিছু শব্দ হওয়াতে সেদিকে তাকাই। অরণ্য ভাইয়া! মুখোশ্রীতে তার ক্লান্ততা বিদ্যমান। কিয়ৎক্ষণ পর তিনি আশপাশে দেখে বললেন,

‘ পূর্ব নেই তাও তোমার পাশে?বাপড়ে! বিশ্বাস করা কষ্টসাধ্য। এখানে আসার পর তো ছায়ার মতো লেগে থাকতো তোমার। এখন কোথায় গেলো?’

আমি নিম্নসুরে বলি, ‘ কাজ ছিলো কিছু। তাই রুমে গিয়েছে। ‘

‘ অহ! তাই বলো। তাইতো বলি পূর্ব হটাৎ ফোন করে আমায় পুল সাইডে যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছিলো কেনো এতো?এবার সব পানির মতো পরিস্কার। ‘

অরণ্য ভাইয়া থামলেন। দৃষ্টি ফেললেন আমার পায়ের দিকে। ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে বললেন,

‘ লিটল প্রিন্সেস! প্লিজ পা তুলো পানি থেকে। ঠান্ডা লেগে যাবে। পূর্ব এসে তোমায় এভাবে দেখলে আমার অবস্থা রফাদফা করে ফেলবে। ‘

আমি পা তুলে সটান হয়ে দাঁড়াই। অরণ্য ভাইয়া স্বস্তির শ্বাস ফেললেন তা দেখে। তার এ অবস্থা দেখে রীতিমতো আমার ভীষণ হাসি পাচ্ছে। তবে পরিস্থিতি ভেবে চুপ থাকলাম। সেকেন্ড অতিবাহিত হওয়ার পর হুট করে কৌতূহল নিয়ে বলি,

‘ ভাইয়া? আমার কিছু জানার ছিলো। জিজ্ঞেস করি?’

অরণ্য ভাইয়া অন্যমনস্ক ছিলেন। আমার হটাৎ বলা কথায় তিনি হকচকিয়ে উঠে বলল,

‘ হ্যা হ্যা বলো! ‘

‘ অরণ্য ভাই, পূর্ব কি সর্বদা এমন রাশভারী থাকেন? আই মিন গম্ভীরমুখো। তাকে আমি শুরু থেকেই এমন গম্ভীর দেখে আসছি। তোমাদের সাথেও কি একই বিহেভ করে?’

‘ আরেহ্ না! কে বলেছে? ও গম্ভীর না অবশ্যই। আমাদের মতোই। তবে মেডিকেলে সর্বদা গম্ভীর থাকে। ওর বাহ্যিক দিকটা ও গাম্ভীর্যতার সাথে পেশ করে। কিন্তু আমাদের সাথে একদম নরমাল।হাসিখুশি! নাহলে কি ও আমাদের বন্ধুমহলের প্রাণ হয় নাকি? তোমার সাথে গম্ভীর থাকে বলে এমন বলছো না? আসলে এখানটায় একটা মিষ্ট্রি আছে। এটা তুমি পূর্বের থেকে জেনে নিও। ‘

কৌতূহল দমলো না। তার মানে আমি যেমনটা পূর্বকে দেখি। পূর্ব তেমন নয়? মাঝেমধ্যে হুটহাট যা বিহেভ করে সেই পূর্বটাই আসল পূর্ব? হতে পারে। কিন্তু আমার সাথে সে এমন কোন কারণে?কিসের মিষ্ট্রি? অরণ্য ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করে উত্তর পাওয়া গেলো না। সে তার কথায় অটল। পূর্বের থেকে জেনে নিতে। কিয়ৎ বাদে পূর্ব উপস্থিত হন। আমায় তাড়া দিয়ে রুমে নিয়ে এসে শপিং ব্যাগ হাতে তুলে বললেন,

‘ রেডি হয়ে থেকো। গাড়ি আসবে একটা। সেখানে অরণ্য নিয়ে যাবে তোমায়। আমি ওখানেই উপস্থিত থাকবো। ‘

আমি ভ্রু কুঁচকে বললাম, ‘ মানে? কোথায়?’

‘ গেলেই দেখতে পাবে। এখন রুমে থাকো আমি আসছি। ‘

___

রাত ৯ টা!
পূর্বের বলা স্থানে আসতেই অরিন সহ তারা ভাবী আমার চোখ বেঁধে দিলেন। হকচকিয়ে উঠে বলি,

‘ কি করছো তোমরা?’

‘ এটা সারপ্রাইজ! চুপ থাক মাইয়া। ‘

অরিনের প্রতুত্তর! ক্ষনিক বাদে এক জোড়া হাত আমার ডান হাত আঁকড়ে ধরলো। স্পর্শটা চেনা চেনা। কিছুক্ষণ চিন্তা করে বললাম,

‘ পূর্ব? এটা কি আপনি?’

‘ আমিই এটা। আসো! ‘

পূর্বের মিহি সুর। আমার নিভৃতে জমা বিশাল কৌতূহলের ভান্ডার। কি হচ্ছে? কিছুই বোধগম্য নয়। শাড়ী পড়ে হাঁটা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ছে। হোঁচট খেয়ে পড়তে নিলেই পূর্ব সাবধানে আগলে নিচ্ছে। পূর্বের দেয়া শাড়ীটা ছিলো সাদা রঙের। শুভ্র রঙ! তবে ইউনিক বেশ। সাদা স্টোন এর কাজ করা।

কিয়ৎক্ষণ পর। চোখের বাঁধন খুলে দিতেই আমি সর্বপ্রথম পূর্বের পানে দৃষ্টি ফেলি। বিরক্ত কন্ঠে বলি,

‘ কি শুরু করেছেন? ‘

পূর্ব নিরুত্তর। সে তার নেত্রযুগল এবং আকার, ইঙ্গিত দ্বারা নির্দেশ করলেন সামনে তাকাতে। আমি ধীরে তাকাই! সামনের পরিবেশ দেখে থম মেরে রইলাম। সামনে সুইমিং পুল! তবে সেই হোটেলের সুইমিং পুলটা নয়। সুইমিং পুলে লাল, সাদা ফুল দিয়ে বেশ সুন্দর মতো লিখা রয়েছে

‘ দোলপাখি! স্নিগ্ধময়ী আমার। ভালোবাসি প্রচন্ড।’

আমি নির্বাক! প্রচন্ড অবাক হয়ে বাকশক্তি লোপ পেয়েছে আপাতত। চারপাশের মোমের হলদেটে আলো, মরিচবাতির রঙিন আলো যেনো ঝংকার তুলেছে সৌন্দর্যের। ক্ষন বাদে অনুভূত হয় পিছন হতে পূর্ব আমায় আলত হাতে জরীয়ে ধরেছেন। ঘাড়ে নিজের থুতনি তখনকার মতো নির্লিপ্তে স্থাপন করে কানের পিঠে আলত করে নিজের অধরের ছোঁয়া দিলেন। কানের নিকট হিসহিসিয়ে বললেন,

‘ শুভ্রমহলে শুভ্রারাণী,
সৌন্দর্যের মাঝে সে অপ্সরি!
স্নিগ্ধ আবেশের স্নিগ্ধময়ী আমার।
তুমি নামক আপাদমস্তকটা সম্পূর্ণ আমার।
ভালোবাসি দোলপাখি! 💛’

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here