মেঘকন্যা☁️ Part_12,13

মেঘকন্যা☁️
Part_12,13
Writer_NOVA
Part_12

বিষন্ন মনে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রাতের অন্ধকার দেখছি।চারিদিকে আবছা অন্ধকার। যদিও রাতের অন্ধকার ফুটতে বেশি বাকি নেই ।আছরের নামাজ পরে ছাদের থেকে একটু হাটাহাটি করে এখন মাগরিবের নামাজের জন্য অপেক্ষা করছি।এর মধ্যে এক দিন কেটে গেছে কিন্তু আয়িশের কোন খোঁজ নেই। আম্মি তো নামাজে বসে ওর জন্য কাঁদে। আব্বি ওর খোঁজ লাগিয়েছে কিন্তু কোথাও নেই। এমনকি নিজের বাসাও নেই। অনেক চিন্তা হচ্ছে ওর জন্য। এক দিন ধরে আমার রুমে থাকা জ্বীনটাও আমাকে জ্বালাচ্ছে না।তাকে অনেকটা মিস করি।কিন্তু তাকে তো মিস করার কথা না।প্রথম প্রথম আপদ চলে গেছে বলে অনেক খুশি হয়েছিলাম।কিন্তু এই খুশি আমার চিরস্থায়ী হয়নি।কিছু সময় পর থেকে খারাপ লাগা শুরু করেছে।তাছাড়া আয়িশের জন্য কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছি।বারবার মনে কু ডাকছে।নিশ্চয়ই ওর কোন ক্ষতি হয়েছে।

আমিঃ আয়িশটা কোথায় আছে কে জানে?সেদিন তো আমাকে বাঁচিয়ে মহা উদ্ধার করেছিলো।নিজের চিন্তা সব ভুলে খেয়ে ফেলেছে। আল্লাহ মালুম, ছেলেটা বিষাক্ত শরীর নিয়ে কোথাও পরে আছে কিনা।আজকালের মানুষ তো কেউ মরে পরে থাকলেও ফিরে তাকায় না।আমি ওর সাথে সেদিন কেন কথা বললাম না?নিজের ওপর রাগ উঠছে।এতটা স্বার্থপর কি করে হতে পারলাম?আল্লাহ তুমি আয়িশকে ভালো রেখো।

মনে মনে কথাগুলো বলে যেই বারান্দা থেকে চলে আসবো ওমনি বাড়ির গেইটের দিকে নজর গেলো।মনে হচ্ছে কেউ অতিকষ্টে বাসার দিকে এগিয়ে আসছে।সারা শরীর তার রক্তাক্ত। আমি ভয় পেয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলাম।কিছু সময় পর সে আমার দিকে তাকিয়ে একটা করুন চাহনি দিলো।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ডেকে বললো।

আয়িশঃ মমমাললল্টটটটি ককককাললার।
আমিঃ আয়িশ!!!!!

আমি দৌড়ে নিচে চলে এলাম। দরজা খুলে দেখলাম আয়িশ ঢুলছে।প্রায় পরে যাবে।আমি ওকে পরে যাওয়ার আগে ধরে ফেললাম।আয়িশ আমার দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো হাসি দিলো। সে হাসিতে অনেক কষ্টে জর্জরিত থাকলেও ছিলো অনেক বড় প্রাপ্তি। চোখ দুটো ওর চিকচিক করছিলো।ওর দূর্বল এক হাত দিয়ে আমাকে আলতো করে জরিয়ে ধরলো।

আমিঃ আআআয়য়য়িশশ কি হয়েছে তোর?এমন অবস্থা কেন?সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত। রক্ত শুকিয়ে গেছে। তুই কোথায় ছিলি এই একদিন?জানিস তোর জন্য কত চিন্তা হচ্ছিল আমাদের। আমার মনে হচ্ছিল আমি আমার সবচেয়ে প্রিয় মানুষটাকে হারিয়ে ফেলেছি। আমি নামাজে তোর জন্য আল্লাহর কাছে কত কান্না করেছিস জানিস?আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছিলো।কে করেছে তোর এই অবস্থা? কথা বলছিস মা কেন?একদম হাবার মতো হাসবি না।
(কাঁদতে কাঁদতে)

চোখ দিয়ে অনরবত পানি পরছে আমার।হারিয়ে যাওয়া জিনিস খুঁজে পেলে মানুষ যতটা খুশি হয় তারচেয়ে বেশি খুশি আমি।আয়িশ আমার দিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। ওর দূর্বল হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিলো।

আয়িশঃ একদম কাঁদবি না।তুই কাঁদলে আমার অনেক কষ্ট হয়।

আমিঃ তোকে এতকষ্ট করে কথা বলতে হবে না। ভেতরে চল।কিন্তু আমিতো তোকে একা নিতে পারবো না।আব্বি আম্মিকে ডাকতে হবে।

আমি আয়িশকে এক হাতে কোমড় জড়িয়ে রেখেছি।আরেক হাত দিয়ে ওর বাম হাতটা যে আমার ঘাড়ে জরিয়ে রেখেছে সেটাকে ধরে রেখেছি।কিন্তু আমি ব্যালেন্স রাখতে পারছি না।ওকে একা নিয়ে যাওয়া আমার পক্ষে একেবারে অসম্ভব। আমি আম্মি,আব্বিকে ডাকতে লাগলাম।

