মুগ্ধতায় মুগ্ধ♥,Part_18+19+20
Labiba_Islam_Roja
Part_18
.
🍁
ব্যালকোনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।আজ সারাদিন ধরে আকাশে সূর্যের দেখা মিলে নি।শুধুই মেঘের আনাগোনা।বার কয়েক বড় বড় ফোঁটায় অঝরে ঝরেছে বৃষ্টি।এখন বৃষ্টি নেই।তবে বাতাশ বইছো ভারী।বাতাশ জানান দিচ্ছে আজ আবারও বৃষ্টি হবে।মুগ্ধতা তাকিয়ে থাকতে থাকতে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেলো।বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা যেন মন ছুঁয়ে যাচ্ছে তার।আজ-কাল ও বাড়ির কথা বড্ড মনে পড়ে।ছুটে যেতে ইচ্ছে করে কিন্তু যাওয়া আর হয়ে উঠে না।বা যেতে চাইলেও যাওয়া যায় না।মাঝেমধ্যে ফোনে কথা হয়।মুগ্ধ ওকে একটা নতুন ফোন কিনে দিয়েছে।এখন এটা দিয়েই সকলের সাথে কথা বলে।
.
বিশ্বাস অবিশ্বাস এর দুনিয়ায় সবার কাছে ঠকতে ঠকতে একদম কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে।চাচা চাচীর কাছে জীবনে সব থেকে বাজে ভাবে ঠকে গেছিলো।তারপর আশ্রয় পেলো আফিফেদের বাসায়।সেখানে আদনান নামক ব্যক্তির কাছে চুড়ান্ত পর্যায়ে ঠকে গিয়ে মানুষের উপর থেকে বিশ্বাস নামক জিনিসটাই উঠে গেছে।আর কাউকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে না।এখন মুগ্ধর সাথে জীবনটা জুড়ে গেছে।মুগ্ধ এখন পর্যন্ত ওর দেখা ভালো আর কেয়ারিং হাসবেন্ড।আদনানও তো এভাবে কেয়ার করতো তাঁর।।কিন্তু একদিন মুখোশ সরে গিয়েছিল।আচ্ছা মুগ্ধ ও কি এরকম কিছু করবে।আদনানের মতো একদিন সুযোগ বুঝে ঠকাবে না তো।এইবার ঠকলে আর সহ্য করতে পারবে না মুগ্ধতা।হয়তো জীবন কে বিদায় জানিয়ে দিতে হবে তাঁর।মুগ্ধ কে দেখে ঠকানোর মানুষ মনে হয় না।এখন পর্যন্ত দু হাত ঢেলে দিয়েই যাচ্ছে কিন্তু কিঋু চায় নি।এমনকি কোনোদিন নিজের অধিকার ও দাবি করে নি।হয়তো আমার সময় চাই এটা বুঝতে পেরেছে ও।আজ মুগ্ধ অফিস গেছে।কি একটা কাজে যেন ওর প্রয়োজন পড়েছে।আজকাল মুগ্ধ বাসায় না থাকলে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।যেন সবার মাঝে থেকেও একা ফিল করি আমি।অফিসে বসে এ পর্যন্ত ছয়বার কল করেছে আমায়।খেয়েছি কিনা কি করছি না করছি।বরাবরই দুই তিন মিনিটের উপরে কথা বলে নি।আসলে কি কথা বলবো যেমন আমি খুঁজে পাইনা তেমনি হয়তো উনিও।হঠাৎ মোহনার ডাকে পিছন ফিরে তাকালাম আমি……
~~~বউমণি এখানে একা একা দাঁড়িয়ে কি করছো….?
______মুচকি হেসে বললাম…..কিছু না!বৃষ্টি দেখছিলাম।
~~~এই বউমণি আজ ভাইয়া আর মা কেউ বাসায় নাই।চলো না বৃষ্টিতে ভিজি।
_____সে ভিজাই যায় কিন্তু উনারা থাকলেই বা কি সমস্যা…?
~~~আহা!আম্মু জীবনেও বৃষ্টিতে ভিজতে দেবে না।ছোটবেলার একবার ভিজে আমি আর ভাইয়া অসুস্থ হয়ে পড়েছিলাম সেই থেকে আর ভিজতে দেয় নি।আর ভাইয়া ওই দিনের পর আর কখনও ভিজে নি।এখন সে জীবনেও বৃষ্টিতে ভিজে না আর কাউকে ভিজতেও দেখতে পারে না।
______তাহলে থাক!যদি আবার অসুস্থ হয়ে পড়ো।
~~~ধুর!কিচ্ছু হবে।এখন ওরা বাসায় না থাকলে লুকিয়ে ভিজি প্রবলেম হয় না।তবে আমি বেশিক্ষণ ভিজবো না ১৫-২০ মিনিট ওকে।তাড়াতাড়ি চলো নইলে আবার ওরা ফিরে আসবে।
🥀
মুগ্ধ বাসায় এসেছে একটু আগে।এসে মুগ্ধতা কে রুমে দেখতে পেলো না।মোহনার রুমে খোঁজ করে মোহনাকেও পেলো না।রান্নাঘরে গিয়ে দেখলো ওখানেও নেই।আমিনাকে জিজ্ঞেস করলে ও জানে না বললো।তাই ছাদেের উদ্দেশ্যে গেলো……!!
.
প্রায় অনেকসময় ধরে ভিজে চলেছে মুগ্ধতা আর মোহনা।দুজনেই ভিজছে আর খিলখিল করে হাসছে।আড়াল থেকে মুগ্ধতা কে দেখে চলেছে মুগ্ধ।দুহাতে বৃষ্টির ফোঁটা হাতে নিচ্ছে আর হাসছে।মুগ্ধ চোখই সরাতে পারছে না।ভিজে চিপচিপে হয়ে গেছে।একটু পরই মোহনা চলে গেলো।ও আর ভিজবে না।ওর ঠান্ডা লাগছে।মুগ্ধতা কে যেতে বলল কিন্তু ও যাবে না আরো কিছুক্ষণ ভিজবে।তাই বাধ্য হয়ে চলে গেলো।মোহনাকে আসতে দেখে আড়ালে লুকিয়ে পড়লো মুগ্ধ।
.
