মেঘের অন্তরালে
পর্বঃ ১৮
লেখনীতেঃ তাহমিনা তমা
মিস্টার নিহান রেজওয়ান ?
অফিস থেকে ফিরে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিলো নিহান। অচেনা আওয়াজে দাঁড়িয়ে পড়লো। ঘুরে তাকিয়ে ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে থাকা ছেলেকে চিনতে পারলো না নিহান।
ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, কে আপনি ?
আয়মান উঠে দাঁড়িয়ে দু-হাত পকেটে গুঁজে বললো, চিনতে অসুবিধা হচ্ছে ? হবারই কথা এতোগুলা বছর যে পেড়িয়ে গেছে মাঝে।
হেয়ালি না করে নিজের পরিচয় দিন।
বলছি বলছি এতো তাড়া কীসের ?
দেখতেই পাচ্ছেন অফিস থেকে ফিরেছি, এতোটুকু কমনসেন্স নিশ্চয়ই আছে। অফিস থেকে ফিরে মানুষ ক্লান্তি অনুভব করে। কে আপনি আর বাসায় ঢুকলেন কী করে ?
নিশান বাবা এই নে তোর ফেবারিট পায়েস।
নিহান নিজের মায়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো, নিশান ?
আয়মান নিহানের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো, দুটো জিনিসই অপছন্দের তালিকায় চলে গেছে বড় মা।
নিহান এবার তাকালো আয়মানের দিকে। নিহান কিছুই বুঝতে পারছে না কী হচ্ছে এখানে। সব তার মাথায় উপর দিয়ে যাচ্ছে।
নিহানের মা আয়মানের কথার মানে বুঝতে না পেরে বললো, মানে ?
যে নামটাতে ডাকলে আর যেটা বানিয়ে নিয়ে এসেছো দুটোই অপছন্দের তালিকায় চলে গেছে অনেক বছর আগেই।
নিহান অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আয়মানের দিকে। কথার ধরণ আগের মতোই আছে। ভালো করে খেয়াল করতেই চেহারায় মিলও পেলো আগের মতো। এবার আর চিনতে অসুবিধা হলো না।
নিহান আয়মানের কাছে এগিয়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো, কেমন আছিস ভাই ?
আয়মান আস্তে করে নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললো, বাহ্ যে বাড়িতে থাকলে তুই বাড়িতেই থাকবি না আজ সে তোর ভাই হয়ে গেলো ? বড় মা আজ সূর্যটা কোনদিক থেকে উঠেছিলো ?
নিহান মাথা নিচু করে বললো, তখন ছোট ছিলাম তাই বুঝতে পারিনি প্লিজ মাফ করে দে ভাই।
আয়মান চোখ মুখ শক্ত করে বললো, কয়টা ভুলের জন্য মাফ করবো তোকে ?
নিহান অবাক হয়ে বললো, মানে ?
ইসরা সাথে এমনটা কেনো করলি ?
নিহান আর নিহানের মা দুজনেই ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো আয়মানের কথায়। এতো বছর পর নামটা শুনে কেঁপে উঠলো নিহান।
কাঁপা গলায় বললো, কোন ইসরা ?
আয়মান হাতে তালি দিয়ে বললো, ওয়াও দ্যাট’স গ্রেট, নিজের প্রাক্তন স্ত্রীকে চিনতেই পারছিস না ?
নিহান জিহ্বা দিয়ে নিজের ঠোঁট ভিজিয়ে বললো, তুই ইসরাকে কীভাবে চিনিস ?