আমিঃ আম্মি, আব্বি।কোথায় তোমরা?নিচে এসো।আব্বি আম্মি।তোমরা কি শুনতে পাচ্ছো?তারা নিশ্চয়ই আমার ডাক শুনতে পাচ্ছে না। আমি আয়িশকে রেখে তাদেরকে ডেকে নিয়ে আসি।

আয়িশ ভ্যাবলাকান্তোর মতো এখন আমার দিকে তাকিয়ে আছে। মন ভরে দেখছে।চারপাশের কোন হুশ নেই। কিন্তু আমরতো এখানে দাঁড়িয়ে থাকলে চলবে না।ওর সারা শরীররের বিভিন্ন জায়গায় কেটে গেছে। মুখে খামচির দাগ। রক্ত জমাট বেঁধে শুকিয়ে গেছে। ঠোঁটের বাপাশে কেটে গেছে। কিন্তু এখন তাজা রক্ত ঝরছে।পোশাক ছিন্নভিন্ন হয়ে আছে জখমের কারণে। আমি হাত বাড়িয়ে ওর ঠোঁটের রক্তটুকু মুছে দিলাম।

আমিঃ তুই এখানে থাক।আমি আম্মি আব্বিকে ডেকে আনছি।একটু অপেক্ষা কর।তোর কিছু হবে না। আমি কিছু হতে দিবোই না।

আয়িশঃ নাহ, তুই কোথাও যাবি না।আমার সাথেই থাকবি।

আমিঃ পাগলামি করিস না।তোর কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। তুই একটা কথাও বলবি না। একটু বস।আমি আব্বি আম্মিকে নিয়ে আসি।

আয়িশকে দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে বসিয়ে যাওয়ার জন্য উঠতেই ও আমার ওড়না টেনে ধরলো।আমি পেছন দিকে তাকিয়ে ওর করুন চাহনি দেখে দমে গেলাম।

আমিঃ একটু অপেক্ষা কর।আমি যাবো আর আসবো।প্লিজ আমাকে যেতে দে।তোকে ভেতরে নিতে হবে তো।

আয়িশ মাথা হেলিয়ে ওড়নাটা ছেড়ে দিলো।ওর চোখে আমি আমাকে হারানোর ভয় দেখছি।মনে হচ্ছে আমি চলে গেলে ওর কাছে আর আসবো না।আমি দৌড়ে ভেতরে চলে গেলাম।আব্বি, আম্মিকে নিয়ে জলদী করে বাইরে চলে এলাম।আম্মিতো আয়িশের এই অবস্থা দেখে কান্না শুরু করলো।সবাই ধরাধরি করে আয়িশকে ভেতরে নিয়ে এলাম।তখনও আয়িশ এক ধ্যানে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

🌨️🌨️🌨️

আব্বি ও মালী চাচা মিলে আয়িশের ড্রেস চেঞ্জ করে দিচ্ছি। আমি ও আম্মি রুমের বাইরে পায়চারি করছি। ডাক্তারকে কল করা হয়েছে। সে আসার আগে ওর ড্রেস পাল্টানো জরুরি।আব্বি কল করে মালী চাচা রহমত কে আসতে বলেছে।তিনি আমাদের বাড়ির পাশেই থাকেন।আয়িশ আমার হাত ছাড়তে চাইছিলো না।দূর্বল হাতেও যতটুকু পেরেছে শক্ত করে ধরে রেখেছিলো।ওর ধারণা আমাকে ছেড়ে দিলেই আমি ওকে ছেড়ে চলে যাবো।আমার হাত ছাড়ানোর আগে আয়িশ অজ্ঞান হয়ে গেলো।তারপরেও হাত ছাড়েনি।আমি ও আম্মি সেই ফাঁকে মাগরিবের নামাজ আদায় করে নিয়েছি।আব্বি রুমেই নামাজ আদায় করেছে।

এত সময় লাগে ড্রেস চেঞ্জ করতে।একেকটা মিনিট আমার কাছে একেকটা ঘন্টা মনে হচ্ছে। কিছু সময় পর ডাক্তার চলে এলো। আব্বির পরিচিত সে। সিফাত আঙ্কেল।সে এসে আয়িশকে দেখতে লাগলো।আমি রুমের এক কোণায় ঘাপটি মেরে দাঁড়িয়ে আছি।

ডাক্তারঃ উনার এত ক্ষত হলো কি করে?মনে হচ্ছে কোন হিংস্র পশুর নখের আঁচড়। কোথায় ছিলো সে?এরকম আঘাত সচারাচর দেখা যায় না।শুধু মাত্র বনবিভাগে থাকা কর্মকর্তাদের শরীরে পাওয়া যায়।যদি সে বনে থাকা পশুদের দ্বারা আক্রমণ হয়।

আব্বিঃ আমি বলতে পারবো না।গত পরশু রাতে আমাদের বাসা থেকে বের হয়ে গিয়েছিলো।কোথায় যাবে, কি করবে কিছু বলেনি।গোটা একদিন ওর কোন খোঁজ খবর নেই। পুরো শহর তন্নতন্ন করে খুজেও কোথাও পাইনি।সন্ধ্যায় মেয়ে এসে বলে আয়িশ বাসার বাইরে আছে।সারা শরীর ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে।জলদী করে আমরা ওকে ভেতরে নিয়ে এসেছি।কিভাবে হলো তা জানি না।