মুগ্ধতার দিকে নেশা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধ।ওকে দেখে একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে।খুব ইচ্ছে করছে ওকে আজ ছুঁয়ে দিতে।আস্তে আস্তে ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছে মুগ্ধতার দিকে।মুগ্ধতা চোখ বুঝে বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা অনুভব করে চলেছে।হঠাৎ সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে চোখ খুলে তাকালো।মুগ্ধ কে সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠলো।সাদা শার্ট পানির ছোঁয়ায় লেপ্টে গেছে তার শরীরের সাথে।এতক্ষণে ভিজে একাকার মুগ্ধ।।বৃষ্টির পানিতে কাজল লেপ্টে গেছে মুগ্ধতার।ঠোঁট জোড়া ঈষৎ কাঁপছে।এই ঠোঁট জোড়া আজ খুব টানছে মুগ্ধ কে।মুগ্ধতা কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বললো……
____আপনি এখানে…..?
মুগ্ধ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।কিছু বুঝে উঠার আগেই আচমকা মুগ্ধতার ঠোঁট জোড়া নিজের দখলে নিয়ে নিলো।মুগ্ধতা পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে।কিছু বুঝতে পারছে না।নিজেকে ছাড়াতে গিয়েও ব্যর্থ।কিছুক্ষণ পর ওকে ছেড়ে দিলো মুগ্ধ।মুগ্ধতা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে।চোখ দিয়ে পানি ঝরছে কিন্তু বৃষ্টির কারণে বোঝা যাচ্ছে না।বৃষ্টির ফোঁটাগুলোর সাথে চোখের পানিগুলো বিলিন হয়ে যাচ্ছে।কিছুক্ষণ মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে দৌড়ে নিচে নেমে এলো মুগ্ধ।এখন বুঝতে পারছে সে কি ব্লান্ডার করেছে।ছিঃ এখন মুগ্ধতা কি ভাববে।ওকে দেখে এতটাই দিশেহারা হয়ে গিয়েছিলাম যে কি করছি না করছি বুঝতেই পারিনি।যদি নিজের মধ্যে থাকতাম তাহলে এমনটা হতো না।রুমে এসে টাওয়াল নিয়ে আক্ষেপ করতে করতে ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো মুগ্ধ।
এখনও বৃষ্টিতে ভিজে চলেছে মুগ্ধতা।মুগ্ধ চলে গেছে অনেক্ষণ হবে কিন্তু মুগ্ধতা এখনও নামে নি।ছাঁদের এক কোণে হাঁটু ভাঁজ করে বসে কেঁদে চলেছে।বৃষ্টির সাথে ভাসিয়ে দিচ্ছে চোখের অশ্রুকণা।মুগ্ধ এমন কেন করলো।তাঁর জীবনটাই বা কেন এমনভাবে মোড় নিলো।আর সবার মতো স্বাভাবিক হতে পারতো মুগ্ধতার জীবন কিন্তু না হয়নি।কি দোষ করেছিলো সে যে একে একে সবাই ছেড়ে চলে গেলো।কেন এমন হলো!
প্রায় আধঘন্টা পর রুমে ঢুকলো মুগ্ধতা।বিছানায় ল্যাপটপ নিয়ে বসে আছে মুগ্ধ।মুগ্ধতার লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে। কীভাবে মুগ্ধর সামনে যাবে সেই চিন্তায় অস্থির।এদিকে মুগ্ধও পরেছে সেইম অবস্থায় কি করে মুখ দেখাবে মুগ্ধতা কে।মুগ্ধতার উপস্থিতি টের পেয়ে বললো……
~~~বাইরে দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি এসে চেঞ্জ করে নাও নইলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
মুগ্ধর কথা শুনে চোখ বড় বড় করে তাকালো মুগ্ধতা।উনি জানলেন কি করে আমি এখানে।কোনো কথা না বলে চুপচাপ ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো মুগ্ধতা।
.
.
ড্রয়িংরুমে গল্পের আসর জমেছে।গরম গরম খিচুরি খাচ্ছে সবাই।ইতিমধ্যে মুগ্ধর মা ফিরে এসেছেন বাসায়।রাতুল আর হৃদয়ও এসেছে।মুগ্ধদের ফাইনাল এক্সামের আর হাতে গোনা ক’দিন বাকি মাএ।তাই এর আগে কিছু মজা মাস্তি করতেই মূলত এখানে আসা।কারণ এক্সাম টাইমে পুরো মনযোগ থাকবে বইয়ের পাতায়।সকলের মধ্যে হঠাৎ হাঁচি দিয়ে উঠলো মুগ্ধ।একের পর হাঁচি দিয়েই চলেছে।ওকে হাঁচি দিতে দেখে সকলেই অবাক চোখে তাকালো মুগ্ধর দিকে।মুগ্ধ কখনও বৃষ্টিতে ভিজে না এটা প্রায় সবাই জানে কারণ বৃষ্টির পানি গায়ে লাগলেই জ্বর আসে ওর।তাহলে!নিজের কৌতুহল দমাতে না পেরে মোহনা বলেই ফেললো……
______ভাইয়া তুমি কি বৃষ্টিতে ভিজেছো নাকি….?
কথাটা শুনেই চুপসে গেলো মুগ্ধতা।এখন উনি কি বলবেন।আবারও মুগ্ধর জন্য সবার সামনে লজ্জায় পরতে হবে ওকে ভেবে দীর্ঘশ্বাস ফেলে রান্নাঘরে চলে গেলো।
~~~আরে নাহ!ওই যে বাসায় ঢুকার সময় গেইটের কাছে গাড়ী রেখে দৌড়ে এসেছিলাম না তাই হয়তো ঠান্ডা লেগে গেছে।
.