আমি উত্তর জানতে এসেছি, তোর প্রশ্নের উত্তর দিতে নয়। আমি মানছি ইসরার বাবা তোর সাথে চরম অন্যায় করেছে আর সে তার শাস্তিও পেয়েছে। নিজের হাতে নিজের কলিজার টুকরো মেয়ের জীবন শেষ করেছে, এটা কোনো বাবার জন্য কম শাস্তি নয়। কিন্তু তোরা কী করেছিস ? এই বাড়ির প্রত্যেকটা মানুষ জানোয়ারের মতো আচরণ করেছিস মেয়েটার সাথে।
নিহান ধমক দিয়ে বললো, নিশান।
আয়মান নিজের ঠোঁটে আঙ্গুল দিয়ে বললো, হুঁশ আমার সাথে জোর গলায় কথা বলার সাহস দেখাস না। আমি একটা মিথ্যা কথাও বলিনি। প্রত্যেকটা কথা অক্ষরে অক্ষরে সত্যি। বাড়ির একটা কুকুরের সাথে মানুষ এমন আচরণ করে না, তোরা যেটা ঐ মেয়ের সাথে করেছিস।
নিহানের মা আয়মানকে বললো, তুই সবটা না জেনে এভাবে রিয়াক্ট করছিস নিশান।
ডোন্ট কল মি দ্যাট, নামটা সাথে বয়ে বেড়াচ্ছি ঠিকি কিন্তু শুনতে একদমই পছন্দ করি না। আমাকে আয়মান বলে ডাকার হলে ডাকো নাহলে প্রয়োজন নেই। আর হ্যাঁ আমি না জেনে কিছুই বলছি না। আমার প্রত্যেকটা কথা সত্যি। দুটো মাস ইসরা এখানে ছিলো নরক যন্ত্রণা উপভোগ করে। শেষ পর্যন্ত সুইসাইড এটেম করতে বাধ্য হয়েছিলো।
নিহানের মা অবাক হয়ে বললো, মানে কী বলছিস এসব ?
আয়মান নিহানের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে বললো, বাহ্ বাড়ির সবার থেকে লুকিয়ে গিয়েছিস এটা ?
সেদিন সবাই বাড়ি ফেরার পর নিহান বলেছিলো ইসরাকে তার বাবা এসে নিয়ে গেছে। ইসরার রুমটাও নিজেই পরিষ্কার করে ফেলেছিলো। বাড়ির কেউ ইসরার সুইসাইডের ব্যাপারে কিছুই জানে না।
নিহানের মা নিহানের সামনে দাঁড়িয়ে বললো, নিহান ?
নিহান মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। কিছু বলার মতো ভাষা সে খোঁজে পাচ্ছে না এই মুহূর্তে। নিহানের মা উত্তর না পেয়ে বুঝে নিলেন আয়মানের কথা সত্যি। সজোরে থাপ্পড় বসিয়ে দিলো নিহানের গালে। তবু মুখ তুলে তাকায়নি নিহান।
আয়মান কঠিন গলায় বললো, ইসরার বাবা নিজের ভুলের মাশুল দিতে তোর জীবন থেকে তার মেয়েকে সরিয়ে নিয়েছিলো। তোকে কথাও দিয়েছিলো আর কখনো ইসরার মুখও তোকে দেখতে হবে না। তাহলে কেনো তাকে ভড়া অফিসে সবার সামনে অপমান করেছিলি তুই। সে ধাক্কা সামলাতে না পেরে সেদিন রাতেই হার্ট অ্যাটাকে মারা গেছে সে।
এবার নিহান মুখ তুলে তাকালো আয়মানের দিকে। তার চোখে মুখে বিষ্ময়, যেনো প্রথম শুনলো এই কথা।
ব্যস্ত গলায় বললো, আমি তাকে অপমান করিনি।
তোর শশুরের অফিসে তুই ইসরার বাবাকে অপমান করিসনি ?