আম্মিঃ ডাক্তার ছেলেটাকি সুস্থ হবে না?আল্লাহ কেন ছেলেটার সাথে এমন করলো।কি দোষ করেছিলো আমার ছেলেটা।(কাঁদতে কাঁদতে)

ডাক্তারঃ শান্ত হোন মিসেস ইসলাম। আমি দুটো ইনজেকশন পুশ করে দিচ্ছি। একটি ঘুমের আরেকটা ব্যাথা কমার।সে এখন অজ্ঞান অবস্থায় আছে। তাকে কোনরকম প্রেশার দেওয়া যাবে না।ফুললি ২৪ ঘন্টা রেস্টে রাখবেন।কিছু ঔষধ লিখে দিচ্ছি। নিয়মিত খাওয়াতে থাকেন ইনশাল্লাহ আল্লাহ ভালো করে দিবে।উনাকে স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়াবেন।বেশি করে দুধ,ডিম, শাক-সবজি। উনি প্রচুর দূর্বল এখন।অনেক রক্তক্ষরণ হয়েছে। সাবধানে রাখবেন।আমি ক্ষত স্থানগুলোগে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি।ভয়ের কোন কারণ নেই। আল্লাহ আছেন।তিনি সুস্থ করে দিবেন।মুখের আঁচড়ের দাগের জন্য ক্রিম লিখে দিয়েছি। ১২ ঘন্টা পর পর ব্যবহার করতে বলবেন।

আব্বিঃ জ্ঞান ফিরবে কখন?

ডাক্তারঃ আগামীকাল সকালের আগে নয়।জ্ঞান ফেরার পর জোর করে হলেও খাবার খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিয়েন।পুরো দমে খেয়াল রাখবেন। বেডের থেকে নামতেই দিবেন না।

ডাক্তার দুটো ইনজেকশন পুশ করে দিলো।আয়িশের মলিন মুখটা আমার কাছে অনেক খারাপ লাগছে। ফর্সা মুখটায় আঁচড়ের দাগগুলো টকটকে লাল হয়ে আছে।ঠোঁটটা ফুলে ঢোল হয়ে রয়েছে। চোখের নিচটা গাঢ় কালো। কেউ ঘুষি দিয়ে এই অবস্থা করেছে। মাত্র একটা দিনে কি অবস্থা? চেহারার দিকে তাকানো যায় না।ওর পরনে টি-শার্ট ও ক্রিম কালার টাউজার।আব্বি এসব কোথায় পেলো কে জানে?আয়িশের চোখ দুটো বন্ধ। কিন্তু আমি তার মধ্যেও মায়া খুঁজে পাচ্ছি। ছোট বাচ্চাদের মতো করে হালকা একটু ঠোঁট ফুলিয়ে রেখেছে। এই বুঝি কান্না করে দিবে।

ডাক্তারঃ পেশেন্টের খেয়াল রাখবেন।প্রেসক্রিপশনে সব লিখে দিয়েছি।আমি এবার উঠছি।পায়ের ক্ষতটা একটু গভীর।কাচ জাতীয় কিছু দিয়ে কেটে গেছে। সাবধানে মলম লাগাবেন।

আব্বিঃ রহমত ডাক্তারকে পৌঁছে দিয়ে এসো।তার যেনো কোন অসুবিধা না হয়।
রহমতঃ আচ্ছা সাহেব।চলেন ডাক্তার সাব।
ডাক্তারঃ আসালামু আলাইকুম। আসছি।কোন সমস্যা হলে কল করবেন।আমি দুই দিন পরে এসে পেশেন্টকে দেখে যাবো।
আব্বিঃ অলাইকুম আস সালাম।

ডাক্তার চলে যেতেই আম্মি আয়িশের সামনে গিয়ে বসলো।ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।আমি থ মেরে পূর্বের জায়গায় দাঁড়িয়ে পলকহীনভাবে আয়িশের দিকে তাকিয়ে আছি। আব্বি নামাজ আদায় করতে মসজিদে চলে গেল।

আম্মিঃ মেঘা তুই ওর পাশে বস।আমি এশারের নামাজটা পরে আসি।

আমিঃ আচ্ছা তুমি যাও।আমি বসছি।

আম্মিঃ কোথাও যাস না ওকে একা ছেড়ে। আজ কিন্তু আল্লাহ ওর ওসিলায় তোকে বাঁচিয়ে রেখেছে। তোকে বিপদের হাত থেকে রক্ষা করতে আল্লাহ যদি আয়িশকে না পাঠাতো তাহলে এতক্ষণে আমার কোল খালি হয়ে যেতো।

আমিঃ আমি জানি। আজ সারাদিনে তুমি এই কথাগুলো না হলেও ২০ বার বলেছো।যাতে করে আমার মুখস্থ হয়ে গেছে।

আম্মি উঠে দরজা পর্যন্ত গিয়ে আবার ফিরে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করলো।

আম্মিঃ ওর বাবা-মা কোথায় তা জানিস মেঘা?