.
রাত বারোটা হঠাৎ ঘুমের মধ্যে গরম কিছু অনুভব হওয়ায় চোখ খুলে তাকালো মুগ্ধতা।গরমের চোটে ঘেমে একাকার।যেখানে এসি চলছে সেখানে তো এত গরম লাগার কথা না।তার উপর আজকের ওয়েদার ও বেশ ঠান্ডা তাহলে। হঠাৎ বুঝতে পারলো মুগ্ধর শরীর মাএাতিরিক্ত গরম।সেই গরম বুকে ওকে জড়িয়ে শুয়ে আছে মুগ্ধ।আর মাঝে মাঝে কিসব বলে চলছে।সেগুলো বুঝার অনেক চেষ্টা করলো কিন্তু কিছুই বোধগম্য হলো না তাঁর।মুগ্ধ কে ছাড়াতে গেলে আরও বেশি চেপে ধরছে মুগ্ধ।কপালে হাত দিয়ে টেম্পারেচার চেক করলো।ওমা!এ তো অনেক জ্বর।তাই জন্যই আবোল তাবোল বকছেন উনি।অনেক চেষ্টার পর মুগ্ধ কে ছাড়িয়ে উঠে বসতে সক্ষম হলো মুগ্ধতা।হালকাভাবে ডাকতে লাগলো…..
______এই যে শুনুন!শুনুন না।আপনার কি জ্বর এসেছে নাকি…?তাহলে আমাকে বলেন নি কেন….?
মুগ্ধতার ডাকেও কোনো ভাবান্তর হলো না মুগ্ধর।এখন কি করবে বুঝতে পারছে না।এত রাতে মা কে ডেকে বিব্রত করার কি প্রয়োজন আছে।নাহ!থাক দেখি ঘরে কোথাও ঔষধ পাই কিনা।পুরো ঘর খুঁজেও কোনো ঔষধ পেলো না মুগ্ধতা।এখন নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে। খুব কান্না পাচ্ছে ওর।লাফিয়ে লাফিয়ে জ্বর বেড়েই চলেছে মুগ্ধর।এখন খুব ভয়ও করছে মনে।কারণ জ্বরের ঘোরে কি সব আওরাচ্ছে।উপায় না পেয়ে ছুট লাগালো মোহনার ঘরে।মা কে ডেকে দুশ্চিন্তায় ফেলতে চাইছে না।আবার কি ভেবে যেন রান্নাঘরের দিকে গেলো।একটা বোল নিয়ে ফিরে এলো।রুমে এসে মাথায় জলপট্টি দিচ্ছে মুগ্ধর মাথায়।মুগ্ধ জ্বরের ঘোরে মিটিমিটি হাসছে দেখে আরও ভয় লাগছে তাঁর।কিছুক্ষণ ভেবে আলমারির দিকে নজর পড়লো।ওখানে যাবতীয় মেডিসিন রাখে মুগ্ধ।তাই উঠে ওখানে খুঁজতে লাগলো।এতক্ষণে মুখে হাসি ফুটলো শেষ পর্যন্ত জ্বরের মেডিসিন পাওয়া গেলো।মুগ্ধ কে মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে মাথার কাছে বসে জলপট্টি দিতে ব্যস্ত।হঠাৎ মুগ্ধর মুখের উপর নজর পরলো ওর।আজ প্রথম এতটা কাছ থেকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে মুগ্ধ কে।ছেলেটার গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা।।মটুও নয় আবার পাতলুও নয় মাঝারি ধরণের বডি।মুখে খোঁচা খোঁচা দাঁড়ি।সবকিছু মিলিয়ে বেশ মায়াবী একটা চেহারার অধিকারী।যে মায়ায় যে কেউ আকৃষ্ট হবে অনায়াসে।অথচ মুগ্ধতা! সে কি পেরেছে সেই মায়ায় নিজেকে জড়াতে।জানে না মুগ্ধতা!কিচ্ছু জানে না!
.
.
চলবে……
মুগ্ধতায়_মুগ্ধ❤️
Labiba_Islam_Roja
Part_19
.
🍁
রাত তিনটা হঠাৎ কারো গেংগানোর আওয়াজ শুনে ধড়ফড়িয়ে উঠলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ কে দেখতে দেখতে কখন যে ওর বুকের উপর ঘুমিয়ে পড়েছিলো টেরই পায় নি ও।মুগ্ধ ঘুমের ঘোরে গেংগাচ্ছে।মাথায় হাত দিয়ে শকড।আবারও জ্বর এসেছে জ্বরে মাথা পুড়ে যাচ্ছে।তখন তো একটু কমে ছিলে তাহলে আবার কেন এভাবে জ্বর বাড়ছে।এবার মুগ্ধর উপর খুব রাগ হচ্ছে ওর।কে বলেছিলো উনাকে বৃষ্টিতে ভিজতে।যেখানে নিজে জানেন বৃষ্টির ফোঁটা সহ্য হয় না উনার সেখানে উনি কততা সময় নিয়ে ভিজলেন।এরকম ইরেসপন্সিবল মানুষ জীবনেও দেখেনি মুগ্ধতা।এখন কে কষ্ট পাচ্ছে নিজেই তো।তাহলে এভাবে নিজের ক্ষতি করার খুব কি প্রয়োজন ছিলো!ছিলো না তো।এই অবস্থায় কি করবে বুঝতে পারছে না মুগ্ধতা।মাথায় আবারও জলপট্টি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।কাউকে ডেকেও লাভ নেই এখন এত রাতের বেলা ডাক্তারই বা কোথায় পাবে।তার চেয়ে থাক দেখি কিছু হয় কি না।কিছুক্ষণ জলপট্টি দিয়ে মুগ্ধ কে ডাকতে লাগলো মুগ্ধতা।
.
