মেঘকন্যা☁️
Part_02
Writer_NOVA
“বিয়ের পর বর-কনে দুজনেই পালিয়েছে।” কথাটা বাতাসের মতো সারা গ্রামে ছরিয়ে পরলো।ভারী অদ্ভুত কথা তো।বিয়ের সময় কনে পালায় এটা স্বাভাবিক। আমরা অনেক জায়গায় শুনি।কিন্তু বর পালানোটা তো একেবারেই অস্বাভাবিক কথা।আর দুজনকে পালাতেই যখন হলো তাহলে বিয়ের পর কেন? বিয়ের আগে পালিয়ে যেতো।এরকম হাজার কথা বলছে গ্রামবাসী। তারা জীবনে এই প্রথম বিয়ের পর বর-কনে দুজন পালানোর খবর শুনলো।যে যার যার ঘর থেকে বের হয়ে বর-কনে কে খুঁজতে লাগলো।চারিদিকে হৈ হুল্লোড়।
আমি দিক-বেদিক না তাকিয়ে দৌড়ে যাচ্ছি। ভরা পূর্ণিমার আলোয় রাস্তা চলতে কোন সমস্যা হচ্ছে না। চারিদিকে দিনের মতো ফকফকা আলো।জঙ্গলের ভেতরে যেতেই আগুনে ঝলসানোর মতো করে সারা শরীর ব্যাথা শুরু হলো।সাথে সারা শরীর কালো হয়ে পোড়া পোড়া ঘায়ের মতো সৃষ্টি হচ্ছে। তাও আমি ছুটছি।হঠাৎ একটা জংলি কাটা গচ করে পায়ে ঢুকে গেল।পা ধরে মাটিতে বসে পরলাম।
আমিঃ আল্লাহ বাঁচাও আমায়।কি হচ্ছে আমার সাথে? শরীরটা মনে হচ্ছে ঝলসে যাচ্ছে। আমি আর সহ্য করতে পারছি না।আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। তুমি আমায় সাহায্য করো।
—- তুমি চাঁদের আলোতে গিয়ে দাঁড়াও মেঘকন্যা।তাহলে তোমার শরীরের এই পোড়া দাগগুলো চলে যাবে।এখানটা পুরো অন্ধকার। তুমি এখানে থাকলে কিছু সময় পর ভস্ম হয়ে যাবে।
হঠাৎ একটা মিষ্টি সুর পেয়ে আশেপাশে তাকাতে লাগলাম।ভীষণ ভয়ও করছে।আল্লাহ আমি আবার ভূত-প্রেতের,জ্বীনের হাতে পরলাম না তো।এই ঘন জঙ্গলে ভূত ছাড়া আর কারাই বা থাকবে।তবে ভূত-প্রেত নেই সেটা বিশ্বাস করি।কিন্তু জ্বীন তো আছে।ভয়ে ভয়ে এদিক সেদিক তাকাতেই দুটো জ্বলজ্বল করা চোখ দেখতে পেলাম।ভয়ে একটা আত্ম চিৎকার দিয়ে কিছুটা পিছিয়ে গেলাম।
—- আমায় ভয় পেয়ো না মেঘকন্যা।আমি তোমার কোন ক্ষতি করবো না।আমাকে তুমি তোমার বন্ধু ভাবতে পারো।তোমার কোন ক্ষতি করা তো দূরে থাক মনের মাঝে এই কথাটা আনলে মেঘপুত্র আমাকে আগুনে ঝলসে ফেলবে।
আমিঃ কে তুমি? সামনে এসো।আমার তোমাকে ভয় করছে।আমি অনেক বিপদে পরেছি।প্লিজ আমাকে একটু সাহায্য করো।আমি আর ব্যাথা সহ্য করতে পারছি না।সারা শরীর পুরে যাচ্ছে।
—- আমি এদিকে।তুমি উপরে তাকালেই আমাকে দেখতে পারবে।