আমিঃ না আম্মি।আয়িশ কখনো নিজের বাবা-মায়ের কথা আমাকে বলেনি।ওর বাবা-মায়ের কথা জিজ্ঞেস করলেই রেগে যায়।কেন তা আমি জানি না। তোমাকে তো বলেছি বিশাল বড় ফ্ল্যাটে ও একা থাকে।

আম্মিঃ তাহলে সুস্থ হওয়া অব্দি আয়িশ আমাদের কাছেই থাকবে।

আমিঃ আগামীকাল সকালে উঠেই নিজের বাসায় যাওয়ার জন্য উঠে-পরে লাগবে।একে আমি ভালো করে চিনি।কোথাও এক রাত থাকতে চায় না।

আম্মিঃ আমি জোর করে রেখে দিবো।বললেই হলো নাকি?ওকে যেতে দিলেতো যাবে।ডাক্তার কি বলে গেল শুনলি না।ওর এখন ২৪ ঘন্টা বেড রেস্টে থাকতে হবে।সারা শরীরে জখমের দাগ।এত ব্যাথা নিয়ে যে একটা দিন কিভাবে রয়েছে তা একমাত্র আল্লাহ জানে। ওর কারণে আল্লাহ তোকে ফিরিয়ে দিয়েছি।ওর যেহেতু বাবা-মা কোথায় আছে তা আমরা জানি না। তাই আমাদের কাছেই ও ভালো থাকবে।

আমিঃ আম্মি আমার কিন্তু এখন হিংসে হচ্ছে।আয়িশ থাকা মানে তুমি ওকেই আমার থেকে বেশি আদর করবে,খাইয়ে দিবে,ওর যত্ন নিবে।আমি কিন্তু সহ্য করবো না।আমার আম্মি, আব্বির ভাগ আমি কাউকে দিবো না।

আম্মিঃ এত হিংসুটে কবের থেকে হলি? ছেলেটাকে আল্লাহ মরণের হাত থেকে হেফাজত করেছে। আল্লাহ না করুক যদি কিছু হয়ে যেতো। তাহলে নিজেকে কখনি আমি মাফ করতে পারতাম না।সেদিন রাতে আমার ওকে যেতে দেওয়াই ঠিক হয়নি।

আমিঃ আরে আম্মি রাগছো কেন?আমিতো দুষ্টুমী করলাম।তুমি নামাজ পরতে যাও।তুমি এলে আমি নামাজে পরতে যাবো।

আম্মি চোখ মুছে চলে গেল।আমি গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গিয়ে আয়িশের পাশে বসলাম।হাত-পায়ের বিভিন্ন জায়গায় ব্যান্ডেজ।চোখের পাপড়িগুলো হালকা লালচে কালার।সিল্কি চুলগুলো একপাশে পরে আছে।এক হাত বুকের ওপর রাখা।খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছি ওকে।ইচ্ছে করছে হাত দিয়ে চুলগুলো এলোমেলো করে দিতে।তাই করলাম।জেগে থাকলে চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে থাকতো।কারণ প্রায় সময় আমি এই কাজটা করি।কিছুক্ষণ পর টের পেলাম ঘুমের ঘোরেও আমার বাম হাতটা আলতো করে ধরে রেখেছে। এমনটাতো হওয়ার কথা নয়।এই ছেলেকে দিয়ে বিশ্বাসও নেই।সব সম্ভব এর দ্বারা।ছেলেটাকে আমার এখন অতিরিক্ত বেশি ভালো লাগছে। চোখ, মুখে উপচে পরা মায়া।দেখতে বেশ লাগছে।ওকে দেখতে এতটাই বিভোর ছিলাম। এক মুহুর্তের জন্য ভুলে গিয়েছিলাম আমি বিবাহিত। আচ্ছা, কি হয়েছিলো গত রাতে?যার জন্য আয়িশের এই অবস্থা। কোন ভয়ানক কিছু কি??

চলবে

#মেঘকন্যা☁️
#Part_13
#Writer_NOVA

আধাঘন্টা ধরে স্যুপের বাটি হাতে নিয়ে বসে আছি।আয়িশ বাচ্চাদের মতো চোখ মুখ কুঁচকে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছে।কারণ সে স্যুপ খাবে না।ওর কাছে এটা পৃথিবীর সবচেয়ে জঘন্যতম খাবার।এটা নাকি বাচ্চাদের লেইয়ের মতো দেখতে।স্যুপ কোন এঙ্গেল থেকে যে ওর কাছে লেইয়ের মতো লাগে, আল্লাহ জানে। ওর কান্ড দেখে আমি হাসবো নাকি কাঁদবো বুঝতে পারছি না। কিন্তু হাত ব্যাথা প্লাস বিরক্তি নিয়ে বসে আছি।

আমিঃ চুপচাপ স্যুপটুকু খেয়ে নে আয়িশ।

আয়িশঃ ওয়াক ছিঃ। আমি খাবো না। কিরকম বিচ্ছিরি দেখতে। এর স্বাদও বিচ্ছিরি।

আমিঃ তোকে কে বলেছে? আমি নিজ হাতে সবজি ও চিকেন দিয়ে তৈরি করে এনেছি। তুই নাকি সকালে ভাত খাবি না। আম্মি রুটি বানিয়ে দিতে চাইলো তাও মানা করলি।এখন স্যুপ না খেলে আমি কি তোকে খালি পেটে ঔষধ খাওাবো?মর্জি না করে খেয়ে নে।

আয়িশঃ একদম জোর করবি না।টিকটিকি এনে তোর গায়ে ছেড়ে দিবো।

আমিঃ একদম ভয় দেখাবি না।তুই খাট থেকে নেমে তো দেখ।তোর পায়ের মধ্যে আমি বারি দিবো।আমি তাকে খেতে বলছি আর সে আমায় ভয় দেখাচ্ছে। তুই যে পায়ে বেশি ব্যাথা পেয়েছিস সেটাই চিমটি মারবো এখন।মুখ বন্ধ করে খেয়ে নে।