~~~~শুনুন!একটু উঠুন না প্লিজ!আপনার শরীর মুছিয়ে দিই তাতে যদি জ্বর টা একটু কমে।
মুগ্ধতার কথা যেন কানেই গেলো না ওর।যেভাবে ছিলো ঠিক সেভাবেই শুয়ে আছে।মাথায় হাত দিতেই ওর হাত চেপে ধরলো মুগ্ধ।ওর গরম হাতের স্পর্শ পেয়ে কেঁপে উঠলো মুগ্ধতা।অজানা এক শিহরণ বইতে লাগলো মনে।।ওর হাত ধরেই অনেক কিছু বলতে লাগলো।মুগ্ধতা কথাগুলো বুঝার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে কিন্তু বুঝতে অক্ষম।তাই মুগ্ধর মুখ বরাবর কান পাতলো মুগ্ধতা আর কথাগুলো শুনে নিজেকে অপরাধী ভাবতে লাগলো……
______তুমি আমাকে কেন ভালোবাসতে পারো না মুগ্ধতা।জানো আমার প্রতি তোমার এই অবহেলাগুলো আর সহ্য করতে পারছি না।খুব কষ্ট হয়।তবুও ভাবি একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।আমাকে মেনে নিবে তুমি।তোমার ভালোবাসা দিয়ে আমার মনে লুকিয়ে থাকা সব কষ্ট দূর করে দিবে কিন্তু না আজও তোমার মনের কোণে এতটুকু জায়গা দখল করতে পারলাম না।হয়তো নিজের অজান্তেই তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।বিশ্বাস করো যদি কখনও বুঝতে পারতাম আমাকে নিয়ে কখনও খুশি হতে পারবে না তুমি তাহলে তোমাকে জড়াতাম না নিজের সাথে।জড়াতাম না কিছুতেই না!
কথাগুলো শুনে চোখ থেকে টুপটাপ পানি পরতে লাগলো মুগ্ধতার।এত কষ্ট বুকে নিয়ে ঘুরছেন কই উনাকে দেখলে তো বুঝাই যায় না। কি নিখুঁত অভিনয়।আহা!এই অদ্ভুত এক জীবনে কাউকেই খুশি করতে পারলাম না।মুগ্ধ কেও না।
কিছুক্ষণ পর মুগ্ধ কে তুলে বসাতে সক্ষম হলো মুগ্ধতা।টেম্পারেচার অনেকটাই কমে গেছে।এখন ঘুমে নেই মুগ্ধ।জেগে গেছে খানিক্ষন আগেই।চোখ তুলে তাকাতে ইচ্ছে করছে না।তবুও মুগ্ধতা কে এক নজর দেখার তীব্র ইচ্ছা নিয়ে তাকালো।কারণ ও দেখতে চায় ওর অসুস্থতায় কতটা উদ্বিগ্ন মেয়েটি ।চোখ পিটপিট করে তাকালো মুগ্ধ।মুগ্ধতা ওর পায়ের কাছে বসে একটা টাওয়াল ভিজাচ্ছে। মেয়েটার চোখ মুখ কেমন যেন হয়ে গেছে।চোখ গুলো কেমন লাল আর ফোলা ফোলা।আচ্ছা মুগ্ধতা কি কেঁদেছে।কিন্তু কেন কেঁদেছে।আমার জন্য!আচ্ছা আমার জন্য কি কান্না পাবে ওর।নাহ!হয়তো ভুল ধারণা আমার।।নয়তো সারারাত ধরে জ্বালিয়ে মারছি।তাই হয়তো স্ট্রেস টা নিতে পারে নি।এই জন্যই এমন দেখাচ্ছে।
.
মুগ্ধর শরীর মুছিয়ে দেবে মুগ্ধতা।কিন্তু কীভাবে দেবে সেটা ভেবে চলেছে।খুব তো বড় মুখ করে মুগ্ধকে তুলে বসালো কিন্তু এখন কি করে কি করবে ভেবেই নখ কামড়াতে লাগলো।মুগ্ধ চুপটি করে ওর কান্ড দেখে চলেছে আর মুখ চেপে হাসছে।অবশেষে মুগ্ধর কাছাকাছি দাঁড়ালো মুগ্ধতা।যখনই মুগ্ধর টি-শার্টে হাত দিতে যাবে তখনই বললো……
~~~লাগবে না!আমি এখন ঠিক আছি।রাত প্রায় শেষের দিকে এবার শুয়ে পরো।এমনিতেই সারারাত তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি আর চাই না।
মুগ্ধর কথায় থমকে দাঁড়ালো মুগ্ধতা।এতক্ষণ এটা নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলো এবার ঠিক আছে।এখন মুগ্ধ অনেকটাই স্বাভাবিক।এটা ওর কথা বার্তা শুনেই বুঝা যাচ্ছে।তবুও সিওর হওয়ার জন্য মাথায় হাত রাখলো।হুম এখন খুব বেশি জ্বর নেই।তবুও বললো…..
_____ঠিক থাকলেও শরীর মুছে দিলে আরেকটু বেটার লাগবে।আর হ্যাঁ আমাকে কষ্ট দেওয়ার কিছু নেই।আপনি বরং শুয়ে পড়ুন আমি আপনার মাথায় বিলি কেটে দিচ্ছি।
মুগ্ধতার কথা শুনে খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো মুগ্ধর চোখ জোড়া।ওকে তো এভাবেই দেখতে চেয়েছিলো।কিন্তু তার প্রেয়সীকে আর কষ্ট দিতে চায় না সে।তাই বললো……
~~~নাহ!লাগবে না।এখন মাথায়ও তেমন যন্ত্রণা নেই।আমি তো সারারাত ঘুমেই ছিলাম এবার তুমি ঘুমাও।তোমার রেস্টের প্রয়োজন।
_____একদম কথা বলবেন না।আমার রেস্টের প্রয়োজন কিনা সেটা খুব ভালোভাবেই জানি আমি।এখন বকর বকর না করে চুপচাপ শুয়ে পরুন।নইলে……
~~~~কি করবে তুমি…?