উপরের দিকে তাকাতেই আবছা আলোয় দেখতে পেলাম একটা লক্ষ্মীপেচা।খুব বেশি বড় নয়।আমি এবার সত্যি ভয় পেয়ে গেলাম।পেঁচা আবার কথা কিভাবে বলতে পারে? নিশ্চয়ই পেঁচার রূপ ধরে কোন দুষ্ট জ্বীন এসেছে।
— তুমি আমায় ভয় পেয়ো না। আমি সত্যি সত্যি একটা পেঁচা। আমি কোন সাধারণ পেঁচা নই।তাই তোমার সাথে কথা বলতে পারছি।আমার নাম কুহুকলি।তুমি একটু চাঁদের আলোয় যাও।দেখবে নিমিষেই তোমার এই পোড়া ঘা গুলো চলে যাবে।নিজেকে কষ্ট দিও না।আমার কথা শোনো।দুই মিনিট হাঁটলেই তুমি ফাঁকা জায়গা দেখতে পারবে।সেখানে কোন গাছ না থাকার কারণে চাঁদের আলো পরে।মেঘকন্যা, তোমার এখন পূর্ণিমার আলো খুব প্রয়োজন।এখনটা পুরো ভুতুড়ে পরিবেশ। ঘন গাছ-গাছালির কারণে অন্ধকার ছেয়ে আছে। এক ফোঁটা চাঁদের কিরণও এখানে আসবে না।
পেঁচাটার কথা শুনে আমার ভয় কিছুটা কমলো।কি অদ্ভুত নাম ওর কুহুকলি।আমি এক হাত দিয়ে পায়ে থাকা কাটা তুলতে ব্যস্ত হয়ে পরলাম।কিন্তু তুলতে পারছি না।সারা শরীর কালো হয়ে আসছে।সাহস করে পেঁচাটাকে বললাম।
আমিঃ আমার পায়ে একটা বিশাল বড় কাটা ফুটেছে। আমি কিছুতেই তুলতে পারছি না।তুমি কি আমাকে কাটা তুলতে সাহায্য করবে?
কুহুকলিঃ নিশ্চয়ই মেঘকন্যা।তোমার কথা মানতে আমি বাধ্য। তুমি আমাকে আরো আগে কেন বললে না।
লক্ষ্মীপেচা ডানা ঝাপটে আমার পায়ের কাছে এসে বসলো।ওর ঠোঁট দিয়ে আলতো করে ফুটন্ত কাটা উপরে ফেললো।আমি চোখ মুখ খিঁচে পা ধরে বসে আছি। পা থেকে গলগল করে রক্ত পরছে।
কুহুকলিঃ তোমার হাতে সময় অনেক কম মেঘকন্যা।আকাশের দিকে তাকাও।চাঁদের পাশে থাকা কালো মেঘের টুকরোটা চাঁদ কে ঢেকে ফেলার আগে তোমাকে জোস্নায় দাঁড়াতে হবে।নয়তো অনেক বড় সর্বনাশ হবে।তুমি তোমার শুভ্র মেঘের রং সারাজীবনের জন্য হারিয়ে ফেলবে।জলদী করো।ওরা তোমার গায়ের ঘ্রাণ পেয়ে গেলে অনেক বড় বিপদ হয়ে যাবে।
আমিঃ আমার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে। আমি এখান থেকে উঠতে পারবো না।
কুহুকলিঃ তোমাকে পারতেই হবে।তুমি হেরে গেলে যে পুরো মেঘরাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।
আমিঃ তুমি কি বলছো এসব? আমি কিছু বুঝতে পারছি না। আমাকে তুমি বারবার মেঘকন্যা বলে কেন ডাকছো? মেঘ রাজ্য, মেঘকন্যা,মেঘপুত্র।এসব কথা আমায় কেন বলছো?
কুহুকলিঃ তোমার এখন এসব না জানলেও চলবে।তোমাকে আমি যা বলছি তা করো।ওরা এসে পরবে।
আমিঃ কারা এসে পরবে?