আয়িশঃ নে আমি মুখ বন্ধ করে আছি।খাইয়ে দে।

আমিঃ তোকে আমি কথার জন্য মুখ বন্ধ করতে বলেছি খাওয়ার জন্য নয়।(রেগে)

মেঘার কথায় চোখ বন্ধ করে মুখটাকে সাত রং করে একিয়ে বেঁকিয়ে আয়িশ এক চামচ স্যুপ মুখে নিলো।মুখটাকে এমন করলো যেনো মেঘা ওকে জোর করে করলার জুস খাইয়ে দিয়েছে।তারপর থু করে মুখের পুরো স্যুপটুকু মেঘার কোলের ওপর ফেলে দিলো।

আয়িশঃ কি বাজে খেতে?আমি কিছুতেই খাবো না।তুই আমার সামনে থেকে এই স্যুপের বাটি নিয়ে সর।এই বিচ্ছিরি খাবারটার গন্ধও আমি সহ্য করতে পারছি না।আবার দেখতে হবে তো কে বানিয়েছে?ঠিকমতো হাত ধুয়ে বানিয়ে ছিলি তো।সবজি ধুয়ে কেটেছিস? নাকি ওড়না দিয়ে মুছে কাজ চালিয়েছিস।মুরগির গোশতের কাঁচা গন্ধ পাচ্ছি। সাথে ডিমের বাজে ফ্লেভার।জলদী এটা নিয়ে সর।নয়তো আমি তোর ওপর বমি করে দিবো।

আমিঃ কানের নিচে একটা মারবো হারামজাদা।মাছের আঁইশ। তোকে অনেক দিন ধরে এই মাছের আঁইশ নামে ডাকা হয় না।তুই যে আঁইশ তাই গন্ধ পাস।ফাজিল ব্যাটা।আমার কোলের ওপর তোর স্যুপটুকু ফেলতে হলো।খাচ্চোর ছেমড়া।আবার বলে আমার ওপর বমি করবে? ঐ তোর মুখে কি কিছু আটকায় না।আমার তো গা গুলিয়ে আসছে।আবার জীবনে আমার হাতে কিছু খেতে চাস।তোকে ভালো করে রান্না করে খাওয়াবো।শয়তান,বাঁন্দর, কুমিড়।তুই জীবনেও ভালো হবি না।আমার পুরো জামাটা নষ্ট করে দিলো।এখন আবার সব পাল্টাতে হবে।এত ভেজাল ভালো লাগে না।তোকে তো আমি পরে দেখে নিবো।মাছের আঁইশটা।(রেগে)

আমি এতকিছু বলার পরেও আয়িশের মাঝে কোন পরিবর্তন দেখতে পেলাম না।ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে হাই তুলছে।সাথে খুব মনোযোগ সহকারে নখ খুটছে।ওকে দেখে বোঝার উপায় নেই গতকাল ওর এমন একটা অবস্থা গেছে।

আয়িশঃ ভালো চাস এখান থেকে ভাগ।নয়তো পুরো স্যুপ তোর মাথায় ঢেলে দিবো।সারা শরীর আঠালো প্লাস বিচ্ছিরি গন্ধে তোর অবস্থা নাজেহাল।আমার আশেপাশে এরকম আঠার মতো লেগে থাকিস কেন?তোর নিজের কোন কাজ নেই। যখন থেকে চোখ খুলছি তখন থেকে আমার রুমে ঘুরঘুর করছিস।তোর লক্ষ্মণ আমার কাছে ভালো ঠেকছে না।

আমি রেগে দুই হাত কোমড়ে রেখে ঝাঁঝালো গলায় উত্তর দিলাম।শয়তানটা নিশ্চয়ই আজ ফন্দি এঁটেছে আমাকে জ্বালাবে।নয়তো এমন করার তো কোন প্রশ্নই উঠে না।

আমিঃ দেখ আঁইশ একটুও ভালো হবে না কিন্তু। আমি যেচে এসে তোর রুমে বসে আছি না।আম্মি কিচেনে রান্না করছে।আমাকে তোর রুম থেকে বের হতে মানা করছে।নয়তো তোর এই বাঁদর চেহারা দেখার কোন ইচ্ছে নেই আমার।আমি এখনি আম্মিকে বলছি তোর এখানে আমি একটুও থাকবো না।আমাকে একবার ডেকে দেখিস খালি তুই। তোর নাক ভাঙ্গবো তাহলে।

আম্মিঃ কার নাক ভাঙ্গবি তুই মেঘা?