_____আচ্ছা আপনি যখন জানেন বৃষ্টিতে আপনার সমস্যা তাহলে ছাদে ভিজতে গিয়েছিলেন কেন…?ভাববেন না আবার আমি জেগে আছি বলে রেগে এসব বলছি।আমি এই কারণে বলছি যে,এই যে সারারাত জ্বরে ভুগলেন কষ্ট পেলেন সেটা কি পাওয়া খুব দরকার ছিলো!ছিলো না তো।তাহলে এভাবে ইনভাইট দিয়ে অসুখ কে ডেকে আনার কোনো মানে হয়।
মুগ্ধতা কে ওকে নিয়ে টেনশন করতে দেখে বেশ আনন্দিত হলো মুগ্ধ।যাক!মেয়েটা একটু হলেও ওর কথা ভাবে।নইলে এভাবে রিয়াক্ট করতো না।মুগ্ধ খুব ভালোভাবেই জানে ওর জ্বর আসলে যে কেউ ভয় পেয়ে যায়।সেখানে মুগ্ধতা তো বাচ্চা একটা মেয়ে।তাও
.
মুগ্ধর এক্সাম শুরু হবে নেক্সট সপ্তাহ থেকে।আফিফের বাবা ওদের ইনভাইট করেছেন তাদের বাসা থেকে ঘুরে আসার জন্য।মুগ্ধ প্রথমে রাজি না হলেও মুগ্ধতার জন্য রাজি হয়ে গেলো।কারণ অনেকদিন হয়ে গেছে ও বাসায় যাওয়া হয় না তাঁর।এবার যদি ওর এক্সাম স্টার্ট হয়ে যায় তাহলে কোথাও যেতে পারবে না।তাই আজ সকালে ওকে নিয়ে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে।মুগ্ধতা আজ অনেক খুশী।অনেকদিন পর নিজের কাছের মানুষ গুলোকে দেখতে পারবে।মুগ্ধতার মুখের প্রাণবন্ত হাসি দেখে ভালো লাগছে ওর।মেয়েটা খুশি থাকলে আত্মা জুড়িয়ে যায়।মুগ্ধ বিছানায় বসে ফোন ঘাঁটছিলো তখন মুগ্ধতা কে ওয়াশরুম থেকে বেরুতে দেখে তাকালো।মুগ্ধতা খয়েরি কালারের শাড়ি পরেছে।কিন্তু মুগ্ধর মনে হচ্ছে এই শাড়ি তে একদম মানাচ্ছে না ওকে।তাই নাক সিটকে বললো…….
~~~~এ্যাহ এই তোমার চয়েজ…?এটা পাল্টে এসো।একদম ভালো লাগছে না।
.
মুগ্ধর কথায় কপাল কুঁচকে তাকালো মুগ্ধতা।তাঁর চোখে এটাই বেস্ট।সকলেই বলে এই কালারটায় সবথেকে বেশি ভালো লাগে ওকে।আর আজ কিনা মুগ্ধ বলছে খারাপ লাগছে।তাও এভাবে তাই মুগ্ধ কে উদ্দেশ্য করে বললো…….
_____আমি ড্যাম সিওর আপনার চোখে প্রবলেম আছে।নয়তো কি করে বলছেন এটাতে ভালো লাগছে না যেখানে সবাই বলে এই কালারটায় আমাকে পরীর মতো দেখায মুখ ভেংচি কেটে সেখানে আপনি ধুর….!!
মুগ্ধতার কথার বিপরীতে খিলখিল করে হেসে উঠলো মুগ্ধ।আর বলতে লাগলো…..
~~~~যারা বলে তারা আমার মতো স্পষ্টভাষী নয়।ডিরেক্টলি বললে মন খারাপ করবে তাই উকৃটো টা বলে।মানে! এটাতে তোমাকে পরী না পেত্নী লাগছে পেত্নী।
মুগ্ধর এমন কমপ্লিমেন্ট শুনে বেজায় মন খারাপ হয়ে গেলো তাঁর।আয়নার সামনে ভালোভাবে একবার নিজেকে দেখে নিলো।কই ঠিকঠাক ই তো লাগছে কিন্তু উনি যে বললেন।মুখ গোমড়া করে গাল ফুলিয়ে করুন সুরে বললো…..
____সত্যি পেত্নী লাগছে…?নাকি আপনি এমনি বলছেন….?
~~~~এমনি বলতে যাবো কেন…?আরে বাবা হ্যাঁ রে!তাই তো বলছি।এটা চেঞ্জ করে।দাঁড়াও বলে আলমারি থেকে কচু পাতা রঙের একটা শাড়ী ধরিয়ে দিলো ওর হাতে।সেটা নিয়ে মন খারাপ করে ওয়াশরুম ঢুকে গেলো মুগ্ধতা।মুগ্ধ মুখ চেপে হাসছে।কারণ কালারটায় অতিরিক্ত সুন্দর দেখাচ্ছিলো ওকে।রাস্তায় যদি এই সৌন্দর্যে কেউ বিমোহিত হয় তাই আগেই এই পথ বন্ধ করে দিলো মুগ্ধ।কারণ ওকে দেখে একমাএ মুগ্ধই মুগ্ধ হতে চায়।
.
আফিফদের বাসায় এসে সেই যে ভিতরে ঢুকেছে মুগ্ধতা আর তাঁর দেখা নাই।। দুপুর গড়িয়ে সন্ধ্যে হতে চললো কিন্তু মুগ্ধতার দেখা পেলো না মুগ্ধ।সেই দুপুরে খাওয়ার সময় দেখেছিলো আর দেখা হয় নাই।ড্রয়িংরুমে বসে গল্পে ব্যস্ত আফিফের বাবা মা’য়ের সাথে।আফিফ এঝনও বাসায় ফিরেনি।এভাবে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না মুগ্ধর।বিরক্ত লাগছে,এদিকে মাথাও ধরেছে প্রচন্ড কিন্তু সেটাও মুখে প্রকাশ করতে পারছে না।হঠাৎ আফিফের বাবা মুগ্ধতা কে ডেকে পাঠালেন।কিছুক্ষণেই দৌড়ে এসে বললো……
.