পুরো কথা শেষ করতেই চারপাশ থেকে খুব ভয়ংকর ও বিকট আওয়াজ শুনতে পেলাম।পুরো জঙ্গলটা কেঁপে উঠলো।লক্ষ্মীপেচার চোখও আমি ভয় দেখতে পেলাম।
কুহুকলিঃ মেঘকন্যা, ওরা চলে এসেছে। তুমি পালাও।চাঁদকে কালো মেঘ ঢেকে ফেলছে।
আমি যথেষ্ট শক্তি সঞ্চার করে উঠে দাঁড়ালাম।মাটিতে পা রাখতেই ব্যাথায় টুপ করে নিচে বসে পরলাম।পেঁচাটা গাছের ডালে গিয়ে বসলো।চোখ দিয়ে অনরবত পানি পরছে। কি হচ্ছে আমার সাথে? অনেক কষ্ট করে পা টেনে হিঁচড়ে উল্টো দিকে পালাতে শুরু করলাম।কিন্তু বেশি দূর যেতে পারলাম না।তার আগেই আমাকে কিছু এক চোখ বিশিষ্ট অদ্ভুত দেখতে প্রাণী গোল করে ঘিরে ফেললো।
🌨️🌨️🌨️
মেঘরাজ্য…….
মেঘ রাজ্যে চারিদিকে ঘন কালো হয়ে আসছে। শো শো করে বাতাস বইছে।গাছপালা ভেঙে মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। সবাই ভয় পেয়ে এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে।মেঘ রাজ্যের রাজা,রাণী চিন্তিত মুখে রাজবারান্দায় এসে দাঁড়ালো।
রাণীঃ মহারাজ, কি হচ্ছে এসব?আমাদের পুরো রাজ্য এরকম অন্ধকারে ছেয়ে কেন গেছে?
রাজাঃ আমাদের মেঘকন্যার বিপদ ঘনিয়ে এসেছে রাণী।আমাদের মেঘকন্যার কিছু হলে আমাদের মেঘপুত্র বাঁচবে না।
রাণীঃ আমাদের মেঘপুত্র কোথায়?সে এখনো কন্যার কাছে কেন পৌঁছায়নি।মেঘকন্যার কিছু হলে আমাদের পুত্রের সকল শক্তি চলে যাবে।
তাদের দুজনের কথার মাঝে সেনাপতি এসে রাজ্যের যাবতীয় খবর দিতে লাগলো।
সেনাপতিঃ আসালামু আলাইকুম মহারাজ ও রাণীমা।রাজ্যের অবস্থা ভালো নয়।চারিদিকে প্রচন্ড বাতাসে সব লণ্ডভণ্ড করে নিয়ে যাচ্ছে। এই মুহুর্তে আপনাদের দুজনের রাজবারান্দায় অবস্থান করা মোটেও সুবিধার নয়।যে কোন সময় আপনাদের ওপর বাতাসের তীব্র বেগে হামলা হতে পারে।দয়া করে আপনারা অন্দরমহলে অবস্থান করুন।
রাজাঃ মেঘকন্যার কোন খবর? আমাদের পুত্র ও কন্যা ভালো আছেতো সেনাপতি? আমাদের কোন লোক কি সেখানে পাঠিয়েছো?
সেনাপতিঃ মহারাজ আপনি বিচলিত হবে না।আমরা আজ মেঘপুত্র ও মেঘকন্যার সামনে যেতে পারবো না।আগুনে ঝলসে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাই মেঘরাজপুত্র আমাদের কে তাদের কাছে পাঠাতে মানা করছে।তবে আমরা মেঘকন্যাকে সাহায্য করার জন্য আমাদের কুহুকলি নামক লক্ষ্মীপেচাকে পাঠিয়েছি।এতক্ষণে কুহুকলি মেঘকন্যার কাছে পৌঁছে গেছে। কিন্তু আমার মন বলছে মেঘকন্যা খুব বিপদে পরেছে।নয়তো আমাদের রাজ্যে এরকম পরিস্থিতি কখনো হতো না।মেঘকন্যা উত্তরের ভয়ানক জঙ্গলে ঢুকে পরেছে।আর সেখানে আমাদের শক্তি কোন কাজ করে না।কারণ সেটা পুরো অঙ্গরাজ্যের অধীনে।আপনারা সাবধানে থাকবেন।আমাকে বাইরের দিকটা দেখতে হবে।