আমি কেনো তাকে অপমান করতে যাবো ? নীলার বাবা জানতে চেয়েছিলো ইখতিয়ার আহমেদকে আমি চিনি কিনা। আমি শুধু বলেছিলাম উনিই ইসরার বাবা। তারপর নীলার বাবাকে যে পেপার দিতে গিয়েছিলাম সেটা দিয়ে তখনই চলে আসি সেখান থেকে। তারপরে সেখানে কী হয়েছিলো কিছুই জানি না আমি।
আয়মান হাসতে হাসতে সোফায় বসে পড়লো। তার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিহান। নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার আকুলতা তার চোখ মুখে স্পষ্ট।
আয়মান হাসতে হাসতে বললো, ভালো স্টোরি তৈরি করেছিস কিন্তু বিশ্বাস করতে পারছি না রে। তোদের মতো মানুষকে বিশ্বাস করা যায় না।
বিশ্বাস কর নিশান সেদিন আমার কোনো ভুল ছিলো না। হ্যাঁ আমি এটা স্বীকার করছি, ইসরার বাবা আমার সাথে যে অন্যায় করেছে আমি ইসরার সাথে তার থেকে কিছু কম করিনি। কিন্তু ঐ দিনের ঘটনায় আমার কোনো হাত নেই।
পাপা
এক আওয়াজে তিনজনই সিড়ির দিকে তাকায়। একটা টেডি হাতে গোলাপি রঙের ফ্রক পরে দাঁড়িয়ে আছে নিশিতা। পাপাকে দেখে হাসি ফোটে উঠেছে তার মুখে। নিশিতা দৌড়ে নিহানের কাছে যেতেই মেয়েকে কোলে তুলে নিলো নিহান।
আমার চকলেট কোথায় পাপা ?
নিহান পকেট থেকে একটা চকলেট বের করে নিশিতার হাতে দিয়ে কপালে চুমু খেলো।
মেয়ের মাথায় হাত রেখে বললো, নিজের সন্তানের মাথায় হাত রেখে কোনো বাবা মিথ্যা বলতে পারবে না। নিশিতার মাথায় হাত রেখে বলছি সেদিনের ঘটনার আমার কোনো দোষ ছিলো না।
আয়মান শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিশিতার দিকে। যে এখন হাতের চকলেট খুলতে ব্যস্ত। নিহানের কথায় ঘোর কাটলো।
বিশ্বাস করা আর না করা এবার তোর উপর। তবু বলবো আগের নিহান আর এই নিহানের কোনো মিল নেই নিশান। সেই দাম্ভিক নিহান রেজওয়ান আর নেই।
নিহান মেয়েকে কোলে নিয়েই নিজের রুমের উদ্দেশ্যে চলে গেলো। আয়মান চুপচাপ বসে রইলো নিজের জায়গায়। এখানে সবারই কিছু না কিছু ভুল ছিলো আর সবাই তার শাস্তি পেয়েছে। শুধুমাত্র ইসরাটা কোনো ভুল না করেই জীবনের সবচেয়ে বড় শাস্তি পেয়েছে। আয়মান উঠে দাঁড়ালো সোফা থেকে।
নিহানের মা বললো, তোর বাবা-মা আসা পর্যন্ত একটু ওয়েট কর।
আয়মান তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো, তারা যেমন ভুলে গেছে তাদের একটা ছেলে আছে, আমিও তেমন ভুলে গেছি আমারও বাবা-মা আছে।
আয়মান এক পা এগোতেই নিহানের মা আবার বললো, ইসরাকে কীভাবে চিনিস ?
ভালোবাসি আমি ওকে আর খুব তাড়াতাড়ি বিয়েও করবো। তবে চিন্তা করো না এই বাড়ির বউ করে আনবো না। কারণ আমি নিজেই এই বাড়ির ছেলে হতে পারিনি সেখানে আমার স্ত্রীকে এবাড়ির বউ করার প্রশ্নই আসে না।
আয়মান আর এক মুহূর্ত না দাঁড়িয়ে বের হয়ে গেলো বাসা থেকে। নিহানের মা বিস্ফুরিত চোখে তাকিয়ে আছে আয়মানের যাওয়ার পথে। ভাগ্য কাকে, কখন, কোথায় নিয়ে দাঁড় করায় কারো বুঝার উপায় নেই।
৩০.
আজ শরীরটা ভালো লাগছিলো না ইসরার। লাঞ্চের সময় বাসায় চলে যাওয়ার সীদ্ধান্ত নেয়। হসপিটাল থেকে বের হতেই আয়মানের সামনে পড়ে। সেদিন থাপ্পড় দেওয়ার জন্য মনে মনে অনুতপ্ত ইসরা। তবু মুখে সেটা প্রকাশ করলো না।
শক্ত গলায় বললো, আপনি এখানে কী করছেন ?