~~~আঙ্কেল আমায় ডাকছো….?তোমার কিছু লাগবে নাকি…..
_____না রে মা আমার কিছু লাগবে না।তুই এতটা দায়িত্বহীন আগে তো জানতাম না।
আঙ্কেলের কথায় বেশ অবাক হলো মুগ্ধতা।কিছু কি ভুল করেছে সে।তবে কি মুগ্ধ ওর নামে নালিশ করেছে…..
~~~কেন আঙ্কেল আমি কি করেছি….?
______তুই তো জানিস!মুগ্ধর শরীর খুব একটা ভালো না।তাও তুই ওর কোনো খোঁজ নিচ্ছিস না।এখানে এভাবে বসিয়ে রেখেছিস।হঠাৎ ওর অবস্থা দেখে আমার মনে পরলো।এটা কিন্তু ঠিক নয় মা ভারী অন্যায় করছিস তুই।পাশ থেকে আন্টিও একি কথা বললেন।
আঙ্কেলের কথায় জিহ্বায় কামড় কাটলো মুগ্ধতা।সত্যিই তো ব্যাপারটা বেমালুম ভুলেই গিয়েছিলো। তবে ওর মাথা থেকে যে একেবারে বেড়িয়ে গিয়েছিলো এমন নয়।এতক্ষণ ধরে অধরার সাথে গল্প করছিলো তাও মুগ্ধ কে নিয়ে।সেই কারণেই আর খোঁজ নেওয়া হয় নাই।মুগ্ধর দিকে অপরাধীর চোখে তাকিয়ে আছে মুগ্ধতা।মুগ্ধ সেদিকে তাকালোই না।যেভাবে ছিলো ঠিক সেভাবেই বসে রইলো।আমতা আমতা করে বললো……
~~~~আসলে আঙ্কেল অধরা আপুর সাথে গল্প করছিলাম।তাই আর কি!
_____ঠিক আছে!এখন ওকে নিয়ে ঘরে যাও।ওর রেস্টের প্রয়োজন।
~~~~না আঙ্কেল আমি এখানেই ঠিক আছি।মুগ্ধতা তুমি বরং অধরা আপুর সাথে গল্প করো।অনেকদিন পর দেখা অনেক কথা জমে আছে নিশ্চয়।
মুগ্ধতা বুঝতে পারলো মুগ্ধ রাগ করে কথাগুলো বলছে।সত্যি ভারী অন্যায় হয়েছে ওর। অসুস্থ একটা লোককে এভাবে রাখা উচিৎ হয় নি।করুণ চোখে তাকালো মুগ্ধর দিকে।সেদিকে হেলদোলই নেই মুগ্ধর।
এই ব্যাপারটায় বেশ কষ্ট পেয়েছে মুগ্ধ।যেখানে সবার প্রতি এত কড়া নজর সেখানে একমাএ ওর প্রতিই এতটা উদাসীন।ও অসুস্থ সেটাই ভুলে গেলো।কি করে পারলো মুগ্ধতা…!!
.
.
চলবে…….
মুগ্ধতায়_মুগ্ধ❤️
Labiba_Islam_Roja
Part_20
.
🍁
বিছানায় আধশোয়া হয়ে একহাত মাথায় দিয়ে চোখ বুজে বসে আছে মুগ্ধ।মাথায় বড্ড যন্ত্রণা করছে তাঁর।এখন এক কাপ কফি হলে মন্দ হতো না।কিন্তু কে দেবে মুগ্ধতা তো এখানে ওকে রেখে বেপাওা।এসব ভাবতে ব্যস্ত তখনই রুমে ঢুকলো কেউ।ভিতরে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলে উঠলো মুগ্ধ……
~~~লাইট অফ করে চলে যাও মুগ্ধতা।আমি একটু ঘুমাবো।
মুগ্ধর কথায় রাগ স্পষ্ট।সেটা বুঝতে পেরে ব্যস্ত ভঙ্গিতে বলে উঠলো মুগ্ধতা…….
_____কেন কি হয়েছে আপনার….?শরীর খারাপ লাগছে নাকি….?
মুগ্ধতার কথার জবাব দেওয়ার প্রয়োজনবোধ করলো না সে।চুপচাপ যেভাবে ছিলো সেভাবেই শুয়ে রইলো।মুগ্ধতা গুটিগুটি পায়ে এগিয়ে গেলো তাঁর সামনে।হাতের কফির কাপটা সেন্টার টেবিলে রেখে মুগ্ধর মাথায় হাত ছোঁয়ালো।মুগ্ধতার স্পর্শে কিছুটা নড়েচড়ে উঠলো মুগ্ধ।কিন্তু কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।তাই আবারও বললো মুগ্ধতা……
~~~কই জ্বর তো নেই।তাহলে এই অবেলায় এভাবে বসে আছেন কেন….?আপনার জন্য কফি এনেছি খেয়ে নিন।
কপালে রাখা হাত সরিয়ে মুগ্ধতার মুখ বরাবর তাকালো মুগ্ধ।ও তাকাতেই চোখ সরিয়ে নিলো মুগ্ধতা।যাক তাও ভালো ওর কথা কিছুটা হলেও মনে আছে মেয়েটার।মুগ্ধতার হাত থেকে কফি নিয়ে খেতে খেতে বললো মুগ্ধ……
~~~এসবের প্রয়োজন ছিলো না।আমার জন্য শুধু শুধু কষ্ট করতে হলো তোমায়।আচ্ছা তুমি খাবে না।
মুগ্ধর কথার পিঠে মুচকি হেঁসে ওর দিকে তাকালো মুগ্ধতা।মুগ্ধ কফিতে আলতো করে চুমুক দিচ্ছে।সেটা দেখতে দেখতে বললো…..