সেনাপতি তলোয়ার কোষমুক্ত করে রাজ বারান্দা থেকে দৌড়ে নিচে নেমে গেল।চারিদিকে পুরো ঘুটঘুটে কালো হয়ে আছে।
রাজাঃ আজ নিশ্চয়ই আমাদের মেঘ কন্যা ও পুত্রের বিয়ে হয়েছে রাণী।যার জন্য আমাদের শত্রু অঙ্গরাজ্যেের সৈন্য ওদের ওপর হামলা করেছে। তুমি আকাশের চাঁদটার দিকে তাকিয়ে দেখো।আস্তে আস্তে এক টুকরো কালো মেঘ চাঁদ ঢেকে ফেলছে।কন্যা এখনো চাঁদের আলো গায়ে মাখেনি।তাই অঙ্গরাজ্যের রাজপুত্র আমাদের মেঘকন্যার ক্ষতি করতে যাচ্ছে।
রাণীঃ আমরা এখন কিভাবে বাঁচাবো আমাদের মেঘ কন্যাকে? ওর কিছু হলে পুরো রাজ্য ধ্বংস হয়ে যাবে।
রাজাঃ কথা বলো না রাণী।অন্দরমহলে চলো।বাতাসের বেগ বেড়ে যাচ্ছে। চারিদিকে ধূলিঝড় শুরু হয়েছে। ভেতরে গিয়ে ওযু করে নফল নামাজ পড়া শুরু করি।আল্লাহ তায়ালা এই বিপদ থেকে আমাদের নিশ্চয়ই উদ্ধার করবে।
রাণীঃ আমাদের মেঘ পুত্র কোথায় এখন? মেঘকন্যাকে বাঁচাতে কেন যাচ্ছে না।
রাজাঃ রাণী,আজ মেঘকন্যা ও মেঘপুত্রের শুধু বিবাহ সম্পন্ন হয়নি।সাথে আরো অনেক কাজ সম্পন্ন হয়েছে।আজ ওদের মাঝে সকল শক্তি চলে আসবে।ওরা নিজেদের রক্ষা নিজেরাই করতে পারবে। অন্দরমহলে চলো।নয়তো বাতাসে উড়িয়ে নিতে পারে।
রাণীঃ আমি কিছু শুনতে পাচ্ছি না। কি বলছেন মহারাজ? বাতাসের বেগ বেড়েই চলছে।
মহারাজ, রাণীকে হাত ধরে অন্দরমহলে নিয়ে গেলেন।চারিদিকে বাতাসের তোরজোরে ভেঙে চুরে যাচ্ছে। এক টুকরো সাদা মেঘের ওপর থাকা পুরো মেঘরাজ্যটা বাতাসের সমান তালে দুলছে।মনে হচ্ছে এই নিচে পরে গুড়িয়ে যাবে।অন্দরমহলে ঢুকে রাজা ও রাণী দুজনেই ওযু করে নফল নামাজ আদায় করতে দাঁড়িয়ে গেলো।এখন একমাত্র তাদের এই বিপদ থেকে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাঁচাতে পারবে।
🌨️🌨️🌨️
আমি ভয়ে পিছনে পিছিয়ে যাচ্ছি।প্রায় ৭/৮ টা বিশাল দেহি চার পা বিশিষ্ট প্রাণী আমার দিকে এগিয়ে আসছে। চোখ মুখে তাদের স্পষ্ট হিংস্রতা।মনে হচ্ছে বহু প্রতিক্ষার বস্তুটা খুঁজে পেয়েছে।আকাশটা পুরো কালো মেঘে ছেয়ে গেছে। ভয়ে, ব্যাথায় আমি জোরে চিৎকার করে কাঁদছি। প্রাণীগুলো খুব বিদঘুটে আকৃতির। সারা শরীর রক্তে মাখামাখি। আমি পেছাতে পেছতে কিছুটা ফাঁকা জায়গায় চলে এলাম।প্রাণীগুলো আমাকে চক্রাকার করে ঘুরে ঘুরে দেখছে।আসলে ওরা আক্রমণ করার জন্য সঠিক পথ খুঁজছে। প্রচন্ড হুংকার দিয়ে যেই আমার ওপর ঝাপিয়ে পরবে ঠিক তখনি চাঁদটা কালো মেঘের আড়াল থেকে উঁকি মারলো।পুরো কিরণটা আমার ওপর এসে পরলো। আমি হাত উল্টো চোখ দুটো আটকে ফেললাম।সাদা আলোর ঝলকানিতে পুরো জঙ্গল আলোকিত হয়ে গেল।প্রাণী গুলো বহুদূরে ছিটকে পরে গেল।