তোমার কাছেই যাচ্ছিলাম, তা এখানেই দেখা হয়ে গেলো।
আমার কাছে কেনো যাচ্ছিলেন ? আপনাকে সেদিন বলেছি তো আমার সামনে আর কখনো আসবেন না।
তুমি বললেই আমি শুনবো, সেটা কী একবারও বলেছি ?
আপনি দিনদিন নির্লজ্জের মতো কাজ করছেন সেটা কী বুঝতে পারছেন আপনি ?
লজ্জা নারীর ভূষণ পুরুষের নয়।
আপনি সত্যি নির্লজ্জ একজন মানুষ। রাস্তা ছাড়ুন যেতে দিন আমাকে।
তুমি এখন আমার সাথে যাবে।
অসম্ভব আমি আপনার সাথে কোথাও যাবো না।
তুমি যাবে আর অবশ্যই যাবে।
আপনি আমাকে জোর করবেন ?
ভালোর জন্য ছোট খাটো জোর করলে কিছু হয় না।
ইসরা আবার কিছু বলার আগেই আয়মান তার হাত ধরে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলো। ইসরা ছাড়ানোর চেষ্টা করেও পারলো না। আয়মান তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে চালাতে শুরু করলো।
কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে ? এখনই নামিয়ে দিন আমি বাড়ি যাবো।
স্কুলের বাচ্চার মতো বাড়ি যাবো বাড়ি যাবো করো না তো।
আপনি নামিয়ে দিবেন কিনা বলেন ?
না দিলে কী করবে তুমি ?
চলন্ত গাড়ি থেকে লাফ দিবো।
চেষ্টা করে দেখতে পারো, নো প্রবলেম।
ইসরা গাড়ির দরজা খুলতে গেলে আয়মান শক্ত করে হাত আঁকড়ে ধরলো। ইসরা যতো ছাড়ানোর চেষ্টা করছে আয়মান হাতের বাঁধন তত শক্ত করছে।
আহ্ লাগছে হাত ছাড়ুন আমার।
ইসরার কথা শুনতেই আয়মান হাত ছেড়ে দিলো আর গাড়ি সাইট করে পার্ক করলো।
ইসরার হাত আলতো করে ধরে বললো, দেখি কোথায় লেগেছে ?
ইসরার হাতে আয়মানের হাতের দাগ বসে গেছে।
আয়মান ব্যস্ত গলায় বললো, সরি সরি, তুমি তো পাখির মতো ছটফট করছিলে, তাই শক্ত করে ধরতে হয়েছে।
ইসরা আয়মানের কথা সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে বললো, দয়া করে আমাকে বাসায় যেতে দিন।
আয়মান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বললো, তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে, সেগুলো বলে আমি নিজে তোমাকে বাসায় পৌঁছে দিবো।
ইসরা আর কিছু না বলে চুপচাপ বসে রইলো। আয়মান একটা কফিশপের সামনে গাড়ি থামালো। দু’জনে মুখোমুখি হয়ে বসে পড়লো। আয়মান দুটো কফি অর্ডার করে দিলো।
এবার বলো তোমার সমস্যা কোথায় ?
ইসরা থতমত খেয়ে বললো, কীসের সমস্যা ?
আমাকে মেনে নিতে তোমার সমস্যা কোথায় ? আমি দেখতে খারাপ, আমার প্রফেশনাল লাইফ খারাপ, আমি তোমার যোগ্য নই নাকি আমি রেজওয়ান পরিবারের ছেলে এইটাই আমার অন্যায় ?
শেষের কথাটা শুনে ইসরার চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো সেটা চোখ এড়ালো না আয়মানের।
তার মানে আমি রেজওয়ান পরিবারের ছেলে এটাই আমার দোষ। কিন্তু ইসরা এখানে আমার দোষটা কোথায় একটু বুঝিয়ে বলবে ? তোমার সাথে আমার কথিত পরিবার যা করেছে সেটা অন্যায়, আমি সেটা অস্বীকার করছি না। কিন্তু তুমিও কী তাদের মতোই করছো না ? তোমার বাবার অন্যায়ের শাস্তি যেমন আমার পরিবার তোমাকে দিয়েছিলো, একইভাবে আমার পরিবারের অন্যায়ের শাস্তি তুমি আমাকে দিচ্ছো।
ইসরা এবার তাকালো আয়মানের দিকে। আয়মান কী সত্যি ভুল কিছু বলেছে ?