~~~নাহ্!আমি এখন খাবো না।একচুয়েলি ভালো লাগছে না।আপনি খেয়ে নিন।আচ্ছা মুগ্ধ আপনি আমার সাথে এভাবে ফর্মালিটি করে কথা বলছেন কেন…?
মুগ্ধতার কথায় একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মুগ্ধ।সেটা তুমি বুঝবে না সখি।এটা যে আমার অভিমানের ভাষা।কিন্তু আফসোস তুমি বুঝবে না অভিমানের কারণ ও খুজবে না।সত্যি যেখানে ভালোবাসা নামক বস্তুুই নেই।সেখানে অভিমান বড্ড বেমানান।
.
ড্রয়িংরুমে বসে আছে মুগ্ধ তখনই মুগ্ধর পাশের সোফায় বসলো অন্যান্য।অন্যান্য মেয়েটির হাবভাব একটুও ভালো না।যে-কোনো হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলেই প্রেম করতে ইচ্ছে করে ওর।মুগ্ধ কে দেখেও যে এমন হচ্ছে না তা নয়।ওকে দেখে জেলাস ফিল হচ্ছে তাঁর।ওর এটা মানতে সমস্যা হচ্ছে ….এমন হ্যান্ডসাম একটা ছেলে ওর মতো কিউট মেয়ে রেখে কিনা একটা আশ্রিতাকে বিয়ে করলো।হাউ ইজ পসিবল!মুগ্ধর সামনে বসে ওকে উদ্দেশ্য করে বললো…….
~~~আচ্ছা মুগ্ধ তুমি কি জানো তোমার সাথে বিয়ে আগে মুগ্ধতা অন্য একটা ছেলেকে ভালোবাসতো….?
অন্যান্যার কথায় চোখ তুলে তাকালো মুগ্ধ।মৃদু হেঁসে বললো…..
______এটা না জানার কি আছে!এটা অতি সিম্পল একটা বিষয়।প্রেম ভালোবাসা কার লাইফে কখন আসে বলা যায় না।মুগ্ধতাও এক সময় অন্য একজনকে ভালোবেসেছে তাতে প্রবলেম নাই!
মুগ্ধর কথা শুনে ভারী রাগ হলো তাঁর!কোথায় রিয়াক্ট করবে তা না উল্টে ওর হয়ে কথা বলছে ডিজগাস্টিং!তবুও আবার বললো…..
~~~আরে মুগ্ধ শুধু কি প্রেম নাকি!আরে ওই ছেলের সাথে আরো কতকিছু……..
_______স্টপ ওখানেই থামুন!প্লিজ মুগ্ধতা সম্পর্কে কোনো খারাপ কিছু বলবেন না।আমি জানি ও কেমন।আদনান নামের একটা ছেলেকে ভালোবাসতো।তার সাথে বিয়েও ঠিক হয়েছিলো কিন্তু আপনি সেই বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছেন।
.
মুগ্ধ কে কিছুতেই উল্টোপাল্টা কিছু বুঝাতে পারলো না।উল্টে মুগ্ধ অপমান করলো।তাই রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলো।
.
.
❤️
ও বাড়ি থেকে ফিরেছে আজ চারদিন হলো।ওখান থেকে আসার পর থেকে মুগ্ধর মধ্যে অদ্ভুত চেঞ্জ নোটিশ করছে মুগ্ধতা।আগের মতো ওর সাথে কথা বলে না।পড়াশোনার বাহানা দেখিয়ে অর্ধেক রাত গেস্ট রুমে কাটায়।তাছাড়া রুমে থাকলেও প্রয়োজন ছাড়া খুব একটা কথা বলে না।দুজনের মধ্যেই খাপছাড়া ভাব।তবে এতকিছুর মধ্যেও মুগ্ধতার প্রতি ওর কেয়ার এতটুকুও কমে নি।আগে যেভাবে কেয়ার করতো এখনও ঠিক সেভাবেই করে।ওর খাওয়া দাওয়া প্রয়োজন অপ্রয়োজনের প্রতি যথেষ্ট যত্নশীল।এত চাপের মধ্যে থেকেও সবকিছু টাইমলি ওকে মনে করিয়ে দেয়।মুগ্ধ এমন চুপচাপ মানতে নারাজ মুগ্ধতা। কেন জানে না ওর নীরবতা খুব পীড়া দেয় ওকে।ইচ্ছে করে এ নিয়ে কয়েকটা কড়া কথা শুনিয়ে দিক কিন্তু কি মনে করে আর বলা হয়ে উঠে না।একটা জিনিস লক্ষ্যনীয় ওর সাথে কথা না বলতে পারলে দম বন্ধ লাগে মুগ্ধতার।যখন রুমে থাকে না তখন বড্ড ফাঁকা লাগে তাঁর।কি যেন নেই অনুভব হয়।আবার যখন চোখের সামনে থাকে তখন অজানা খুশিতে আত্মাহারা থাকে।কিন্তু মুগ্ধ কে ঘিরে এগুলো কেন হয় সেই উওর অজানা তাঁর।
.
.
রাত প্রায় বারোটা। ঘুমের মধ্যে বুঝতে পারলো হাওয়ায় ভাসছে মুগ্ধতা।ভয়ে চোখ খিঁচে বন্ধ করে আছে।পরে যাবে ভেবে কারো গলা জড়িয়ে ধরলো।তৎক্ষণাৎ বুঝতে পারলো হাওয়ায় নয় তাকে কোলে নিয়ে হাঁটছে কেউ।সেই ব্যাক্তিটিকে দেখার জন্য ঝটপট চোখ খুলে তাকালো।চোখ খুলে তাকিয়েই অবাকের চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছালো মুগ্ধতা।মুগ্ধর কোলে আছে সে।।এতক্ষণে ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে মুগ্ধ।এভাবে নিজেকে দেখে আপনাআপনি মুখ হা হয়ে গেলো।মুগ্ধ ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হেঁসে কোল থেকে নামিয়ে দিলো।মুগ্ধতা কিছুই বুঝতে পারছে না।হঠাৎ এই মাঝরাতের বেলা ওকে এখানে আনার একচুয়াল কোনো কারণও খুঁজে পাচ্ছে না।মুগ্ধ কোনো কথা না বলে হঠাৎ সরে গেলো।মুগ্ধ যেতেই আপনাআপনি ছাঁদের লাইট নিভে গেলো তার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই আবার রঙিন আলো ফুঁটে উঠলো চারিদিকে।পেছন থেকে ভেসে আসলো অনেকগুলো পরিচিত কন্ঠস্বর…..তাঁরা চিৎকার দিয়ে বলে উঠলো…….