কোন আওয়াজ না পেয়ে পিটপিট করে চোখ খুললাম।চোখ খুলে যা দেখলাম তাতে আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।আমার সারা শরীর ঠিকরে সাদা আলো বের হচ্ছে। আমার শরীর থেকে একটা আলোক রশ্মি আকাশ পর্যন্ত উঠে গেছে। সেখানে একটা সাদা মেঘের টুকরো কে ভাসতে দেখলাম।আমার শরীরে কোন পোড়া-ঘা নেই। কুহুকলি উড়ে এসে আমার হাতের আঙুলে বসলো।
কুহুকলিঃ তুমি এখন বিপদমুক্ত মেঘকন্যা।আরেক মিনিট দেরী হলে ওরা তোমাকে ছিঁড়ে ছিড়ে খেয়ে ফেলতো।আর আমাকে মেঘপুত্র জ্যান্ত আগুনে ঝলসাতো।তুমি পূর্ব দিকের রাস্তায় যাও।সেখানে গেলে তুমি শহরের হাইওয়ে খুঁজে পাবে।
আমিঃ আমি বাসায় যাবো কি করে?
কুহুকলিঃ সেটা নিয়ে তোমার চিন্তা না করলেও চলবে।আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করার জন্য যেমন আমাকে পাঠিয়েছে তেমনি অন্য কাউকেও পাঠিয়ে দিবে।তুমি এখানে বেশি সময় থাকলে সর্দার বাড়ির মানুষের কাছে ধরা পরে যেতো পারো।ওরা এদিকেই আসছে।জলদী ভাগো।
আমিঃ অনেক ধন্যবাদ তোমাকে পেঁচা বন্ধু। তুমি আজ না থাকলে যে কি হতো তা একমাত্র আল্লাহ জানে। আল্লাহ একদম ঠিক সময় তোমায় আমার কাছে পাঠিয়েছে।
কুহুকলিঃ আরেকদিন তোমার সাথে দেখা হবে।যখনি তোমার বিপদ হবে তখনি আমাকে তোমার আশেপাশে পাবে।
কুহুকলির থেকে বিদায় নিয়ে আমি পূর্ব দিকের রাস্তায় যেতে লাগলাম।আশ্চর্য বিষয় হলো আমার পা বা শরীরের কোন অংশ এখন ব্যাথা করছে না।তাছাড়া আমি যেদিক দিয়ে হাঁটছি সেদিক আলোকিত হয়ে আমার যাওয়ার পথ সহজ করে দিচ্ছে। আমার শরীরে সাদা আভাটা এখনো আছে।৫ মিনিট হাঁটতেই আমি ল্যাম্পপোস্ট দেখতে পারলাম।গভীর রাত।এখন গাড়ি পাওয়া একেবারেই অসম্ভব। শাড়ির কুচি বাঁকা করে ধরে দাঁড়িয়ে আছি। এখনো ঘোরে আছি। আমার সাথে কেন এরকম হচ্ছে তাও আমার অজানা।
আমিঃ দূরে থেকে কিছুর আওয়াজ ভেসে আসছে।বাইকের সাউন্ড মনে হচ্ছে। এতরাতে বাইক আসবে কোথা থেকে? কেউ কি সত্যি এখান দিয়ে যাচ্ছে?
আমার ভাবনার মাঝে একটা কালো বাইকে,কালো ব্লেজার পরিহিত এক লোক খুব দ্রুত আমাকে ক্রস করে চলে গেল।আমি হাত দিয়ে ইশারা করেইও তাকে থামাতে পারলাম না।কিন্তু কিছু দূর যাওয়ার পর বাইকটা ইউটার্ণ নিয়ে আবার ফিরে এলো।এসে আমার সামনে থামলো।হেলমেটটা খুলে যখন কালো ব্লেজার পরিহিত ব্যাক্তিটা আমার দিকে তাকালো।তাকে দেখে আমি এতটাই খুশি হলাম যে কোন দিকে না তাকিয়ে আমি খুশিতে তাকে জরিয়ে ধরলাম।
আমিঃ আয়িশ তুই?