🌨️🌨️🌨️

আম্মি ডিমের প্লেট হাতে নিয়ে রুমে ঢুকতে ঢুকতে আমার দিকে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলো।এবার আগে পরে কি হয়েছে তা না শুনেই ইচ্ছে মতো আমাকে বিনা ডিটারজেন্টে ধুয়ে দিলো।

আয়িশঃ দেখেন না আম্মি। মাল্টি কালার আমার নাকি নাক ভেঙে দিবে।আমি স্যুপটুকু খেতে চাইছি না বলে আমাকে কি বকা দিচ্ছে তা কি আপনি জানেন আম্মি?আমার মতো একটা ছোট বাচ্চা ওর কথা শুনে ভয় পাই তো বলেন?আপনি নেই বলে আমাকে যে কি শাসালো।আমার বাঁদর চেহারা নাকি ও দেখবে না।আপনার কারণে আমার রুমে আছে নয়তো একটু উঁকি মারতেও আসতো না।এগুলো কি সহ্য করা যায় বলুন।আমি আজই বাসায় চলে যাবো।মাল্টি কালার আমাকে একটুও দেখতে পারে না।আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে🥺।(ন্যাকামো করে)

আমিঃ 😳😲

আম্মিঃ মেঘা সত্যি? তুই ছেলেটার সাথে এমনটা করতে পারলি।তুই ভুলে গেলি কি করে? আয়িশের কারণে তোকে আল্লাহ বিপদমুক্ত করে দিয়েছে।এখনি ছেলেটার সাথে এমন করিস।আরো তো দিন পরেই আছে।তুই কবে বদলাবি?

আমিঃ আম্মি তুমি আমার কথা না শুনে রায় দেওয়া শুরু করলে।তুমি জানো আয়িশ কি করেছে? ও আমার জামার মধ্যে সসস—

আমাকে পুরো কথা বলতে না দিয়ে ধমকে উঠলো আম্মি।এখন সব দোষ আমার।

আম্মিঃ চুপ কর তুই। ছেলেদটার সাথে তুই কি কি করতে পারিস তা আমার বোঝা হয়ে গেছে। এই জন্য রাতের বেলা ওর সাথে হিংসা করছিলি।

আয়িশঃ ঠিক বলেছেন আম্মি। আমার সাথে কিরকম ব্যবহার যে করলো।চোখ দুটো পেত্নীর মতো উল্টিয়ে পাল্টিয়ে আমাকে ভয় দেখাচ্ছিলো।

আমিঃ তোকে তো আমি—(রেগে তেড়ে এসে)

আয়িশঃ আম্মি দেখছেন🥺।

আম্মিঃ একদম ওর ধারের কাছে আসবি না।

আমিঃ মাছের আঁইশ, তোর কপালে মার আছে। আমকে ইচ্ছে মতো কথা শুনিয়ে, জামায় স্যুপ ফেলে দিয়ে আম্মির কাছে ভালো সাজছিস।আমার নামে আম্মির কানে বিষ দিচ্ছিস।শোধটা তোলা রইলো।সুদ সহ আসল ফেরত দিবো।

আম্মিঃ পরে শোধ নিস।এখন কিচেনে গিয়ে তরকারি নাড়া দিয়ে আয়।নয়তো পুরে যাবে। আর তরকারি যদি পোরে তাহলে তোর খবর আছে। আয়িশ বাবা,হা করো তো দেখি।আমি তোমাকে ডিম দুটো খাইয়ে দেই।চুপচাপ খেয়ে নিবে।

আমিঃ হুম যত পারো খাইয়ে দেও।এখন তোমার ছেলেকে পেয়েছো না।আমি তো আর কেউ না।সব তোমার ছেলে।থাকো তুমি তোমার ছেলে নিয়ে। আমি এ বাড়ি থাকছি না। আব্বি আজ আসুক অফিস থেকে। তোমার নামে আমি নালিশ করবোই করবো।মা-ছেলে মিলে সারাদিন ন্যাকামো করে আমার মেজাজ গরম করে দিবে।ধূর ভালো লাগে না কিছু। ব্যাঙের মাথা।থাকবো না আর এখানে।

জোরে জোরে পা ফেলে নিজের রুমে চলে এলাম।অনেক কান্না পাচ্ছে। আয়িশ থাকলেই আম্মি আমার সাথে এমন করে।আমার কথা ভুলেই যায়।দরজা আটকে রুমের মধ্যে থুম ধরে বসে আছি। আজ সারাদিন রুম থেকে বের হবো না।থাকুক সে তার ছেলেকে নিয়ে। আমার কি?

অন্যদিকে আয়িশ মুখটাকে গোমড়া করে ফেললো।মেঘা ওর জ্বালাতনগুলো মিস করছিলো বলে আয়িশ ওকে এভাবে জ্বালালো।কিন্তু মেঘা যে এতটা মন খারাপ করবে তা ও ভাবতে পারেনি।টেবিলে তাকিয়ে দেখতে পেলো স্যুপের বাটিটা সেখানে।

আয়িশঃ আমার বউয়ের সাথে এমনটা করা ঠিক হয়নি।আজ একটু বেশি হয়ে গেলো। নিশ্চয়ই অনেক মন খারাপ করেছে।মনে মনে বিরবির করে আমাকে বকছে আর চোখের পানি মুছছে।আমি স্পষ্ট ওর নাক টানার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি। বাড়াবাড়িটা অনেক হয়ে গেলো।এবার আমার বউয়ের রাগ ভাঙাতে মাথার ঘাম পায়ে ফেলতে হবে।তারপরেও ওর রাগ ভাঙে কিনা সন্দেহ আছে। চুপচাপ স্যুপটুকু খেয়ে নিলে এতো কিছু হতো না।কিন্তু আমারতো স্যুপ একটুও পছন্দ না।সেটা জেনেও মেঘা কেন স্যুপ করে আনলো।তাইতো আমিও এরকম করলাম।ধূর,এখন আফসোস করা ছাড়া অন্য কোন উপায় খুঁজতে হবে। (কিছু সময় ভেবে) পেয়ে গেছি!!! আমার বউ টিকটিকি ভয় পাই।আর এই টিকটিকি নিয়েই আমি ভয় দেখিয়ে রাগ ভাঙাবো।শয়তানি বুদ্ধিতো কম নেই আমার মাথায়।বউ আমার আরো জ্বালাতন সহ্য করার জন্য রেডি হও।😁😁
(মনে মনে)

জাওদাঃ কি হয়েছে বাবা?মিটমিট করে হাসছো যে?