~~~~শুভ জন্মদিন মুগ্ধতা!
পেছনে তাকিয়ে বিস্মিত হলো মুগ্ধতা।মোহনা,মা,তিথি আর মুগ্ধর সব ফ্রেন্ডস দাঁড়িয়ে আছে পেছনে।আজ এত বড় সারপ্রাইজ পেয়ে চোখে পানি চলে এলো মুগ্ধতার।মুগ্ধ চোখের ইশারায় কাঁদতে বারণ করলো মুগ্ধতা কে।কিন্তু চোখের পানি কি কথা শুনে কারো।তাছাড়া এ অশ্রুকণা দুঃখের নয়।এই অশ্রুজল সুখের।মুগ্ধতা কে নিয়ে সামনে এগিয়ে গেলো মুগ্ধ। সামনের টেবিলে ইয়া বড় একটা কেক সাজিয়ে রাখা হয়েছে।কেকের উপরে খুব সুন্দর করে লিখা “শুভ জন্মদিন মুগ্ধতা”!
.
মুগ্ধ হাত ধরে কেকের সামনে নিয়ে গেলো ওকে।সেখানে নিয়ে মোমবাতি জ্বালিয়ে দিলো।মুগ্ধতা আলতো করে ফুঁ দিয়ে নিভিয়ে দিলো।কেক কেটে একে একে সবাইকে খাইয়ে দিলো মুগ্ধতা।শুধু মুগ্ধ বাদে।মুগ্ধ কে সকলের সামনে কীভাবে খাওয়াবে ভেবেই লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে ওর।তবুও লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে মুগ্ধ কে খাইয়ে দিলো।
.
রুমে এসে বসে আছে মুগ্ধতা।মুগ্ধ এখনও রুমে আসেনি।সবকিছু গুছিয়ে আসছে হয়তো।এই বাড়ীতে আসার পর থেকে অনেক প্রাপ্তি ধরা দিয়েছে মুগ্ধতার কাছে।অনেক না পাওয়া গুলো পাওয়া হয়ে গিয়েছে।এর আগে কখনও কেউ এভাবে এত বড় করে ওর জন্মদিন পালন করে নি।ওই টুকটাক উইশ আর আঙ্কেলের দেওয়া গিফট তাও প্রতিবছর নয় মাঝেমধ্যে।রুমে বসে মুগ্ধর অপেক্ষায় আছে মুগ্ধতা।তখনই রুমে ঢুকলো মুগ্ধ।মুগ্ধ কে দেখে উঠে দাঁড়ালো মুগ্ধতা।মুগ্ধ কে কিছু বলতে যাবে তার আগেই ওয়াশরুম ঢুকে গেলো মুগ্ধ।ওয়াশরুম থেকে বের হতে না হতেই বলে উঠলো মুগ্ধতা…….
~~~আপনি কি করে জানলেন আজ আমার জন্মদিন….?
মুগ্ধতার কথায় চোখ ছোট ছোট করে তাকালো মুগ্ধ।মুখে হাসির রেখা টেনে বললো…..
_____””ইচ্ছে থাকলে উপায় হয়”” কথাটা শুনেছো নিশ্চয়।জানার ইচ্ছে ছিলো তাই জানি।
মুগ্ধ বেশ হেয়ালি করছে।যেটা মোটেও ভালো লাগছে না তাঁর।বিরক্তিমাখা কন্ঠে বললো…..
~~~এত হেয়ালি না করে বলুন না কি করে জানতে পারলেন….?
_______কথার প্রসঙ্গে আফিফ ভাইয়ার কাছ থেকে জানতে পেরেছি।হইছে এবার শান্তি।
মৃদু হাসলো মুগ্ধতা।আজ অনেক খুশি আমি।সেই খুশির তাল সামলাতে না পেরে আচমকা মুগ্ধ কে জড়িয়ে ধরলো মুগ্ধতা।মুগ্ধতার এমন বিহেভে ফ্রিজড হয়ে আছে মুগ্ধ।মুগ্ধ কে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো……
~~~জানেন মুগ্ধ আজকের মতো খুশি এর আগে কখনও হইনি আমি।জন্মদিন সেলিব্রেইট করেছেন বলে নয়।আসলে এর আগে এতটা ইম্পর্টেন্স আমাকে কেউ দেয় নি।যেটা আপনি দিয়েছেন।এতদিন….
এক জীবনে হাজারো অপ্রাপ্তি ছিলো আমার
আর প্রাপ্তি সে তো শূন্যের কোঠায়…!!
কিন্তু আজ বুঝতে পারছি প্রাপ্তিগুলোও কম নয়।এই জীবনে এত অপ্রাপ্তির ভিড়ে প্রাপ্তির সংখ্যা হোক না নগন্য।তবুও দিন শেষে আমি ধন্য।এত সুন্দর একটা দিন উপহার দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ মুগ্ধ।
.
নিজেকে স্বাভাবিক করে এক হাতে ওকে জড়িয়ে অন্য হাত মাথায় বুলাতে বুলাতে বললো……
_______ধন্যবাদ দিতে হবে না পাগলী!আমি সব সময় চাই তুমি হ্যাপি থাকো।তোমার মুখে এই হাসিটাই যেন আজীবন অম্লান থাকে।
.
.
চলবে…….