আয়িশঃ ছাড় আমায় হাতি, নয়তো আমি এখন মাটির তলায় যাবো গাতি।
আমিঃ তুই জীবনে ভালো হবি না।(রেগে)
আয়িশঃ আমার ভালো তো তোর সহ্য জীবনেও হয় না।এরকম হুট করে আমায় জরিয়ে ধরলি কেন?
আমিঃ খুশির ঠেলায়।(রেগে)
আয়িশঃ একটা ছেলেকে একা নির্জন রাস্তায় পেয়ে ইজ্জত হোননের চেষ্টা। আল্লাহ বাঁচাও আমায়।
আমিঃ আল্লাহ কি মিথ্যেবাদী।কি বলে এসব? তোওবা তোওবা।তোর মনে এই ছিলো😲?
আমি আয়িশকে ছেড়ে দিয়ে ওর পিঠে ইচ্ছে মতো কিল-ঘুষি মারতে লাগলাম।এই ছেলেটার কথা আজকাল লাগাম ছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
আমিঃ তোকে তো আমি আজ মেরেই ফেলবো।
আয়িশঃ আমিতো মজা করলাম।এবারের মতো প্লিজ ছেড়ে দে।লোহার মতো হাত।আমি আজকে শেষ।
আমিঃ আবারো।(রেগে)
আয়িশঃ সরি আর বলবো না।তুই আমাকে বল এত রাতে তুই এখানে কি করছিস মাল্টি কালার?আমি তো তোকে দেখে পুরো অবাক।ভাগ্যিস তোকে আমি দেখেছিলাম। তুই তো জানিস, বাইক চালানোর সময় আমার আবার কোন দিক-বেদিক খেয়াল থাকে না।
আমিঃ তুই এখানে কি করছিস?
আয়িশঃ আমি তো দুদিন ধরে উত্তরের গ্রামে ছিলাম।একটা জরুরি কাজ ছিলো।তোকে তো বলেই এসেছিলাম।তাই তোদের প্ল্যানেও শরীক হতে পারিনি। সেখান থেকে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে এখন ঢাকার উদ্দেশ্য একটু আগে রওনা দিলাম।কিন্তু তুই এরকম বউ সেজে রাস্তায় কি করছিস? তোরা তো আজ আফিয়াকে আবিরের জন্য ভাগিয়ে নিতে এসেছিলি।
আমিঃ সে অনেক কাহিনি। তোকে আমি যেতে যেতে আমি সব বলছি।নে এবার চল তো।
আয়িশঃ ওকে, যথা আজ্ঞা মহারাণী।আপনার সেবায় আমি ২৪ ঘন্টা নিয়োজিত।
আয়িশ আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। ওকে আমি চোখ বুঁজে বিশ্বাস করতে পারি।আজকাল ওর মতো ছেলে কোটিতে একটা পাওয়া যাবে। আমি কথা না বাড়িয়ে ওর বাইকে চড়ে বসলাম।এখানেও একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটলো।আয়িশ বাইক স্টার্ট দিতেই আমার গায়ে ঠান্ডা একটা শীতল বাতাস বয়ে গেল।সারা শরীরের লোম দাড়িয়ে গেল।যাতে করে আমার চোখে রাজ্যের ঘুম নেমে এলো।আমি পেছন থেকে আয়িশকে জরিয়ে ধরে ওর পিঠে মাথা রেখে ঘুমের রাজ্যে পারি দিলাম।হঠাৎ কেন এমন হলো আল্লাহ মালুম।
মেঘা ঘুমিয়ে যেতেই আয়িশের মুখে একটা রহস্যময় বাঁকা হাসি দেখা দিলো।বাইক থামিয়ে পেছনে তাকিয়ে এক হাতে মেঘার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো।তারপর আবার চলতে শুরু করলো। মেঘার যখন ঘুম ভাঙ্গলো তখন________
চলবে