আয়িশঃ কিছু না আম্মি।মেঘা যে রাগ করলো।

জাওদাঃ ওর রাগ!!! এই আছে এই নেই। তা নিয়ে তুমি চিন্তা করো না।একটু পর সব ভুলে দেখবে চলে এসেছে। তোমার কিছু লাগলে আমাকে ডেকো।কোন সংকোচ করবে না।যা লাগবে বা যা খেতে মন চাইবে নিজের আম্মি মনে করে বলে দিবে।আমাকে যেতে হবে।নিশ্চয়ই রাগ করে গাল ফুলিয়ে নিজের রুমের দরজা আটকে বসে আছে।ঐ দিকে তরকারি বোধহয় পুরোটা পুরে গেলো।আমি আসছি।কিছু লাগলে বলো।

আয়িশঃ আচ্ছা আম্মি।

জাওদা ইসলাম রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।আয়িশকে জোর করে ডিম খাইয়ে দিয়ে গেছেন।
ডিমের গন্ধ ওর নাক, মুখ সিটকে আসছে।ডিম খেতে পারে না।তারপরেও ভদ্র ছেলের মতো শাশুড়ী মায়ের কথা রাখতে নাক বন্ধ করে খেয়ে নিয়েছে। তবে এখন মনে হচ্ছে ভেতর থেকে সব বের হয়ে আসবে।আয়িশ মাথাটা খাটের সাথে হেলিয়ে চোখ দুটো বন্ধ করে নিলো।ওর ভীষণ খুশি লাগছে। কিছু দিন মেঘার সামনে সশরীরে থাকবে তাই।

🌨️🌨️🌨️

অঙ্গরাজ্য………

ইশালের ডান কাঁধের নিচের কিছুটা অংশে বিশাল বড় একটা ক্ষত।তলোয়ারের ধারালো মাথা ঢুকে অনেকখানি মাংস উঠে গর্ত হয়ে আছে।সেই ক্ষতস্থান রাজা নিজ হাতে পরিষ্কার করে দিচ্ছে। টেবিলের আশেপাশে বিভিন্ন গাছ-গাছালির শিকড়,বাকল ও বিভিন্ন রঙের কাচের শিশি।
শয়তান তাড়াতাড়ি মরে না।তাহলে ইশাল কেন এতো তাড়াতাড়ি মরবে বলুন?কৌশল করে, কাপুরুষের মতো পেছন থেকে আয়িশকে আঘাত করেছে।যাতে করে আয়িশ আঘাতটা বেশি পেয়েছে।আয়িশ শুধু ওর বুকে একটা তলোয়ার দিয়ে খোঁচা মারতে পেরেছে।

ইশাল রাগে ফুঁসছে। এই ছেমড়া হেরে এসে শুধু সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করতে পারে।আর কিছু নয়।কাটা জায়গায় ছোট একটা সুই গেঁথে রয়েছে। রাজা সেটা হাত দিয়ে টেনে তুললো।ইশাল ব্যাথায় আহ্ করে উঠলো।তারপর তার পিতার দিকে চোখ গরম করে তাকালো।

রাজাঃ পারো তো এই একটা কাজই।কথায় কথায় সাপের মতো ফোঁস ফোঁস করতে। আর আমার সাথে বেয়াদবি করতে।কাজের কাজ একটাও তোমার দ্বারা সম্ভব নয়।তোমার হাতের ফাঁক দিয়ে কতবড় একটা সুবর্ণ সুযোগ হাত ছাড়া হয়ে গেলো। তুমি কি তা জানো?তোমার বোকামীর কারণে এবারও জানে বেঁচে গেলো মেঘপুত্র। একটা কাজও মনোযোগ দিয়ে করতে পারো না।কাজে সফল হওয়ার আগেই ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার মতো লাফাও।যেই কাজে লাফাও সেই কাজে হেরে বসে থাকো।চোখ গরম করে লাভ নেই। তোমাকে আমি ভয় পাই না।

ইশালঃ আবরার আওসাফ আয়িশ। ওকে আমি ছাড়বো না।ও এবারো আমার চোখে ফাঁকি দিয়ে পার পেয়ে গেলো।এর ফল খুব বাজেভাবে দিতে হবে ওকে।আমি হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারবো না।এবার কিছু সময়ের জন্য পৃথিবীতে যাবো না।বরং কয়েক মাসের জন্য যাবো।স্থায়ী একটা পরিচয় ও জায়গা খুঁজতে হবে।কোন বড়লোকের আদরের দুলালকে সরিয়ে তার জায়গা নিবো।