আয়মান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, প্রত্যেকটা মানুষ আলাদা হয় আর তাদের চিন্তাভাবনাও আলাদা হয়। আমি রেজওয়ান পরিবারের ছেলে হলেও সেই পরিবারের পরিবেশে বড় হইনি। তাই তাদের সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলো না।
ইসরা ভাবনায় পরে গেছে আয়মানের কথায়। আয়মান তো একটা কথাও ভুল বলেনি।
আয়মান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বললো, তোমাকে পনেরো দিন সময় দিলাম। এই পনেরো দিনের মধ্যে আমাকে মেনে না নেওয়া সঠিক কারণ দেখাতে হবে। সেই কারণ দেখে আমার কাছে যদি মনে হয়, সত্যি আমি তোমার যোগ্য নই তাহলে আর কোনোদিন আমার মুখ দেখতে হবে না তোমাকে। আর যদি কোনো কারণ দেখাতে না পারো তাহলে বিনাবাক্যে মেনে নিতে হবে আমাকে। মনে রেখো এতো সহজে ছেড়ে দেওয়ার মানুষ এই আয়মান নয়। লাঞ্চ করে নাও তারপর বাসায় পৌঁছে দিবো।
ইসরা ভেঙে ভেঙে বললো, না আমি এখনই বাসায় যাবো, আমার শরীর খারাপ লাগছে।
জীবনের কোনো সিদ্ধান্তে তোমাকে জোর করবো না আমি। তবে প্রত্যেকটা না বাক্যের উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে আমাকে। চলো বাসায় পৌঁছে দিচ্ছি।
গাড়িতে আর কোনো কথা হলো না। ইসরা বাসার ঠিকানা না বলতেই আয়মান ঠিক তার বাসার সামনে এসে গাড়ি থামালো। ইসরা অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।
অবাক হওয়ার কিছু নেই, আগেই বলেছি তোমার সম্পূর্ণ বায়ো ডাটা আমার কাছে আছে।
ইসরা নিজের বিষ্ময় কাটিয়ে উঠে গাড়ি থেকে নেমে গেইটের ভেতরে চলে গেলো। আয়মানকে একটা ধন্যবাদ কিংবা বাসায় যাওয়ার কথাও বললো না। আয়মান দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে গাড়ি ব্যাকে নিয়ে চলে গেলো।
৩১.
সকালবেলা ব্রেকফাস্ট করতে নিচে নামতেই সোফায় নীলার বাবাকে দেখে থমকে দাঁড়ালো নিহান। কপাল কুঁচকে গেলো তার, মেয়ের হাতটা আরো শক্ত করে ধরলো। নিশিতাকে ডাইনিং টেবিলে বসিয়ে দিয়ে ড্রয়িংরুমে চলে গেলো। নীলার বাবার সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সে উঠে দাঁড়ালো সোফা থেকে।
নিহান গম্ভীর গলায় বললো, আপনি এতো সকালে এখানে কী করছেন ?
নীলার বাবা নিহানের সামনে হাত জোর করে বললো, বাবা আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে নাও দয়া করে।
নিহানের রাগ তড়তড় করে মাথায় উঠে গেলো। পেয়েছে কী এরা বাবা মেয়ে ? যখন প্রয়োজন ছিলো তখন ছেড়ে চলে গিয়েছিলো আর এখন ফিরে আসতে চাইছে। জীবনটা কী তাদের কাছে ছেলেখেলা ? রাগে নিজের মুষ্টি বদ্ধ করে নিলো নিহান। মনে মনে নিজেকে প্রস্তুত করে নিলো নীলার বাবাকে কিছু কথা বলার জন্য।
চলবে,,,,