রাজাঃ তোমার বারবার হেরেও লজ্জা করে না পুত্র?তুমি আবারো পরিকল্পনা করছো?তোমার ঐ গোবর মাথায় বুদ্ধি কবে খুলবে?নিজেকে যে কি মনে করো তুমি? আমার নিজেকে ধিক্কার জানাতে ইচ্ছে করে। প্রতিবার এত ভালো ভালো সুযোগগুলো তুমি নষ্ট করে আসো।তুৃমি যদি আমার পুত্র না হতে তাহলে এতদিন তোমাকে শূলে চড়াতাম।

ইশালঃ মুখ সামলে কথা বলুন।নয়তো আমি ভুলে যাবো আপনি আমার পিতা।এত বড় বড় কথা না বলে নিজে পারেন না পৃথিবীর বুকে পা ফেলতে।সেই সাহস তো নেই। পারেন শুধু আমার উৎসাহ দমিয়ে দিতে। মাঝে মাঝে মনে হয় আয়িশের বদলে আপনাকে প্রথমে মারতে পারতাম।তাহলে নিজের মাথা ও মনটাতে কোন বুড়োর চাপ থাকতো না।একবার শুধু পুরো মেঘরাজ্য ও কন্যাকে আমার হতে দিন।তারপর আপনার হিসাব আমি একে একে নিবো।(দাঁতে দাঁত চেপে)

দরজার সামনে দাঁড়িয়ে মন্ত্রী তাদের পিতা-পুত্রের মনমালিন্য দেখছিলো।মাঝে মাঝে মন্ত্রী আসলেই বুঝতে পারে না এরা সত্যি কি বাবা-ছেলে?নিজেদের মধ্যে একদম বনে না।একে অপরের সাথে কথা কাটাকাটি নিয়ে ব্যস্ত থাকে। একজন অপরকে পিনিক না মেরে কোন কথা বলতেই পারে না।কিন্তু মূর্খরা জানে না নিজেদের মধ্যে ঝামেলা নিয়ে কেউ পরিকল্পনায় সফল হতে পারে না।

মন্ত্রীঃ শান্ত হও পুত্র। শান্ত হোন মহারাজ। আপনারা কোন কারণ ছাড়াই নিজেদের মধ্যে ঝামেলা করেন।যার কোন প্রয়োজন নেই। শুধু নিজেদের মধ্যে মনমালিন্য ছাড়া অন্য কিছু তৈরি করে না।

রাজাঃ বেয়াদব ও অকর্মা পুত্র থাকলে কি অন্য কোন চিন্তা করতে পারি মন্ত্রী?ঝামেলা করবো না কেন?সব ঝামেলার উৎপত্তি তো আমার একমাত্র পুত্র। ছোট থেকে দু-চারটা কষিয়ে গালে মারতে পারতাম।তাহলে আজ আমার কথা শুনতো।নিজে নিজে কোন পাকামো করতো না।এই ছাগলের তিন নাম্বার বাচ্চার জন্য সব পরিকল্পনায় পানি পরে যায়।

ইশালঃ মুখ বন্ধ করুন পিতা। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।মন্ত্রী মশাই আপনার রাজাকে মুখ বন্ধ করতে বলুন।নয়তো আমি যে তাকে কি করবো আমি নিজেও জানি না

রাজাঃ এতক্ষণ তোমার প্রয়োজন ছিলো তাই চুপ হয়ে ছিলে।যেই ঔষধ লাগানো শেষ করলাম ওমনি চটাস চটাস মুখের বুলি বের হয়ে গেলো।কি ভাবো তুমি নিজেকে?আমি তোমর সব কথা শুনবো।কিছুতেই নয়।আমি অঙ্গরাজ্যের রাজা।কারো কথামতো সে চলে না।নিজের যথেষ্ট বুদ্ধি আছে তার।তোমার কোন কথা মানতে বা শুনতে আমি বাধ্য নই।

ইশাল অনেক সময় সহ্য করলেও এখন আর পারলো না।চোখের ইশারায় রাজাকে শূন্যে তুলে দূরে ছুড়ে মারলো।তারপর রাগে চোখ থেকে আগুন ছুঁড়ে মারলো রাজার দিকে।রাজার পোশাকে আগুন ধরে গেলো।মন্ত্রী শত চেষ্টা করেও রাজার পোশাকের আগুন নিভাতে পারলো না।ইশাল তখন রাজাকে রাজবারান্দা দিয়ে নিচের ছোট জল দীঘিতে ফেলে দিলো।তারপর রাগে গজগজ করতে করতে ভেতরের দিকে চলে গেল।

পানি থেকে উঠে একটা শয়তানি হাসি দিলো মেঘরাজ্যের সেনাপতি রাকিন।কারণ এতক্ষণ রাজার রূপে সে ছিলো।মনে মনে খুব খুশি হয়ে নিজের রাজ্যের দিকে পারি দিলো।খুব সাবধানে
অঙ্গরাজ্যের রাজ্যে ঢুকে রাজাকে কিছু সময়ের জন্য ঘুম পারিয়ে নিজে রাজার রূপ নিয়ে গিয়েছিল ইশালের কাছে।বাপ-বেটার মধ্যে বেশ মজবুত এক দ্বন্দ্ব বাজিয়ে এসেছে সে।অথচ যেখানে রাজা কিছুই করেনি।অদৃশ্য হয়ে জলদী অঙ্গরাজ্য ছারলো রাকিন।মেঘপুত্রকে তো সুখবরটা দিতে হবে।কারণ পুরো পরিকল্পনাটাই ছিলো আবরার আওসাফ আয়িশের।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here